জমি তৈরী ও সার দেওয়া পরিচর্যা
জাত সেচ
বীজের হার রোগ
বীজ শোধন পোকা
বোনার সময় ফসল তোলা
বাংলাদেশ বীরভূম, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, মেদিনীপুর(পশ্চিম), বর্ধমান, প্রভৃতি জেলার উঁচু জমির লাল ও কাঁকুরে মাটিতে ধান চাষ ভাল হয় না। এসব অঞ্চলে খরিফ মরসুমে লাভজনকভাবে চীনাবাদামের চাষ করা সম্ভব। অন্যান্য ফসল যেমন আউশধান, অড়হড়, ভূট্টা ইত্যাদির সঙ্গে মিশিয়েও চীনাবাদামের চাষ করা যায়। এছাড়া সুন্দরবন ও অন্যান্য সমুদ্র উপকূলবর্ত্তী অঞ্চলে আমন ধান কাটার পর দো-আঁশ জমিতে রবি ফসল হিসাবে বিনা সেচে চীনাবাদামের চাষ করা যায়, কারণ এসব জমিতে তখনও যথেষ্ট রস থাকে। চীনাবাদামে শতকরা তেলের ভাগ আছে ৪৫ থেকে ৫০ শতাংশ। তবে ঘানিতে ভাঙ্গলে ৫ থেকে ৭ ভাগ কম হয়। হেক্টর পিছু বাদামের ফলন পাওয়া যায় ১৫ থেকে ২০ কুইন্টাল।
জমি
উঁচু ও মাঝারি বেলে দো-আঁশ এবং দো-আঁশ মাটি বাদাম চাষের পক্ষে উপযোগী। পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, বীরভূম ও মেদিনিপুরের লালমাটি অঞ্চলের ডাঙা ও অনুর্বর জমিতেও ঠিকমত সার দিয়ে বাদাম চাষ করা যায়।কিন্তু ভাল ফলনের জন্য এসব অঞ্চলের অম্ল জমিতে পরিমাণ মত চূণ দিয়ে বাদাম চাষের উপযোগী করে নেওয়া দরকার। মাটিতে চূণের পরিমাপ কম থাকলে ফলন ক্রমশ কমে যেতে থাকে।
জমি তৈরী ও সার দেওয়া
বাদামের শুঁটি মাটির নীচে বাড়ে, তাই সোজাসুজি ও আড়াআড়িভাবে বারে বারে চাষ দিয়ে মাটি ভালভাবে ঝুরঝুরে করে তৈরী করুন। মাটি ঝুরঝুরে ও আলগা হলে বাদামের আকার বড় এবং ফলন বেশী হয়। জমি তৈরী করার সময় হেক্টর প্রতি ২০ থেকে ২৫ গাড়ী পচা, গোবর সার বা কম্পোষ্ট ভাল করে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিন। শেষ চাষের সময় হেক্টর পিছু ১৫ কেজি নাইট্রোজেন, ৩০ কেজি ফসফেট এবং ৪৫ কেজি পটাশ ছড়িয়ে দিয়ে মাটির সঙ্গে ভাল করে মিশিয়ে দিন। ফসফেটের জন্য সিঙ্গল সুপার ফসফেট প্রয়োগ করলে বাদামের ফলন বৃদ্ধি পায়। জমিতে উঁই পোকার উপদ্রব থাকলে জমি তৈরীর সময় হেক্টর প্রতি ৩৭.৫ কেজি অলড্রিন (৫%) বা হেপ্টাক্লোর (৫%) বা ক্লোরডেন (৫%) মিশিয়ে দিন।
জাত
বৈশিষ্ট্য | বাদামের জাত | |||
এম-এইচ-২ | এ-কে-১২-২৪ | জে-এল-২৪ | জে-১১ | |
গাছের আকার | খুব বেঁটে,গুচ্ছ | গুচ্ছ | গুচ্ছ | গুচ্ছ |
দানার রং | লাল | বাদামী | গোলাপী | হালকা বাদামী |
দানার আকার | মাঝারী | মাঝারী | বড় | ছোট |
প্রতিটি ফলে দানার সংখ্যা | ১ - ৪ | ১ - ৩ | ২ - ৩ | ২ |
পাকার সময় (দিন) | ১০৫ (খারিফ) ১৩০(পাকখরিফ) | ১১০ -১২০ | ১০০ -১১০ | ১১০ -১২০ |
হেক্টরেফলন(কুইন্টাল) | ২৪-২৫ | ২০ -২২ | ২০ - ২২ | ১৮ -২০ |
তেলের পরিমাণ (শতকরা) | ৫১ | ৪৮ -৫০ | ৫১ (প্রায়) | ৪৯ |
বীজের হার
দানার আকার অনুযায়ী খোসা ছাড়ান ৭৫ - ১০০ কেজি বীজ এক হেক্টরে লাগে।
বীজ শোধন
বোনার এক সপ্তাহ আগে খোসা ছাড়ান প্রতি কেজি নীরোগ ও পুষ্ট বীজে ৩ গ্রাম ব্রাসিকল বা ৪ গ্রাম থাইরাম জাতীয় ঔষধ ভালভাবে মিশিয়ে শোধন করে নিন।
বোনার সময়
