নিম্নমানের বীজে তরতাজা গাছ, নেই ফলন

Saturday, October 30, 2010


‘প্যাকেটের বেছন কিনে আমাগেরে কপাল ভাঙ্গিছে, খালি বড় বড় গাছ হইছে, ফুল-ফল কিছুই নাই।’ কথাগুলো পাবনার সদর উপজেলার ভজেন্দ্রপুর গ্রামের কৃষক মো. হাসান আলীর। চলতি মৌসুমে তিনি দুই বিঘা জমিতে মাষকলাইয়ের আবাদ করেছিলেন। জমিতে গাছ হলেও ফুল ও ফল নেই। এই সমস্যা শুধু হাসান আলীর একার নয়, পাবনা সদর ও আটঘরিয়া উপজেলার আরও কয়েক হাজার কৃষকের মাষকলাইয়ের খেতেও ফলন হয়নি।
কৃষকদের অভিযোগ, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন সংস্থার (বিএডিসি) বীজ বিপণন কর্মকর্তাদের যোগসাজশে স্থানীয় ডিলার বিএডিসির প্যাকেটে আমদানি করা নিম্নমানের বীজ সরবরাহ করায় তাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পাবনা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এ বছর পাবনার নয়টি উপজেলায় মোট ১০ হাজার ৯০০ হেক্টর জমিতে মাষকলাইয়ের আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় দুই হাজার ৬৮০ এবং আটঘরিয়া উপজেলায় ৯৫০ হেক্টর জমিতে মাষকলাইয়ের আবাদ করা হয়।
কৃষকেরা আরও অভিযোগ করেন, সদর ও আটঘরিয়া উপজেলায় মাত্র ৩০ শতাংশ জমিতে ফলন হয়েছে। যেসব কৃষক বীজ সংরক্ষণ করেননি, তাঁরা বিএডিসির আটঘরিয়া উপজেলার বিএডিসির ডিলার মেসার্স হাবিব বীজ ভান্ডার থেকে বীজ কিনেছিলেন। হাবিব বীজ ভান্ডার আটঘরিয়া উপজেলার দায়িত্বে থাকলেও সদর উপজেলার কৃষকেরাও তাঁর কাছ থেকে বীজ কিনেছেন। এসব বীজ থেকে জমিতে শুধু মাষকলাইয়ের বড় বড় গাছ হয়েছে। যেসব কৃষক নিজেরা বীজ সংরক্ষণ করে বপন করেছেন, তাঁরাই শুধু ফলন পেয়েছেন।
সদর ও আটঘরিয়া উপজেলার কয়েকটি এলাকায় দেখা গেছে, মাঠজুড়ে শত শত একর জমিতে শুধু মাষকলাইয়ের গাছ রয়েছে।
বিএডিসি পাবনা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, হাবিব বীজ ভান্ডারকে এ বছর মাষকলাইয়ের এক মেট্রিক টন বীজ সরবরাহ করা হয়েছিল।
কৃষকেরা অভিযোগ করেন, বীজের চাহিদা বেশি থাকায় ডিলার মেসার্স হাবিব বীজ ভান্ডারের মালিক হাবিবুর রহমান আমদানি করা নিম্নমানের বীজ সরবরাহ করেন। হাবিবুর রহমানকে এক টন বীজ দেওয়া হলেও তিনি কৃষকদের কাছে কমপক্ষে ১০ টন বীজ বিক্রি করেছেন।
আটঘরিয়ার কৃষক আনসার আলী অভিযোগ করেন, বীজের ডিলার হাবিব বিএডিসির প্যাকেট নকল করে তাতে আমদানি করা নিম্নমানের বীজ ঢুকিয়ে কৃষকদের কাছে বিক্রি করেছেন। এতে এই বীজে কোনো ফলন হয়নি।
আটঘরিয়ার শ্রীকান্তপুর গ্রামের কৃষক কামাল হোসেন জানান, তিনি মোট ১৩ বিঘা জমিতে মাষকলাইয়ের আবাদ করেছিলেন। এর মধ্যে তিন বিঘা জমিতে তিনি সংরক্ষণ করা বীজ বপন করেছেন এবং ওই তিন বিঘায় ভালো ফলনও পেয়েছেন। বাকি ১০ বিঘা জমিতে তিনি হাবিব বীজ ভান্ডার থেকে আনা বীজ বপন করেছেন। ওই ১০ বিঘায় কোনো ফলন হয়নি।
সদর উপজেলার মালীগাছা ইউনিয়নের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা কামরুজ্জামান বলেন, ‘যেসব জমিতে পরিবেশকের বীজ বপন করা হয়েছে, সেবব জমিতে ফলন না হওয়ার বিষয়টি আমাদের কাছেও পরিষ্কার নয়। আমাদের প্রদর্শনী খামারেও ফলন হয়েছে।’
বিএডিসির সহকারী পরিচালক (বীজ বিপণন) আবদুল হালিম বলেন, বিএডিসি ডিলারদের মোট চাহিদার দুই শতাংশ বীজ সরবরাহ করে। বিএডিসির কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগসাজশ করে ডিলার কৃষকদের কাছে আমদানি করা নিম্নমানের বীজ বিক্রি করেছেন বলে যে অভিযোগ করা হয়েছে, সে অভিযোগ তিনি অস্বীকার করেছেন।
পাবনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক জামান আজম বলেন, ‘আমরা বিষয়টি জেনেছি। মাঠ পরিদর্শন করেছি। বিষয়টি নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে।’
বীজের ডিলার মেসার্স হাবিব বীজ ভান্ডারের মালিক হাবিবুর রহমান বলেন, ‘আমরা বিএডিসির সরবরাহ করা বীজ বিক্রি করেছি। অতিরিক্ত কোনো বীজ বিক্রি করিনি। আবহাওয়ার কারণেই কৃষকের জমিতে মাষকলাইয়ের ফলন হয়নি।’ তিনি বিএডিসির প্যাকেট নকল করে তাতে নিম্নমানের বীজ ঢুকিয়ে কৃষকদের কাছে বিক্রি করার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

তথ্য সূত্রঃ প্রথম আলো, তারিখ: ৩০-১০-২০১০

মনের উঠোনে

সাম্প্রতিক সংযোজন

মোবাইল থেকে দেখুন

আমাদের দেশ এখন আপনার মুঠোফোনে, মোবাইল থেকে লগইন করুন আমাদের দেশ

দ র্শ না র্থী

দ র্শ না র্থী

free counters

কে কে অনলাইনে আছেন