Showing posts with label সফলতা. Show all posts
Showing posts with label সফলতা. Show all posts

বিস্ময়কর লাভজনক জারবেরা ফুল চাষ

Tuesday, April 17, 2018


টিস্যু কালচারের মাধ্যমে জারবেরা ফুলচাষ বিস্ময়কর লাভজনক। এক বিঘা জমিতে সারা বছর ধান, পাট, সবজিসহ অন্যান্য ফসলের চাষ করলে ৫০ হাজার টাকার বেশি পাওয়া যায় না। এ থেকে উৎপাদন খরচ বেরিয়ে গেলে কৃষকের হাতে লাভের পরিমাণ খুবই কম থাকে। কিন্তু জারবেরা চাষে সমপরিমাণ জমি থেকে খরচ বাদে পাওয়া যায় প্রায় পৌনে ছয় লাখ টাকা। এ কথা জানান, যশোরের গোল্ডেন সিড ফার্মের পরিচালক হাফিজুর রহমান পিন্টু। যশোর-বেনাপোল সড়কের পাশে সদর উপজেলার মালঞ্চিতে গোল্ডেন সিড ফার্ম ২০১১ সাল থেকে টিস্যু কালচারের মাধ্যমে জারবেরার চাষ করছে।

ফার্মের পরিচালক জানান, তিন শতক জমিতে জারবেরার চাষ করতে খরচ পড়ে প্রায় এক লাখ ৪০ হাজার টাকা। এর মধ্যে প্রতিটি চারার দাম ৩০ টাকা হিসেবে সাড়ে ৫০০ চারার দামই পড়ে ১৬ হাজার ৫০০ টাকা। এ ছাড়া রয়েছে সার, কীটনাশক, জমি তৈরি প্রভৃতির খরচ। প্রতিটি গাছে ৩৫টি করে ফুল ধরে। এ হিসেবে তিন শতকের ৫৫০টি গাছে ১৯ হাজার ২৫০টি ফুল ধরে। ১০ টাকা হিসেবে এই ফুলের দাম এক লাখ ৯২ হাজার ৫০০ টাকা। অর্থাৎ লাভের পরিমাণ ৫২ হাজার টাকা। হিসাব অনুযায়ী এক বিঘায় খরচ পড়ে ১৫ লাখ ৪০ হাজার টাকা। ফুল বিক্রি হয় ২১ লাখ ১৭ হাজার ৫০০ টাকা। প্রকৃত লাভ পাঁচ লাখ ৭৭ হাজার ৫০০ টাকা। দেশে সর্বপ্রথম জারবেরা ফুলের চাষ শুরু হয় ফুলের রাজধানী বলে খ্যাত যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালিতে। সেখানকার চাষিরা ভারত থেকে টিস্যু কালচারের চারা এনে চাষ করতেন। আমদানিকৃত ওই চারার প্রতিটির দাম পড়ত ৯০ টাকা করে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক গবেষক মতিউর রহমান রাজশাহীর আকাফুজি ল্যাবে দেশে সাশ্রয়ী মূল্যে টিস্যু কালচারের চারা উৎপাদনে মনোনিবেশ করেন। একই বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক প্রফেসর ড. এম মনজুর হোসেনের সার্বিক তত্ত্বাবধানে তিনি গবেষণায় সফল হন। এই চারার প্রতিটির দাম পড়ছে ৩০ টাকা করে। গবেষক মতিউর রহমান জানান, জারবেরা ফুলের বীজ থেকে চারা হয় না। মূলগাছের সাকার থেকে যে চারা হয় তার ফুলের উৎপাদন কম। মানসম্পন্নও নয়। এ কারণে বংশবৃদ্ধির জন্য টিস্যু কালচার প্রয়োজন। এই পদ্ধতিতে একসাথে অল্প সময়ে জীবাণুমুক্ত অধিক চারা পাওয়া যায়।

এই ফুলটি বহুবর্ষজীবী হওয়ায় একবার চারা রোপণ করলে বহু বছর ফুল পাওয়া যায়। তবে প্রতি বছর নতুন চারা লাগালে উৎপাদন বেশি হয়। হাফিজুর রহমান পিন্টু জানান, ফুল ফোটার পর গাছে ৩০ থেকে ৪৫ দিন পর্যন্ত সতেজ থাকে। আর তোলার পর সতেজ থাকে আট থেকে ১৫ দিন। এই ফুলের চাষ বৃদ্ধির লক্ষ্যে গোল্ডেন সিড ফার্ম ফুলচাষিদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছে। এ জন্য চার কাঠা জমিতে একটি প্রদর্শনী খামার করা হয়েছে। এখান থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে গদখালির ফুলচাষিরা টিস্যু কালচারের মাধ্যমে জারবেরার চাষ করে লাভবান হচ্ছেন। জারবেরা চাষে লাভের কথা স্বীকার করে গদখালি ফুলচাষি কল্যাণ সমিতির সভাপতি আবদুর রহিম বলেন, এখানকার চাষিরা এই লাভজনক ফুল চাষের প্রতি ঝুঁকছেন। সমিতিভুক্ত চাষিরা এবার ১৫ একরে জারবেরার চাষ করেছেন। জারবেরা সূর্যমুখী প্রজাতির। ফুল দেখতে সূর্যমুখীর মতোই। এর নান্দনিক সৌন্দর্য ফুলের জগতে এক আলাদা মাত্রা যোগ করেছে। বাংলাদেশে ৯ রঙের জারবেরার জাত আছে। এর মধ্যে লাল, সাদা, হলুদ, পিংক, মেজেন্ডা ও কমলা উল্লেখযোগ্য। যশোর জেলার মাটির পিএইচ (অম্লত্ব ও ক্ষারত্ব নির্দেশক) ৬ দশমিক ৫ থেকে ৭ দশমিক ৫ হওয়ায় জারবেরা চাষের উপযোগী। জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি ও জুন-জুলাই জারবেরা চাষের উপযুক্ত সময়। কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক হেমায়েত হোসেন জানান, টিস্যু কালচারের মাধ্যমে জারবেরা চাষ করলে ফুলচাষিরা আর্থিকভাবে লাভবান হবেন।

চাষ প্রণালী

আবহাওয়াঃ

উন্নতমানের ফুল উৎপাদনের জন্যে সাধারণতঃ গ্রীন হাউজে জারবেরার চাষ করা হয়। উজ্জ্বল সূর্যালোক জারবেরা গাছের বৃদ্ধি ও অধিক সময় ধরে ফুল উৎপাদনে সাহায্য করে। গ্রীষ্মকাল ছাড়া অন্যান্য সময় পূর্ণ সূর্যালোক জারবেরা চাষের জন্য উত্তম। গ্রীষ্মকালে উন্নতমানের ফুল উৎপাদনের জন্য ৩০% ছায়া প্রদান ও তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে জারবেরার চাষ করা হয়। প্রয়োজনের অতিরিক্ত ছায়া প্রদান করলে পাতা হালকা সবুজ বর্ণ ধারণ করে এবং ফুলের দন্ড খাট ও শক্ত হয়। সাধারণতঃ শীতকালে গাছে খুব তাড়াতাড়ি ফুল আসে। অন্যদিকে গ্রীষ্মকালে গাছে ফুলধারণ বিলম্বিত হয়।

রাত্রিকালীন তাপমাত্রা জারবেরা চাষে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে। সাধারণতঃ রাত্রিকালীন তাপমাত্রা ১৮ডিগ্রী- ২০ডিগ্রী সেঃ এর মধ্যে থাকলে রোপনকৃত চারা গাছ ১ মাসের মধ্যে শিকড় গজিয়ে উৎপান ধাপে পৌছায়। পরবর্তীতে তাপমাত্রা নামিয়ে ১৫ ডিগ্রি – ১৮ ডিগ্রি সেঃ এর মধ্যে আনা যেতে পারে। তাপমাত্রা ২৫ ডিগ্রি সেঃ এর উপর উঠতে দেয়া উচিৎ নয়। গ্রীন হাউজে উৎপাদনের ক্ষেত্রে আর্দ্রতা বেশী থাকলে বট্রাইটিস (Botrytis) রোগের প্রাদুর্ভব দেখা দিতে পারে। এ জন্য গ্রীন হাউজে জারবেরা উৎপাদনের ক্ষেত্রে দিনে ৭০% এবং রাত্রে ৮৫% আর্দ্রতা রাখা উচিত। গ্রীণ হাউসে বাতাস পরিসঞ্চালন এবং ভেন্টিলেশন থাকা আবশ্যক।

মাটিঃ
দ্রুত পানি নিষ্কাশনযোগ্য হালকা দো- আঁশ অথবা বেলে দো- আঁশ মাটি জারবেরা চাষের জন্য উত্তম। বেলে দো- আঁশ মাটিতে বাতাস চলাচল সুবিধাজনক এবং দীর্ঘ সময় জৈব পদার্থ অক্ষত থাকে। সাধারণতঃ জমিতে জৈব সার ও মাটির অনুপাত ৭০ : ৩০ হওয়া ভাল। মাটির পি.এইচ. ৫.৫- ৬.০ জারবেরা চাষের জন্য উপযোগী করে নিতে হবে।

বংশ বৃদ্ধিঃ
যৌন ও অযৌন উপায়ে জারবেরার বংশ বৃদ্ধি করা যায়। বীজ থেকে চারা উৎপা নে সময় বেশী লাগে। সাধারণতঃ সংকরায়নের মাধ্যমে নতুন জাত উদ্ভাবনের জন্য বীজ থেকে চারা উৎপাদন করা হয়। অযৌন পদ্ধতিতে ১টি বা ২টি চারা মূল গাছের গুচ্ছ থেকে বিভাজনের মাধদ্যমে রোপণ করে জারবেরার বংশ বিস্তার করা হয়। এ ছাড়া কাটিংয়ের মাধ্যমে চারা উৎপাদন করা যায়। এ জন্য বয়স্ক গাছে পানি সরবরাহ বন্ধ করে দেয়া হয় এবং সাথে সাথে পাতা ছেটে দেয়া হয়।ফলে কয়েকদিনের মধ্যে গাছে প্রচুর কুঁড়ির সৃষ্টি হয়। পরে কুঁড়িগুলি সাবধানে কেটে নিয়ে শিকড় উৎপাদনের জন্য লাগানো হয়। ৮-১২ সপ্তাহের মধ্যে এগুলি লাগানোর উপযুক্ত হয়। বর্তমানে বানিজ্যিক ভিত্তিতে জারবেরা চাষের জন্য টিস্যু কালচারের মাধ্যমে উৎপাদিত চারা ব্যবহার করা হয়।টিস্যু কালচারের মাধ্যমে উৎপাদিত চারা পোকা- মাকড় ও রোগ- বালাই মুক্ত এবং বয়স, আকার আকৃতিতে সমান তাকে বিধায় উন্নতমানের ফুল পাওয়া যায়।

সার প্রয়োগঃ
চারা লাগানোর কমপক্ষে এক সপ্তাহ আগে বেডের প্রতি ১০ বর্গ মিটারের জন্য ৬০ কেজি পঁচা জৈব সার, ১.১৫ কেজি ইউরিয়া অথবা ১ কেজি ক্যালসিয়াম এমোনিয়াম নাইট্রেট অথবা এমোনিয়াম সালফেট, ২.৫ কেজি ট্রিপর সুপার ফসফেট, ৫০০ গ্রাম মিউরেট অব পটাশ ও ৫০০ গ্রাম ম্যাগনেশিয়াম সালফেট প্রয়োগ করে ভালভাবে মাটিতে মিশিয়ে দিতে হবে। জারবেরা দ্রুত বর্ধনশীল উদ্ভিদ। সাধারণতঃ চারা লাগানোর ১০-১২ সপ্তাহের মধ্যে গাছে ফুল উৎপাদন শুরু হয়। এ জন্য জারবেরার জমিতে সুষম সার প্রয়োগ করতে হবে। প্রথম অবস্থায় চারার পাতায় ১% ইউরিয়া সারের দ্রবন স্প্রে করতে হবে। অতিরিক্ত নাইট্রোজেন প্রয়োগে গাছের পাতা বড় হয় এবং ফুলের সংখ্যা কমে যায়। মাটি অতিরিক্ত অম্লক্ষারীয় অথবা ক্ষারীয় হলে মাটিতে গৌণ উপাদানের বিশেষ করে লৌহ, ক্যালশিয়াম ও ম্যাগনেশিয়ামের ঘাটতি দেখা যায়। সে ক্ষেত্রে মাটিতে চুন অথবা অম্লক্ষারীয় সার যেমন অ্যামোনিয়াম সালফেট প্রয়োগ করে এ সমস্যার সমাধান করা যায়।

চারা লাগানোঃ
কাট ফ্লাওয়ার উৎপাদনের জন্য জমিতে অথবা টবে জারবেরার চাষ করা যায়। জমিতে ৩০-৪৫ সে.মি উচু এবং ১-১.২ মি. চওড়া বেড তৈরি করতে হবে। আন্তঃ পরিচর্যা এবং অন্যান্য কাজের সুবিধার জন্য দুই বেডের মাঝ ৫০ সে.মি জায়গা খালি রাখতে হবে। বেডের মাটি কালো পলিথিন দিয়ে ১-২ সপ্তাহ ঢেকে রেখে শোধন করে নেয়া ভাল। বেডে চারা সারিতে লাগানো হয়। তাই জাত ভেদে সারি থেকে সারির দূরত্ব ২০-৩০ সে: মি: এবং সারিতে চারা থেকে চারার দূরত্ব ২০-৩০ সে: মি: দেয়া হয়। দিনের ঠান্ডা ভাগে অর্থাৎ সকালে অথবা বিকেলে বেডে চারা লাগানো উচিৎ। চারা লাগানোর সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন কোন ক্রমেই চারার ক্রাউন বা মাথা মাটিতে ঢাকা না পড়ে। সেচ প্রয়োগ, পানি নিষ্কাশন, নিড়ানি এবং মালচিং এর সময়ও খেয়াল রাখতে হবে যেন কোনক্রমেই চারার ক্রাউন বা মাথা মাটিতে ঢাকা না পড়ে। চারা লাগানোর পর পরই ঝাঝরি দিয়ে হালকা সেচ দিতে হবে। প্রয়োজনে চারা লাগানোর পর ছায়ার ব্যবস্থা করতে হবে। তবে বর্তমানে বাণিজ্যিক চাষাবাদের জন্য টিস্যু কালচারের মাধ্যমে উৎপাদিত চারা বেশী ব্যবহার করা হয়। কারণ টিস্যু কালচারে উৎপাদিত চারার বয়স, আকার, আকৃতি সমান থাকে।

পানি সেচঃ
জারবেরা গভীরমূলী উদ্ভিদ বিধায় প্লাবন সেচ পছন্দ করে। প্রতিবার সেচের পর মাটি অবশ্যই মালচিং করতে হবে। এর ফলে মাটি বাহিত রোগের আক্রমন কম হবে এবং গাছে ফুলের পরিমান বেশী হবে। পানির অভাবে গাছ ঢলে পড়লে পরবর্তীতে ফুলের দন্ড চোট হয় এবং ফুলের মান কমে যায়। পানি সেচের সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন অতিরিক্ত পানি বেডে জমে না থাকে। সেচের পানি বেডে জমে থাকলে মাটি বাহিত রোগের আক্রমনে গাছ পঁচে যায় এবং মারাত্মক ক্ষতি সাধিত হয়। সাধারণতঃ শুষ্ক মৌসুমে সেচের পরিমান বেশী এবং বর্ষা মৌসুমে সেচের পরিমান কম লাগে।

ফুল উত্তোলনঃ
ফুল পূর্ণ প্রস্ফুটিত ও ডিস্কে দ্বিতীয় স্তরের ফুলে পরাগরেনু দেখ দিলে সংগ্রহের উপযুক্ত হয়। ফুর দন্ডের গোড়া ধরে আস্তে করে ঘুরিয়ে গাছ থেকে ফুল সংগ্রহ করা হয়। চাকু দিয়ে জারবেরার ফুল কেটে সংগ্রহ না করাই ভাল। ফুল সংগ্রহের সময় ফুল দন্ড যতদূর সম্ভব লম্বা থাকা ভাল। সংগ্রহের সাথে সাথে ফুল দন্ডের গোড়া পানিতে ডুবিয়ে রাখতে হবে।

