খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৯৮০ সালে ভূমি মন্ত্রণালয়ের ৬টি বাঁওড় বিশ্ব ব্যাংকের সহায়তায় ‘বাঁওড় মৎস্য উন্নয়ন প্রকল্প’ নামে ৩০ বছর মেয়াদে মৎস্য অধিদপ্তরের কাছে হস্তান্তরিত হয়।
এই প্রকল্পে ঝিনাইদহের ৫ টি ও যশোরের ১ টি বাঁওড়ে মাছ চাষ শুরু হয়। এগুলো হলো- ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলার বলুহর ও জয়দিয়া বাঁওড়, মহেশপুর উপজেলার কাড়গড়া ও ফতেপুর বাঁওড়, কালীগঞ্জ উপজেলার মর্জাদ বাঁওড় ও যশোরের চৌগাছার বেড়গোবিন্দপুর বাঁওড়।
স্থানীয় জেলে সম্প্রদায় ও মৎস্যজীবিরা ৪০ শতাংশ হারে মালিকানায় বাঁওড়ের মাছ ধরার অনুমতি লাভ করে মৎস্য বিভাগের কাছ থেকে। বাঁওড় পাড়গুলোর নিবন্ধিত ১ হাজার জেলে পরিবারের প্রায় ৫ হাজার লোক জীবিকা নির্বাহ করতে থাকে। ৫ শ’ বিঘা জমির উপর এসব বাঁওড়ে গড়ে ওঠে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রেণু উৎপাদনকারী কেন্দ্রীয় মৎস্য হ্যাচারী। বিভিন্ন বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে রেণু বিক্রি ছাড়াও হ্যাচারীর রেণু সরকারি এই বাঁওড়ে দেয়া হয়।
মৎস্য বিভাগ বাঁওড় উন্নয়নের জন্য রাস্তা-ঘাট, হ্যাচারি বিল্ডিং, ব্রীজ, কালভার্ট ও পুকুর কাটে প্রায় ৫০ কোট টাকার। শতাধিক কর্মকর্তা কর্মচারী নিয়োগ করা হয় এ সব বাঁওড়ে। প্রতি বছর এসব বাঁওড় থেকে প্রায় ৫ শ’ মেট্রিক টন মাছ উৎপাদিত হয়। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ সুলভে বাঁওড়ের রাণী (প্রাকৃতিক বিভিন্ন জাত) মাছসহ সু-স্বাদু মাছ পায়। এছাড়া দেশের মাছের চাহিদা পূরণে বড় ভূমিকা রাখে এসব পুরাতন বাঁওড়।
তবে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে ভূমি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে মৎস্য অধিদপ্তরের ৩০ বছর মেয়াদি চুক্তি শেষ হয়ে যায়। ফলে জেলা প্রশাসক এক আদেশে বাঁওড়গুলি ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকবে উল্লেখ করে মৎস্য বিভাগকে চিঠি দেয় এবং বাঁওড়ের মাছ ধরা ও ফিশিং কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে। বাঁওড়গুলি তদারকি ও ব্যবস্থাপনার ক্ষমতা হারায় কর্তৃপক্ষ। জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত এসব বাঁওড়ে ফিসিং মৌসুমে মৎস্য আহরণ করা হয়নি। চলতি বছর এ সব বাঁওড়ে ৩ দফা ফিশিং না হওয়ায় ৩ কোটি টাকা মূল্যের প্রায় ৪ শ’ মেট্রিক টন মাছ চোর চক্র ও প্রভাবশালী মহল লুটপাট করে নেয়।
