লগো পদ্ধতিতে ধান চাষ
Saturday, March 31, 2018
বোরোধানের চারা রোপণের এখন ভরা মওসুম। চাষি ভাইয়েরা এখন ভীষণ ব্যস্ত বোরোধানের চারা রোপণে। সারা দেশের মতো খুলনা জেলার বিভিন্ন এলাকার চাষিরাও এখন বোরো চাষ নিয়ে
ফলন বাড়ানো এবং চাষের খরচ কমানোর জন্য লাগসই আধুনিক কৃষিপ্রযুক্তি ব্যবহারের বিকল্প নেই। প্রিয় চাষি ভাই, আপনি ইচ্ছে করলে বোরো মওসুমে ধান চাষের জন্য একটি আধুনিক কৃষিপ্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারেন। প্রযুক্তিটির নাম লগো পদ্ধতি।
প্রতি বছর বোরোধান চাষে বাদামি গাছফড়িং (স্খানীয় চাষি ভাইদের কাছে কারেন্ট পোকা নামে পরিচিত) অনেক ক্ষতি করে। আপনি যদি লগো পদ্ধতিতে ধান চাষ করেন তাহলে গাছফড়িংয়ের আক্রমণ প্রতিহত করে ভালো ফসল ঘরে তুলতে পারবেন। প্রযুক্তিটি কিভাবে ব্যবহার করবেন সে ব্যাপারে স্খানীয় কৃষিকর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। প্রশিক্ষণ নেয়া কৃষিকর্মকর্তা আপনাকে সেবা দিতে প্রস্তুত। কৃষিকর্মকর্তারাই এ ব্যাপারে আপনার কাছে এগিয়ে যাওয়ার কথা।
কিন্তু আপনি যদি অগ্রসর চাষি হয়ে থাকেন তাহলে নিজ উদ্যোগেই যোগাযোগ করে সেবা নিতে পারেন।
এখন চলুন লগো পদ্ধতিতে কিভাবে ধানের চারা রোপণ করতে হয়, সে বিষয়ে জেনে নেয়া যাক।
বোরো মওসুমে ধানের চারা রোপণের সময় উত্তর-দক্ষিণ দিক মুখ করে চারা রোপণ করতে হবে। চারা থেকে চারার দূরত্ব হবে ৮ সেন্টিমিটার। সারি থেকে সারির দূরত্ব ৮ সেন্টিমিটার রাখতে হবে।
আট থেকে ১০ লাইন ধানের চারা রোপণ করার পর এক লাইন ফাঁকা রাখতে হবে। ধানের জমি সমতল রাখতে হবে। অতিরিক্ত ইউরিয়া সার প্রয়োগ থেকে বিরত থাকতে হবে। বাদামি গাছফড়িং বা কারেন্ট পোকা তাড়াতাড়ি বংশ বিস্তার করে। ঘন করে ধানের চারা রোপণ করলে ধানক্ষেতে আলো-বাতাস সহজে প্রবেশ করতে পারে না। ধানগাছের গোড়ায় স্যাঁতসেঁতে পরিবেশে আলো-বাতাস প্রবেশ করতে না পারলে, অতিরিক্ত ইউরিয়া সার জমিতে ব্যবহার করলে এ ধরনের পরিবেশে বাদামি গাছফড়িংয়ের আক্রমণ বেশি হয়। ধানের জমি ওপর থেকে পুড়ে গেছে মনে হয়। একে হপার বার্ন বলে।
সুতরাং এখনই বোরো ধানের চারা রোপণের সময় লগো পদ্ধতি অনুসরণ করতে পারেন।
লেখক: অসিত কুমার সাহা কৃষিবিদ
সূত্রঃ এগ্রোবাংলা
বসন্ত বাগানে...
Friday, March 30, 2018
নীলমণি
নিষ্পত্র শিমুল, পলাশ, পারিজাতের ডালে যখন দু-একটি ফুল উঁকি দিতে শুরু করে, ধারেকাছে কোথাও কোকিল ডাকে, অবচেতন মন বুঝতে পারে বসন্ত দরজায় কড়া নাড়ছে। ধীরে ধীরে বদলাচ্ছে বাতাসের গতিপ্রকৃতি। বনে বনে, গাছে গাছে পৌঁছে যাচ্ছে ফাগুনের বার্তা। কচি পত্রপল্লবে সুশোভিত হচ্ছে বৃক্ষরাজি। বনে বনে পুষ্পসাজে সজ্জিত হবে বসন্ত বৃক্ষগুলো। পলাশ, পারিজাত, মহুয়া বা শিমুল টবে গুঁজে বারান্দায় বামন আকারে সাজিয়ে হয়তো রাখা যাবে, তাতে ফুলের নিশ্চয়তা নেই বললেই চলে। আপনি যদি বারান্দায় এক টুকরো বাগানে বসন্তের স্বাদ পেতে চান, তাহলে টবেও কয়েকটি গাছ রাখতে পারেন। এসব গাছের জন্য বাড়তি কোনো পরিচর্যার প্রয়োজন নেই। তবে প্রথমেই নিশ্চিত করতে হবে বারান্দায় পর্যাপ্ত রোদ রয়েছে কি না। টব প্রস্তুতের পদ্ধতি একই রকম। এবার দেখা যাক কোন কোন গাছ আমরা টবের জন্য নির্বাচন করব।
কুন্দ
প্রথমেই মাধবীলতার কথা বলা যেতে পারে। তবে মাধবীর কলম সংগ্রহ করতে একটু ঝামেলা হতে পারে। কারণ, প্রকৃত মাধবী নার্সারির চারা বিক্রেতারা চেনেন না। তা ছাড়া চারাও দুর্লভ। সবাই মধু মঞ্জরি লতাকেই মাধবী বলে চালিয়ে দিচ্ছে। মাধবীর সুগন্ধি ফুলগুলো ফোটার জন্য দু-এক বছর অপেক্ষা করতে হবে। তবে প্রথম দু-তিন বছর এ গাছের ডালপালা ছাঁটা যাবে না। তাহলে ফুল ফুটবে না। পরিচর্যা করতে হবে সঠিকভাবে।
সহস্রবেলি
নীলমণির কলম প্রায় সব নার্সারিতেই পাওয়া যাবে। ফুল ফোটার জন্য পর্যাপ্ত রোদ ও জলসেচ করতে হবে। এ দুটি ফুল ফাল্গুনের প্রথম ভাগেই ফুটতে শুরু করবে। প্রথমটির রং পাঁশুটে সাদা, দ্বিতীয়টি গাঢ় নীল। এরা বহুবর্ষজীবী কাষ্ঠল লতার গাছ। বসন্তের বাগানে গুল্ম শ্রেণির কুন্দ ফুলও রাখা যেতে পারে। এটা ফুলবাগানকে আলোকিত করবে। বিখ্যাত কনকচাঁপা মাঝারি উচ্চতার গাছ হলেও এ গাছের সুবিধা হলো তিন-চার বছর বয়স থেকেই হলুদ-সোনালি রঙের ফুলগুলো ফুটতে শুরু করে।
নার্সারিতে এ গাছের পরিচয় পেস্তা বাদামের গাছ। চারা পাওয়া খুব অসম্ভব কিছু নয়। বসন্তে প্রথমে পত্রহীন ডালপালাজুড়ে অসংখ্য ফুলে ভরে ওঠে গাছ। তারপর উজ্জ্বল তামাটে রঙের কচি পাতাগুলো সেই সৌন্দর্যকে আরও মোহনীয় করে তোলে। একইভাবে বারান্দায় সহস্রবেলি থাকতে পারে। এ গাছের গুচ্ছবদ্ধ পাঁশুটে রঙের ফুলগুলো নজরকাড়া। সর্বশেষ আরেকটি ফুলের কথা বলা যেতে পারে। ফুলটির নাম হাপরমালী। বহুবর্ষজীবী সুদর্শন লতানো গাছ। সুগন্ধি ফুলগুলো দেখতে বাটির মতো। ফোটে অজস্র। কলম সহজলভ্য নয়। বড় নার্সারিগুলো থেকে পাওয়া যেতে পারে। এই সব কটি ফুলই আমাদের বন-পাহাড়ের স্থায়ী বাসিন্দা। তাই পরিচর্যার জন্য সাধারণ পদ্ধতিই যথেষ্ট। তবে পোকামাকড় যেন গাছের ক্ষতি করতে না পারে, সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে।
কনকচাঁপা
তথ্যসূত্রঃ প্রথম আলো
বোরো ধানের পরিচর্যা, রোগ নির্ণয় ও ফলন বাড়ানোর উপায়
বোরো ধান চাষে সার ও পরিচর্যা ব্যবস্খাপনা
বোরো ধানের বীজতলা থেকে শুরু করে রোপণ পর্যন্ত একটা বৈরী পরিবেশের মধ্য দিয়ে যায় বলে, বিশেষ কিছু পরিচর্যা ব্যবস্খা গ্রহণ করতে হয়। না হলে বোরোর ফলন মারাত্মকভাবে কমে যায়। বিভিন্ন রোগ ও পোকামাকড়ের উপদ্রব বেড়ে যায়। অন্য দিকে জমিতে ফলন ঠিক রাখার জন্য ধান চাষের আগে-পরে বা পাশাপাশি অন্য জাতের ফসলও চাষ করতে হয়। এতে ধান রোপণের আগে বা কাটার পর মধ্যবর্তী সময়ে স্বল্প সময়ের জন্য একটি ফসল চাষ করলে জমির উর্বরতা রক্ষা করা যায়। বোরো চাষের আগে যদি আলু, সরিষা বা শিমজাতীয় শস্য চাষ করে নেয়া যায় এবং বোরো চাষের পর ধৈঞ্চার চাষ করে মাটিতে মিশিয়ে দেয়া যায়, তাহলে জমির স্বাস্খ্য ঠিক রাখা যায়। কারণ এসব ফসলে সার প্রয়োগ যথাযথভাবে করা হয় ভালো ফলনের জন্য যা পরবর্তী বোরোর জন্যও কাজে লাগে।
জমিতে জৈব পদার্থ যোগ হয়ে জমির উর্বরতা রক্ষা পায়, জমিতে প্রয়োগ করা রাসায়নিক সারের গ্রহণ যথাযথ হয় এবং রাসায়নিক সার ব্যবহারের কারণে জমিতে তৈরি হওয়া বিষাক্ততা কমে যায়। এ জন্য বোরো-রোপা আমন শস্য বিন্যাসে যেসব ফসল ব্যবহারের বা চাষের সুপারিশ করা হয়েছে সেগুলো চাষের ব্যবস্খা নিলে বোরোর উচ্চ ফলন পাওয়া অনেকটাই নিশ্চিত হয়। এসব শস্যবিন্যাস অনুসরণ করলে প্রচলিত শস্যবিন্যাসের চেয়ে প্রতি এককে শতকরা ৩০ থেকে ৩৫ ভাগ বেশি ফলন পাওয়া যেতে পারে।
সেচ সুবিধাপ্রাপ্ত উঁচু ও মাঝারি উঁচু জমির জন্য বোরো চাষের বিভিন্ন শস্যবিন্যাসের সুপারিশ করা হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- ১. বোরো (বিআর ২৬)-রোপা আমন (ব্রিধান ৩২)-সরিষা (টরি ৭); ২. বোরো (বিআর-২৬)-রোপা আমন (ব্রিধান ৩২) -সবুজ সার (শনপাট); ৩. বোরো (ব্রিধান-২৮)-গিমাকলমি-রোপা আমন (ব্রিধান ৩২); ৪. বোরো (বিআর ৩)-পতিত-রোপা আমন (বিআর ১১); ৫. বোরো (বিআর ২৬)-রোপা আমন (ব্রিধান ৩২)-সবজি (মটরশুঁটি/ঝাড়শিম); ৬. অঙ্কুরিত বোনা বোরো (ব্রিধান ২৮)-সবুজ সার-রোপা আমন (বিআর ১১)
বোরোর জমিতে নিয়মিত জৈবসারের বা সবুজ সারের ব্যবস্খা করতে না পারলে যথেষ্ট জৈবসার নিয়মিত প্রয়োগ করতে হয়। আলু বা রবিশস্য চাষের সময় রাসায়নিক সারের সাথে যে জৈব সার ব্যবহার করা হয় অনেকে সেটাকেই যথেষ্ট মনে করেন বোরো চাষের সময়েও। অর্থাৎ বোরোতে জৈব সার কম ব্যবহার করেন। বোরোর জমিতে সঠিক মাত্রায় রাসায়নিক সারের সাথে জৈবসার ব্যবহার করলে আশানুরূপ ফলন পাওয়া সম্ভব।
রবি ফসলে ব্যবহৃত পটাশ, ফসফেট, জিপসাম ও দস্তা সারের প্রভাব পরবর্তী ফসল পর্যন্ত কার্যকর থাকে বলে বোরো চাষে এসব সার অর্ধেক মাত্রায় বা আগের ফসলে ব্যবহৃত পরিমাণের ওপর ভিত্তি করে প্রয়োগ করতে হয়। তবে ইউরিয়া সারের কার্যকারিতা যেহেতু মাটিতে স্বল্প সময় বিদ্যমান থাকে, তাই এই সার আগের ফসলে পরিমিত মাত্রায় ব্যবহার করলেও বোরো চাষের সময়েও মাত্রানুযায়ী ব্যবহার করতে হয়।
পটাশ সারের উপাদান পটাশিয়াম বিভিন্ন ফসল (আলু ও সবজি) মাটি থেকে গড়ে হেক্টর প্রতি প্রায় ১২০-১৪০ কেজি পর্যন্ত গ্রহণ করে। ফসফেট সারের উপাদান ফসফরাস গ্রহণ করে ১৫ থেকে ২০ কেজি এবং গৌণ সার গìধক (জিপসাম) ৭ থেকে ১৫ কেজি ও দস্তা খুবই সামান্য গ্রহণ করে। অবশিষ্ট অংশ জমিতেই থেকে যায়, যা পরবর্তী ফসল হিসেবে বোরো ধানগাছের কাজে লাগে। আর সে জন্যই আগের ফসলে প্রয়োগকৃত এসব সারের পরিমাণ জেনে বোরোতে সার প্রয়োগ করতে হয়।