ফলনঃ
সাধারণতঃ জাত ও চাষাবাভেদে ফলন কম বেশী হয়ে হয়। গ্রীনহাউজে প্রতি বর্গ মিটারে গড়ে ২৫০ টি এবং হেক্টরে ২৫,০০,০০০টি ফল উৎপাদন করা যায়। মাঠে চাষাবাদের ক্ষেত্রে উৎপাদন প্রায় অর্ধেক কমে যেতে পারে এবং ফুলের মানও হ্রাস পায়।

পোকা-মাকড়ঃ
১। সাদা মাছি ( Transparent fly )
গরম ও শুকনা মেওসুমে সাদা মাছি গাছের পাতা ও ফুলের রস চুষে মারাত্মক ক্ষতি করে। মেটাসিসটক্স (০.১%) অথবা ইন্ডোসালফান (০.১%) ব্যবহার করে মাছ পোকা দমন করা যায়।

২। পাতা সুড়ংকারী পোকা ( Leaf minor )
এ পোকার কীড়া পাতায় সুড়ং করে সবুজ অংশ খেয়ে ফেলে। আক্রান্ত পাতা কুকড়ে যায় এবং সূর্যের আলোর বিপরীতে ধরলে জারের মত অসংখ্য সুড়ং দেখা যায়। আক্রান্ত পাতা সংগ্রহ করে ধ্বংস করে ফেলতে হবে ফসলে পোকার আক্রমনের লক্ষন দেখা দিলে রগর (০.১%) অথবা পারমেথ্রিন (০.১%) সেপ্র করতে হবে।

৩। জাব পোকা ( Aphid )
জাব পোকা জারবেরার কচি পাতা ও ফুলের কুঁড়ির রস চুষে খায়। জাবপোকার আক্রমনে পাতা কুকড়ে যায় এবং ছত্রাক আক্রমণ করে। মেটাসিসটক্স (০.১%) অথবা মেরিক ( Merrick) (০.২%) হারে প্রয়োগ করে এ পোকা দমন করা যায়।

৪। মাকড় বা মাইট ( Mite )
উষ্ণ ও শুষ্ক আবহাওয়াই জারবেরায় মাকড়ের আক্রমণ বেশ হয়। মাকড়ের আক্রমণে কচি পাতার আকৃতি নষ্ট হয় এবং শেষে পাতা শুকিয়ে যায়। নুভক্রন (০.২%) অথবা ক্যালথেন (০.১%) সেপ্রর মাধ্যমে মাকড় দমন করা যায়।

৫। থ্রিপস ( Thrips )
অতি ক্ষুদ্র এ পোকা ফুলের কচি অংশ খেয়ে ফুল বিবর্ণ করে ফেলে। আক্রমণ তীব্র হলে অনেক সময় ফুলের কুঁড়ি ফোটে না অথবা ফোটলেও তা অস্বাভাবিক আকৃতির হয়। ম্যালাথিয়ন (০.১%) অথবা ডায়াজিনন (০.১%) নিয়মিত সেপ্র করে এ পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।

রোগ বালাইঃ
জারবেরা চাষে রোগ-বালাই মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে। সেজন্য চারা লাগানোর পূর্বে তৈরীকৃত বেড রাসায়নিক ব্যবহার করে অথবা কালো পলিথিন দ্বারা এক সপ্তাহ ঢেকে রেখে মাটি শোধন করে নিলে মাটি বাহিত রোগ বালাইয়ের প্রকোপ কম হয়। জারবেরার কয়েটি গুরুত্বপূর্ণ রোগের নাম,লক্ষণ ও প্রতিকার ব্যবস্থা দেয়া হলো।

১। ক্রাউন রট ( Crown rot )
মাটি বাহিত ছত্রাক ফাইটোপথোরা ক্রিপটোজেনা ( Phytopthora cryptogena) এ রোগের জন্য দায়ী। গাছের পাতা কালো বর্ণ ধারণ করে এবং আস্তে আস্তে ঢলে পড়ে। এ রোগ প্রতিরোধর উপায় হলো-

ক) রোগ প্রতিরোধী জাত ব্যবহার করা,
খ) বেডে প্রয়োজনের অতিরিক্ত সেচের পানি না দেয়া
গ) গাছের মুকুট বা পাতা যেন মাটির সংস্পর্শে না আসে সেদিকে খেয়াল রাখা
ঘ) সেচের পর বেডের মাটি মালচিং করে দেয়া এবং
ঙ) আক্রান্ত গাছের গোড়ার মাটি সরিয়ে ০.২% বিনোমিল ( Benomyl) অথবা রিডোমিল- এম, জেড ( Ridomil – M. Z) প্রযোগ করে এ রোগ দমন করা যায়।

২। গোড়া পঁচা রোগ ( Root rot)
এ রোগও মাটি বাহিত। পিথিয়াম ইরেগুলারিয়া ( Pythium irregularea) নামক ছত্রাক এ রোগের জন্য দায়ী। ক্রাউন রট রোগের জন্য সুপারিশকৃত প্রতিরোধ ব্যবস্থা এ রোগের জন্যেও প্রযোজ্য। এ ছাড়াও কপার অক্সি – ক্লোরাইড ( ০.৪%) অথবা ডায়থেন এম -৪৫ ( ০.২%) সেপ্র করে এ রোগ দমন করা যায়।

৩। স্পটেড উইল্ট ভাইরাস ( Spotted Wilt Virus)
এ ভাইরাসের আক্রমণে পাতায় হলুদাভ বাদামী রং ধারণ করে। এ রোগ দমনে ফুরাডান প্রয়োগ করতে হবে। এছাড়া আক্রান্ত গাছ তুলে ধ্বংস করে ফেলতে হবে। এ ছাড়া জাররেরা পাউডারি মিলডিউ, অলটারনারিয়া লীফ স্পট, সারকোসপোরা লীফ স্পট এবং বট্রাইটিস রট রোগে আক্রান্ত হতে পারে। যে কোন সিস্টেমিক ছত্রাকনাশক যেমন ব্যাভিষ্টিন, রিডোমিল অথবা বিনোমিল ০.১% হারে গাছে স্প্রে করে উপরোক্ত রোগ সমূহ দমন করা যায়।

সূত্রঃ আপডেট ডট কম

কলা চাষি বদরুদ্দিন

Friday, December 31, 2010


কৃষি দেশীয় অর্থনীতির চালিকাশক্তি। সুতরাং কৃষি উন্নয়নের সঙ্গে দেশের উন্নয়ন নির্ভর করে। কৃষকরা নিজেদের জমিতে ক্ষুদ্র উদ্যোগ নিয়ে অধিক ফসল ফলাচ্ছে। ফুল, কলা, আনারস, নারিকেল, সুপারিসহ বিভিন্ন কৃষি ফসল চাষাবাদ করছে দেশের কৃষক। কৃষক বদরুদ্দিনের বয়স ষাট বছর। ছোটবেলা থেকে তার কৃষি উৎপাদন ভালো লাগে। নিজের জমিতে কৃষি ফসল আবাদ করতে করতে তিনি দক্ষ কৃষক হয়ে ওঠেছেন। কৃষি বিষয়ে তার কোনো প্রশিক্ষণ নেই। কয়েক বছর যাবৎ তিনি কলা চাষে ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেছেন। বদরুদ্দিন পাঁচ বছরব্যাপী ৩ একর জমিতে কলা চাষ করছেন। তিনি জানান_ 'আমি নারিকেল, সুপারি, আখ ও সবজি চাষ করি। পাঁচ বছর কলা চাষ করছি। কলা চাষে নিজেই উৎসাহিত হয়েছি। প্রথমে জমির আইলে দশ হাত অন্তর কলা গাছ লাগাই। প্রথম বছর আমি অনেক ফসল পাই। এক পর্যায়ে বেশি করে চাষ করতে থাকি।'

বদরুদ্দিনের চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে তিনি বলেন_ 'আমি ৩ একর জমিতে কলা চাষ করছি। প্রথমে মাটিতে গোবর দেই। এভাবে পুরো শুকনো মৌসুম ফেলে রাখি। এক পর্যায়ে কলার তেড় (কলা গাছ) লাগাই। পাঁচ হাত অন্তর কলা গাছের তেড় পুঁতি (লাগানো)। বছর আসতে না আসতেই গাছে ফলন শুরু হয়। আমি কলা গাছের পাশাপাশি মৌসুমি শাকসবজি ডাঁটা, পুঁইশাক, মুলা, পালংশাক, মিষ্টি কুমড়া ইত্যাদি চাষ করছি। এসব চাষের মাধ্যমে পরিবারের চাহিদা মেটাতে পারছি। আমার আবাদি জমিকে সঠিক ব্যবহার করতে পারছি। অন্যদিকে বাড়তি উপার্জনও হচ্ছে।' কলা চাষে রক্ষাণবেক্ষণ খুব জরুরি। পানি দেওয়া, অপ্রত্যাশিত পোকা দমন, আগাছা বিনষ্ট করতে হয়। বদরুদ্দিন আরও জানান_ আমার কৃষি কাজে সব সময় আমার দুই ছেলে সহযোগিতা করে। মাঝেমধ্যে আমার স্ত্রী। আর ব্যাপারি (ক্রেতা) এসে বাড়ি থেকে কলা কিনে নিয়ে যায়। এখন সপ্তাহান্তে আমি মোটামুটি ভালো টাকার কলা বিক্রি করি।

তথ্য সূত্রঃ বাংলাদেশ প্রতিদিন, তারিখ: ২৫-১২-২০১০

রংমিস্ত্রি থেকে ভাস্কর

Saturday, December 11, 2010


সাত-আট হাত দীর্ঘ একটি গাছ। গাছের ডালে বসে আছে দোয়েল, শ্যামা, ঘুঘু, টিয়া, ময়না, শালিকসহ নানা জাতের পাখপাখালি। গাছের নিচে বক, ডাহুক, ময়ূর, হরিণ, চিতা, হাতি ও রয়েল বেঙ্গল টাইগারসহ বন্য প্রাণীরা ঠাঁয় দাঁড়িয়ে। এসব প্রাণীর কোনোটাই রক্ত-মাংসের নয়, বালু-পাথর ও রড-সিমেন্টে তৈরি। এগুলোর নির্মাতা শহিদুল ইসলাম নামের এক তরুণ।
বয়স তাঁর ৩০ বছর। জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার খলিশাগাড়ি গ্রামে বাড়ি। এসব ভাস্কর্য বানাতে কারও কাছ থেকে শিক্ষা নেননি তিনি। দারিদ্র্যের কারণে শৈশবে পঞ্চম শ্রেণীর গণ্ডিই পেরোতে পারেননি। কিন্তু ভেতরে একটা শিল্পীসত্তা বুঝি ছিল। এমনিতে রংমিস্ত্রির কাজ করেন। বছর চারেক আগে হঠাৎ শখের বশে পশুপাখি বানানো শুরু করেন তিনি। কৃত্রিম এসব জন্তু-জানোয়ার স্থানীয় লোকজনের নজর কাড়ে। কেউ কেউ কিনে নেন কয়েকটা। স্থানীয় লোকদের উৎসাহ ও স্বীকৃতি জন্ম দেয় এক ভাস্করের।
দিনে মানুষের বাড়ি বাড়ি ঘুরে শহিদুল এখনো রংমিস্ত্রির কাজ করেন। সেটাই তাঁর মূল পেশা। আর রাতে রড-সিমেন্ট নিয়ে বসেন। দক্ষ হাতে গড়ে তোলেন একেকটা অবয়ব। তারপর চলে রং করার পালা। গ্রামীণ মেলায় সিমেন্টের এসব ভাস্কর্যের কেনাবেচা ভালো। শীতকালে মেলাকে সামনে রেখে বছরজুড়ে এসব বানান শহিদুল। তাঁকে সাহায্য করেন স্ত্রী মরিয়ম বেগম।
শহিদুলের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, একটি ময়ূরের গায়ে রং করছেন তিনি। মরিয়ম রংতুলি, যন্ত্রপাতি এগিয়ে দিচ্ছেন। শহিদুল জানান, রড-সিমেন্ট দিয়ে আড়াই ফুট উঁচু, চার ফুট দীর্ঘ একটি বাঘ তৈরিতে তাঁর ১৫ দিন লেগেছে। মাঝারি আকৃতির একটি বাঘ বানাতে খরচ পড়ে দুই হাজার টাকা। আর বিক্রি করে পান সাড়ে তিন হাজার টাকা। ৫০০ থেকে ৭০০ টাকায় বিক্রি হয় শাপলা ফুল।
শহিদুল বলেন, হামি অশিক্ষিত মানুষ। ভালো কোনো কিছু তৈরি করতে অনেক টাকা-পয়সা লাগে। হামরা গরিব মানুষ, দিনে যা রোজগার হয়, ওই দিন তা খাওয়া-খরচে শেষ হয়। আর বছরে একবার এই কাজের লাভ থেকে সংসারের বড় ধরনের কাজ করি। মাথার ঘাম পায়ে ফেলে এই কামগুলো শুধু রাতে করি। দিনে অন্যের বাড়িতে রংমিস্ত্রির কাম করি।
পাশের মুন্দাল গ্রামের ঠিকাদার নুরুজ্জামান মৃধা বলেন, বড় একটি জিরাফ শহিদুলের কাছ থেকে মাত্র দুই হাজার ৪০০ টাকায় কিনেছি। শহর থেকে কিনতে গেলে পাঁচ হাজার টাকায়ও পাওয়া যেত না। বাড়ির পাশে রাখা ওই জিরাফে বসে শিশুরা সারা দিন খেলাধুলা করে।
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান তাইফুল ইসলাম তালুকদার বলেন, শহিদুল ইসলামের এই শৈল্পিক কাজ দিন দিন এলাকায় জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। নিরক্ষর হয়েও সে এত সুন্দর হাতের কাজ করে, দেখলে অবাক লাগে। তাকে সহায়তা করা দরকার, যেন সে আরও ভালো কিছু করতে পারে।

