বাংলাদেশ তৃতীয় বিশের উন্নয়নশীল ছোট্ট একটি দেশ। জনবহুল এই দেশে প্রযুক্তির ছোয়া এখনও তেমন ভাবে লাগেনি। দেশের অর্থনীতি অনেকটাই কৃষি নির্ভর। কৃষি অর্থনীতি নির্ভর এই দেশে শিক্ষিত মানুষদের কৃষিতে সম্পৃক্ত করতে না পারলে সামগ্রিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। এর প্রেক্ষিতে একজন শিক্ষিত কৃষক প্রত্যায়ন গাথা, যিনি বলেন এক বিঘা জমিতে আধুনিক কৃষি পদ্ধতি প্রয়োগ করে এক লক্ষ টাকা আয় করা সম্ভব।
মো: আব্দুল আজিজ সাহেব । পুঠিয়া পি, এন, উচ্চবিদ্যালয়ের অবসর প্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক । অবসর প্রাপ্ত আর দশজন সাধারন মানুষের মতন অবসর সময় না কাটিয়ে এই উদ্যোমী মানুষটি মেতে আছেন কৃষি নিয়ে ।
তার সাথে কথাবলে জানা গেল নতুন নতুন বিষয়ে জ্ঞান অর্জন ও প্রয়োগে তার অপরিসিম আগ্রহের কথা । তিনি একাধারে একজন শিক্ষক, সমাজসেবক, হোমিওপ্যাথিক ডাক্তার, কৃষিতে তার রয়েছে ডিপ্লোমা ডিগ্রি।
সমন্বিত কৃষি নিয়ে কথা তুলতেই তিনি অতীতে ডুব দিলেন। ১৯৯২ সালের দিকে তিনি বাগাতিপাড়া উপজেলার চেয়ারম্যান থাকা অবস্থায়- FAO এর অফিসার দিলিপ বাবুর সাথে তার পরিচয় হয়। মূলত তার পরার্মশেই অনুপ্রানিত হয়ে, আধুনিক মাছ চাষ প্রকল্পে হাত দেন। ফলাফল হয় যাদুকরী, আগে সব খরছ বাদ দিয়ে যেখানে আয় হত ১০%, এখন আয় হয় ২৫০%-৩০০%। তার দেখা দেখি এখন অনেকেই আধুনিক মাছ চাষে উদ্বুদ্ধ হয়ে মাছ চাষ করে সাবলম্বি হয়েছেন।
পরবর্তী সময়ে তিনি বিভিন্ন প্রকার মাছ ছাষের উদ্যগ নেন। এর মধ্যে গলদা চিংড়ি দেশী শিং,কৈ,মাগুর চাষ এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য। তিনি পরিক্ষামুলক ভাবে বগুড়া হতে চিংড়ির পোনা এনে অন্য মাছের সাথে চাষ করে ভাল ফল পান। এতে প্রতিটি চিংড়ি ২০০-২৫০ গ্রাম ওজন হয়। কিন্তু উপযুক্ত বাজার দর না থাকায় তিনি লাভবান হতে পারেন নি। মূলত বাজারের অভাবেই তিনি মাশরুম ও স্ট্রবেরী চাষে উৎসাহ পাননি। আলু চাষ করে তিনি থানায় ১ম ও জেলায় ২য় হন । বর্তমানে তার মৎষ্য খামারের পাশাপাশি গরু মোটাতাজা করন প্রকল্প চালু করেছেন। গরুর গোবর মাছের খাদ্য হিসেবে ব্যাবহার করলেও, ভবিষ্যতে বায়োগ্যাসের চিন্তাও তিনি করছেন বলে জানান। তিনি এই গ্যাস হতে নিজের চাহিদা মিটিয়ে খেজুররস হতে গুড় তৈরির পরিকল্পনাও করছেন বলে জানান।
বর্তমানে তার চার বিঘা পুকুরের চারিধারে ছয় বিঘা জমিতে ৮১টি লিচু, ৫৫০টি কুল, ২৬টি খেজুর, আম, জাম, কাঠাল, ও থাইল্যান্ডের মিষ্টি তেতুল রয়েছে। আজিজ সাহেবের সাথে কথা বলে জানা গেল তিনি পাম-অয়েলের গাছ জমির সীমানা বরাবর লাগানোর পরিকল্পনা নিচ্ছেন । এছাড়াও তার ১০-১৫ বিঘা জমিতে আম বাগান এবং ২৫ বিঘা জমিতে বিভিন্ন মৌসুমী ফসলের চাষ করছেন।
এই উদ্যোমী শিক্ষিত কৃষকের সাথে দেশের কৃষি অথনীতি কৃষির ভবিষ্যত এবং দেশের বেকার সমস্যার কৃষির ভূমিকা নিয়ে কথা হয়। তার বক্তব্য, দেশের কৃষি অর্থনীতি এবং এর ভবিষ্বৎ উজ্জল । নতুন নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন , মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধি, বাজার সম্প্রসারন কৃষি ক্ষেত্রে ইতিবাচক। এর পাশা পাশি যদি সরকারের কৃষি উপকরন সরবরাহ আরো তরান্বিত হয় তবে প্রতন্ত অঞ্চলের মানুষের জন্য উৎসাহ ব্যঞ্জক হবে। তিনি উদাহরন দিলেন এক বিঘা জমিতে কলা চাষ করে বছরে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত উপার্জন করা সম্ভব যা একটি ছোট পরিবারের ১ বছরের জন্য যথেষ্ঠ।
তিনি কৃষি সম্ভাবনার আরও কথা বলেন , গরু মোটাতাজা করন, হাস-মুরগীর খামার, নার্সারী ফলের বাগান প্রভৃতি শিক্ষিত বেকার তরুনদের কর্মসংস্থানের ক্ষেত্র হতে পারে। তবে তিনি এটাই বললেন এর জন্য প্রয়োজন সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা।
জনাব আব্দুল আজিজ সাহেবের সাথে যোগাযোগের ঠিকানা:
মো: আব্দুল আজিজ
গ্রাম: ভিতরভাগ
পোষ্ট: জিউপাড়া
থানা: বাগাতিপাড়া
জেলা: নাটোর
ফোন: ০১৭১৫২৩৩৪০২
তথ্যসূত্র: শাইখ সিরাজ রচিত ‘মাটি ও মানুষের চাষবাস’ গ্রন্থ থেকে সংগ্রহীত
প্রযুক্তি নির্ভর সমন্বিত চাষাবাদ হতে পারে উন্নয়নের হাতিয়ার
Monday, August 2, 2010
Labels:
কৃষি তথ্য,
কৃষি সংবাদ
Posted by
আমাদের রান্না
at
8:03 PM