বোরো চাষে তিন বারে মোট ইউরিয়া সার সমানভাবে ভাগ করে উপরি প্রয়োগ করতে হয়। প্রথমবার জমি তৈরির শেষ সময়ে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হয়। দ্বিতীয়বারে অধিকাংশ ধানগাছের গোছায় ৪ থেকে ৫টি কুশি দেখা গেলে এবং শেষবারে কাউচথোড় হওয়া অবস্খার ৫ থেকে ৭ দিন আগেই দিতে হয়। ইউরিয়া প্রয়োগের সময় মাটিতে অবশ্যই প্রচুর রস থাকতে হয়। ২ থেকে ৩ সেন্টিমিটার পানি থাকা ভালো। ইউরিয়া প্রয়োগের পরপরই হাত দিয়ে বা উইডার দিয়ে জমির আগাছা পরিষ্কারের ব্যবস্খা নিলে এক দিকে যেমন আগাছা নিড়ানোর কাজ করা হয়, অন্য দিকে তেমনি প্রয়োগকৃত সার মাটিতে মিশে যায়। আগাছা পরিষ্কারের ফলে প্রয়োগকৃত ইউরিয়ার যথাসম্ভব বেশি পরিমাণে গাছ গ্রহণ করতে পারে। তবে মনে রাখতে হয় কোনো অবস্খাতেই ইউরিয়ার অতিরিক্ত ব্যবহার ধানের ফলন বাড়ায় না। এ জন্য এলসিসি ব্যবহার বাড়িয়ে অর্থাৎ ধানগাছের পাতার সাথে রঙ মিলিয়ে সঠিক সময়ে ও সঠিক পরিমাণে ইউরিয়া প্রয়োগ করতে হয়। ইউরিয়ার সাশ্রয় বা ব্যবহারে কার্যকারিতা বাড়াতে গুটি ইউরিয়া বোরোর ক্ষেতে ব্যবহার করা যায়। গুটি ইউরিয়ার সুফল পেতে সারি করে রোপণ করা ক্ষেতের কাদামাটিতে প্রতি ৪টি গোছার মাঝে একটি করে গুটি ইউরিয়া প্রয়োগ করতে হয়।
ইউরিয়ার উপরি প্রয়োগের পরও যদি ধানগাছের নতুন পাতা হলুদাভ হতে থাকে এবং গাছের বাড়-বাড়তি ও কুশি সংখ্যা কমে যায়, তাহলে এটি গìধকের কারণে হয়েছে বলে ধরে নিতে হয় এবং দ্রুত পদক্ষেপ হিসেবে জমির পানি সরিয়ে নিয়ে হেক্টর প্রতি ৬০ কেজি হারে জিপসাম সার উপরি প্রয়োগ করতে হয়। জিপসাম সার উপরি প্রয়োগের সময় শুকনো মাটি বা ছাইয়ের সাথে অথবা ইউরিয়া উপরি প্রয়োগের সময় একসাথে মিশিয়ে প্রয়োগ করা যায়। অবস্খা বুঝে গìধক সার ব্যবহার না করলে ধানের শীষের সংখ্যা কম হয়, শীষে পুষ্ট ধানের সংখ্যা কম হয় এবং চিটার সংখ্যাও বেশি হয়। এতে ফলন মারাত্মকভাবে কমে যায়। গìধকের অভাবে আক্রান্ত ক্ষেতের ধান পাকতে যেমন সময় বেশি লাগে তেমনি একই জমির ধান বিভিন্ন সময়ে পাকতে থাকে। এতে ধান কাটতে খুবই অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়।
অনেক সময় বাড়ন্ত ধান গাছের কচি পাতার গোড়া সাদা হয়ে যায়। পরে অন্যান্য বয়সী পাতা হলুদাভ হয় এবং পাতার আগার দিকে বাদামি দাগ দেখা যায় এবং পরে শুকিয়ে যায়। ধানের কুশির সংখ্যাও কমে যায়। ধান ক্ষেতের কোথাও চারা বড় হয় আবার কোথাও চারা ছোট হয়। পাতার আকারও ছোট হয়। এই লক্ষণ দেখা গেলে ধরে নিতে হয় যে জমিতে দস্তার অভাব দেখা দিয়েছে। সেময়ে জমি থেকে পানি বের করে দিতে হয়। এরপর হেক্টর প্রতি ১০ কেজি হারে দস্তা সার উপরি প্রয়োগ করতে হয়। দস্তা সার অপচয়ের হাত থেকে রক্ষার একটি সহজ উপায় হচ্ছে, দু’বারে যথাক্রমে চারা রোপণের ১০ থেকে ১৫ দিন ও ৩০ থেকে ৩৫ দিন পর প্রতি লিটার পরিষ্কার পানিতে ৪.৫ থেকে ৫ গ্রাম দস্তা সার (জিঙ্ক সালফেট) মিশিয়ে স্প্রে করতে হয়।
বোরো ক্ষেতের অন্যান্য পরিচর্যার মধ্যে অন্যতম হলো পানি সেচ ও নিকাশ ব্যবস্খাপনা। চারা রোপণের পর জমিতে পানি এমনভাবে রাখতে হয় যেন চারা কোনো অবস্খাতেই ডুবে না যায়। আবার বোরো ধানের জমিতে সব সময়ই যে পানি ধরে রাখতে হয় তা কিন্তু নয়। একটি সেচের পর আরেকটি সেচ দেয়ার মধ্যবর্তী সময়ে ক্ষেত যদি ৩ থেকে ৪ দিন শুকনো রাখা যায় তাহলে ধানগাছের বৃদ্ধি কমে না, বরং পানির সাশ্রয় হয় মোট পানি খরচের ২৫ থেকে ৩০ ভাগ। যেসব এলাকায় গভীর নলকূপ দিয়ে সেচ দেয়া হয় সেসব এলাকার জমিতে এভাবে সেচ দিলে বর্তমানে যে পরিমাণ জমিতে পানি সেচ দেয়া যায়, তার চেয়েও প্রায় ৪০ ভাগ বেশি জমিতে সেচ দেয়া সম্ভব হতে পারে। এতে এক দিকে যেমন পানির খরচ কমে, অন্য দিকে তেমনি চাষের এলাকা বৃদ্ধি করাও সম্ভব। আবার বেশি পানি খরচ না করায় পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ারও আশঙ্কা কমে যায়। বোরো ক্ষেতে কাইচথোড় আসা পর্যন্ত এভাবে পানি সেচ দেয়া যায়। তবে কাইচথোড় অবস্খা শুরু হলে জমিতে ৫ থেকে ৭ সেন্টিমিটার গভীরতায় পানি রাখা ভালো।
সার প্রয়োগর আগে জমি থেকে পানি কমিয়ে উপরি প্রয়োগ করতে হয়। এর ২ থেকে ৩ দিন পর পুনরায় জমিতে পরিমিত পানি সেচ দিলে প্রয়োগকৃত সারের কার্যকারিতা বাড়ে। জমিতে পানি ধরে রেখে দানাদার বালাইনাশক ব্যবহার করলে এর কার্যকারিতাও বাড়ে। ধানের দানা গঠন থেকে শুরু করে ধান পাকার আগে দানা শক্ত হওয়ার সময় পর্যন্ত জমিতে পানি ধরে রাখলেই চলে। দানা শক্ত হতে শুরু করলেই জমি থেকে পানি সরিয়ে জমি ভেজা ভেজা অবস্খায় রাখতে হয়।
জমির আইল কেটে সাধারণত সেচ দেয়া হয়। এতে জমির মাটি ও পানির অপসারণ ও অপচয় হয়। এই অবস্খা রোধ করতে প্লাস্টিকের ফিতা বা পিভিসি পাইপ ব্যবহার করলে মাটির অপসারণ ও পানির অপচয় রোধ করার সাথে সাথে সেচের খরচও কমানো যায়। কারণ কাঁচা নালার তুলনায় এই ব্যবস্খায় শতকরা প্রায় ৪২ ভাগ বেশি জমিতে সেচ দেয়া সম্ভব হয়।
লেখক: খোন্দকার মেসবাহুল ইসলাম, কৃষিবিদ
এগ্রোবাংলা
জমিতে জৈব পদার্থ যোগ হয়ে জমির উর্বরতা রক্ষা পায়, জমিতে প্রয়োগ করা রাসায়নিক সারের গ্রহণ যথাযথ হয় এবং রাসায়নিক সার ব্যবহারের কারণে জমিতে তৈরি হওয়া বিষাক্ততা কমে যায়। এ জন্য বোরো-রোপা আমন শস্য বিন্যাসে যেসব ফসল ব্যবহারের বা চাষের সুপারিশ করা হয়েছে সেগুলো চাষের ব্যবস্খা নিলে বোরোর উচ্চ ফলন পাওয়া অনেকটাই নিশ্চিত হয়। এসব শস্যবিন্যাস অনুসরণ করলে প্রচলিত শস্যবিন্যাসের চেয়ে প্রতি এককে শতকরা ৩০ থেকে ৩৫ ভাগ বেশি ফলন পাওয়া যেতে পারে।
সেচ সুবিধাপ্রাপ্ত উঁচু ও মাঝারি উঁচু জমির জন্য বোরো চাষের বিভিন্ন শস্যবিন্যাসের সুপারিশ করা হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- ১. বোরো (বিআর ২৬)-রোপা আমন (ব্রিধান ৩২)-সরিষা (টরি ৭); ২. বোরো (বিআর-২৬)-রোপা আমন (ব্রিধান ৩২) -সবুজ সার (শনপাট); ৩. বোরো (ব্রিধান-২৮)-গিমাকলমি-রোপা আমন (ব্রিধান ৩২); ৪. বোরো (বিআর ৩)-পতিত-রোপা আমন (বিআর ১১); ৫. বোরো (বিআর ২৬)-রোপা আমন (ব্রিধান ৩২)-সবজি (মটরশুঁটি/ঝাড়শিম); ৬. অঙ্কুরিত বোনা বোরো (ব্রিধান ২৮)-সবুজ সার-রোপা আমন (বিআর ১১)
বোরোর জমিতে নিয়মিত জৈবসারের বা সবুজ সারের ব্যবস্খা করতে না পারলে যথেষ্ট জৈবসার নিয়মিত প্রয়োগ করতে হয়। আলু বা রবিশস্য চাষের সময় রাসায়নিক সারের সাথে যে জৈব সার ব্যবহার করা হয় অনেকে সেটাকেই যথেষ্ট মনে করেন বোরো চাষের সময়েও। অর্থাৎ বোরোতে জৈব সার কম ব্যবহার করেন। বোরোর জমিতে সঠিক মাত্রায় রাসায়নিক সারের সাথে জৈবসার ব্যবহার করলে আশানুরূপ ফলন পাওয়া সম্ভব।
রবি ফসলে ব্যবহৃত পটাশ, ফসফেট, জিপসাম ও দস্তা সারের প্রভাব পরবর্তী ফসল পর্যন্ত কার্যকর থাকে বলে বোরো চাষে এসব সার অর্ধেক মাত্রায় বা আগের ফসলে ব্যবহৃত পরিমাণের ওপর ভিত্তি করে প্রয়োগ করতে হয়। তবে ইউরিয়া সারের কার্যকারিতা যেহেতু মাটিতে স্বল্প সময় বিদ্যমান থাকে, তাই এই সার আগের ফসলে পরিমিত মাত্রায় ব্যবহার করলেও বোরো চাষের সময়েও মাত্রানুযায়ী ব্যবহার করতে হয়।
পটাশ সারের উপাদান পটাশিয়াম বিভিন্ন ফসল (আলু ও সবজি) মাটি থেকে গড়ে হেক্টর প্রতি প্রায় ১২০-১৪০ কেজি পর্যন্ত গ্রহণ করে। ফসফেট সারের উপাদান ফসফরাস গ্রহণ করে ১৫ থেকে ২০ কেজি এবং গৌণ সার গìধক (জিপসাম) ৭ থেকে ১৫ কেজি ও দস্তা খুবই সামান্য গ্রহণ করে। অবশিষ্ট অংশ জমিতেই থেকে যায়, যা পরবর্তী ফসল হিসেবে বোরো ধানগাছের কাজে লাগে। আর সে জন্যই আগের ফসলে প্রয়োগকৃত এসব সারের পরিমাণ জেনে বোরোতে সার প্রয়োগ করতে হয়।
বোরো চাষে তিন বারে মোট ইউরিয়া সার সমানভাবে ভাগ করে উপরি প্রয়োগ করতে হয়। প্রথমবার জমি তৈরির শেষ সময়ে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হয়। দ্বিতীয়বারে অধিকাংশ ধানগাছের গোছায় ৪ থেকে ৫টি কুশি দেখা গেলে এবং শেষবারে কাউচথোড় হওয়া অবস্খার ৫ থেকে ৭ দিন আগেই দিতে হয়। ইউরিয়া প্রয়োগের সময় মাটিতে অবশ্যই প্রচুর রস থাকতে হয়। ২ থেকে ৩ সেন্টিমিটার পানি থাকা ভালো। ইউরিয়া প্রয়োগের পরপরই হাত দিয়ে বা উইডার দিয়ে জমির আগাছা পরিষ্কারের ব্যবস্খা নিলে এক দিকে যেমন আগাছা নিড়ানোর কাজ করা হয়, অন্য দিকে তেমনি প্রয়োগকৃত সার মাটিতে মিশে যায়। আগাছা পরিষ্কারের ফলে প্রয়োগকৃত ইউরিয়ার যথাসম্ভব বেশি পরিমাণে গাছ গ্রহণ করতে পারে। তবে মনে রাখতে হয় কোনো অবস্খাতেই ইউরিয়ার অতিরিক্ত ব্যবহার ধানের ফলন বাড়ায় না। এ জন্য এলসিসি ব্যবহার বাড়িয়ে অর্থাৎ ধানগাছের পাতার সাথে রঙ মিলিয়ে সঠিক সময়ে ও সঠিক পরিমাণে ইউরিয়া প্রয়োগ করতে হয়। ইউরিয়ার সাশ্রয় বা ব্যবহারে কার্যকারিতা বাড়াতে গুটি ইউরিয়া বোরোর ক্ষেতে ব্যবহার করা যায়। গুটি ইউরিয়ার সুফল পেতে সারি করে রোপণ করা ক্ষেতের কাদামাটিতে প্রতি ৪টি গোছার মাঝে একটি করে গুটি ইউরিয়া প্রয়োগ করতে হয়।
