গোলমরিচের চাষ পদ্ধতি-১
গোলমরিচ একটি মসলা জাতিয় অর্থকরী ফসল।খাবারকে সুস্বাদু করতেএবং বিভিন্ন ভেষজ ওষুধের সাথে এর ব্যবহার দেখা যায় আমাদের দেশে।
সরকারের কৃষি বিভাগ গ্রামীণ সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভিন্নসময়ে উৎসাহদিয়ে আসছে গোলমরিচচাষে।যারফলে গ্রামীণ কৃষি পরিকাঠামোর অবস্থান অনুযায়ী সচেতন শিক্ষিত অর্ধশিক্ষিত চাষিরাগোলমরিচ চাষে এগিয়ে আসছে।গ্রামীণ অর্থনৈতিক ভিত সুদৃঢ় ও কম সময়ে অধিক উপার্জন পেতেগোলমরিচ এক অর্থকরী ফসল হিসেবে বিবেচিত।তাই গোলমরিচ চাষ করতে কৃষকের ক্ষেতপ্রস্তুত, চারা উৎপাদনও রোপণপ্রণালী, রোগপ্রতিরোধ, দ্রুত চারা উৎপাদনপদ্ধতি এবং ব্যবসায়িকভিত্তিতে গোলমরিচ চাষ নিয়ে আজকের এ প্রতিবেদন।
গোলমরিচ লতাজাতিয় উদ্ভিদ।পান গাছ, ওদাল, বেত ইত্যাদির মত গোলমরিচ এক পরাশ্রয়ীগাছ।এজন্যগোলমরিচের অন্য গাছের আশ্রয় প্রয়োজন।আম, সুপারী, কাঁঠাল, মান্দার, তেঁতুল, নারিকেল, তাল, সিলভার, অক, টিক, খেজুর ইত্যাদি গাছগোলমরিচের আশ্রয়ী হিসেবে ব্যবহার হয়।এছাড়া অমসৃণ ছাল থাকা গাছে গোলমরিচ গাছ ওঠারজন্য সুবিধা হয়।
গোলমরিচের চারা উৎপাদনপদ্ধতি : সাধারণত গোলমরিচের চারা ডালের কলম থেকে তৈরি করাহয়।গোলমরিচের গাছের গোড়ার অংশকে ‘রানার’বলা হয়।রানারের প্রতিটি গাঁটথেকে শিকড় বের হওয়ার স্বাভাবিক প্রবণতা থাকে।রানারের প্রতি তিনটি গাঁটের একটি অংশ কেটে নিয়েআশ্রয়ী গাছের কাছে ‘সরা’লাগিয়ে দিতে হয়।মাটির সঙ্গে ৩ : ১ অনুপাতে দাগ দিয়ে একটি পালংতৈরি করে তাতে গোলমরিচের ডাল থেকে তিনটি গাঁটযুক্ত কলম কেটে লাগাতে হবে।এক থেকে দেড় মাস পর ওইকাটিং থেকে শিকড় বেরিয়ে আসবে।তখন পলিথিন ব্যাগে ৪ ইঞ্চি করে ৩ ভাগ দো- আঁশ মাটি ভর্তি করেওই শিকড়যুক্ত কাটিং থেকে সাবধানে উঠিয়ে পলিথিন ব্যাগে রোপণ করে দিতেহবে।রোপণেরপূর্বে বাঁশের কাঠি দিয়ে পলিথিন ব্যাগের মাটিতে গর্ত করে নিয়ে শিকড়যুক্ত কাটিংলাগাতে হবে।৪৫ থেকে ৬০ দিনের মধ্যে একটি সুন্দর চারা গজাবে।সাধারণত চৈত্র-বৈশাখ মাসচারা উৎপাদনেরপক্ষে উপযুক্তসময়।
