লেবু চাষ করে ঘুরে দাঁড়িয়েছে ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার বাঁশহাটি গ্রামের কৃষকরা। সংশ্লিষ্ট বিভাগের সহযোগিতা ছাড়াই উন্নত বীজ, আধুনিক প্রযুক্তি, সময়োপযোগী কৃষিনীতি প্রয়োগের মাধ্যমে বাঁশহাটি গ্রামের কৃষকরা কৃষি ক্ষেত্রে নীরব বিপ্লব ঘটিয়েছে। এখানে প্রচলিত-অপ্রচলিত ফসলের উৎপাদন বেড়েছে দ্বিগুণ। সাথে সাথে বৃদ্ধি পেয়েছে কৃষকদের গড় আয়। মাত্র ২টি লেবু গাছ দিয়ে শুরূ করা কৃষক খালেক বর্তমানে কোটিপতি। তাকে অনুসরণ করে অনেকেই এগিয়ে এসেছে। লেবুর উৎপাদন বৃদ্ধি পাওয়ায় বাঁশহাটি গ্রামটি এখন লেবু গ্রামে পরিচিতি লাভ করেছে।
সরেজমিনে এলাকা ঘুরে জানা গেছে, উপজেলার ৪নং চণ্ডিপাশা ইউনিয়নের পূর্ব বাঁশহাটি গ্রামের লোক সংখ্যা প্রায় এক হাজার। শিক্ষিতের হার খুবই কম। এ এলাকা কৃষি নির্ভরশীল। গ্রামের কৃষকরা কয়েক বছর পূর্বেও ধান চাষাবাদ করতো। কিন্তু ধান উৎপাদন করতে যে খরচ হতো তা ফসল থেকে উঠে আসতো না। বিকল্প ব্যবস্থায় তারা সিম বা মিষ্টি লাউচাষে আগ্রহী হয়ে উঠে। এই ফসলটি উৎপাদনে তেমন সুবিধা হয়নি। এ রকম পরিস্থিতিতে মৃত আব্দুল মজিদের ছেলে আবদুল খালেক (৪৫) বাড়ির সামনে পুকুর পাড়ে ২টি লেবু গাছ লাগায় ৭/৮ বছর পূর্বে। এক বছর যেতে না যেতেই দুটি লেবু গাছে লেবু ধরে প্রায় ৭শ’র মতো।খালেক জানান, সংসারের নিত্যপ্রয়োজনীয় উপকরণ ক্রয় করার তাগিদে ৫ হালি লেবু বাজারে নিয়ে বিক্রি করে পাই ৫০ টাকা। এ দিয়ে মাছ-তরিতরকারি ক্রয় করি। ঐ বছরেই আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে ওই দুইটি লেবু গাছের ডালে কলম দিয়ে পাশের এক কাঠা জমিতে লাগিয়ে দেই। ৩/৪ মাসের মধ্যেই গাছগুলো তরতাজা হয়ে সবুজে আচ্ছন্ন হয়ে যায় পুরো জমি।
এক বছরের মধ্যেই খালেক আরো ১০/১২ কাঠা ধানি জমিতে লেবু গাছ লাগিয়ে দেন। লেবু চাষ করে স্বাবলম্বী খালেক স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি মিলিয়ে তিনি এখন কোটিপতি।খালেকের লেবু বাগানে পরের বছর প্রথমে লাগানো এক কাঠা জমির ৭০টি লেবু গাছে লেবুর উৎপাদন হয় প্রায় একুশ হাজারের মতো। বাজারে বিক্রি হয় প্রায় ৬০ হাজার টাকা। বর্তমানে খালেকের ৩ একর জমিতে প্রায় ১ হাজার ৫শ’টি লেবু গাছ আছে। প্রতিদিন গড়ে ১০/১২ হাজার টাকার লেবু বিক্রি করছে। প্রতিদিন তাড়াইল, কেন্দুয়া ও কিশোরগঞ্জের বাজারের চিহ্নিত পাইকাররা খালেকের বাড়ির বাগান থেকে লেবু নিয়ে যায়।খালেকের এই অভাবনীয় সাফল্য দেখে বিদেশ যেতে প্রস্তুত যুবক মোঃ লুৎফর রহমান সব বাদ দিয়ে তার নিজস্ব ১৬ কাঠা ধানি জমিতে লেবুর গাছ লাগিয়ে দেয়। জানা যায়, ৮শ লেবু গাছে খরচ বাদে এক বছরে লাভ হয় প্রায় আড়াই লাখ টাকা। এ অবস্থায় লুৎফর বিদেশ যাওয়া ভুলে গিয়ে এখন লেবু চাষে ব্যস্ত। ভাঙ্গা-চোরা বসতঘরের স্থানে প্রায় ১০ লাখ টাকা ব্যয় করে তৈরি করেছেন এখন পাকা দালান। সুখের নতুন সংসারের অপেক্ষায় দিন গুণছেন আত্মপ্রত্যয়ী এ যুবক।ঐ গ্রামের লেবু চাষী সিরাজুল, ফয়জুল্লাহ, ইদ্রিস, হালিম, বাবুল, চানমিয়া, সুরূজ, সুজন, সালাম, জব্বার, এরশাদ, সামাদ, হাসেন, ছাহেদ, রমজানসহ অনেকেই আজ স্বাবলম্বী। পিছনের সকল কিছুই এখন স্মৃতি। বেশী লেবু উৎপাদনের কারণে গ্রামের নামটিও বদলে যাচ্ছে। এখন সকলেই চিনে “লেম্বু” গ্রাম হিসাবে। শুধু তাই নয় খালেককে অনেকেই লেবু চেয়ারম্যান হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
তথ্যসূত্র : দি-এডিটর
লেবু চাষ করে কোটিপতি
Saturday, August 7, 2010
Labels:
কৃষি তথ্য,
ফল-মূল চাষ,
সফলতা
Posted by
আমাদের রান্না
at
1:03 PM