ইউরিয়ার উপরি প্রয়োগের পরও যদি ধানগাছের নতুন পাতা হলুদাভ হতে থাকে এবং গাছের বাড়-বাড়তি ও কুশি সংখ্যা কমে যায়, তাহলে এটি গìধকের কারণে হয়েছে বলে ধরে নিতে হয় এবং দ্রুত পদক্ষেপ হিসেবে জমির পানি সরিয়ে নিয়ে হেক্টর প্রতি ৬০ কেজি হারে জিপসাম সার উপরি প্রয়োগ করতে হয়। জিপসাম সার উপরি প্রয়োগের সময় শুকনো মাটি বা ছাইয়ের সাথে অথবা ইউরিয়া উপরি প্রয়োগের সময় একসাথে মিশিয়ে প্রয়োগ করা যায়। অবস্খা বুঝে গìধক সার ব্যবহার না করলে ধানের শীষের সংখ্যা কম হয়, শীষে পুষ্ট ধানের সংখ্যা কম হয় এবং চিটার সংখ্যাও বেশি হয়। এতে ফলন মারাত্মকভাবে কমে যায়। গìধকের অভাবে আক্রান্ত ক্ষেতের ধান পাকতে যেমন সময় বেশি লাগে তেমনি একই জমির ধান বিভিন্ন সময়ে পাকতে থাকে। এতে ধান কাটতে খুবই অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়।
অনেক সময় বাড়ন্ত ধান গাছের কচি পাতার গোড়া সাদা হয়ে যায়। পরে অন্যান্য বয়সী পাতা হলুদাভ হয় এবং পাতার আগার দিকে বাদামি দাগ দেখা যায় এবং পরে শুকিয়ে যায়। ধানের কুশির সংখ্যাও কমে যায়। ধান ক্ষেতের কোথাও চারা বড় হয় আবার কোথাও চারা ছোট হয়। পাতার আকারও ছোট হয়। এই লক্ষণ দেখা গেলে ধরে নিতে হয় যে জমিতে দস্তার অভাব দেখা দিয়েছে। সেময়ে জমি থেকে পানি বের করে দিতে হয়। এরপর হেক্টর প্রতি ১০ কেজি হারে দস্তা সার উপরি প্রয়োগ করতে হয়। দস্তা সার অপচয়ের হাত থেকে রক্ষার একটি সহজ উপায় হচ্ছে, দু’বারে যথাক্রমে চারা রোপণের ১০ থেকে ১৫ দিন ও ৩০ থেকে ৩৫ দিন পর প্রতি লিটার পরিষ্কার পানিতে ৪.৫ থেকে ৫ গ্রাম দস্তা সার (জিঙ্ক সালফেট) মিশিয়ে স্প্রে করতে হয়।
বোরো ক্ষেতের অন্যান্য পরিচর্যার মধ্যে অন্যতম হলো পানি সেচ ও নিকাশ ব্যবস্খাপনা। চারা রোপণের পর জমিতে পানি এমনভাবে রাখতে হয় যেন চারা কোনো অবস্খাতেই ডুবে না যায়। আবার বোরো ধানের জমিতে সব সময়ই যে পানি ধরে রাখতে হয় তা কিন্তু নয়। একটি সেচের পর আরেকটি সেচ দেয়ার মধ্যবর্তী সময়ে ক্ষেত যদি ৩ থেকে ৪ দিন শুকনো রাখা যায় তাহলে ধানগাছের বৃদ্ধি কমে না, বরং পানির সাশ্রয় হয় মোট পানি খরচের ২৫ থেকে ৩০ ভাগ। যেসব এলাকায় গভীর নলকূপ দিয়ে সেচ দেয়া হয় সেসব এলাকার জমিতে এভাবে সেচ দিলে বর্তমানে যে পরিমাণ জমিতে পানি সেচ দেয়া যায়, তার চেয়েও প্রায় ৪০ ভাগ বেশি জমিতে সেচ দেয়া সম্ভব হতে পারে। এতে এক দিকে যেমন পানির খরচ কমে, অন্য দিকে তেমনি চাষের এলাকা বৃদ্ধি করাও সম্ভব। আবার বেশি পানি খরচ না করায় পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ারও আশঙ্কা কমে যায়। বোরো ক্ষেতে কাইচথোড় আসা পর্যন্ত এভাবে পানি সেচ দেয়া যায়। তবে কাইচথোড় অবস্খা শুরু হলে জমিতে ৫ থেকে ৭ সেন্টিমিটার গভীরতায় পানি রাখা ভালো।
সার প্রয়োগর আগে জমি থেকে পানি কমিয়ে উপরি প্রয়োগ করতে হয়। এর ২ থেকে ৩ দিন পর পুনরায় জমিতে পরিমিত পানি সেচ দিলে প্রয়োগকৃত সারের কার্যকারিতা বাড়ে। জমিতে পানি ধরে রেখে দানাদার বালাইনাশক ব্যবহার করলে এর কার্যকারিতাও বাড়ে। ধানের দানা গঠন থেকে শুরু করে ধান পাকার আগে দানা শক্ত হওয়ার সময় পর্যন্ত জমিতে পানি ধরে রাখলেই চলে। দানা শক্ত হতে শুরু করলেই জমি থেকে পানি সরিয়ে জমি ভেজা ভেজা অবস্খায় রাখতে হয়।
জমির আইল কেটে সাধারণত সেচ দেয়া হয়। এতে জমির মাটি ও পানির অপসারণ ও অপচয় হয়। এই অবস্খা রোধ করতে প্লাস্টিকের ফিতা বা পিভিসি পাইপ ব্যবহার করলে মাটির অপসারণ ও পানির অপচয় রোধ করার সাথে সাথে সেচের খরচও কমানো যায়। কারণ কাঁচা নালার তুলনায় এই ব্যবস্খায় শতকরা প্রায় ৪২ ভাগ বেশি জমিতে সেচ দেয়া সম্ভব হয়।
লেখক: খোন্দকার মেসবাহুল ইসলাম, কৃষিবিদ
এগ্রোবাংলা
বোরোধানের রোগ নির্ণয়
ধান উৎপাদনে পোকার পাশাপাশি রোগও একটি সমস্যা। চাষি ভাইয়েরা ধানের পোকা নিয়ন্ত্রণে যতটা গুরুত্ব দেন, রোগ নিয়ন্ত্রণে ততটা দেন না। রোগের লক্ষণ শনাক্তকরণে তাদের যথেষ্ট অভিজ্ঞতা না থাকায় তারা মাঠে ধানের রোগ নির্ণয় করতে পারেন না এবং সঠিকভাবে রোগ চিনতে না পারায় সঠিক ব্যবস্খাপনাও গ্রহণ করতে পারেন না। ফলে তাদের অজান্তেই ফলনের ক্ষতি হয় ও আক্রান্ত গাছের মাধ্যমে রোগের জীবাণু বীজেও ছড়িয়ে পড়ে। এসব বীজ রেখে পরের মওসুমে তা দিয়ে ধান চাষ করলে সেসব ধানক্ষেতেও রোগের সংক্রমণ ঘটে। এ অবস্খা থেকে পরিত্রাণ পেতে চাষিরা যাতে সহজে মাঠে ধানের রোগ নির্ণয় করতে পারে সেই কৌশলগুলো জানা দরকার। পাশাপাশি রোগ চেনার পর যদি তা ক্ষেতে দেখা দেয় তাহলে তাদের করণীয় কী তাও জানা দরকার।
ধানের রোগ ধানগাছ বীজ গজানো থেকে শুরু করে পাকা পর্যন্ত নানা রোগে আক্রান্ত হয়। এর মধ্যে টুংরো, পাতাপোড়া, ব্লাস্ট, খোলপোড়া ও বাঁকানি প্রধান রোগ। এসব রোগের বেশির ভাগই বীজবাহিত। কাজেই বীজ সংগ্রহের জন্য নির্বাচিত ক্ষেত বা ফসলের অংশ যাতে এসব রোগে আক্রান্ত না হয় সে দিকে খেয়াল রাখা দরকার।
বাদামি দাগ রোগ নির্ণয় কৌশল : বীজ থেকে খুব বেশি হলুদ রঙের ভ্রূণকাণ্ড এবং ভ্রূণমূলে বাদামি বিবর্ণতা দেখা যায় তাহলে বুঝতে হবে বীজটি এক ধরনের ছত্রাক জীবাণুতে আক্রান্ত। এ রোগে পাতার ওপর প্রথমে বিন্দু বিন্দু গোলাকার ছোট গাঢ় বাদামি বা বেগুনি রঙের দাগ পড়ে। ধীরে ধীরে দাগগুলো বাড়তে থাকে ও ডিম্বাকার বাদামি রঙ ধারণ করে। দাগের কেন্দ্রস্খল থাকে ধূসর বা সাদা। বেশির ভাগ দাগেরই চারপাশে হালকা হলুদ রঙের বলয় থাকে। অনুকূল পরিবেশে ধীরে ধীরে দাগ সমগ্র শীষের দানায় ছড়িয়ে পড়ে এবং দানা চিটা হয়ে যায় ও ফলন কমে যায়।
সমন্বিত ব্যবস্খাপনা - বোনার আগে বীজ বাছাই করে বাদামি দাগযুক্ত রোগা বীজ বাদ দেয়া। সম্ভব হলে বীজ শোধন করা।
- রোগমুক্ত চারা রোপণ করা।
- জমিতে পটাশ, দস্তা ইত্যাদির অভাব থাকলে তা পূরণ করা ও সুষম মাত্রায় সার ব্যবহার করা।
- সুস্খ গাছ থেকে বীজ সংগ্রহ করা।
- বীজতলা বা জমি সব সময় ভেজা বা স্যাঁতসেঁতে বা ভেজা রাখা।
বাঁকানি রোগ নির্ণয় কৌশল চারার পাতায় যদি ধূসর থেকে সাদাটে দাগ দেখা যায় ও চারাকে যদি হলদে-সবুজ মনে হয় এবং অস্বাভাবিক লম্বা হয়ে যায় তাহলে বুঝতে হবে চারা ছত্রাক জীবাণুতে আক্রান্ত হয়েছে, যা বাঁকানি রোগ সৃষ্টি করে। আর যদি দাগের চার পাশে হলুদ বলয় দেখা যায় ও অস্বাভাবিকভাবে গাছ লম্বা হয়ে যায়, সুস্খ গাছের চেয়ে আগে ফুল চলে আসে, নিচের গিঁট থেকে শাখায়িত শিকড় বৃদ্ধি লাভ করে ও শীষের দানা চিটা হয়ে যায় তাহলে বুঝতে হবে গাছটি বাঁকানি রোগে আক্রান্ত হয়েছে।
সমন্বিত ব্যবস্খাপনা - একই জমি বীজতলার জন্য ব্যবহার না করা।
- আক্রান্ত গাছ তুলে পুড়িয়ে ফেলা।
- কিছুটা প্রতিরোধসম্পন্ন ধানের জাত চাষ করা।
- বীজতলা আর্দ্র বা ভিজে রাখা।
- বীজ শোধন করা।
পাতাপোড়া রোগ নির্ণয় কৌশল যদি চারার পাতায় পানিভেজা দাগ দেখা যায়, ভ্রূণকাণ্ড বাদামি হয়ে আসে ও পাতা হলুদ হতে শুরু করে তাহলে বুঝতে হবে চারাগুলো ব্যাকটেরিয়া জীবাণুতে আক্রান্ত হয়েছে যা ধানের পাতাপোড়া রোগ সৃষ্টি করে। দাগগুলো পাতার এক প্রান্ত, উভয় প্রান্ত বা ক্ষত পাতার যেকোনো জায়গা থেকে শুরু হয়ে আস্তে আস্তে পুরো পাতা ঝলসে বা পুড়ে খড়ের মতো হয়ে শুকিয়ে যায়। আক্রমণপ্রবণ জাতের ধানে দাগগুলো পাতার খোলের নিচ পর্যন্ত যেতে পারে। এক সময় সম্পূর্ণ পাতাটি ঝলসে যায় বা পুড়ে খড়ের মতো হয়ে শুকিয়ে যায়।
সমন্বিত ব্যবস্খাপনা - রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন জাতের ধান চাষ করা।
- সুষম মাত্রায় সার প্রয়োগ করা।
- আক্রান্ত গাছ তুলে ফেলে পাশের গাছ থেকে কুশি এনে লাগিয়ে দেয়া।
- আক্রান্ত ক্ষেতের পানি বের করে দিয়ে জমি ভেদে ৭-১০ দিন শুকানো।
- জমি শুকিয়ে নাড়া ক্ষেতে পুড়িয়ে ফেলা।
- আক্রান্ত ক্ষেতে নাইট্রোজেন সার প্রয়োগ না করা।
- আক্রান্ত ক্ষেতে বিঘা প্রতি ৫ কেজি পটাশ সার প্রয়োগ করে মাটিতে ভালোভাবে মিশিয়ে দিলে এ রোগের তীব্রতা কমে।
ব্লাস্ট রোগ নির্ণয় কৌশল যদি পাতায় সাদাটে থেকে ধূসর দাগগুলো ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে ও অনেক পাতায় দেখা যায় এবং অনেক দাগ মিলে অ্যাসিড পোড়ার মতো হয়ে যায় তাহলে বুঝতে হবে গাছটি ছত্রাক জীবাণু বা ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত হয়েছে। এ রোগের ফলে গিঁট ও শীষ ব্লাস্টও সৃষ্টি হতে পারে। সে ক্ষেত্রে গিঁট ও শীষের গোড়ায় কালচে পচন দাগ দেখা যায়।
