ঘরেই ফলবে রঙিন টমেটো

Wednesday, April 25, 2018


রসালো ফল অথবা সবজি- যাই বলি না কেন, রান্নায় অথবা সালাদে টমেটোর জুড়ি নেই। টক-মিষ্টি এই ফলটি পাকা এবং কাঁচা দুই অবস্থাতেই খাওয়ার উপযোগী। তবে টমেটোর একটা বেশ বড় অসুবিধে হল বাজার থেকে কিনে এনে এটা বেশিদিন সংরক্ষণ করা যায় না, ফ্রিজে বেশিদিন রাখলেও পানসে হয়ে যায়। সস বা পিউরি করে রেখে দিতে পারেন ডিপ ফ্রিজে কিন্তু সবচাইতে ভালো বুদ্ধি হল আপনার বাড়ির বারান্দায় একটু জায়গা বের করে নিয়ে একটা টবে টমেটো চাষ করা!

রোপণের সময় ও প্রস্তুতি-

মধ্য অগাস্ট থেকে শুরু করে নভেম্বরের শেষ পর্যন্ত টবে লাগাতে পারেন এই গাছ। টমেটো চাষ করতে হলে প্রথমেই আপনার যা লাগবে তা হল বেশ বড়সড় একটা টব। টমেটো গাছটা হয় বেশ ঝোপালো এবং এর মূলের প্রসার এবং বৃদ্ধির জন্য লাগে অনেকটা মাটি। এক থেকে দুই বর্গফুট টব অথবা পাঁচ গ্যালন পানি ধরে এমন পুরনো বালতি এর জন্য বেশ উপযুক্ত। এর পরে এই টবের নিচের অংশে কিছু পরিমাণ খোয়া বিছিয়ে নিন যাতে অতিরিক্ত পানি বের হয়ে যায়। এরপর টবের এক তৃতীয়াংশ মাটি দিয়ে ভরে দিতে হবে।
টমেটো গাছ জন্মানোর ক্ষেত্রে খেয়াল রাখুন এর মাটির ক্ষেত্রে। পুরনো টবের মাটি বা বাইরে থেকে নিয়ে আসা নোংরা মাটি ব্যবহার না করাই ভালো। এগুলোতে রোগজীবাণু থাকলে সহজেই অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে আপনার গাছটি। নার্সারিতে পাওয়া যেতে পারে টবের জন্য প্রস্তুতকৃত বিশেষ মাটি এবং ভার্মিকম্পোস্ট। এগুলো দিয়ে তৈরি করতে পারেন টবের মাটি।

রোপণ পদ্ধতি ও যত্ন- 

টমেটো লাগাতে পারেন দুইভাবে।
প্রথমত, আপনি নার্সারি থেকে চারা নিয়ে এসে আপনার বড় টবটিতে লাগিয়ে নিতে পারেন। সেক্ষেত্রে টবের মাটিকে নিড়ানি দিয়ে খুঁচিয়ে আগে থেকেই বেশ ঝুরঝুরে করে নিতে হবে। এরপর যে প্লাস্টিকে মোড়ানো অবস্থায় আপনার চারাটি কিনে এনেছেন সেটাকে সাবধানে মাটি থেকে ছাড়িয়ে নিতে হবে। লক্ষ্য রাখবেন যেন এতে চারাটির মূলের কোনও ক্ষতি না হয়। এরপর টবের মাটিতে বেশ গভীর গর্ত করে তাতে চারাটি বসিয়ে দিন ও মাটি ভরে দিন কাণ্ডের চারপাশে। এই চারাটিতে বেশ করে পানি দিতে হবে কিন্তু লক্ষ্য রাখুন জলাবদ্ধতার সৃষ্টি যেন না হয়।

দ্বিতীয় একটি উপায় হলো, টমেটোর বীজ থেকে গাছ গজানো। বাড়ির বাগানে বেশি করে টমেটো গাছ লাগাতে চাইলে এটি করতে পারেন। এর জন্য আপনাকে আগে ভালো জাতের বীজ কিনে নিতে হবে। এর পর টবের আর্দ্র মাটিতে ছিটিয়ে দিতে হবে বীজগুলোকে। অঙ্কুরোদ্গমের পর চারাগুলো বড় হতে শুরু করলে এগুলোকে রাখুন বেশ আলো আসে এমন স্থানে এবং কোনভাবেই যেন এগুলোতে পানির অভাব না হয় তার দিকে লক্ষ্য রাখুন। কমপক্ষে ৬ ঘণ্টা রোদ খাওয়াতে হবে আপনার গাছগুলোকে, ৮ ঘণ্টা হলে ভালো হয়।

১.আপনার গাছ যখন বেড়ে ওঠা শুরু করবে তখন টবের প্রায় পুরোটাই মাটি দিয়ে ভরে দিন। এতে গাছ ভালো বাড়বে।

২. টমেটো গাছের যত্নে প্রয়োজনীয় একটি পদক্ষেপ হলো টবে একটি খুঁটি পুঁতে তার সাথে গাছটিকে বেঁধে দেওয়া যাতে এর কাণ্ড বাঁকা না হয়ে যায়।

৩.এছাড়াও একে নেট দিয়ে ঢেকে দিতে পারেন, তাতে পোকামাকড় কম হবে।

৪.গাছের বয়স ছয় সপ্তাহ হবার পর প্রতি সপ্তাহে একটু করে সার দিতে পারেন গাছের গোড়ায়।

৫.বেশি শীত এবং গরমের সময় মাটিকে রক্ষা করতে দিতে পারেন শুকনো পাতা বা বাড়ির শাকসবজির উচ্ছিষ্ট খোসা দিয়ে। এতে সারেরও কাজ হবে এবং তাপমাত্রার নেতিবাচক প্রভাব থেকে গাছের মূল রক্ষা পাবে।

সূত্রঃ আপডেট ডট কম

ফুল চাষে করনীয়

Saturday, April 21, 2018


ফুল চাষ: আয়বর্ধক কৃষিপণ্য

ফুল বিশ্বের মানুষের কাছে অতি প্রিয় এক বস্তু। ফুলকে সবাই ভালবাসে। আগে আমাদের দেশে ফুলের তেমন কদর ছিল না। বর্তমানে ফুলের চাহিদা অনেক বেশি। মানুষ এখন বিয়ের গাড়ি সাজাতে, গুণীজনদের বরণ করে নিতে, বিয়ে বাড়ি সাজাতে, জন্মদিনের অনুষ্ঠানে, পূজা-পার্বণে, গায়ে হলুদে, একুশে ফেব্রুয়ারিতে, সভা-সমিতি ও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ফুলের ব্যবহার আগের চেয়ে অনেক বেড়ে গেছে। বর্তমানে চাহিদার আলোকে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে ফুল চাষ করে লাভবান হওয়া খুবই সহজসাধ্য ব্যাপার। আমাদের দেশে বিভিন্ন ফুলের জন্মে যেমন- গোলাপ, গাঁদা, চামেলী, বেলি, জুঁই, শেফালি, রজনীগন্ধা, গন্ধরাজ, গ্লাডিওলাস, শেফালি, দোপাট্টি, হাসনা-হেনা, চন্দ্রমলি্লকা, ডালিয়া, রঙ্গন, দোলনচাঁপা, কনকচাঁপা, অপরাজিতা, মৌ-চণ্ডাল, টগর, মর্নিংরোজ, জবা, কসমস, মালতি, কামিনী ইত্যাদি। এর ভেতরে কিছু আছে বর্ষজীবী এবং কিছু মৌসুমী।

কোন কোন ফুল এমনিতেই জন্মে আবার কোন কোন ফুলের চাষ করতে হয়। আমাদের দেশে বিভিন্ন জাতের গোলাপ, রজনীগন্ধা, গাঁদা, রঙ্গন, গ্লাডিওলাস ইত্যাদি খুলনা ও যশোরসহ কয়েকটি অঞ্চলে বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে। অর্থনৈতিকভাবে রাখছে গুরুত্বপূর্ণ অবদান। বেকাররা পাচ্ছে কাজ।

মাত্র ২৫ বছর আগের কথা। এখানকার অধিকাংশ মানুষই ভারত থেকে চোরাচালানী করে বিভিন্ন ধরনের ফুল আনতো আমাদের দেশে। এই ফুল ঢাকার বিক্রেতাদের কাছে বিক্রি করে তারা মোটা অংকের টাকা লাভ করতো। এথন বাংলাদেশে ই হচ্ছে বাণিজ্যিকভাবে ফুলের চাষ।

রোপণের সময়: অধিকাংশ ফুলের বীজ, চারা, কলম বা কন্দ অশ্বিন থেকে অগ্রহায়ণ পর্যন্ত রোপণের উপযুক্ত সময়।

জমি নির্বাচন: এমন জমি নির্বাচন করতে হবে যেখানে পর্যাপ্ত আলো-বাতাস পায়। উঁচু দো-আঁশ মাটি ফুল চাষের জন্য উপযোগী। মনে রাখতে হবে, ফুল চাষের জন্য জমি নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বাগানের আকার-আকৃতি মানানসই হলে ভাল দেখায়।

বেড়া দেয়া: গবাদি পশুর বা অবাঞ্ছিত আক্রমণ থেকে ফুল গাছকে বাঁচাতে হলে শক্ত বাঁশের/কাঁটাতার/লোহার বেড়া দিতে হবে। লক্ষ্য রাখতে হবে গরু-ছাগল যেন সে বেড়া ভেঙ্গে না ফেলে।

জমি তৈরি ও চারা রোপণ: জমির পরিমাণ বেশি হলে বিভিন্ন জাতের ফুলের জন্য আলাদা আলাদা জায়গা ভাগ করে পরিকল্পনা মাফিক (নিয়ম মাফিক) চারা রোপণ করতে হবে। কন্দ, চারা বা কলম রোপণের ২০/২৫ দিন আগে জমি ভালভাবে কুপিয়ে উপযুক্ত ও পরিমিত সার যেমন- পচা গোবর, টিএসপি, হাড়ের গুঁড়া, এম,পি, ইউরিয়া, খৈল, চা-পাতির উচ্ছিষ্টাংশ, ছাই ইত্যাদি মিশিয়ে মাটি ঝরঝরে করতে হবে। সার প্রয়োগে জৈব সারের প্রাধান্য দেওয়া উচিত। সব সময় স্বাস্থ্যবান ও নিরোগ চারা বা কন্দ লাগাতে হবে। চারা লাগিয়ে উপরে চাপ না দিয়ে পাশের মাটি চাপ দিয়ে শক্তভাবে চেপে দিতে হবে এবং প্রয়োজনমত পানি দিতে হবে। চারাভেদে খুঁটি পুঁতে চারার গায়ে বেঁধে দিতে হবে।