তথ্য সূত্রঃ নিঝুমদীপ

হাঁস এনেছে হাসি

Saturday, November 20, 2010

নিজের খামারে হাঁসের খাবার দিচ্ছেন কাঞ্চন মিয়া

স্ত্রীর এক ভরি ওজনের স্বর্ণের হার বিক্রি করে ৫০টি হাঁস কিনে পালন শুরু করেন কাঞ্চন মিয়া। এসব হাঁসের ডিম বিক্রি করে জমানো ২০ হাজার টাকায় পরে তিনি সিলেটের মারকুলি থেকে ৩০০ হাঁস কেনেন। হাঁস পালনের জন্য গ্রামের সোয়াইজনি নদীর পারে গড়ে তোলেন অস্থায়ী খামার। এটি ১৯৯০ সালের কথা।
আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি কিশোরগঞ্জের হাওরবেষ্টিত উপজেলা নিকলীর নগর গ্রামের বাসিন্দা কাঞ্চন মিয়াকে। হাঁস পালন ভাগ্য বদলে দিয়েছে তাঁর। বর্তমানে তাঁর খামারে হাঁসের সংখ্যা দুই হাজার। আট হাজার টাকা মূলধন নিয়ে শুরু করা কাঞ্চনের এখন প্রতিদিন ডিম বিক্রি করেই আয় আট হাজার টাকা। তাঁকে দেখে উৎসাহিত হয়ে আরও অনেকে নদীর পারে অস্থায়ী খামার করেছেন। বদলেছেন দিন। অভাব দূর করে হয়েছেন সচ্ছল। অভাবের কারণে একসময় বিষণ্ন থাকা মুখে এসেছে হাসি।
বর্তমানে নিকলীর ওপর দিয়ে বয়ে চলা নরসুন্দা, সোয়াইজনি, ঘোড়াউত্রা ও ধনু নদীর পারে হাঁসের অস্থায়ী খামার রয়েছে চার শতাধিক, যা কয়েক শ পরিবারকে করেছে সচ্ছল। এসব খামারকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা হাঁসের খাদ্য শামুক এবং হাঁসের ডিম বিক্রির ব্যবসা উপার্জনের পথ করেছে আরও কয়েক শ মানুষের।
যেভাবে শুরু: সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ১৯৮৫ সালে উপজেলার মঞ্জিলহাটি গ্রামের রহিম, নগর গ্রামের ইসরাইল ও আলী হোসেন তাঁদের বাড়িতে ৪০-৫০টি করে হাঁস পালন শুরু করেন। হাঁসের ডিম বিক্রি করে তাঁদের আয়ও হচ্ছিল ভালোই। হঠাৎ ‘ডাকপ্লেগ’ রোগে হাঁসগুলোর মৃত্যু তাঁদের হতাশ করে। কিন্তু তাঁদের হাঁস পালন উৎসাহিত করে কাঞ্চন মিয়াকে। তাঁর সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়েছেন অন্যরা।
কাঞ্চন মিয়া বলেন, ‘একসময় মানুষের জমিতে কামলা দিয়ে সংসার চালাতে হতো। এখন আমি সচ্ছল। আমি পড়াশোনা করতে পারিনি। কিন্তু তিন ছেলেমেয়েকে স্কুলে পড়াচ্ছি।’
নিকলীতে নদীর পারে গেলে দেখা যায় হাঁসের অসংখ্য অস্থায়ী খামার। কোনো খামারে ৫০০টি, কোনোটিতে এক হাজার এবং কোনোটিতে এর চেয়ে বেশি হাঁস রয়েছে। খামারগুলোর হাঁস দিনে নদীতে থাকে, নদী থেকে খাবার সংগ্রহ করে খায়। ছোট ছোট নৌকায় করে একজন বা দুজন হাঁসগুলোর ওপর নজরদারি করে। খামারিরা জানান, সন্ধ্যা হলে খামারের লোকজন হাঁসগুলোকে তাড়িয়ে বাঁশের বেড়ায় তৈরি অস্থায়ী খামারে নিয়ে যান। হাঁস ও ডিম চুরি ঠেকাতে রাতে কাছাকাছি তৈরি করা মাচায় থাকে খামারের লোকজন। দেখাশোনার জন্য প্রতিটি খামারে দু-তিনজন লোক রয়েছে।
খামারিরা জানান, অন্য এলাকার খামারগুলোতে হাঁসের খাবারের পেছনেই লাভের বড় একটা অংশ চলে যায়। নদীতে পর্যাপ্ত খাবার পাওয়া যায় বলে তাঁদের হাঁসের জন্য খাবার প্রায় কিনতেই হয় না। মাঝেমধ্যে তাঁরা শামুক কিনে হাঁসকে খাওয়ান। উন্মুক্ত পরিবেশে থাকায় ও প্রাকৃতিক খাবার পাওয়ায় এসব হাঁস অন্য এলাকার হাঁসের চেয়ে বেশি দিন ধরে ও বেশি ডিম দেয়। তাই তাঁদের খামারে লাভ বেশি। তাঁরা জানান, নদীর এক স্থানে খাবার ফুরিয়ে গেলে তাঁরা হাঁস ও অস্থায়ী খামারসহ নদীর অন্য স্থানে চলে যান। বর্ষাকালে নদীর পার পানিতে তলিয়ে গেলে খামারিরা হাঁসগুলো নিজেদের বাড়ি ও আশপাশে নিয়ে আসেন। এ সময় হাঁসের পুরো খাবার কিনতে হয় বলে খামারিদের লাভ কমে যায়। বদ্ধ পরিবেশের কারণে হাঁসের ডিম দেওয়ার ক্ষমতাও কমে যায়। বর্ষার পানি কিছু কমলেই খামারিরা হাঁস নিয়ে আবার নদীর পারে অস্থায়ী খামারে চলে যান।
খামারিদের তথ্যানুযায়ী, এক হাজার হাঁসের একটি খামারে প্রতিদিন গড়ে ৯০০ ডিম হয়। এতে সব খরচ বাদ দিয়ে দৈনিক কমপক্ষে চার হাজার টাকা আয় হয়।
ভাগ্য বদলেছে যাঁদের: মহরকোনা গ্রামের জিল্লু মিয়ার (৩৫) চলতে হতো ধারদেনা করে। ১০ বছর আগে স্বজনদের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে ৩৫০টি হাঁস দিয়ে খামার শুরু করেন তিনি। বর্তমানে তাঁর খামারে তিন হাজার হাঁস রয়েছে। এই খামারের আয় দিয়ে তিনি হাওরে ১৫ একর জমি কিনেছেন। তিনি বলেন, ‘হাঁস পালনই আমাকে সুদিন এনে দিয়েছে।’ হাঁসের খামার করে তাঁর মতো দারিদ্র্যকে জয় করেছেন আয়ুব আলী (৬৫), আবু কালাম (৩৫), সাইফুল (৩০), গিয়াস উদ্দিন (৫০), আলী ইসলাম (৪০), নূরু ইসলাম (৪২), নাসু মাঝি (৩৮), সোনালী (৩৫), করম আলী (৩০), উসমান (৩২), কুদ্দুস মিয়াসহ (৩৬) আরও অনেকে।
তিন বছর আগে ১৮ জন হাঁসের খামারি নিকলী নতুন বাজারে গড়ে তোলেন ‘হাঁস সমিতি’। উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের সহযোগিতা না পাওয়ার অভিযোগ করে সমিতির সাধারণ সম্পাদক করম আলী বলেন, ‘খামারে হাঁসের রোগ দেখা দিলে টাকা দিয়ে চিকিৎসক আনতে হয়। ওষুধও পাওয়া যায় না।’
হাঁসের খাবারের জন্য খামারিরা প্রতি খাঁচা শামুক কেনেন ১০ টাকা করে। নদী থেকে এই শামুক ধরে খামারিদের কাছে বিক্রি করে সংসারের অভাব দূর করেছেন হারুন, দেনু, মাহবুব ও বাহার উদ্দিনসহ অনেকে। তাঁরা জানান, নিকলীতে শামুক শিকার করা দুই শতাধিক নৌকা রয়েছে। প্রতি নৌকায় থাকে তিনজন।
নিকলীর খামারগুলোর ডিম স্থানীয় বাজারের চাহিদা মিটিয়ে রাজধানীতে যায়। ডিম ব্যবসায়ী করিম, বিল্লাল, নাছির, আলাউদ্দিন ও করম আলী জানান, তাঁরা প্রতিদিন ঢাকার ঠাটারীবাজারের বিভিন্ন আড়তে প্রায় দুই লাখ ডিম বিক্রি করেন। এতে তাঁদের কর্মসংস্থান হয়েছে।
জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের বক্তব্য: নিকলী উপজেলার সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কারার বুরহান উদ্দিন বলেন, ‘নিকলীর নদীর পারগুলোতে যেভাবে হাঁসের খামার গড়ে উঠেছে তা দেখে খুব ভালো লাগে। শুধু সদর ইউনিয়নেই খামার আছে দুই শতাধিক।’
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা এম এ জলিল বলেন, ‘ওষুধের সরবরাহ কম থাকায় খামারিদের ওষুধ দিতে পারি না। লোকবল কম থাকায় ঠিকমতো খামারগুলো পরিদর্শন করাও সম্ভব হয়ে ওঠে না।’
নিকলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ফজলুর রহমান বলেন, উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের পর্যাপ্ত ওষুধ না থাকায় খামারিদের অসুবিধার বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে।

তথ্য সূত্রঃ প্রথম আলো (তারিখ: ২০-১১-২০১০)

হাঁসের ঝাঁকে সুখের হাসি

Friday, October 22, 2010

খামারের হাঁসগুলোকে খাবার দিচ্ছেন শামসুল আলম

সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার উত্তর-পশ্চিম এলাকা পুরোটাই হাওরবেষ্টিত। গত বোরো মৌসুমে ওই এলাকার চারটি হাওরের ফসল রক্ষায় ছিল একটি বেড়িবাঁধ। প্রকৃতির কৃপায় বাঁধ টিকলে চার হাওরের বোরো রক্ষা পায়। কিন্তু এবার আর শেষরক্ষা হলো না। অন্যান্য হাওরের মতো বাঁধ ভেঙে ফসলডুবির ঘটনা ঘটে এখানেও। ভবিষ্যতের চিন্তায় অস্থির হয়ে ওঠে হাওরপারের কৃষক। এর মধ্যেও ব্যতিক্রম আছে। শামসুল আলম (৩৫) নামের এক কৃষক ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় ব্রতী হলেন। যে বৈরী প্রকৃতি তাঁর ধানের গোলা শূন্য করেছে, সেই প্রকৃতিকে উপজীব্য করে ধানশূন্য গোলায় হাঁসপালন শুরু করলেন তিনি।
ফসলডুবির পর টানা দুই মাসের চেষ্টায় শামসুল তাঁর হাঁসের ঝাঁকে সংখ্যা বাড়িয়ে এক হাজার পূর্ণ করলেন। শুধু দেখভাল করার মধ্য দিয়ে হাওরের জল-প্রকৃতিতে বেড়ে উঠছে হাঁস। কার্তিক মাস থেকে এক হাজার হাঁস তিন মাসে অন্তত ৭০০-৭৫০টি ডিম দেবে। পরে পুরো হাঁসের ঝাঁকে বিক্রি করে ফসলডুবির আর্থিক ক্ষতি পুষিয়ে, বোরো রোপণের পুঁজি সংগ্রহ হবে। এতে কোনো ধারদেনারও দরকার পড়বে না। যে পানি কেড়ে নিল ধান, সেই পানিই যেন শামসুলকে দিল স্বচ্ছলতার ‘নিদান’।
শামসুল আলমের বাবা আবদুল বশির মারা গেছেন প্রায় ১০ বছর আগে। ধান চাষ ছাড়া গৃহস্থ পরিবারের ছেলে হিসেবে বাড়তি কিছু শিক্ষা তিনি ছেলে শামসুলকে জীবদ্দশায় দিয়ে গিয়েছিলেন। প্রয়াত বাবার কথা স্মরণ করে ফসলহারা শামসুল ভাবলেন, যে প্রকৃতি ফসল কেড়ে নিয়েছে, সেই প্রকৃতিকে অবলম্বন করে হাঁস পালন করবেন। যৌথ পরিবারের তিন ভাইকে সঙ্গে নিয়ে নেমে পড়লেন ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায়। একটি ব্যাংক থেকে ছয় মাসের জন্য কিছু টাকা ঋণ নিয়ে গোয়ালঘরে পুষতে শুরু করলেন হাঁস। ৫০ থেকে ১০০ এভাবে শুরু। পর্যায়ক্রমে তিন দিন বয়সী হাঁসের ছানা কিনে এক হাজার পূর্ণ করেন শামসুল।
হাঁসের ঝাঁকে খাবার দেওয়ার সময় শামসুল জানান, প্রতিটি হাঁসের ছানা ৩৩ টাকা করে কেনা। আর তিন মাস পর প্রতিটির দাম পড়বে ২০০ টাকার বেশি। মাঝখানে লাভ হিসেবে তিন মাস পাওয়া যাবে ডিম। এ লাভ থেকে দেনা শোধ করে আগামী মৌসুমে বোরো ফলানোর পুঁজি হয়ে গেল।
হাঁস বেশি খায়—এ ভয়ে গৃহস্থরা হাঁস পালতে সাহস পান না বলে জানান শামসুল। গেল বার ফসলডুবির পর প্রকৃতি তাঁদের বেকার করে দেয়। তখন অনেকটা জেদের বশে হাঁসপালন শুরু করেন। জেদ কার সঙ্গে? প্রশ্ন শুনে সহাস্যে শামসুল বলেন, ‘যে পানিতে ধান নিল, হেই পানিই তো হাঁস পালার সুযোগ করি দিল...!
শামসুলের প্রতিবেশী শিবপুরের ধীরেন্দ্র বিশ্বাস জানান, গৃহস্থ পরিবারের কোনো সদস্যের সঙ্গে সাক্ষাৎ হলে সাধারণত ফসলাদি নিয়েই কথা হয়। কিন্তু শামসুলের সঙ্গে কারও সাক্ষাৎ হলে কুশলাদি বিনিময়ের পর পরই ‘হাঁসের খবর কিতা...?’ বলে জানতে চান অনেকে।
ফসল হারিয়ে একজন শামসুলের হাঁসপালনের এ উদ্যোগ ঘুরে দাঁড়ানোর অনন্য একটি চেষ্টা বলে অভিহিত করেন সিলেট কৃষক কল্যাণ সংস্থার আহ্বায়ক আবদুল হান্নান আনসারী। তাঁর মতে, হাওরাঞ্চলে বর্ষার এ সময়টা হচ্ছে অলস সময়। কিন্তু এবারকার চিত্র ভিন্ন। ফসলডুবির পর কৃষক পরিবারে সেই আরাম-আয়েশ আর নেই। হাওরে হাঁসপালন প্রতি গৃহস্থ পরিবারেই বিচ্ছিন্নভাবে দেখা যায়। হাওরপারের মানুষের এ উদ্যোগ, এই শিক্ষা কোনো দপ্তর দেয়নি, প্রকৃতি থেকে অর্জিত।

তথ্য সূত্রঃ প্রথম আলো, তারিখ: ২২-১০-২০১০

সবজি চাষে ভাগ্য বদল

Tuesday, September 7, 2010



সব সাধকের বড় সাধক আমার দেশের চাষা
দেশ মাতারই মুক্তিকামী দেশের সে যে আশা।”

হ্যাঁ, সব সাধকের চেয়ে বড় সাধক হলেন আমার দেশের কৃষক। রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে যে কৃষক শরীরের ঘাম ঝরিয়ে উৎপাদন করেন সোনার ফসল। পুরো জাতি তাকিয়ে থাকে ওই কৃষকের দিকে, যে কৃষকের কারণে অর্থনৈতিক মুক্তি আসে নিজের, পরিবারের এবং সমাজের। ফলে বদলে যায় একটি জনপদ, উৎসাহিত হয় আশেপাশের অগণিত মানুষ। এমনই একজন কৃষকের নাম মোঃ খাইরুল ইসলাম। যিনি শাক-সবজি চাষাবাদ, মুরগি আর মাছের খামার করে বছরে আয় করছেন ১২/১৪ লাখ টাকা। নিজে বদলে যাওয়ার পাশাপাশি পরিবারে এনেছেন সুখের হাসি।

কালিয়াকৈর উপজেলার বোয়ালী ইউনিয়নের খাইরুল ইসলাম ২০০৩ সালে এইচএসসি পাশ করার পর ডিগ্রিতে ভর্তি হয়ে পড়াশুনার পাশাপাশি ঢাকায় একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি নেন। কিন্তু পরাধীন ওই চাকরিতে নিজেকে মানিয়ে নিতে না পেরে বাড়িতে ফিরে মাত্র ৫ হাজার টাকা মূলধন নিয়ে সাড়ে ৩ বিঘা পৈত্রিক জমিতে শুরু করেন পেঁপে চাষ। ছোটবেলা থেকেই কৃষি কাজের প্রতি খাইরুলের ছিল প্রচণ্ড রকম দুর্বলতা। কঠোর পরিশ্রম আর দক্ষতার কারণেই প্রথমবার পেঁপে চাষে খাইরুল দেখেন সফলতার মুখ। সব খরচ বাদে তার লাভ হয় প্রায় ১ লাখ টাকা। পরের বছর অন্যের জমি লিজ নিয়ে ব্যাপকভাবে শুরু করেন পেঁপে চাষ। সাথী ফসল হিসেবে নানা জাতের শাক-সবজি চাষ করেন। লাভ হয় প্রত্যাশার চেয়ে বেশি। লাউ, টমেটো, ফুলকপি, বাঁধাকপি, লাল শাক, পালং শাক ইত্যাদি ফসল ফলিয়ে খাইরুল আনেন অর্থনৈতিক সচ্ছলতা। তার উৎসাহে এলাকার অন্য বেকার যুবকরাও ঝুঁকতে থাকেন শাক-সবজি চাষে। ইতিমধ্যে খাইরুল গড়ে তোলেন ব্রয়লার মুরগি এবং মাছের খামার। মাত্র ৫শ’ বাচ্চা নিয়ে তার পোল্ট্রি খামারের যাত্রা শুরু। বর্তমানে প্রায় ৫ হাজার মুরগি রয়েছে খামারে। এক বিঘা জলাশয়ে মাছের খামার শুরু হলেও সেটা সম্প্রসারিত হয়ে বর্তমানে প্রায় ১৫ বিঘায় দাঁড়িয়েছে। তাছাড়াও খাইরুল আখ চাষ করে সফলতা পেয়েছেন। সব মিলিয়ে এই কৃষকের সকল প্রকার খরচ বাদে বার্ষিক আয় দাঁড়িয়েছে ১২/১৪ লাখ টাকা। খাইরুলের বাগান ও খামারে ১০/১২ জন দিনমজুর কাজ করে মেটাচ্ছেন তাদের পরিবারের চাহিদা।