ভূমি মন্ত্রণালয় গত মাসে বাঁওড়গুলি ওপেন লিজ দিতে টেণ্ডার আহবান করলেও দুটি মন্ত্রণালয়ের টানা হেচড়ায় তা বন্ধ রয়েছে। হঠাৎ করেই অভিভাবকহীন হয়ে পড়ছে বাঁওড় ও হ্যাচারী। জেলে পরিবারগুলো মাছ ধরার অনুমতি ও ‘জাল যার জলা তার’ সংক্রান্ত নীতির দাবি করলেও বিষয় গুলি থাকছে উপেক্ষিত। শত শত জেলে পরিবার হয়ে পড়েছে অসহায়।
মৎস্যজীবি যমুনা হালদার জানায়, ছেলে মেয়ে নিয়ে না খেয়ে থাকতে হচ্ছে। অপরদিকে প্রভাবশালীরা সব মাছ লুটপাট করছে।
কোটচাঁদপুর বলুহর বাঁওড় সহকারী ম্যানেজার সেলিম চৌধুরী জানান, ৩০ বছর মেয়াদি চুক্তি শেষ হওয়ায় বাঁওড়গুলি এখন ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধীনে চলে গেছে। বাঁওড়ের সব ধরণের ফিশিং কার্যক্রম বন্ধ বলে তিনি জানান।
ফতেপুর বাঁওড় ম্যানেজার আজগর আলী পিটিবি নিউজ ডটকমকে জানান, গত বছর ১৫ মেট্রিক টন মাছ আহরণ করলেও এবার ৩ মেট্রিক টন মাছ আহরণের পর সব কিছু স্থগিত হয়েছে।
কোটচাঁদপুর কেন্দ্রীয় মৎস্য হ্যাচারী কমপ্লেক্সের হ্যাচারী অফিসার তালেবুল ইসলাম পিটিবি নিউজ ডটকমকে বলেন, দুই মন্ত্রণালয়ের টানা হেচড়ায় কারণে মাছের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। সেই সঙ্গে অবকাঠামোগত সম্পদগুলোও বেহাল দশায় রয়েছে।
ঝিনাইদহের জেলা প্রশাসক রমা রাণী রায় পিটিবি নিউজ ডটকমকে জানান, চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ায় বাঁওড়গুলো এখন ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধীনে রয়েছে। বর্তমানে মৎস্য ও ভূমি এই দুই মন্ত্রণালয়ের বৈঠক ও কমিটি গঠিত হয়েছে।
বাঁওড় মৎস্য চাষ উন্নয়ন প্রকল্পের মৎস্য সম্প্রসারণ কর্মকর্তা আব্দুল খালেক পিটিবি নিউজ ডটকমকে বলেন, চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার কারণে মৎস্য অধিদপ্তর সরকারের কাছে ৫০ বছরের জন্য আবারও আবেদন করেছে।
এচাড়া মৎস্য ও ভূমি আন্তঃমন্ত্রণালয়ের বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা সরেজমিন তদন্ত ও পরির্দশন করার পরে প্রতিবেদন দিলে বিষয়টির সমাধান হবে। তিনি জানান, বর্তমানে বাঁওড়গুলির সবধরণের কার্যক্রম বন্ধ থাকায় কোটি কোটি মৎস্য আহরণ করা সম্ভব হয়নি।
সিদ্ধান্ত হীনতায় ঝিনাইদহে বাঁওড় মৎস্য উন্নয়ন প্রকল্পের শতকোটি টাকার সম্পদ লোপাট
Friday, September 24, 2010
মৎস্য ও ভূমি মন্ত্রণালয়ের টানা হেঁচড়ায় বাঁওড় মৎস্য উন্নয়ন প্রকল্প এখন বিরাণভূমি। অবকাঠামোসহ শত কোটি টাকার সম্পদের বেহাল দশা। চলতি ফিশিং মৌসুমে ৬ টি বাওড়ে না করায় লুটপাট হয়েছে প্রায় ৩ কোটি টাকার ৪ শ মেট্রিক টন মাছ। পথে বসেছে হাজার হাজার জেলে।
Labels:
অনান্য,
কৃষি তথ্য,
কৃষি সংবাদ,
মাছ চাষ
Posted by
জনি
at
8:49 PM