কলা চাষি বদরুদ্দিন

Friday, December 31, 2010


কৃষি দেশীয় অর্থনীতির চালিকাশক্তি। সুতরাং কৃষি উন্নয়নের সঙ্গে দেশের উন্নয়ন নির্ভর করে। কৃষকরা নিজেদের জমিতে ক্ষুদ্র উদ্যোগ নিয়ে অধিক ফসল ফলাচ্ছে। ফুল, কলা, আনারস, নারিকেল, সুপারিসহ বিভিন্ন কৃষি ফসল চাষাবাদ করছে দেশের কৃষক। কৃষক বদরুদ্দিনের বয়স ষাট বছর। ছোটবেলা থেকে তার কৃষি উৎপাদন ভালো লাগে। নিজের জমিতে কৃষি ফসল আবাদ করতে করতে তিনি দক্ষ কৃষক হয়ে ওঠেছেন। কৃষি বিষয়ে তার কোনো প্রশিক্ষণ নেই। কয়েক বছর যাবৎ তিনি কলা চাষে ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেছেন। বদরুদ্দিন পাঁচ বছরব্যাপী ৩ একর জমিতে কলা চাষ করছেন। তিনি জানান_ 'আমি নারিকেল, সুপারি, আখ ও সবজি চাষ করি। পাঁচ বছর কলা চাষ করছি। কলা চাষে নিজেই উৎসাহিত হয়েছি। প্রথমে জমির আইলে দশ হাত অন্তর কলা গাছ লাগাই। প্রথম বছর আমি অনেক ফসল পাই। এক পর্যায়ে বেশি করে চাষ করতে থাকি।'

বদরুদ্দিনের চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে তিনি বলেন_ 'আমি ৩ একর জমিতে কলা চাষ করছি। প্রথমে মাটিতে গোবর দেই। এভাবে পুরো শুকনো মৌসুম ফেলে রাখি। এক পর্যায়ে কলার তেড় (কলা গাছ) লাগাই। পাঁচ হাত অন্তর কলা গাছের তেড় পুঁতি (লাগানো)। বছর আসতে না আসতেই গাছে ফলন শুরু হয়। আমি কলা গাছের পাশাপাশি মৌসুমি শাকসবজি ডাঁটা, পুঁইশাক, মুলা, পালংশাক, মিষ্টি কুমড়া ইত্যাদি চাষ করছি। এসব চাষের মাধ্যমে পরিবারের চাহিদা মেটাতে পারছি। আমার আবাদি জমিকে সঠিক ব্যবহার করতে পারছি। অন্যদিকে বাড়তি উপার্জনও হচ্ছে।' কলা চাষে রক্ষাণবেক্ষণ খুব জরুরি। পানি দেওয়া, অপ্রত্যাশিত পোকা দমন, আগাছা বিনষ্ট করতে হয়। বদরুদ্দিন আরও জানান_ আমার কৃষি কাজে সব সময় আমার দুই ছেলে সহযোগিতা করে। মাঝেমধ্যে আমার স্ত্রী। আর ব্যাপারি (ক্রেতা) এসে বাড়ি থেকে কলা কিনে নিয়ে যায়। এখন সপ্তাহান্তে আমি মোটামুটি ভালো টাকার কলা বিক্রি করি।

তথ্য সূত্রঃ বাংলাদেশ প্রতিদিন, তারিখ: ২৫-১২-২০১০

নওগাঁর কল্যাণপুরী মৌরী পান

Friday, December 17, 2010

ধান ও পানের জন্য দেশের মানুষের কাছে আলাদা পরিচিতি রয়েছে নওগাঁ জেলার। নওগাঁর সীমান্তঘেঁষা সাপাহার উপজেলার আইহাই ইউনিয়নের ছোট একটি গ্রামের নাম কল্যাণপুর। গ্রামটি ব্রিটিশ আমল থেকে কল্যাণপুরী মৌরী পানের জন্য বিখ্যাত। এ অঞ্চলে পান ব্যবসা বেশ লাভজনক হওয়ায় কৃষকরা অন্য ফসলের পাশাপাশি পানের বরজ স্থাপনে ঝুঁকে পড়েছে। এরই মধ্যে অনেকেই পান চাষ করে নিজের ভাগ্য পরিবর্তন করেছেন। ব্রিটিশ আমলে এলাকাবাসীর পানীয় ও ব্যবহার্যে পুকুরের পানিই একমাত্র ভরসা ছিল। তাই ওই এলাকায় অধিকসংখ্যক পুকুর খনন করা হয়েছিল। পরবর্তীতে পরিত্যক্ত পুকুরপাড়গুলোতে পানের চাষ বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করে। উপজেলার কল্যাণপুর, মির্জাপুর, ছাতাহার, সুকরইল, আশড়ন্দ, মধুইল, রসুলপুর, নওপাড়া, বামনপাড়াসহ আশপাশের এলাকায় প্রায় ১০০ একর জমিতে পানের বরজ রয়েছে। উঁচু জায়গায় ও পুকুর পাড়ে পানের বরজ তৈরি করা হলে তাতে ফলন ভালো হয় এবং খরা মৌসুমে সহজে সেচ দেওয়া যায়। এ উপজেলার প্রায় ৩০০টি কৃষক পরিবার ও কয়েকশ' কৃষি শ্রমিক পরিবার পানের বরজের ওপর নির্ভরশীল। এখানে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পান ব্যবসায়ী পান কিনতে আসেন।

পানচাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, একমাত্র পান চাষই তাদের উপার্জনের প্রধান উৎস। পান চাষে প্রচুর অর্থের দরকার হয়। কোনো কোনো কৃষক ঋণ করেও পান চাষ করে লাভবান হয়েছেন।

সাপাহার হাট, মধুইল হাট, আশড়ন্দ হাটে প্রতি সপ্তাহে পানের হাট বসে। এখান থেকে বিভিন্ন অঞ্চলে ব্যবসায়ীরা পান নিয়ে যান। মুনাফার দিক থেকে অন্য কোনো কৃষিপণ্য থেকে এত বেশি আয় সম্ভব নয়, যা পান চাষে সম্ভব। কল্যাণপুরের পানচাষি বাদেশ বর্মণ বলেন, পান চাষ তাদের পারিবারিক ব্যবসা। পান চাষ করেই তারা পরিবার-পরিচালনা করেন। তারা আর্থিকভাবে এখন সচ্ছল। আশড়ন্দ গ্রামের পানচাষি আবদুল মালেক ও মাইনুল হক বলেন, ব্যাংকে টাকা জমা রাখার চাইতে পানের বরজ অধিক নিরাপদ। তবে পানের বরজ করতে অনেক সময় টাকা পাওয়া যায় না। তারপর বরজ করতে হলে বেশি পরিচর্চা করতে হয়।

সাপাহার উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ কল্যাণপুর গ্রামে কৃষকদের মধ্যে বাস্তব অভিজ্ঞতা বৃদ্ধির পাশাপাশি আইসিএম কৃষক প্রশিক্ষণ স্কুল স্থাপন করেছে। এই স্কুলে এলাকার কৃষক পানসহ তাদের সব ধরনের ফসলের রোগবালাই প্রতিরোধে কি করতে হবে তার সঠিক পরামর্শ গ্রহণ করছে। পানচাষি আকবর আলী বলেন, বর্তমান সময়ে আধুনিক চাষ পদ্ধতিতে কৃষির উন্নয়নের দিকে সরকার বেশি গুরুত্ব দিলেও এ অঞ্চলের অর্থকরী কৃষিপণ্য পানের উৎপাদনের জন্য চাষিদের কোনো আধুনিক চাষপদ্ধতি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এছাড়া প্রয়োজনীয় উপকরণের অভাব ও মূল্যবৃদ্ধির কারণে পান চাষে ব্যয় বেড়ে গেছে। পানের জমিতে খৈল সার হিসেবে ব্যবহার করা হয় কিন্তু খৈল না পাওয়ায় এবং এর মূল্য বৃদ্ধির কারণে কৃষকরা পানের জমিতে নিজের ইচ্ছায় রাসায়নিক সার ব্যবহার করতে শুরু করে। ফলে প্রতি বছর পানের বরজে মড়ক লেগে পান গাছ পচে নষ্ট হয়ে থাকে। উপজেলা কৃষি অধিদফতরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সেলিম উদ্দীনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি উপজেলার পানচাষিদের সঠিক তালিকা ও স্থাপিত পানের বরজের প্রকৃত হিসাব দিতে ব্যর্থ হন। উপজেলা কৃষি বিভাগে এ সংক্রান্ত কোনো তথ্য-উপাত্ত নেই বলে জানান। এলাকার পানচাষিরা মনে করেন, সরকারিভাবে পান চাষে উন্নত প্রশিক্ষণ ও সহায়তা প্রদান করলে দেশ থেকে পান রপ্তানি বাড়ানো সম্ভব হবে।

তথ্য সূত্রঃ বাংলাদেশ প্রতিদিন, তারিখ: ১১-১২-২০১০

পাথর উত্তোলনে কমছে কৃষিজমি জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে


পাথর উত্তোলনে সরকারি কোনো নীতিমালা না থাকায় পঞ্চগড়ের সমতল কৃষিজমি থেকে পাথর উত্তোলন করা হচ্ছে নির্বিচারে। এভাবে পাথর তোলায় জেলায় কমে যাচ্ছে কৃষিজমি। পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়ছে বলে পরিবেশ বিজ্ঞানীরা আশঙ্কা করছেন। সরেজমিন দেখা গেছে, পঞ্চগড়ের সদর ও তেঁতুলিয়া উপজেলার বিভিন্ন সীমান্তবর্তী নদী তীরবর্তী এলাকায় নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে সমতল ভূমির ৩০/৪০ ফুট পর্যন্ত গভীর গর্ত করে পাথর তোলা হচ্ছে। সাও নদী থেকে পাথর উত্তোলনের ফলে ইতোমধ্যে বাংলাদেশি কিছু এলাকা ভারতের নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। আরও জমি বিলীন হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তেঁতুলিয়া ও পঞ্চগড় সদর উপজেলায় আবাদি জমি খনন করে ব্যাপক পাথর তোলায় নিচের বালু উপরে উঠে ফসলি জমি বালুময় হয়ে যাচ্ছে। এ ঘটনা চলমান থাকলে তেঁতুলিয়া এলাকা মরুভূমিতে পরিণত হতে পারে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয় সূত্র জানা গেছে, বড় বড় গর্ত করে পাথর তোলায় শুধু তেঁতুলিয়া উপজেলায় ৭০০ হেক্টর জমি অনাবাদি হয়ে পড়েছে। এর আয়তন দিন দিন বাড়ছে। পাথর তোলার কাজে নিয়োজিত কয়েকজন শ্রমিকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রথমে লোহার রড দিয়ে জমির তলদেশে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে পাথর আছে কিনা বোঝা হয়। তারপর মাটির বুক খুঁড়লেই স্তরে স্তরে সাজানো ৫/৬ ফুট থেকে ১৫/২০ ফুট পর্যন্ত পাথর পাওয়া যায়। সেই পাথরগুলো নেটিং করে বিক্রি করা হয়। শ্রমিকরা আরও জানান, বহু বছর যাবৎ তারা এসব জায়গা থেকে পাথর তোলার কাজ করে আসছেন। এ এলাকায় প্রায় ৪০ হাজার পাথর শ্রমিক কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছে বলে জানা গেছে।

