Showing posts with label নার্সারি. Show all posts
Showing posts with label নার্সারি. Show all posts

ঘরেই ফলবে রঙিন টমেটো

Wednesday, April 25, 2018


রসালো ফল অথবা সবজি- যাই বলি না কেন, রান্নায় অথবা সালাদে টমেটোর জুড়ি নেই। টক-মিষ্টি এই ফলটি পাকা এবং কাঁচা দুই অবস্থাতেই খাওয়ার উপযোগী। তবে টমেটোর একটা বেশ বড় অসুবিধে হল বাজার থেকে কিনে এনে এটা বেশিদিন সংরক্ষণ করা যায় না, ফ্রিজে বেশিদিন রাখলেও পানসে হয়ে যায়। সস বা পিউরি করে রেখে দিতে পারেন ডিপ ফ্রিজে কিন্তু সবচাইতে ভালো বুদ্ধি হল আপনার বাড়ির বারান্দায় একটু জায়গা বের করে নিয়ে একটা টবে টমেটো চাষ করা!

রোপণের সময় ও প্রস্তুতি-

মধ্য অগাস্ট থেকে শুরু করে নভেম্বরের শেষ পর্যন্ত টবে লাগাতে পারেন এই গাছ। টমেটো চাষ করতে হলে প্রথমেই আপনার যা লাগবে তা হল বেশ বড়সড় একটা টব। টমেটো গাছটা হয় বেশ ঝোপালো এবং এর মূলের প্রসার এবং বৃদ্ধির জন্য লাগে অনেকটা মাটি। এক থেকে দুই বর্গফুট টব অথবা পাঁচ গ্যালন পানি ধরে এমন পুরনো বালতি এর জন্য বেশ উপযুক্ত। এর পরে এই টবের নিচের অংশে কিছু পরিমাণ খোয়া বিছিয়ে নিন যাতে অতিরিক্ত পানি বের হয়ে যায়। এরপর টবের এক তৃতীয়াংশ মাটি দিয়ে ভরে দিতে হবে।
টমেটো গাছ জন্মানোর ক্ষেত্রে খেয়াল রাখুন এর মাটির ক্ষেত্রে। পুরনো টবের মাটি বা বাইরে থেকে নিয়ে আসা নোংরা মাটি ব্যবহার না করাই ভালো। এগুলোতে রোগজীবাণু থাকলে সহজেই অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে আপনার গাছটি। নার্সারিতে পাওয়া যেতে পারে টবের জন্য প্রস্তুতকৃত বিশেষ মাটি এবং ভার্মিকম্পোস্ট। এগুলো দিয়ে তৈরি করতে পারেন টবের মাটি।

রোপণ পদ্ধতি ও যত্ন- 

টমেটো লাগাতে পারেন দুইভাবে।
প্রথমত, আপনি নার্সারি থেকে চারা নিয়ে এসে আপনার বড় টবটিতে লাগিয়ে নিতে পারেন। সেক্ষেত্রে টবের মাটিকে নিড়ানি দিয়ে খুঁচিয়ে আগে থেকেই বেশ ঝুরঝুরে করে নিতে হবে। এরপর যে প্লাস্টিকে মোড়ানো অবস্থায় আপনার চারাটি কিনে এনেছেন সেটাকে সাবধানে মাটি থেকে ছাড়িয়ে নিতে হবে। লক্ষ্য রাখবেন যেন এতে চারাটির মূলের কোনও ক্ষতি না হয়। এরপর টবের মাটিতে বেশ গভীর গর্ত করে তাতে চারাটি বসিয়ে দিন ও মাটি ভরে দিন কাণ্ডের চারপাশে। এই চারাটিতে বেশ করে পানি দিতে হবে কিন্তু লক্ষ্য রাখুন জলাবদ্ধতার সৃষ্টি যেন না হয়।

দ্বিতীয় একটি উপায় হলো, টমেটোর বীজ থেকে গাছ গজানো। বাড়ির বাগানে বেশি করে টমেটো গাছ লাগাতে চাইলে এটি করতে পারেন। এর জন্য আপনাকে আগে ভালো জাতের বীজ কিনে নিতে হবে। এর পর টবের আর্দ্র মাটিতে ছিটিয়ে দিতে হবে বীজগুলোকে। অঙ্কুরোদ্গমের পর চারাগুলো বড় হতে শুরু করলে এগুলোকে রাখুন বেশ আলো আসে এমন স্থানে এবং কোনভাবেই যেন এগুলোতে পানির অভাব না হয় তার দিকে লক্ষ্য রাখুন। কমপক্ষে ৬ ঘণ্টা রোদ খাওয়াতে হবে আপনার গাছগুলোকে, ৮ ঘণ্টা হলে ভালো হয়।

১.আপনার গাছ যখন বেড়ে ওঠা শুরু করবে তখন টবের প্রায় পুরোটাই মাটি দিয়ে ভরে দিন। এতে গাছ ভালো বাড়বে।

২. টমেটো গাছের যত্নে প্রয়োজনীয় একটি পদক্ষেপ হলো টবে একটি খুঁটি পুঁতে তার সাথে গাছটিকে বেঁধে দেওয়া যাতে এর কাণ্ড বাঁকা না হয়ে যায়।

৩.এছাড়াও একে নেট দিয়ে ঢেকে দিতে পারেন, তাতে পোকামাকড় কম হবে।

৪.গাছের বয়স ছয় সপ্তাহ হবার পর প্রতি সপ্তাহে একটু করে সার দিতে পারেন গাছের গোড়ায়।

৫.বেশি শীত এবং গরমের সময় মাটিকে রক্ষা করতে দিতে পারেন শুকনো পাতা বা বাড়ির শাকসবজির উচ্ছিষ্ট খোসা দিয়ে। এতে সারেরও কাজ হবে এবং তাপমাত্রার নেতিবাচক প্রভাব থেকে গাছের মূল রক্ষা পাবে।

সূত্রঃ আপডেট ডট কম

বিস্ময়কর লাভজনক জারবেরা ফুল চাষ

Tuesday, April 17, 2018


টিস্যু কালচারের মাধ্যমে জারবেরা ফুলচাষ বিস্ময়কর লাভজনক। এক বিঘা জমিতে সারা বছর ধান, পাট, সবজিসহ অন্যান্য ফসলের চাষ করলে ৫০ হাজার টাকার বেশি পাওয়া যায় না। এ থেকে উৎপাদন খরচ বেরিয়ে গেলে কৃষকের হাতে লাভের পরিমাণ খুবই কম থাকে। কিন্তু জারবেরা চাষে সমপরিমাণ জমি থেকে খরচ বাদে পাওয়া যায় প্রায় পৌনে ছয় লাখ টাকা। এ কথা জানান, যশোরের গোল্ডেন সিড ফার্মের পরিচালক হাফিজুর রহমান পিন্টু। যশোর-বেনাপোল সড়কের পাশে সদর উপজেলার মালঞ্চিতে গোল্ডেন সিড ফার্ম ২০১১ সাল থেকে টিস্যু কালচারের মাধ্যমে জারবেরার চাষ করছে।

ফার্মের পরিচালক জানান, তিন শতক জমিতে জারবেরার চাষ করতে খরচ পড়ে প্রায় এক লাখ ৪০ হাজার টাকা। এর মধ্যে প্রতিটি চারার দাম ৩০ টাকা হিসেবে সাড়ে ৫০০ চারার দামই পড়ে ১৬ হাজার ৫০০ টাকা। এ ছাড়া রয়েছে সার, কীটনাশক, জমি তৈরি প্রভৃতির খরচ। প্রতিটি গাছে ৩৫টি করে ফুল ধরে। এ হিসেবে তিন শতকের ৫৫০টি গাছে ১৯ হাজার ২৫০টি ফুল ধরে। ১০ টাকা হিসেবে এই ফুলের দাম এক লাখ ৯২ হাজার ৫০০ টাকা। অর্থাৎ লাভের পরিমাণ ৫২ হাজার টাকা। হিসাব অনুযায়ী এক বিঘায় খরচ পড়ে ১৫ লাখ ৪০ হাজার টাকা। ফুল বিক্রি হয় ২১ লাখ ১৭ হাজার ৫০০ টাকা। প্রকৃত লাভ পাঁচ লাখ ৭৭ হাজার ৫০০ টাকা। দেশে সর্বপ্রথম জারবেরা ফুলের চাষ শুরু হয় ফুলের রাজধানী বলে খ্যাত যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালিতে। সেখানকার চাষিরা ভারত থেকে টিস্যু কালচারের চারা এনে চাষ করতেন। আমদানিকৃত ওই চারার প্রতিটির দাম পড়ত ৯০ টাকা করে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক গবেষক মতিউর রহমান রাজশাহীর আকাফুজি ল্যাবে দেশে সাশ্রয়ী মূল্যে টিস্যু কালচারের চারা উৎপাদনে মনোনিবেশ করেন। একই বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক প্রফেসর ড. এম মনজুর হোসেনের সার্বিক তত্ত্বাবধানে তিনি গবেষণায় সফল হন। এই চারার প্রতিটির দাম পড়ছে ৩০ টাকা করে। গবেষক মতিউর রহমান জানান, জারবেরা ফুলের বীজ থেকে চারা হয় না। মূলগাছের সাকার থেকে যে চারা হয় তার ফুলের উৎপাদন কম। মানসম্পন্নও নয়। এ কারণে বংশবৃদ্ধির জন্য টিস্যু কালচার প্রয়োজন। এই পদ্ধতিতে একসাথে অল্প সময়ে জীবাণুমুক্ত অধিক চারা পাওয়া যায়।

এই ফুলটি বহুবর্ষজীবী হওয়ায় একবার চারা রোপণ করলে বহু বছর ফুল পাওয়া যায়। তবে প্রতি বছর নতুন চারা লাগালে উৎপাদন বেশি হয়। হাফিজুর রহমান পিন্টু জানান, ফুল ফোটার পর গাছে ৩০ থেকে ৪৫ দিন পর্যন্ত সতেজ থাকে। আর তোলার পর সতেজ থাকে আট থেকে ১৫ দিন। এই ফুলের চাষ বৃদ্ধির লক্ষ্যে গোল্ডেন সিড ফার্ম ফুলচাষিদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছে। এ জন্য চার কাঠা জমিতে একটি প্রদর্শনী খামার করা হয়েছে। এখান থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে গদখালির ফুলচাষিরা টিস্যু কালচারের মাধ্যমে জারবেরার চাষ করে লাভবান হচ্ছেন। জারবেরা চাষে লাভের কথা স্বীকার করে গদখালি ফুলচাষি কল্যাণ সমিতির সভাপতি আবদুর রহিম বলেন, এখানকার চাষিরা এই লাভজনক ফুল চাষের প্রতি ঝুঁকছেন। সমিতিভুক্ত চাষিরা এবার ১৫ একরে জারবেরার চাষ করেছেন। জারবেরা সূর্যমুখী প্রজাতির। ফুল দেখতে সূর্যমুখীর মতোই। এর নান্দনিক সৌন্দর্য ফুলের জগতে এক আলাদা মাত্রা যোগ করেছে। বাংলাদেশে ৯ রঙের জারবেরার জাত আছে। এর মধ্যে লাল, সাদা, হলুদ, পিংক, মেজেন্ডা ও কমলা উল্লেখযোগ্য। যশোর জেলার মাটির পিএইচ (অম্লত্ব ও ক্ষারত্ব নির্দেশক) ৬ দশমিক ৫ থেকে ৭ দশমিক ৫ হওয়ায় জারবেরা চাষের উপযোগী। জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি ও জুন-জুলাই জারবেরা চাষের উপযুক্ত সময়। কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক হেমায়েত হোসেন জানান, টিস্যু কালচারের মাধ্যমে জারবেরা চাষ করলে ফুলচাষিরা আর্থিকভাবে লাভবান হবেন।

চাষ প্রণালী

আবহাওয়াঃ

উন্নতমানের ফুল উৎপাদনের জন্যে সাধারণতঃ গ্রীন হাউজে জারবেরার চাষ করা হয়। উজ্জ্বল সূর্যালোক জারবেরা গাছের বৃদ্ধি ও অধিক সময় ধরে ফুল উৎপাদনে সাহায্য করে। গ্রীষ্মকাল ছাড়া অন্যান্য সময় পূর্ণ সূর্যালোক জারবেরা চাষের জন্য উত্তম। গ্রীষ্মকালে উন্নতমানের ফুল উৎপাদনের জন্য ৩০% ছায়া প্রদান ও তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে জারবেরার চাষ করা হয়। প্রয়োজনের অতিরিক্ত ছায়া প্রদান করলে পাতা হালকা সবুজ বর্ণ ধারণ করে এবং ফুলের দন্ড খাট ও শক্ত হয়। সাধারণতঃ শীতকালে গাছে খুব তাড়াতাড়ি ফুল আসে। অন্যদিকে গ্রীষ্মকালে গাছে ফুলধারণ বিলম্বিত হয়।