প্রাপ্তিস্থান: শহরে বা গ্রামে বর্তমানে ভাল নার্সারিতে উন্নতজাতের বীজ, কলম ও চারা পাওয়া যায়। কৃষি সমপ্রসারণ অফিসে যোগাযোগ করলে চারার সন্ধান পাওয়া যাবে।

পরিচর্যা: আগাছা নিড়ানী দিয়ে তুলে ফেলতে হবে এবং গোড়ার মাটি মাঝে-মধ্যে আলগা করে দিতে হবে। প্রয়োজনে পানি সেচের ব্যবস্থা করতে হবে। পিঁপড়া ও মাকড়সার আক্রমণ থেকে গাছকে রক্ষার জন্য হিপ্টেক্লোন-৪০ পরিমাণমত দেওয়া যায়। সাধারণ পোকার জন্য মেলতিয়ন বা ডাইমেক্রন ওষুধ প্রয়োগ করা যেতে পারে। রোগ অনুযায়ী প্রতিকারের ব্যবস্থা নিতে হবে। সার প্রয়োগের কলাকৌশল জেনে চাহিদামত কয়েক দফা সুষম সার ও সেচ দিতে হবে। ফুল ধরার বেশ আগে হতে বিশেষ যত্ন নিতে হবে। ফুলের পরিমাণ ও মান উভয় দিকেই খেয়াল রাখা দরকার। গাছভেদে পুরানো ও রোগা ডাল-পালা ছাঁটাই করে দিতে হবে।

ফুল সংগ্রহ: ফুল সম্পূর্ণ ফোটার আগে ডাঁটাসহ কেটে ফুল সংগ্রহ করা যায়। ডাঁটার নিচের অংশ পানিতে ডুবিয়ে রাখলে ফুল সজীব থাকে। মান ভাল রাখার জন্য ডাঁটাসহ ফুল আঁটি বেঁধে পরিপাটি করে কালো পলিথিনে মুড়ে বাজারে পাঠাতে হবে।

টবে ফুল চাষ: জমির অভাবে দালানের ছাদে, বারান্দার টবে সৌখিন বা বাণিজ্যিকভাবে বিভিন্ন ধরনের ফুলের চাষ করা যায়। বিভিন্নজাতের বা বর্ণের গোলাপ ও গাঁদা। এছাড়া ডালিয়া, রঙ্গন, চন্দ্রমলি্লকা, মৌ-চণ্ডাল, রজনীগন্ধা, বিভিন্ন আর্কিড, নানাজাতের আকর্ষণীয় ক্যাকটাস ও বনসাই। বর্তমানে বাজারে এসবের ভাল চাহিদা রয়েছে। সময় বাঁচানো এবং নির্মল আনন্দের জন্য বর্ষজীবি বা স্থায়ী ফুলের চাষ করা যায়। যেমন- গোলাপ, জবা, চেরি, দোলনচাঁপা, মালতি, কামিনী রঙ্গন, পাতাবাহার, বিভিন্ন আর্কিড ও নানাজাতের ক্যাকটাস। ক্যাকটাস জাতীয় গাছের জন্য সার খুবই কম লাগে। ফলে ব্যয়ও হয় খুব কম।

উপসংহার: আমাদের দেশে ফুল চাষ করে আত্মকর্ম সংস্থানের মাধ্যমে বেকারত্ব ঘুচানো সম্ভব। দেশে ফুলের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রফতানি করা যায়। আসে বৈদেশিক মুদ্রা। সবচেয়ে বড় কথা ফুল মানুষের খারাপ মনকে ভাল করে দেয়।

সূত্রঃ আপডেট ডট কম

ডালিয়ার চাষ

Friday, April 20, 2018


ডালিয়া, এ এক সর্বজন প্রিয় ফুল। অপরূপ লাবণ্যে ও বর্ণের প্রাচুর্যে মহিমান্বিত সুন্দর একটি ফুল হলো ডালিয়া। এর বৈজ্ঞানিক নাম Dahlia Variailis। ডালিয়া কম্পোজিটি পরিবারভুক্ত। এ ফুলের আদি বাসস্থান মেক্সিকোর গুয়াতেমালায়। লর্ডবুটি নামের এক ব্যক্তি স্পেন থেকে ডালিয়া ফুল প্রথমে ইংল্যান্ডে নিয়ে আসেন। সেই ফুল দেখে সুইডেনের উদ্ভিদতত্ত্ববিদ আন্দ্রিয়াস গুস্তাভ ডাল নিজের নামের অনুকরণে ফুলের নাম রাখেন ডালিয়া।

শ্রেণিবিভাগ ও জাত: ডালিয়ার ১১টি শ্রেণীর আওতায় এর প্রচুর জাত রয়েছে। ডালিয়ার উন্নত জাতের মধ্যে রয়েছে সিঙ্গল, স্টার, অ্যানেমিন ফাওয়ার্ড, কলারেট, পিওনি ফাওয়ার্ড, ফরমাল ডেকোরেটিভ, ইন ফরমাল ডেকোরেটিভ, ডবল শো ফ্যান্সি, পম্পন, রয়্যাল হোয়াইন, ক্যাকটাস, ভ্যারাইটি গার্ল প্রভৃতি।

মাটি ও জলবায়ু : সুনিষ্কাশিত উর্বর দোআঁশ মাটি বা বেলে দোআঁশ প্রকৃতির ঈষৎকার মাটি ডালিয়া চাষের জন্য উত্তম। ছায়াযুক্ত স্থানে গাছ দুর্বল ও লম্বা হয়, ফুল কম ও ছোট হয় এবং রঙের ঔজ্জ্বল্য হ্রাস পায়। ফলে পর্যাপ্ত সূর্যালোক পায় এমন জমিতে ডালিয়ার চাষ করতে হবে। ডালিয়া বৃপ্রেমীরা যারা চাষ করবেন তাদেরকে আবহাওয়া অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে। যে দিন বৃষ্টি হবে সে দিন থেকে যত দিন পর্যন্ত মাটি স্যাঁতসেঁতে থাকবে তত দিন পানি দেয়ার দরকার নেই। আবার গরমের সময়ে মাটি যখন শুকনো হয়ে ওঠে তখন পানির পরিমাণ বাড়িয়ে মাটি আর্দ্র করে তুলতে হবে। কারণ ডালিয়াগাছের জন্য আর্দ্র মাটি প্রয়োজন। তবে মাটি বেশি ভিজে কাদাকাদা হয়ে গেলে তা গাছের পে তেমন উপকারী হবে না, টবের গাছের ক্ষেত্রে সেই ব্যবস্থা করা উচিত। বৃষ্টির সময়ে গাছের ওপর ছাউনি দিতে পারলে ভালো কিংবা কোনো ছাউনির নিচে রাখলে গাছ নিরাপদে থাকবে। টবের গাছের ক্ষেত্রে প্রতিদিন নিয়ম করে পানি দিয়ে মাটিকে আর্দ্র রাখা উচিত।

বংশ বিস্তার: ডালিয়া বীজ, মূলজ কন্দ, ডাল কলম এবং ত্রেবিশেষে জোড় কলমের সাহায্যে বংশ বিস্তার করে। মূলজ কন্দ ও ডাল কলম থেকে চারা তৈরির পদ্ধতি হলো ডালিয়াগাছের গোড়ায় জন্মানো মূলজ কন্দ পরবর্তী বছর চারা তৈরির কাজে ব্যবহৃত হয়। ফাল্গুন-চৈত্র মাসে ফুল শেষে গাছ নিস্তেজ হয়ে পাতা ও ডাঁটা শুকিয়ে আসলে কন্দ পরিপক্ব ও সংগ্রহ উপযোগী হয়। মাটির নিচ থেকে অত অবস্থায় কন্দ তুলে দু-এক দিন বাতাসে শুকিয়ে আলুর মতো শুষ্ক বালুতে সংরণ করতে হয়। অতঃপর ভাদ্র-আশ্বিন মাসে কন্দগুলোকে অর্ধেক মাটি ও অর্ধেক বালু মিশ্রিত বীজতলা বা টবে রোপণ করে সামান্য পানি সিঞ্চন করলে কয়েক দিনের মধ্যে কন্দের চোখ থেকে নতুন চারা বের হয়। চারা দুই থেকে পাঁচ সেন্টিমিটার লম্বা হলে মূলজ কন্দটিকে চারাসহ কেটে টুকরো করে নির্ধারিত জমিতে বা টবে রোপণ করা চলে। অপর দিকে আশ্বিন থেকে অগ্রহায়ণ মাসে ডালিয়ার ডাল কলম করা যায়। এ সময়ে মূলজ কন্দে জন্মানো কচি চারা বা ডাল থেকে গিটসহ কেটে বা ভেঙে নিতে হয়। তা ছাড়া পুষ্ট কন্দ বা কাণ্ডের পাশে জন্মানো ১৫-২০ সেন্টিমিটার লম্বা পুষ্ট ডাল ও গিটসহ সংগ্রহ করা চলে।

সার প্রয়োগ: বাংলাদেশের পরিবেশে আশ্বিন থেকে অগ্রহায়ণ পর্যন্ত সময়ে জমিতে কিংবা টবে ডালিয়ার চারা রোপণ করা যায়। ডালিয়ার মাটি গভীরভাবে নরম ও ঝরঝরে করে তৈরি করতে হয়। প্রতি ১০০ বর্গ মিটার জমিতে ২০০ কেজি গোবর, তিন কেজি কাঠের ছাই ও দুই কেজি টিএসপি সার মাটির সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে নিতে হয়। ভারী মাটিতে গোবরের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়া উত্তম। টবে ডালিয়া চাষের জন্য ২ ভাগ দোআঁশ মাটি, ২ ভাগ বালি, ২ ভাগ কাঠের ছাই, ১ ভাগ পাতা পচা সার, ১ ভাগ গোবর, ১ ভাগ খৈল ও ১ ভাগ টি এস পি সার মিশিয়ে মাটি তৈরি করতে হয়।

