আদা উৎপাদনেবীজ শোধনপ্রযুক্তি
‘পিলাই তোলা’ শব্দটি আমাদের সবারজানা।এরঅন্তরালে জড়িয়ে আছে একটি ফসলের নাম।আর তা হল নীলফামারী জেলা প্রসিদ্ধ অর্থকরী মসলাও ওষুধি ফসল আদা।এ জেলা ছাড়াও দেশের দিনাজপুর, রংপুর, টাঙ্গাইল, খুলনা, রাঙ্গামাটি, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি জেলায় আদারচাষাবাদ হয়।টাটকা আদায় শতকরা ২.৩ ভাগ প্রোটিন, ১২.৩ ভাগশ্বেতসার, ২.৪ ভাগ আঁশ, ১.২ ভাগ খনিজ পদার্থ, ৮০.৮ ভাগ পানি, রেজিন ইত্যাদি উপাদানবিদ্যমান।দেশের বাৎসরিকচাহিদা ৯৬.০০০ মে.টনের মাত্র ৪৩.০০০ মে. টন আদা উৎপন্নহয় যা চাহিদার তুলনায়খুবই কম।আদাচাষাবাদের প্রযুক্তিলব্ধ জ্ঞানের অভাবে কৃষক পর্যায়ে ফলস প্রতি হেক্টরে প্রায় ৩০থেকে ৪০ টনের পরিবর্তে কমিয়ে ৫.৫৪ টনে দাঁড়িয়েছে।কাজেই, উৎপাদনবাড়ানোর লক্ষে বীজ আদা শোধন প্রযুক্তি অত্যন্তজরুরি।
কেন আদা বীজ শোধন করবেন : সাধারণত ৪৫-৫০ গ্রাম আকারের বীজ আদাএপ্রিলের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে মে মাস পর্যন্ত রোপণ করা হয়।এ ক্ষেত্রে হেক্টর প্রতি২০০০-২৫০০ কেজি আদা বীজ প্রয়োজন।আদা বীজ উত্তমরূপে শোধন না করলে রইজম রট, পাতার ব¬াইড, রাইজম ফ্লাই, প্রভৃতি রোগ-বালাইয়েরপ্রাদুর্ভাব বেশি হয়।রাইজম রটের আক্রমণে প্রথমে আদা গাছের কাণ্ড হলুদ হয়েযায়; রাইজমপচে সম্পূর্ণ গাছ মারা যায়।মাটির আর্দ্রতা বেশি থাকায় এবং মাঝারি বৃষ্টিপাতের জন্যছত্রাকনাশক ¯েপ্র করেও এ রোগ দমন করা যায় না।ফলে মাঝারি উঁচু জমিতেফসল প্রায় শূন্যের কোঠায় দাঁড়ায়।পাতায় অনেক সময় ডিম্বাকৃতির দাগ দেখা যায়।দাগের মাঝে সাদা বা ধূসররঙ হয়।পরেআক্রান্ত পাতা শুকিয়ে যায় এবং গাছ মারা যায়।রোগাক্রান্ত রাইজম ও গাছে আদার প্রধান ক্ষতিকারকপোকা ‘রাইজমপ¬াই’ -এর আক্রমণবাড়ে।তাইরোগ-বালাইয়ের সংক্রমণ ঠেকাতে বীজ আদা শোধনের গুরুত্ব অনেক বেশি।
আদা বীজ শোধন প্রক্রিয়া : ৭৫-৮০ লিটার পানিতে ১০০ গ্রামডাইথেন এম-৪৫ মিশিয়ে -এর মধ্যে ১০০ কেজি আদা বীজ ৩০ মিনিট ডুবিয়ে রাখতেহবে।তারপরপানি থেকে বীজ আদা তুলে ছায়ায় শুকিয়ে জমিতে লাগাতে হবে।আদা লাগানোর আগে বীজ আদাএকটি ঝুড়িতে বিছিয়ে তার উপর খড় বা চটের থলে দিয়ে ঢেকে রাখলে আদার ভ্র“ণ বের হয়।এ রকম আদা থেকে দ্রুতগাছ বের হয়।
শোধিত আদা বীজ রোপণের প্রায় ৭-৮ মাস পর ফসল পরিপক্কহয়।সাধারণতডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসে আদা উত্তোলন করা হয়।রোপণের পূর্বে রাইজম শোধন করলে ফসল ক্ষতিকারকরোগ জীবাণু ও পোকা-মাকড়ের হাত থেকে রক্ষা পায়।সেই সাথে বিজ্ঞানসম্মত অন্তঃপরিচর্যার মাধ্যমেফলন লক্ষ্যমাত্রা (৩০ থেকে ৩৫ টন/ হেক্টর) পর্যন্ত পৌঁছানো সম্ভব।
-কৃষিবিদ মোঃ রবিউলইসলাম
সূত্র: ইত্তেফাক