দ্রুত চারা উৎপাদনপদ্ধতি : ব্যবসায়িকভিত্তিতে গোলমরিচের চারা উৎপাদনেরজন্য দ্রুত চারাউৎপাদনপদ্ধতিকার্যকর।একটি গাছ থেকে বছরে অন্তত ৩০ থেকে ৩৫ টি চারা উৎপাদনকরা সম্ভব।এজন্য একটি ছায়াঘর তৈরি করতে হবে।প¬াস্টিকের তৈরি বিশেষধরনের শেডনেট ব্যবহার করে ছাউনিও তৈরি করা যায়।৬০ থেকে ৭০ শতাংশ বৃষ্টির পানি আটকানোর ক্ষমতাবিশিষ্ট এ নেটের মধ্যে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ রোদ প্রবেশ করতে পারে।ঘরের বাঁশের খুঁটিরসারির উচ্চতা হতে হবে প্রতি ৩ মিটার এবং এবং দুপাশের খুঁটির উচ্চতা হবে ২মিটার।ঘরেরমধ্যে ১মিটার দূরত্ব বজায় রেখে ৭৫ সেন্টি মিটার গভীর এবং ৩০ সেন্টি মিটার প্রস্থেরনালা তৈরি করতে হবে।নালাগুলো বালিমাটি, কম্পোস্ট, কাঁঠালের গুঁড়ো এবং সারমিশ্রিত মাটি সমানভাগেমিশিয়ে ভর্তি করতে হবে।এখন ওই নালার এক ফুট অš-র অন্তর ভাল জাতের সুস্থচারা ‘মাতৃগাছ’হিসেবে রোপণ করতে হবে।দুই নালার মধ্যবর্র্তী জায়গার দুই মাথায় খুটিপুঁতে মাটির সঙ্গে আনুভূমিকভাবে একটি লম্বা বাঁশ বেঁধে দিন।এবারে একটি বেথু বাঁশের১.২৫ মিটার লম্বা টুকরোকে দুভাগে ভাগ করে প্রতিটি মাতৃগাছের গোড়ায় বসিয়ে মাঝেরবাঁধা আনুভূমিক বাঁশ হেলান দিয়ে রাখুন যাতে আধখানা বাঁশের টুকরো মাটির মাটির সঙ্গে৪৫ ডিগ্রি কোণ তৈরি করে।এবারে আধখানা বাঁশের টুকরোতে বালু কাঠের গুঁড়ো, কম্পোস্ট ১:১:১ অনুপাতেভালভাবে মিশিয়ে ভর্তি করুণ।গোলমরিচের প্রতিটি গাঁট মাটির সংস্পর্শে বেঁধেদিন, এর ফলেপ্রতি গাঁট থেকে শিকড় বেরিয়ে আসবে।৩ থেকে ৪ মাসের মধ্যে গোলমরিচের লতা আধখানা বাঁশের মাথাপেরিয়ে যাবে।এসময় লতার আগা কেটে নিন এবং গাছের গোড়ার তিনটি গাঁটের উপর লতাথেতলে দিন।তখন পাতার কোলে থাকা অঙ্কুর বাড়তে আরম্ভ করবে।১০ দিন পর থেতলানো পাতারউপরের লতাটি কেটে ফেলুন।এরপর প্রতিটি শেকড় গাঁট থেকে আলাদা করে কেটেফেলুন।৪ইঞ্চি পলিথিন ব্যাগে বালি-মাটি, কাঠের গুঁড়ো ও কম্পোস্ট সমানভাবে মিশিয়ে ওই একটি গাঁটযুক্তকাটিং রোপণ করতে হবে।সব সময় খেয়াল রাখতে হবে যাতে শিকড় নষ্ট না হয়।পলিথিন ব্যাগকেছায়াযুক্ত স্থানে রাখতে হবে এবং দুতিন দিন পর পর পানি সেচ দিতে হবে।৩ সপ্তাহের মধ্যেকাটিংয়ে নতুন পাতা গাঁট থেকে ছাড়তে আরম্ভ করবে।এভাবে অতি কম সময়ের মধ্যে গোলমরিচের চারাউৎপাদনসম্ভব। (চলবে)
-আফতাব চৌধুরী, সিলেট