চারা রোপণ ও পরিচর্যা: ডালিয়া চাষের জমিতে জাত ভেদে ৬০ থেকে ৯০ সেন্টিমিটার দূরত্বে সারিবদ্ধভাবে আর প্রতি টবে একটি চারা রোপণ করতে হয়। টবের আকার ২৫ সেন্টিমিটার হলে ভালো হয়। চারা লাগানোর পর থেকে গাছে এমনভাবে সেচ দিতে হয় যাতে কখনো পানির ঘাটতি না পড়ে ও জলাবদ্ধতা দেখা না দেয়। ডালিয়াগাছে সাধারণ রেড স্পাইডার ও রেড মাইভ ধরনের পোকা হয়। এই পোকা থেকে রেহাই পাওয়ার উপায় হলো প্রতি সপ্তাহে নিয়ম করে ক্যালিথিন বা নোবাকন নামে ওষুধের ২০ ফোঁটা এক লিটার পানিতে ভালো করে গুলিয়ে সেই মিশ্রণ দিয়ে ঝারির সাহায্যে গাছগুলোকে ভিজিয়ে দেয়া যায়, তাহলেই এ ধরনের পোকার আক্রমণ থেকে গাছকে রা করা সম্ভব হবে।

সূত্রঃ আপডেট ডট কম

গোলাপ ফুল চাষ পদ্ধতি – কিভাবে গোলাপ ফুল চাষ করে লাভবান হওয়ার পদ্ধতি

Wednesday, April 18, 2018


গোলাপ ফুল চাষ পদ্ধতি - কিভাবে গোলাপ ফুল চাষ করে লাভবান হওয়ার পদ্ধতি | গোলাপকে ফুলের রানি বলা হয়। বাংলাদেশে বাণিজ্যিকভাবে বহুজমিতে গোলাপের চাষ হচ্ছে এবং দিন দিন গোলাপের চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং গোলাপ অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।পৃথিবীজুড়ে গোলাপের অসংখ্য জাত রয়েছে। জাতগুলোর কোনোটির গাছ বড়, কোনোটি ঝোপালো, কোনোটি লতানো।

গোলাপ ফুল চাষ পদ্ধতিঃ
গোলাপকে ফুলের রানি বলা হয়। বাংলাদেশে বাণিজ্যিকভাবে বহুজমিতে গোলাপের চাষ হচ্ছে এবং দিন দিন গোলাপের চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং গোলাপ অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।

জাত সমূহ: পৃথিবীজুড়ে গোলাপের অসংখ্য জাত রয়েছে। জাতগুলোর কোনোটির গাছ বড়, কোনোটি ঝোপালো, কোনোটি লতানো। জাত বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী গোলাপ সাদা, লাল, হলুদ, কমলা, গোলাপি এবং মিশ্রিত রঙের হয়ে থাকে। এ ছাড়াও রানি এলিজাবেথ (গোলাপি), ব্ল্যাক প্রিন্স (কালো), ইরানি (গোলাপি), মিরিন্ডা (লাল), দুই রঙা ফুল আইক্যাচার চাষ করা হয়।

বংশবিস্তার: গোলাপের বংশ বিস্তারের জন্য অবস্থাভেদে শাখা কলম, দাবা কলম, গুটি কলম ও চোখ কলম পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। নতুন জাত উদ্ভাবনের জন্য বীজ উৎপাদন করে তা থেকে চারা উপাদন করা হয়।

জমি নির্বাচন: গোলাপ চাষের জন্য উর্বর দোআঁশ মাটির জমি নির্বাচন করা উত্তম। ছায়াবিহীন উঁচু জায়গা যেখানে জলাবদ্ধতা হয় না, এরূপ জমিতে গোলাপ ভালো জন্মে।

জমি তৈরি: নির্বাচিত জমি ৪-৫ টি আড়াআড়ি চাষ ও মই দিয়ে মাটি ঝুর ঝুরা ও সমতল করতে হবে। এরপর মাটি কুপিয়ে ৫ সেমি উঁচু করে ৩ মি. x ১মি. আকারের বেড বা কেয়ারি তৈরি করতে হবে। এভাবে কেয়ারী তৈরির পর নির্দিষ্ট দূরত্বে ৬০ সেমি. x ৬০ সেমি. আকারের এবং ৪৫ সেমি. গভীর গর্ত খনন করতে হবে। গর্তের উপরের মাটি ও নিচের মাটি আলাদা করে রাখতে হবে। চারা রোপণের ১৫ দিন আগে গর্ত করে খোলা রাখতে হবে। এ সময়ে গর্তের জীবাণু ও পোকামাকড় মারা যায়।

সার প্রয়োগ: প্রতি গর্তের উপরের মাটির সাথে ছকে প্রদত্ত সারগুলো মিশিয়ে গর্তে ফেলতে হবে। এরপর নিচের মাটির সাথে ৫ কেজি পচা গোবর, ৫ কেজি পাতা পচা সার ও ৫০০ গ্রাম ছাই ভালোভাবে মিশিয়ে গর্তের উপরের স্তরে দিতে হবে। এভাবে গর্ত সম্পূর্ণ ভরাট করার পর ১৫-২০ দিন ফেলে রাখলে সারগুলো পচবে ও গাছ লাগানোর উপযুক্ত হবে। বর্ষাকালে যাতে গাছের গোড়ায় বৃষ্টির পানি জমে না থাকে, সে জন্য নালা তৈরি করতে হবে।

চারা বা কলম রোপণ: আশ্বিন মাস চারা রোপণের উপযুক্ত সময়। তবে পৌষ মাস পর্যন্ত চারা লাগালে বেডের গর্তের মাঝখানে ক্ষুদ্রাকৃতির গর্ত খুঁড়ে চারা লাগাতে হয়। প্রথমে পলিথিন ব্যাগ বা মাটির টব থেকে চারা বের করে দুর্বল শাখা, রোগাক্রান্ত শিকড় ইত্যাদি কেটে ফেলতে হয়। চারা লাগিয়ে গোড়ায় শক্তভাবে মাটি চেপে দিতে হবে। চারা রোপণের পর চারাটি একটি খুঁটি পুতে খুঁটির সাথে বেঁধে দিতে হবে। চারা লাগিয়ে গোড়ায় পানি দেওয়া উচিত। ২-৩ দিন ছায়ার ব্যবস্থা করলে ভালো হয়।

পরিচর্যা ও আগাছা দমন: গোলাপের কেয়ারিতে অনেক আগাছা হয়। আগাছা তুলে ফেলতে হবে।

পানি সেচ: মাটির আর্দ্রতা যাচাই করে গাছের গোড়ায় এমনভাবে সেচ দিতে হবে যেন মাটিতে রসের ঘাটতি না হয়।

পানি নিকাশ: গোলাপের কেয়ারীতে কোনো সময়ই পানি জমতে দেওয়া উচিত নয়। কারণ গোলাপ গাছ জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারে না।

ডাল-পালা ছাঁটাইকরণ (Prunning): গোলাপের নতুন ডালে বেশি ফুল হয়। তাই পুরাতন ও রোগাক্রান্ত ডালপালা ছাঁটাই করা প্রয়োজন। প্রতিবছর গোলাপ গাছের ডালপালা ছাঁটাই করলে গাছের গঠন কাঠামো সুন্দর ও সুদৃঢ় হয় এবং অধিক হারে বড় আকারের ফুল ফোঁটে।

ফুলের কুড়ি ছাঁটাই: অনেক সময় ছাঁটাই করার পর মূলগাছের ডালে অনেক পত্রমুকুল ও ফুলকুঁড়ি জন্মায়। সবগুলো কুঁড়ি ফুটতে দিলে ফুল তেমন বড় হয় না। তাই বড় ফুল ফোটার জন্য আসল কুঁড়ি রেখে পাশের কুঁড়ি গুলো ধারালো চাকু দিয়ে কেটে দিতে হয়।

পোকা মাকড় ব্যবস্থাপনা: গোলাপ গাছে যেসব পোকা দেখা যায় তন্মধ্যে রেড স্কেল ও বিটল প্রধান।
রেড স্কেল: এ পোকা দেখতে অনেকটা মরা চামড়ার মতো। গরমের সময় বর্ষাকালে এর আক্রমণ বেশি পরিলক্ষিত হয়। এ পোকা গাছের বাকলের রস চুষে খায়। ফলে বাকলে ছোট ছোট কালো দাগ পড়ে। প্রতিকার না করলে আক্রান্ত গাছ মারা যায়। গাছের সংখ্যা কম হলে দাঁত মাজার ব্রাশ দিয়ে আক্রান্ত স্থানে ব্রাশ করলে পোকা পড়ে যায়। ম্যালাথিয়ন বা ডায়াজিনন ঔষধ প্রয়োগ করে এ পোকা দমন করা যায়।

বিটল পোকা: শীতকালের শেষে এ পোকার আক্রমণ পরিলক্ষিত হয়। এ পোকা গাছের কচি পাতা ও ফুলের পাপড়ি ছিদ্র করে খায়। সাধারণত রাতের বেলা আক্রমণ করে। আলোর ফাঁদ পেতে এ পোকা দমন করা যায়। ম্যালথিয়ন বা ডাইমেক্রন ছিটিয়ে এ পোকা দমন করা যায়।