মাটি খুঁড়লেই গোটা জেলায় কম-বেশি পাথর পাওয়া যায়। তবে ভূতত্ত্ববিদদের পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, পঞ্চগড় সদর ও তেঁতুলিয়ার ভূগর্ভে ৮ কোটি ঘনফুট নুড়ি পাথর মজুদ আছে। এই জেলার পাথর দিয়ে দেশের কংক্রিটশিল্পে প্রায় ৭০ ভাগ চাহিদা মিটছে। অথচ পাথর তোলার কোনো নীতিমালা নেই। জমি যার খনি তার এই নীতিতে চলছে পাথর উত্তোলন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জমি কিনে লিজ অথবা বন্ধক নিলেই পাথরের মালিক হওয়া যায়। এজন্য সরকারকে কোনো ট্যাক্স দিতে হয় না। তবে পঞ্চগড় পাথর-বালি যৌথ ফেডারেশন রসিদ মূলে ৫০ টাকা ছাড়াও পঞ্চগড় মহাসড়কে বাঁশকল বসিয়ে প্রতি ট্রাকে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা করে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে। অথচ মজুরদের প্রতি সিএফটিতে দেওয়া হয় মাত্র চার-পাঁচ টাকা। সিন্ডিকেট বা সমিতি বানিয়ে স্থানীয় প্রভাবশালীরা প্রতিবারই এসব পাথর কোয়ারি ইজারা নিয়ে আসছে। প্রতিবছরই এক থেকে দেড় লাখ টাকার মধ্যেই মহালগুলো ইজারা নেওয়ার সুযোগ পায় তারা। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, বড় বড় গর্ত করে পাথর তোলায় আবাদি কৃষি জমি কমে যাচ্ছে। বালুময় হয়ে উর্বরতা শক্তি হারাচ্ছে। মাটির তলদেশ থেকে পাথর উত্তোলনের কারণে পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হচ্ছে। পাথর তোলার পর তা সমান করে আবাদ করার চেষ্টা করলেও দীর্ঘদিনও আবাদ করা সম্ভব হবে না।

পঞ্চগড় পরিবেশ পরিষদের সভাপতি ও সরকারি মহিলা কলেজের ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক তোহিদুল বারী বলেন, এভাবে পাথর তোলার কারণে এসব জমি পতিত হয়ে পড়ছে। এতে জমির গঠন ও প্রকৃতি বদলে যাচ্ছে। ফলে কৃষি, পরিবেশ, জীববৈচিত্র্য হুমকির মধ্যে পড়েছে। ভূমিধসসহ পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কাও প্রকাশ করেন তিনি। পাথর উত্তোলনকারী শ্রমিকদের নেতা ও তেঁতুলিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান মো. মুক্তারুল হক বলেন, খাসজমিসহ সমতল কৃষিজ জমি থেকে অবৈধ ও অপরিকল্পিতভাবে ড্রিল ড্রেজার দিয়ে পাথর তোলা বন্ধের আন্দোলন চালানো হচ্ছে। বর্তমানে একটি মহল বিভিন্ন স্থানে জমি দখল করেও পাথর তুলছে।