এলাকার বেকার যুবক ও তার সমবয়সীদের কৃষি কাজে আত্মনিয়োগ করার জন্য খাইরুল উৎসাহিত করেন নিয়মিত। আদর্শ একজন কৃষক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে চান তিনি। দেশের বেকার যুবকদের যদি সরকার সহজ শর্তে ঋণ দিয়ে কৃষি কাজে উৎসাহিত করেন তাহলে অসংখ্য বেকার যুবক নিজের ভাগ্য বদলাতে পারবে বলে মনে করেন সফল সবজি চাষি খাইরুল ইসলাম।

চার কোটিপতি চাষির গল্প

Wednesday, September 1, 2010

গাছে ফল, মাঠে সবজিন্ধ এই নিয়ে ঈশ্বরদী। মাঠের পর মাঠ শুধু সবজি আর সবজি। গ্রামের পর গ্রাম চোখে পড়বে বিভিন্ন রকম ফলবাগান। এখানকার এমন কোনো বাড়ি নেই, যার চার পাশের পতিত জায়গায় কোনো সবজি কিংবা ফলের চাষ করা হয়নি। শুধু পাবনা জেলা নয়, দেশের বিভিন্ন জেলায় এখানকার সবজির সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে। বহু শিক্ষিত যুবক সবজি চাষে নেমে স্বনির্ভর হয়েছেন। এমন সবজি ও ফল বিপ্লবের পেছনে ঈশ্বরদীর চার দিকে চারজন পরিশ্রমী ও অগ্রণী চাষির অবদান রয়েছে। তারা নিজেরা হয়েছেন সফল ও কোটিপতি, অন্য দিকে তৈরি করেছেন আরো অনেক সফল চাষি।

কলেজ পালানো ছেলে কোটিপতি লিচুচাষি ১৯৮৩ সাল। ঈশ্বরদীর মিরকামারি গ্রামের অবস্খাপন্ন চাষি তোরাব মণ্ডল ছেলে আবদুল জলিল কিতাবকে পড়াশোনার জন্য রাজশাহী কলেজে ভর্তি করিয়েছিলেন। কিন্তু ছেলে পড়াশোনা বাদ দিয়ে কলেজ ছেড়ে পালালেন। বাড়ি এসে শুরু করলেন লিচুচাষ। ছেলের এমন পাগলামি দেখে বাবা খুব ক্ষুব্ধ হলেন। ছেলে লেখাপড়া করে চাকরি করবে, তা না করে শুরু করল লিচু বাগান। বাবা ধরে নিলেন এ ছেলে দিয়ে আর কিছু হবে না। কিন্তু কী অবাক ব্যাপার, বাবার সব আশঙ্কা ভুল প্রমাণ করে ছেলে এখন দেশখ্যাত লিচুচাষি।
শুরু করেছিলেন এক বিঘা জমিতে ১০টি চারা লাগিয়ে। কিন্তু ১৯৯০ সালের মধ্যে ৫০ বিঘা জমিতে লিচু বাগান করে সবাইকে অবাক করে দেন। কিতাব মণ্ডল এ বছর পর্যন্ত ৬৫ বিঘা জমিতে লিচু বাগান করেছেন। তিনি জানালেন, ঈশ্বরদীতে তার বাগানেই সবচেয়ে বেশি জাতের লিচু রয়েছে। খরচ বাদ দিয়ে প্রায় এক কোটি টাকার লিচু বিক্রি হবে বলে আশা করছেন।
বাগান পরিচর্যায় ২২ জন শ্রমিক কাজ করে। পরিচর্যা খরচের বেশ কিছুটা উঠে আসে বাগানে সাথী ফসল হিসেবে চাষ করা হলুদের মাধ্যমে। ১৫ বিঘায় চাষ হয়েছে আপেল কুল ও বাউকুল।
লিচু নিয়ে কোনো গবেষণা নেই। লিচুর পরিচর্যার জন্য কোনো আলাদা ওষুধ বাজারে পাওয়া যায় না। কিতাব বললেন, যে পরিমাণ লিচু নষ্ট হয় তা থেকে অনায়াসে অ্যালকোহল উৎপাদন সম্ভব। বাইরে থেকে স্পিরিট আমদানির প্রয়োজনও পড়বে না। এ জন্য সরকারি উদ্যোগ প্রয়োজন। এ ছাড়া লিচু গাছ থেকে উত্তোলনের সাথে সাথে বাজারজাত করা হয়। উন্নত সংরক্ষণ ব্যবস্খা থাকলে দু-তিন মাস ধরে লিচু বাজারজাত করা যেত। এতে চাষি-ভোক্তা উভয়েই লাভবান হতেন।

ধনিয়া চাষে ধনী ময়েজ অপ্রধান মসলা ধনিয়া পাতার চাষ করেও দারিদ্র্য বিমোচন করা সম্ভব। তবে ধনিয়া পাতার জাতটি হতে হবে হাইব্রিড আর চাষ করতে হবে আগাম। তাহলেই বাজিমাত! যেমন করেছেন পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার বড়ই চড়া গ্রামের চাষি সিদ্দিকুর রহমান ময়েজ। তিনি আগাম হাইব্রিড জাতের ধনিয়া পাতা চাষ করেই ভূমিহীন থেকে কোটিপতি। হাইব্রিড ধনিয়ার পাশাপাশি তিনি অন্যান্য মসলা ও সবজি চাষ করেন। মাত্র মাধ্যমিক পাস এ চাষি ঈশ্বরদীর এক সফল ও মডেল চাষি। ধনিয়া চাষ কেমন লাভজনকন্ধ এমন প্রশ্নে তিনি জানান, প্রতি বিঘায় ২০ থেকে ২৫ মণ ফলন পাওয়া যায়। প্রতি মণ পাতা গড়ে চার-পাঁচ হাজার টাকা বিক্রি হয়। ধনিয়া আবাদের জন্য সাধারণ চাষিরা যখন ক্ষেতে চাষ শুরু করে তার অন্তত পাঁচ থেকে ছয় মাস আগে একজন সবজি চাষি হিসেবে তিনি ধনিয়া পাতার জন্য চাষ শুরু করেন। একই জমিতে দুই-তিন দফা ধনিয়ার আবাদ হয়। গাছের বয়স দুই মাস হলেই বিক্রি করে দেয়া হয়। খরচ যায় জমির লিজমানিসহ প্রায় ছয় থেকে সাত হাজার টাকা।
ধনিয়া পাতার আবাদে অভাবনীয় সাফল্যের পর চাষি ময়েজ অন্যান্য সবজি ও ফল চাষেও এগিয়ে এসেছেন। এর মধ্যে কুল, গাঁজর, পেঁপে, চিচিংগা, বারোমাসী পিঁয়াজ উল্লেখযোগ্য। ২০০৪ সালে ৪১ বিঘাতে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ করে তিন লাখ টাকা লাভ করেন। ২০০৬ সালে ৮০ বিঘা জমিতে এক বিরাট কুল বাগান গড়ে তোলেন। ২০০৭ সালে কুল বিক্রি করে এক কোটি ১৫ লাখ টাকা আয় করেন। এ বছর তার গাজর চাষে ১০ লাখ টাকা লাভ হয়। ২০০৮ সালে কুল চাষে তার ৯৫ লাখ টাকা আয় হয়েছিল। ২০০৯ সালে ১০০ বিঘাতে কুল চাষ করেন। দাম পড়ে যাওয়ায় লোকসান হয়েছে। পেয়ারা বাগান করেছেন ২০ বিঘাতে। সবে পেয়ারা উঠতে শুরু হয়েছে।

গরুর ব্যাপারী এখন গাজর বাদশা সাত থেকে আট বছর আগে লোকে তাকে চিনত গরুর দালাল হিসেবে। বিত্ত-বৈভব ছিল না, ছিল না সামাজিক মর্যাদা। থাকার মধ্যে ‘শুধু বিঘে দুই ভুঁই ছিল’ তার। সেই দুই বিঘা জমি আজ জায়দুলকে গরুর ব্যাপারীর পরিচিতি মুছে করেছে গাজর বাদশা। ঈশ্বরদী উপজেলার ভাড়ইমারী গ্রামের ছাত্তারের ছেলে জায়দুল ইসলাম এখন দেশের অন্যতম প্রধান গাজর চাষি। জায়দুল জানান, লেখাপড়া না জানায় চাকরি বা অন্য ব্যবসায় যেতে না পারায় গরুর ব্যবসা ধরি। লোকে এ ব্যবসাকে বাঁকা চোখে দেখত। তারও খুব ভালো লাগেনি সে ব্যবসা। এরকম সময়ে এলাকার কৃষি কর্মী আব্দুল খালেক তাকে সবজি চাষের পরামর্শ দেন। জায়দুল ছেড়ে দেন গরুর ব্যবসা। কোমর বেঁধে নামেন সবজি চাষে। দুই বিঘা জমিতে গাজর চাষ করে প্রথম ৫০ হাজার টাকা মুনাফা পান। পাঁচ বছরের মাথায় ৩০ বিঘা জমিতে গাজর চাষ করেন। এখন তিনি চল্লিশ বিঘা জমিতে গাজর চাষ করেন। এই আট বছরের মাথায় তার নিজস্ব সম্পত্তির পরিমাণ ২৫ বিঘা। গাজর চাষাবাদ ও বিপণন সম্বধে জায়দুল আমাদের জানান, একই ক্ষেতে দুই দফায় গাজর আবাদ করা হয়। প্রথম ধাপে ভাদ্র মাসের প্রথম সপ্তাহে ক্ষেতে বীজ বোনা হয়। এই গাজর আগাম সবজি হিসেবে চড়া দামে (প্রতি কেজি ৪০ থেকে ৫০ টাকা দরে) বিক্রি করা হয়। প্রথম দফায় গাজর তোলার পর দ্বিতীয় দফায় গাজর বোনা হয়। এই শেষের বার যখন গাজর তোলা হয় তত দিনে গাজরের বাজার নেমে যায়। এ জন্য গাজর কোল্ড স্টোরেজে রেখে দেন। জায়দুল জানান, প্রতি বিঘায় ৫০ থেকে ১২০ মণ ফলন পাওয়া যায়। বিভিন্ন খরচ বাদ দিয়ে বিঘাপ্রতি ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা মুনাফা থাকে।

পেঁপের রাজা বাদশা মিয়া ছাত্রজীবন থেকেই শাকসবজি আলু, টমেটো, গাজর, বেগুন ইত্যাদির চাষ করতেন। আজ শাহজাহান আলী ওরফে বাদশা মিয়ার নিজস্ব ৪০ বিঘা জমির ওপর শুধুই পেঁপের বাগান।
বাদশা মিয়া জানালেন, ৭৭ সালে বেগুন চাষে সাফল্য অর্জন করি। এক বিঘা জমিতে ৩৩ হাজার টাকা মুনাফা অর্জন করেছিলাম। মূলত তখন থেকেই সবজি চাষ পেশা হিসেবে নেয়ার সিদ্ধান্ত নিই। ৮৮-৮৯ সালে ধনিয়ার জমি লিজ নিয়ে ৮০ বিঘা জমিতে শাকসবজি উৎপাদন করি। এতে সাফল্যের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৯১ সালে রাষ্ট্রপতি পুরস্কার লাভ করি। ১৯৯৭-৯৮ সালে বঙ্গবìধু কৃষি পদক লাভ করি। এখন ৮২ একর জমির ওপর গড়ে তুলেছেন মা-মনি কৃষি খামার। যেখানে প্রায় ৩৫ প্রকার সবজি ও ছয় থেকে সাত জাতের ফল চাষ হচ্ছে। গড়ে তুলেছেন একটি ডেয়ারি ফার্ম। দেশের মধ্যে তিনিই প্রথম বাণিজ্যিক ভিত্তিতে শরিফা বাগান করছেন। তার খামারে সব মিলিয়ে ৫০ থেকে ৬০ জন লোকের কর্মসংস্খান হয়েছে। বাদশা মিয়া আমাদের জানান, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর, বারি, বিনা, বিএডিসি, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতায় তিনি খামার পরিচালনায় সাফল্য লাভ করেছেন।

লেখক:আমিনুল ইসলাম জুয়েল
তথ্যসূত্র: দৈনিক নয়াদিগন্ত

কেঁচো চাষে লাখপতি


স্ত্রীকে নিয়ে কেঁচো পরিচর্যায় ব্যস্ত আবদুল করিম। মেহেরপুরের এই কৃষক কেঁচো চাষের মাধ্যমে তৈরি করেছেন কৃষিবান্ধব পরিবেশ
ছবি: প্রথম আলো

কেঁচোর মধ্যে গা-ঘিনঘিন ভাব যতই থাকুক, প্রাণীটি কৃষকের পরম বন্ধু। মাটির উর্বরা শক্তি বাড়াতে প্রাকৃতিক লাঙল হিসেবে কাজ করে কেঁচো। মাটির জৈব সার তৈরিতেও এর জুড়ি নেই। একটা সময় ছিল, যখন মাটি খুঁড়লেই কেঁচো বের হতো। বর্ষাকালে যেখানে-সেখানে কিলবিল করত এগুলো। কিন্তু মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক সার ব্যবহারের ফলে এখন জমির উর্বরা শক্তি যেমন কমেছে, কেঁচোও কমেছে অনেক। এর কুফল ভোগ করছেন কৃষকেরা। এসব কৃষককে কেঁচো সরবরাহ করে জমির উর্বরতা শক্তি বাড়াতে সহায়তা করছেন মেহেরপুরের ভূমিহীন চাষি আবদুুল করিম (৫৫)। একই সঙ্গে কেঁচো চাষকে তিনি একটি লাভজনক কৃষিবান্ধব ব্যবসায় নিয়ে গেছেন।

যেভাবে শুরু: ২০০০ সালের বন্যার সময় মেহেরপুর সদর উপজেলার গোপালপুর গ্রাম ছেড়ে ভূমিহীনদের জন্য গড়া আমঝুপি ইউনিয়নের রঘুনাথপুর আশ্রয়ণে আশ্রয় নেন করিম। সেখানে অন্যের এক বিঘা জমি ইজারা নিয়ে তিনি চাষাবাদ শুরু করেন। একই সঙ্গে শ্রম বিক্রি করেও জীবিকা চালাতেন। ২০০৭ সাল পর্যন্ত করিম ২০ হাজার টাকা জমান। তাঁর ইচ্ছা ছিল, ওই টাকা দিয়ে আরও দুই বিঘা জমি ইজারা নেবেন। কিন্তু সে বছর সার ও বীজের তীব্র সংকট দেখা দেয়। তখন মেহেরপুর সদর উপজেলার কৃষি কার্যালয়ের ব্লক সুপারভাইজার আশরাফুল ইসলাম তাঁকে লালা (লাল) জাতের কেঁচো সংগ্রহ করে তা গোবরে চাষ করে জৈব সার তৈরির পরামর্শ দেন।