রোগ ব্যবস্থাপনা: গোলাপ গাছে অনেক রোগ হয়। তন্মধ্যে কালো দাগ পড়া রোগ, ডাইব্যাক ও পাউডারি মিলডিউ প্রধান।
কালো দাগ পড়া রোগ: এটি একটি ছত্রাকজনিত রোগ। রোগাক্রান্ত গাছের পাতায় গোলাকার কালো রঙ্গের দাগ পড়ে। আক্রান্ত গাছের পাতা ঝরে গিয়ে গাছ পত্রশূন্য হয়ে যায়। চৈত্র থেকে শুরু করে কার্তিক মাস পর্যন্ত এ রোগের আক্রমণ ঘটে। এ রোগের প্রতিকারের জন্য গাছে সুষম সার প্রয়োগ করতে হবে। গাছের গোড়ায় যেন পানি জমে না থাকে সে দিকে খেয়াল করতে হবে। এ ছাড়া ছত্রাকনাশক প্রয়োগ করে এ রোগ দমন করা যায়। আক্রান্ত পাতাগুলো কেটে পুড়িয়ে ফেলতে হয়।

ডাইব্যাক: ডাল ছাঁটাইয়ের কাটা স্থানে এ রোগ আক্রমণ করে। এ রোগ হলে গাছের ডাল বা কাণ্ড মাথা থেকে কালো হয়ে নিচের দিকে মরতে থাকে। এ লক্ষণ ক্রমে কাণ্ডের মধ্য দিয়ে শিকড় পর্যন্ত পৌঁছে এবং সম্পূর্ণ গাছ মারা যায়। এ রোগ দমন করতে হলে আক্রান্ত কাণ্ড বা ডালের বেশ নিচ থেকে কেটে পুড়ে ফেলতে হবে। ডাল ছাঁটাইয়ের চাকু জীবাণুনাশক দিয়ে মুছে ডাল ছাঁটাই করা উচিত। কর্তিত স্থান স্পিরিট দিয়ে মুছে দিতে হবে।

পাউডারি মিলডিউ: এটি একটি ছত্রাক জনিত রোগ। শীতকালে কুয়াশার সময় এ রোগে বিস্তার ঘটে। এ রোগে আক্রান্ত হলে পাতা, কচিফুল ও কলিতে সাদা পাউডার দেখা যায়। ফলে কুঁড়ি না ফুটে নষ্ট হয়ে যায়। এ রোগ দমন করতে হলে আক্রান্ত ডগা বা পাতা তুলে পুড়িয়ে দিতে হবে। এছাড়া থিওভিট বা সালফার ডাইথেন এম-৪৫ পানিতে মিশিয়ে সপ্তাহে একবার সেপ্র করে এ রোগ করা যায়।

ফুল সংগ্রহ: ফুল ফোটার পূর্বেই গাছ হতে ফুল সংগ্রহ করতে হয়। সংগ্রহের পর ফুলের ডাটার নিচের অংশ পরিষ্কার পানিতে ডুবিয়ে ঠাণ্ডা জায়গায় রাখলে ফুল ভালো থাকে। মাঝে মাঝে ফুলে পানির ছিটা দেওয়া ভালো।
ফার্মস আপডেট ডট কম

গোলাপ চাষে ক্যাপ প্রযুক্তি :

গোলাপ চাষে ক্যাপ প্রযুক্তি একটি সফল ও জনপ্রিয় প্রযুক্তি হওয়ার পরও বাংলাদেশে এর ব্যবহার নেই বললেই চলে। যে গোলাপ ফুলটির দাম বর্তমানে দুই টাকা, ক্যাপ প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে সেই ফুলটির গুণগতমান বৃদ্ধি পেয়ে দাম হয় ১০ টাকা। শুধু তাই নয়, ফুলটি আন্তর্জাতিক বাজারে রফতানির উপযোগী হয়। আর এ প্রযুক্তি ব্যবহারের জন্য ফুলপ্রতি খরচ হয় মাত্র ৫০ পয়সা।

আন্তর্জাতিক বাজারে চীনের ফুলের চাহিদা বেশি। উন্নতমানের গোলাপ উত্পাদনের জন্য সে দেশের ফুলচাষিরা নিয়মিত রোজক্যাপ ব্যবহার করেন। রোজক্যাপ হল স্থিতিস্থাপকতা গুণসম্পন্ন প্লাস্টিকের এক ধরনের ক্যাপ। গোলাপের কুঁড়ি বের হওয়ার পর ক্যাপটি ওই কুঁড়িতে পরিয়ে দিতে হয়। এতে গোলাপ কুঁড়িটি সুরক্ষিত থাকে এবং পোকা-মাকড়ের উপদ্রব ও প্রাকৃতিক সব ধরনের বিপর্যয় থেকে রক্ষা পায়। এ ক্যাপটি স্থিতিস্থাপক হওয়ায় কুঁড়িটি বড় হওয়ার সাথে সাথে ক্যাপটিও বাড়তে থাকে। এ কারণেই ক্যাপের ভেতর কুঁড়িটি একটি উন্নতমানের পূর্ণাঙ্গ গোলাপ হিসেবে প্রস্ফুটিত হয়। গোলাপের বাহিরে ক্যাপটি থাকায় ফুল সংগ্রহ, পরিবহন এবং বাজারজাতকরণে ফুলের কোনো ক্ষতি হয় না।

বাংলাদেশে উন্নতমানের গোলাপ উত্পাদনের জন্য এখনো রোজক্যাপ নামে এই প্রযুক্তি ব্যবহারের বিষয়টি ফুলচাষিদের অজানা। এ কারণেই দেশে এই ক্যাপ তৈরি হয় না এবং আমদানিরও ব্যবস্থা নেই। সমপ্রতি কয়েকজন উদ্যোক্তা চীন থেকে কিছু ক্যাপ এনে ব্যবহার করে শতভাগ সুফল পেয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছে গদখালির সরদার নার্সারি। এই নার্সারির মালিক রুস্তম আলী সরদার জানান, আগে যে ফুল ফুটত সেগুলো প্রতিটি বিক্রি হত দুই টাকায়। এখন সেই ফুল এত উন্নতমানের হচ্ছে যে তার দাম উঠেছে ১০ টাকায়। শুধু তা-ই নয়, এ ফুলের সবটাই রফতানি মানের। তবে এই ক্যাপ আমদানি না হওয়ায় চাহিদা অনুযায়ী পাওয়া যাচ্ছে না। ফুলচাষিদের কল্যাণে বিশেষ করে ফুল রফতানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের স্বার্থে রফতানিযোগ্য ফুল উত্পাদনের জন্য তারা রোজক্যাপ আমদানির ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।

ফুল চাষের ক্ষেত্রে বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় সমস্যা হল ফুল চাষের বিষয়ে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কৃষি কর্মকর্তা না থাকায় কৃষি বিভাগের কাছ থেকে কোনো পরামর্শ পাওয়া যায় না। গত তিন দশক ধরে ফুলের যে আবাদ হচ্ছে তা অনেকটা অনুমানের ওপর নির্ভর করে। আন্দাজে কাজ করতে গিয়ে অনেক সময় ফুলচাষিরা ক্ষতির শিকার হন। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশে বাংলাদেশের ফুলের বাজার তৈরি করার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে তবে এর জন্য প্রয়োজন নিত্যনতুন প্রযুক্তি ব্যবহার ও আর্ন্তজাতিক গুণগতমানসম্পন্ন ফুল উত্পাদন। এক্ষেত্রে রোজক্যাপ প্রযুক্তি নিঃসন্দেহে একটি ভাল উদ্যোগ।

উত্পাদিত ফসল বা পণ্যের মূল্য সংযোজনের জন্য নতুন নতুন প্রযুক্তি গ্রহণের কোনো বিকল্প নেই। মুক্তবাজার অর্থনীতির এই সময়ে দেশীয় কিংবা আন্তর্জাতিক বাজারে টিকে থাকার জন্য নিত্যনতুন প্রযুক্তি গ্রহণ অপরিহার্য। আমাদের দেশে বিভিন্ন দিবস ও অনুষ্ঠানে এখন ফুলের ব্যবহার প্রায় অপরিহার্য। আর তাই চাহিদার সাথে সাথে দেশে ফুল চাষের এলাকা প্রতি বছর বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে ঢাকায় বিদেশ থেকে আমদানি করা ফুলের ব্যবসাও বেশ জমজমাট। বেসরকারি উদ্যোগে বিদেশ থেকে গোলাপের ক্যাপ আমদানি করে দেশে গোলাপ চাষকে উত্সাহিত করা সম্ভব। একই সাথে বিভিন্ন সরকারি নার্সারি ও উদ্যানতত্ত্ব বিভাগ এ প্রযুক্তি সমপ্রসারণে কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে পারে।

সূত্রঃ আপডেট ডট কম

বিস্ময়কর লাভজনক জারবেরা ফুল চাষ

Tuesday, April 17, 2018


টিস্যু কালচারের মাধ্যমে জারবেরা ফুলচাষ বিস্ময়কর লাভজনক। এক বিঘা জমিতে সারা বছর ধান, পাট, সবজিসহ অন্যান্য ফসলের চাষ করলে ৫০ হাজার টাকার বেশি পাওয়া যায় না। এ থেকে উৎপাদন খরচ বেরিয়ে গেলে কৃষকের হাতে লাভের পরিমাণ খুবই কম থাকে। কিন্তু জারবেরা চাষে সমপরিমাণ জমি থেকে খরচ বাদে পাওয়া যায় প্রায় পৌনে ছয় লাখ টাকা। এ কথা জানান, যশোরের গোল্ডেন সিড ফার্মের পরিচালক হাফিজুর রহমান পিন্টু। যশোর-বেনাপোল সড়কের পাশে সদর উপজেলার মালঞ্চিতে গোল্ডেন সিড ফার্ম ২০১১ সাল থেকে টিস্যু কালচারের মাধ্যমে জারবেরার চাষ করছে।