সমন্বিত ব্যবস্খাপনা - বোনার আগে বীজ বাছাই করে দাগযুক্ত রোগা বীজ বাদ দেয়া।
- রোগমুক্ত জমি থেকে বীজ সংগ্রহ করা।
- সুষম মাত্রায় ইউরিয়া সার প্রয়োগ করা।
- জমিতে সব সময় পানি রাখা।
- ব্লাস্ট রোগ প্রতিরোধক জাতের ধান চাষ করা।
খোলপোড়া রোগ নির্ণয় কৌশল গাছের গোড়ার খোলে যদি গোখরো সাপের চামড়ার মতো পোড়া লক্ষণ দেখা যায় তাহলে বুঝতে হবে গাছটি ছত্রাক জীবাণু বা খোলপোড়া রোগে আক্রান্ত হয়েছে। এ রোগের ফলে নিচের বয়স্ক পাতা এমনকি শীষও একইভাবে আক্রান্ত হয়।
সমন্বিত ব্যবস্খাপনা - পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন চাষ করা।
- লাঙ্গল দিয়ে জমি চাষ করে শুকিয়ে নিয়ে নাড়া জমিতেই পুড়িয়ে ফেলা।
- সুষমভাবে ইউরিয়া, টিএসপি ও পটাশ সার ব্যবহার করা।
- ধানের জাত অনুসারে সঠিক দূরত্বে চারা রোপণ করা।
- রোগ দেখার পর ১৫ দিন অন্তর বিঘাপ্রতি ৫ কেজি এমওপি সার দুই কিস্তিতে দিলে ভালো ফল পাওয়া যায়।
লেখক: মকবুল হোসেন তালুকদার কৃষিবিদ
এগ্রোবাংলা
ধানের রোগ ধানগাছ বীজ গজানো থেকে শুরু করে পাকা পর্যন্ত নানা রোগে আক্রান্ত হয়। এর মধ্যে টুংরো, পাতাপোড়া, ব্লাস্ট, খোলপোড়া ও বাঁকানি প্রধান রোগ। এসব রোগের বেশির ভাগই বীজবাহিত। কাজেই বীজ সংগ্রহের জন্য নির্বাচিত ক্ষেত বা ফসলের অংশ যাতে এসব রোগে আক্রান্ত না হয় সে দিকে খেয়াল রাখা দরকার।
বাদামি দাগ রোগ নির্ণয় কৌশল : বীজ থেকে খুব বেশি হলুদ রঙের ভ্রূণকাণ্ড এবং ভ্রূণমূলে বাদামি বিবর্ণতা দেখা যায় তাহলে বুঝতে হবে বীজটি এক ধরনের ছত্রাক জীবাণুতে আক্রান্ত। এ রোগে পাতার ওপর প্রথমে বিন্দু বিন্দু গোলাকার ছোট গাঢ় বাদামি বা বেগুনি রঙের দাগ পড়ে। ধীরে ধীরে দাগগুলো বাড়তে থাকে ও ডিম্বাকার বাদামি রঙ ধারণ করে। দাগের কেন্দ্রস্খল থাকে ধূসর বা সাদা। বেশির ভাগ দাগেরই চারপাশে হালকা হলুদ রঙের বলয় থাকে। অনুকূল পরিবেশে ধীরে ধীরে দাগ সমগ্র শীষের দানায় ছড়িয়ে পড়ে এবং দানা চিটা হয়ে যায় ও ফলন কমে যায়।
সমন্বিত ব্যবস্খাপনা - বোনার আগে বীজ বাছাই করে বাদামি দাগযুক্ত রোগা বীজ বাদ দেয়া। সম্ভব হলে বীজ শোধন করা।
- রোগমুক্ত চারা রোপণ করা।
- জমিতে পটাশ, দস্তা ইত্যাদির অভাব থাকলে তা পূরণ করা ও সুষম মাত্রায় সার ব্যবহার করা।
- সুস্খ গাছ থেকে বীজ সংগ্রহ করা।
- বীজতলা বা জমি সব সময় ভেজা বা স্যাঁতসেঁতে বা ভেজা রাখা।
বাঁকানি রোগ নির্ণয় কৌশল চারার পাতায় যদি ধূসর থেকে সাদাটে দাগ দেখা যায় ও চারাকে যদি হলদে-সবুজ মনে হয় এবং অস্বাভাবিক লম্বা হয়ে যায় তাহলে বুঝতে হবে চারা ছত্রাক জীবাণুতে আক্রান্ত হয়েছে, যা বাঁকানি রোগ সৃষ্টি করে। আর যদি দাগের চার পাশে হলুদ বলয় দেখা যায় ও অস্বাভাবিকভাবে গাছ লম্বা হয়ে যায়, সুস্খ গাছের চেয়ে আগে ফুল চলে আসে, নিচের গিঁট থেকে শাখায়িত শিকড় বৃদ্ধি লাভ করে ও শীষের দানা চিটা হয়ে যায় তাহলে বুঝতে হবে গাছটি বাঁকানি রোগে আক্রান্ত হয়েছে।
সমন্বিত ব্যবস্খাপনা - একই জমি বীজতলার জন্য ব্যবহার না করা।
- আক্রান্ত গাছ তুলে পুড়িয়ে ফেলা।
- কিছুটা প্রতিরোধসম্পন্ন ধানের জাত চাষ করা।
- বীজতলা আর্দ্র বা ভিজে রাখা।
- বীজ শোধন করা।
পাতাপোড়া রোগ নির্ণয় কৌশল যদি চারার পাতায় পানিভেজা দাগ দেখা যায়, ভ্রূণকাণ্ড বাদামি হয়ে আসে ও পাতা হলুদ হতে শুরু করে তাহলে বুঝতে হবে চারাগুলো ব্যাকটেরিয়া জীবাণুতে আক্রান্ত হয়েছে যা ধানের পাতাপোড়া রোগ সৃষ্টি করে। দাগগুলো পাতার এক প্রান্ত, উভয় প্রান্ত বা ক্ষত পাতার যেকোনো জায়গা থেকে শুরু হয়ে আস্তে আস্তে পুরো পাতা ঝলসে বা পুড়ে খড়ের মতো হয়ে শুকিয়ে যায়। আক্রমণপ্রবণ জাতের ধানে দাগগুলো পাতার খোলের নিচ পর্যন্ত যেতে পারে। এক সময় সম্পূর্ণ পাতাটি ঝলসে যায় বা পুড়ে খড়ের মতো হয়ে শুকিয়ে যায়।
সমন্বিত ব্যবস্খাপনা - রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন জাতের ধান চাষ করা।
- সুষম মাত্রায় সার প্রয়োগ করা।
- আক্রান্ত গাছ তুলে ফেলে পাশের গাছ থেকে কুশি এনে লাগিয়ে দেয়া।
- আক্রান্ত ক্ষেতের পানি বের করে দিয়ে জমি ভেদে ৭-১০ দিন শুকানো।
- জমি শুকিয়ে নাড়া ক্ষেতে পুড়িয়ে ফেলা।
- আক্রান্ত ক্ষেতে নাইট্রোজেন সার প্রয়োগ না করা।
- আক্রান্ত ক্ষেতে বিঘা প্রতি ৫ কেজি পটাশ সার প্রয়োগ করে মাটিতে ভালোভাবে মিশিয়ে দিলে এ রোগের তীব্রতা কমে।
ব্লাস্ট রোগ নির্ণয় কৌশল যদি পাতায় সাদাটে থেকে ধূসর দাগগুলো ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে ও অনেক পাতায় দেখা যায় এবং অনেক দাগ মিলে অ্যাসিড পোড়ার মতো হয়ে যায় তাহলে বুঝতে হবে গাছটি ছত্রাক জীবাণু বা ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত হয়েছে। এ রোগের ফলে গিঁট ও শীষ ব্লাস্টও সৃষ্টি হতে পারে। সে ক্ষেত্রে গিঁট ও শীষের গোড়ায় কালচে পচন দাগ দেখা যায়।
সমন্বিত ব্যবস্খাপনা - বোনার আগে বীজ বাছাই করে দাগযুক্ত রোগা বীজ বাদ দেয়া।
- রোগমুক্ত জমি থেকে বীজ সংগ্রহ করা।
- সুষম মাত্রায় ইউরিয়া সার প্রয়োগ করা।
- জমিতে সব সময় পানি রাখা।
- ব্লাস্ট রোগ প্রতিরোধক জাতের ধান চাষ করা।
খোলপোড়া রোগ নির্ণয় কৌশল গাছের গোড়ার খোলে যদি গোখরো সাপের চামড়ার মতো পোড়া লক্ষণ দেখা যায় তাহলে বুঝতে হবে গাছটি ছত্রাক জীবাণু বা খোলপোড়া রোগে আক্রান্ত হয়েছে। এ রোগের ফলে নিচের বয়স্ক পাতা এমনকি শীষও একইভাবে আক্রান্ত হয়।
সমন্বিত ব্যবস্খাপনা - পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন চাষ করা।
- লাঙ্গল দিয়ে জমি চাষ করে শুকিয়ে নিয়ে নাড়া জমিতেই পুড়িয়ে ফেলা।
- সুষমভাবে ইউরিয়া, টিএসপি ও পটাশ সার ব্যবহার করা।
- ধানের জাত অনুসারে সঠিক দূরত্বে চারা রোপণ করা।
- রোগ দেখার পর ১৫ দিন অন্তর বিঘাপ্রতি ৫ কেজি এমওপি সার দুই কিস্তিতে দিলে ভালো ফল পাওয়া যায়।
লেখক: মকবুল হোসেন তালুকদার কৃষিবিদ
এগ্রোবাংলা
বোরো ধানের ফলন বাড়ানোর উপায়
বোরো ধানের ফল বৃদ্ধির কিছু কৌশল এখানে উল্লেখ করা হলো।
এক. উচ্চ ফলনশীল জাতের ধান চাষ করা।যেমন: বিআর১, বিআর৩, বিআর৬, বিআর৭, বিআর৮, বিআর৯, বিআর১১, বিআর১২, বিআর১৪, বিআর১৫, বিআর১৬, বিআর১৭, বিআর১৮, বিআর১৯, ব্রিধান২৮, ব্রিধান২৯, ব্রিধান৩৫, ব্রিধান৩৬, ব্রিহাইব্রিড ধান-১, ব্রিহাইব্রিড ধান-২, বিনাধান-৫, বিনাধান-৬, ইরাটম-২৪ ইত্যাদি।
দুই. সুষম মাত্রায় সঠিক সময়ে সার দেয়া। শেষ চাষের সাথে প্রতি বিঘায় টিএসপি ১৩ কেজি, এমওপি ১২ কেজি, জিপসাম ৮ কেজি, গìধক ৬ কেজি ও দস্তা এক কেজি মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে। চারা রোপণের ১০-১৫ দিন পর ০.৯ গ্রাম আকারের তিনটি বা ২.৭-৩.০ গ্রাম আকারের একটি গুটি ইউরিয়া চারগুছির মাঝখানে ৪-৫ সেমি গভীরে প্রয়োগ করতে হয়। এতে প্রতি বিঘায় ২১-২২ কেজি গুটি ইউরিয়া লাগে। ধান কাটা পর্যন্ত একবার প্রয়োগ করলেই হয়। ২০-২৫ শতাংশ ফলন বেশি হয়। এতে প্রতি বিঘায় চার-পাঁচ মণ ধান বেশি হয়। ৩৫-৪০ শতাংশ ইউরিয়া কম লাগে।
তিন. পৌষ-মাঘ মাসের মধ্যে বোরো ধান রোপণ করলে ফলন বেশি হয়।সারি থেকে সারির দূরত্ব ২০-২৫ সেমি এবং গুছি থেকে গুছির দূরত্ব ১৫-২০ সেমি। চারার বয়স ৪০-৫০ দিন। চারা একটু গভীরে রোপণ করলে বেশি পুষ্টি গ্রহণ করতে পারে। জমি সমতল করতে হবে। চারা সুস্খ, সবল, সবুজ ও সতেজ হতে হবে। প্রতি গোছায় এক-দু’টি চারা রোপণ করতে হবে। চারা মরে গেলে পুনরায় নতুন চারা রোপণ করতে হবে। চারা বিলম্বে রোপণ করলে পরাগায়ণ হয় না, ফলে ধান চিটা হয়।
চার. সার দেয়ার আগে আগাছা পরিষ্কার করতে হবে। গবেষণায় দেখা গেছে, আগাছা ২০-২৫ শতাংশ ফলন কমিয়ে দেয়। কারণ আগাছা পুষ্টি শোষণ করে। সঠিক সময়ে আগাছা দমন করলে ২০-২৫ শতাংশ ফলন বাড়ে।
পাঁচ. সঠিক সময়ে সেচ দিলে ১৫-২৫ ভাগ ফলন বাড়ে। চারা রোপণের পর থেকে কুশি গজানো পর্যন্ত ছিপছিপে পানি রাখলেই হবে। কাইচ থোড় আসার আগেই পানির পরিমাণ দ্বিগুণ করতে হবে। সার প্রয়োগের দুই-তিন দিন পর সেচ দিলে সারের কার্যকারিতা বাড়ে। কুশিস্তরে জমিতে পানি না রাখলে কুশি বাড়ে। ধান পাকার সময় ধান শক্ত হলেই জমি থেকে পানি সরিয়ে দিতে হবে।
ছয়. সঠিক সময়ে রোগ ও পোকামাকড় দমন করলে ১৫ থেকে ২০ শতাংশ ফলন বেশি হয়। দেশে ধানের ৩১টি রোগ এবং ১৭৫ প্রজাতির পোকা আক্রমণ করে। এর মধ্যে ১০টি রোগ এবং ২০ থেকে ৩০টি পোকার মারাত্মক ক্ষতি করে। মারাত্মক ক্ষতিকর পোকা হচ্ছে হলুদ মাজরা পোকা, পামরিপোকা, চুঙ্গিপোকা, ঘাসফড়িং, পাতার লেদাপোকা, সবুজ পাতাফড়িং, বাদামিগাছ ফড়িং ইত্যাদি। এসব পোকা হাতজাল, আলোর ফাঁদ, ক্ষেতে ডাল পুঁতা, জমির পানি বের করা, সেক্স ফেরোমেন ফাঁদ ও কীটনাশক দিয়ে দমন করা যায়। মারাত্মক রোগের মধ্যেন্ধ টুংরো, পাতাপোড়া, ব্লাস্ট, খোলপড়া, খোলপচা ইত্যাদি। এসব রোগ প্রতিরোধের জন্য রোগমুক্ত বীজ, বালাই সহনশীল জাতের চাষ, সুষম সার প্রয়োগ, সঠিক দূরত্বে চারা রোপণ, সমকালীন চাষাবাদ ইত্যাদি পদ্ধতি অবলম্বন করা যেতে পারে। এ ছাড়াও জৈবিক দমন পদ্ধতিতে রোগ ও পোকা দমন করা যায়।