রাত্রিকালীন তাপমাত্রা জারবেরা চাষে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে। সাধারণতঃ রাত্রিকালীন তাপমাত্রা ১৮ডিগ্রী- ২০ডিগ্রী সেঃ এর মধ্যে থাকলে রোপনকৃত চারা গাছ ১ মাসের মধ্যে শিকড় গজিয়ে উৎপান ধাপে পৌছায়। পরবর্তীতে তাপমাত্রা নামিয়ে ১৫ ডিগ্রি – ১৮ ডিগ্রি সেঃ এর মধ্যে আনা যেতে পারে। তাপমাত্রা ২৫ ডিগ্রি সেঃ এর উপর উঠতে দেয়া উচিৎ নয়। গ্রীন হাউজে উৎপাদনের ক্ষেত্রে আর্দ্রতা বেশী থাকলে বট্রাইটিস (Botrytis) রোগের প্রাদুর্ভব দেখা দিতে পারে। এ জন্য গ্রীন হাউজে জারবেরা উৎপাদনের ক্ষেত্রে দিনে ৭০% এবং রাত্রে ৮৫% আর্দ্রতা রাখা উচিত। গ্রীণ হাউসে বাতাস পরিসঞ্চালন এবং ভেন্টিলেশন থাকা আবশ্যক।

মাটিঃ
দ্রুত পানি নিষ্কাশনযোগ্য হালকা দো- আঁশ অথবা বেলে দো- আঁশ মাটি জারবেরা চাষের জন্য উত্তম। বেলে দো- আঁশ মাটিতে বাতাস চলাচল সুবিধাজনক এবং দীর্ঘ সময় জৈব পদার্থ অক্ষত থাকে। সাধারণতঃ জমিতে জৈব সার ও মাটির অনুপাত ৭০ : ৩০ হওয়া ভাল। মাটির পি.এইচ. ৫.৫- ৬.০ জারবেরা চাষের জন্য উপযোগী করে নিতে হবে।

বংশ বৃদ্ধিঃ
যৌন ও অযৌন উপায়ে জারবেরার বংশ বৃদ্ধি করা যায়। বীজ থেকে চারা উৎপা নে সময় বেশী লাগে। সাধারণতঃ সংকরায়নের মাধ্যমে নতুন জাত উদ্ভাবনের জন্য বীজ থেকে চারা উৎপাদন করা হয়। অযৌন পদ্ধতিতে ১টি বা ২টি চারা মূল গাছের গুচ্ছ থেকে বিভাজনের মাধদ্যমে রোপণ করে জারবেরার বংশ বিস্তার করা হয়। এ ছাড়া কাটিংয়ের মাধ্যমে চারা উৎপাদন করা যায়। এ জন্য বয়স্ক গাছে পানি সরবরাহ বন্ধ করে দেয়া হয় এবং সাথে সাথে পাতা ছেটে দেয়া হয়।ফলে কয়েকদিনের মধ্যে গাছে প্রচুর কুঁড়ির সৃষ্টি হয়। পরে কুঁড়িগুলি সাবধানে কেটে নিয়ে শিকড় উৎপাদনের জন্য লাগানো হয়। ৮-১২ সপ্তাহের মধ্যে এগুলি লাগানোর উপযুক্ত হয়। বর্তমানে বানিজ্যিক ভিত্তিতে জারবেরা চাষের জন্য টিস্যু কালচারের মাধ্যমে উৎপাদিত চারা ব্যবহার করা হয়।টিস্যু কালচারের মাধ্যমে উৎপাদিত চারা পোকা- মাকড় ও রোগ- বালাই মুক্ত এবং বয়স, আকার আকৃতিতে সমান তাকে বিধায় উন্নতমানের ফুল পাওয়া যায়।

সার প্রয়োগঃ
চারা লাগানোর কমপক্ষে এক সপ্তাহ আগে বেডের প্রতি ১০ বর্গ মিটারের জন্য ৬০ কেজি পঁচা জৈব সার, ১.১৫ কেজি ইউরিয়া অথবা ১ কেজি ক্যালসিয়াম এমোনিয়াম নাইট্রেট অথবা এমোনিয়াম সালফেট, ২.৫ কেজি ট্রিপর সুপার ফসফেট, ৫০০ গ্রাম মিউরেট অব পটাশ ও ৫০০ গ্রাম ম্যাগনেশিয়াম সালফেট প্রয়োগ করে ভালভাবে মাটিতে মিশিয়ে দিতে হবে। জারবেরা দ্রুত বর্ধনশীল উদ্ভিদ। সাধারণতঃ চারা লাগানোর ১০-১২ সপ্তাহের মধ্যে গাছে ফুল উৎপাদন শুরু হয়। এ জন্য জারবেরার জমিতে সুষম সার প্রয়োগ করতে হবে। প্রথম অবস্থায় চারার পাতায় ১% ইউরিয়া সারের দ্রবন স্প্রে করতে হবে। অতিরিক্ত নাইট্রোজেন প্রয়োগে গাছের পাতা বড় হয় এবং ফুলের সংখ্যা কমে যায়। মাটি অতিরিক্ত অম্লক্ষারীয় অথবা ক্ষারীয় হলে মাটিতে গৌণ উপাদানের বিশেষ করে লৌহ, ক্যালশিয়াম ও ম্যাগনেশিয়ামের ঘাটতি দেখা যায়। সে ক্ষেত্রে মাটিতে চুন অথবা অম্লক্ষারীয় সার যেমন অ্যামোনিয়াম সালফেট প্রয়োগ করে এ সমস্যার সমাধান করা যায়।

চারা লাগানোঃ
কাট ফ্লাওয়ার উৎপাদনের জন্য জমিতে অথবা টবে জারবেরার চাষ করা যায়। জমিতে ৩০-৪৫ সে.মি উচু এবং ১-১.২ মি. চওড়া বেড তৈরি করতে হবে। আন্তঃ পরিচর্যা এবং অন্যান্য কাজের সুবিধার জন্য দুই বেডের মাঝ ৫০ সে.মি জায়গা খালি রাখতে হবে। বেডের মাটি কালো পলিথিন দিয়ে ১-২ সপ্তাহ ঢেকে রেখে শোধন করে নেয়া ভাল। বেডে চারা সারিতে লাগানো হয়। তাই জাত ভেদে সারি থেকে সারির দূরত্ব ২০-৩০ সে: মি: এবং সারিতে চারা থেকে চারার দূরত্ব ২০-৩০ সে: মি: দেয়া হয়। দিনের ঠান্ডা ভাগে অর্থাৎ সকালে অথবা বিকেলে বেডে চারা লাগানো উচিৎ। চারা লাগানোর সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন কোন ক্রমেই চারার ক্রাউন বা মাথা মাটিতে ঢাকা না পড়ে। সেচ প্রয়োগ, পানি নিষ্কাশন, নিড়ানি এবং মালচিং এর সময়ও খেয়াল রাখতে হবে যেন কোনক্রমেই চারার ক্রাউন বা মাথা মাটিতে ঢাকা না পড়ে। চারা লাগানোর পর পরই ঝাঝরি দিয়ে হালকা সেচ দিতে হবে। প্রয়োজনে চারা লাগানোর পর ছায়ার ব্যবস্থা করতে হবে। তবে বর্তমানে বাণিজ্যিক চাষাবাদের জন্য টিস্যু কালচারের মাধ্যমে উৎপাদিত চারা বেশী ব্যবহার করা হয়। কারণ টিস্যু কালচারে উৎপাদিত চারার বয়স, আকার, আকৃতি সমান থাকে।

পানি সেচঃ
জারবেরা গভীরমূলী উদ্ভিদ বিধায় প্লাবন সেচ পছন্দ করে। প্রতিবার সেচের পর মাটি অবশ্যই মালচিং করতে হবে। এর ফলে মাটি বাহিত রোগের আক্রমন কম হবে এবং গাছে ফুলের পরিমান বেশী হবে। পানির অভাবে গাছ ঢলে পড়লে পরবর্তীতে ফুলের দন্ড চোট হয় এবং ফুলের মান কমে যায়। পানি সেচের সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন অতিরিক্ত পানি বেডে জমে না থাকে। সেচের পানি বেডে জমে থাকলে মাটি বাহিত রোগের আক্রমনে গাছ পঁচে যায় এবং মারাত্মক ক্ষতি সাধিত হয়। সাধারণতঃ শুষ্ক মৌসুমে সেচের পরিমান বেশী এবং বর্ষা মৌসুমে সেচের পরিমান কম লাগে।

ফুল উত্তোলনঃ
ফুল পূর্ণ প্রস্ফুটিত ও ডিস্কে দ্বিতীয় স্তরের ফুলে পরাগরেনু দেখ দিলে সংগ্রহের উপযুক্ত হয়। ফুর দন্ডের গোড়া ধরে আস্তে করে ঘুরিয়ে গাছ থেকে ফুল সংগ্রহ করা হয়। চাকু দিয়ে জারবেরার ফুল কেটে সংগ্রহ না করাই ভাল। ফুল সংগ্রহের সময় ফুল দন্ড যতদূর সম্ভব লম্বা থাকা ভাল। সংগ্রহের সাথে সাথে ফুল দন্ডের গোড়া পানিতে ডুবিয়ে রাখতে হবে।

ফলনঃ
সাধারণতঃ জাত ও চাষাবাভেদে ফলন কম বেশী হয়ে হয়। গ্রীনহাউজে প্রতি বর্গ মিটারে গড়ে ২৫০ টি এবং হেক্টরে ২৫,০০,০০০টি ফল উৎপাদন করা যায়। মাঠে চাষাবাদের ক্ষেত্রে উৎপাদন প্রায় অর্ধেক কমে যেতে পারে এবং ফুলের মানও হ্রাস পায়।

পোকা-মাকড়ঃ
১। সাদা মাছি ( Transparent fly )
গরম ও শুকনা মেওসুমে সাদা মাছি গাছের পাতা ও ফুলের রস চুষে মারাত্মক ক্ষতি করে। মেটাসিসটক্স (০.১%) অথবা ইন্ডোসালফান (০.১%) ব্যবহার করে মাছ পোকা দমন করা যায়।

২। পাতা সুড়ংকারী পোকা ( Leaf minor )
এ পোকার কীড়া পাতায় সুড়ং করে সবুজ অংশ খেয়ে ফেলে। আক্রান্ত পাতা কুকড়ে যায় এবং সূর্যের আলোর বিপরীতে ধরলে জারের মত অসংখ্য সুড়ং দেখা যায়। আক্রান্ত পাতা সংগ্রহ করে ধ্বংস করে ফেলতে হবে ফসলে পোকার আক্রমনের লক্ষন দেখা দিলে রগর (০.১%) অথবা পারমেথ্রিন (০.১%) সেপ্র করতে হবে।

৩। জাব পোকা ( Aphid )
জাব পোকা জারবেরার কচি পাতা ও ফুলের কুঁড়ির রস চুষে খায়। জাবপোকার আক্রমনে পাতা কুকড়ে যায় এবং ছত্রাক আক্রমণ করে। মেটাসিসটক্স (০.১%) অথবা মেরিক ( Merrick) (০.২%) হারে প্রয়োগ করে এ পোকা দমন করা যায়।

৪। মাকড় বা মাইট ( Mite )
উষ্ণ ও শুষ্ক আবহাওয়াই জারবেরায় মাকড়ের আক্রমণ বেশ হয়। মাকড়ের আক্রমণে কচি পাতার আকৃতি নষ্ট হয় এবং শেষে পাতা শুকিয়ে যায়। নুভক্রন (০.২%) অথবা ক্যালথেন (০.১%) সেপ্রর মাধ্যমে মাকড় দমন করা যায়।

৫। থ্রিপস ( Thrips )
অতি ক্ষুদ্র এ পোকা ফুলের কচি অংশ খেয়ে ফুল বিবর্ণ করে ফেলে। আক্রমণ তীব্র হলে অনেক সময় ফুলের কুঁড়ি ফোটে না অথবা ফোটলেও তা অস্বাভাবিক আকৃতির হয়। ম্যালাথিয়ন (০.১%) অথবা ডায়াজিনন (০.১%) নিয়মিত সেপ্র করে এ পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।

রোগ বালাইঃ
জারবেরা চাষে রোগ-বালাই মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে। সেজন্য চারা লাগানোর পূর্বে তৈরীকৃত বেড রাসায়নিক ব্যবহার করে অথবা কালো পলিথিন দ্বারা এক সপ্তাহ ঢেকে রেখে মাটি শোধন করে নিলে মাটি বাহিত রোগ বালাইয়ের প্রকোপ কম হয়। জারবেরার কয়েটি গুরুত্বপূর্ণ রোগের নাম,লক্ষণ ও প্রতিকার ব্যবস্থা দেয়া হলো।

১। ক্রাউন রট ( Crown rot )
মাটি বাহিত ছত্রাক ফাইটোপথোরা ক্রিপটোজেনা ( Phytopthora cryptogena) এ রোগের জন্য দায়ী। গাছের পাতা কালো বর্ণ ধারণ করে এবং আস্তে আস্তে ঢলে পড়ে। এ রোগ প্রতিরোধর উপায় হলো-