ফার্মের পরিচালক জানান, তিন শতক জমিতে জারবেরার চাষ করতে খরচ পড়ে প্রায় এক লাখ ৪০ হাজার টাকা। এর মধ্যে প্রতিটি চারার দাম ৩০ টাকা হিসেবে সাড়ে ৫০০ চারার দামই পড়ে ১৬ হাজার ৫০০ টাকা। এ ছাড়া রয়েছে সার, কীটনাশক, জমি তৈরি প্রভৃতির খরচ। প্রতিটি গাছে ৩৫টি করে ফুল ধরে। এ হিসেবে তিন শতকের ৫৫০টি গাছে ১৯ হাজার ২৫০টি ফুল ধরে। ১০ টাকা হিসেবে এই ফুলের দাম এক লাখ ৯২ হাজার ৫০০ টাকা। অর্থাৎ লাভের পরিমাণ ৫২ হাজার টাকা। হিসাব অনুযায়ী এক বিঘায় খরচ পড়ে ১৫ লাখ ৪০ হাজার টাকা। ফুল বিক্রি হয় ২১ লাখ ১৭ হাজার ৫০০ টাকা। প্রকৃত লাভ পাঁচ লাখ ৭৭ হাজার ৫০০ টাকা। দেশে সর্বপ্রথম জারবেরা ফুলের চাষ শুরু হয় ফুলের রাজধানী বলে খ্যাত যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালিতে। সেখানকার চাষিরা ভারত থেকে টিস্যু কালচারের চারা এনে চাষ করতেন। আমদানিকৃত ওই চারার প্রতিটির দাম পড়ত ৯০ টাকা করে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক গবেষক মতিউর রহমান রাজশাহীর আকাফুজি ল্যাবে দেশে সাশ্রয়ী মূল্যে টিস্যু কালচারের চারা উৎপাদনে মনোনিবেশ করেন। একই বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক প্রফেসর ড. এম মনজুর হোসেনের সার্বিক তত্ত্বাবধানে তিনি গবেষণায় সফল হন। এই চারার প্রতিটির দাম পড়ছে ৩০ টাকা করে। গবেষক মতিউর রহমান জানান, জারবেরা ফুলের বীজ থেকে চারা হয় না। মূলগাছের সাকার থেকে যে চারা হয় তার ফুলের উৎপাদন কম। মানসম্পন্নও নয়। এ কারণে বংশবৃদ্ধির জন্য টিস্যু কালচার প্রয়োজন। এই পদ্ধতিতে একসাথে অল্প সময়ে জীবাণুমুক্ত অধিক চারা পাওয়া যায়।

এই ফুলটি বহুবর্ষজীবী হওয়ায় একবার চারা রোপণ করলে বহু বছর ফুল পাওয়া যায়। তবে প্রতি বছর নতুন চারা লাগালে উৎপাদন বেশি হয়। হাফিজুর রহমান পিন্টু জানান, ফুল ফোটার পর গাছে ৩০ থেকে ৪৫ দিন পর্যন্ত সতেজ থাকে। আর তোলার পর সতেজ থাকে আট থেকে ১৫ দিন। এই ফুলের চাষ বৃদ্ধির লক্ষ্যে গোল্ডেন সিড ফার্ম ফুলচাষিদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছে। এ জন্য চার কাঠা জমিতে একটি প্রদর্শনী খামার করা হয়েছে। এখান থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে গদখালির ফুলচাষিরা টিস্যু কালচারের মাধ্যমে জারবেরার চাষ করে লাভবান হচ্ছেন। জারবেরা চাষে লাভের কথা স্বীকার করে গদখালি ফুলচাষি কল্যাণ সমিতির সভাপতি আবদুর রহিম বলেন, এখানকার চাষিরা এই লাভজনক ফুল চাষের প্রতি ঝুঁকছেন। সমিতিভুক্ত চাষিরা এবার ১৫ একরে জারবেরার চাষ করেছেন। জারবেরা সূর্যমুখী প্রজাতির। ফুল দেখতে সূর্যমুখীর মতোই। এর নান্দনিক সৌন্দর্য ফুলের জগতে এক আলাদা মাত্রা যোগ করেছে। বাংলাদেশে ৯ রঙের জারবেরার জাত আছে। এর মধ্যে লাল, সাদা, হলুদ, পিংক, মেজেন্ডা ও কমলা উল্লেখযোগ্য। যশোর জেলার মাটির পিএইচ (অম্লত্ব ও ক্ষারত্ব নির্দেশক) ৬ দশমিক ৫ থেকে ৭ দশমিক ৫ হওয়ায় জারবেরা চাষের উপযোগী। জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি ও জুন-জুলাই জারবেরা চাষের উপযুক্ত সময়। কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক হেমায়েত হোসেন জানান, টিস্যু কালচারের মাধ্যমে জারবেরা চাষ করলে ফুলচাষিরা আর্থিকভাবে লাভবান হবেন।

চাষ প্রণালী

আবহাওয়াঃ

উন্নতমানের ফুল উৎপাদনের জন্যে সাধারণতঃ গ্রীন হাউজে জারবেরার চাষ করা হয়। উজ্জ্বল সূর্যালোক জারবেরা গাছের বৃদ্ধি ও অধিক সময় ধরে ফুল উৎপাদনে সাহায্য করে। গ্রীষ্মকাল ছাড়া অন্যান্য সময় পূর্ণ সূর্যালোক জারবেরা চাষের জন্য উত্তম। গ্রীষ্মকালে উন্নতমানের ফুল উৎপাদনের জন্য ৩০% ছায়া প্রদান ও তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে জারবেরার চাষ করা হয়। প্রয়োজনের অতিরিক্ত ছায়া প্রদান করলে পাতা হালকা সবুজ বর্ণ ধারণ করে এবং ফুলের দন্ড খাট ও শক্ত হয়। সাধারণতঃ শীতকালে গাছে খুব তাড়াতাড়ি ফুল আসে। অন্যদিকে গ্রীষ্মকালে গাছে ফুলধারণ বিলম্বিত হয়।

রাত্রিকালীন তাপমাত্রা জারবেরা চাষে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে। সাধারণতঃ রাত্রিকালীন তাপমাত্রা ১৮ডিগ্রী- ২০ডিগ্রী সেঃ এর মধ্যে থাকলে রোপনকৃত চারা গাছ ১ মাসের মধ্যে শিকড় গজিয়ে উৎপান ধাপে পৌছায়। পরবর্তীতে তাপমাত্রা নামিয়ে ১৫ ডিগ্রি – ১৮ ডিগ্রি সেঃ এর মধ্যে আনা যেতে পারে। তাপমাত্রা ২৫ ডিগ্রি সেঃ এর উপর উঠতে দেয়া উচিৎ নয়। গ্রীন হাউজে উৎপাদনের ক্ষেত্রে আর্দ্রতা বেশী থাকলে বট্রাইটিস (Botrytis) রোগের প্রাদুর্ভব দেখা দিতে পারে। এ জন্য গ্রীন হাউজে জারবেরা উৎপাদনের ক্ষেত্রে দিনে ৭০% এবং রাত্রে ৮৫% আর্দ্রতা রাখা উচিত। গ্রীণ হাউসে বাতাস পরিসঞ্চালন এবং ভেন্টিলেশন থাকা আবশ্যক।

মাটিঃ
দ্রুত পানি নিষ্কাশনযোগ্য হালকা দো- আঁশ অথবা বেলে দো- আঁশ মাটি জারবেরা চাষের জন্য উত্তম। বেলে দো- আঁশ মাটিতে বাতাস চলাচল সুবিধাজনক এবং দীর্ঘ সময় জৈব পদার্থ অক্ষত থাকে। সাধারণতঃ জমিতে জৈব সার ও মাটির অনুপাত ৭০ : ৩০ হওয়া ভাল। মাটির পি.এইচ. ৫.৫- ৬.০ জারবেরা চাষের জন্য উপযোগী করে নিতে হবে।

বংশ বৃদ্ধিঃ
যৌন ও অযৌন উপায়ে জারবেরার বংশ বৃদ্ধি করা যায়। বীজ থেকে চারা উৎপা নে সময় বেশী লাগে। সাধারণতঃ সংকরায়নের মাধ্যমে নতুন জাত উদ্ভাবনের জন্য বীজ থেকে চারা উৎপাদন করা হয়। অযৌন পদ্ধতিতে ১টি বা ২টি চারা মূল গাছের গুচ্ছ থেকে বিভাজনের মাধদ্যমে রোপণ করে জারবেরার বংশ বিস্তার করা হয়। এ ছাড়া কাটিংয়ের মাধ্যমে চারা উৎপাদন করা যায়। এ জন্য বয়স্ক গাছে পানি সরবরাহ বন্ধ করে দেয়া হয় এবং সাথে সাথে পাতা ছেটে দেয়া হয়।ফলে কয়েকদিনের মধ্যে গাছে প্রচুর কুঁড়ির সৃষ্টি হয়। পরে কুঁড়িগুলি সাবধানে কেটে নিয়ে শিকড় উৎপাদনের জন্য লাগানো হয়। ৮-১২ সপ্তাহের মধ্যে এগুলি লাগানোর উপযুক্ত হয়। বর্তমানে বানিজ্যিক ভিত্তিতে জারবেরা চাষের জন্য টিস্যু কালচারের মাধ্যমে উৎপাদিত চারা ব্যবহার করা হয়।টিস্যু কালচারের মাধ্যমে উৎপাদিত চারা পোকা- মাকড় ও রোগ- বালাই মুক্ত এবং বয়স, আকার আকৃতিতে সমান তাকে বিধায় উন্নতমানের ফুল পাওয়া যায়।

সার প্রয়োগঃ
চারা লাগানোর কমপক্ষে এক সপ্তাহ আগে বেডের প্রতি ১০ বর্গ মিটারের জন্য ৬০ কেজি পঁচা জৈব সার, ১.১৫ কেজি ইউরিয়া অথবা ১ কেজি ক্যালসিয়াম এমোনিয়াম নাইট্রেট অথবা এমোনিয়াম সালফেট, ২.৫ কেজি ট্রিপর সুপার ফসফেট, ৫০০ গ্রাম মিউরেট অব পটাশ ও ৫০০ গ্রাম ম্যাগনেশিয়াম সালফেট প্রয়োগ করে ভালভাবে মাটিতে মিশিয়ে দিতে হবে। জারবেরা দ্রুত বর্ধনশীল উদ্ভিদ। সাধারণতঃ চারা লাগানোর ১০-১২ সপ্তাহের মধ্যে গাছে ফুল উৎপাদন শুরু হয়। এ জন্য জারবেরার জমিতে সুষম সার প্রয়োগ করতে হবে। প্রথম অবস্থায় চারার পাতায় ১% ইউরিয়া সারের দ্রবন স্প্রে করতে হবে। অতিরিক্ত নাইট্রোজেন প্রয়োগে গাছের পাতা বড় হয় এবং ফুলের সংখ্যা কমে যায়। মাটি অতিরিক্ত অম্লক্ষারীয় অথবা ক্ষারীয় হলে মাটিতে গৌণ উপাদানের বিশেষ করে লৌহ, ক্যালশিয়াম ও ম্যাগনেশিয়ামের ঘাটতি দেখা যায়। সে ক্ষেত্রে মাটিতে চুন অথবা অম্লক্ষারীয় সার যেমন অ্যামোনিয়াম সালফেট প্রয়োগ করে এ সমস্যার সমাধান করা যায়।

