একজন বনসাইপ্রেমী

Monday, August 9, 2010

দুলাল আবদুল্লাহ

ছেলেবেলায় বাপ-দাদাকে বাড়ির উঠোনের ফাঁকা জায়গায় গাছ লাগাতে দেখেছেন। গাছের সঙ্গে সঙ্গে বেড়ে উঠেছেন তিনিও। গাছগুলোর পাশাপাশি ডালপালা মেলেছে গাছগাছালির প্রতি তাঁর ভালোবাসাও। সেই ভালোবাসাই তাঁকে পরিচিতি দিয়েছে রাজশাহীর বনসাইপ্রেমিক হিসেবে। বনসাইয়ের কারিগর খোকন তালুকদার।
এখন নিজেরই একটা বড় সংসার। বর্তমানে বাপ-দাদা নেই। কিন্তু উত্তরাধিকার হিসেবে তাঁদের রেখে যাওয়া একমাত্র বাড়িটি ছাড়া আলাদা বাড়তি জমি পাননি। দুই ইউনিটের চারতলা পাকা বাড়ি। গাছগাছালির প্রতি ভালোবাসা সেই শৈশব থেকেই। কিন্তু যান্ত্রিক এ শহরে যেখানে বাস করা দায় হয়ে দাঁড়িয়েছে, সেখানে গাছের প্রতি নিজের টান তো বিলাসিতা!
এ চিন্তা যখন মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে, তখন দেখা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক মুযাহেদ হোসেনের সঙ্গে। তাঁর বাড়িতে গিয়ে দেখলেন অদ্ভুত এক গাছ! বটগাছের মতো বড় বড় গাছ তিনি বাইরে দেখেছেন। কিন্তু এ কি! অবিকল সে গাছই তো ছোট আকারের দেখা যাচ্ছে এখানে। একটি টবের ওপর সুন্দরভাবে দাঁড়িয়ে আছে। বনসাইয়ের এ টব দেখেই খোকনের মাথায় পরিকল্পনা এল, ‘তাহলে তো আমার বাড়ির ছাদকে গাছের কাজে ব্যবহার করা যাবে।’
এরপর রাজশাহীর নিউমার্কেটের উত্তর গেটের সামনে একটি কাঠের মিলের কাছ থেকে তিন ফুট উচ্চতার একটি বটগাছ বাড়িতে এনে টবে লাগিয়ে পরিচর্যা শুরু করেন। কিন্তু এতে বিপদই হলো। গাছের শেকড়সহ ডালপালা বাড়তে থাকল। তাই শেকড়সহ ডালপালা কাটতে লাগলেন, আর পরিচর্যা করতে থাকেন। এরপর তিনি যেখানে যে গাছ পান, তা-ই নিয়ে এসে ছাদের টবে লাগান। এমনি করে ১৬ বছরে বাড়ির এক হাজার ৮০০ বর্গফুটের পুরো ছাদে প্রায় ৭০ প্রজাতির ৯০০টি গাছ লাগিয়েছেন। এ গাছের ভিড়ে এখন সবুজ হয়ে গেছে তাঁর বাড়ির ছাদ। এ বনসাই দেখতে অনেকে ভিড় করেন তাঁর বাড়িতে। এত বড় গাছ কীভাবে ছোট করে রাখা যায়, সে প্রশিক্ষণও নিয়ে যান অনেকে। এরই মধ্যে ১৫ জনকে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন।
পঞ্চাশ বছর বয়সী খোকন কাকডাকা ভোরে ঘুম থেকে উঠে একবার ছাদে গিয়ে বনসাইয়ের গাছে পানি দিয়ে শহর থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে লিজ নেওয়া প্রায় ১০০ বিঘার আলুর খেতে চলে যান। দুপুরের আগে বাড়িতে এসে চলে যান বিভিন্ন জায়গায় আড্ডা দিতে। এরপর আড্ডা শেষ করে বিকেলে গাছের যত্নের কাজে লেগে পড়েন। বনসাই পরিচর্যা করতে গিয়ে সমস্যাও অনেক। রাজশাহীতে বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে প্রখর খরায় দিনে তিনবার পানি দিতে হয়। আবার প্রচণ্ড শীতে গাছের ডাল বা গাছ মরে যায়। এ ছাড়া চীনামাটির টব পাওয়া যায় না। সে সঙ্গে প্রদর্শনীর জন্য উপযুক্ত গ্যালারি নেই, বনসাই তৈরির জন্য যন্ত্রপাতিও ঠিকমতো পাওয়া যায় না। খোকন অবশ্য কিছু শৌখিন শিল্পী নিয়ে রাজশাহীতে বনসাই ক্লাব নামের একটি সংগঠন তৈরি করেছেন।
খোকনের ছাদে রয়েছে পাকুড়, শ্যাওড়া, অর্জুন, বৈচি, কামিনী, তেঁতুল, ঘূর্ণিবিচি, পলাশ, তমাল, বকুল, পেয়ারা, কৃষ্ণচূড়া, জাম, আকাশমণি, শিউলি, করমচা, নিম, তুঁত, ইপিল ইপিল, কড়ঞ্চ, শিশু, বিদেশি ফাইকাস বেঞ্জামিনা, পাইকাস রেটুসা, ভেরিয়েন্স, গোল্ডেন, ভেরিয়াকাটা, পান্ডা, চাইনিজ এলম, ফুকেনটি, কতলেবু, চেরি প্রভৃতি গাছের বনসাই।
বনসাই-শিল্প নিয়ে বিতর্ক আছে অনেক। কেউ বলেন, এই কাজটি করতে গিয়ে এক অর্থে গাছের ওপর অত্যাচার করা হয়। ব্যাহত হয় গাছের স্বাভাবিক বৃদ্ধি।
এসব বিতর্কে জড়াতে চান না খোকন। তিনি শুধু তাঁর গাছগুলোকে ভালোবেসে যেতে চান।

তথ্যসূত্র : প্রথম আলো

মনের উঠোনে

সাম্প্রতিক সংযোজন

মোবাইল থেকে দেখুন

আমাদের দেশ এখন আপনার মুঠোফোনে, মোবাইল থেকে লগইন করুন আমাদের দেশ

দ র্শ না র্থী

দ র্শ না র্থী

free counters

কে কে অনলাইনে আছেন