সাত. ধানের চিটার জন্য ফলন কম হয়। ধানে চিটা প্রতিরোধ করে ফলন বাড়ানো যায়। ধানগাছের জন্য অসহনীয় ঠাণ্ডা বা গরম, খরা, ঝড়, তুফান ইত্যাদির জন্য চিটা হয়। এ ছাড়া সেচের অভাব, সুষম সারের অভাব, পরাগায়ণে বিঘí, পরিচর্যার অভাব ইত্যাদির জন্য চিটা হয়। চিটা প্রতিরোধের জন্য ৪০-৫০ দিন বয়সের চারা পৌষ ও মাঘ মাসের মধ্যে রোপণ করা। কাইচথোড়, শীষ বের হওয়া ও ফুল ফোটার সময় সেচ দিতে হবে। জিঙ্ক ও বোরনের সর্বশেষ প্রযুক্তি চিলেটেড জিঙ্ক ও দ্রবণীয় বোরন প্রয়োগ করলে ধানে চিটা হয় না। ধানের চারা রোপণের ২০-২২ দিন পর প্রথমবার এবং ৪০-৪৫ দিন পর দ্বিতীয়বার এক লিটার পানিতে এক গ্রাম লিবরেল জিঙ্ক ও দুই গ্রাম লিবরেল বোরন একসাথে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।
লেখক: ফরহাদ আহাম্মেদ, কৃষিবিদ
এক. উচ্চ ফলনশীল জাতের ধান চাষ করা।যেমন: বিআর১, বিআর৩, বিআর৬, বিআর৭, বিআর৮, বিআর৯, বিআর১১, বিআর১২, বিআর১৪, বিআর১৫, বিআর১৬, বিআর১৭, বিআর১৮, বিআর১৯, ব্রিধান২৮, ব্রিধান২৯, ব্রিধান৩৫, ব্রিধান৩৬, ব্রিহাইব্রিড ধান-১, ব্রিহাইব্রিড ধান-২, বিনাধান-৫, বিনাধান-৬, ইরাটম-২৪ ইত্যাদি।
দুই. সুষম মাত্রায় সঠিক সময়ে সার দেয়া। শেষ চাষের সাথে প্রতি বিঘায় টিএসপি ১৩ কেজি, এমওপি ১২ কেজি, জিপসাম ৮ কেজি, গìধক ৬ কেজি ও দস্তা এক কেজি মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে। চারা রোপণের ১০-১৫ দিন পর ০.৯ গ্রাম আকারের তিনটি বা ২.৭-৩.০ গ্রাম আকারের একটি গুটি ইউরিয়া চারগুছির মাঝখানে ৪-৫ সেমি গভীরে প্রয়োগ করতে হয়। এতে প্রতি বিঘায় ২১-২২ কেজি গুটি ইউরিয়া লাগে। ধান কাটা পর্যন্ত একবার প্রয়োগ করলেই হয়। ২০-২৫ শতাংশ ফলন বেশি হয়। এতে প্রতি বিঘায় চার-পাঁচ মণ ধান বেশি হয়। ৩৫-৪০ শতাংশ ইউরিয়া কম লাগে।
তিন. পৌষ-মাঘ মাসের মধ্যে বোরো ধান রোপণ করলে ফলন বেশি হয়।সারি থেকে সারির দূরত্ব ২০-২৫ সেমি এবং গুছি থেকে গুছির দূরত্ব ১৫-২০ সেমি। চারার বয়স ৪০-৫০ দিন। চারা একটু গভীরে রোপণ করলে বেশি পুষ্টি গ্রহণ করতে পারে। জমি সমতল করতে হবে। চারা সুস্খ, সবল, সবুজ ও সতেজ হতে হবে। প্রতি গোছায় এক-দু’টি চারা রোপণ করতে হবে। চারা মরে গেলে পুনরায় নতুন চারা রোপণ করতে হবে। চারা বিলম্বে রোপণ করলে পরাগায়ণ হয় না, ফলে ধান চিটা হয়।
চার. সার দেয়ার আগে আগাছা পরিষ্কার করতে হবে। গবেষণায় দেখা গেছে, আগাছা ২০-২৫ শতাংশ ফলন কমিয়ে দেয়। কারণ আগাছা পুষ্টি শোষণ করে। সঠিক সময়ে আগাছা দমন করলে ২০-২৫ শতাংশ ফলন বাড়ে।
পাঁচ. সঠিক সময়ে সেচ দিলে ১৫-২৫ ভাগ ফলন বাড়ে। চারা রোপণের পর থেকে কুশি গজানো পর্যন্ত ছিপছিপে পানি রাখলেই হবে। কাইচ থোড় আসার আগেই পানির পরিমাণ দ্বিগুণ করতে হবে। সার প্রয়োগের দুই-তিন দিন পর সেচ দিলে সারের কার্যকারিতা বাড়ে। কুশিস্তরে জমিতে পানি না রাখলে কুশি বাড়ে। ধান পাকার সময় ধান শক্ত হলেই জমি থেকে পানি সরিয়ে দিতে হবে।
ছয়. সঠিক সময়ে রোগ ও পোকামাকড় দমন করলে ১৫ থেকে ২০ শতাংশ ফলন বেশি হয়। দেশে ধানের ৩১টি রোগ এবং ১৭৫ প্রজাতির পোকা আক্রমণ করে। এর মধ্যে ১০টি রোগ এবং ২০ থেকে ৩০টি পোকার মারাত্মক ক্ষতি করে। মারাত্মক ক্ষতিকর পোকা হচ্ছে হলুদ মাজরা পোকা, পামরিপোকা, চুঙ্গিপোকা, ঘাসফড়িং, পাতার লেদাপোকা, সবুজ পাতাফড়িং, বাদামিগাছ ফড়িং ইত্যাদি। এসব পোকা হাতজাল, আলোর ফাঁদ, ক্ষেতে ডাল পুঁতা, জমির পানি বের করা, সেক্স ফেরোমেন ফাঁদ ও কীটনাশক দিয়ে দমন করা যায়। মারাত্মক রোগের মধ্যেন্ধ টুংরো, পাতাপোড়া, ব্লাস্ট, খোলপড়া, খোলপচা ইত্যাদি। এসব রোগ প্রতিরোধের জন্য রোগমুক্ত বীজ, বালাই সহনশীল জাতের চাষ, সুষম সার প্রয়োগ, সঠিক দূরত্বে চারা রোপণ, সমকালীন চাষাবাদ ইত্যাদি পদ্ধতি অবলম্বন করা যেতে পারে। এ ছাড়াও জৈবিক দমন পদ্ধতিতে রোগ ও পোকা দমন করা যায়।
সাত. ধানের চিটার জন্য ফলন কম হয়। ধানে চিটা প্রতিরোধ করে ফলন বাড়ানো যায়। ধানগাছের জন্য অসহনীয় ঠাণ্ডা বা গরম, খরা, ঝড়, তুফান ইত্যাদির জন্য চিটা হয়। এ ছাড়া সেচের অভাব, সুষম সারের অভাব, পরাগায়ণে বিঘí, পরিচর্যার অভাব ইত্যাদির জন্য চিটা হয়। চিটা প্রতিরোধের জন্য ৪০-৫০ দিন বয়সের চারা পৌষ ও মাঘ মাসের মধ্যে রোপণ করা। কাইচথোড়, শীষ বের হওয়া ও ফুল ফোটার সময় সেচ দিতে হবে। জিঙ্ক ও বোরনের সর্বশেষ প্রযুক্তি চিলেটেড জিঙ্ক ও দ্রবণীয় বোরন প্রয়োগ করলে ধানে চিটা হয় না। ধানের চারা রোপণের ২০-২২ দিন পর প্রথমবার এবং ৪০-৪৫ দিন পর দ্বিতীয়বার এক লিটার পানিতে এক গ্রাম লিবরেল জিঙ্ক ও দুই গ্রাম লিবরেল বোরন একসাথে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।
লেখক: ফরহাদ আহাম্মেদ, কৃষিবিদ
সূত্রঃ এগ্রোবাংলা
ধানের খোলপোড়া রোগের প্রতিকার
Thursday, March 29, 2018
ধানের বিভিন্ন রোগের মধ্যে অন্যতম হলো খোলপোড়া রোগ। সময়মতো সঠিক চিকিৎসা এবং সচেতন চাষাবাদের মাধ্যমে এ রোগ থেকে রেহাই পাওয়া যায়।
রোগটি কেন হয়, দেখতে কেমন: খোলপোড়া ছত্রাকজনিত রোগ। ধানগাছের কুঁশি স্তর থেকে এ রোগের বিস্তার শুরু হয়। প্রথম অবস্খায় পাতার খোলে গোলাকার ও লম্বাটে পানি ভেজা ধূসর রঙের ছাপ পড়ে। ধীরে ধীরে এই ছাপ বড় আকারে ওপরের দিকে সম্পূর্ণ খোলে ও খোলসংলগ্ন পাতায় ছড়িয়ে পড়ে। আক্রান্ত খোল দেখতে অনেকটা গোখরো সাপের চামড়ার দাগের মতো দেখায়। উষä ও আর্দ্র আবহাওয়ায় রোগের বিস্তার বেশি হয়। এ ছাড়া ক্ষেতে বেশি মাত্রায় ইউরিয়া ব্যবহার এ রোগের বিস্তারে সহায়তা করে। ঘন করে চারা রোপণ করা ক্ষেতে এ রোগ বেশি হয়। আমাদের দেশে আমন ও আউশ মৌসুমে খোলপোড়া রোগের সমস্যা বেশি দেখা যায়।
চিকিৎসা: এ রোগ নিয়ন্ত্রণে ক্ষেতের পানি শুকিয়ে ২-১ দিন রেখে আবার সেচ দিতে হয়। এভাবে ক্ষেতে রোগের সংক্রমণ না কমা এবং আবহাওয়া অনুকূলে না আসা পর্যন্ত পানি বের করে দেয়া ও সেচ দেয়ার কাজটি করতে হয়। খোলপোড়া রোগ দেখা দেয়ার পর বিঘাপ্রতি পাঁচ কেজি এমওপি সার সমান দুই ভাগে ভাগ করে উপরি প্রয়োগ করতে হয়। প্রথম ভাগ রোগ দেখা দেয়ার সাথে সাথে এবং দ্বিতীয় ভাগ প্রথম উপরি প্রয়োগের ১৪ থেকে ১৫ দিন পর প্রয়োগ করতে হয়। রোগের প্রাথমিক অবস্খায় হেক্সাকোনাজল বা প্রপিকোনাজল বা টেবুকোনাজল-জাতীয় ছত্রাকনাশক দুই গ্রাম প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হয়।
অন্য ব্যবস্খা: রোগ প্রতিরোধে আগেই কিছু ব্যবস্খা নিলে এ রোগের সংক্রমণ অনেকাংশে কমানো যায়। যেমন- নির্দিষ্ট রোপণ দূরত্বে চারা রোপণ করা (সারি থেকে সারি ২৫ সেন্টিমিটার ও গাছ থেকে গাছ ১৫ সেন্টিমিটার অথবা সারি থেকে সারি ২৫ সেন্টিমিটার ও গাছ থেকে গাছ ২০ সেন্টিমিটার), জমিতে সুষম মাত্রায় সার ব্যবহার করা। যেসব এলাকায় এ রোগ প্রায় প্রতি বছরই দেখা দেয় সেসব এলাকায় খাটো জাতের গাছের পরিবর্তে মোটামুটি লম্বা জাতের চাষ করা। রোগাক্রান্ত জমির ধান কাটার পরপরই নাড়া পুড়িয়ে দেয়া এবং শস্যপর্যায় চালু করা।
লেখক: খোন্দকার মো: মেসবাহুল ইসলাম, কৃষিবিদ
সূত্রঃ এগ্রোবাংলা ডটকম
কাজু বাদাম চাষে ব্যাপক সাফল্য পাহাড়ে
Wednesday, March 28, 2018
বান্দরবান থেকে ফিরে: জুমভিত্তিক চাষাবাদ নির্ভরতা থেকে বেরিয়ে আসছেন পাহাড়িরা। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি, উৎপাদিত পণ্য বিক্রির বাজার তৈরি, লাভজনক ফল-ফসলের ব্যাপক ফলন, প্রাচীন বদ্ধমূল ধারণা থেকে বেরিয়ে এসে আধুনিক চেতনায় উদ্বুদ্ধ হওয়ায় ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে বান্দরবানের পাহাড়ি এলাকায়। প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলো কিছুটা পিছিয়ে থাকলেও যেখানে পরিবহন ব্যবস্থা তুলনামূলক সহজ হয়েছে, সেখানে বাড়ছে আম, কফি, কাজু বাদামসহ বিভিন্ন অর্থকরী ফসলের আবাদ।
স্থানীয় ভাষায় ‘তাম’ বা কাজু বাদাম এমন একটি ফসল। দামি ফল হিসেবে কাজুর পরিচিতি সবার কাছে। আমদানি নির্ভর এ ফলটি নতুন স্বপ্ন দেখাচ্ছে পাহাড়ে। বাধা শুধু সংরক্ষণে সমস্যা আর পোস্ট প্রসেসিং বা উৎপাদনের পর খাওয়ার উপযোগী করে প্রস্তুতকরণে। উৎপাদন ও চাষাবাদ যে হারে বাড়ছে তাতে খুব শিগগিরই পাহাড়ে কাজু ইন্ডাস্ট্রি গড়ে তোলা সম্ভব বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বান্দরবান থেকে ৮০ কিলোমিটার দূরের উপজেলা থানচির বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায় অন্য ফসলের পাশাপাশি ব্যাপকহারে বেড়েছে কাজু বাদামের চাষ। পাহাড়িরা যে চাষাবাদে লাভ বেশি সেটা ঝোঁকেন বেশি। এমনকি জমিতে অন্য ফসল থাকলেও তা কেটে নতুন অর্থকরী ফসলে মনোযোগ দেন। ৪০-৫০ বছর ধরেই বান্দরবানের পাহাড়ে কাজু চাষ হচ্ছে। তবে বাণিজ্যিক চাষাবাদ বেড়েছে সম্প্রতি। বিশেষ করে সবশেষ দুই বছরে।