তথ্য সূত্রঃ বাংলাদেশ প্রতিদিন, তারিখ: ১১-১২-২০১০

মসলা চাষে বেশি লাভ


প্রান্তিক কৃষকরা কম খরচে মসলা চাষ করে বেশি লাভবান হচ্ছেন। রান্নার অন্যতম উপাদান মসলার মূল্য বৃদ্ধি এবং জমিতে উৎপাদন বেশি পাওয়া কৃষকরা মসলা চাষ শুরু করে দিয়েছেন। বাড়ির আঙ্গিনাসহ পতিত জমিতে মসলা চাষ করা যতে পারে। মসলার মধ্যে রয়েছে পেঁয়াজ, রসুন, আদা, হলুদ, মরিচ ও ধনিয়া। দেশে মসলার উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে মসলার চাহিদা পূরণ, বাজার মূল্য স্থিতিশীল রাখাসহ মসলা রপ্তানির সম্ভাবনা সৃষ্টি হতে পারে। বাউফল উপজেলায় বর্তমান অর্থবছরে মসলা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে_ পেঁয়াজ ১২৫ হেক্টর, রসুন ১৫০ হেক্টর, আদা ৪৫ হেক্টর, হলুদ ৩০০ হেক্টর, মরিচ ২ হাজার ২০০ হেক্টর এবং ধনিয়া ১০০ হেক্টর। যার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে মোট ৪ হাজার ১২.৫ মেট্রিক টন। জলোচ্ছ্বাসের পানির সঙ্গে প্রতি বছর জমিতে বেশি পলি পড়ায় মরিচ, রসুন পেঁয়াজের আশাতীত ফলন হয়। কালাইয়া মাহিনুর বেগম (৩৫) তার বাড়ির আঙ্গিনায় ৩ শতাংশ জমিতে হলুদ চাষ করেছেন। পরিবারের ১ বছরের হলুদের চাহিদা পূরণের পর বাকি হলুদ বিক্রি করবেন। গত ১০ বছর ধরে হলুদ চাষ করছেন মাহিনুর বেগম। তার দেখাদেখি এলাকার অনেকেই হলুদ চাষ করছেন। চরওয়াডেল এলাকা আহসান হাবিব পরীক্ষামূলকভাবে হলুদ চাষাবাদ করে বেশ লাভবান হচ্ছে। তিনি কৃষি অফিস থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে হলুদ চাষ করেন। জৈব সার প্রয়োগের মাধ্যমে অল্প জমিতে বেশি হলুদ চাষ করা যায়। পতিত উঁচু মাঝারি জমি বেলে দোআঁশ মাটিতে হলুদ ও আদা চাষ করা যায়। প্রতি বছর বৈশাখ মাসে হলুদ রোপণ করা হয়, পরবতী ১ বছর পর বৈশাখ মাসে হলুদ তুলতে হয়। বর্তমান বাজারে হলুদের মূল্য প্রতি কেজি ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা। শীত মৌসুমে ধনিয়া চাষ করে। উপ-সহকারী কৃষি কর্মকতা আনছার উদ্দিন জানান, প্রত্যন্ত এলাকার পরিবার মসলা চাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছে। কৃষি বিভাগ আইপিএম ও আইসিএম ক্লাব মাধ্যমে আমন চাষের পাশাপাশি মসলা চাষে কৃষককে ধারণা প্রদান করে আসছে। দু'শতাধিক চাষিকে মসলা চাষের ওপর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। তিনি আরও জানান, কৃষকদের মসলা চাষে বেশি জোর দেওয়া উচিত। কেননা, ৩ শতাংশ জমিতে ধান রোপণ করলে যে ফলন হয়, এর আর্থিক মূল্য হবে সর্বোচ্চ ৬০০ টাকা। ধানের পরিবর্তে মসলা চাষ করলে যে ফলন হবে তার আর্থিক মূল্য হবে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা। বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশে দৈনিক মাথাপিছু ৩৮ গ্রাম মসলার প্রয়োজন। সে হিসাবে বার্ষিক চাহিদা প্রায় ২০ লাখ মেট্রিক টন। দেশে মোট ৩.১৬ লাখ হেক্টর জমিতে প্রায় ১০ থেকে ১২ লাখ মেট্রিক টন মসলা জাতীয় ফসল উৎপাদিত হয়। দেশের চাহিদা পূরণ করতে অবশিষ্ট মসলা আমদানি করতে হয় এবং প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় হয়।


তথ্য সূত্রঃ বাংলাদেশ প্রতিদিন, তারিখ: ১১-১২-২০১০

বাড়ছে ভূমিহীন কৃষক

Thursday, December 16, 2010

দেশের সার্বিক উন্নয়নে কৃষকদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। জাতিসংঘের কৃষি নীতি অনুসারে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুারো ২০০৮ সালের ১১ মে থেকে ২৫ মে পর্যন্ত শুমারি দেখা যায়। মূলত দ্রুত নগরায়ন ও অফ মৌসুমে কাজের অভাবে ভূমিহীন কৃষকের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সবচেয়ে বেশি খুলনা ও সিলেট বিভাগে। বিশেষজ্ঞদের মতে, সিলেটে প্রবাসী অর্থের সরবরাহ বেশি থাকার কারণে কৃষি জমিতে বিনিয়োগের আগ্রহ কমে যাচ্ছে। তথ্য মতে, ১৯৮৩-৮৪ সালে কৃষি শ্রমের উপর নির্ভরশীল পরিবার ছিল ৩৯.৭৭ শতাংশ। ক্রমাগত হ্রাস পেয়ে ২০০৮ সালের জরিপে মোট ৩১.১৩ শতাংশ নেমে আসে কৃষি শ্রমিক পরিবার। কৃষিকাজে সম্পৃক্ত সব মানুষের সমস্যাগুলোর মধ্যে অন্যতম বিষয় হল, উচ্চমূল্যে কৃষি উপকরণ ক্রয়। উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য না পাওয়া। অফ মৌসুমে কৃষকদের বিকল্প কাজের অভাব। পরিমিত মূল্যে মানসম্মত বীজ, কীটনাশক, সার সময়মতো পানির অভাব। ব্যাংকে কৃষি কাজে স্বল্প সুদে ঋণ ব্যবস্থা থাকলেও সক্রিয় ভূমিকার অভাবে এ সুবিধা থেকে বঞ্চিত অনেক কৃষক।


