গোলমরিচের চাষ পদ্ধতি-২
(পূর্ব প্রকাশেরপর)
বংশ বি¯-ার : গোলমরিচের বংশ বি¯-ার পদ্ধতি খুবই সহজ।গোলমরিচের বীজ থেকে বংশ বৃদ্ধি করাযায়।এতেউৎপাদনেআসতে বেশি সময়লাগে।গোলমরিচের গুণাগুণ মাতৃগাছের মত না-ও হতে পারে।সেজন্য সাধারণত অঙ্গজপ্রজননের মাধ্যমে গোলমরিচের বংশবৃদ্ধি করা হয়।সাধারণত এক মুকুল একপত্রীকাটিং -এ বংশবৃদ্ধি করাহয়।এ পদ্ধতিথেকে খুব সহজে গোলমরিচের চারা উৎপাদনকরা যায়।শাখা রোপণে গাছ তৈরি হয়এবং গাছগুলো খুব সহজে বড় হয়।
আশ্রয় গাছ হিসেবে মান্দার গাছ গোলমরিচের জন্য ভাল।এ গাছটি সোজাভাবে বাড়েএবং শাখা-প্রশাখার সংখ্যা কম থাকে।গাছের ছাল অমসৃণ এবং এ থেকে এক প্রকার আঁঠা জাতীয় পদার্থ বেরহয়।মান্দারগাছের শাখাগুলো যখন গোলমরিচ গাছের উচ্চতা সীমিত রাখার জন্য কাটতে হয়, তখন কোন অনিষ্ট হয়না।মান্দারশুটি জাতীয় গাছ।ফলে বায়ুমণ্ডল থেকে নাইট্রোজেন মাটিতে ধরে রাখতেপারে।এতেমাটি সমৃদ্ধ হয়।
চারা রোপণ পদ্ধতি : গোলমরিচের চারা দুই প্রকারে রোপণ করাযায়।যদিবাগানে সুপারি, নারকেল, আম, মান্দার, কাঁঠাল ইত্যাদি আশ্রয় গাছ হিসেবে ব্যবহারের গাছথাকে, তখন ওইগাছ থেকে দেড় হাত দূরে, দেড় হাত দৈর্ঘ্য, দেড় হাত প্রস্থ এবং দেড় হাত গভীর গর্ত করতেহয়।গোবর, পচনসার, বালিযুক্ত মাটি দিয়ে গর্তটি পূরণ করে চারা রোপণ করতেহয়।গাছ উঠারসুবিধার জন্য বাঁশের অবলম্বন দেয়া প্রয়োজন।
নতুন জায়গায় গোলমরিচের চাষ করতে হলে প্রথমে আড়াই হাত থেকে চারহাত দূরত্বে এক হাত দৈর্ঘ্য এক হাত প্রস্থ এবং এক হাত গভীর গর্ত করে উপরেউলে¬খ করা মতগর্ত পূরণ করতে হয় এবং সেখানে আশ্রয় গাছের দক্ষিণ দিক ছেড়ে চারা লাগাতে পারেন ওইএকই নিয়মে।প্রয়োজনে চারাগাছে ছায়া দেয়া উচিত।
সার প্রয়োগ : প্রতি গাছে নিু অনুমোদিত হারে সার প্রয়োগ করাউচিত।সারপ্রয়োগের উপযুক্ত সময় চৈত্র-বৈশাখ মাস।
যতœ :গোলমরিচের লতাগুলো দ্রুত বৃদ্ধির জন্য আশ্রয় গাছের সাথে বেঁধেদিতে হয়।গাছের গোড়া থেকে ৩ হাত উপর পর্যš- পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নরাখা প্রয়োজন।গোলমরিচ গাছ যাতে ৯ হাতের বেশি উঠতে না পারে সেদিকে খেয়ালরাখা দরকার।