ক) রোগ প্রতিরোধী জাত ব্যবহার করা,
খ) বেডে প্রয়োজনের অতিরিক্ত সেচের পানি না দেয়া
গ) গাছের মুকুট বা পাতা যেন মাটির সংস্পর্শে না আসে সেদিকে খেয়াল রাখা
ঘ) সেচের পর বেডের মাটি মালচিং করে দেয়া এবং
ঙ) আক্রান্ত গাছের গোড়ার মাটি সরিয়ে ০.২% বিনোমিল ( Benomyl) অথবা রিডোমিল- এম, জেড ( Ridomil – M. Z) প্রযোগ করে এ রোগ দমন করা যায়।

২। গোড়া পঁচা রোগ ( Root rot)
এ রোগও মাটি বাহিত। পিথিয়াম ইরেগুলারিয়া ( Pythium irregularea) নামক ছত্রাক এ রোগের জন্য দায়ী। ক্রাউন রট রোগের জন্য সুপারিশকৃত প্রতিরোধ ব্যবস্থা এ রোগের জন্যেও প্রযোজ্য। এ ছাড়াও কপার অক্সি – ক্লোরাইড ( ০.৪%) অথবা ডায়থেন এম -৪৫ ( ০.২%) সেপ্র করে এ রোগ দমন করা যায়।

৩। স্পটেড উইল্ট ভাইরাস ( Spotted Wilt Virus)
এ ভাইরাসের আক্রমণে পাতায় হলুদাভ বাদামী রং ধারণ করে। এ রোগ দমনে ফুরাডান প্রয়োগ করতে হবে। এছাড়া আক্রান্ত গাছ তুলে ধ্বংস করে ফেলতে হবে। এ ছাড়া জাররেরা পাউডারি মিলডিউ, অলটারনারিয়া লীফ স্পট, সারকোসপোরা লীফ স্পট এবং বট্রাইটিস রট রোগে আক্রান্ত হতে পারে। যে কোন সিস্টেমিক ছত্রাকনাশক যেমন ব্যাভিষ্টিন, রিডোমিল অথবা বিনোমিল ০.১% হারে গাছে স্প্রে করে উপরোক্ত রোগ সমূহ দমন করা যায়।

সূত্রঃ আপডেট ডট কম

যেভাবে তৈরী করবেন কোকেডামা

Saturday, April 7, 2018



হাওয়াই বাগান কোকেডামা শিরোনামের আর্টিকেল যারা ইতিমধ্যে পড়ে ফেলেছেন তারা নিশ্চয়ই কোকেডামা সম্পর্কে একটা ধারণা হয়ে গেছে তবু বলে নিচ্ছি কোকেডামা কি? সহজ কথায় এটা জুলন্ত বাগানের একটা পদ্ধতি যেখানে নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ায় সিলিং কিংবা সমতল থেকে উপরে কোন কিছুতে গাছ ঝুলিয়ে রাখা হয়। সাধারনত বনসাই বানানোর জন্যে যেসব গাছ ব্যবহার করা হয় তা দিয়ে এই বাগান বানানো যায়। তবে অর্কিড দিয়ে কোকেডামা সম্ভব। আসুন দেখে নেয়া যাক কীভাবে কোকেডামা তৈরি করা যায়ঃ

প্রয়োজনীয় উপকরণঃ
  • প্রথমেই গাছ নির্বাচন। ছোট জাতের গাছ। মস সরাসরি সূর্যালোক সহ্য করতে পারেনা, তাই ছায়ায় বেড়ে উঠতে পারে এমন ইনডোর প্ল্যান্ট নির্বাচন করতে হবে। আমি ব্যাবহার করেছি ছোট ফার্ন, ঘাস, আর বেগুনী বর্ণের ফুলগাছ।
  • পিট মাটি (জৈব সার বিশিষ্ট পচা কালো মাটি, সাধারণত জলাধারের কাছে এ ধরণের মাটি পাওয়া যায়)
  • আকেডামা (বনসাই তৈরির জন্য ব্যাভহ্রত বিশেষ ধরণের পাথুরে মাটি অথবা একুরিয়ামের তলদেশে ব্যাবহার করা মাটি বিশেষ অথবা যে কোন ধরণের পাথুরে মাটি)
  • শুঁকনো মস
  • কেঁচি
  • তুলার সূতা
  • ঝুলানোর জন্য প্যাঁচানো সূতা, পাঁটের সুতা
  • দস্তানা
  • এক জার পানি
  • তাজা মস (পুরনো দেয়াল বা পচা কাঠ থেকে সংগ্রহ করতে পারেন)
কার্যপদ্ধতিঃ 
১। নির্বাচিত গাছের শিকড় থেকে সব মাটি আস্তে আস্তে উঠিয়ে ফেলতে হবে।
২। মাটি তৈরিঃ মাটি তৈরির জন্য (সাত (৭) ভাগ পিট মাটি এবং তিন (৩) ভাগ আকেডামার মিশ্রন তৈরী করতে হবে। পিট মাটি এবং আকেডামা একসাথে ভালোভাবে মেশাতে হবে। তারপর একে দুই হাত দিয়ে ধরে গোল বলের আকার দিতে হবে।
৩। বলটি এমনভাবে তৈরি করতে হবে যেন শেকড় মেলার জন্য পর্যাপ্ত জায়গা থাকে (গাছের শিকড়ের আকারে ছিদ্র করতে হবে)।
৪। একমুঠো শুঁকনো মস বা ঘাস বা খড় দিয়ে গাছের শিকড় গোলাকৃতির মত করে পুরোপুরি ঢেকে দিতে হবে।
৫। এরপর তুলার সূতা দিয়ে পুরোটা দুই তিন বার পেঁচাতে হবে।
৬। গাছ লাগানঃ এবার গোল বলের মাঝখানে একটা গর্ত করতে হবে। তারপর গাছটিকে সেখানে লাগাতে হবে। খেয়াল করতে হবে গর্তটা যেন শিকড়ের আকারে হয়।

৭। হুম!! এখন সবচেয়ে মজার পর্ব, মস বল তৈরির পালা। তাজা মস দিয়ে বাইরের পুরো আবরণটি ঢেকে দিতে হবে (কোন জায়গা যেন খালি না থাকে)। উপহারের জিনিষ যেভাবে মোড়ানো হয় বলটিকে প্যাঁচানো সুতা বা পাঁটের সুতা দিয়ে ঠিক একই ভাবে মোড়াতে হবে। আর ঝুলানোর সুবিধার জন্য সুতার একটি অংশ ইচ্ছানুযায়ী লম্বা রাখা যেতে পারে।

৮। ঝুলানোর পালাঃ ঝুলানোর জন্য অবশ্যই ছায়াময় স্থান নির্বাচন করা উচিত। এবার একটি হুক বা আংটার সাথে মস বলটিকে ঝুলিয়ে দিন।
৯। জল সেচনঃ প্রতিদিন সকালে একবার স্প্রে করার বোতল দিয়ে পানি দিতে হবে (যাতে শিশিরের মত একটা আদ্রতা তৈরি হয়)।
আকেডামা
শুঁকনো মস
তথ্যসূত্রঃ সৌখিন

বসন্ত বাগানে...

Friday, March 30, 2018

নীলমণি

নিষ্পত্র শিমুল, পলাশ, পারিজাতের ডালে যখন দু-একটি ফুল উঁকি দিতে শুরু করে, ধারেকাছে কোথাও কোকিল ডাকে, অবচেতন মন বুঝতে পারে বসন্ত দরজায় কড়া নাড়ছে। ধীরে ধীরে বদলাচ্ছে বাতাসের গতিপ্রকৃতি। বনে বনে, গাছে গাছে পৌঁছে যাচ্ছে ফাগুনের বার্তা। কচি পত্রপল্লবে সুশোভিত হচ্ছে বৃক্ষরাজি। বনে বনে পুষ্পসাজে সজ্জিত হবে বসন্ত বৃক্ষগুলো। পলাশ, পারিজাত, মহুয়া বা শিমুল টবে গুঁজে বারান্দায় বামন আকারে সাজিয়ে হয়তো রাখা যাবে, তাতে ফুলের নিশ্চয়তা নেই বললেই চলে। আপনি যদি বারান্দায় এক টুকরো বাগানে বসন্তের স্বাদ পেতে চান, তাহলে টবেও কয়েকটি গাছ রাখতে পারেন। এসব গাছের জন্য বাড়তি কোনো পরিচর্যার প্রয়োজন নেই। তবে প্রথমেই নিশ্চিত করতে হবে বারান্দায় পর্যাপ্ত রোদ রয়েছে কি না। টব প্রস্তুতের পদ্ধতি একই রকম। এবার দেখা যাক কোন কোন গাছ আমরা টবের জন্য নির্বাচন করব।

কুন্দ

প্রথমেই মাধবীলতার কথা বলা যেতে পারে। তবে মাধবীর কলম সংগ্রহ করতে একটু ঝামেলা হতে পারে। কারণ, প্রকৃত মাধবী নার্সারির চারা বিক্রেতারা চেনেন না। তা ছাড়া চারাও দুর্লভ। সবাই মধু মঞ্জরি লতাকেই মাধবী বলে চালিয়ে দিচ্ছে। মাধবীর সুগন্ধি ফুলগুলো ফোটার জন্য দু-এক বছর অপেক্ষা করতে হবে। তবে প্রথম দু-তিন বছর এ গাছের ডালপালা ছাঁটা যাবে না। তাহলে ফুল ফুটবে না। পরিচর্যা করতে হবে সঠিকভাবে।

সহস্রবেলি 

নীলমণির কলম প্রায় সব নার্সারিতেই পাওয়া যাবে। ফুল ফোটার জন্য পর্যাপ্ত রোদ ও জলসেচ করতে হবে। এ দুটি ফুল ফাল্গুনের প্রথম ভাগেই ফুটতে শুরু করবে। প্রথমটির রং পাঁশুটে সাদা, দ্বিতীয়টি গাঢ় নীল। এরা বহুবর্ষজীবী কাষ্ঠল লতার গাছ। বসন্তের বাগানে গুল্ম শ্রেণির কুন্দ ফুলও রাখা যেতে পারে। এটা ফুলবাগানকে আলোকিত করবে। বিখ্যাত কনকচাঁপা মাঝারি উচ্চতার গাছ হলেও এ গাছের সুবিধা হলো তিন-চার বছর বয়স থেকেই হলুদ-সোনালি রঙের ফুলগুলো ফুটতে শুরু করে।



নার্সারিতে এ গাছের পরিচয় পেস্তা বাদামের গাছ। চারা পাওয়া খুব অসম্ভব কিছু নয়। বসন্তে প্রথমে পত্রহীন ডালপালাজুড়ে অসংখ্য ফুলে ভরে ওঠে গাছ। তারপর উজ্জ্বল তামাটে রঙের কচি পাতাগুলো সেই সৌন্দর্যকে আরও মোহনীয় করে তোলে। একইভাবে বারান্দায় সহস্রবেলি থাকতে পারে। এ গাছের গুচ্ছবদ্ধ পাঁশুটে রঙের ফুলগুলো নজরকাড়া। সর্বশেষ আরেকটি ফুলের কথা বলা যেতে পারে। ফুলটির নাম হাপরমালী। বহুবর্ষজীবী সুদর্শন লতানো গাছ। সুগন্ধি ফুলগুলো দেখতে বাটির মতো। ফোটে অজস্র। কলম সহজলভ্য নয়। বড় নার্সারিগুলো থেকে পাওয়া যেতে পারে। এই সব কটি ফুলই আমাদের বন-পাহাড়ের স্থায়ী বাসিন্দা। তাই পরিচর্যার জন্য সাধারণ পদ্ধতিই যথেষ্ট। তবে পোকামাকড় যেন গাছের ক্ষতি করতে না পারে, সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে।