তথ্য সূত্রঃ বাংলাদেশ প্রতিদিন, তারিখ: ১১-১২-২০১০

আদার পোকা দমন ব্যবস্থাপনা


আদা বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ মসলা জাতীয় ফসল। এটি পুষ্টিমানে সমৃদ্ধ এবং এর ঔষধি গুণাগুণ রয়েছে। এতে লিপিড, প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, মিনারেল, ভিটামিন, পটাশিয়াম এবং ফসফরাস রয়েছে। গ্যাস্ট্রিক, ঠাণ্ডা ও কাশিসহ বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে আদা ব্যবহার করা হয়।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যানুযায়ী ২০০৫-০৬ সালে বাংলাদেশে প্রায় ১৪ হাজার ২৯৪ হেক্টর জমিতে আদার চাষ হয়েছে। মোট উৎপাদন প্রায় ১.৭৩ লাখ মেট্রিক টন এবং হেক্টরপ্রতি গড় উৎপাদন ১২.০৮ মেট্রিক টন। রাইজোম ফ্লাই আদার একটি প্রধান ক্ষতিকারক পোকা। এর আক্রমণে আদার ফলন ব্যাপকভাবে কমে যায়।

পোকার বৈশিষ্ট্য : পূর্ণ বয়স্ক পোকা লম্বা পা-বিশিষ্ট। দেহ কালো, পাখা স্বচ্ছ এবং ধূসর দাগযুক্ত। পাখা বিস্তৃত অবস্থায় এর আকার ১৩-১৫ মি.মি.। পূর্ণতাপ্রাপ্ত লার্ভা ক্রিমের মতো সাদা, পা-বিহীন, প্রস্থে ৯.৫ মি.মি. এবং প্রস্থ ১.৯৫ মি.মি.।

ক্ষতির প্রকৃতি : ডিম থেকে বের হওয়ার পর সদ্যজাত লার্ভা রাইজোম ছিদ্র করে ভেতরে ঢুকে এবং রাইজোমের অভ্যন্তরীণ অংশ খায়। আক্রান্ত গাছ হলুদ হয়ে যায়। পরবর্তী সময়ে রাইজোমে পচন ধরে। আক্রমণের মাত্রা বেশি হলে গাছ থেকে কোনো ফলন পাওয়া যায় না। এ পোকা আদার রোগের সঙ্গে সম্পর্কিত। এ পোকা ডিম পাড়া এবং বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হওয়ার জন্য ছত্রাক আক্রান্ত আদা গাছ পছন্দ করে। রোগাক্রান্ত রাইজোমের মধ্যে পোকার লার্ভা এবং পিউপা দেখা যায়। এ ছাড়াও পূর্ণ বয়স্ক পোকাগুলো আদা গাছে ব্যাকটেরিয়াল উইল্টের বাহক হিসেবে কাজ করে।

জীবনচক্র : পূর্ণ বয়স্ক স্ত্রী পোকা গাছের গোড়ায় মাটির ছোট ঢেলার নিচে, মাটির ফাটলে অথবা মাটিতে একটি একটি করে অথবা গুচ্ছাকারে (প্রতি গুচ্ছে ৬ থেকে ১০টি) ডিম পাড়ে। ডিমগুলো ছোট এবং সাদা। ২ থেকে ৫ দিন পর ডিম ফুটে লার্ভা বের হয়। লার্ভাগুলো ১৩ থেকে ১৮ দিন খাওয়ার পর রাইজোমের মধ্যেই পিউপায় পরিণত হয়। পিউপা ১০ থেকে ১৫ দিন পর পূর্ণ বয়স্ক পোকায় পরিণত হয়। এর জীবনচক্র সম্পন্ন হতে প্রায় ৪ সপ্তাহ সময় লাগে।

দমন ব্যবস্থাপনা : স্বাস্থ্যবান এবং রোগমুক্ত রাইজোম বীজের জন্য নির্বাচন করতে হবে। ফসল সংগ্রহের সময় লার্ভা ও পিউপাসহ পচা রাইজোম সংগ্রহ এবং ধ্বংস করে ফেলতে হবে। গাছের গোড়ার মাটি নিয়মিত উলট-পালট করতে হবে কারণ পোকা মাটিতে ডিম পাড়ে। যেহেতু রোগাক্রান্ত রাইজোমে পোকার আক্রমণ হয় এ জন্য ফসলকে রোগমুক্ত রাখার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

অত্যধিক আক্রান্ত এলাকায় আক্রমণের শুরুতে নিম্নলিখিত কীটনাশক ব্যবহার করতে হবে- কার্বোসালফান (মার্শাল ২০ ইসি, সানসালফান ২০ ইসি, জেনারেল ২০ ইসি বা অন্য নামের) অথবা ফেনিট্রোথিয়ন (ফেনিটকস ৫০ ইসি, সুমিথিয়ন ৫০ ইসি, ইমিথিয়ন ৫০ ইসি, সোভাথিয়ন ৫০ ইসি বা অন্য নামের) প্রতি লিটার পানিতে ২ মিলি হিসেবে।