চারা লাগানোঃ
কাট ফ্লাওয়ার উৎপাদনের জন্য জমিতে অথবা টবে জারবেরার চাষ করা যায়। জমিতে ৩০-৪৫ সে.মি উচু এবং ১-১.২ মি. চওড়া বেড তৈরি করতে হবে। আন্তঃ পরিচর্যা এবং অন্যান্য কাজের সুবিধার জন্য দুই বেডের মাঝ ৫০ সে.মি জায়গা খালি রাখতে হবে। বেডের মাটি কালো পলিথিন দিয়ে ১-২ সপ্তাহ ঢেকে রেখে শোধন করে নেয়া ভাল। বেডে চারা সারিতে লাগানো হয়। তাই জাত ভেদে সারি থেকে সারির দূরত্ব ২০-৩০ সে: মি: এবং সারিতে চারা থেকে চারার দূরত্ব ২০-৩০ সে: মি: দেয়া হয়। দিনের ঠান্ডা ভাগে অর্থাৎ সকালে অথবা বিকেলে বেডে চারা লাগানো উচিৎ। চারা লাগানোর সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন কোন ক্রমেই চারার ক্রাউন বা মাথা মাটিতে ঢাকা না পড়ে। সেচ প্রয়োগ, পানি নিষ্কাশন, নিড়ানি এবং মালচিং এর সময়ও খেয়াল রাখতে হবে যেন কোনক্রমেই চারার ক্রাউন বা মাথা মাটিতে ঢাকা না পড়ে। চারা লাগানোর পর পরই ঝাঝরি দিয়ে হালকা সেচ দিতে হবে। প্রয়োজনে চারা লাগানোর পর ছায়ার ব্যবস্থা করতে হবে। তবে বর্তমানে বাণিজ্যিক চাষাবাদের জন্য টিস্যু কালচারের মাধ্যমে উৎপাদিত চারা বেশী ব্যবহার করা হয়। কারণ টিস্যু কালচারে উৎপাদিত চারার বয়স, আকার, আকৃতি সমান থাকে।

পানি সেচঃ
জারবেরা গভীরমূলী উদ্ভিদ বিধায় প্লাবন সেচ পছন্দ করে। প্রতিবার সেচের পর মাটি অবশ্যই মালচিং করতে হবে। এর ফলে মাটি বাহিত রোগের আক্রমন কম হবে এবং গাছে ফুলের পরিমান বেশী হবে। পানির অভাবে গাছ ঢলে পড়লে পরবর্তীতে ফুলের দন্ড চোট হয় এবং ফুলের মান কমে যায়। পানি সেচের সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন অতিরিক্ত পানি বেডে জমে না থাকে। সেচের পানি বেডে জমে থাকলে মাটি বাহিত রোগের আক্রমনে গাছ পঁচে যায় এবং মারাত্মক ক্ষতি সাধিত হয়। সাধারণতঃ শুষ্ক মৌসুমে সেচের পরিমান বেশী এবং বর্ষা মৌসুমে সেচের পরিমান কম লাগে।

ফুল উত্তোলনঃ
ফুল পূর্ণ প্রস্ফুটিত ও ডিস্কে দ্বিতীয় স্তরের ফুলে পরাগরেনু দেখ দিলে সংগ্রহের উপযুক্ত হয়। ফুর দন্ডের গোড়া ধরে আস্তে করে ঘুরিয়ে গাছ থেকে ফুল সংগ্রহ করা হয়। চাকু দিয়ে জারবেরার ফুল কেটে সংগ্রহ না করাই ভাল। ফুল সংগ্রহের সময় ফুল দন্ড যতদূর সম্ভব লম্বা থাকা ভাল। সংগ্রহের সাথে সাথে ফুল দন্ডের গোড়া পানিতে ডুবিয়ে রাখতে হবে।

ফলনঃ
সাধারণতঃ জাত ও চাষাবাভেদে ফলন কম বেশী হয়ে হয়। গ্রীনহাউজে প্রতি বর্গ মিটারে গড়ে ২৫০ টি এবং হেক্টরে ২৫,০০,০০০টি ফল উৎপাদন করা যায়। মাঠে চাষাবাদের ক্ষেত্রে উৎপাদন প্রায় অর্ধেক কমে যেতে পারে এবং ফুলের মানও হ্রাস পায়।

পোকা-মাকড়ঃ
১। সাদা মাছি ( Transparent fly )
গরম ও শুকনা মেওসুমে সাদা মাছি গাছের পাতা ও ফুলের রস চুষে মারাত্মক ক্ষতি করে। মেটাসিসটক্স (০.১%) অথবা ইন্ডোসালফান (০.১%) ব্যবহার করে মাছ পোকা দমন করা যায়।

২। পাতা সুড়ংকারী পোকা ( Leaf minor )
এ পোকার কীড়া পাতায় সুড়ং করে সবুজ অংশ খেয়ে ফেলে। আক্রান্ত পাতা কুকড়ে যায় এবং সূর্যের আলোর বিপরীতে ধরলে জারের মত অসংখ্য সুড়ং দেখা যায়। আক্রান্ত পাতা সংগ্রহ করে ধ্বংস করে ফেলতে হবে ফসলে পোকার আক্রমনের লক্ষন দেখা দিলে রগর (০.১%) অথবা পারমেথ্রিন (০.১%) সেপ্র করতে হবে।

৩। জাব পোকা ( Aphid )
জাব পোকা জারবেরার কচি পাতা ও ফুলের কুঁড়ির রস চুষে খায়। জাবপোকার আক্রমনে পাতা কুকড়ে যায় এবং ছত্রাক আক্রমণ করে। মেটাসিসটক্স (০.১%) অথবা মেরিক ( Merrick) (০.২%) হারে প্রয়োগ করে এ পোকা দমন করা যায়।

৪। মাকড় বা মাইট ( Mite )
উষ্ণ ও শুষ্ক আবহাওয়াই জারবেরায় মাকড়ের আক্রমণ বেশ হয়। মাকড়ের আক্রমণে কচি পাতার আকৃতি নষ্ট হয় এবং শেষে পাতা শুকিয়ে যায়। নুভক্রন (০.২%) অথবা ক্যালথেন (০.১%) সেপ্রর মাধ্যমে মাকড় দমন করা যায়।

৫। থ্রিপস ( Thrips )
অতি ক্ষুদ্র এ পোকা ফুলের কচি অংশ খেয়ে ফুল বিবর্ণ করে ফেলে। আক্রমণ তীব্র হলে অনেক সময় ফুলের কুঁড়ি ফোটে না অথবা ফোটলেও তা অস্বাভাবিক আকৃতির হয়। ম্যালাথিয়ন (০.১%) অথবা ডায়াজিনন (০.১%) নিয়মিত সেপ্র করে এ পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।

রোগ বালাইঃ
জারবেরা চাষে রোগ-বালাই মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে। সেজন্য চারা লাগানোর পূর্বে তৈরীকৃত বেড রাসায়নিক ব্যবহার করে অথবা কালো পলিথিন দ্বারা এক সপ্তাহ ঢেকে রেখে মাটি শোধন করে নিলে মাটি বাহিত রোগ বালাইয়ের প্রকোপ কম হয়। জারবেরার কয়েটি গুরুত্বপূর্ণ রোগের নাম,লক্ষণ ও প্রতিকার ব্যবস্থা দেয়া হলো।

১। ক্রাউন রট ( Crown rot )
মাটি বাহিত ছত্রাক ফাইটোপথোরা ক্রিপটোজেনা ( Phytopthora cryptogena) এ রোগের জন্য দায়ী। গাছের পাতা কালো বর্ণ ধারণ করে এবং আস্তে আস্তে ঢলে পড়ে। এ রোগ প্রতিরোধর উপায় হলো-

ক) রোগ প্রতিরোধী জাত ব্যবহার করা,
খ) বেডে প্রয়োজনের অতিরিক্ত সেচের পানি না দেয়া
গ) গাছের মুকুট বা পাতা যেন মাটির সংস্পর্শে না আসে সেদিকে খেয়াল রাখা
ঘ) সেচের পর বেডের মাটি মালচিং করে দেয়া এবং
ঙ) আক্রান্ত গাছের গোড়ার মাটি সরিয়ে ০.২% বিনোমিল ( Benomyl) অথবা রিডোমিল- এম, জেড ( Ridomil – M. Z) প্রযোগ করে এ রোগ দমন করা যায়।

২। গোড়া পঁচা রোগ ( Root rot)
এ রোগও মাটি বাহিত। পিথিয়াম ইরেগুলারিয়া ( Pythium irregularea) নামক ছত্রাক এ রোগের জন্য দায়ী। ক্রাউন রট রোগের জন্য সুপারিশকৃত প্রতিরোধ ব্যবস্থা এ রোগের জন্যেও প্রযোজ্য। এ ছাড়াও কপার অক্সি – ক্লোরাইড ( ০.৪%) অথবা ডায়থেন এম -৪৫ ( ০.২%) সেপ্র করে এ রোগ দমন করা যায়।

৩। স্পটেড উইল্ট ভাইরাস ( Spotted Wilt Virus)
এ ভাইরাসের আক্রমণে পাতায় হলুদাভ বাদামী রং ধারণ করে। এ রোগ দমনে ফুরাডান প্রয়োগ করতে হবে। এছাড়া আক্রান্ত গাছ তুলে ধ্বংস করে ফেলতে হবে। এ ছাড়া জাররেরা পাউডারি মিলডিউ, অলটারনারিয়া লীফ স্পট, সারকোসপোরা লীফ স্পট এবং বট্রাইটিস রট রোগে আক্রান্ত হতে পারে। যে কোন সিস্টেমিক ছত্রাকনাশক যেমন ব্যাভিষ্টিন, রিডোমিল অথবা বিনোমিল ০.১% হারে গাছে স্প্রে করে উপরোক্ত রোগ সমূহ দমন করা যায়।

সূত্রঃ আপডেট ডট কম

ঘরের ভেতর গাছ! আপনার ঘর হোক সবুজময়, মন থাকুক সতেজ!