কনকচাঁপা 


তথ্যসূত্রঃ প্রথম আলো

নিমতেলে পোকা দমন

Tuesday, February 7, 2012


নারিকেল অর্থকরী ফসল হওয়ায় গাছটি দেশের সর্বত্রই দেখা যায়। গ্রামগঞ্জ, শহর-নগর সবখানেই লক্ষ্য করা যাচ্ছে আগের মতো এর ফলন হচ্ছে না। তা ছাড়া নারিকেলের গায়ে এক ধরনের ছোট ছোট দাগ দেখা যাচ্ছে। নারিকেল হচ্ছে ছোট এবং বিকৃত ধরনের। 'মুচি' অবস্থায় ডাব ঝরে যাচ্ছে। মুচির সবুজ অংশ এদের খাদ্য। এদের ব্যাপক আক্রমণেই মুচি ঝরে যায়। মুচি যখন ডাবে পরিণত হয় তখন ডাবের গায়ে এদের আক্রমণের চিহ্ন বোঝা যায়। আক্রান্ত ডাবে পানি কম তাকে। অনেক সময় ডাবে পানি থাকেও না। ক্ষতিগ্রস্ত হয় ডাবের মধ্যে থাকা শাঁস বা নারিকেল। তাই সঠিক সময়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা না নিলে নারিকেলের ফলন তো কম হবেই সেই সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত হবে ডাব কিংবা-নারিকেল। মাকড়নাশক দু'ভাবে গাছে প্রয়োগ করা যেতে পারে। এক. ছোট গাছে স্প্রের মাধ্যমে। দুই. বড় গাছে শিকড়ের মাধ্যমে। মাকড় নিয়ন্ত্রণ করার জন্য বিশেষজ্ঞরা রাসায়নিক নাশক ব্যবহার না করে জৈবনাশক ব্যবহারের জন্য পরামর্শ দেন। প্রতি লিটার পানির সঙ্গে এই তেল মেশাতে হবে। শিকড়ের মাধ্যমে মাকড়নাশক প্রয়োগ করার জন্য লাগবে পাঁচ হাজার পিপিএমের নিমতেল। প্রতিটি গাছের জন্য সাড়ে সাত মি.লি. এই তেল আর সমপরিমাণ জল একটি পলিথিন পাউচে ভরতে হবে। নারিকেল গাছের গোড়া থেকে আড়াই বা তিনফুট দূরে গর্ত খুঁড়লেই পাওয়া যাবে বেশকিছু জীবন্ত শিকড়। যে শিকড়টি পেনসিলের মতো মোটা এবং যার রং গাঢ় ঘিয়ের মতো সেই শিকড়ের মাথাটি কোনো ধারালো জিনিস দিয়ে তেরচা করে কাটতে হবে। এবার নিমতেলের দ্রবণভর্তি পলিথিনের পাউচের মধ্যে শিকড়টি ঢুকিয়ে মুখ বেঁধে গর্তে মাটি ভরে দিতে হবে। নারিকেলের ফলন ভালো পাওয়ার জন্য কেবল মাকড়নাশক প্রয়োগ করলেই হবে না। এর জন্য প্রয়োজন প্রতিবছরই বর্ষার আগে এবং বর্ষার পরে সার প্রয়োগ করাও জরুরি।

টবে শীতের ফুল

Wednesday, November 30, 2011


গ্রামে শীত আসে খেজুর রসের হাঁড়িতে চড়ে, আর নগরের শীত নামে রংবেরঙের ফুলের টবে চড়ে। ছোট পরিসরেই রকমারি সেসব ফুলকে জায়গা দিতে হয় টবের ভেতরে।
নগরের বিভিন্ন নার্সারিতে এখন নানা রকমের গাঁদা ফুলের চারা পাওয়া যাচ্ছে। গাঁদার সবচেয়ে আকর্ষণীয় হাইব্রিড ইনকা জাতের গাছ এখন ফুলসহ পাওয়া যাচ্ছে। ইনকা গাঁদা টবে লাগানোর জন্য খুবই ভালো। তবে এ ফুলের প্রস্ফুটনকাল অন্য জাতের গাঁদার চেয়ে কম। একটা গাছে দেশি বল গাঁদার যত ফুল ফোটে, ইনকার তত ফুল ফোটে না এবং ফুলও দেশি গাঁদার মতো অত দিন থাকে না।

জাম্বো গাঁদার গাছ খুব খাটো ও প্রচুর ডালপালা নিয়ে ছড়িয়ে বড় হয়, অনেক দিন ধরে প্রচুর ফুল ফোটে। টবে খুব ভালো হয়। জাম্বো গাঁদার ফুলের রং ইনকার মতো শুধু সরষে হলুদ, হলুদ বা কমলা নয়, খয়েরি বা মেরুন রঙে চিত্রিত। এই বৈচিত্র্যের জন্য জাম্বো গাঁদাকে অনেকেই পছন্দ করেন।
পুরোপুরি মেরুন রঙের ছোট ফুলের গাঁদা এ দেশে রক্তগাঁদা নামে পরিচিত, আসলে ওটা চায়নিজ গাঁদা। এটাও টবের জন্য ভালো, অনেক দিন ধরে প্রচুর ফুল পাওয়া যায়।

অন্য যত ফুল
শীতের ফুলের মধ্যে ডালিয়া ও চন্দ্রমল্লিকা অন্যতম। ডালিয়ার খাটো থেকে লম্বা—অনেক জাতের গাছ আছে। ছোট টবের জন্য খাটো গাছ ও বড় টবের জন্য লম্বা গাছ বেছে নিতে পারেন। ডালিয়ার কাটিং পলিব্যাগে বিভিন্ন নার্সারিতে পাওয়া যাচ্ছে। এগুলো কিনে টবের মাটিতে বসিয়ে যত্ন নিলে মাস খানেক পর থেকেই ফুল ফুটতে শুরু করবে এবং জাতভেদে মার্চ পর্যন্ত ফুল দেবে। চন্দ্রমল্লিকার অসংখ্য জাত রয়েছে। বড় ফুলের কোঁকড়ানো পাপড়ির স্নোবল জাতটি অত্যন্ত আকর্ষণীয়। চন্দ্রমল্লিকা ফুল অনেক দিন টবে ফোটা থাকে, ফুলও ফোটে অনেক। শীতের অন্যান্য ফুলের মধ্যে লাগাতে পারেন ইউরোপ থেকে আসা অ্যান্টিরিনাম, দক্ষিণ আফ্রিকার ডেইজি, মেক্সিকোর ন্যাস্টারশিয়াম, চীনের অ্যাস্টার, যুক্তরাষ্ট্রের ক্লার্কিয়া, পপি, লুপিন, ফ্রান্স থেকে আসা কারনেশন ও প্যানজি, ইতালির সিসিলির সুইটপি প্রভৃতি ফুলের গাছ। এসবই এখন আমাদের দেশে সুলভ। এমনকি বাহারি রূপের গাজানিয়া, পিটুনিয়া, ভারবেনা, ফ্লক্স, হলুদ পপি, স্যালভিয়া, ডায়ান্থাস, ক্যালেন্ডুলা, হেলিক্রিসাম, কসমস, জারবেরা ইত্যাদিও লাগাতে পারেন। এর সব ফুলই টবে লাগানো যায়। এমনকি কলকের মতো নীলরঙা মর্নিং গ্লোরি বা পার্বতী লতানো ফুল হলেও শীতে টবে লাগাতে পারেন। চারা লাগিয়ে টবের ভেতর কাঠি পুঁতে জিআই তারের রিং দিয়ে ছোট্ট মাচার মতো করে তাতে লতিয়ে দিলে সে গাছও দেখতে বেশ লাগে। পুরো শীতেই এর ফুল ফুটবে।

টবে ফুল ফোটানোর সহজ পাঠ
শীতের ফুল লাগানোর জন্য ৮ থেকে ১২ ইঞ্চি মাপের টবই যথেষ্ট। ছোট আকৃতির গাছ, যেমন—ডায়ান্থাস, জাম্বো গাঁদা, পিটুনিয়া, গাজানিয়া ইত্যাদি ছোট টবে লাগাতে পারেন। ডালিয়া, চন্দ্রমল্লিকা, ইনকা গাঁদা ইত্যাদি লাগাতে পারেন ১০-১২ ইঞ্চি টবে। টবের আকৃতি অনুযায়ী, মাটির সঙ্গে টবপ্রতি ১৫০ থেকে ২৫০ গ্রাম প্যাকেটের জৈব সার, কম্পোস্ট বা ভার্মিকম্পোস্ট মিশিয়ে টব ভরবেন। পলিব্যাগের চারা টবের মাঝখানে সোজা করে লাগিয়ে চারার গোড়ার মাটি দুই হাতের আঙুল দিয়ে চেপে শক্ত করে দেবেন। এরপর পানি দেবেন। টবে আর কোনো সার দেওয়ার দরকার হবে না। তবে গাছের বাড়-বাড়তি কম মনে হলে কুঁড়ি আসার আগেই আরও কিছু কম্পোস্ট বা জৈব সার টবের মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেবেন। জৈব সার কয়েক দিন পরপর অল্প করে গাছের গোড়ার চারদিকে দিয়ে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেবেন, অন্তত কুঁড়ি না আসা পর্যন্ত। টব রাখবেন রোদে, ছাদে বা ব্যালকনিতে। গাছে পানি দেওয়ার সময় শুধু গাছের গোড়ায় পানি না দিয়ে ঝাঁঝরি দিয়ে গাছের ওপর থেকে বৃষ্টির মতো গাছ-পাতা ভিজিয়ে নিয়মিত হালকা পানি দিন। এতে গাছ বেশি সতেজ হবে। ডালিয়া ও চন্দ্রমল্লিকা গাছে কাঠি পুঁতে ঠেস দেবেন। গাঁদা ফুলের আকার বড় করতে চাইলে প্রথম কুঁড়িগুলো নখ দিয়ে খুঁটে ভেঙে দিন। এতে ফুল বড় হবে এবং বেশি ফুল ফুটবে। ফুল শুকাতে শুরু করলে দ্রুত তা গাছ থেকে কেটে ফেলুন।

টব, সার ও চারার খোঁজ
ঢাকায় আগারগাঁওয়ে রোকেয়া সরণিতে ২০-২৫টি নার্সারি গড়ে উঠেছে, যেগুলোতে এখন শীতের মৌসুমি ফুলের পর্যাপ্ত চারা পাওয়া যাচ্ছে। ইনকা গাঁদার জন্য দেখতে পারেন আরণ্যক, খামারবাড়ী, আদর্শবন, তানজিলা, মাগুরা, গার্ডেনিয়া ইত্যাদি নার্সারি। সাদা গাঁদা ও ভার্মি কম্পোস্ট বা কেঁচো সার পাবেন কৃষিবিদ উপকরণ নার্সারিতে, চন্দ্রমল্লিকা ও স্নোবল পাবেন গ্রিন ওয়ার্ল্ড নার্সারিতে, গাজানিয়া ও স্যালভিয়া পাবেন মাগুরা নার্সারিতে, ডালিয়া পাবেন মমতাজ ও বৃষ্টি নার্সারিতে। শীতের প্রায় সব ফুলের প্রতিটি চারার দামই পলিব্যাগে ৬-১০ টাকার মধ্যে, তবে গাজানিয়া ও পিটুনিয়ার দাম ৩০ টাকা। টবে ইনকা গাঁদার ফুলসহ গাছ পাবেন ৪০-৮০ টাকার মধ্যে। প্যাকেটের কম্পোস্ট বা জৈব সার প্রতি কেজি ৪০ টাকা। মাটির টব ২০-৬০ টাকা, সিমেন্টের টব ৬০-৩০০ টাকা, পারটেক্স ব্র্যান্ডের প্লাস্টিকের পুনরায় ব্যবহারযোগ্য টব আট ইঞ্চি ৮০ টাকা, ১২ ইঞ্চি ১৭০ টাকা। পাবেন গ্রিনওয়ার্ল্ড নার্সারিতে। এ ছাড়া ফার্মগেটের কাছে খামারবাড়ীর পাশে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট চত্বরে ভোসড নার্সারিতেও শীতের ফুলের চারা ও সার পাবেন। সাভার ও ঢাকার বাইরের নার্সারিগুলোতে চারার দাম কিছুটা কম।

জাফরান ভেবে দইগোটা!