রংমিস্ত্রি থেকে ভাস্কর

Saturday, December 11, 2010


সাত-আট হাত দীর্ঘ একটি গাছ। গাছের ডালে বসে আছে দোয়েল, শ্যামা, ঘুঘু, টিয়া, ময়না, শালিকসহ নানা জাতের পাখপাখালি। গাছের নিচে বক, ডাহুক, ময়ূর, হরিণ, চিতা, হাতি ও রয়েল বেঙ্গল টাইগারসহ বন্য প্রাণীরা ঠাঁয় দাঁড়িয়ে। এসব প্রাণীর কোনোটাই রক্ত-মাংসের নয়, বালু-পাথর ও রড-সিমেন্টে তৈরি। এগুলোর নির্মাতা শহিদুল ইসলাম নামের এক তরুণ।
বয়স তাঁর ৩০ বছর। জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার খলিশাগাড়ি গ্রামে বাড়ি। এসব ভাস্কর্য বানাতে কারও কাছ থেকে শিক্ষা নেননি তিনি। দারিদ্র্যের কারণে শৈশবে পঞ্চম শ্রেণীর গণ্ডিই পেরোতে পারেননি। কিন্তু ভেতরে একটা শিল্পীসত্তা বুঝি ছিল। এমনিতে রংমিস্ত্রির কাজ করেন। বছর চারেক আগে হঠাৎ শখের বশে পশুপাখি বানানো শুরু করেন তিনি। কৃত্রিম এসব জন্তু-জানোয়ার স্থানীয় লোকজনের নজর কাড়ে। কেউ কেউ কিনে নেন কয়েকটা। স্থানীয় লোকদের উৎসাহ ও স্বীকৃতি জন্ম দেয় এক ভাস্করের।
দিনে মানুষের বাড়ি বাড়ি ঘুরে শহিদুল এখনো রংমিস্ত্রির কাজ করেন। সেটাই তাঁর মূল পেশা। আর রাতে রড-সিমেন্ট নিয়ে বসেন। দক্ষ হাতে গড়ে তোলেন একেকটা অবয়ব। তারপর চলে রং করার পালা। গ্রামীণ মেলায় সিমেন্টের এসব ভাস্কর্যের কেনাবেচা ভালো। শীতকালে মেলাকে সামনে রেখে বছরজুড়ে এসব বানান শহিদুল। তাঁকে সাহায্য করেন স্ত্রী মরিয়ম বেগম।
শহিদুলের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, একটি ময়ূরের গায়ে রং করছেন তিনি। মরিয়ম রংতুলি, যন্ত্রপাতি এগিয়ে দিচ্ছেন। শহিদুল জানান, রড-সিমেন্ট দিয়ে আড়াই ফুট উঁচু, চার ফুট দীর্ঘ একটি বাঘ তৈরিতে তাঁর ১৫ দিন লেগেছে। মাঝারি আকৃতির একটি বাঘ বানাতে খরচ পড়ে দুই হাজার টাকা। আর বিক্রি করে পান সাড়ে তিন হাজার টাকা। ৫০০ থেকে ৭০০ টাকায় বিক্রি হয় শাপলা ফুল।
শহিদুল বলেন, হামি অশিক্ষিত মানুষ। ভালো কোনো কিছু তৈরি করতে অনেক টাকা-পয়সা লাগে। হামরা গরিব মানুষ, দিনে যা রোজগার হয়, ওই দিন তা খাওয়া-খরচে শেষ হয়। আর বছরে একবার এই কাজের লাভ থেকে সংসারের বড় ধরনের কাজ করি। মাথার ঘাম পায়ে ফেলে এই কামগুলো শুধু রাতে করি। দিনে অন্যের বাড়িতে রংমিস্ত্রির কাম করি।
পাশের মুন্দাল গ্রামের ঠিকাদার নুরুজ্জামান মৃধা বলেন, বড় একটি জিরাফ শহিদুলের কাছ থেকে মাত্র দুই হাজার ৪০০ টাকায় কিনেছি। শহর থেকে কিনতে গেলে পাঁচ হাজার টাকায়ও পাওয়া যেত না। বাড়ির পাশে রাখা ওই জিরাফে বসে শিশুরা সারা দিন খেলাধুলা করে।
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান তাইফুল ইসলাম তালুকদার বলেন, শহিদুল ইসলামের এই শৈল্পিক কাজ দিন দিন এলাকায় জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। নিরক্ষর হয়েও সে এত সুন্দর হাতের কাজ করে, দেখলে অবাক লাগে। তাকে সহায়তা করা দরকার, যেন সে আরও ভালো কিছু করতে পারে।

