ফসলের নাম : সয়াবীন (Soybean)
উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম : Glycine max
১. পুষ্টি উপাদান/মূল্য :প্রোটিন বিদ্যমান
২. ভেষজগুণ : অসম্পৃক্ত ফ্যাটি এসিড থাকে বিধায় হৃদরোগ, ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্ত চাপ রোগীদের জন্য
বিশেষ উপকারী।
৩. ব্যবহার : সয়াবিন ডাল হিসেবে ব্যবহৃত হয়। তাছাড়া পিয়াজু, বড়া, দুধ, চাপাতি, পরটা, পাউর্বটি, বিস্কুট,
পিঠাসহ আরও অনেক খাবার তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। বর্তমানে পোল্ট্রি শিল্পে সয়াবিন ব্যবহৃত
হচ্ছে।
৪. উপযুক্ত জমি ও মাটি : দো-আঁশ, বেলে-দো-আঁশ ও এঁটেল দো-আঁশ মাটি সয়াবিন চাষের উপযোগী।
৫. জাত পরিচিতি : বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট সয়াবিনের ৩টি জাত উদ্ভাবন করেছেন। জাতগুলোর
বৈশিষ্ট্য নিম্নে উলেৱখ করা হলো।
সোহাগ (পিবি-১) : সংগৃহীত জার্ম পৱাজম থেকে বাছাই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ১৯৯১ সালে সরকার কর্তৃক জাতটির
অনুমোদন দেয়া হয়।
ফুলের রং বেগুনী। বীজের রং উজ্জ্বল হলদে। বীজ সংরৰণ ৰমতা ভালো। ১০০ বীজের
ওজন ১১-১২ গ্রাম। এজাতটি পাতার হলদে মোজাইক রোগ সহনশীল। জীবনকাল রবি
মৌসুমে ১০০-১১০ দিন এবং খরিপ মৌসুমে ৮০-৯০ দিন। হেক্টর প্রতি ফলন ১.৫-২.০ টন।
বাংলাদেশ সয়াবিন-৪ (জি-২) : ১৯৯৪ সালে জাতটির অনুমোদন দেয়া হয়। এ জাতের বীজের আকার ছোট।
১০০ বীজের ওজন ৫-৭ গ্রাম। বীজের রং হলদে। জাতটি পাতার হলদে
মোজাইক রোগ সহনশীল। জাতটির জীবনকাল ৯০-১২০ দিন। হেক্টর প্রতি
ফলন ১.৮-২.০ টন।
বারি সয়াবিন-৫ : ২০০২ সালে জাতটির অনুমোদন দেয়া হয়। এজাতটি সব মৌসুমেই চাষ করা
যায়। এ জাতের প্রতিটি গাছে ফলের সংখ্যা ২৫-৩২ টি। শুটিতে বীজের সংখ্যা ২-৩
টি। বীজের আকার সোহাগের চেয়ে সামান্য ছোট এবং বাংলাদেশ সয়াবিন-৪ এর
বীজের চেয়ে বড়। বীজের রং ক্রীম এবং শত বীজের ওজন ৯-১৪ গ্রাম। জীবনকাল ৯০-
১০০ দিন। হেক্টর প্রতি ফলন ১.৬-২.০ টন।
৬. বীজ বপন : বাংলাদেশে রবি এবং খরিপ উভয় মৌসুমেই সয়াবিনের চাষ করা যায়। তবে পৌষ মাসে (মধ্য
wW‡m¤^i থেকে মধ্য জানুয়ারী) বপন করা ভাল। অন্যদিকে বর্ষা মৌসুমে শ্রাবণ মাস থেকে মধ্য
ভাদ্র মাস পর্যন্ত বপন করা যায়।
৭. বীজের হার : সোহাগ - ৮০ কেজি/হেঃ।
জি-২ - ৪০-৪৫ কেজি/হেঃ।
৮. বপন পদ্ধতি : সয়াবিন সারি করে বপন করা ভালো। তবে ছিটিয়েও বুনা যায়। সারিতে বপন করলে সারি
থেকে সারির দূরত্ব রবি মৌসুমে ৩০ সে.মি. এবং খরিপ মৌসুমে ৪০ সে.মি. দিতে
হবে। গাছ থেকে গাছের দূরত্ব হবে ৫-৬ সে.মি.। বীজ বপনের গভীরতা হবে ৩-৪ সে.মি.।
৯. সার ব্যবস্থাপনা : হেক্টর প্রতি সারের পরিমাণ নিম্নরূপ : জাতভেদে এর তারতম্য হতে পারে।
সারের নাম | প্রতি হেক্টরে (কেজি) |
ইউরিয়া | ৫০-৬০ কেজি |
টিএসপি | ১৫০-১৫ কেজি |
এমওপি | ১০০-১২০ কেজি |