পরামর্শ মনে ধরে করিমের। শুরু হয় তাঁর কেঁচো খোঁজা। একই বছর অক্টোবরে তিনি ভারতের নদীয়া জেলার কৃষ্ণনগর থানার শান্তিপুরের বাসিন্দা প্রদীপের বাড়ি যান। সেখানে ২০ দিন থেকে তিনি কেঁচো চাষের ওপর প্রশিক্ষণ নেন। এ সময় এলাকায় ঘুরে তিনি দেখেন, অধিকাংশ বাড়িতে কেঁচো দিয়ে জৈব সার তৈরি করা হচ্ছে। এ সার ব্যবহারের গুণে আশাব্যঞ্জক ফল পাচ্ছেন পশ্চিমবঙ্গের কৃষকেরা।

প্রশিক্ষণ শেষে পাঁচ হাজার টাকায় ২০ হাজার কেঁচো কিনে দেশে ফেরেন করিম। কেঁচোর প্রজনন ও জৈব সার তৈরির জন্য তিনি ১২ হাজার টাকায় একটি গাভি কেনেন। শুরু হয় তাঁর গোবরে কেঁচো চাষ করে সার তৈরি। এসব কেঁচো দেখতে লাল। গোবর খেয়ে এগুলো যে মল ছাড়ে, এটিই জৈব সার। দেখতে চায়ের দানার মতো লালচে কালো। প্রথমে ইজারা নেওয়া জমিতে এ সার ব্যবহার করে কাঙ্ক্ষিত ফল পান করিম। তাঁর জমিতে বাড়তি ফলন দেখে আশপাশের চাষিরা এ ব্যাপারে উত্সাহী হন। তাঁরা এসে কেঁচো ও সারের জন্য ধরনা দেন করিমের কাছে। এতে তাঁর আয়ের পথ সুগম হয়।
সাফল্যের সিঁড়ি বেয়ে: নিজের গরু থাকায় কেঁচো চাষ ও সার উত্পাদনে করিমের কোনো ব্যয় নেই। শীতকাল ছাড়া সারা বছরই কেঁচোর বাচ্চা হয়। আর এগুলোর বংশবিস্তারও খুব দ্রুত ঘটে। এ কারণে মাত্র দুই বছরে করিমের ২০ হাজার কেঁচো পাঁচ লাখে পৌঁছে।

প্রতিটি কেঁচো তিন টাকা দরে তাঁর পাঁচ লাখ কেঁচোর দাম এখন ১৫ লাখ টাকা। এর মধ্যে এক লাখ কেঁচো তিনি তিন লাখ টাকায় বিক্রি করেছেন। সার বিক্রি করে পেয়েছেন প্রায় এক লাখ টাকা। এই টাকা দিয়ে তিনি পাঁচটি গরু কিনেছেন এবং চাষাবাদের জন্য ইজারা নিয়েছেন ২০ বিঘা জমি। স্ত্রী ও সন্তানেরা এসব কাজে তাঁকে সহযোগিতা করছে।
করিম বলেন, ‘যে গরুতে দুধ দেয়, তার লাথিও ভালো। তাই সারা দিন কেঁচো নাড়াচাড়া করতে খারাপ লাগে না। মনে হয় যেন টাকা নাড়াচাড়া করছি।’

উপকার পেলেন যাঁরা: করিমের জৈব সার ব্যবহারকারী আমঝুপি ইউনিয়নের চাষি আলামিন হোসেন, জাহিদুর ইসলাম, শাহজাহান আলী, কাওসার আলী ও আশরাফুল ইসলাম বলেন, তাঁরা এখন জমিতে রাসায়নিক সারের বদলে করিমের উত্পাদিত জৈব সার ব্যবহার করছেন। এতে তাঁদের উত্পাদন ব্যয় যেমন কমেছে, তেমনি জমির উর্বরতা শক্তি বেড়ে ফসলের পুষ্টিমানও বহু গুণ বেড়েছে।
আমঝুপি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান বোরহান উদ্দিন বলেন, করিমের জৈব সার এ অঞ্চলের মাটি ও কৃষককে বাঁচিয়েছে।

মেহেরপুর সদর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা জাহিদুল আমিন বলেন, আদর্শ মাটিতে পাঁচ ভাগ জৈব উপাদান থাকে। কিন্তু মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক সার ব্যবহারের ফলে মেহেরপুরের মাটিতে এখন জৈব উপাদান আছে মাত্র এক ভাগ। গোবরে চাষ করা করিমের কেঁচো-সারে জৈব উপাদান আছে ৩০ ভাগ। আবার এই সারে মাটির আরও ১০ ধরনের উপাদান থাকায় ফসল বাড়ার সঙ্গে এর পুষ্টিমানও বাড়ছে। এ সার ব্যবহারে মাটির উর্বরতা শক্তিও বাড়ছে বহু গুণ। তিনি আরও বলেন, আমঝুপি ইউপির সহায়তায় মেহেরপুর সদর উপজেলা কৃষি সম্প্র্রসারণ বিভাগ প্রতিটি ওয়ার্ডে করিমের মতো কেঁচো-সার উত্পাদনের ভাটি (বেড) তৈরির পরিকল্পনা নিয়েছে। দেশের কয়েক জেলায় আবর্জনা পচিয়ে কেঁচো-সার তৈরি করা হলেও একমাত্র করিম গোবরে কেঁচো চাষ করে উত্কৃষ্টমানের জৈব সার তৈরি করছেন, যা একটি অনুকরণীয় উদাহরণ।

তথ্যসূত্র: প্রথম আলো

 দেশি মাছের কৃত্রিম প্রজননে সাফল্য

Tuesday, August 31, 2010


বিলুপ্তপ্রায় ও বিপদাপন্ন দেশীয় কৈ, মেনি (ভ্যাদা), পাবদা, শিং ও মাগুর মাছের শুক্রাণু হিমায়িতকরণ পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করে পুনরায় পোনা উৎপাদনে সফল হয়েছেন গবেষকেরা। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের ফিশারিজ বায়োলজি অ্যান্ড জেনেটিক্স বিভাগের ওই গবেষকেরা জানিয়েছেন, হিমায়িতকরণ প্রযুক্তি ব্যবহার করে ১০০ বছর পরও ওই সব প্রজাতির মাছ পুনঃ উৎপাদন করা সম্ভব হবে।
গতকাল সোমবার দুপুরে মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানানো হয়। এতে লিখিত বক্তব্য পড়েন প্রধান গবেষক অধ্যাপক মো. রফিকুল ইসলাম সরদার। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল (বিএআরসি) ও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় রিসার্চ সিস্টেমের (বাউরেস) অর্থায়নে এ গবেষণা করা হয়। ২০০৮ সালে এ গবেষণা শুরু হয় জানিয়ে তাঁরা দাবি করেন, বিশ্বে এ ধরনের গবেষণা এটাই প্রথম।
অধ্যাপক রফিকুল জানান, দেশীয় প্রাকৃতিক জলাশয়ের মাছ অত্যন্ত সুস্বাদু হলেও প্রতিনিয়তই আমরা চাষ করা মাছের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছি। এ দেশে প্রায় ২৬৫ প্রজাতির মাছ থাকলেও প্রায় ২৫ প্রজাতির মাছ ইতিমধ্যেই জলাশয় থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। হুমকির সম্মুখীন আরও প্রায় ৫০ প্রজাতির মাছ। জলাশয় ভরাট ও আবাসন সৃষ্টির কারণে অন্যান্য প্রজাতির মাছের উৎপাদনও কমে যাচ্ছে। মৎস্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ তথ্যমতে, ২০০৭-০৮ সালে দেশীয় শিং, কৈ ও মাগুর মাছের উৎপাদন ছিল প্রায় ৭৬ হাজার মেট্রিক টন, যা প্রয়োজনের তুলনায় নিতান্তই কম। এসব দিক বিবেচনা করেই হিমায়িতকরণ পদ্ধতিতে দেশীয় প্রজাতির কৈ, মেনি, পাবদা, শিং ও মাগুর মাছের বংশ সংরক্ষণের এ প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেন তাঁরা।
রফিকুল আরও জানান, হিমায়িত পদ্ধতি বর্তমান সময়ের হ্যাচারিতে কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে উৎপাদিত পোনার চেয়ে ভালো। কারণ, কৃত্রিম প্রজননের ফলে পোনার মধ্যে ইনব্রিডিং (আত্মীয় সম্পর্কের মধ্যে প্রজনন) এবং হাইব্রিডাইজেশনের (সংকরায়ণ) সৃষ্টি হয়। ফলে উৎপাদন কমার পাশাপাশি দেশীয় প্রজাতির মাছের অস্তিত্ব দিন দিন বিলীন হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু হিমায়িত মাছের শুক্রাণু দিয়ে প্রজনন করালে দেশীয় প্রজাতির এসব মাছ বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা পাবে।
গবেষণায় সহকারী হিসেবে ছিলেন ফিশারিজ বায়োলজি অ্যান্ড জেনেটিক্স বিভাগের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী সংকর কুমার সাহা, মো. ফজলে মনোয়ার সরকার, মো. আবুল কালাম আজাদ ও মনিরুজ্জামান।

সূত্রঃ প্রথম আলো

আঙুর চাষে চার কৃষকের অভাবনীয় সফলতা

Saturday, August 7, 2010


বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের চার কৃষক। সফলতা পেয়েছেন নিজ নিষ্ঠা, কর্ম আর আত্মপ্রত্যয় বলে।রানী ভবানির নাটোরের বনসাঁই শিল্পী খালিদ-বিন-জালাল ওরফে বাচ্চু। যিনি আঙুর ভাই নামে পরিচিত হয়ে উঠেছেন। প্রাচীন রাজশাহীর পুঠিয়ার কৈপুকুরিয়া গ্রামের সিরাজউদ্দিন প্রামানিক। তিনি নিজের নামের আগে চাষী বলতে বেশি ভালবাসেন। সিরাজউদ্দিন একজন সফল মৎস্য চাষী। রাজশাহীর আদিবাসী অধ্যুষিত অঞ্চল তানোরের কৃষক নূর মোহাম্মদ ধানের জাদুঘর গড়ে তুলেছেন। আমের রাজধানী বলে পরিচিত চাঁপাইনবাবগঞ্জের তরুণ কৃষক মনজুর রহমান হাইব্রিড টমেটোর চাষ করে পরিবারের স্বাচ্ছন্দ্য ফিরিয়ে এনেছেন।
উত্তরাঞ্চলের এই চার কৃষক নিজের শ্রম, মেধা আর গবেষণার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা পেয়েছেন সফল কৃষক হিসেবে। সফল এই চার কৃষককে অনুসরণ করে এই অঞ্চলের অন্যান্য কৃষকও এখন নিজেদের ভাগ্য বদলানোর সংগ্রামে নেমে পড়েছেন।
নাটোর শহরের কানাইখালি মহল্লায় নিজ বাড়ির আঙিনা ও বাড়ির আশপাশের মাত্র ছয় শতাংশ জমির ওপর আঙুর চাষ ও আঙুর নিয়ে গবেষণা চালিয়ে আসছেন দেড় দশক ধরে। হয়ে উঠেছেন আঙুর বিশেষজ্ঞ। তিনি বছরে আড়াই মণ আঙুর উৎপাদন করেন। হর্টিকালচার বিষয়ে কোন রকমের একাডেমিক ডিগ্রি ছাড়া নেই তার। শুধু আছে দেশি-বিদেশি বই পড়ে হাতে-কলমে কাজ করার অভিজ্ঞতা। অর্জিত অভিজ্ঞতার মাধ্যমে তিনি সফল হয়েছেন।
রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার সিরাজউদ্দিন প্রামানিক বাড়ি বিক্রি করে মৎস্য চাষ শুরু করেছিলেন। এখন তার ৭ টি পুকুরে বিভিন্ন জাতের মাছের চাষ হয়। এর মধ্যে ৩০ বিঘা জমির ওপর রয়েছে একটি বড় পুকুর। যেখানে খাচার মধ্যেও মাছ চাষ হচ্ছে। এছাড়া আরও ১০ বিঘা জমির ওপর লেবু, আম, খেজুরের চাষ করেন তিনি। শুধু মাছ চাষ করেই তিনি বছরে প্রায় ১০ লাখ টাকা আয় করেন।
তানোরের গোল্লাপাড়ার কৃষক নূর মোহাম্মদ মাত্র সাড়ে সাত বিঘা জমির ওপর গড়ে তুলেছেন ধানের জাদুঘর। গত ১৫ বছরে তিনি প্রায় ২০০ জাতের ধান ও ১২ জাতের গম বীজ উদ্ভাবন করেন। এবার তিনি চাষ করেছেন দেশি-বিদেশি, হাইব্রিড এবং নিজের বাছাইকৃত ২৩ টি জাতের বোরো ধান। বেছে বেছে নির্ভেজাল বীজ উৎপাদনের কঠিন কাজটিও তিনি করে যাচ্ছেন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সদর উপজেলার বিদিরপুর গ্রামের তরুণ কৃষক মনজুর রহমান। চরম অভাব-অনটনের সংসার। মাত্র এক যুগ আগেকার সে কথা। পরিকল্পিতভাবে হাইব্রিড জাতের টমেটো চাষ করতে লাগলেন। এলো মনজুর পরিবারে স্বচ্ছলতা।

সূত্র: ইউরো বাংলা

স্ট্রবেরি চাষে নেত্রকোনায় সফলতার নায়ক ইউনুস


সুস্বাদু ও পুষ্টিকর ফল ‘স্ট্রবেরি’ চাষে সফলতা পেয়েছেন নেত্রকোনার আটপাড়া উপজেলার গোয়াতলা গ্রামের কৃষক ইউনুস খান।

অল্পশিক্ষিত কৃষক ১০ শতক জমিতে শখের বশে প্রথমে গড়ে তোলেন স্ট্রবেরি বাগান। আর তিনি এ চাষে উৎসাহ পান বাংলাদেশ টেলিভিশনে শাইখ সিরাজের ‘কৃষি দিবানিশি’ অনুষ্ঠান থেকে। তার এ সফলতায় এলাকার অনেকেই স্টবেরি চাষে উৎসাহী হয়ে উঠছেন।

সফল কৃষক ইউনুস জানান, নানা সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও স্ট্রবেরি চাষে হাত দেন তিনি। স্ট্রবেরি চাষ ব্যয় বহুল এবং এ চাষে সফল হবেন কিনা দ্বিধায় ছিলেন প্রথমদিকে। তার দুশ্চিন্তা ছিল বিশেষ করে আবহাওয়া ও মাটির রকমভেদ নিয়ে। এরপরও তিনি স্ট্রবেরি চাষ করে সফলতার মুখ দেখেন বলে জানান ইউনুস।

আলু, টমেটো চাষের পাশাপাশি ১০ শতক জমিতে স্ট্রবেরি চাষ শুরু করেন বলে জানান তিনি। বলেন, গত নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে ১০ শতক জমিতে স্ট্রবেরির ১ হাজার ২শ’ চারা রোপন করি।

ইউনুস জানান, মাত্র ৪ মাসের পরিশ্রমে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকার স্ট্রবেরি বিক্রি করে লাভের মুখ দেখেন তিনি। আর এর উৎপাদন খরচ হয়েছে ১২ হাজার টাকা। স্ট্রবেরি চাষে এ সফলতা তার জীবনে আয়ের নতুন দুয়ার খুলে দিয়েছে বলেও জানান ইউনুস।

কৃষিবিদ দিলীপ সেন জানান, স্ট্রবেরি লাভজনক হলেও ফলটি বাজারজাত করণে প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। ব্যাংক ঋণের সুবিধা পেলে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকরাও স্ট্রবেরি চাষে আগ্রহী হয়ে উঠতে পারতেন।

নেত্রকোনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের শস্য বিশেষজ্ঞ কৃষিবিদ মো. সিরাজ আলী বলেন, জেলায় শখের বশে কজন কৃষক স্ট্রবেরি চাষ শুরু করেন। স্ট্রবেরি চাষ বৃদ্ধির জন্য উদ্যোগ ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।