তথ্য সূত্রঃ নিঝুমদীপ

সিরাজগঞ্জে কৃষিজমিতে একের পর এক ইটভাটা


সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর, রায়গঞ্জসহ বিভিন্ন উপজেলায় কৃষিজমিতে ইটভাটা স্থাপনের হিড়িক পড়েছে। সরকারি নিয়মনীতি উপেক্ষা করে, পরিবেশ অধিদপ্তরের সনদ ছাড়াই প্রতিবছর নতুন নতুন ভাটা তৈরি অব্যাহত রয়েছে। এতে ভাটার আশপাশের ফসলি জমিগুলো দিন দিন উর্বরাশক্তি হারিয়ে ফেলছে। অপরদিকে ইটভাটায় জ্বালানি হিসেবে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। ভাটার চিমনি থেকে নির্গত ধোঁয়া ও ছাই করছে গাছপালা ও ফসলের ক্ষতি।
জানা গেছে, জেলায় মোট ৭৫টি ইটভাটা রয়েছে। এর মধ্যে চলতি বছর কৃষিজমিতে নতুন আটটি ইটভাটা হয়েছে। শাহজাদপুর, রায়গঞ্জ ও উল্লাপাড়া উপজেলায় ইটভাটা সবচেয়ে বেশি। ভাটাগুলো কৃষি এবং জনবসতিপূর্ণ এলাকায় তৈরি করা হয়েছে। নতুন ভাটার পাশাপাশি পুরোনো ভাটায় ব্যবহূত একমাত্র কাঁচামাল মাটির জন্য কৃষিজমিগুলো কেটে কেটে গর্ত করা হচ্ছে। ওপরের অংশের তিন ফুট কেটে ফেলায় মাটির উর্বর অংশ চলে যাচ্ছে।
শাহজাদপুর ও রায়গঞ্জের ইটভাটাগুলোর পাশ থেকে দীর্ঘদিন ধরে মাটি কাটার ফলে গভীর গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। গর্তগুলোতে বছরের ছয় মাসই পানি লেগে থাকে। পরিবেশ সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী, বনাঞ্চল ও জনবসতিপূর্ণ এলাকার তিন কিলোমিটারের বাইরে এবং অকৃষি জমিতে ইটভাটা স্থাপনের নিয়ম রয়েছে। চার মাস আগে সর্বশেষ জারি করা পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিপত্র অনুযায়ী, ১২০ ফুট চিমনির ভাটা তৈরি নিষেধ করে দেওয়া হয়েছে। শুধু হাওয়াই ঝিকঝাক ইটভাটা (পরিবেশবান্ধব) তৈরির জন্য সনদ দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তারপরও এই নিয়ম উপক্ষো করে, সনদ ছাড়াই নতুন নতুন ভাটা তৈরি অব্যাহত রয়েছে।
চলতি বছর রায়গঞ্জ উপজেলার ধানগড়া ইউনিয়নের আবুদিয়ায় একটি, সোনাখাড়া ইউনিয়নের নিমগাছি এলাকায় দুটি, শাহজাদপুরের গাড়াদহ ইউনিয়নের সরিষাকোল বাজারের দক্ষিণে গ্রামের পাশে ও কৃষিজমির ওপর দুটি, হরিরামপুর গ্রামের পাশে একটি, উল্লাপাড়ার রাজমানে একটি ও তাড়াশে একটি ইটভাটা তৈরি করা হয়েছে। সব কটি ভাটাই নির্মিত হয়েছে কৃষিজমির ওপর।
নিমগাছিতে গড়ে ওঠা ইটভাটার মালিক শাহ আলম বলেন, ‘এখন পর্যন্ত কোনো অনুমতি পাওয়া না গেলেও সব কাগজপত্র জমা দিয়েই আমরা ভাটার কাজ শুরু করেছি।’ আবুদিয়ায় নতুন গড়ে ওঠা এসএসবি ইটভাটায় তদারককারী সুলতান আহমেদ নামের একজন বললেন, ‘নিজেদের কিছু জমি আর ভাড়া করা জমি নিয়ে প্রায় ১২ বিঘা জমির ওপর ইটভাটাটি দেওয়া হয়েছে। চুল্লি বানানো শেষ হয়েছে। এখন অন্যান্য কাজ করা হচ্ছে।’
রায়গঞ্জ উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা অজিত কুমার সরকার বলেন, যেভাবে কৃষিজমিতে ইটভাটা তৈরি করা হচ্ছে, সেই ধারা অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে আবাদি জমি একেবারে কমে যাবে। ইটভাটা মালিক সমিতি সিরাজগঞ্জ জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. নূরুল ইসলাম বলেন, ‘ইট তৈরিতে এঁটেল মাটি অর্থাৎ কৃষিজমির মাটিই প্রয়োজন। কৃষিজমির মাটি ছাড়া ইট তৈরি সম্ভব নয়। ভাটায় ব্যবহূত কাঠের বিষয়ে তিনি বলেন, ভাটায় আগুন ধরানোর জন্য ৬০০ থেকে ৮০০ মণ লাকড়ি লাগে। ওই পরিমাণ ব্যবহারের অনুমতি আছে। এরপর কয়লা দিয়ে পোড়ানো হয়। নতুন ভাটার কথা স্বীকার করে নূরুল ইসলাম বলেন, ওই ভাটাগুলো আমাদের সমিতিভুক্ত নয়।’
পরিবেশ অধিদপ্তর বগুড়া কার্যালয়ের পরিদর্শক (সিরাজগঞ্জ জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত) মো. মকবুল হোসেন জানান, সর্বশেষ পরিপত্র অনুযায়ী ১২০ ফুটের চিমনির ভাটা তৈরিতে নিষেধাজ্ঞা আছে। ২০১২ সালের পর হাওয়াই ভাটা ছাড়া কোনো ভাটা তৈরির অনুমতি দেওয়া হবে না।
সিরাজগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. আমিনুল ইসলাম জানান, সরকারি নিয়ম উপেক্ষা করে ইটভাটা তৈরি করা হলে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তথ্য সূত্রঃ প্রথম আলো, তারিখ: ১১-১২-২০১০