Wednesday, November 16, 2011


অনেক সময় নার্সারিতে দেখে ভালো লাগার চারাটি কিনে ফেলা হয়, এর পরিচয় না জেনেই। বিদেশি গাছের বেলায় তো প্রায়ই এমন ঘটে। আশ্চর্য ব্যাপার হচ্ছে, প্রকৃত নামের পরিবর্তে গাছটিকে যে নামে ডাকা হয়, সেই নামের গাছের সঙ্গে প্রকৃত গাছটির কোনো ধরনের সাদৃশ্য বা সম্পর্ক থাকে না।

এমন একটি গাছের নাম দইগোটা।একে আবার লটকনও বলে অনেকে। এই রঞ্জক উদ্ভিদটি এখানে ভুল করে জাফরান ভাবা হয়। কিন্তু আকার-আকৃতিতে গাছ দুটি একেবারেই আলাদা। আদতে জাফরান বেশ দুষপ্রাপ্য এবং নামীদামি সুগন্ধি। জানামতে, দেশে এখন পর্যন্ত জাফরান চাষের কোনো রেকর্ড নেই। বর্ষজীবী এই কন্দজ গাছ সাধারণত শীতের দেশেই জন্মে। সেখানকার পরিকল্পিত বাগানগুলোতে প্রাকৃতিকভাবে জন্মাতে দেখেছি।
ঢাকার কোনো পার্কে বেড়াতে গেলে দইগোটার গাছ দৃষ্টি এড়িয়ে যেতে পারে। কারণ, চোখে পড়ার মতো তেমন আকর্ষণীয় কিছুই থাকে না প্রায় সারা বছর। শুধু চিরুনির ফলার মতো খোলসওয়ালা লালচে রঙের কতগুলো ফল চোখে পড়ে গাছে। তা-ও আবার উপাদেয় কোনো ফল নয় বলে মানুষের উৎসাহ খানিকটা কম। তবে বর্ষার শেষভাগ থেকে হেমন্ত পর্যন্ত ঈষৎ গোলাপি রঙের ফুলগুলো ফুটতে থাকে।
লটকন বা দইগোটা (Bixa orellana) সারা দেশে রঞ্জক হিসেবেই চাষ হয়। কিন্তু দেশি ফল লটকা বা লটকনের সঙ্গেও এর কোনো সম্পর্ক নেই। ধারণা করা হয়, বীজের রং দই রাঙানোর কাজে বেশি ব্যবহূত হতো বলেই এমন নামকরণ। প্রাচীনকালে মানুষ যে কয়েকটি গাছ থেকে প্রাকৃতিক রং সংগ্রহ করত, দইগোটা তার মধ্যে অন্যতম। রঞ্জক উদ্ভিদ সম্পর্কে খোঁজখবর নিতে গিয়েই প্রথমে এ গাছ সম্পর্কে জানতে পারি। ঢাকায় রমনা পার্ক, বলধা গার্ডেন, বোটানিক্যাল গার্ডেনসহ কারও কারও ব্যক্তিগত সংগ্রহেও দেখা যায়।
এটি ক্রান্তীয় আমেরিকার প্রজাতি। সতেরো শতাব্দীর দিকে স্প্যানিশদের মাধ্যমে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে। গাছ ছোট, ঝোপাল, চার থেকে পাঁচ মিটার উঁচু ও চিরসবুজ। পাতা বড়। ফুল ফোটে শরৎ থেকে শীতের প্রথমভাগ অবধি। ফুল একসঙ্গে অল্প কয়েকটি ফোটে। দেখতে গোলাপি, ঈষৎ বেগুনি বা সাদাটে। পাপড়ির মাঝখানে হলুদ-সোনালি রঙের একগুচ্ছ পুংকেশর থাকে। ফল লালচে বাদামি, নরম কাঁটায় ভরা। বীজ লাল শাঁসে জড়ানো। এই বীজ থেকেই পাওয়া যায় রং।
এবার জাফরান প্রসঙ্গ। এরা পেঁয়াজের মতো পাতা ও কাণ্ডবিশিষ্ট বহুবর্ষজীবী গুল্ম। মাটির নিচে মূলে কন্দ ও অনেক শিকড় থাকে। অন্য নাম কুমকুম বা কুঙ্কুম। ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের বিভিন্ন দেশে এই গণের ৬০টি প্রজাতি রয়েছে। জাফরান (Crocus sativus) স্বাদে তেতো, ঝাঁজালো, পিচ্ছিল ও সুগন্ধময়। দামি রান্নায় ও সুগন্ধের জন্য পরিমাণমতো ব্যবহার করা হয়। ভালো জাফরান রক্তাভ-পীত রঙের এবং পদ্মগন্ধযুক্ত। প্রাচীনকাল থেকেই কাশ্মীরে এ ধরনের উৎকৃষ্ট মানের জাফরান জন্মে। তা ছাড়া ইরান, ইতালি, ফ্রান্স ও স্পেনেও এর ব্যাপক চাষ হয়।
খাদ্যদ্রব্য ছাড়াও দামি প্রসাধন সামগ্রী হিসেবে জাফরান ব্যবহার্য। প্রাচীনকালে জাফরান গায়ে মাখা হতো শরীরের সৌষ্ঠব বাড়ানোর জন্য। ত্বক এর গুণে লাবণ্যময় হয়ে ওঠে। এ ছাড়া নানা রোগেও জাফরানের বহুমাত্রিক ব্যবহার লক্ষ করা যায়। চড়া মূল্যের কারণে ইদানীং জাফরানের ব্যবহার অনেক কমেছে।
এবার নিশ্চয়ই আর জাফরান ভেবে অন্য কোনো গাছ নিয়ে বাড়ি ফিরবেন না।

তথ্য সুত্র: প্রথম আলো , তারিখ: ১৫-১১-২০১১

আমের মুকুলে ভরে গেছে আঙিনা

Friday, April 22, 2011


দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোর গ্রামগঞ্জে আমগাছ মুকুলে মুকুলে ভরে উঠেছে। সেই সঙ্গে বাতাসে ছড়াচ্ছে মুকুলের মৌ-মৌ গন্ধ। বাড়ির আনাচে-কানাচে এমন কোনো আমগাছ নেই যেখানে গাছে মুকুল দেখা যায় না। ম্যাংগো হুপার মুকুলের ক্ষতি না করলে এ বছর এ অঞ্চলে দেশীয় আমের ফলন ভালো হবে বলে আশা করা যায়। কিন্তু সামান্যতম সচেতনতার অভাবে এ এলাকার আম চাষিরা আমের বাম্পার ফলন থেকে বঞ্চিত হোন প্রতি বছর। অথচ সামান্য সচেতন হলেই আমরা আম উৎপাদনের সেই সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে আমের উৎপাদন বাড়ার পাশাপাশি পরিবারের পুষ্টি চাহিদা পূরণ করতে পারি। আরও পারি উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে বাণিজ্যিকভাবে আমের বাজারজাতকরণ ও পরিবারের আর্থিক উন্নয়ন ঘটাতে।

পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ও ফল বিশেষজ্ঞ ড. মাহবুব রব্বানী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, আম গাছের জেনেটিক বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এক বছর অন্তর অন্তর ফুল ও ফল ধারণ করে। অর্থাৎ এক বছর ফল ভালো হয় পরের বছর ফল কম হয়। গত বছর দক্ষিণাঞ্চলে আমের ছিল অফ-ইয়ার। গত বছর এ অঞ্চলে আমের ফলন ছিল না বললেই চলে। এ বছর দক্ষিণাঞ্চলে আমের অন-ইয়ার। যে কারণে এ বছর প্রতিটি আম গাছে মুকুল ধরেছে। ড. রব্বানী আরো বলেন, বর্তমানে প্রতি বছর আম গাছে যাতে আম ধরে সে জন্য চান্স সিডলিং এর মাধ্যমে উন্নত জাতের যেমন_ ফজলি, ল্যাংরা ও মোহন ভোগ প্রভৃতি আমের বাগান তৈরি হচ্ছে। এতে প্রতি বছরই মুকুল ও আম ধরে। বাউফল উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, দক্ষিণাঞ্চলের জেলাসমূহ বরিশাল, পটুয়াখালী, ভোলা, বরগুনা, পিরোজপুর ও ঝালকাঠীতে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে কেউ উন্নত জাতের আম বাগান তৈরি করে না। তবে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোতে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে উন্নত জাতের আমের বাগান তৈরি হয়। ভবিষ্যতে আবহাওয়া বিরূপ না হলে আমের বাম্পার ফলনই আশা করছি। এলাকার যেসব আম গাছে এখন মুকুল বের হচ্ছে অথচ ফোটেনি এমন গাছে প্রতি ১০ লিটার পানিতে ২ ছিপি (কর্ক) হারে রিফকর্ড / একতারা / ওস্তাদ / শিমবুস-এর যে কোনো একটির সঙ্গে প্রতি ১০ লিটার পানিতে ৪০ থেকে ৪৫ গ্রাম যে কোনো ধরনের ছত্রাক নাশক যেমন থিয়োভিট / রনোভিট/ এগ্রোভিট / নয়িন ইত্যাদি স্প্রে করা যেতে পারে। এরপর যখন আমের মুকুল ফুটে তা মোটর দানার আকার ধারণ করবে; তখন আমের অ্যানথার্ক নোজ বা কালো দাগ ধরা রোধে প্রতি ১০ লিটার পানিতে ১০ মিলি লিটার হারে ফলিকুর বা স্টিল্ট প্রয়োগ করা যেতে পারে। অবশেষে আম পাকার ঠিক আগে এক ধরনের মাছির আক্রমণে আমের গায়ে ছিদ্র দেখা যায়। আর ওই ছিদ্রে ওই সব মাছি ডিম পেড়ে যায়। আর তা থেকে এক ধরনের পোকা জন্মে। ওই পোকার আক্রমণে আম ঝরে পড়ে। ওই ঝরে পড়া রোধে আবার প্রতি ১০ লিটার পানিতে ২ ছিপি (কর্ক) হারে রিফকর্ড / একতারা / ওস্তাদ / শিমবুস-এর যে কোনো একটি স্প্রে করতে হবে। আমচাষি ভাইয়েরা যদি উপরি বর্ণিত পদ্ধতি মেনে চলেন তাহলে আমের বাম্পার ফলন নিশ্চিত সম্ভব হবে।

নওগাঁর কল্যাণপুরী মৌরী পান

Friday, December 17, 2010

ধান ও পানের জন্য দেশের মানুষের কাছে আলাদা পরিচিতি রয়েছে নওগাঁ জেলার। নওগাঁর সীমান্তঘেঁষা সাপাহার উপজেলার আইহাই ইউনিয়নের ছোট একটি গ্রামের নাম কল্যাণপুর। গ্রামটি ব্রিটিশ আমল থেকে কল্যাণপুরী মৌরী পানের জন্য বিখ্যাত। এ অঞ্চলে পান ব্যবসা বেশ লাভজনক হওয়ায় কৃষকরা অন্য ফসলের পাশাপাশি পানের বরজ স্থাপনে ঝুঁকে পড়েছে। এরই মধ্যে অনেকেই পান চাষ করে নিজের ভাগ্য পরিবর্তন করেছেন। ব্রিটিশ আমলে এলাকাবাসীর পানীয় ও ব্যবহার্যে পুকুরের পানিই একমাত্র ভরসা ছিল। তাই ওই এলাকায় অধিকসংখ্যক পুকুর খনন করা হয়েছিল। পরবর্তীতে পরিত্যক্ত পুকুরপাড়গুলোতে পানের চাষ বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করে। উপজেলার কল্যাণপুর, মির্জাপুর, ছাতাহার, সুকরইল, আশড়ন্দ, মধুইল, রসুলপুর, নওপাড়া, বামনপাড়াসহ আশপাশের এলাকায় প্রায় ১০০ একর জমিতে পানের বরজ রয়েছে। উঁচু জায়গায় ও পুকুর পাড়ে পানের বরজ তৈরি করা হলে তাতে ফলন ভালো হয় এবং খরা মৌসুমে সহজে সেচ দেওয়া যায়। এ উপজেলার প্রায় ৩০০টি কৃষক পরিবার ও কয়েকশ' কৃষি শ্রমিক পরিবার পানের বরজের ওপর নির্ভরশীল। এখানে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পান ব্যবসায়ী পান কিনতে আসেন।

পানচাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, একমাত্র পান চাষই তাদের উপার্জনের প্রধান উৎস। পান চাষে প্রচুর অর্থের দরকার হয়। কোনো কোনো কৃষক ঋণ করেও পান চাষ করে লাভবান হয়েছেন।

সাপাহার হাট, মধুইল হাট, আশড়ন্দ হাটে প্রতি সপ্তাহে পানের হাট বসে। এখান থেকে বিভিন্ন অঞ্চলে ব্যবসায়ীরা পান নিয়ে যান। মুনাফার দিক থেকে অন্য কোনো কৃষিপণ্য থেকে এত বেশি আয় সম্ভব নয়, যা পান চাষে সম্ভব। কল্যাণপুরের পানচাষি বাদেশ বর্মণ বলেন, পান চাষ তাদের পারিবারিক ব্যবসা। পান চাষ করেই তারা পরিবার-পরিচালনা করেন। তারা আর্থিকভাবে এখন সচ্ছল। আশড়ন্দ গ্রামের পানচাষি আবদুল মালেক ও মাইনুল হক বলেন, ব্যাংকে টাকা জমা রাখার চাইতে পানের বরজ অধিক নিরাপদ। তবে পানের বরজ করতে অনেক সময় টাকা পাওয়া যায় না। তারপর বরজ করতে হলে বেশি পরিচর্চা করতে হয়।

