চিবিয়ে খাওয়া জাতের আখ চাষ

Saturday, May 21, 2011


চিবিয়ে খাওয়ার আখ বসতবাড়ির আশপাশে সীমিত উর্বর জমিতে চাষ হয়ে থাকে। চিবিয়ে খাওয়ার আখ চাষ খুবই লাভজনক। যথাযথ যত্ন সহকারে চাষাবাদ করা হলে অন্য যে কোনো ফসলের তুলনায় চিবিয়ে খাওয়া আখ থেকে অর্থ উপার্জন করা সম্ভব। তুলনামূলক চিবিয়ে খাওয়া আখের ফলন জাতীয় গড় ফলনের (৪০.২১ মে. টন/হেক্টর) তুলনায় অনেক বেশি। প্রতি ১০০ গ্রাম আখের রসে ৩৯ ক্যালরি, ৯.১ গ্রাম শর্করা, আমিষ চর্বি, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, লৌহ পাশাপাশি রিবোফ্লোবিন এবং ক্যারোটিন বিদ্যমান। পরিপক্ব আখে শতকরা ৮০ ভাগ পানি, ৮-১৬ ভাগ সুক্রোজ, ০.৫-২ ভাগ রিডিউসিং সুগার এবং ০.৫-১ নন সুগার থাকে।

আখের অভ্যন্তরীণ বৈশিষ্ট্যের মধ্যে মিষ্টতা, ছোবড়ার হার ও মসৃণতা, কম আঁশযুক্ত, নরম রসালো, কম মিনারেল ও অধিক চিনিযুক্ত। আখ জাতসমূহই চিবিয়ে খাওয়া আখের আঁশের পরিমাণ নরম এবং রসের পরিমাণ বিভিন্ন জাত বিভিন্ন রকম হয়। আবাদকৃত জাতসমূহের মধ্যে উৎকৃষ্ট সিও-২০৮, বনপাড়া গেন্ডারি, অমৃত, সিও-৫২৭, মিশ্রিমালা ও কাজলাজাত। স্বল্প আয়ের লোকদের অপুষ্টিরোধে আখের রসের ব্যাপক ব্যবহারে অত্যন্ত সহায়ক। উপজেলার বামনীকাঠী গ্রামের গনি শিকদার ৫ একর জমিতে আখ চাষ করে ৫ লাখ টাকা বিক্রি করেন। ওই বছর তার আখ চাষে ২ লাখ টাকা খরচ শেষে তার লাভ হয়েছে ৩ লাখ টাকা। ১৯৯৬ সাল থেকে আখ চাষ করে আসছেন তিনি। ব্যবসার উদ্দেশ্যে যশোর গেলে সেখানকার আখ চাষ দেখে বসতভিটায় ৫ শতাংশ জমিতে আখ চাষ শুরু করেন। এলাকার মালেক মৃধা, ছিদ্দিক সিকদার, শাহ আলম মৃধা, আবু তাহের প্যাদাও আখ চাষ করছেন। চাষি গনি মলি্লক আখ চাষ সম্পর্কে জানান, আখ চাষ শুধু চিনির জন্য নয়, চিবিয়ে খাওয়ার জন্য। প্রতিজন কৃষক ১০ থেকে ১৫ শতাংশ আখ চাষ করে আসছেন। আষাঢ়, শ্রাবণ, ভাদ্র মাসে উপজেলার হাটবাজারে আখ বিক্রি করে থাকেন। ২৫টি করে আখের আঁটি বাধা হয়। ৪টি আঁটি অর্থাৎ ১শ আখ ২ হাজার ৫০০ থেকে ৩ হাজার টাকা বিক্রি করা হয়। আখ চাষের জমি নির্বাচনের পর ভালোভাবে জমি চাষ করে উপযুক্ত বীজতলা তৈরি করতে হবে। শেকড় যাতে অবাধে বিস্তার লাভ করে প্রচুর খাদ্যরস গ্রহণ করতে পারে সেজন্য জমি উত্তম ও গভীরভাবে চাষ করতে হবে। জমি চাষের গভীরতা কমপক্ষে ৮ ইঞ্চি হওয়া দরকার। তিন খণ্ড চোখবিশিষ্ট বীজখণ্ড নালার মধ্যে একই লাইনের মাথায় স্থাপন করে আখ চাষ করা হয়। হেক্টর প্রতি ৬-৭ মে: টন বীজের আখের প্রয়োজন। চারা ৪ পাতা বিশিষ্ট হলে জমিতে রোপণ করা উপযোগী হবে। সাধারণত কমপক্ষে ১ মাস বা ততোধিক যে কোনো বয়সের চারা রোপণ করা যেতে পারে। তবে ৪-৮ সপ্তাহ বয়সের চারা রোপণ করা ভালো। সরাসরি জমিতে বীজখণ্ড রোপণ বা সরাসরি চারা রোপণ করা যেতে পারে। ফাঁকা জায়গা পূরণ, মাটি আলগা করে দেওয়া, আগাছা পরিষ্কারকরণ, সার প্রয়োগ, চারার গোড়ায় মাটি দেওয়া, আখ বাঁধা দেওয়ার মাধ্যমে পরিচর্যা করা। মারাত্মক ক্ষতিকারক মাজরা পোকা, শুষক পোকা, মাটিতে বসবাসকারী পোকা চিহ্নিত করে কীটনাশক প্রয়োগের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় রোগ বালাই দমনের ব্যবস্থা করা। আখ বাণিজ্যিকভাবে ও ব্যবহারের দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিধায় এটি গবেষকদের বিশেষ দৃষ্টি আকর্ষণ করছে। আখের উচ্চ ফলনশীল ও প্রতিকূল পরিবেশ প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন জাত উন্নয়নের জন্য বিজ্ঞানীরা নিরলস চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। জাতীয় অর্থনীতি শক্তিশালী করার পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়ের মাধ্যমে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের প্রশস্ত হবে। সবকিছু মিলিয়ে বিএসআরআই উদ্ভাবিত আধুনিক প্রযুক্তি ও জাতগুলো ব্যবহারের মাধ্যমে আখের উৎপাদন বাড়ানো এখন সময়ের চাহিদা।


তথ্য সূত্রঃ বাংলাদেশ প্রতিদিন, তারিখ: ২১ মে ২০১১

মনের উঠোনে

সাম্প্রতিক সংযোজন

মোবাইল থেকে দেখুন

আমাদের দেশ এখন আপনার মুঠোফোনে, মোবাইল থেকে লগইন করুন আমাদের দেশ

দ র্শ না র্থী

দ র্শ না র্থী

free counters

কে কে অনলাইনে আছেন