জলবায়ু : গোলমরিচ চাষের জন্য উষ্ণ আদ্রতাযুক্ত জলবায়ু এবংসমানুপাতিকভাবে সম¯- বছর বৃষ্টি থাকা বিশেষ প্রয়োজন।উলে-খযোগ্যযে, গোলমরিচের পরাগ সংযোগ বৃষ্টির উপর নির্ভর করে।গোলমরিচ চাষের জন্যবার্ষিক ২৫০০ মিঃ মিঃ বৃষ্টি এবং ১০ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমানআবশ্যক।দীর্ঘদিন অনাবৃষ্টি অথবা খরা পরিস্থিতি গোলমরিচ চাষের জন্যখারাপ।
মাটি : অব্যবহৃত বা পতিত জমিতে উচ্চ জৈব সার বিশিষ্ট পানি জমেনা থাকা, পাহাড়ের লালমাটি গোলমরিচ চাষের জন্য বেশি উপযোগী।বন্যা কবলিত অঞ্চল ছাড়াবেলে দো-আঁশ মাটিতে গোল মরিচের চাষ করা যায়।আদ্রতাহীন মাটি গোলমরিচ চাষের জন্যঅনুপযোগী।
জাত : ১ (হাইব্রিড), কারিমুণ্ডা, বালনকাট্টা, কল¬ুভেলি¬, আরকুলপাম মুণ্ডাপ্রভৃতি।
রোপণে সময় : গোলমরিচ সাধারণত ভাল জাতের গাছ বা বীজ বৈশাখের ১০থেকে ১৫ দিন থেকে আষাঢ়ের ১০ থেকে ১৫ দিন পর্যš- চারা রোপণের উপযুক্ত সময়।
রোগবালাই : গোলমরিচে এক প্রকার ফল ছিদ্রকারী পোকার আক্রমণদেখা যায়।শ্রাবণ ও কার্তিক মাসে প্রতি ৫ লিটার পানিতে এক চা চামচ ‘এন্দোসালফার৩৫ ইসি’বাকুইনলফস বা ডাইমিথয়েট ৩০ ইসি প্রয়োগ করে সুফল পাওয়া যায়।এছাড়া ঝরে পড়া রোগেরজন্য বর্ষাকাল আরম্ভ হওয়ার আগে বরডক্স মিশ্রণ প্রয়োগ করতে হয়।
ফসল কাটা ও সংরক্ষণ : গোলমরিচের ছড়িতে যখন দুএকটি গোলমরিচহলুদ রঙের হয় তখন মই দিয়ে উপরে উঠে ফসল কেটে নিয়ে ছড়িগুলো মেলে রাখতেহয়।গোলমরিচগুলো পৃথক করে ৪-৫ দিন রোদে শুকাতে হয়।গোলমরিচ ভালভাবে শুকিয়েগেলে কালো ও আকারে ছোট হয় এবং তারপর বাজারজাত করতে হয়।
ব্যবসা-অর্থনীতি : গোলমরিচ রোপণের তিন বছর থেকে উৎপাদনশুরু হয়।যদিও ৭-৮ বছর থেকে পুরোপুরি উৎপাদনচলে আসে।প্রতি গাছ থেকে ৫-৬ কেজি কাঁচা গোলমরিচ উৎপাদনহয়।কাঁচা গোলমরিচ থেকে প্রায় ৩০ শতাংশ শুকনো গোলমরিচ পাওয়াযায়।অর্থাৎ, একটি গাছ থেকে গড়ে দেড় থেকে দুই কেজি শুকনোগোলমরিচ পাওয়া যায়।প্রতি কেজি ৫০০ টাকা হলে একটি গোলমরিচের গাছ থেকে ৭৫০ থেকে৮০০ টাকা উপার্জন করা যায়।হিসেব অনুযায়ী একটি গাছের জন্য খরচ প্রায় ৩৫ টাকা।সুতরাং খরচের তুলনায় লাভযথেষ্ট।
সম্ভাবনাময় গোলমরিচ চাষে কৃষকরা আরও উদ্যোগী হবেন।প্রতি জেলাতে কৃষিবিভিাগ গোলমরিচ চারা জোগান ও কৃষি বিভাগের খামারে গোলমরিচ চারা উৎপাদনকরা হয়।এ ব্যাপারে সচেতন কৃষকরা সংশি¬ষ্ট কৃষি বিভাগের সঙ্গেযোগাযোগ করতে পারেন।
-আফতাব চৌধুরী, সিলেট