আসছে শীতের পাখি

Thursday, December 2, 2010


শীত জেঁকে বসেছে। বেশ কিছুদিন আগে থেকেই ঝাঁকে ঝাঁকে আসছে অতিথি পাখি। এ খবরে পাখিপ্রেমীরা খুশি। চোরাশিকারিরাও গদগদ; তারা তৎপর হয়ে উঠেছে। তাদের সঙ্গে যোগ আছে একশ্রেণীর ব্যবসায়ীর। তাদের সিন্ডিকেটের মাধ্যমে রাজধানীসহ সারাদেশে অবাধে বিক্রি হচ্ছে অতিথি পাখি। এতে কারও কারও রসনাবিলাসের সুযোগ যেমন ঘটছে, তেমনি বার্ড ফ্লু ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কাও রয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে এখন যেসব অতিথি পাখি আসছে, তাদের মাধ্যমে এইচ৫এন১ ভাইরাস বা বার্ড ফ্লু ছড়ানোর আশঙ্কা বেশি। এ ভাইরাস মানুষের শরীরে প্রবেশ করে এইচ১এন১ ভাইরাস বা সোয়াইন ফ্লুতে পরিণত হতে পারে। এ কারণে এ মৌসুমে অতিথি পাখি ধরা বা হাঁস-মুরগি পালনে সাবধান থাকার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
মহাখালীর রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) পরিচালক ডা. মাহমুদুর রহমান সমকালকে বলেন, এ মৌসুমে আবারও সোয়াইন ফ্লু ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এখন দেশে যেসব পরিযায়ী বা অতিথি পাখি আসছে, তাদের কারণে বার্ড ফ্লু ভাইরাস গৃহপালিত পশুপাখির মাধ্যমে মানুষের শরীরে সংক্রমিত হয়ে সোয়াইন ফ্লুতে পরিণত হতে পারে। এ ব্যাপারে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে।
আইইডিসিআরের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞনিক কর্মকর্তা ডা. মোস্তাক হোসেন বলেন, শীতে অতিথি পাখির মাধ্যমে দেশীয় পশুপাখির মধ্যে বার্ড ফ্লুর ভাইরাস (এইচ৫এন১) ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা বেশি। এক সময় এ ভাইরাস মানুষের শরীরে ঢুকে সোয়াইন ফ্লুতে পরিণত হতে পারে। জলাশয়গামী হাঁসের মাধ্যমে গৃহপালিত পশুপাখি ও মানুষের মধ্যে বার্ড ফ্লু ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা সবচেয়ে বেশি। এ কারণে অতিথি পাখি ধরা, শিকার করা বা কেনা-বেচা থেকে বিরত থাকা উচিত।
তিনি জানান, বার্ড ফ্লুর ভাইরাস (এইচ৫এন১), সোয়াইন ফ্লুর ভাইরাস (এইচ১এন১) এবং ইনফ্লুয়েঞ্জার ভাইরাস (এইচ৩এন২) একটির সঙ্গে অন্যটি মিশে নতুন ভাইরাস সৃষ্টি করতে পারে। শীতের পাখির মাধ্যমে সবসময়ই রোগ ছড়ায়। তাই এ শীতে নতুন কোনো ভাইরাসও আসতে পারে। এ জন্য সাবধানতা অবলম্বন করা প্রয়োজন।
পাখি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই শীতে নানা রকম পরিযায়ী পাখি আসছে, যারা বার্ড ফ্লু ভাইরাস বহনে সক্ষম। বিশেষভাবে মাথায় কালো দাগওয়ালা হাঁস বা গ্রেড ব্ল্যাক হেডেড গাল, ব্রাউন হেডেড গাল ও গ্রে লেগ গুজজাতীয় পাখিগুলো বার্ড ফ্লু ভাইরাসের প্রাকৃতিক বাহক। এরা প্রতি বছর চীন, তিব্বত ও উত্তর ভারতের হিমালয় অঞ্চল থেকে বাংলাদেশে আসে। এরা চিহ্নিত বার্ড ফ্লু ভাইরাস বহনকারী। এসব হাঁসের মাধ্যমে ভাইরাস ছড়ানো বিচিত্র কিছু নয়।
পাখি বিশেষজ্ঞ সাজাহান সরদার সমকালকে বলেন, সারাবিশ্বেই এ সময়ে বার্ড ফ্লু সংক্রমণের আশঙ্কা থাকে। তবে আমরা সর্বাত্মক ঝুঁকির মধ্যে আছি। কারণ যেসব পরিযায়ী পাখি শীতে আমাদের দেশে আসছে, তাদের সম্পর্কে আমাদের কাছে নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্য নেই। অতিথি পাখিকে পর্যবেক্ষণ করার কোনো ব্যবস্থা নেই।
বিশেষজ্ঞরা অভিযোগ করেন, রাজধানীর মিরপুর চিড়িয়াখানা লেক, পাশের সিরামিকস লেক, সাভারে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের লেক এবং তুরাগ নদীসহ দেশের বিভিন্ন হাওর-বাঁওড়, বিল ও জলাভূমিতে অতিথি পাখি এলেও তাদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ এবং বার্ড ফ্লু প্রতিরোধে সরকারের কোনো প্রস্তুতি নেই।
এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের সব ধরনের প্রস্তুতি আছে জানিয়ে পশুসম্পদমন্ত্রী আবদুল লতিফ বিশ্বাস সমকালকে বলেন, শীতের পাখি আসবে, এটাই স্বাভাবিক। তবে যদি ফ্লুর আশঙ্কা থাকে তাহলে যে পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি তা-ই আমরা নেব।
অতিথি পাখি শিকার ও বিক্রি সরকারিভাবে নিষিদ্ধ হলেও রাজধানীসহ সারাদেশে অবাধে অতিথি পাখি বিক্রি হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের অভিযোগ, এ ব্যাপারে আইন থাকলেও প্রয়োগ নেই।
লেখকঃ আইরীন নিয়াজী মান্না

তথ্য সূত্রঃ সমকাল

মনের উঠোনে

সাম্প্রতিক সংযোজন

মোবাইল থেকে দেখুন

আমাদের দেশ এখন আপনার মুঠোফোনে, মোবাইল থেকে লগইন করুন আমাদের দেশ

দ র্শ না র্থী

দ র্শ না র্থী

free counters

কে কে অনলাইনে আছেন