জিপসাম | ৮০-১১৫ কেজি |
শেষ চাষের সময় সবটুকু সার জমিতে প্রয়োগ করে মাটির সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হবে।
জীবাণু সার প্রয়োগ : ছায়াযুক্ত স্থানে এক কেজি বীজের মধ্যে ৬৫-৭৫ গ্রাম জীবাণু সার মিশিয়ে ভালোভাবে
নাড়াচাড়া করে বীজ সাথে সাথে বপন করতে হবে। সাধারণত এই সার ব্যবহার করলে
ইউরিয়া সার ব্যবহারের প্রয়োজন হয়না।
১০. সেচ ও আগাছা ব্যবস্থাপনা : রবি মৌসুমে বীজ বপনের ২৫-৩০ দিনের মধ্যে (ফুল আসার সময়)। প্রথম সেচ
এবং দ্বিতীয় সেচ বীজ বপনের ৫৫-৬০ দিনের মধ্যে (শুটি গঠনের সময়) দিতে
হবে। খরিপ মৌসুমে সেচের প্রয়োজন হয়না তবে প্রয়োজনে সম্পূরক সেচ দেয়া যেতে পারে। চারা গজানোর ২০-২৫ দিন পর আগাছা দমন করতে হবে।
পোকার নাম : বিছা পোকা
ভূমিকা :সয়াবিনের একটি মারাত্মক পোকা। ছোট অবস্থায় এরা দলবদ্ধভাবে থাকে।
পোকা চেনার উপায় : কীড়া বা বিছা হলুদ রংয়ের এবং গায়ে কাঁটা থাকে।
ৰতির নমুনা : এরা সাধারণত গাছের পাতায় আক্রমণ করে। এ পোকার কীড়া দলবদ্ধভাবে থেকে পাতার
সবুজ অংশ খেয়ে পাতাকে পাতলা সাদা পর্দার মতো করে ফেলে।
অনুকূল পরিবেশ : উষ্ণ আবহাওয়া।
জীবনচক্র:
ব্যবস্থাপনা :
পোকা দেখার সংগে সংগে গাছ থেকে পোকাসহ পাতা সংগ্রহ করে পোকা মেরে ফেলতে হবে।
সেচ নালায় কেরোসিন মিশ্রিত পানি থাকলে কীড়া পানিতে পড়ে মারা যায়।
প্রতি লিটার পানিতে ডায়াজিনন-৬০ ইসি ২ মিলি হারে মিশিয়ে বিকালে জমি করতে হবে।
১২. রোগ ব্যবস্থাপনা :
রোগের নাম : হলুদ মোজাইক ভাইরাস
ভূমিকা :
ৰতির নমুনা :সয়াবিনের সবুজ পত্র ফলকের উপরিভাগে উজ্জ্বল সোনালী বা হলুদ রংয়ের চক্রাকার দাগের
উপস্থিতি দেখা যায়। তখন হলদে পাতাযুক্ত আক্রান্ত গাছ সাধারণত খাটো এবং বামনাকৃতি হয়ে থাকে।
অনুকূল পরিবেশ : মেঘলা আবহাওয়া।
বিস্তার :জাব পোকার মাধ্যমে বিস্তার।
ব্যবস্থাপনা :
K) বালাই সহনশীল জাত যেমন বাংলাদেশ সয়াবিন-৪এর আবাদ করা।
L) আক্রান্ত গাছ বাছাই করে (রগিং) তুলে মাটির নিচে পুঁতে রাখা।
M) রোগমুক্ত বীজ বপন।
N) ২ মিলি হারে মিশিয়ে জমিতে ভালোভাবে সেপ্র করতে হবে।
রোগের নাম : কান্ড পঁচা রোগ
ভূমিকা : এ রোগ সাধারণত স্কেলেরোশিয়াম রলফসি/ফিউজারিয়াম/রাইজোকটনিয়া নামক ছত্রাকের সাহায্যে
রোগ ছড়ায়।
ৰতির নমুনা:আক্রান্ত গাছের কান্ড এবং মূলে কালো দাগ পড়ে। পরবর্তীতে চারা বা গাছ ধীরে ধীরে শুকিয়ে
যায় এবং অবশেষে মারা যায়।
অনুকূল পরিবেশ :
বিস্তার : ছত্রাকের সাহায্যে বিস্তার।
ব্যবস্থাপনা :
K) বীজ বপনের পূর্বে ভিটাভেক্স-২০০ দিয়ে (২.৫ গ্রাম/কেজি) বীজ শোধন করে বীজ বপন।
L) গভীরভাবে জমি চাষ করতে হবে।
M) জমি হতে ফসলের পরিত্যক্ত আঁশ, আগাছা, আবর্জনা পরিষ্কার করে রোগের উৎস নষ্ট করতে হবে।
১৩. ফসল তোলা :
সোহাগ - ১০০-১১০ দিন।
বাংলাদেশ সয়াবিন-৪ ৮৫-৯৫ দিন।
বারি সয়াবিন-৫ ৯০-১০০ দিন।
সূত্র: ইউরো বাংলা