প্রাক খরিফ,খরিফ ও রবি মরসুমে বাদামের চাষ করা যায়। তবে প্রাক-খরিফ ও খরিফে চাষই প্রধান। খরিফে সাধারনতঃ সেচের দরকার হয়না, রবি ও প্রাক খরিফে দরকার হয়। যে সব অঞ্চলে কার্ত্তিকের শেষ থেকে মাঘ মাস পর্যন্ত মাটিতে ভাল রস থাকে সেখানে বিনা সেচেও চাষ করা যায়, কিন্তু ফসল তুলতে সময় বেশী লাগে। খরিফে বৈশাখ থেকে আষাড় এবং রবিতে কার্ত্তিকের শেষ থেকে অঘ্রায়ন এবং প্রাক খরিফে মাঘ -ফাল্গুন বীজ বোনার উপযুক্ত সময়। লালমাটি অঞ্চলের ডাঙা জমিতে বর্ষা শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বীজ বোনা দরকার।
বীজ বোনা
মাটিতে ঠিকমত জো এলে প্রতি খুপিতে একটি করে শোধন করা পুষ্ট বীজে ৫ সেমি (দুইঞ্চি) গভীরে বুনুন। গুচ্ছ জাতে সারি থেকে সারির দুরত্ব হবে ৩০ সেমি (১২ ইঞ্চি) এবং সারিতে বীজ থেকে বীজের দুরত্ব হবে ১৫ সেমি (৬ইঞ্চি)। এম-এইচ জাতের জন্য সারির দুরত্ব ১৫ সেমি বা ৬ ইঞ্চি হবে।
পরিচর্যা
বাদামের ফলন অনেকটা নির্ভর করে যথাযথ পরিচর্যার উপর। বীজ থেকে কল বের হওয়ার দুসপ্তাহের মধ্যে চাকা-বিদার সাহায্যে ক্ষেতের আগাছা পরিষ্কার করুন। দু সপ্তাহ পরে দ্বিতীয়বার চাকা-বিদা চালান। গাছের সারির মাঝের আগাছা হাত নিড়ানির সাহায্যে তুলে দিন। প্রথম ফুল আসার ৩ থেকে ৪ দিনের মাথায় গাছের গোড়ায় মাটি টেনে ভেলি বেঁধে দিন। মাটি আলগা থাকলে ফুল ভালভাবে মাটিতে ঢুকতে পারে এবং বাদাম ধরতে সুবিধা হয়।
সেচ
খরিফ মরসুমে ঠিকমত বৃষ্টি হলে সেচের দরকার নেই। বৃষ্টি না হলে ২০ থেকে ২৫ দিন অন্তর হালকা সেচ দেওয়া দরকার। প্রাক খরিফে ও রবি মরসুমে মাটি, বৃষ্টি ও ফসলের অবস্থা অনুযায়ী ২ থেকে ৪ বার সেচ দিন।
রোগ
নাম | প্রতিকার |
১)টিক্কা | প্রতি লিটার জলে ২ ১/২ গ্রাম জিনেব কম্পাউন্ড (যেমন ডাইথেন এম-৪৫ ইত্যাদি) বা ১ গ্রাম ফলটন (যেমন ডাইফোলেটান ইত্যাদি) বা ৭ গ্রামকপার অক্সিক্লোরাইড(যেমন স্লাইটক্ল ইত্যাদি) জলে গুলে স্প্রে করুন। |
২)মরচে রোগ | প্রতি লিটার জলে এক গ্রাম বেনলেট ৫০ বা বাবিস্টিন গুলে স্প্রে করুন। |
৩)ঢলে পড়া রোগ | প্রতি লিটার জলে ১ গ্রাম হিসাবে ফলটন (যথা ডাইফোলেটান ইত্যাদি ) গুলে কেবল আক্রান্ত গাছের জায়গায় গাছের গোড়ায় মাটি ভিজিয়ে স্প্রে করুন। |
৪)ডগাশুকানো | এই রোগের বাহক জাব পোকা দমনে প্রতি লিটার জলে ১মিলি মিথাইল ডেমিটন ২৫ অথবা ডাইমিথয়েট ৩০% গুলে স্প্রে করুন। |
পোকা-
নাম | প্রতিকার |
লাল শুয়োপোকা | প্রতি লিটার জলে ১ মিলিলিটার হিসাবে মিথাইল প্যারাথিয়ন (যেমন মেটাসিড ৫০ ইসি ইত্যাদি) বা এন্ডোসালফান (যেমন থায়োডেন ৩৫ ইসি ইত্যাদি) গুলে স্প্রে করুন |
এক হেক্টরে রোগ-পোকা দমনের ওষুধ ছেটাতে মোটামুটি ৭৫০ লিটার জল লাগে।
ফসল তোলা
গুচ্ছ জাতের গাছের পাতায় অনেক তাড়াতাড়ি হলদে রং ধরে। বীজ বোনার ১১৫ থেকে১২০ দিনের পরে মাঠের ৪ থেকে ৫ জায়গা থেকে কয়েকটি গাছ তুলে যদি দেখা যায় (ক) অল্প চাপে বাদামের খোসা ভেঙে যাচ্ছে (খ) খোসার ভেতরে শিরাগুলিতে কালচে রং ধরেছে, (গ) বীজের উপরকার পাতলা খোসাতে রং ধরেছে তাহলে বুঝতে হবে বাদাম তোলার সময় হয়েছে। প্রাক খরিফ ও খরিফ মরসুমের চেয়ে রবি মরসুমে বাদাম পাকতে ২০ থেকে ৩০ দিন সময় বেশী লাগে। মাটি ভিজে থাকলে গাছ টেনে তুলে অথবা লাঙ্গল দিয়ে গাছ তুলে বাদাম ছাড়িয়ে নেয়া যায়। বাদাম তুলে সঙ্গে সঙ্গে ভালভাবে শুকিয়ে নিন।
সূত্র: ইউরো বাংলা