Sunday, April 15, 2018


জীবন বাঁচাতে অক্সিজেনের প্রয়োজন। কিন্তু শহরে যানবাহনের কালো ধোঁয়ায় অক্সিজেনের তুলনায় কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ বেশি। আবার যেখানে ২৫% বনভূমির প্রয়োজন সেখানে ১৭.৯২% বনভূমি রয়েছে। যে হারে গাছ বাড়ানো উচিত সে হারে গাছ বাড়ানোর জন্য আমরা আমাদের বাড়ির আশে-পাশে গাছ লাগাতে পারি। আর আমরা যারা শহরে থাকি তারা কিভাবে এতে অংশগ্রহণ করতে পারি? আমরা আমাদের বাসার বেলকনি বা ছাদে গাছ লাগাতে পারি। এমনকি আমরা ঘরের ভেতরেও গাছ লাগাতে পারি। আজ আলোচনা করব কীভাবে ঘরের ভেতর গাছ লাগাব এবং কোন গাছগুলো ঘরের ভেতর লাগানো যাবে।


প্রথমেই জেনে নেই কেন ঘরের ভেতর গাছ লাগাব:

  • ঘরের মধ্যেই প্রকৃতির ছোঁয়া যা আপনার মানসিক প্রশান্তি যোগাবে।
  • ঘরের ভেতরের দূষিত ক্ষতিকারক গ্যাস এবং পদার্থকে বিশুদ্ধ করে যা আপনার স্বাস্থ্যকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করবে।
  • ঘর ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করার পাশাপাশি নিজের নান্দনিক রুচিশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটানো।
  • দেশে যে পরিমাণ বনভূমি প্রয়োজন তার ঘাটতি কিছুটা হলেও পূরণ করা।
  • চারা তৈরি বা বনসাই করে কিছু উপার্জন করা।

কোন গাছগুলো ঘরের ভেতর লাগানো যাবে:

ঘরের ভেতর গাছ লাগানোর জন্য বিভিন্ন ইনডোর প্ল্যান্টস রয়েছে। যেমন: মানিপ্লান্ট (গোল্ডেন পথোস), ক্যাকটাস, ক্রাউন অব থর্নস (কাঁটার মুকুট), এরিকা পাম, লেডি পাম, ব্যাম্বু পাম, ইংলিশ আইভি, রাবার প্ল্যান্ট, ড্রাকাইনা বা জ্যানেট ক্রেগ, স্নেক প্লান্ট,  পিস লিলি, অ্যালোভেরা, ইন্ডিয়ান ব্যাসিল (তুলসী), স্পাইডার প্ল্যান্ট, চায়নিজ এভারগ্রিন, স্পিয়ারমিন্ট (পুদিনা পাতা)

কীভাবে ঘরের ভেতর গাছ লাগাব:

ঘরের ভেতর ও বারান্দায় বা বেলকনিতে আমরা এই গাছগুলো টবে বা ছোট কন্টেইনারে লাগাতে পারি। যদি বারান্দা ছোট হয় তবে ঝুলিয়ে রাখতে পারি। আবার গ্রীলের সাথে বেঁধে রাখতে পারি। বাজারে বিভিন্ন ধরনের এবং বিভিন্ন সাইজের টব বা গাছ লাগানোর কন্টেইনার পাওয়া যায়। তবে আমরা আমাদের অপ্রয়োজনীয় বা ফেলনা কন্টেইনার, বক্স, গ্লাস, মগ, বোতল ইত্যাদিও ব্যবহার করতে পারি। তবে লক্ষ্য রাখতে হবে যেন দেখতে খারাপ না লাগে। সাধারণত দো-আঁশ মাটি এসব গাছের জন্য উপযুক্ত। টব বা কন্টেইনারে সার মেশানো মাটি ভরতে হবে। এর পর গাছ লাগাতে হবে।
গাছ লাগানোর পর সবচেয়ে জরুরি বিষয় হচ্ছে এর যত্ন নেওয়া। সপ্তাহে দুই দিন গাছগুলোকে আলো বাতাস দিতে হবে। এর জন্য যেখানে আলো বাতাস পর্যাপ্ত আসে সেখানে রেখে আবার পূর্বের স্থানে রাখতে হবে। সকাল ও বিকেলে প্রয়োজন অনুসারে পানি দিতে হবে। টবে যেন পানি না জমে থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
তথ্যসূত্রঃ সফল খামারী

ছাদে বাউকুল চাষে অসাধারণ সাফল্য:গাছ প্রতি ফলন ১০ থেকে ১২ কেজি

Saturday, April 14, 2018


ছাদে বাউকুল চাষ করে লাভবান হতে পারেন আপনিও। আমাদের দেশে অন্যান্য ফলের মধ্যে বাউকুল একটি জনপ্রিয় ফল। আপেলের মত দেখতে এ ফল খেতে সুমিষ্ট এবং রসালো। এ ফল চাষাবাদের সম্ভাবনা এবং অর্থনৈতিক গুরুত্ব বিবেচনা করে বর্তমানে দেশের প্রায় সর্বত্র বানিজ্যিকভাবে চাষাবাদ করা হচ্ছে। অনেকেই শখ করে কিংবা  নিজের পরিবারের চাহিদা মিটানোর জন্যে বাড়ীর ছাদে, বাড়ান্দায় কিংবা আঙ্গিনায় এই ফলের বাগান করে থাকেন। তবে ছাদে এ বাগান করতে গেলে এ গাছের একটু বিশেষ যত্ন নিতে হয়। বর্তমানে অনেকেই ছাদে অল্প জায়গা ব্যবহার করে বাউকুল চাষ করে অসাধারণ সাফল্যের দাবিদার। আসুন আমরা জেনে নেই ছাদে কিভাবে বাউকুল চাষ  করা যায়।

বাউকুল চাষে টব/মাটি তৈরীকরণ:
আমাদের দেশে জলা বদ্ধতাহীন যে কোন মাটিতে বাউকুল চাষ করা যায়। তবে আদর্শ মাটি দোআঁশ, বেলে দোআঁশ এবং এঁটেল মাটিতে বাউকুল চাষ ভাল হয়। এ দেশের আবহাওয়া বাউকুল চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী।

ছাদে বাউকুল চাষে টব/পাত্রের আকৃতি বাছাই:
ছাদে বাউকুল চাষ করার জন্য টব/পাত্রের আকৃতি গুরুত্বপূর্ন বিষয়। বাড়ির ছাদ অথবা আঙ্গিনায় বাউকুল চাষের  জন্য মাঝারি অথবা বড় সাইজের টব ব্যবহার করা যায়। এছাড়াও সিমেন্টের তৈরী রিং অথবা হাফ ড্রাম ও ব্যবহার করা যায়।

স্থান নির্বাচন:
ছাদে বাউকুল গাছ টব/পাত্রে রোপনের জন্য এমন একটি স্থান নির্বাচন করতে হবে যেন সেই স্থানের আশে পাশে ছায়াদানকারী বড় গাছ না থাকে। তবে সূর্যের আলো সব সময় পরে এমন জায়গা নির্বাচন করা ভাল।

রোপন সময়:
বাউকুলের চাষ আমাদের দেশে বছরের যে কোন সময় করা যায়। তবে মধ্য মাঘ থেকে মধ্য চৈত্র এবং মধ্য শ্রাবণ থেকে মধ্য ভাদ্র বাউকুলের চারা তৈরির উপযুক্ত সময়।

টব/পাত্র প্রস্তুত করণ:
টব/পাত্রে বাউকুল গাছ লাগানোর পূর্বে টবের তলায় ১ ইঞ্চি পরিমান ইটের খোয়া, খড় এবং পচা পাতা বিছিয়ে দিতে হবে এবং পুরো টব/পাত্রটি সমপরিমাণ পচা গোবর ও দো-আঁশ মাটির মিশ্রণ দিয়ে ভরে দিতে হবে। যখন গাছের কচি পাতা পরিপক্ক হবে তখন ২-৩ টি সিলভা মিক্স ট্যাবলেট বাউকুল গাছের গোড়ায় মাটির গভীরে পুতে দিতে হবে। এভাবে টপ/পাত্র প্রস্তুত করতে হবে।

বীজ বপন ও পানি সেচ:
বাউকুল সাধারনত কলম পদ্ধতিতে রোপন করা হয়ে থাকে। এ জন্য টবের মাটি প্রস্তুত হয়ে গেলে সুস্থ সবল চারা  অথবা কলম চারা টবের মাটিতে লাগিয়ে দিতে হবে এবং চারায় নিয়মিত পানি দিতে হবে।

সার প্রয়োগ:
বাউকুল চাষে জৈব সারের প্রয়োগের গুরত্ব অপরীসিম। যেমন আবর্জনা, তরকারির খোসা, ময়লা এবং কাঠের ভূসি গাছের গোড়ায় দেওয়া যায়। বাউকুল গাছে অজৈব সার ব্যবহার করা যায়।

পোকামাকড় দমন:
বাউকুল চাষে পোকামাকড় দমনে কার্যকারী ব্যবস্থা না নিলে কাঙ্খিত ফল পাওয়া যায় না। বাউকুল গাছ সাধারণত এক ধরণের ছত্রাক দ্বারা আক্রান্ত হয়। এছাড়া বিছাপোকা, লাল ক্ষুদ্র মাকড়সা, কাণ্ড ও ফল ছিদ্রকারী পোকা দ্বারা গাছ আক্রান্ত হয়। এক্ষেত্রে ছত্রাক নিধনকারী ওষুধ স্প্রে অথবা সেক্স ফেরোমন ফাঁদ ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে খেয়াল রাখতে হবে কুল সংগ্রহের সাত থেকে ১০ দিন আগে কোন কীটনাশক স্প্রে করা যাবে না।