পাহাড়ে কাজু বাদাম চাষ বাড়তে দীর্ঘদিন কাজ করছেন রুমা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান। কথা হলে তিনি বলেন, পাহাড়ি মাটি, আবহাওয়া সবই কাজু বাদাম চাষের বিশেষ উপযোগী। তাছাড়া পরিচর্যা ও উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় অতিরিক্ত কোনো খরচ নেই। আর আগে দাম না পাওয়ার যে বিষয়টি ছিল সেটি এখন নেই।
‘পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড প্রথমে পাহাড়ের সব শ্রেণীর মানুষের মধ্যে কিছু কফি ও কাজু বাদামের চারা সরবরাহ করে। সেটা
সূত্রঃ বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
Labels:
কৃষি সংবাদ
Posted by
আমাদের রান্না
at
1:00 AM
বাড়িতে আলু সংরক্ষণের পদ্ধতি
Tuesday, March 27, 2018
দেশে এবার আলুর বাম্পার ফলন হয়েছে। কিন্তু হিমাগারের অভাবে আলু সংরক্ষণে সমস্যা হচ্ছে; নষ্ট হচ্ছে। আলু প্রতি কেজি ৫ থেকে ৬ টাকা দরে কৃষকরা বিক্রি করছে। দেশে এবার প্রায় এক কোটি টনের মত আলু উৎপাদন হয়েছে। অথচ দেশে অবস্থিত মোট ৩৩৭টি হিমাগারের মোট ধারণ ক্ষমতা ২২ লাখ টন। অর্থাৎ উৎপাদিত আলুর মাত্র পাঁচ ভাগের এক ভাগ আলু সংরক্ষণ করা যায়। প্রতি বছর শতকরা ১৫ থেকে ২০ ভাগ আলু নষ্ট হয়।
প্রায় ৭ থেকে ৮ মাস আলু সংরক্ষণ করতে হয়। হিমাগার ছাড়াও কৃষকরা নিজ বাড়িতে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে আলু সংরক্ষণ করতে পারেন। হিমাগারের এক বস্তা আলু সংরক্ষণ করতে ২৫ থেকে ৩০০ টাকা খরচ হয়। কৃষকরা বাড়িতে আলু সংরক্ষণ করলে খরচ পড়ে প্রতিবস্তা মাত্র ২০ থেকে ২৫ টাকা। এ জন্য কৃষকরা সহজেই বাড়িতে আলু সংরক্ষণ করতে পারেন। নিচে আলু সংরক্ষণের পদ্ধতি বর্ণনা করা হলো :
আলু সংগ্রহের পর প্রখর সূর্যালোকে আলু রাখা ঠিক নয়। এতে আলুতে ব্যাকহার্ট রোগ হতে পারে। আলু সংগ্রহের পর কাটা, রোগাক্রান্ত, পচা, ক্ষত, থ্যাতলানো ও বেশি ছোট আলু বাদ দিতে হয়। শুধু ভাল আলু গুদামে রাখা উচিত। আলো-ছায়ায় শুকিয়ে গুদামজাত করতে হবে।
একটাও আলু যাতে ভেজা না থাকে সেদিকে বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে।
গুদামজাতকরণ: তুলনামূলকভাবে ঠাণ্ডা ও বায়ু চলাচল করে এমন শুষ্কস্থানে আলু সংরক্ষণ করতে হয়। বাঁশের চাটাইয়ের বেড়া এবং ছনের ছাউনি দিয়ে ভূমি থেকে বাঁশের খুঁটি দিয়ে উচুঁ করে ঘর তৈরি করতে হয়। আলুর শ্বাস-প্রশ্বাসের তাপ বের হওয়া এবং বায়ু চলাচলের ব্যবস্থা করতে হবে। মেঝেতে বাঁশের চাটাই কিংবা বালু বিছিয়ে এর ওপর স্তুপাকারে আলু রাখতে হবে। তবে স্তুপ যেন এক মিটার উঁচু এবং ২ মিটারের বেশি প্রশস্ত না হয় এবং যথেষ্ট বায়ু চলাচলের সুবিধা থাকে। ২ থেকে ৩টি তাক করে স্তরে স্তরে স্তুপ করে আলু রাখা যেতে পারে। পাত্রে আলু সংরক্ষণ করা যায়। বাঁশের ঝুড়ি, ডোল বা বাঁশের ও মাটির যে কোনো পাত্রে আলু রাখা যায়। এক্ষেত্রে পাত্রগুলো ঠাণ্ডা স্থানে রাখতে হবে। আলুর রোগ ও পোকা দ্বারা আক্রমণ রোধ করার জন্য নিম, নিশিন্দা, বিষ কাটালি ইত্যাদির পাতা গুঁড়ো করে আলুর স্তুপে মিশিয়ে দেয়া যেতে পারে। তবে কীটনাশক দেয়া যাবে না। মনে রাখতে হবে, ক্ষেত্রে আলু পরিপক্ব হওয়ার সময় থেকে আলুর সুপ্তাবস্থা শুরু হয়। আলু গুদামে রাখার কিছুদিন আগেও সুপ্তাবস্থা শুরু হতে পারে। মোটামুটিভাবে কোনো মারাত্মক ক্ষতি ছাড়া আলুর সুপ্তাবস্থা শেষ হওয়া থেকে প্রায় এক মাস অথবা অঙ্কুরোদগম পুরোপুরি শুরু হওয়া পর্যন্ত আলু গুদামে রাখা যেতে পারে। অর্থাৎ প্রায় ৭ থেকে ৮ মাস আলু এভাবে সংরক্ষণ করা যায়।
পর্যবেক্ষণ: ১৫ দিন পর পর সংরক্ষিত আলু দেখতে হবে। খারাপ গন্ধ হলে বুঝতে হবে দু’একটি আলু পচেছে। পচা আলু সরাতে হবে। ইঁদুরের উপস্থিতির কোনো লক্ষণ দেখলে ইঁদুর মারতে হবে। পোকা-মাকড় ও রোগ-জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত আলু বাছাই করতে হবে। স্তুপের নিচের আলু উপরে এবং উপরের আলু নিচে নেড়ে দিতে হবে।
বীজ হিসেবে রাখা আলুর অঙ্কুর গজানো শুরু হলেই আলাদাভাবে গুদামজাত করতে হবে। যেখানে দিনের আলো পড়ে (কিন্তু সকালে এবং দিনের শেষ ভাগ ছাড়া সরাসরি সূর্যের আলো পড়ে না) এমন স্থানে তাক বা মেঝের উপর ২ থেকে ৩টি স্তরে আলু গুদামজাত করা যায়। অঙ্কুর গজানো শুরু হলেই বুঝতে হবে বায়ু চলাচলকৃত গুদামে আলু আর বেশি দিন রাখা যাবে না। সুতরাং বীজ আলু পরিত্যক্ত আলুর গুদামে স্থানাস্তর করতে হবে।
লেখক : ফরহাদ আহাম্মেদ, কৃষিবিদ, শিক্ষক ও সাংবাদিক
এগ্রোবাংলা ডটকম
চাষি পর্যায়ে আলু সংরক্ষণ
গত বছর হিমাগারের অভাবে আলু সংরক্ষণ করা যায়নি বলে প্রচুর আলু পচে গেছে। অপর দিকে হিমাগারে আলু সংরক্ষণ খরচও বেশি। হিমাগারে এক বস্তা আলু রাখতে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা লাগে। চাষিরা নিজেরাই আলু সংরক্ষণ করলে খরচ হয় মাত্র ১০ থেকে ২০ টাকা। দেশে প্রতি বছর যে পরিমাণ আলু উৎপাদন হয় সে পরিমাণ হিমাগার নেই। প্রতি বছরই আলু পচে যায় এবং অল্প দামে বিক্রি করে। চাষিরা নিজের বাড়িতে সহজেই আলু সংরক্ষণ করতে পারেন। আলু পরিপক্ব হওয়ার পর থেকে উফশী জাত দু-তিন মাস এবং দেশী জাতের সুপ্তাবস্খা চার-ছয় মাস থাকে। ক্ষেতে আলু পূর্ণ বৃদ্ধি হওয়ার ১০ থেকে ১৪ দিন পর অর্থাৎ গাছ মরতে শুরু করলে আলু সংগ্রহ করতে হবে। মাটি ভেজা অবস্খায় কোনোক্রমেই ফসল সংগ্রহ করা উচিত নয়। আলু স্খানান্তর যত্নের সাথে করতে হবে এবং শক্ত মেঝের ওপর ফেলা ঠিক নয়।
সংরক্ষণ পদ্ধতি: আলু সংগ্রহের পর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মাঠ থেকে আলু সরানো উচিত এবং প্রখর সূর্যালোকে ফেলে রাখা উচিত নয়। এতে আলুর ব্ল্যাক হার্ট রোগ হতে পারে। আলু সংগ্রহের পর কাটা, রোগাক্রান্ত, পচা, ক্ষত, থেঁতলানো ও বেশি ছোট আলু বাছাই করতে হবে। শুধু ভালো আলু গুদামে রাখা উচিত। আলু ছায়াযুক্ত স্খানে শুকিয়ে গুদামজাত করতে হবে। একটা আলুও যাতে ভেজা না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
গুদামজাতকরণ: তুলনামূলকভাবে ঠাণ্ডা ও বায়ু চলাচল করে এমন স্খানে আলু সংরক্ষণ করতে হয়। বাঁশের চাটাইয়ের বেড়া এবং ছনের ছাউনি দিয়ে ভূমি থেকে বাঁশের খুঁটি দিয়ে উঁচু করে ঘর তৈরি করতে হয়। টিউবার (আলু) জীবন্ত উদ্ভিদাংশ বলে শ্বাস-প্রশ্বাসের সময় তাপ সৃষ্টি করে ও পানি বের করে দেয়। এ তাপ গুদামজাতকালীন সময় বায়ু চলাচলের মাধ্যমে অবশ্যই বের করে দিতে হবে। এ জন্য তাপ বের হওয়া ও বায়ু চলাচলের ব্যবস্খা করতে হবে। মেঝেতে বাঁশের চাটাই কিংবা বালু বিছিয়ে এর ওপর স্তূপাকারে আলু রাখতে হবে। তবে আলুর স্তূপ যেন তিন ফুট উঁচু ও ছয় ফুটের বেশি প্রশস্ত না হয় এবং যথেষ্ট বায়ু চলাচলের সুবিধা রাখতে হবে। দু-তিনটি তাক করে স্তরে স্তরে স্তূপ করে আলু রাখা যেতে পারে। বাঁশের ঝুড়ি, ডোল বা বাঁশের ও মাটির যেকোনো পাত্রে আলু রাখা যায়। এ ক্ষেত্রে পাত্রগুলো ঠাণ্ডা স্খানে রাখতে হবে। আলু পোকামাকড় দ্বারা আক্রান্ত রোধ করার জন্য নিম, নিশিন্দা, বিষকাটালি ইত্যাদি পাতা গুঁড়ো করে আলুর স্তূপে মিশিয়ে দেয়া যেতে পারে। তবে কীটনাশক দেয়া যাবে না।
মনে রাখতে হবে, ক্ষেতে আলু পরিপক্ব হওয়ার সময় থেকেই আলুর সুপ্তাবস্খা শুরু হয়।
সূত্রঃ এগ্রোবাংলা ডটকম
Labels:
কৃষি তথ্য,
শাক-সব্জীর চাষ
Posted by
আমাদের রান্না
at
12:23 AM
গাড়ল পালন: বেকারের বেকারত্ব দূরীকরণের উত্তম পন্থা-২
Monday, March 19, 2018
গর্ভধারণের কিছু সমস্যার কারণে অনেক সময় গাড়লের বাচ্চা উৎপাদনের প্রত্যাশিত লক্ষ্য ব্যাহত হয়। সময়মতো গর্ভধারণ ও বাচ্চা উৎপাদনের সাথে লাভ/ক্ষতির সম্পর্ক রয়েছে। প্রসবের পর যেন পুনরায় সময়মতো গর্ভধারণ করে তা নিশ্চিত করতে হবে। দেখা যায় বাচ্চা প্রসবের দু – তিন মাস পরেও কিছু গাড়ল গর্ভধারণ করে না। অপুষ্টি, কৃমির আক্রমণ ও প্রজনন ব্যবস্থাপনায় ত্রুটি, প্রসবের আগে ও পরে সুষম খাদ্য না খাওয়ানো, জননাঙ্গে সংক্রামক ব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়া, ইত্যাদি কারণে এমনটা হতে পারে। গাড়লের ডাক আসলে সঠিক সময়ে প্রজনন করানো উচিত।
প্রজনন ব্যবস্থাপনা, (আগে ও পরে)
গাড়ল পালনের ক্ষেত্রে প্রজননকালীন ব্যবস্থাপনাকে সর্বাধিক গুরুত্ব সহকারে দেখা উচিত। যে বিষয় গুলকে গুরুত্ব দিবেন…..
