মৌলভীবাজারে মৌসুমি ফলভিত্তিক শিল্প-কারখানা গড়ে ওঠার প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু সঠিক উদ্যোক্তা ও সংরক্ষণাগারের অভাবে ওই সম্ভাবনা কাজে লাগছে না। ফলভিত্তিক শিল্প-কারখানা না থাকায় মৌসুমি ফল সংরক্ষণ, প্রক্রিয়াজাত ও সঠিক বাজার কাঠামো গড়ে উঠতে পারেনি। এতে প্রতি মৌসুমে এলাকার ফল চাষিরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর মৌলভীবাজার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, অনুকূল পরিবেশ থাকায় মৌলভীবাজার জেলায় ২২ হাজার ২৩০ একর জমিতে বিভিন্ন মৌসুমে নানা জাতের ফল উত্পাদিত হচ্ছে। সাধারণত কোনো প্রকার প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে ফলনও ভালো হয়।
কৃষি বিভাগ ও এলাকাবাসী জানায়, মৌলভীবাজার জেলার প্রায় সব কটি উপজেলায়ই টিলাভূমি রয়েছে। এসব টিলাভূমিুেত কাঁঠাল, আনারস, লেবু, বাতাবি লেবু (জাম্বুরা), কমলা, লিচু, সাতকরা (হাতকরা), জলপাই ইত্যাদি মৌসুমি ফল প্রচুর পরিমাণে উত্পাদিত হচ্ছে। যা এলাকার চাহিদা পূরণ করেও সারা দেশে সরবরাহ করা হয়ে থাকে। সারা বছরই প্রায় এসব ফলের চাহিদা রয়েছে।
ফল চাষিরা জানায়, মৌসুমি এই ফলগুলো কম সময়ের মধ্যে একসঙ্গে পাকে। সংরক্ষণের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় দ্রুত বাজারজাত করতে হয়। বাজারে তখন ফলের প্রচুর জোগান থাকে। এতে স্থানীয়ভাবে ফলের চাহিদা কমে যায়। চাষিরা ফলের দাম কম পায়। অন্যদিকে বৃষ্টি-বাদল বা অন্য কোনো কারণে বাজার মন্দা হলে ফল বিক্রি করা সম্ভব হয় না। তখন অনেক ফল পচে নষ্ট হয়। এতে ফল চাষিরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর মৌলভীবাজার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, মৌলভীবাজার জেলার সাতটি উপজেলায়ই পাহাড়ি এলাকায় মৌসুমি ফলের চাষ হয়ে থাকে। এসব পাহাড়ি এলাকায় একসময় প্রাকৃতিকভাবে মৌসুমি ফল উত্পাদিত হলেও বর্তমানে বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদের এলাকা বৃদ্ধি পাচ্ছে। জেলার ২২ হাজার ২৩০ একর জায়গার মধ্যে আনারস, কাঁঠাল, লেবু, কমলা, লিচু, সাতকরা, বাতাবি লেবু, আম, কলা, পেয়ারা, তরমুজ, জলপাই, আমলকী, জাম, কুল, আমড়া, বেল, কতবেল, কামরাঙ্গা, পেঁপে ইত্যাদি উত্পাদিত হচ্ছে। এরমধ্যে কাঁঠাল চার হাজার ৯৪৭ একর, আনারস দুই হাজার ৪৫৪ একর, লেবু দুই হাজার ৫২৯ একর, কমলা ৩৩৮ একর, লিচু ৩০৮ একর, জলপাই ৭৭৮ একর ও আম ছয় হাজার ৬২২ একর জমিতে চাষ হচ্ছে।
ফল চাষি অলিউর রহমান জানান, আম, কাঁঠাল, আনারস, লেবুর ভরা মৌসুম হচ্ছে বৈশাখ, জ্যৈষ্ঠ, আষাঢ় ও শ্রাবণ—এই চার মাস। এ সময় বাজারে প্রচুর ফলের আমদানি হয়ে থাকে। চাহিদার চেয়ে বেশি ফল বাজারে আসে বলে দাম পড়ে যায়।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর মৌলভীবাজার কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. মতিউর রহমান বলেন, বিশেষ করে কাঁঠাল, আনারস ও লেবুর উত্পাদন বেশি। কিন্তু অনেক সময় পরিবহন সমস্যার কারণে কৃষকেরা সময়মতো ফসল বাজারে নিয়ে আসতে পারে না বলে চাষের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলে।
মৌলভীবাজারে বিসিক (বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প করপোরেশন) শিল্পনগর সূত্র জানিয়েছে, মৌলভীবাজারে মৌসুিম ফল সংরক্ষণ বা প্রক্রিয়াজাতের ব্যবস্থা এবং একটি বিশেষায়িত শীতাতপ সংরক্ষণাগার (স্পেশালাইজড কোল্ড স্টোরেজ) দরকার। যেখানে শীতাতপ সংরক্ষাণাগারে বিভিন্ন ধরনের ফল সংরক্ষণের জন্য আলাদা তাপমাত্রা থাকবে। এর ফলে প্রয়োজনীয় তাপমাত্রায় আনারস, কাঁঠাল, লিচু, টমেটো, কমলালেবু, সাতকরা ও জাম্বুরা সংরক্ষণ করা যাবে। সূত্র জানায়, সাধারণ কোল্ড স্টোরেজে একই তাপমাত্রায় সব ফল রাখা যায় না। দেখা গেছে মৌসুমের বাইরে সব ফলের দাম বেড়ে যায়। এই অঞ্চলে মৌসুমি ফল সংরক্ষণের জন্য স্পেশালাইজড কোল্ড স্টোরেজ বা প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প-কারখানা স্থাপন একটি লাভজনক বিনিয়োগ হতে পারে।
মৌলভীবাজারের বিসিক শিল্পনগর কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর আলম সরকার বলেন, এখানে কোল্ড স্টোরেজ ও ফল প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা করা যেতে পারে। লেবু, আনারসসহ কাঁচামাল সহজলভ্য। ছোট পরিসরে একজন জলপাই, লেবু ও তেঁতুলের আচার করছেন। কিন্তু বড় পরিসরে কেউ এগিয়ে আসছে না।
স্থানীয় কাঁচামালভিত্তিক শিল্প নির্মাণে আগ্রহী একজন উদ্যোক্তা নজরুল ইসলাম নাজমুল প্রথম আলোকে জানান, এখানে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে একটি বড় বাঁধা হচ্ছে ব্যাংক ঋণ পাওয়া। সহজে ঋণ মেলে না।
মৌলভীবাজারের আকবরপুর আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. আব্দুর রশীদ বলেন, ‘মৌলভীবাজারের টিলাগুলো মৌসুমি ফলের জন্য বিরাট সম্ভাবনাময় এলাকা। বিশেষ করে লেবু, বাতাবি লেবু, কমলা, আনারসের সম্ভাবনা ভালো। এসব মৌসুমি ফল প্রক্রিয়াজাতের জন্য বেসরকারি উদ্যোক্তারা এগিয়ে আসতে পারেন। আমাদের কাছে জেম, জেলি, জুসের প্রযুক্তি আছে।
তথ্যসূত্র: প্রথম আলো
জলপাই চাষ
Thursday, August 5, 2010
Labels:
কৃষি তথ্য,
কৃষি সংবাদ,
ফল-মূল চাষ
Posted by
আমাদের রান্না
at
11:37 AM