আন্ধারমানিক নদীর মোহনার চাউলাপাড়া বাঁধের কাটা অংশ দিয়ে ঢোকা জোয়ারের লোনা পানিতে বরগুনার আমতলী উপজেলার কড়ইবাড়ীয়া, আরপাঙ্গাসিয়া ও পচাকোরালিয়া ইউনিয়নের ৩০টি গ্রামের আবাদি জমি বছরের আট মাসই ডুবে থাকে। ফলে প্রায় চার বছর এসব জমিতে আবাদ করতে পারেন না চাষিরা। বাধ্য হয়ে তাঁরা এখন মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করছেন।
কড়ইবাড়ীয়া ইউনিয়নের ঝাড়াখালী, বাদুড়গাছা, কচুপাতড়া শারিখালী ও নলবুনিয়া গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, লোকজন পানিবন্দী অবস্থায় জীবনযাপন করছেন। সকালে জোয়ারের পানিতে নৌকায় ভাসেন। একই সঙ্গে তাঁরা নিজ নিজ জমিতে মাছ ধরেন। আর বিকেলে ভাটির সময় গবাদিপশু কোনোমতে উঁচু জায়গায় রাখেন।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আন্ধারমানিক নদীর মোহনার চাউলাপাড়া বাঁধটির কাটা অংশসহ বিলীন হয়ে যাওয়া এলাকার বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধগুলোর অধিকাংশ সংস্কার না করায় আমতলী উপজেলার এক লাখ মানুষের জীবন-জীবিকা হুমকির মুখে পড়েছে। গ্রীষ্ম মৌসুমে উপকূলীয় নদ-নদীতে পানি বাড়ার পাশাপাশি লবণাক্ততার পরিমাণ অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পায়। এতে অধিকাংশ ফসলের মাঠ প্লাবিত হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সাগরের লোনা পানি যাতে প্রবেশ করতে না পারে সে জন্য কচুপাত্রা ও আন্ধারমানিক নদীর মোহনার চাউলা পাড়ায় কয়েক দশক আগে সরকারি উদ্যোগে বাঁধ নির্মাণ করা হয়। কিন্তু মাছচাষের জন্য ২০০৬ সালে কড়ইবাড়ীয়া ইউনিয়নের স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি বাঁধটি কেটে দেন। এর পর থেকেই তিন ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকা লোনা পানিতে প্লাবিত হতে শুরু করে। কাটা বাঁধ দিয়ে প্রতিদিন জোয়ারের পানি প্রবেশ করে ৩০টি গ্রাম প্লাবিত হচ্ছে। এ ছাড়া ঘূর্ণিঝড় আইলা ও সিডরে দক্ষিণ বঙ্গোপসাগর উপকূলের নীলগঞ্জ নদীর তীরের বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধের অধিকাংশ বিলীন হয়ে যাওয়ার পাশাপাশি পানি নিয়ন্ত্রণের কার্যকর ব্যবস্থা না থাকায় জোয়ারের লোনা পানিতে তলিয়ে যায় আশেপাশের বিস্তীর্ণ এলাকা।
নলবুনিয়া এলাকার কৃষক আতাহার আলী বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় আইলা ও সিডরের পর থেকে জমিতে ফসল ফলাইতে পারি না। অর্ধেকের বেশি জমি জোয়ারের পানিতে সব সময় তলাইয়া থাকে। ধানে যখন থোড় আসে, তখন ভাঙা বাঁধ দিয়ে লবণ পানি ঢোহে, ক্ষ্যাত তলাইয়া যায়। বর্ষার সময় কিছুই হয় না। হেই লইগ্যা আমরা ফসলি জমিতে মাছ ধইরা খাইতাছি।’
কড়ইবাড়ীয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নাসির মোল্লা বলেন, প্রতিবছর নীলগঞ্জে নদী ভাঙছে, রাস্তা ভাঙছে, বাজার ও স্কুল এখন হুমকির মুখে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের ভাঙা বাঁধ গড়িয়ে গ্রামের মধ্যে পানি ঢুকছে। এমনকি মাছচাষের জন্য কেটে দেওয়া বাঁধ উপচে জোয়ারের পানি ঢোকে। তা ছাড়া পানিতে অধিকাংশ সময় তলিয়ে থাকায় জমিতে এখন আর আগের মতো ফসল হয় না। বাধ্য হয়ে কৃষকেরা জীবন বাঁচাতে মাছ ধরা শুরু করেছে।
আমতলী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সন্তোষ মণ্ডল বলেন, বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ না থাকায় তিন ইউনিয়নের ২০ হাজার হেক্টর ফসলিজমি স্বাভাবিক জোয়ারে প্রতিনিয়ত প্লাবিত হচ্ছে। জোয়ারের লবণাক্ত পানি ঢোকার কারণে জমির উর্বরতা হ্রাস পাচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড বরগুনা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী জহির উদ্দিন বলেন, আইলায় বরগুনার ৯৭টি স্থানে বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে গেছে। প্রয়োজনের তুলনায় বরাদ্দ না আসায় সব বাঁধ যথাযথভাবে মেরামত করা সম্ভব হয়নি। তিনি আরও বলেন, গ্রীষ্ম মৌসুমে নদীর পানিতে লবণাক্ততা বেড়ে যায়। তখন ভাঙা বাঁধ দিয়ে অনায়াসে ফসলি মাঠে এই লবণাক্ত পানি ঢুকে প্লাবিত হয়।
তথ্যসূত্র : প্রথম আলো
চার বছর ফসল হয় না আমতলীর ৩০ গ্রামে
Tuesday, August 10, 2010
Labels:
অনান্য,
কৃষি তথ্য,
কৃষি সংবাদ
Posted by
আমাদের রান্না
at
11:07 AM