১. গাড়ল সাধারনত ১৮০ দিন বয়সের মধ্যে প্রথম বাচ্চা ধারণ করে।
২. গাড়লের হৃতুচক্র ১৩-১৯ দিন বা গড়ে ১৭ দিনে সম্পন্ন হয়।
৩. গাড়লের গরমকাল বা হিট প্রিয়ড ২৪ থেকে ৩৬ ঘন্টা পর্যন্তু স্থায়ী হয়।
৪. গর্ভধারণ কাল ১৪৫ থেকে ১৫০ দিন।
লক্ষণীয় বিষয়….
আমাদের দেশে সামাজিক দৃষ্টি ভঙ্গির জন্য অনেকেই ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও ছাগলের খামার করতে পারেননা, শুধুমাত্র পাঠা পালনগত কিছু অসুবিধার জন্য। যেমন, পাঠার শরীরের দুর্গন্ধ, শ্রুতিকটু শব্দ, পরিচর্যাগত সমস্যা ইত্যাদি। অন্যদিকে, ছাগল গরম হলেও কয়েকদিন পর্যন্তু প্রচুর ডাকাডাকি করতে থাকে উচ্চস্বরে। একটি বানিজ্যিক খামারে অসংখ্য ছাগল/গাড়ল যদি অনবরত ডাকাডাকি করতে থাকে তাহলে সেটা সত্যি বিরক্তিকর হয়ে দাড়ায়। কিন্তু গাড়লের একটি বিশেষ দিক হলো, গরম হলে গরু ছাগলের মত এতো ডাকাডাকি করে না। পাঠা গাড়লের শরীরেও দুর্গন্ধ হয়না। পাঠা গাড়ল কে একই দলের সাথে ছাড়া অবস্থায় রাখা যায়। অধিক সংখ্যক গাড়লের মধ্যেও পাঠা গাড়ল শুধুমাত্র গরম হওয়া গাড়লটির প্রতিই আকৃষ্ট হবে, তাই এজন্য খামারীকে আলাদা কোনো ব্যবস্থাপনার প্রয়োজন হয়না।
কিন্তু যদি পাঠা গাড়ল বেধে বা আলাদা পালন করা হয়, তাহলে প্রজনন করানোর নিয়ম:
গরম হওয়ার ১২ থেকে ১৮ ঘন্টার মধ্যে প্রজনন করাতে হবে। কোনো গাড়ল রাতে গরম হয়েছে মনে করলে, পরদিন সকালে একবার এবং আরো নিশ্চিত হবার জন্য ঐ দিন বিকালে একবার ও পরদিন সকালে আরো একবার প্রজনন করানো ভালো। এ নিয়ম মেনে চললে, গাড়লের প্রজনন ব্যবস্থাপনার ত্রুটি কমানো সম্ভব এবং গর্ভধারণের সম্ভবনা ও অনেক বেশি থাকে।
প্রসবের পূর্বে করণীয়:
১.গর্ভাবস্থার প্রথম পর্যায়ে গাড়ল কে কোনো কৃমিনাশক খাওয়ানো যাবেনা।
২. গর্ভাবস্থার শেষ পর্যায়ে গাড়ল কে নরম বিছানা দিতে হবে।
৩. গর্ভবতী গাড়ল কে আলাদা রাখতে হবে।
৪. গর্ভবতী গাড়ল কে পর্যাপ্ত পরিমানে ভিটামিন ও খনিজ সমৃদ্ধ খাদ্য প্রদান করতে হবে। গমের ভুষি, কাচা ঘাস, তিলের খৈল, ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন প্রিমিক্স।
প্রসবের পর করণীয়:
খুব সামান্য ক্ষেত্রে বাচ্চা প্রসবের পর কোনো কোনো গাড়লের জরায়ু বাইরে বেরিয়ে আসে। এ সমস্যা বাচ্চা প্রসবের ৪ – ৬ ঘন্টার মধ্যে দেখা যায়। প্রসবের সময় হ্যাচকা টান দিয়ে বাচ্চা বের করা হলে এমনটি হতে পারে। বয়স্ক গাড়লের ক্ষেত্রে এমনটি ঘটে বেশি। গর্ভের সময় ক্যালসিয়ামের অভাব থাকলেও এমন সমস্যার সৃষ্টি হয়। পরবর্তিতে মা – গাড়লের জরায়ুতে প্রদাহ দেখা দেয় এবং গর্ভধারণ বিলম্বিত হয়। এ ক্ষেত্রে , শরীরের তাপ পরীক্ষা করে তাপমাত্রা স্বাভাবিক থাকলে খুব ধীরে, সতর্কতার সাথে ৩০-৫০ মি.লি. ক্যালসিয়াম বরেগ্লুকনেট, ক্যালডিম্যাক, কোপাক্যালসিয়াম, ক্যাজেসন, ক্যালসিনেট অথবা ক্যালসির যেকোনো একটি ইনজেকশন শিরায় প্রয়োগ করতে হবে। এর সাথে ১-২ আই .ইউ. অক্সিটোসিন (যেমন – অক্সিন, ইন্টাটোসিন-এস, পিটন-এস অথবা হিন্টোসিনিনের যেকোনো একটি ) ইনজেকশন মাংসে ৩-৪ মিনিট পর পর ৪-৫ বার প্রয়োগ করতে হবে। প্রয়োজনে ভেটেরিনারি চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
বাচ্চার প্রতি যত্ন নিতে করণীয়:
বাচ্চা প্রসবের সময় গাড়ল কে শুকনো, পরিচ্ছন্ন ও আলোবাতাস চলাচল করে এমন স্থানে রাখতে হবে। বাচ্চার শরীর যাতে মা-গাড়ল চেটে পরিস্কার করতে পারে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। এতে বাচ্চার শ্বাস প্রশ্বাস দ্রুত চালুর জন্য সহায়ক হয়। মার যদি দুর্বলতা বা অন্য কোনো কারণে বাচ্চার শরীর চাটতে না পারে, তাহলে পরিস্কার নরম সুতি কাপড় দিয়ে বাচ্চার নাক-মুখ মুছিয়ে দিতে হবে না হলে শ্বাস রুদ্ধ হবার ঝুকি থাকে। আর যদি এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েই যায়, সেক্ষেত্রে বাচ্চার বুকের পাজরে আস্তে আস্তে কিছুক্ষণ পর পর চাপ প্রয়োগ করলে শ্বাস প্রশ্বাস স্বাভাবিক হয়ে আসবে। প্রয়োজনে নাকে-মুখে ফু দিয়ে বাতাস ঢুকিয়ে কৃত্তিম শ্বাস প্রশ্বাসের ব্যবস্থা করতে হবে। বাচ্চার জন্মের পর গোসল করানো যাবেনা, এতে বাচ্চার ঠান্ডা লেগে নিউমোনিয়া হতে পারে।
আমাদের দেশে উষ্ণ ও আদ্র আবহাওয়ার কারণে অনেক সময় বাচ্চার জন্মের পরেই শ্বাস কস্ট দেখা যায়। এসব ক্ষেত্রে বাচ্চাকে শুকনো জায়গায়, বিশেষ করে বাতাস চলাচল করে এমন জায়গায় রাখতে হবে। জন্মের পরে অবশ্যই বাচ্চার নাক, মুখ, পায়খানা – প্রস্রাবের রাস্তা ও নাভির স্থানে ফোলা আছে কিনা পরীক্ষা করে দেখতে হবে। এগুলোর কোনো একটিতে ত্রুটি দেখা গেলে, অতিসত্তর নিকটস্থ পশুহাপাতালে / ভেটেরিনারি সার্জনের পরামর্শমতো চিকিৎসা দিতে হবে।
জন্মের পর থেকে শুরু করে নাভি না শুকানো পর্যন্তু ( ৭ থেকে ১৪ দিন ) বাচ্চার নাভিতে তুলা দিয়ে টিংচার আয়োডিন বা জেনসণ ভায়োলেট লাগাতে হবে। যদি নাভি ফুলে পুজ জমে তাহলে অবশ্যই জীবানুনাশক ( যেমন – পটাশিয়াম ম্যাঙ্গানেট , স্যাভলন ২.৫% ইত্যাদি ) নির্দেশিত মাত্রায় ফুটানো ঠান্ডা পানিতে মিশিয়ে নাভি পরিস্কার করতে হবে। এছাড়া ক্ষত স্থানে দিনে ২ -৩ বার নেবানল পাউডার লাগাতে হবে। প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ অথবা ওষুধের নির্দেশিকা অনুসারে এন্টিবায়োটিক ইনজেকশন ( যেমন- প্রোনাপেন , পেনিসিলিন , পেনবাসিলিন , প্রোনাসিলিন ইত্যাদির যেকোনো একটি ) ৩ – ৫ দিন মাংসে প্রয়োগ করতে হবে। জন্মের ৪ ঘন্টার মধ্যে বাচ্চাকে মায়ের বাটে মুখ লাগিয়ে অবশ্যই শাল দুধ পান করাতে হবে।
কমপক্ষে ৩ দিন পর্যন্তু শালদুধ পান করানো আবশ্যক। শালদুধে পর্যাপ্ত পরিমানে রোগ প্রতিরোধী উপাদান থাকে। ঠিকমত শালদুধ না খাওয়ালে বাচ্চা বিভিন্ন রোগে সহজেই আক্রান্ত হতে পারে। এ ছাড়া বাচ্চা দুধ টেনে খেলে মা-গাড়লের গর্ভফুল ৮-১২ ঘন্টার মাঝে পরে যায়।
রোগ ব্যাবস্থাপনার উত্তম পন্থা:
খামারের পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা, রোগ প্রতিরোধের প্রথম শর্ত। তাই খামারে সকল সময় পরিচ্ছন্ন, খোলামেলা ও পর্যাপ্ত আল-বাতাসের ব্যাবস্থা রাখতে হবে। গাড়লের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো। তবে বানিজ্যিক খামারে নিয়মিত টীকা প্রদান জরুরী। মোটামুটি নিয়মানুযায়ী ৩ টি টীকা প্রদান করলে, রোগ-বালাই থেকে অনেকাংশে মুক্ত থাকা সম্ভব।
টীকার নাম——————–পরিমান———প্রয়োগ পদ্ধতি
পিপিআর———————- ১ মিলি———চামড়ার নিচে ইনজেকশন
ক্ষুরা রোগ——————— ২ মিলি——— ঐ
এন্থ্রাক্স———————— ১ মিলি——— ঐ
অন্যান্য বিষয়াবলী….