তথ্যসূত্র : দি-এডিটর

কোয়েল পালনে ভাগ্য বদল


শখের বশে ৪ বছর আগে ৭শ’ টাকা দিয়ে ১২টি কোয়েল পাখি কিনে পালন শুরু করেছিল যশোর জেলার চৌগাছা উপজেলার জাহাঙ্গীরপুর গ্রামের আব্দুল আল সামুন। তখন তার বয়স ছিল ১৬ বছর। এখন তার নিজের কোয়েল খামারে পাখির সংখ্যা ৩ হাজার। তার পরিচালনায় বিভিন্নস্থানে ৩০টি কোয়েল খামারে ৩০ হাজার পাখি পালন করা হচ্ছে। কোয়েল পালনে সামুন নিজের ভাগ্য বদল করেছে। পাশাপাশি অন্যের ভাগ্য বদলে সহায়তা করছে।

সামুন জানায়, যশোর থেকে ৭শ’ টাকা দিয়ে দুটি পুরুষ ও ১০টি মেয়ে কোয়েল পাখি কিনে বাড়ি এনে পালন শুরু করে। পাখি ডিম পাড়া শুরু করলে বাড়ির মুরগীর ডিমের সাথে রেখে দিত। মুরগীর তাতে দিয়ে ডিম ফুটে বাচ্চা হত। একশ’ টি বাচ্চা হয়। বাচ্চাগুলো বড় হলে প্রতি পিস ৯০ টাকা থেকে ১০০ টাকা করে বিক্রি করে দেয়। তার হাতে প্রায় ১০ হাজার টাকা জমে। এ টাকা দিয়ে ফের ৩শ’ পিস বাচ্চা কিনে এনে গড়ে তোলে কোয়েল পাখির খামার। ডিম পাড়া শুরু করলে প্রতি পিস পাখি ৪০ টাকা করে বিক্রি করে। এরপর এক হাজার পিস বাচ্চা কিনে ৩০ দিন পালনের পর ১৫ টাকা পিস দরে বিক্রি করে। আস্তে আস্তে তার খামারের আয়তন বাড়াতে থাকে।

নিজে বুদ্ধি খাটিয়ে তৈরি করে ডিম ফুটানোর যন্ত্র। দ্রুত তার ভাগ্য বদল ঘটে। লাখপতি হয়ে যায়। তার বাড়িতে ৬টি শেড নির্মাণ করেছে। বর্তমানে তার কোয়েল খামারে ৩ হাজার পাখি আছে। প্রতিদিন দেড় হাজার ডিম হয়। এ ডিম ফুটিয়ে প্রতিদিন এক হাজার বাচ্চা উৎপাদন হচ্ছে। একদিন বয়সের বাচ্চা তার অধীনস্থ খামারিদের কাছে প্রতি পিস ৫ টাকা দরে বিক্রি করে দেয়। তারা ৩০ দিন পালন করে। এরপর তাদের কাছ থেকে প্রতি পিস ২০ টাকা দরে কিনে ঢাকা, সিলেট, কুমিল্লার, খুলনা প্রভৃতি শহরে চালান পাঠায়। প্রতি পিস ২২ - ২৩ টাকা দরে বিক্রি হয়। সামুন জানায়, এক হাজার পিস কোয়েল একমাস পালতে ২শ’ কেজি খাবার লাগে। ওষুধ ও অন্যান্য খরচ মিলিয়ে ১৩ হাজার টাকা ব্যয় হয়। এক হাজার পিস কোয়েল পালনে একজন খামারির মাসে ৭ হাজার টাকা লাভ থাকে। সামুনের খামারিরা মহেশপুর, কালীগঞ্জ, ঝিকরগাছা, বসুনদিয়া, যশোর প্রভৃতি স্থানের। বাচ্চা ৩০ দিন বয়স হলে তারা সামুনের বাড়িতে পৌঁছে দেয়। সামুন আরো জানায়, কোয়েল পাখি পালনে ঝুঁকি কম। কারণ কোয়েলের রোগব্যাধি কম হয়। বেশি পুঁজি খাটাতে লাগে না। আর পোল্ট্রি খামারের মত দুর্গন্ধ ছড়ায় না। এছাড়াও সে সোনালী লেয়ার মুরগি পালন করে। এর ডিম ফুটিয়ে বাচ্চা তৈরি করে বিক্রি করে থাকে। সে নিজে খামারে কাজ করে। দু’জন রাখাল রেখেছে তারা পাখি দেখাশুনার জন্য। খরচ বাদে সামুনের এখন মাসে ৪০ হাজার টাকা লাভ থাকে। লাভের টাকা সে খামার সম্প্রসারণে বিনিয়োগ করে। বর্তমানে তার মোট বিনিয়োগ ১২ লাখ টাকা। বিদ্যুৎ না থাকলে জেনারেটরে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে।

তথ্যসূত্র : দি-এডিটর

লেবু চাষ করে কোটিপতি


লেবু চাষ করে ঘুরে দাঁড়িয়েছে ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার বাঁশহাটি গ্রামের কৃষকরা। সংশ্লিষ্ট বিভাগের সহযোগিতা ছাড়াই উন্নত বীজ, আধুনিক প্রযুক্তি, সময়োপযোগী কৃষিনীতি প্রয়োগের মাধ্যমে বাঁশহাটি গ্রামের কৃষকরা কৃষি ক্ষেত্রে নীরব বিপ্লব ঘটিয়েছে। এখানে প্রচলিত-অপ্রচলিত ফসলের উৎপাদন বেড়েছে দ্বিগুণ। সাথে সাথে বৃদ্ধি পেয়েছে কৃষকদের গড় আয়। মাত্র ২টি লেবু গাছ দিয়ে শুরূ করা কৃষক খালেক বর্তমানে কোটিপতি। তাকে অনুসরণ করে অনেকেই এগিয়ে এসেছে। লেবুর উৎপাদন বৃদ্ধি পাওয়ায় বাঁশহাটি গ্রামটি এখন লেবু গ্রামে পরিচিতি লাভ করেছে।

সরেজমিনে এলাকা ঘুরে জানা গেছে, উপজেলার ৪নং চণ্ডিপাশা ইউনিয়নের পূর্ব বাঁশহাটি গ্রামের লোক সংখ্যা প্রায় এক হাজার। শিক্ষিতের হার খুবই কম। এ এলাকা কৃষি নির্ভরশীল। গ্রামের কৃষকরা কয়েক বছর পূর্বেও ধান চাষাবাদ করতো। কিন্তু ধান উৎপাদন করতে যে খরচ হতো তা ফসল থেকে উঠে আসতো না। বিকল্প ব্যবস্থায় তারা সিম বা মিষ্টি লাউচাষে আগ্রহী হয়ে উঠে। এই ফসলটি উৎপাদনে তেমন সুবিধা হয়নি। এ রকম পরিস্থিতিতে মৃত আব্দুল মজিদের ছেলে আবদুল খালেক (৪৫) বাড়ির সামনে পুকুর পাড়ে ২টি লেবু গাছ লাগায় ৭/৮ বছর পূর্বে। এক বছর যেতে না যেতেই দুটি লেবু গাছে লেবু ধরে প্রায় ৭শ’র মতো।খালেক জানান, সংসারের নিত্যপ্রয়োজনীয় উপকরণ ক্রয় করার তাগিদে ৫ হালি লেবু বাজারে নিয়ে বিক্রি করে পাই ৫০ টাকা। এ দিয়ে মাছ-তরিতরকারি ক্রয় করি। ঐ বছরেই আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে ওই দুইটি লেবু গাছের ডালে কলম দিয়ে পাশের এক কাঠা জমিতে লাগিয়ে দেই। ৩/৪ মাসের মধ্যেই গাছগুলো তরতাজা হয়ে সবুজে আচ্ছন্ন হয়ে যায় পুরো জমি।

এক বছরের মধ্যেই খালেক আরো ১০/১২ কাঠা ধানি জমিতে লেবু গাছ লাগিয়ে দেন। লেবু চাষ করে স্বাবলম্বী খালেক স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি মিলিয়ে তিনি এখন কোটিপতি।খালেকের লেবু বাগানে পরের বছর প্রথমে লাগানো এক কাঠা জমির ৭০টি লেবু গাছে লেবুর উৎপাদন হয় প্রায় একুশ হাজারের মতো। বাজারে বিক্রি হয় প্রায় ৬০ হাজার টাকা। বর্তমানে খালেকের ৩ একর জমিতে প্রায় ১ হাজার ৫শ’টি লেবু গাছ আছে। প্রতিদিন গড়ে ১০/১২ হাজার টাকার লেবু বিক্রি করছে। প্রতিদিন তাড়াইল, কেন্দুয়া ও কিশোরগঞ্জের বাজারের চিহ্নিত পাইকাররা খালেকের বাড়ির বাগান থেকে লেবু নিয়ে যায়।খালেকের এই অভাবনীয় সাফল্য দেখে বিদেশ যেতে প্রস্তুত যুবক মোঃ লুৎফর রহমান সব বাদ দিয়ে তার নিজস্ব ১৬ কাঠা ধানি জমিতে লেবুর গাছ লাগিয়ে দেয়। জানা যায়, ৮শ লেবু গাছে খরচ বাদে এক বছরে লাভ হয় প্রায় আড়াই লাখ টাকা। এ অবস্থায় লুৎফর বিদেশ যাওয়া ভুলে গিয়ে এখন লেবু চাষে ব্যস্ত। ভাঙ্গা-চোরা বসতঘরের স্থানে প্রায় ১০ লাখ টাকা ব্যয় করে তৈরি করেছেন এখন পাকা দালান। সুখের নতুন সংসারের অপেক্ষায় দিন গুণছেন আত্মপ্রত্যয়ী এ যুবক।ঐ গ্রামের লেবু চাষী সিরাজুল, ফয়জুল্লাহ, ইদ্রিস, হালিম, বাবুল, চানমিয়া, সুরূজ, সুজন, সালাম, জব্বার, এরশাদ, সামাদ, হাসেন, ছাহেদ, রমজানসহ অনেকেই আজ স্বাবলম্বী। পিছনের সকল কিছুই এখন স্মৃতি। বেশী লেবু উৎপাদনের কারণে গ্রামের নামটিও বদলে যাচ্ছে। এখন সকলেই চিনে “লেম্বু” গ্রাম হিসাবে। শুধু তাই নয় খালেককে অনেকেই লেবু চেয়ারম্যান হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।

তথ্যসূত্র : দি-এডিটর

কৃষক আলা উদ্দিন ফুল চাষ করে অর্ধকোটি টাকার মালিক

Thursday, August 5, 2010


২০ বছর আগের কথা, খালি হাতে এদেশে এসেছিলেন কৃষক আলা উদ্দিন। সাথে নিয়ে এসেছিলেন আধা কেজি ফুলের বীজ। উঠেছিলেন ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার সেজিয়া গ্রামের আনসার আলীর বাড়িতে। সেখানে বেড়ারঘর বানিয়ে বসবাস শুরু করেন। অন্যের জমি বর্গা নিয়ে করেন ফুলের চাষ। গড়ে তোলেন নদিয়া নার্সারী।

তার এই ফুল চাষ আজ গোটা এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে। সেজিয়া গ্রামের ৩ শত বিঘা ছাড়াও পাশ্ববর্তী গ্রাম গুলোর শত শত বিঘা জমিতে ফুলের চাষ হচ্ছে। নার্সারী থেকে চারা নিয়ে এলাকার অনেকে বাগান বানিয়েছেন। এভাবে পরিশ্রম করে কৃষক আলা উদ্দিনও আজ অর্ধকোটি টাকার মালিক হয়েছেন।

কৃষি সাফল্য দেখতে সরেজমিনে সেজিয়া গ্রামে গেলে কথা হয় সফল কৃষক আলা উদ্দিনের সাথে। তিনি জানান, তার প্রকৃত বাড়ি ছিল ভারতের নদিয়া জেলায়। বাবা দাউদ আলী মন্ডলের আর্থিক অবস্থা খুব বেশী ভালো না হওয়ায় বেশী পড়ালেখা করতে পারেননি। অষ্টম শ্রেনী পর্যন্ত পড়ালেখা শেষে বেকার জীবন কাটাচ্ছিলেন। এরই মাঝে বাড়ির কাউকে কিছু না বলে আলাউদ্দিন বাংলাদেশে চলে আসেন। ১৯৯০ সালের দিকে তিনি যখন এদেশে আসেন তখন বাড়ি থেকে কিছুই আনেননি। খালি হাতে আসার সময় বাড়ি থেকে নিয়ে এসেছিলেন কিছু ফুলের বীজ। যা দিয়ে তিনি অত্র এলাকায় ফুলের চাষ ছড়িয়ে দিয়েছেন।

আলা উদ্দিন জানান, এদেশে এসে তিনি প্রথমে সেজিয়া গ্রামের আনসার আলীর বাড়িতে ওঠেন। আনসার আলী তার বাড়ির পাশে একটু জায়গা দিয়েছিলেন ঘর বেঁধে থাকার জন্য। শর্ত ছিল তার ক্ষেতে কাজ করতে হবে। আলা উদ্দিন আনসার আলীর বাড়িতে কাজ করার পাশাপাশি নিজেও জমি বর্গা নিয়ে ফুল চাষ শুরু করেন। সে সময় ওই এলাকার কেউ ফুলের চাষ বুঝতো না। তিনি ফুল চাষ করবেন জেনে জমির মালিকরা প্রথম পর্যায়ে জমি বর্গা দিতে চাননি। তার অনুরোধে কয়েকজন এগিয়ে এলে শুরু হয় ফুল চাষ। আজ অত্র এলাকায় ফুল চাষ ছড়িয়ে পড়েছে।

কৃষক আলা উদ্দিন জানান, মাত্র চার বছর ফুলের চাষ করে তিনি বেশ কিছু পয়সা জমান। এরপর জায়গা কিনে সেখানে ঘর বানিয়ে বসবাস শুরু করেন। ছেড়ে দেন আনসার আলীর জায়গা। নিজের জমিতে বাড়ি বানাবার পর স্ত্রী ফাতেমা খাতুনকে নিয়ে আসেন। নিজের সংসার সাজানোর পাশাপাশি মাঠে চাষও বাড়াতে থাকেন কৃষক আলা উদ্দিন। কঠোর পরিশ্রম আর উন্নত পদ্ধতিতে চাষাবাদ করে আলা উদ্দিন ২০ বছরে সফলতা এনেছেন। ইতোমধ্যে সেজিয়া গ্রামে ২৫ শতক জমির উপর একতলা পাঁকা বাড়ি বানিয়েছেন। সাজানো গোছানো বাড়ির এক পাশে রয়েছে একটি পুকুর। চারিপাশে রয়েছে ফুল ও ফলের বাগান। মাঠে চাষযোগ্য আড়াই বিঘা জমি কিনেছেন। এছাড়া লিজ নিয়েছেন ২০ বিঘা জমি। যেখানে ফুল, ফলের গাছ ছাড়ার নানা চাষাবাদ রয়েছে। বর্তমানে তার ৬ বিঘা জমিতে ফুলের চাষ রয়েছে। আলা উদ্দিন জানান, ফুলের চাষ লাভজনক হলেও অনেকটা লটারীর মতো। এই চাষে কথনও লাভ আবার কখনও লোকসান হয়ে থাকে। বর্তমানে ভারত থেকে নানা জাতের ফুল আসায় এদেশের কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তিনি এই ফুল চাষের তাৎক্ষনিক ক্ষতি মোকাবেলা করতে ফুলের পাশাপাশি অন্যান্য চাষাবাদ করেন বলে জানিয়েছেন।

সেজিয়া গ্রামের আলি আকবার জানান, আলা উদ্দিনের কারনে আজ তাদের এলাকায় ফুল চাষের বিস্তার ঘটেছে। এই ফুল চাষ করে অনেকে স্বাভলম্বি হয়েছে। তিনি নিজেও তিন বিঘা জমিতে ফুলের চাষ করেছেন। আলী আকবার আরো জানান, পাশ্ববর্তী ভারতে এই ফুলের চাষ হয় বলে তারা শুনতেন। এরপর আলা উদ্দিন সেখান থেকে ফুল চাষের ধারনা নিয়ে এসে তাদের অঞ্চলে ছড়িয়ে দিয়েছে। যা কৃষকের লাভবান করার পাশাপাশি দরিদ্র মহিলা ও বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে।

