শীত জেঁকে বসেছে। বেশ কিছুদিন আগে থেকেই ঝাঁকে ঝাঁকে আসছে অতিথি পাখি। এ খবরে পাখিপ্রেমীরা খুশি। চোরাশিকারিরাও গদগদ; তারা তৎপর হয়ে উঠেছে। তাদের সঙ্গে যোগ আছে একশ্রেণীর ব্যবসায়ীর। তাদের সিন্ডিকেটের মাধ্যমে রাজধানীসহ সারাদেশে অবাধে বিক্রি হচ্ছে অতিথি পাখি। এতে কারও কারও রসনাবিলাসের সুযোগ যেমন ঘটছে, তেমনি বার্ড ফ্লু ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কাও রয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে এখন যেসব অতিথি পাখি আসছে, তাদের মাধ্যমে এইচ৫এন১ ভাইরাস বা বার্ড ফ্লু ছড়ানোর আশঙ্কা বেশি। এ ভাইরাস মানুষের শরীরে প্রবেশ করে এইচ১এন১ ভাইরাস বা সোয়াইন ফ্লুতে পরিণত হতে পারে। এ কারণে এ মৌসুমে অতিথি পাখি ধরা বা হাঁস-মুরগি পালনে সাবধান থাকার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
মহাখালীর রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) পরিচালক ডা. মাহমুদুর রহমান সমকালকে বলেন, এ মৌসুমে আবারও সোয়াইন ফ্লু ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এখন দেশে যেসব পরিযায়ী বা অতিথি পাখি আসছে, তাদের কারণে বার্ড ফ্লু ভাইরাস গৃহপালিত পশুপাখির মাধ্যমে মানুষের শরীরে সংক্রমিত হয়ে সোয়াইন ফ্লুতে পরিণত হতে পারে। এ ব্যাপারে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে।
আইইডিসিআরের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞনিক কর্মকর্তা ডা. মোস্তাক হোসেন বলেন, শীতে অতিথি পাখির মাধ্যমে দেশীয় পশুপাখির মধ্যে বার্ড ফ্লুর ভাইরাস (এইচ৫এন১) ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা বেশি। এক সময় এ ভাইরাস মানুষের শরীরে ঢুকে সোয়াইন ফ্লুতে পরিণত হতে পারে। জলাশয়গামী হাঁসের মাধ্যমে গৃহপালিত পশুপাখি ও মানুষের মধ্যে বার্ড ফ্লু ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা সবচেয়ে বেশি। এ কারণে অতিথি পাখি ধরা, শিকার করা বা কেনা-বেচা থেকে বিরত থাকা উচিত।
তিনি জানান, বার্ড ফ্লুর ভাইরাস (এইচ৫এন১), সোয়াইন ফ্লুর ভাইরাস (এইচ১এন১) এবং ইনফ্লুয়েঞ্জার ভাইরাস (এইচ৩এন২) একটির সঙ্গে অন্যটি মিশে নতুন ভাইরাস সৃষ্টি করতে পারে। শীতের পাখির মাধ্যমে সবসময়ই রোগ ছড়ায়। তাই এ শীতে নতুন কোনো ভাইরাসও আসতে পারে। এ জন্য সাবধানতা অবলম্বন করা প্রয়োজন।
পাখি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই শীতে নানা রকম পরিযায়ী পাখি আসছে, যারা বার্ড ফ্লু ভাইরাস বহনে সক্ষম। বিশেষভাবে মাথায় কালো দাগওয়ালা হাঁস বা গ্রেড ব্ল্যাক হেডেড গাল, ব্রাউন হেডেড গাল ও গ্রে লেগ গুজজাতীয় পাখিগুলো বার্ড ফ্লু ভাইরাসের প্রাকৃতিক বাহক। এরা প্রতি বছর চীন, তিব্বত ও উত্তর ভারতের হিমালয় অঞ্চল থেকে বাংলাদেশে আসে। এরা চিহ্নিত বার্ড ফ্লু ভাইরাস বহনকারী। এসব হাঁসের মাধ্যমে ভাইরাস ছড়ানো বিচিত্র কিছু নয়।
পাখি বিশেষজ্ঞ সাজাহান সরদার সমকালকে বলেন, সারাবিশ্বেই এ সময়ে বার্ড ফ্লু সংক্রমণের আশঙ্কা থাকে। তবে আমরা সর্বাত্মক ঝুঁকির মধ্যে আছি। কারণ যেসব পরিযায়ী পাখি শীতে আমাদের দেশে আসছে, তাদের সম্পর্কে আমাদের কাছে নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্য নেই। অতিথি পাখিকে পর্যবেক্ষণ করার কোনো ব্যবস্থা নেই।
বিশেষজ্ঞরা অভিযোগ করেন, রাজধানীর মিরপুর চিড়িয়াখানা লেক, পাশের সিরামিকস লেক, সাভারে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের লেক এবং তুরাগ নদীসহ দেশের বিভিন্ন হাওর-বাঁওড়, বিল ও জলাভূমিতে অতিথি পাখি এলেও তাদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ এবং বার্ড ফ্লু প্রতিরোধে সরকারের কোনো প্রস্তুতি নেই।
এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের সব ধরনের প্রস্তুতি আছে জানিয়ে পশুসম্পদমন্ত্রী আবদুল লতিফ বিশ্বাস সমকালকে বলেন, শীতের পাখি আসবে, এটাই স্বাভাবিক। তবে যদি ফ্লুর আশঙ্কা থাকে তাহলে যে পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি তা-ই আমরা নেব।
অতিথি পাখি শিকার ও বিক্রি সরকারিভাবে নিষিদ্ধ হলেও রাজধানীসহ সারাদেশে অবাধে অতিথি পাখি বিক্রি হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের অভিযোগ, এ ব্যাপারে আইন থাকলেও প্রয়োগ নেই।
লেখকঃ আইরীন নিয়াজী মান্না
তথ্য সূত্রঃ সমকাল