যত্ন ও পরিচর্যা:
বাউকুল গাছ অনেকদিন বাঁচে। তাই এ গাছের প্র্রথম থেকেই সঠিকভাবে যত্ন নিতে হয়। গাছের নীচ থেকে গজানো ডাল বা কুশি সবসময় কেটে দিতে হবে। গাছ সবসময় আগাছামুক্ত রাখতে হবে। বর্ষার সময় গাছের চারপাশে  বিভিন্ন ধরনের আগাছা জন্মায়। এ সব পরিষ্কার করতে হবে।

এ ফলের খাদ্য গুণাগুণ:
বাউকুলে বিভিন্ন ধরনের খনিজ এবং ভিটামিন এ ও ভিটামিন সি বিদ্যমান রয়েছে। এ ফল সাধারণত পাকা ও টাটকা অবস্থায় খাওয়া হয়।

ঔষধি গুনাগুন:
বাউকুলের বেশ কিছু ভেষজ  গুণাগুণ রয়েছে।  এ ভেষজ গুণ থাকার কারণে আয়ুর্বেদ চিকিৎসায় বাউকুলের বহুবিদ ব্যবহার হচ্ছে।

 বাউকুল  সংগ্রহ ও সংরক্ষণ:
 বাউকুল পূর্ণরুপে পরিপক্ক হলে তখন এ ফল সংগ্রহ করা উচিৎ। বাউকুল হালকা কাচা হতে হলুদ হলে সংগ্রহ করতে হবে। এ ফল পরবর্তীতে ব্যবহারের জন্য শুকিয়ে ঘরে রেখে দেওয়া যায়।

একটি গাছ থেকে প্রাপ্ত বাউকুল:
একটি গাছ থেকে  প্রায় ১০ থেকে ১২ কেজি ফল পাওয়া যায়। পরিকল্লিতভাবে কয়েকটি চারা লাগালে পারিবারিক চাহিদা মিটিয়ে বিক্রি করে অর্থ উপার্জন করা যায়। উল্লেখ্য যে এক একটি বাউকুল গাছ বছরে প্রায় ২-৩ বার ফল দিয়ে থাকে।

বাউকুলের বিবিধ ব্যবহার:
বাউকুল কাচা খাওয়া ছাড়াও বাউকুলের বিবিধ ব্যবহার রয়েছে। বাউকুল দিয়ে মোরব্বা,আচার, চাটনী, শরবত ও জেলি তৈরি করা যায়। আবার বাউকুল আপেলের পরিবর্তে টেবিল ফ্রুট হিসেবেও খাওয়া যায়।

তথ্যসূত্রঃ সফল খামারী

বাড়ির ছাদে ও বারান্দায় চাষ করতে পারেন ড্রাগন ফল

Wednesday, April 11, 2018


বাংলাদেশে তেমন ড্রাগন ফল প্রচলিত নয়। এই ফলটি মূলত ক্যাকটাস গোত্রীয়। আমেরিকার এই ফলটি তবে প্রায় সব দেশেই সামদৃত।  বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই ফলের চাষ হয়ে থাকে। বাড়ির ছাদে ও বারান্দায় চাষ করতে পারেন ড্রাগন ফল। বর্তমানে বাংলাদেশের রংপুর, রাজবাড়ি , নাটোর, রাঙামাটিসহ বিভিন্ন স্থানে ড্রাগন ফলের চাষ করা হচ্ছে। ঢাকার কিছু অভিজাত হোটেল এই ফল প্রতি কেজি তিনশ থেকে চারশ টাকায় বিক্রি করছে। ফলটি দেখতে খুব আকর্ষনীয় ও এর কার্যকারিতা অনেক। এ ফলটিকে টিহায়া, পিটাইয়া ইত্যাদিও নামেও ডাকা হয়। ড্র্রগন ফল গাছ শুধুমাত্র রাতে ফুল দিয়ে থাকে। এশিয়া মহাদেশে এ ফলের অনেক জনপ্রিয়তা আছে। ড্রাগন ফলটি দেখতেও অত্যন্ত আকর্ষণীয় ও মনোমুগ্ধকর। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে বাউ জার্ম প্লাজম সেন্টারে ২০০৭ সালে অধ্যাপক ড. এমএ রহিম বাংলাদেশে ড্রাগন ফলের প্রবর্তন করেন। তিনি এ ফলের জাত নিয়ে আসেন থাইল্যান্ড, ফ্লোরিডা ও ভিয়েতনাম থেকে। সেসব গাছ এখন দিব্যি ফল দিচ্ছে। এরই মধ্যে এ ফলের বাণিজ্যিক চাষের সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। এই সফলতার ওপর ভিত্তি করেই জার্ম প্লাজম সেন্টারের পক্ষ থেকে নাটোর, রাজবাড়ী, রাঙ্গামাটিসহ এখন দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ড্রাগন ফলের চাষ সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
২০০৯ সালে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালক বড়াইগ্রামে বাংলাদেশে প্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে ড্রাগন ফলের চাষ উদ্বোধন করেন। প্রতি বিঘা জমিতে ২০০টি ড্রাগন ফলের গাছ রোপণ করা যায়। ড্রাগন ফুল রাতে ফোটে নাইট কুইন ফুলের মতোই। ফুলের আকার লম্বাটে হয়। ড্রাগন  ফলের রং সাদা ও হলুদ হয়ে থাকে। ফুল মৌমাছি ও পোকামাকড় পরাগায়ন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করে। ফুল থেকে ডিম্বাকৃতি ফল উৎপন্ন হয়। ফল হালকা মিষ্টি ও ক্যালরি কম যুক্ত হয়। এতে কালোজিরার মতো অসংখ্য বীজ থাকে। একটি গাছ থেকে বছরে ৬০ থেকে ১০০ কেজি ফল পাওয়া যায়। পোকামাকড় ও রোগবালাইয়ের উপদ্রব কম হওয়ায় এ ফল চাষে রাসায়নিক সার ও বালাইনাশকের তেমন প্রয়োজন হয় না। গাছগুলো প্রায় শতকরা ৫০ ভাগ খাবার বায়ুমন্ডল থেকেই সংগ্রহ করতে পারে এবং বাকি খাবার সংগ্রহ করে জৈব সার থেকে। এজন্য কৃষি মন্ত্রণালয় এই ফল চাষের ওপর জোর দিচ্ছে।

বাউ ড্রাগন ফল-১ (সাদা) ও বাউ ড্রাগন ফল-২ (লাল)। এ দুটি জাত বাংলাদেশে চাষ করা হচ্ছে। বীজ ও কাটিং পদ্ধতিতে ড্রাগন ফলের চাষ করা যায়। ড্রাগন চাষের জন্য কাটিংয়ের চারাই বেশি উপযোগী। কাটিং থেকে উৎপাদিত গাছে ফল ধরতে ১ বছর থেকে ১৮ মাস সময় লাগে। উপযুক্ত যত্ন নিতে পারলে একরপ্রতি ৫ থেকে ৬ টন ফলন হতে পারে। কেজিপ্রতি দাম ২০০ টাকা হলে, ১ বছরে যার বাজর মূল্য ১২ থেকে ১৪ লাখ টাকা হতে পারে। খরচ ৬ থেকে ৭ লাখ টাকা বাদ দিলে নিট লাভ হবে ৫ থেকে ৬ লাখ টাকা।  বর্তমানে ভিয়েতনামে এই ফল বেশি চাষ হচ্ছে। ভিয়েতনাম ছাড়াও থাইল্যান্ড, তাইওয়ান, অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়া, চীন, ফিলিপাইন, ইসরাইল, শ্রীলঙ্কাতেও ড্রাগন ফলের চাষ হচ্ছে। ড্রাগন ফল চাষ খুব সহজে করা যায়।
ড্রাগন ফলের চারা লাগানোর উপযুক্ত সময় হলো  জুন-জুলাই মাস। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে মে মাস থেকে অক্টোবর মাসে ফল সংগ্রহ করা যায়। শীতকালে এই গাছ ফুল দেয়া বন্ধ করে দেয়। ড্রাগন ফল গাছে পাকা অবস্থায় ৫ থেকে ৭ দিন রেখে দেয়া যায়। আর গাছ থেকে ফল সংগ্রহের পর রাখা যায় প্রায় এক মাস।
প্রায় সব ধরনের উঁচু মাটিতেই ড্রাগন ফলের চাষ করা যায়।

ড্রাগন ফলের গুরুত্ব:
  • ড্রাগন ফলের আঁশ শরীরের চর্বি কমাতে সহায়তা করে।
  • ড্রাগন ফলের প্রোটিন শরীরের বিপাকীয় কাজে সহায়তা করে।
  • ক্যালসিয়াম হাড় শক্ত ও সুস্থ দাঁত তৈরি করতে সহায়তা করে।
  • এ ফলে আঁশ বেশি থাকায় হজম শক্তি বৃদ্ধি করে।
  • ভিটামিন-বি-১ কার্বহাইড্রেট বিপাক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শক্তি উৎপন্ন করে।
  • ভিটামিন বি-৩ রক্তের কোলেস্টেরল কমায় এবং ত্বক মসৃণ রাখে।
  • ভিটামিন সি শরীরের কাটা, ভাঙা জোড়া লাগাতে সাহায্য করে।
  • ভিটামিন বি-২ শরীরে ক্ষুধা তৃষ্ণা, যৌন বাসনা, প্রভৃতি মিটানোর আকাঙক্ষা উন্নয়ন ও পূরণে সাহায্য করে।
  • ফসফরাস বেশি থাকায় কোষ কলা গঠনে সাহায্য করে।
  • ক্যারোটিন সমৃদ্ধ হওয়ায় সুস্থ চোখের উন্নয়ন করে।
তথ্যসূত্রঃ সফল খামারী

মনের উঠোনে

সাম্প্রতিক সংযোজন

মোবাইল থেকে দেখুন

আমাদের দেশ এখন আপনার মুঠোফোনে, মোবাইল থেকে লগইন করুন আমাদের দেশ

দ র্শ না র্থী

দ র্শ না র্থী

free counters

কে কে অনলাইনে আছেন