কৃষক আলা উদ্দিন জানান, ২০০০ সালের বন্যায় তিনি ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হন। সে সময় তৎকালীন আওয়ামীলীগ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষতিগ্রস্ততের সহযোগীতার আশ্বাস দেন। পরে ওই সহযোগীতার টাকা পেয়ে আবার সোজা হয়ে দাড়ান কৃষক আলা উদ্দিন। বর্তমানে তার ছেলে কামাল উদ্দিন বাবার ফার্ম দেখাশুনা করছেন। ছেলেকে বি.এ পর্যন্ত পড়ানোর পর ফার্মের দায়িত্ব দিয়েছেন। দুই মেয়ে ফেরদৌসী খুতান ও কুলসুম আক্তারকে বিয়ে হয়েছে। বর্তমানে তার নদিয়া নার্সারী ও নদিয়া সীড ফার্মে সব সময় ১৫/১৬ জন কাজ করছেন। তিনি দাবি করেন সহজ শর্তে কৃষি ঋন দিলে কৃষকরা চাষ কাজে আরো এগিয়ে যেতে পারবে। তিনি নিজেও অনেক ধর্ণা দিয়ে কৃষি ঋন পাননি বলে জানিয়েছেন।

লেখক: শাহনেওয়াজ খান সুমন-ঝিনাইদহ
তথ্যসূত্র: দি-এডিটর

সফল ফল চাষি ঝিনাইদহের সাইফুল ইসলাম বাবুল

Monday, August 2, 2010


যেদিকেই চোখ যায় শুধু ফল-ফলাদির গাছ আর গাছ। তাতে থোকা থোকা ধরে রয়েছে নানা ধরনের ফল। রীতিমত ফলদ বৃক্ষের চাষ করে ঝিনাইদহে বিপ্লব সৃষ্টি করেছেন সাইফুল ইসলাম বাবুল। স্বল্প জায়গায় ফলদ বিভিন্ন ফলের চাষ করে তিনি ঝিনাইদহের চাষিদের কাছে এখন একজন মডেল কৃষক। তবে জাত কৃষক না হলেও তার মাটি ও ফলদ বৃক্ষের প্রতি এই টান আকৃষ্ট করছে এলাকার অনেক চাষিদের। দীর্ঘ ২২ বছর বাংলাদেশের রফতানিযোগ্য পণ্য তৈরি পোশাক শিল্প ও নীট গার্মেন্টসের একজন সফল পাইওনিয়ার উদ্যোক্তা হিসেবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করেছেন সাইফুল ইসলাম বাবুল। এ সুযোগে বিভিন্ন দেশের ফল চাষ ও তার গুণাগুণ সম্পর্কে জেনে তা দেশে চাষ করতে নিয়ে আসেন। তারপর ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ও বাউকুলের জনক ড. এম. এ. রহিমের

তত্ত্বাবধানে শুরু করেন ফল চাষ। বর্তমানে ঝিনাইদহের এইচ. এস.এস সড়কের শাহ্ ভিলার পৈতৃক বাড়িতে তিনি রোপণ করেছেন কিছু ফলদ গাছ। সম্প্রতি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও শাহ্ নার্সারি যৌথভাবে বাউকুল-২ (শাহ্কুল) উদ্ভাবন করেছে। ২০০৭ সালের প্রথমে ঝিনাইদহ শহর থেকে ৬ কিলোমিটার দূরে হরিণাকুণ্ডু উপজেলার নবগঙ্গা নদীর তীরবর্তী মনোরম পরিবেশে পার মথুরাপুর গ্রামে প্রায় ৫ একর জমিতে প্রতিষ্ঠা করেন শাহ্ নার্সারি। এখানে তিনি বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন করছেন প্রায় ৪০ জাতের দেশি-বিদেশি ফল। স্বল্প জায়গায় ফল চাষ করে এলাকার মানুষকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। এসব ফলদ বৃক্ষ পরিচর্যার জন্য তিনি নিয়োগ করেছেন ১৫ জন শ্রমিক। চলতি বছর এই ফল বাগান থেকে সমস- খরচ বাদ দিয়ে প্রায় ২৫ লাখ টাকা লাভ করবেন বলে জানান তিনি। ভারত, জার্মানি, সুইজারল্যান্ড, স্পেন, ইটালি, আমেরিকা, সুইডেন, ফিনল্যান্ড, ডেনমার্ক, নরওয়ে, ইউকে, নেদারল্যান্ড ও কানাডাসহ প্রায় ৩০টি দেশ ঘুরে তিনি সংগ্রহ করেছেন বিভিন্ন ফলের চারা। সেই চারা শাহ্ নার্সারিতে রোপণ করে নিবিড় পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে ফলিয়েছেন ফল। সাইফুল ইসলাম বাবুলের নার্সারিতে উৎপাদিত দেশি-বিদেশি

ফলগুলো হল : স্ট্রবেরি, মাল্টা, বারোমাসী কমলালেবু, কানাডিয় কামরাঙা, বাউকুল-১, বাউকুল-২, আপেলকুল, তাইওয়ানকুল, চায়না-৩ লিচু, বেদানা লিচু, লটকন, গোলাপী থাই আপেল, জামরুল, বারোমাসী কাগজি লেবু। আমের ভেতরে রয়েছে : আম্রপলি, মল্লিকা, থাই বারোমাসী আমড়া, সফেদা, থাই আম, বাউ আম, থাই হানিডিউ আম, থাই পেয়ারা, পুনাই আম, বাউ পেয়ারা, জাবাটিকা, নাশপাতি, লংগন, এ্যাভাকোডা, নিউইর্য়ক আমড়া ও মিশরের খেজুর। শাহ্ নার্সারির চারা দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে ফলদ বিপ্লব ছড়িয়ে দিয়েছে। প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যাচ্ছে এই নার্সারির চারা।

ফলদ বৃক্ষ ও তার সম্ভাবনা নিয়ে কথা বললে সাইফুল ইসলাম বাবুল জানান, খাদ্য পুষ্টির জন্য জনপ্রতি প্রতিদিন ১২০ গ্রাম ফল খাওয়ার প্রয়োজন হলেও তারা খেতে পায় ৩০ গ্রাম। খাদ্য ঘাটতি ও পুষ্টিহীনতায় প্রতি ঘণ্টায় পৃথিবীতে ১০জন করে মারা যায়। তিনি আরো জানান, আমাদের দেশে অনেক পতিত জমি জমি রয়েছে। বাংলাদেশের ৬০ থেকে ৭০ ভাগ মানুষ দরিদ্র এবং তারা গ্রামে বসবাস করে। প্রতিটি পরিবার বাড়ির আঙিনায় ৪টি ফলদ গাছ রোপণ করলে ওই পরিবারের পুষ্টি চাহিদা মেটানো সম্ভব হবে।

সেই সাথে কৃষি শিল্প সহায়ক কৃষি ও সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের সমপ্রসারণের মাধ্যমে সাধারণ চাষিদের স্বাভাবিক ফসলের পাশাপাশি ফল চাষ করতে উদ্বুদ্ধকরণের মাধ্যমে দেশের পুষ্টি চাহিদা মিটিয়ে বাকি ফল বিদেশে রফতানি করা সম্ভব। স্বাস্থ্য সচেতনতার জন্য ফলের পুষ্টি গুণাগুণ উল্লেখপূর্বক ফল বাজারজাত করা হলে দেশের পুষ্টি চাহিদা মেটানোসহ দেশের বিভিন্ন প্রানে- ফলদ বিপ্লব ছড়িয়ে দেয়া সম্ভব বলে তিনি মনে করেন।

সাইফুল ইসলাম বাবুলের দেখাদেখি ঝিনাইদহের রুটির ঝুড়ি নামে খ্যাত হরিণাকুণ্ডু উপজেলার শত শত চাষি ফল চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। মিন্টু মিয়া, হাসান মিয়া, আব্দুল হালিম, রশিদ মিয়া, নাগর আলীসহ এই উপজেলার অনেক চাষিই নিজের জমিতে আবার কেউবা বসত বাড়ির আঙিনার পতিত জমিতে দেশি-বিদেশি ফলের চাষ করছেন।

তথ্যসূত্র: শাইখ সিরাজ রচিত ‘মাটি ও মানুষের চাষবাস’ গ্রন্থ থেকে সংগ্রহীত

পেঁপে চাষে সিরাজ মিয়ার ভাগ্য বদল


টেকনাফের সিরাজ মিয়া পেঁপে চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন, হয়েছেন লাখপতি। পরিশ্রমের স্বীকৃতিস্বরূপ ইতোমধ্যে উপজেলা পর্যায়ে অনুষ্ঠিত কৃষিপ্রযুক্তি মেলায় পুরস্কৃত হয়েছেন। তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত মেলায় তার বাগানে উৎপাদিত পেঁপে প্রদর্শিত হয়েছে। সফল এ কৃষক হচ্ছেন টেকনাফ সদর ইউনিয়নের হাবিরছড়া গ্রামের সিরাজ মিয়া।

বাড়ির সামান্য দূরত্বে হাবিরছড়া নামক পাহাড়ি ছড়ার পাশে তার ২০ শতক জমির ওপর পেঁপে বাগান। পেঁপে বাগানের পাশেই ৪০ শতক নিজস্ব জমির ওপর বিশাল আকার পানের বরজ। সরেজমিন বাগান পরিদর্শনকালে সিরাজ মিয়া জানান, উপজেলা কৃষি অফিসের উপসহকারী কৃষি অফিসার পিপাস কান্তির উৎসাহে তিনি পেঁপে বাগান করতে আগ্রহী হয়। ছড়ার পাশে পানের বরজের তলায় উখিয়া থেকে ৪৫০টি হাইব্রিড জাতের পেঁপে চারা এনে রোপণ করেছিলেন গত বছর জুন মাসে। পাহাড়ি ঢলে অধিকাংশ চারা ভাঙনের কবলে পড়ে মরে যায়। বাগানে ছিল মাত্র ১৫০টি চারা। সামান্য পরিচর্যায় প্রত্যেক গাছেই আশানুরূপ ফলন হয়েছে। গত কয়েক মাস আগে থেকে পেঁপে বিক্রি শুরু করেছেন। প্রত্যেক গাছই পেঁপে ভর্তি। একটি চারা কিনেছেন ১৫ টাকা করে। চারা ক্রয়, গাড়ি ভাড়াসহ ফলন পাওয়া পর্যন্ত সর্বসাকুল্যে খরচ হয়েছে ১৫ থেকে ১৬ হাজার টাকা। এ পর্যন্ত পেঁপে বিক্রি করে পেয়েছেন প্রায় ১ লাখ টাকা। গাছে যে পরিমাণ পেঁপে আছে তা বিক্রি করলে কমপক্ষে আরো ৫০ হাজার টাকা পাবেন। টেকনাফ উপজেলায় এটিই একমাত্র পেঁপে বাগান। দূর-দূরান্ত থেকে লোকজন আসেন পেঁপে কিনতে ও বাগান দেখতে। সিরাজ মিয়া জানান, পেঁপে বাগান ও পানের বরজের পাশাপাশি তিনি মরিচ ক্ষেত, ড্রাম সিডরে ধান চাষ, পেলং ইত্যাদির ক্ষেতও করেছেন।

চারা উত্পাদন করে স্বাবলম্বী


সবজির চারা উত্পাদন করে জয়পুরহাট জেলার পারুলিয়া গ্রাম এখন ‘চারা গ্রাম’ নামে ব্যাপক পরিচিতি পেয়েছে। সবজির চারা উত্পাদন। এক ব্যতিক্রমী উদ্যোগ। কৃষকরা নিজেদের প্রয়োজনে ফসলের চারা উত্পাদন করে থাকেন। এখানে চারা উত্পাদনকারীরা তিন পুরুষ ধরে এ কাজে নিয়োজিত আছেন। এ ব্যবসায় কেউ কেউ লাখপতি হয়েছেন। বাড়ি, পুকুর, জমাজমি কিনে নিজেদের অবস্থান পরিবর্তন করেছেন। আবার কেউ তেমন লাভবান না হলেও পেশা হিসেবে উত্তরাধিকার সূত্রে চালিয়ে যাচ্ছেন চারা ব্যবসা। লাভজনক এ চারা উত্পাদনের এ ব্যবসায় ঝুঁকে পড়ছেন গ্রামের অন্যান্য কৃষিজীবীও। ৭০ বছর আগে এ গ্রামে ব্যবসায়িকভাবে চারা উত্পাদন শুরু করেন বর্তমানে মা নার্সারির মালিক ইসমাইল হোসেনের বাবা মৃত আ. সাত্তার মণ্ডল।

ভিটে জমিতে সবজির বীজতলার জন্য তিনবার জমি চাষ করে মই দিতে হয়। এরপর ছয় ফুট দৈর্ঘ্য দুই ফুট চওড়া বেড তৈরি করতে হয়। প্রতি বেডে এক মণ গোবর সার দেয়ার পর কমপক্ষে তিনবার কোদাল দিয়ে কুপিয়ে নিতে হয়। এ ছাড়া প্রতি বেডে ইউরিয়া, ফসফেট, পটাশ সারের হাফ কেজি মিশ্রণসহ ২০০ গ্রাম কিটনাশক (ফুরাডন) ব্যবহার করে বীজতলার জন্য বেডগুলো তৈরি করতে হয়। রোদ, বৃষ্টি, শিশির থেকে চারাকে রক্ষার জন্য বেডের ওপর বাঁশের কাভারি ভাঁজ করে পুঁতে দেয়া হয়। তার ওপর নীল রংয়ের পলিথিনের ছাউনি, যা প্রয়োজনমতো খোলা যায়। এরপর বীজ পেতে কঠিন পরিচর্যা করতে হয়। চারাগাছের চাহিদানুসারে সময়মতো সার, কীটনাশক ও সেচ দিতে হয়। চার সপ্তাহের মধ্যে চারাগাছ তৈরি হয়।

পারুলিয়া গ্রামে ছোট-বড় ১৪টি বীজতলার নার্সারি রয়েছে। এসব নার্সারির মালিকরা হলেন ইসমাইল হোসেন, তার ছেলে একরামুল হক, ইমানুর রহমান, জামাতা হারুনার রশিদ, আব্দুল ওয়াহাব, আমিনুর ইসলাম, মোয়াজ্জেম হোসেন, মোকলেছ, মোস্তফা, মাকফুজুল, শহিদুল, আব্দুল ওয়াহেদ, ক্ষিতিশ চন্দ্র মণ্ডল ও তার ছেলে জীবন কুমার মণ্ডল। প্রবীণ ব্যবসায়ী ৭০ বছর বয়সী ইসমাইল হোসেন জানালেন, পৈতৃক সূত্রে এ পেশায় জড়িত আছি। পাকিস্তান আমলে আমার বাবা মৃত আ. সাত্তার চারা বিক্রির ব্যবসা করতেন। স্বাধীনতার পর বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চারা উত্পাদন শুরু করেন। এ ব্যবসা করেই সংসার চালাচ্ছি, ছেলেমেয়েদের বিয়ে-শাদি দিচ্ছি। আমার দুই ছেলে একরামুল ও ইমানুর এবং জামাই হারুনুর রশীদ চারার ব্যবসা করছেন। মা নার্সারিটি ছেলে ও জামাই সবাই মিলে দেখাশোনা করছে। নিজের জমাজমি নেই। অন্যের জমি লিজ নিয়ে দীর্ঘদিন এ ব্যবসা চালিয়ে আসছি। প্রায় দুই একর জমির ওপর চারার চাষ করে আসছি। চারাতে পচন ধরায় গত বছর আমার এ ব্যবসায় কোনো লাভ হয়নি। এ বছর বাজারদর ভালো। ব্যবসায় লাভের আশা পোষণ করছি।