সাপাহার উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ কল্যাণপুর গ্রামে কৃষকদের মধ্যে বাস্তব অভিজ্ঞতা বৃদ্ধির পাশাপাশি আইসিএম কৃষক প্রশিক্ষণ স্কুল স্থাপন করেছে। এই স্কুলে এলাকার কৃষক পানসহ তাদের সব ধরনের ফসলের রোগবালাই প্রতিরোধে কি করতে হবে তার সঠিক পরামর্শ গ্রহণ করছে। পানচাষি আকবর আলী বলেন, বর্তমান সময়ে আধুনিক চাষ পদ্ধতিতে কৃষির উন্নয়নের দিকে সরকার বেশি গুরুত্ব দিলেও এ অঞ্চলের অর্থকরী কৃষিপণ্য পানের উৎপাদনের জন্য চাষিদের কোনো আধুনিক চাষপদ্ধতি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এছাড়া প্রয়োজনীয় উপকরণের অভাব ও মূল্যবৃদ্ধির কারণে পান চাষে ব্যয় বেড়ে গেছে। পানের জমিতে খৈল সার হিসেবে ব্যবহার করা হয় কিন্তু খৈল না পাওয়ায় এবং এর মূল্য বৃদ্ধির কারণে কৃষকরা পানের জমিতে নিজের ইচ্ছায় রাসায়নিক সার ব্যবহার করতে শুরু করে। ফলে প্রতি বছর পানের বরজে মড়ক লেগে পান গাছ পচে নষ্ট হয়ে থাকে। উপজেলা কৃষি অধিদফতরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সেলিম উদ্দীনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি উপজেলার পানচাষিদের সঠিক তালিকা ও স্থাপিত পানের বরজের প্রকৃত হিসাব দিতে ব্যর্থ হন। উপজেলা কৃষি বিভাগে এ সংক্রান্ত কোনো তথ্য-উপাত্ত নেই বলে জানান। এলাকার পানচাষিরা মনে করেন, সরকারিভাবে পান চাষে উন্নত প্রশিক্ষণ ও সহায়তা প্রদান করলে দেশ থেকে পান রপ্তানি বাড়ানো সম্ভব হবে।

তথ্য সূত্রঃ বাংলাদেশ প্রতিদিন, তারিখ: ১১-১২-২০১০

নতুন কুঁড়িতে ভরে গেছে পঞ্চগড়ের চা বাগান

Tuesday, November 30, 2010


পঞ্চগড় ইতোমধ্যে দেশের তৃতীয় চা অঞ্চল হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। একসময়ের পতিত গো-চারণ ভূমি ও দেশের সবচেয়ে অনুন্নত জেলা এখন চায়ের সবুজ পাতায় ভরে গেছে। সৃষ্টি হয়েছে চোখ জুড়ানো নৈসর্গিক সৌন্দর্য। দেশের বাজারসহ আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশ করেছে পঞ্চগড়ের চা। এখানকার অর্গানিক চা বিক্রি হচ্ছে লন্ডনের হ্যারোড অকশন মার্কেটে। রপ্তানি হচ্ছে দুবাই, জাপান ও আমেরিকায়। এ বছর চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৮ লাখ কেজি। চা বোর্ডের 'স্ট্র্যাটেজিক ডেভেলপমেন্ট পান ফর টি ইন্ডাস্ট্রি অব বাংলাদেশ ভিশন-২০২১' প্রকল্প গ্রহণ করায় এখানকার চাষিদের মধ্যে চা উৎপাদনের আগ্রহ বেড়ে গেছে। তেঁতুলিয়া থেকে দার্জিলিংয়ের দূরত্ব ৫০ কিলোমিটার। আর এখানে উৎপাদন হচ্ছে পৃথিবীর সেরা চা। ১৯৯৬ সালে তৎকালীন ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পঞ্চগড় সফরে এসে চা চাষের সম্ভাবনার কথা বলেন। অতঃপর ওই সময়ের জেলা প্রশাসক মো. রবিউল হোসেনের তত্ত্বাবধানে পরীক্ষামূলকভাবে চা চাষ করা হয়। প্রথমে টবে, পরে জমিতে চায়ের চাষ করা হয়। সে সফলতা থেকে পঞ্চগড়ে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চা উৎপাদন করা হয়। ২০০০ সালের দিকে তেঁতুলিয়া টি কোম্পানি ও কাজী অ্যান্ড কাজী টি এস্টেটসহ বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান চা চাষ শুরু করে। কয়বছরের মধ্যেই তেঁতুলিয়া উপজেলার বিস্তীর্ণ গো-চারণ ভূমি চায়ের সবুজ পাতায় ভরে যায়। সৃষ্টি হয় সবুজের সমারোহ। চা বোর্ডের পরামর্শ ও প্রযুক্তিগত সহায়তায় এগিয়ে আসে স্থানীয় ক্ষুদ্র চা চাষীরা। বাগান মালিকদের পাশাপাশি তারাও চাষ করে চা। পঞ্চগড়ে নীরবে ঘটে চা চাষের বিপ্লব। পঞ্চগড় চা বোর্ডের আঞ্চলিক কার্যালয়ের তথ্য মতে, বর্তমানে জেলার ১৬ হাজার একর জমি চা চাষের উপযোগী রয়েছে। এ পর্যন্ত চা চাষ সম্প্রসারিত হয়েছে দুই হাজার ২৫৫ দশমিক ৫৫ একর জমিতে। চা চাষ করছে ১৮২ জন স্মল গ্রোয়ার্স যার জমি ৫ একরের নিচে, ৫ থেকে ২০ একরের মধ্যে স্মল হোল্ডার্স ১১ জন এবং ২০ একরের ওপরে ১৯টি টি এস্টেট। এসব চা বাগানে প্রায় হাজার পাঁচেক নারী-পুরুষের কাজের সংস্থান হয়েছে। আগে যেখানে পুরুষ শ্রমিকরা পাথর উত্তোলন আর নারী শ্রমিকরা পাথর ভেঙে জীবিকা নির্বাহ করত। এখন নারীদের কোমল হাত দিয়ে তোলা হচ্ছে দুইটি পাতা একটি কুঁড়ি। বিশেষ করে দরিদ্র ও বঞ্চিত নারীদের জীবনে দুই বেলা দুই মুঠো ভাতের নিশ্চয়তা দিয়েছে।

এ এলাকার চা চাষের বিশেষত্ব হচ্ছে কৃষকরা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র চা বাগান গড়ে তুলছে। যা প্রান্তিক চাষিদের ভাগ্যোন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। জেলায় চা চাষ হওয়ায় চাষিদের ৯ মাসের আয়ের পথ তৈরি হয়েছে। হয়েছে স্থানীয় বেকার যুবদের কর্মসংস্থান। জমির দাম বেড়েছে কয়েক গুণ। বাগানগুলোকে কেন্দ্র করে আশপাশে গড়ে উঠেছে ক্ষুদ্র ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এছাড়া চা বাগান দেখার জন্য দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসছে পর্যটক। এতে জেলার চিত্র গত কয়েক বছর আগের তুলনায় পাল্টে গেছে কয়েক গুণ। বেড়েছে মাথাপিছু আয়ের পরিমাণ। সরকারি কোষাগারে যোগ হচ্ছে বিপুল পরিমাণ অর্থের।

চা বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালের মধ্যে চায়ের উৎপাদন ১০০ মিলিয়ন কেজিতে উন্নীত করা হবে। এর জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৭৬১ কোটি টাকা। পঞ্চগড়ে চা চাষ প্রক্রিয়াজাত কারখানা আছে তিনটি। বর্তমানে আরও একটির নির্মাণ কাজ চলছে। চা চাষি মতিয়ার রহমান জানান, কৃষকদের প্রয়োজনীয় কীটনাশক, সারসহ কৃষি উপকরণ সহজশর্তে দেওয়া হলে চা চাষের পরিধি অনেক বাড়বে। তাছাড়া তিনি চা পাতার মূল্য বৃদ্ধি করার দাবি জানিয়েছেন। তবে বাংলাদেশ চা বোর্ডের পঞ্চগড়স্থ আঞ্চলিক কার্যালয়ের উন্নয়ন কর্মকর্তা আমির হোসেন বলেন, সরকারের পক্ষে সব ধরনের কারিগরি সহায়তা, ভর্তুকি, ঋণের ব্যবস্থা ও প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক চাষিদের ঋণ সহায়তা দিচ্ছে।

তথ্য সূত্রঃ বাংলাদেশ প্রতিদিন, তারিখ: ২৭-১১-২০১০

মরিচের পোকা দমন ব্যবস্থাপনা


মরিচ বাংলাদেশের একটি নিত্যপ্রয়োজনীয় গুরুত্বপূর্ণ মসলা জাতীয় ফসল। এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এবং ফসফরাস রয়েছে। বাংলাদেশের প্রায় ১.৫০ লাখ হেক্টর জমিতে মরিচের চাষ হয় এবং মরিচের গড় উৎপাদন প্রায় ১.৩৮ টন/হেক্টর। মরিচ গাছ বিভিন্ন প্রকার পোকামাকড় দ্বারা আক্রান্ত হয়। এর মধ্যে মাইট একটি অত্যন্ত ক্ষতিকর পেস্ট। বর্তমানে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ব্যাপক হারে মাইটের আক্রমণ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এ পোকা গাছ থেকে রস শোষণ করে মরিচের মোট উৎপাদন এবং গুণগত মান কমিয়ে দেয়।

মাইটের বৈশিষ্ট্য : মাইট অত্যন্ত ছোট, সাধারণত হাত লেন্সের সাহায্য ব্যতীত দেখা যায় না। এ পোকা উপবৃত্তাকার, উজ্জ্বল, হলদে সবুজ বর্ণের। তবে মৃত মাইটগুলো হলদে বাদামি বর্ণের হয়ে থাকে। স্ত্রী মাইটের পেছনের অংশে লম্বালম্বি হালকা সাদা দাগ দেখা যায়। পূর্ণ বয়স্ক স্ত্রী মাইট লম্বয় প্রায় ০.২ মি.মি. এবং পুরুষ প্রায় ০.১১ মি.মি.। এর চার জোড়া সাদাটে পা আছে। পুরুষ মাইটের চতুর্থ জোড়া পা বর্ধিত এবং স্ত্রীর ক্ষেত্রে এটি খুবই ছোট আকৃতির। লার্ভা তিন জোড়া পা-বিশিষ্ট, প্রায় ০.১ মি.মি. থেকে ০.২ মি.মি. লম্বা ডিম থেকে বের হওয়ার পর লার্ভাগুলো বেশ লম্বা দেখায়, পরে স্ত্রী লার্ভা হলদে সবুজ বা ঘন সবুজ বর্ণের এবং পুরুষ লার্ভাগুলো হলদে বাদামি বর্ণ ধারণ করে। লার্ভাগুলো খুব আস্তে আস্তে চলাচল করে, খুব একটা দূরে যায় না।

ক্ষতির প্রকৃতি : লার্ভা এবং পূর্ণ বয়স্ক মাইট গাছের কোষ ছিদ্র করে রস শোষণ করে এবং বিষাক্ত পদার্থ নিঃসৃত করে। গাছে খাদ্য তৈরি এবং পানি স্বাভাবিক প্রবাহ বিঘি্নত হয়। পাতা সরু, ফ্যাকাশে, মোচড়ানো এবং নিচের দিকে বাঁকানো হয়। পাতা চামড়ার মতো হয়ে যায় এবং শিরাগুলো মোটা হয়। পাতা এবং কচি কাণ্ড লালচে বর্ণের হয়। ফুলের কুঁড়ি বাঁকানো এবং মোচড়ানো হয়। গাছের বৃদ্ধি বিঘি্নত হয়, কচি গাছের আকার ছোট হয় এবং বয়স্ক গাছ থেকে প্রচুর পরিমাণে ফুল ঝরে পড়ে। ফল বিকৃত, ক্ষতবিশিষ্ট, অপরিপক্ব এবং অসম আকৃতির হয়। ফলের উৎপাদন এবং বাজার মূল্য কমে যায়। সাধারণত নতুন পাতা এবং ছোট ফলে মাইট বেশি দেখা যায় কারণ এ পোকা শক্ত টিস্যু খেতে পারে না। লার্ভা এবং পূর্ণ বয়স্ক মাইটগুলো পাতার নিচের দিক খেতে বেশি পছন্দ করে। এ পোকা মরিচ ছাড়াও তুলা, বেগুন, পেয়ারা, লেবু জাতীয় ফসল, পাট, পেঁপে, আলু, টমেটো, আম, বরবটি, তিল, আঙ্গুরসহ বিভিন্ন ফসল এবং বিভিন্ন শোভা বর্ধনকারী গাছেও আক্রমণ করে থাকে।

জীবনচক্র : এ পোকার জীবনচক্রের চারটি ধাপ_ ডিম, লার্ভা, পিউপা (নিম্ফে) এবং পূর্ণ বয়স্ক। মাত্র ৪-৬ দিনে এ পোকা ডিম থেকে পূর্ণ বয়স্ক মাইটে পরিণত হয়। পূর্ণ বয়স্ক স্ত্রী মাইট নতুন বৃদ্ধিপ্রাপ্ত পাতার নিচে একটি একটি করে (প্রতিদিনে ২-৫টি) প্রায় ২০-৫০টি ডিম পাড়ে। এভাবে ৮-১৩ দিন ডিম দেওয়ার পর এ পোকা মারা যায়। ডিমগুলো অত্যন্ত ক্ষুদ্র, প্রায় ০.৭ মি.মি. লম্বা, ২-৩ দিন পর ডিম ফুটে লার্ভা বের হয়। এরা যৌন মিলন ছাড়াও ডিম দেয়, তবে সে ডিম থেকে শুধু পুরুষ বাচ্চা হয়। লার্ভাগুলো ২-৩ দিন খাওয়ার পর পিউপায় পরিণত হয়। পিউপাগুলো স্থির অবস্থায় থাকে। কোনো খাদ্য গ্রহণ করে না। এ ধাপে এর চার জোড়া পা থাকে। ২-৩ দিন পর পোকা পূর্ণ বয়স্ক মাইটে পরিণত হয়। স্থির স্ত্রী পিউপগুলো পুরুষ মাইটের কাছে খুবই আকর্ষণীয়। এ পোকা স্ত্রী পিউপাকে (নিম্ফ) বহন করে নতুন পাতায় নিয়ে যায়। ধারণা করা হয় পুরুষ মাইট স্ত্রী মাইটকে মিলন পূর্ববর্তী পাহারা প্রদান করে। যখন পিউপা ধাপ থেকে পূর্ণ বয়স্ক স্ত্রী পোকায় পরিণত হয় তখনই পুরুষটি এর সঙ্গে মিলিত হয়।

