ফসলি জমি, বধ্যভূমি হুমকিতে ফেলে বালু উত্তোলন

Friday, October 29, 2010


বগুড়ার সদর উপজেলার ফুলবাড়ী এলাকায় ফসলি জমি এবং করতোয়া নদী থেকে অবৈধভাবে বালু তোলা হচ্ছে। এলাকার কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তি এভাবে অবাধে বালু তুলছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে ইতিমধ্যে ওই এলাকার ৫০ বিঘা জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে এবং আরও শতাধিক বিঘা জমি ও একটি বধ্যভূমি নদীতে বিলীন হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। একই কারণে কয়েক শ বিঘা জমিতে ফসলের আবাদ বন্ধ হয়ে গেছে।
এলাকাবাসী জানান, বগুড়া শহরতলির ফুলবাড়ী এলাকার পাশ দিয়ে বয়ে গেছে করতোয়া নদী। ছোট বালু নামে পরিচিত এই গ্রামে রয়েছে একটি বধ্যভূমি। সম্প্র্রতি এই বধ্যভূমি সংরক্ষণের জন্য জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের পক্ষ থেকে ফলক স্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু এলাকার কতিপয় প্রভাবশালী ব্যক্তি ওই নদী থেকে বালু তোলায় বধ্যভূমি বিলীন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
স্থানীয় এক চাষি জানান, চার-পাঁচ বছর ধরে স্থানীয় কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তি এ এলাকার বিভিন্ন স্থান থেকে বালু তুলছেন। বালু তোলার জন্য প্রথমে এক বছরের জন্য জমি ইজারা নেওয়া হয়। এরপর জমিতে বোরিং করে শ্যালো ইঞ্জিনচালিত যন্ত্র দিয়ে বালু তোলা হয়। এতে জমিতে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হওয়ায় ফসলের আবাদ বন্ধ রয়েছে। কোথাও জমি ধসে গেছে। একই কারণে নদী তীরবর্তী এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে এ পর্যন্ত এলাকার প্রায় ৫০ বিঘা জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। বালু তোলা অব্যাহত থাকায় শতাধিক বিঘা জমি বিলীন হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
কয়েকজন স্থানীয় কৃষক জানান, বালু তোলার কারণে আমতলী এলাকায় ৩৫ একর জমি নদীতে চলে গেছে।
২১ অক্টোবর সরেজমিনে দেখা গেছে, নদীতে ড্রেজিং মেশিন বসিয়ে বালু তোলা হচ্ছে। কোথাও কোথাও ফসলি জমিতে শ্যালো ইঞ্জিনচালিত শতাধিক যন্ত্র বসিয়ে বালু তোলা হচ্ছে। এলাকাবাসী ভয়ে এই বালু তোলার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের নাম বলতে চান না।
এলাকার এক মুদির দোকানদার নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, জমি থেকে বালু তোলার ফলে ফসলি জমি শেষ হয়ে যাচ্ছে। এখানকার বধ্যভূমি ও শ্মশানঘাট বিলীন হওয়ার উপক্রম হয়েছে।
বগুড়া সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার আবদুুল কাদের বলেন, বধ্যভূমি এলাকা থেকে বালু তোলার বিষয়টি মৌখিকভাবে প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। কিন্ত কোনো কাজ হয়নি।
বালু ব্যবসায়ী ও ফুলবাড়ী এলাকার জমির মালিক মোরশেদুল ইসলাম বলেন, ‘একসময় এই বালু তোলার প্রতিবাদ করেছিলাম। কিন্তু বালু তোলা বন্ধ হয়নি। বালু তোলার কারণে নিজের জমিও নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছিল। বাধ্য হয়ে নিজেই বালু তুলছি।’
বগুড়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ কে এম খালেকুজ্জামান বলেন, এসব বালু উত্তোলন বন্ধের জন্য পুলিশ সব সময় তৎপর রয়েছে। তিন দিন আগেই সাতটি শ্যালো মেশিন আটক করা হয়েছে।
পরিবেশ অধিদপ্তরের রাজশাহী বিভাগীয় পরিচালক নাজমুল হক জানান, ফসলি জমি থেকে বোরিং করে শ্যালো ইঞ্জিনচালিত যন্ত্র দিয়ে বালু তোলার বৈধতা নেই। এভাবে বালু তুললে ভূমিধস হবে।
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুলতানা পারভীন জানান, সদর উপজেলায় কোনো বালুমহাল নেই। তার পরও আমতলী এলাকায় বালু তোলা হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে একাধিবার উপজেলা সমন্বয় কমিটির মাসিক সভায় আলোচনা হয়েছে। কিন্তু ব্যক্তিগত জমি হওয়ায় বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না।
ইউএনও সুলতানা পারভীন আরও বলেন, ‘বালু তোলার কারণে জমি ধসে পড়ায় বেশ কয়েকবার ওই এলাকায় অভিযান চালিয়ে বালু তোলার কাজে ব্যবহূত যন্ত্র আটক করা হয়েছে। বালু তোলা বন্ধ করার জন্য আমরা ওই এলাকায় গিয়ে সচেতনতামূলক সভা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

মনের উঠোনে

সাম্প্রতিক সংযোজন

মোবাইল থেকে দেখুন

আমাদের দেশ এখন আপনার মুঠোফোনে, মোবাইল থেকে লগইন করুন আমাদের দেশ

দ র্শ না র্থী

দ র্শ না র্থী

free counters

কে কে অনলাইনে আছেন