কথা হয় সেবা নার্সারির প্রতিষ্ঠাতা ক্ষিতিশ চন্দ্র মণ্ডলের সঙ্গে। তার সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, ৩০ বছর ধরে তিনি এ ব্যবসা করে আসছেন। ব্যবসা শুরু সময় তার মাত্র দুই-তিন বিঘা জমি ছিল। ফসলি জমির সঙ্গে চাষাবাদ ও ব্যবসা করে তিনি স্বাবলম্বী হয়েছেন। পাঁচ বিঘা জমি কিনেছেন। দুটি পাকা বাড়ি ও একটি পুকুর করেছেন। মেয়ের বিয়েতে এক লাখ টাকা খরচ করেছেন। বড় ছেলে জীবন কুমার নার্সারি চালায়। ছোট ছেলে জয়পুরহাট সরকারি কলেজে অনার্সে পড়ে। তিনি জানান, খরচাপাতি বাদে প্রতি মাসে ২০ হাজার টাকা আয় হয়। তিনি আরও বলেন, জয়পুরহাট ছাড়াও বগুড়া, দিনাজপুর, রংপুর, সিরাজগঞ্জ ও রাজশাহীতে চারা সরবরাহ করে থাকি।

মা নার্সারির অংশীদার হারুনুর ও একরামুল জানান, বর্তমানে শ্রমিকের মজুরি অনেক বেশি। একজন মজুরকে প্রতিদিন দেড়শ’ টাকা মজুরিসহ একবার খাবার দিতে হয়। স্থানীয় হাটবাজারসহ আশপাশের বগুড়ার মোকামতলা, শিবগঞ্জ, জয়পুরহাটের পুনট, কালাই, পাঁচবিবি, জামালগঞ্জ, হোপেরহাটে চারা বিক্রি করে থাকি। পাইকার আসে নাটোর, বগুড়া, দিনাজপুরের হিলি, বিরামপুর, ফুলবাড়ি, রাজশাহীর নলডাঙ্গা, নওগাঁর ধামুরহাট, নজিরপুরসহ আরও অনেক স্থান থেকে। প্রবীণ ব্যবসায়ী ইসমাইল হোসেন বলেন, চিটাগাং থেকে পাইকার এসে আমার নার্সারি থেকে চারা কিনে নিয়ে যাচ্ছে। সমস্যার কথা বলতে গিয়ে এসব নার্সারির মালিকরা জানান, চারা উত্পাদনের সবচেয়ে ঝুঁকি পচন রোগ। পচন রোধ করা অনেক সময় সম্ভব হয় না। চারাতে পচন ধরলে সে বছর ব্যবসা লাটে উঠে। ব্যবসায় লোকসান হয়। জমি ভাড়া প্রতি বিঘা বছরে ছয় থেকে সাত হাজার টাকা দিতে হয়। এ ছাড়া এনজিওদের চড়া সুদের ঋণ নিয়ে ব্যবসা পোষায় না।

জয়পুরহাট সদর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা এসএম নুরুজ্জামানের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, এটি একটি ব্যতিক্রমধর্মী উদ্যোগ। আশপাশের কোনো জেলায় এক গ্রামে চারা উত্পাদনকারী এতগুলো নার্সারি নেই। নিঃসন্দেহে এটি একটি ভালো উদ্যোগ ও লাভজনক ব্যবসা। এতে কৃষকদের চারা উত্পাদনের আলাদা কোনো সময় নষ্ট করতে হয় না। যারা উদ্যোগ নিয়ে চারা উত্পাদন করেন তারা একটি নতুন ব্যবসার পথ উন্মোচন করেছেন। পচন রোগের সমস্যা সম্পর্কে তিনি বলেন, নার্সারি মালিকরা অনেক সময় বীজ শোধন না করে বীজতলা তৈরি করেন। আমাদের অজ্ঞাতসারে তারা এ কাজ করে ক্ষতির সম্মুখীন হন। শোধন করা বীজ বীজতলায় পাতলে পচন রোগের আশঙ্কা থেকে চারা রক্ষা করা যায়। এসব নার্সারিতে সারা বছর চারা উত্পাদন হয়। পারুলিয়া এখন চারা গ্রাম হিসেবে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছে। চারা নার্সারি চালু হওয়ার ফলে শ্রমজীবী মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ মিলছে। এসব নার্সারিতে গড়ে প্রতিদিন শতাধিক শ্রমিক কাজ করছেন।

ফলের বাগান করে সফল আজাদ


আম, লিচু ও কুল চাষ করে রাজশাহীর দুর্গাপুরের আবুল কালাম আজাদ সফল হয়েছেন। গোটা উপজেলার মানুষ তাকে সফল মানুষের অগ্রপথিক হিসেবে চেনে। তাকে দৃষ্টান্ত মনে করে এলাকার অনেকেই বেকারত্ব দূর করতে তার পথ অনুসরণ করে সফলতা পেয়েছেন। জীবিকার তাগিদে যুবক বয়সেই কৃষিকাজের যন্ত্র হাতে তুলে নিয়েছিলেন উপজেলার বেলঘরিয়া গ্রামের এই আজাদ। আজাদ জানান, বিয়ের পরপরই সংসারের হাল ধরতে হয়েছিল তাকে। ১৯৯০ সালে তিনি প্রথমে এক একর জমিতে কুল গাছ লাগান। দুই বছরের মাথায় গাছে কুল দেখা দেয়। প্রথমবার কুল বিক্রি করে পান প্রায় দেড় লাখ টাকা। এই টাকা দিয়ে তিনি দুই বিঘা জমিতে আম বাগান করেন। ২০০৫ সালে আম বিক্রির লাভের টাকা দিয়ে এক বিঘা জমিতে লিচু বাগান করেন। তিন বছর পর থেকে প্রতিবছর ওই লিচু বাগান থেকে তার আয় হচ্ছে বছরে প্রায় ৫০ হাজার টাকা। চলতি বছর কুল চাষের পাশাপাশি সাথী ফসল হিসেবে আদা চাষ করেন। কুল চাষে যা লাভ হতো, সাথী ফসল হিসেবে আদা চাষ শুরু করায় এখন লাভ দাঁড়িয়েছে দ্বিগুণ। চলতি বছর দুই বিঘা আম, এক বিঘা লিচু এবং আদাসহ এক বিঘা কুলের জমি থেকে খরচ বাদ দিয়ে তার লাভ হয়েছে প্রায় তিন লাখ টাকা। আজাদ জানান, দশ বছরের মধ্যে ফলদ বাগানের লাভ দিয়ে তিনি প্রায় ২ একর জমি কিনেছেন। একটি পাকা বাড়ি তৈরি করেছেন। একটি গাভীও কিনেছেন। ছেলেমেয়েদের নিয়ে এখন সুখে আছেন।
সুত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন

সফল সবজি চাষি মোবাশ্বির আলী


সবজি চাষ করে কমলগঞ্জসহ গোটা মৌলভীবাজার জেলার কৃষকদের মধ্যে একজন আর্দশ কৃষকে পরিণত হয়েছেন কমলগঞ্জ উপজেলার গোবিন্দ্রপুর গ্রামের মোবাশ্বির আলী। সবজি চাষ করে তিনি এখন লাখপতি।

কমলগঞ্জ উপজেলার গোবিন্দ্রপুর গ্রামের মোঃ মোবাশ্বির আলী পেশায় ইসলামী ফাউন্ডেশনের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত একজন ইমাম। বছর পাঁচেক আগে কৃষি বিভাগ থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে চাষাবাদ শুরু করেন। দিন দিন বাড়াতে থাকেন ধান থেকে শুরু করে বাঁধাকপি, ওলকপি, গম, করলা, লাউ, কলা, পেঁপে, টমেটো, তরমুজসহ বিভিন্ন শাক-সবজি চাষ করে গত পাঁচ বছরে প্রায় ২৫ লাখ টাকা আয় করেছেন। বিভিন্ন ধরনের ফল-মূল, শাক-সবজি চাষাবাদ করে তিনি এখন সফল কৃষক। তার খামার দেখতে ইসলামী ফাউন্ডেশনের প্রশিক্ষণ একাডেমীর উপ-পরিচালক ফরিদউদ্দিন আহমদ, সিলেটসহ বিভিন্ন উচ্চ পর্যায়ের কৃষি ও প্রশাসনিক কর্মকর্তারা কমলগঞ্জে ছুটে এসেছেন।

মৌলভীবাজার জেলার সফলও আদর্শ কৃষক হিসাবে মোবাশ্বির আলী ৬ বার জাতীয় ও স্থানীয়ভাবে কৃষি বিভাগ তাকে পুরস্কৃত করেছে। কমলগঞ্জে তাকে অনুসরণ করে এলাকার অন্যান্যরা সবজি চাষে ঝুঁকে পড়েছেন এবং অনেকেই মোটামুটি স্বচ্ছল হয়ে উঠছেন। মোবাশ্বির আলী ইমামতির পাশাপাশি জাতীয় ইমাম সমিতির কমলগঞ্জ শাখার সাধারণ সম্পাদক। বছর পাঁচেক আগে মাত্র এক একর জায়গায় তরমুজ চাষ করার মাধ্যমে কৃষি কাজ শুরু করেন। প্রথমে লাভের মুখ না দেখলেও পরের বছর আবারো তরমুজ ও টমোটোর চাষ করে সাফল্য পান। ৭০ হাজার টাকা ব্যাংকঋণ নিয়ে তিনি গম, রসুন, পেঁয়াজ, ঢেঁড়শ, লালশাকসহ প্রায় ১২জাতের সবজি উৎপাদন করার মধ্যে দিয়ে মোহামদ্দীয়া বহুমুখী কৃষি খামার গড়ে তোলেন।

এখন তিনি প্রতি বছর সবজি থেকে শুরু করে হাইব্রিড ধান চাষ করেন। শীতকালীন শাক-সবজি শেষে বর্তমানে কৃষক মোবশ্বির আলীর খামারে ১০ শতক গ্রাফটিং টমোটো, ৪ বিঘা জমিতে ইপক টমেটো, হাইব্রিড মরিচ ১৫ শতক, বেগুন ১৫ শতক, ক্ষিরা ৩০ শতক, এক বিঘা জমিতে ঢেঁড়শ, ৩ বিঘা জমিতে বাঁধা কপি, শালগম ১৫ শতক, তরমুজ ৪ বিঘা ও ১৫শতক জমিতে শিম আবাদসহ সর্বমোট ১৫ বিঘা জমিতে চাষাবাদ করেছেন। সার্বক্ষণিক ৩ জন শ্রমিক দিয়ে শাক-সবজি চাষাবাদের পাশাপাশি তিনি বোরো চাষ করছেন। পোকামাকড় দমন ও জমির উর্বরা শক্তি বাড়াতে সার হিসেবে জৈব সার ও কীটনাশক ব্যবহার করে থাকেন তিনি।

কৃষক মোবাশ্বির আলী জানান, গত সেপ্টেম্বর মাসে খামারে গ্রাফটিং পদ্ধতিতে প্রায় ৫’শ টমেটোর চারা রোপণে খরচ হয় প্রায় ১১ হাজার টাকা। যেগুলো থেকে প্রতিটি গাছে ১’শ থেকে ১’শ ৩০টি টমেটো ফলন হয়েছে। প্রতি গাছে প্রায় ৫/৬ কেজির পরিমাণ টমেটো উৎপাদন হয়েছে যার বাজারমূল্য প্রথম ছিল প্রতি কেজি ৮০ টাকা। বর্তমান সময় পর্যন- তিনি প্রায় ৫০ হাজার টাকার টমোটো বিক্রি করেছেন। এই টমেটো আরো কিছুদিন বিক্রি করতে পারবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করছেন।

কৃষক মোবাশ্বির বিগত বছর ১৩ একর জমিতে খামার করে ৩ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেন এবং এতে আয় করেন প্রায় ৭ লাখ টাকা। তিনি জানান, চলতি বছর খামারে ১৩ জাতের সবজি আবাদ করেছেন। এতে এখন পর্যন- প্রায় দেড় লাখ টাকা ব্যয় করে ১১ লাখ টাকা আয়ের আশা করছেন। স্থানীয় কৃষি অফিসের কৃষি কর্মকর্তা নরেশ চন্দ্র বাড়ই, কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রকাশ কানি- চৌধুরীসহ কৃষি বিভাগ থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা পাচ্ছেন বলে কৃষক মোবাশ্বির আলী জানান।

কলা চাষ করে স্বাবলম্বী রাউজানের হালিম


ফসল চাষ করে কিংবা অন্য কোন কাজ করে নয়, এবার কলাবাগান করে স্বাবলম্বী হলেন রাউজানের গহিরার যুবক আবদুল হালিম। কোন সরকারি সাহায্য-সহযোগিতা ছাড়াই সম্পূর্ণ নিজ চেষ্টায় কলা চাষ করে রাউজান তথা উত্তর চট্টগ্রামের সাগর কলার চাহিদা পূরণে সহায়ক ভূমিকা পালন করছেন এই যুবক।

২০০১ সালে গহিরার অনাবাদি ১৩৬ শতক দুটি পৃথক জায়গা বন্ধক নিয়ে রংপুর থেকে কলাবীজ এনে দুইটি বাগানে লাগায় সে। এরপর আর তাকে পেছন ফিরে থাকাতে হয়নি। সম্প্রতি তার কলাবাগান সরেজমিনে পরিদর্শন শেষে সাফল্যের এই ইতিবৃত্ত পাওয়া যায়। তার মতে চেষ্টা করলে সাফল্যের সিঁড়ি বেয়ে কাঙিড়্গত লড়্গ্যে পৌঁছানো সম্ভব তাই সবাই একেকটি করে প্রজেক্ট নিলে দেশের এবং নিজের চাহিদাও পূরণ করা দুষ্কর নয়। এড়্গেত্রে সবাইকে পরিশ্রমী হতে হবে। গহিরা দলই নগর গ্রামের আবুল কালামের পুত্র ৮ম শ্রেণী পাস আবদুল হালিম ৮ ভাই ২ বোনের মধ্যে ২য়।

২০০১ সালে রংপুরের মোং শহিদ নামের এক গৃহকর্মীর পরামর্শে রংপুর থেকে এক হাজার চারা এনে প্রথমে ১শ শতক জায়গায় লাগান। এ বাগান গড়ে তুলতে খরচ হয় ১ লড়্গ ৬০ হাজার টাকা। প্রথম বছর লাভের মুখ তেমন না দেখলেও পরের বছর থেকে ভালোই সফল হয়ে আসছেন তিনি। বলেছেন একশ শতক জায়গায় কলাবাগানটি করার পর লাভ হওয়ায় তার পাশে ৩৬ শতক জায়গায় আরেকটি বাগান গড়ে তুলেছি। বর্তমানে তার দুইটি বাগানে ৫ লাখ টাকার বেশি কলা রয়েছে। তিনি আরো জানান, তার বাগানের কলা শুধু রাউজানে নয়, রাঙ্গামাটি, ফটিকছড়ি, হাটহাজারী ও চট্টগ্রাম শহরের ফড়িয়া ব্যবসায়ীরা নিয়ে যায় খুচরা বিক্রি করতে। শুধু কলা নয়, বাড়ির আঙ্গিনায় বা নিজস্ব বাগানে লাগানোর জন্য কলার চারাও নিয়ে যান অনেকে। একটি কলা চারা ১০ টাকা দরে বিক্রি হয় বলে তিনি জানান। তিনি আরো জানান, তার বাগান থেকে একটি কলা পাইকারী হারে ২ টাকা ৮০ পয়সা করে নেন। ভালো জাতের কলা হওয়ায় পাইকারী ক্রেতারা কলা কিনতে আসেন প্রতিদিন। খুচরা বিক্রেতারা তাদের দোকানে একটি কলা বিক্রি করে থাকেন ৪/৫ টাকা করে।

সু্ত্র : ইত্তেফাক।

মনের উঠোনে

সাম্প্রতিক সংযোজন

মোবাইল থেকে দেখুন

আমাদের দেশ এখন আপনার মুঠোফোনে, মোবাইল থেকে লগইন করুন আমাদের দেশ

দ র্শ না র্থী

দ র্শ না র্থী

free counters

কে কে অনলাইনে আছেন