দমন ব্যবস্থাপনা : মরিচ উৎপাদনের জন্য ছায়ামুক্ত স্থান নির্বাচন করতে হবে। ফল সংগ্রহের সময় অত্যন্ত সতর্ক থাকতে হবে যাতে সংগ্রহকারীর কাপড় এবং শরীর দ্বারা মাইটগুলো আক্রান্ত গাছ থেকে অনাক্রান্ত গাছ বা ক্ষেতের মধ্যে ছড়াতে না পারে। বিভিন্ন অপোষক ফসলের সঙ্গে আন্তঃফসল করতে হবে এবং এর শস্য পর্যায়ে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। সেচ প্রয়োগের মাধ্যমে এর আক্রমণ কমানো সম্ভব।

তথ্য সূত্রঃ বাংলাদেশ প্রতিদিন, তারিখ: ২৭-১১-২০১০

গোলাপ

Monday, September 6, 2010

সাদা গোলাপ
গোলাপ এক প্রকারের গুল্ম জাতীয় Rosaceae পরিবারের Rosa গোত্রের কাঁটা যুক্ত কান্ড বিশিষ্ট গাছের ফুলএর পাতার কিনারাতেও ক্ষুদ্র কাঁটা রয়েছে গোলাপের আদি নিবাস এশিয়া মহাদেশে অল্প কিছু প্রজাতির আদি বাস ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা, ও উত্তরপশ্চিম আফ্রিকা মহাদেশে

লাল গোলাপ
ফুলের রানী গোলাপের সৌন্দর্য ও সুবাসের জন্য চাহিদা রয়েছে সারা বিশ্বজুড়ে| ফুলের জগতে বর্ণ-গন্ধ আভিজাত্যে এর সমাদরই সব চেয়ে বেশী|রোম সম্রাট নিরো আর মিসরের সুন্দরী ক্লিওপেট্রারও প্রিয় ছিল গোলাপ নিরো তাঁর প্রাসাদের এমন কোনো জায়গা ছিল না যেখানে গোলাপগাছকে ঠাঁই দেননি ঘরের মেঝেতে গোলাপের পাপড়ি ছিটিয়ে রাখতেন সারাক্ষণ, গোলাপের সুরভি নেওয়ার জন্য অতিথি মার্ক অ্যান্টনির আগমনে মিসরের রানি ক্লিওপেট্রা তাঁকে তাঁর হাঁটু পর্যন্ত গোলাপ বিছিয়ে দিয়ে অভিবাদন জানিয়েছিলেন সেসব আজ অলীক কল্পনার মতোই

গাঢ় মেরুন গোলাপ
গোলাপের আছে অসংখ্য জাত প্রায় ১০০ প্রজাতির বিভিন্ন বর্ণের গোলাপ ফুল রয়েছে এর কোনোটা বুনো, ছোট ছোট প্রচুর ফুল ফোটে কোনোটার ফুল অনেক বড় এগুলো হাইব্রিড ‘ট্রি’ শ্রেণীর কোনোটার গাছ লতানো, কোনোটার ঝোপালো শীতে ফোটার জন্য আশপাশের নার্সারিতে গোলাপি(গ্ল্যাডিয়েটর), গাঢ় গোলাপি(ফাস্টরেড), লাল(খৃশ্চান ডিয়ার), মেরুন(মন্টেজুমা), খয়েরি, ঘিয়া, হলুদ, সাদা, দুইরঙা, মিশ্রবর্ণা অনেক রকমের গোলাপ পাবেন যেহেতু গোলাপ ফোটে শীতকালে তাই তীব্র শীতে অনেক সময় এদের বর্ণ খয়েরী বা কালো হয়ে যায়

বুনো গোলাপ
খয়েরী গোলাপ
কলম গোলাপ টবেই লাগানো যায়টবের জন্য ছোট গাছবিশিষ্ট মিনিয়েচার শ্রেণীর গোলাপই ভালো এতে চাষ ও যত্ন করতে সুবিধা হয়, প্রদর্শনীতেও নেওয়া যায় সহজে এসব শ্রেণীর গোলাপ কলম লাগানোর জন্য বড় টবের দরকার নেই, আট থেকে ১০ ইঞ্চি মুখের টব হলেই চলবে কিন্তু হাইব্রিড টি এবং ফ্লোরিবানদা শ্রেণীর গোলাপের জন্য চাই বড় মুখের টব, যার মুখের ব্যাস ১২ ইঞ্চি বা তার বেশি মাটির টবই ভালো

মিনিয়েচার গোলাপ
গোলাপের জন্য সার-মাটি অন্য ফুলের মতো নয়, একটু আলাদা মাটি তৈরির আগে সার জোগাড় করতে হবে পচা গোবর বা প্যাকেটজাত জৈব সার, কাঠের ছাই, পাতা পচা সার বা পচা আবর্জনা সার অথবা ফেলে দেওয়া চায়ের পাতি টবের মাটিতে মেশানো যেতে পারে খৈল দেওয়া যায়, তবে খৈল দিলে পিপড়ার উপদ্রব হতে পারে, ওরা শিকড় নষ্ট করে দেয় টবে কোনো রাসায়নিক সার দেওয়ার দরকার নেই জমির গর্তে লাগানোর অন্তত ১০ দিন আগে জৈব সারের সঙ্গে দুই-তিন চাচামচ করে টিএসপি ও এমপি সার মিশিয়ে দিতে পারেন তিনভাগ দো-আঁশ মাটির সঙ্গে একভাগ জৈব সার ও একভাগ কাঠের ছাই মিশিয়ে টবের জন্য সার-মাটি তৈরি করতে পারেন

বেগুনি গোলাপ
টবের ঠিক মাঝখানে গোলাপের কলম লাগিয়ে হালকা সেচ দেবেন লাগানোর পর টবসমেত গাছটিকে দিনকয়েক ছায়ায় রাখতে হবে এ সময় কিছু পাতা ঝরিয়ে দিতে পারেন এতে কলম দ্রুত বেঁচে উঠবে নতুন পাতা ছেড়ে গাছ বাড়তে শুরু করলে রোদে বের করে দিতে পারেন শীত শেষে যখন গাছে নতুন ডালপালা গজানো শুরু করবে, সে সময় অল্প করে ইউরিয়া সার (এক চিমটি সার প্রতি লিটার পানিতে গুলে) গাছের গোড়ায় দিতে পারেন এতে গাছ দেখতে ভালো হবে, বাড়বে ভালো তবে সার বেশি হলে ক্ষতি হবে আজকাল বাজারে বিভিন্ন রকমের ট্যাবলেট সার পাওয়া যাচ্ছে দুটি সার বড়ি কিনে গাছের গোড়ার মাটিতে দুই ইঞ্চি গভীরে পুঁতে দিতে পারেন এটা দিলে এক বছরের মধ্যে আর কোনো সার দিতে হবে না মাঝেমধ্যে অল্প করে চায়ের পচা পাতি টবের ওপরের মাটি হালকা করে নিড়িয়ে তার সঙ্গে মিশিয়ে দিতে পারেন টবের মাটি যাতে একবারে শুকিয়ে না যায় সেদিকে খেয়াল রাখবেন নিয়মিত সেচ দেবেন বেয়াড়া ডালপালা অবশ্যই ছেঁটে দেবেন জুন আর সেপ্টেম্বরে গোলাপগাছ ছাঁটতে পারেন না হলে ভালো ফুল ফুটবে না দুই-তিন বছর পর টবের মাটি পুরো বদলে দেবেন পুরোনো মাটি রাখলে তাতে ফুল ভালো হবে না তবে আমার পরামর্শ হলো—একঘেয়েমি কাটাতে শুধু মাটি বদল নয়, নতুন জাতের অন্য গোলাপের কলম এনে লাগাতে পারেন ঠান্ডা কমে এলে ফেব্রুয়ারি থেকেই গোলাপ বাগানের কাজ শুরু করতে পারেন তবে বর্ষাকালের আগে লাগানো ভালো ওই সব গাছে আগামী শীতজুড়ে প্রচুর ফুল ফুটবে

মিশ্রবর্ণা গোলাপ
গোলাপের খোঁজ:
কৃষিবিদ উপকরণ নার্সারি, কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট চত্ব্বর, ফার্মগেট, ঢাকা। ফোন: ০১৮৯১৯৪৩০৩।
ভোসড নার্সারি, গ্রিনফিঙ্গার নার্সারি, এগ্রিটেক, কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট চত্বর, ফার্মগেট, ঢাকা।
ডালিয়া নার্সারি, কেডিএ আউটার বাইপাস রোড, সোনাডাঙ্গা, খুলনা। ফোন: ০১৭১৪০৫৭৭৮৩
রাঙাবন নার্সারি, সাভার বাসস্ট্যান্ড, সাভার, ঢাকা

হলুদ গোলাপ
গোলাপের চাহিদার কারণে একে বাণিজ্যিকভাবেও চাষাবাদ করা হয়আতর শিল্পেও রয়েছে এর বহুল ব্যবহার ঢাকার খুব কাছেই সাভারের তুরাগ নদীর তীরে সাদুল্লাপুরে হয় গোলাপের বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদ

তিকিলা

Tuesday, August 31, 2010


টাকিলা , টেকিলা অথবা তিকিলা একটি মেক্সিকান জাতীয়তার আইকন , মেক্সিকান জাতীয়তার প্রাইড এন্ড কালচার । অনেকে মেক্সিকানরা বলেন ইট'স দ্যা অনলি প্রোডাক্ট দ্যাট আইডেন্টিফাইস আস এজ এ কালচার । টাকিলা শব্দটা androgynous , এল টাকিলা এবং লা টাকিলা দুই ভাবেই বলে , তবে মেসকুলিন ফর্মে বেশী উচ্চারিত হয় । মেক্সিকোর Jalisco প্রদেশের টাকিলা শহর এবং তার আশপাশে ( প্রায় চল্লিশ মাইলের বেল্ট ) মেক্সিকো সরকারের কড়া নযরদারীতে নিদৃস্ট স্ট্যান্ডার্ডের ভিত্তিতে টাকিলা উতপাদিত হয় । agave plant থেকে Agave পিনাস সংগ্রহ করা হয় ( সাধারনতঃ ৭/৮ বছর বয়স )।এই agave প্লান্টের চাষ , রক্ষনাভেক্ষন এবং হারভেস্ট সবই ওল্ড ফ্যাশন অর্থাৎ কোন মডার্ন টেকনোলজিব্যাবহার করা হয়না । বেশী সান লাইটের জন্য agave plant পশ্চিম মুখি করে রোপন করা হয় । এই agave প্রথমে মাটির গর্তে পোড়ানো হয় পরে পানির সাথে মিশিয়ে গ্রাইন্ডিং করা হয় । এইভাবে প্রথম এবং দ্বিতীয়বার মন্ড থেকে নির্ঝাস ডিস্টিল করা হয় । প্রথমে ওক ব্যারেল পরে স্টেনলেস স্টিল ব্যারেলে রাখা হয় । আমরা সাধারনতঃ টাকিলা বিয়াঙ্কো (সাদা) এবং টাকিলা গোল্ড দুই ধরনের টাকিলা বাজারে পাই । বিশ্বজুড়ে আজ টাকিলার জনপ্রিয়তা । বিশেষ করে নিনটেন্ডো জেনারেশন ডিসকোতে গেলে টাকিলা সট নেবেই এবং অনেকর কাছে টাকিলা পারফেক্ট ওয়ার্ম আপ শট । ২০০৪ সালে মেক্সিকো সরকার কোয়ালিটি কন্ট্রোলের দোহাই দিয়ে আমেরিকায় ওক ব্যারেলের পরিবর্তে বোতলজাত করে টাকিলা এক্সপোর্ট অরার জন্য এক অধ্যাদেশ জারি করে এবং এই অধ্যাদেশ আমেরিকার সাথে মেক্সিকোর ট্রেড ওয়ার শুরু হয় । পরে নাফতা সন্মেলনে আমেরিকান প্রেসিডেন্টের অনুরোধে মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট অধ্যাদেশ তুলে নেন এবং আমেরিকান মিডিয়া ঐ সন্মেলনকে টাকিলা সন্মেলন নাম দেয় ।Worms in tequila ? মেক্সিকান সরকার টাকিলার জন্য যে সব ইনগ্রিডিয়েন্টস এপ্রুভ করেছে তার মধ্যে Worm নেই কিন্তু জেনেরিক টাকিলা যা Jalisco প্রদেশের অন্যান্ন শহরে তৈরি হয় সেখানে প্রতি বোতলে একটা করে Worm দেয়া হয় । agave plant এ একধরনের Worm পাওয়া যায় যা টাকিলা প্রসেসিং এর সময় মেল্টেড হয় এবং অনেকে মনে করে এইসব Worm এর জন্যই টাকিলার স্বাদ অনেক বেশী । জেনুইন agave Worm দেখতে উজ্জ্বল কোরাল , কিন্তু বোতলে দেয়ার কিছুদিন পর পিংক আকার ধারন করে আবার কেউ কেঊ সাদা Worm ব্যাবহার করে । এই Worm সহ টাকিলা শট নেয়ার জন্য ক্রেজি এবং ওয়াইল্ড ড্রিংকারের অভাব নেই । টাকিলা Worm খাওয়ার জন্য নিরাপদ । এই Wormকে ডিপ ফ্রাই করে স্পাইসি ছালসা সস দিয়ে খাওয়া হয় । অনেক ব্র্যান্ডের টাকিলা বাজারে আছে কিন্তু Jose Cuervo ( হোজে কুয়েরবো ) নুয়েমেরো উনো ( নাম্বার ওয়ান ) । প্রচন্ড সর্দি কাশিতে টাকিলা শট খুব কাজে লাগে । টাকিলা দিয়ে বানানো প্রায় প্রতিটি ড্রিংকের সাথে ট্রিপলসেক নামে একটা মিস্টি লিকার এড করে । পান্তা ভাতের সাথে যেমন নুনের রিলেশন তেমনি টাকিলার সাথে ট্রিপলসেকের রিলেশন । ট্রিপলসেকের মুল ইনগ্রিডিয়েন্টস আখ ।এবার আসুন আমার প্রিয় কিছু টাকিলা ককটেলের কথা বলি । প্রথমেই মারগারিতার কথা বলি । আপনী দুই ভাবে মারগারিতা এনজয় করতে পারেন , নরমাল উইথ আইস এবং ফ্রোজেন । আপনী যদি শ্লো ড্রিংকার হন তাহলে একটা ফ্রোজেন মারগারিতা নিয়ে ২/৩ ঘন্টা পার করে দিতে পারেন । সাধারন বারে বারটেন্ডার ব্লেন্ডারে আইস এবং এল্কোহল এক সাথে ব্লেন্ড করবে। আর মেক্সিকান বারে যান তাহলে মেশিনে তৈরী ফ্রোজেন মারগারিতা পাবেন । নরমাল কিম্বা ফ্রোজেন যে ভাবেই চান উইথ সল্ট বলতে ভুল করবেননা কারন আমাদের মত ট্রপিক্যাল কান্ট্রির ড্রিংকার সল্ট ছাড়া টাকিলা খেতে পারবেনা ।টাকিলা সানরাইজ আমার দ্বিতীয় পছন্দ। এছাড়া টাকিলার কিছু আপ স্কেল ড্রিংকস এর নাম দিলাম যা আপনারা ট্রাই করে দেখতে পারেন । ক্যাকটাস , বর্ডার ক্রসিং , ক্যালিফোর্নিয়া স্কাই , ডিভাইন প্লেজার ,দি এক্সপ্লোরার , গালফ অব মেক্সিকো ,লা বোম্বা ,মাফিয়া , নিউ ইয়র্ক স্কাই লাইন, ওলমেকা গোল্ড, সাউজা-ব্লান্কো, সাউজা- এক্সট্রা গোল্ড, কাজাদোরেস রেপোসাদো, হেরাদুরা রেপোসাদো ।

ফণিমনসা


ফণিমনসা মূলত উষ্ণ অঞ্চলের উদ্ভিদ- যা ক্যাকটাস নামে বেশি পরিচিত। সব প্রজাতির ক্যাকটাসে ফুল হয় না।বিশেষ প্রজাতির ক্যাকটাস গাছে বছরে মাত্র দু’বার দৃষ্টিনন্দন ফুল ফোটে।

ফুল চাষ আয়বর্ধক কৃষিপণ্য

Saturday, August 21, 2010


ফুল বিশ্বের মানুষের কাছে অতি প্রিয় এক বস্তু। ফুলকে সবাই ভালবাসে। আগে আমাদের দেশে ফুলের তেমন কদর ছিল না। বর্তমানে ফুলের চাহিদা অনেক বেশি। মানুষ এখন বিয়ের গাড়ি সাজাতে, গুণীজনদের বরণ করে নিতে, বিয়ে বাড়ি সাজাতে, জন্মদিনের অনুষ্ঠানে, পূজা-পার্বণে, গায়ে হলুদে, একুশে ফেব্রুয়ারিতে, সভা-সমিতি ও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ফুলের ব্যবহার আগের চেয়ে অনেক বেড়ে গেছে। বর্তমানে চাহিদার আলোকে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে ফুল চাষ করে লাভবান হওয়া খুবই সহজসাধ্য ব্যাপার। আমাদের দেশে বিভিন্ন ফুলের জন্মে যেমন- গোলাপ, গাঁদা, চামেলী, বেলি, জুঁই, শেফালি, রজনীগন্ধা, গন্ধরাজ, গ্লাডিওলাস, শেফালি, দোপাট্টি, হাসনা-হেনা, চন্দ্রমলি্লকা, ডালিয়া, রঙ্গন, দোলনচাঁপা, কনকচাঁপা, অপরাজিতা, মৌ-চণ্ডাল, টগর, মর্নিংরোজ, জবা, কসমস, মালতি, কামিনী ইত্যাদি। এর ভেতরে কিছু আছে বর্ষজীবী এবং কিছু মৌসুমী।
কোন কোন ফুল এমনিতেই জন্মে আবার কোন কোন ফুলের চাষ করতে হয়। আমাদের দেশে বিভিন্ন জাতের গোলাপ, রজনীগন্ধা, গাঁদা, রঙ্গন, গ্লাডিওলাস ইত্যাদি খুলনা ও যশোরসহ কয়েকটি অঞ্চলে বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে। অর্থনৈতিকভাবে রাখছে গুরুত্বপূর্ণ অবদান। বেকাররা পাচ্ছে কাজ।

মাত্র ২৫ বছর আগের কথা। এখানকার অধিকাংশ মানুষই ভারত থেকে চোরাচালানী করে বিভিন্ন ধরনের ফুল আনতো আমাদের দেশে। এই ফুল ঢাকার বিক্রেতাদের কাছে বিক্রি করে তারা মোটা অংকের টাকা লাভ করতো। এথন বাংলাদেশে ই হচ্ছে বাণিজ্যিকভাবে ফুলের চাষ।

রোপণের সময়:
অধিকাংশ ফুলের বীজ, চারা, কলম বা কন্দ অশ্বিন থেকে অগ্রহায়ণ পর্যন্ত রোপণের উপযুক্ত সময়।

জমি নির্বাচন:
এমন জমি নির্বাচন করতে হবে যেখানে পর্যাপ্ত আলো-বাতাস পায়। উঁচু দো-আঁশ মাটি ফুল চাষের জন্য উপযোগী। মনে রাখতে হবে, ফুল চাষের জন্য জমি নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বাগানের আকার-আকৃতি মানানসই হলে ভাল দেখায়।

বেড়া দেয়া:
গবাদি পশুর বা অবাঞ্ছিত আক্রমণ থেকে ফুল গাছকে বাঁচাতে হলে শক্ত বাঁশের/কাঁটাতার/লোহার বেড়া দিতে হবে। লক্ষ্য রাখতে হবে গরু-ছাগল যেন সে বেড়া ভেঙ্গে না ফেলে।

জমি তৈরি ও চারা রোপণ:
জমির পরিমাণ বেশি হলে বিভিন্ন জাতের ফুলের জন্য আলাদা আলাদা জায়গা ভাগ করে পরিকল্পনা মাফিক (নিয়ম মাফিক) চারা রোপণ করতে হবে। কন্দ, চারা বা কলম রোপণের ২০/২৫ দিন আগে জমি ভালভাবে কুপিয়ে উপযুক্ত ও পরিমিত সার যেমন- পচা গোবর, টিএসপি, হাড়ের গুঁড়া, এম,পি, ইউরিয়া, খৈল, চা-পাতির উচ্ছিষ্টাংশ, ছাই ইত্যাদি মিশিয়ে মাটি ঝরঝরে করতে হবে। সার প্রয়োগে জৈব সারের প্রাধান্য দেওয়া উচিত। সব সময় স্বাস্থ্যবান ও নিরোগ চারা বা কন্দ লাগাতে হবে। চারা লাগিয়ে উপরে চাপ না দিয়ে পাশের মাটি চাপ দিয়ে শক্তভাবে চেপে দিতে হবে এবং প্রয়োজনমত পানি দিতে হবে। চারাভেদে খুঁটি পুঁতে চারার গায়ে বেঁধে দিতে হবে।

প্রাপ্তিস্থান:
শহরে বা গ্রামে বর্তমানে ভাল নার্সারিতে উন্নতজাতের বীজ, কলম ও চারা পাওয়া যায়। কৃষি সমপ্রসারণ অফিসে যোগাযোগ করলে চারার সন্ধান পাওয়া যাবে।

পরিচর্যা:
আগাছা নিড়ানী দিয়ে তুলে ফেলতে হবে এবং গোড়ার মাটি মাঝে-মধ্যে আলগা করে দিতে হবে। প্রয়োজনে পানি সেচের ব্যবস্থা করতে হবে। পিঁপড়া ও মাকড়সার আক্রমণ থেকে গাছকে রক্ষার জন্য হিপ্টেক্লোন-৪০ পরিমাণমত দেওয়া যায়। সাধারণ পোকার জন্য মেলতিয়ন বা ডাইমেক্রন ওষুধ প্রয়োগ করা যেতে পারে। রোগ অনুযায়ী প্রতিকারের ব্যবস্থা নিতে হবে। সার প্রয়োগের কলাকৌশল জেনে চাহিদামত কয়েক দফা সুষম সার ও সেচ দিতে হবে। ফুল ধরার বেশ আগে হতে বিশেষ যত্ন নিতে হবে। ফুলের পরিমাণ ও মান উভয় দিকেই খেয়াল রাখা দরকার। গাছভেদে পুরানো ও রোগা ডাল-পালা ছাঁটাই করে দিতে হবে।

ফুল সংগ্রহ:
ফুল সম্পূর্ণ ফোটার আগে ডাঁটাসহ কেটে ফুল সংগ্রহ করা যায়। ডাঁটার নিচের অংশ পানিতে ডুবিয়ে রাখলে ফুল সজীব থাকে। মান ভাল রাখার জন্য ডাঁটাসহ ফুল আঁটি বেঁধে পরিপাটি করে কালো পলিথিনে মুড়ে বাজারে পাঠাতে হবে।

টবে ফুল চাষ:
জমির অভাবে দালানের ছাদে, বারান্দার টবে সৌখিন বা বাণিজ্যিকভাবে বিভিন্ন ধরনের ফুলের চাষ করা যায়। বিভিন্নজাতের বা বর্ণের গোলাপ ও গাঁদা। এছাড়া ডালিয়া, রঙ্গন, চন্দ্রমলি্লকা, মৌ-চণ্ডাল, রজনীগন্ধা, বিভিন্ন আর্কিড, নানাজাতের আকর্ষণীয় ক্যাকটাস ও বনসাই। বর্তমানে বাজারে এসবের ভাল চাহিদা রয়েছে। সময় বাঁচানো এবং নির্মল আনন্দের জন্য বর্ষজীবি বা স্থায়ী ফুলের চাষ করা যায়। যেমন- গোলাপ, জবা, চেরি, দোলনচাঁপা, মালতি, কামিনী রঙ্গন, পাতাবাহার, বিভিন্ন আর্কিড ও নানাজাতের ক্যাকটাস। ক্যাকটাস জাতীয় গাছের জন্য সার খুবই কম লাগে। ফলে ব্যয়ও হয় খুব কম।

উপসংহার:
আমাদের দেশে ফুল চাষ করে আত্মকর্ম সংস্থানের মাধ্যমে বেকারত্ব ঘুচানো সম্ভব। দেশে ফুলের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রফতানি করা যায়। আসে বৈদেশিক মুদ্রা। সবচেয়ে বড় কথা ফুল মানুষের খারাপ মনকে ভাল করে দেয়।

লেখক: মোঃ মোসলেম উদ্দিন, হরিণাকুণ্ডু, ঝিনাইদহ
তথ্য সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক

মনের উঠোনে

সাম্প্রতিক সংযোজন

মোবাইল থেকে দেখুন

আমাদের দেশ এখন আপনার মুঠোফোনে, মোবাইল থেকে লগইন করুন আমাদের দেশ

দ র্শ না র্থী

দ র্শ না র্থী

free counters

কে কে অনলাইনে আছেন