রংমিস্ত্রি থেকে ভাস্কর

Saturday, December 11, 2010


সাত-আট হাত দীর্ঘ একটি গাছ। গাছের ডালে বসে আছে দোয়েল, শ্যামা, ঘুঘু, টিয়া, ময়না, শালিকসহ নানা জাতের পাখপাখালি। গাছের নিচে বক, ডাহুক, ময়ূর, হরিণ, চিতা, হাতি ও রয়েল বেঙ্গল টাইগারসহ বন্য প্রাণীরা ঠাঁয় দাঁড়িয়ে। এসব প্রাণীর কোনোটাই রক্ত-মাংসের নয়, বালু-পাথর ও রড-সিমেন্টে তৈরি। এগুলোর নির্মাতা শহিদুল ইসলাম নামের এক তরুণ।
বয়স তাঁর ৩০ বছর। জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার খলিশাগাড়ি গ্রামে বাড়ি। এসব ভাস্কর্য বানাতে কারও কাছ থেকে শিক্ষা নেননি তিনি। দারিদ্র্যের কারণে শৈশবে পঞ্চম শ্রেণীর গণ্ডিই পেরোতে পারেননি। কিন্তু ভেতরে একটা শিল্পীসত্তা বুঝি ছিল। এমনিতে রংমিস্ত্রির কাজ করেন। বছর চারেক আগে হঠাৎ শখের বশে পশুপাখি বানানো শুরু করেন তিনি। কৃত্রিম এসব জন্তু-জানোয়ার স্থানীয় লোকজনের নজর কাড়ে। কেউ কেউ কিনে নেন কয়েকটা। স্থানীয় লোকদের উৎসাহ ও স্বীকৃতি জন্ম দেয় এক ভাস্করের।
দিনে মানুষের বাড়ি বাড়ি ঘুরে শহিদুল এখনো রংমিস্ত্রির কাজ করেন। সেটাই তাঁর মূল পেশা। আর রাতে রড-সিমেন্ট নিয়ে বসেন। দক্ষ হাতে গড়ে তোলেন একেকটা অবয়ব। তারপর চলে রং করার পালা। গ্রামীণ মেলায় সিমেন্টের এসব ভাস্কর্যের কেনাবেচা ভালো। শীতকালে মেলাকে সামনে রেখে বছরজুড়ে এসব বানান শহিদুল। তাঁকে সাহায্য করেন স্ত্রী মরিয়ম বেগম।
শহিদুলের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, একটি ময়ূরের গায়ে রং করছেন তিনি। মরিয়ম রংতুলি, যন্ত্রপাতি এগিয়ে দিচ্ছেন। শহিদুল জানান, রড-সিমেন্ট দিয়ে আড়াই ফুট উঁচু, চার ফুট দীর্ঘ একটি বাঘ তৈরিতে তাঁর ১৫ দিন লেগেছে। মাঝারি আকৃতির একটি বাঘ বানাতে খরচ পড়ে দুই হাজার টাকা। আর বিক্রি করে পান সাড়ে তিন হাজার টাকা। ৫০০ থেকে ৭০০ টাকায় বিক্রি হয় শাপলা ফুল।
শহিদুল বলেন, হামি অশিক্ষিত মানুষ। ভালো কোনো কিছু তৈরি করতে অনেক টাকা-পয়সা লাগে। হামরা গরিব মানুষ, দিনে যা রোজগার হয়, ওই দিন তা খাওয়া-খরচে শেষ হয়। আর বছরে একবার এই কাজের লাভ থেকে সংসারের বড় ধরনের কাজ করি। মাথার ঘাম পায়ে ফেলে এই কামগুলো শুধু রাতে করি। দিনে অন্যের বাড়িতে রংমিস্ত্রির কাম করি।
পাশের মুন্দাল গ্রামের ঠিকাদার নুরুজ্জামান মৃধা বলেন, বড় একটি জিরাফ শহিদুলের কাছ থেকে মাত্র দুই হাজার ৪০০ টাকায় কিনেছি। শহর থেকে কিনতে গেলে পাঁচ হাজার টাকায়ও পাওয়া যেত না। বাড়ির পাশে রাখা ওই জিরাফে বসে শিশুরা সারা দিন খেলাধুলা করে।
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান তাইফুল ইসলাম তালুকদার বলেন, শহিদুল ইসলামের এই শৈল্পিক কাজ দিন দিন এলাকায় জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। নিরক্ষর হয়েও সে এত সুন্দর হাতের কাজ করে, দেখলে অবাক লাগে। তাকে সহায়তা করা দরকার, যেন সে আরও ভালো কিছু করতে পারে।

তথ্য সূত্রঃ নিঝুমদীপ

মনের উঠোনে

সাম্প্রতিক সংযোজন

মোবাইল থেকে দেখুন

আমাদের দেশ এখন আপনার মুঠোফোনে, মোবাইল থেকে লগইন করুন আমাদের দেশ

দ র্শ না র্থী

দ র্শ না র্থী

free counters

কে কে অনলাইনে আছেন