আমাদের দেশে চারণভূমি, খামারির সামর্থ্য, খামারের ধরন ও অন্যন্য সুবিধা অনুযায়ী বিভিন্ন ভাবে গাড়ল পালন করা যায়। যেমন:-
১. অধানিবিড় (সেমি ইনসেনটিভ ) খামার:
এ ধরনের খামারে, খামারিগণ এককভাবে বা গরু-ছাগলের সাথে মিশ্রভাবে অল্প সখ্যক গাড়ল পালন করেন।
রাতে আলাদা ঘরে বা গরুর সঙ্গে রাখা হয়। দিনে ফসলের খালি মাঠ, রাস্তা বা বাধের ধারে, গাছের বাগানের মধ্যে ছেড়ে বা বেধে পালন করা হয়। সকালে বা সন্ধ্যায় কখনো কখনো সামান্য কুড়া, ভুষি ও ভাতের মাড় দেয়া হয়।
২. সম্পুর্ন ছেড়ে পালা ক্ষুদ্র বানিজ্যিক খামার:
এ ধরনের খামার অধানিবিড় খামারের মতোই। তবে এ রকমের খামারে গাড়লের সংখ্যা বেশি থাকে। খামারি মূলত বানিজ্যিক উদ্দেশ্যে গাড়ল পালন করে থাকেন। এ ধরনের খামারে সাধারনত সুনির্দিস্ট কোনো খাদ্য ব্যবস্থাপনা নেই। সাধারনত মাঠে চরানোর মাধ্যমেই গাড়লের খাদ্য চাহিদা মেটানো হয়।
৩.অধানিবিড় বানিজ্যিক খামার: অপেক্ষাকৃত সচ্ছল খামারিগণ অধানিবিড় বানিজ্যিক খামারে ১০০ থেকে ১৫০ গাড়ল পালন করেন এবং প্রয়োজনীয় খাদ্য সরবরাহ করা হয় আবার মাঠেও চরানো হয়।
৪. নিবিড় পালন ব্যবস্থা: এ ধরনের খামার ব্যবস্থায় সম্পূর্ণ বদ্ধভাবে গাড়ল পালন করা হয়। এক্ষেত্রে খামারিদের ঘাস চাষ করতে হয়, ঘাস কেটে আনতে হয় ও অন্যান্য খাদ্যের ব্যবস্থা করতে হয়। এ ধরনের খামারে যথাযথ আবাসন ব্যবস্থা, পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা, সুষ্ঠ খাদ্য ব্যবস্থাপনা একান্ত জরুরি। গাড়ল পালনের উত্তম পন্থা এবং
গাড়ল পালন: বেকারের বেকারত্ব দূরীকরণের উত্তম পন্থা সর্ম্পকে আরো জানতে আমাদের সংঙ্গে থাকুন।
লেখক: মাহবুব বিল্যাহ
সহঃ সম্পাদক
তথ্য সুত্রঃ সফল খামারী
Labels:
গবাদি পশু পালন
Posted by
আমাদের রান্না
at
1:00 AM
গাড়ল পালন: বেকারের বেকারত্ব দূরীকরণের উত্তম পন্থা
Sunday, March 18, 2018
“গাড়ল” (ভারতীয় জাতের ভেড়া) পালন খুবই লাভজনক। এতে খরচ কম অথচ লাভ অনেক বেশি। দেশে গাড়ল পালনের অপার সম্ভাবনা রয়েছে। স্বাদ ও পুষ্টিগুণ বেশি হওয়ায় এর মাংসের চাহিদা ব্যাপক। ভালো দাম হওয়ায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে, বিশেষ করে (মেহেরপুর-চুয়াডাঙ্গা) জেলায় গাড়ল পালন দিনে দিনে বৃদ্ধি পাচ্ছে। মুজিবনগর উপজেলার বাগোয়ান ইউনিয়নের তারানগর গ্রামের মিস্ত্রিপাড়ার দবিরউদ্দিন গাড়ল পালনে সফলতা পাওয়ার পর একই গ্রামের অনেকে এদিকে ঝুঁকে পড়েন। বর্তমানে ওই গ্রামের প্রায় ২০ ঘর মানুষ গাড়ল পালন করছেন। মুজিবনগর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ও মেহেরপুর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা দেশে গাড়ল পালনে আশার আলো দেখতে পাচ্ছেন বলে জানান। গাড়ল পালন একদিকে বেকার মানুষের কর্মসংস্থানের পাশাপাশি জাতীয় অর্থনীতীতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
গাড়ল পালনে অধীক লাভ করা এবং ক্ষতির হাত থেকে বাঁচতে চাইলে যে তথ্য গুলো আপনাকে অবশ্যই মনে রাখতে হবে……
গাড়ল নির্বাচন পদ্ধতি:
পালনের জন্য প্রথমে গাড়ল নির্বাচন একটি গুরুত্বপূর্ন ধাপ। খামারের লাভ অনেকাংশে নির্ভর করে, উচ্চ উৎপাদনশীল জাতের সুস্থ সবল গাড়ল নির্বাচনের উপর। পালনের জন্য ৭ থেকে ১২ মাস বয়সের সুস্থ গাড়ল নির্বাচন করা উচিত।
গাড়ল পালন ও সুস্থ গাড়ল চেনার উপায়:
১. চোখ, নাক, মুখ উজ্জল ও পরিস্কার হবে।
২.লোম ও চামড়া মসৃন ও পরিস্কার থাকবে।
৩.মুখের উপরে মাজেলে ( কালো জায়গায় ) বিন্দু বিন্দু ঘাম দেখা যাবে।
৪. ঠিকমত জাবর কাটবে।
৫.চলাফেরা স্বাভাবিক থাকবে।
৬. কান ও লেজ নাড়াচাড়া করবে।
৭. খাবারের প্রতি আগ্রহ থাকবে।
৮. শ্বাস প্রশ্বাস স্বাভাবিক থাকবে।
৯. প্রস্রাব পায়খানা স্বাভাবিক হবে।
১০.কোনো অচেনা লোক কাছে আসলে সতর্ক হয়ে উঠবে।
১১. মশা মাছি তাড়াবে।
১২. দলবদ্ধ ভাবে মাঠে চড়বে ।
খাদ্য ও বাসস্থান:
গাড়লের খাবারের ক্ষেত্রে লক্ষণীয়……
১. গাড়ল চরে খেতে পছন্দ করে। তবে আবদ্ধ অবস্থায়ও বাহির থেকে (ঘাস/দানাদার) খাদ্য সরবরাহ করে পালন করা যায়।
২. ছাগলের মতোই লতা ও গুল্ম জাতীয় গাছের পাতা এরা খুব পছন্দ করে।
৩. শুকনো ও সংরক্ষিত ঘাস এবং দানাদার খাদ্য এরা খেয়ে থাকে।
৪. এমনকি খাদ্যের অভাব দেখা দিলে গাড়ল খড় ও নাড়া খেয়ে থাকতে পারে।
বিশেষ করে………
৫. পাঠা গাড়ল কে পর্যাপ্ত পরিমান কাচা ঘাস দিতে হবে।
৬. প্রজননের জন্য ব্যবহৃত পাঠাকে দৈনিক ১০ গ্রাম অঙ্কুরিত ছোলা দিলে ভালো ফল পাওয়া যায়।
৭. কাচা ঘাসের পরিমান কম হলে বছরে অন্তত ২ বার ভিটামিন এ.ডি.ই. ইনজেকশন ২ থেকে ৩ মি.লি. করে দিতে হবে।
৮. পাঠাকে অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত খাদ্য দেয়া যাবে না।
বাড়ন্ত গাড়লের জন্য একটি আদর্শ খাদ্য তালিকা নিচে দেয়া হলো:
গাড়লের ওজন (কেজি) | দানাদার খাদ্য(গ্রাম) | ঘাস সরবরাহ(কেজি) |
৪ | ১০০ | ০.৫ |
৬ | ২০০ | ০.৮ |
৮ | ২৫০ | ১.০ |
১০ | ৩০০ | ১.৫- ২.০ |
১২ | ৩৫০ | ২.০- ২.৫ |
১৪ | ৪০০ | ২.৫-৩.০ |
১৬ | ৪৫০ | ৩.০-৩.৫ |
১৮ | ৫০০ | ৩.৫-৪.০ |
বাসস্থান তৈরীতে করনীয়:
এটার উপর লাভক্ষতি, উৎপাদন, গাড়লের পরিচর্যা, রোগাক্রান্ত হওয়ার হার ইত্যাদি নির্ভর করে। আমাদের দেশের আবহাওয়ায় গাড়লের বাসস্থানের জন্য খোলামেলা ও উচু স্থান নির্বাচন করা উচিত ।
রোদ-বৃষ্টি-ঝড় ইত্যাদির হাত থেকে রক্ষা করা, বিশ্রাম, খাদ্য প্রদান, সঠিক প্রজনন নিশ্চিতকরণ, মলমূত্রের সুষ্ঠ নিষ্কাসনের ব্যবস্থা, ইত্যাদি বন্দোবস্ত করে গাড়লের জন্য ঘর তৈরী করতে হবে।
ঘরে মাচার উপর গাড়ল থাকার ব্যবস্থা করতে হবে। মাচা তৈরী সম্ভব না হলে, মেঝেতে শুকনো খড়ের বিছানা দিতে হবে। শীতকালে মাচাতেও খড়ের বিছানা দিতে হবে। বিশেষ করে বাচ্চা কে শীতের প্রকোপ থেকে রক্ষা করতে হবে,ভেজা খর শুকিয়ে পুনরায় ব্যবহার করা যায়।
বাসস্থানের বৈশিষ্ট আদর্শ:
১.গাড়লের ঘর উচু ও খোলামেলা জায়গায় হতে হবে।
২.পানি নিস্কাসনের উপযুক্ত ব্যবস্থা থাকতে হবে।
৩.আরামদায়ক হতে হবে।
৪.ঘরের দক্ষিণ ও পূর্ব দিক হতে বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা থাকতে হবে।
৫.বর্জ্য নিস্কাসনের উপযুক্ত ব্যবস্থা থাকবে।
৬.সহজলভ্য ও সস্তা নির্মান সামগ্রী ব্যবহার করতে হবে।
৭.ঘরের মাঝে বেড়া বা পার্টিশন দিয়ে গর্ভবতী গাড়ল বা ছোট বাচ্চা কে আলাদা রাখার ব্যবস্থা থাকবে। যাতে করে প্রসব পূর্ব ও প্রসব পরবর্তী যত্ন ও সেবা দেয়া যায়।
অন্যান্য করনীয় বিষয়:
১. প্রতিদিন নির্ধারিত সময়ে খাবার দিতে হবে।
২. বাসস্থান নিয়মিত পরিস্কার করতে হবে ও শুস্ক রাখতে হবে।
৩.মলমূত্র এবং ঘর সংলগ্ন ড্রেন বা নালা নিয়মিত পরিস্কার করতে হবে।
৪. নিয়মিত গোসল করানো ভালো।
৫. তিন মাস অন্তর অন্তর কৃমিনাশক খাওয়াতে হবে।
৬. নিয়মিত টিকা প্রদান করতে হবে ( পি.পি.আর, এফ. এম. ডি ইত্যাদি )
লেখক: মাহবুব বিল্যাহ
সহঃ সম্পাদক
তথ্য সুত্রঃ সফল খামারী
Labels:
গবাদি পশু পালন
Posted by
আমাদের রান্না
at
12:30 AM
কিভাবে কমলা চাষ করবেন: কমলা চাষ পদ্ধতি
Saturday, March 17, 2018
কমলা চাষ উপযোগী অঞ্চল:
আমাদের দেশে বৃহত্তর সিলেট, চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম ও পঞ্চগড় জেলা এ ফল চাষ উপযোগী। আমাদের দেশে কমলা লেবু চাষের যতেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে।
বংশবিস্তার:
বীজ থেকে জাইগোটিক চারা দুর্বল এক্ষেত্রে মাতৃগাছের গুণাগুণ বজায় থাকে না এবং ফল ধরতে প্রায় ৪-৫ বছর লাগে। চারাগুলো সবল ও মাতৃগাছের গুণাগুণ বজায় থাকে এবং ভাইরাস মুক্ত হয়। গাছে ফল ধরতে ৪-৫ বছর লাগে।
অঙ্গজ:
ভিনিয়ার/ক্লেফট গ্রাফটিং এবং টি-বাডিং প্রক্রিয়ায় উৎপাদিত চারা থেকে ২-৩ বছরের মধ্যেই ফল আসে। এ পদ্ধতি বেশ জনপ্রিয়।
চারা রোপনের উপযুক্ত সময়:
আমাদের দেশের আবহাওয়ায় আপনি বছরের যে কোন সময়েই কমলা লাগাতে পারেন। বর্ষার শুরুতে অর্থাৎ মে-জুন মাসে চারা রোপণ করতে হয়। উল্লেখ্য যে, সেচের সুবিধা থাকলে যে কোনো সময় কমলা লেবুর চারা রোপণ করা যায়।
মাদা তৈরী ও রোপন পদ্ধতি:
কমলা লেবুর চারা রোপণের জন্য সমতল জমিতে বর্গাকার, আয়তকার এবং পাহাড়ি জমিতে কন্টুর পদ্ধতিতে মাদা তৈরি করতে হবে। মাদার গর্তের আকার ৬০×৬০×৬০ সেন্টিমিটার এবং চারা থেকে চারা ৪ মিটার × ৪ মিটার দূরত্বে রোপণ করতে হবে।
সার ব্যবস্থাপনা:
মাদা প্রতি সার সুপারিশমালা:
গোবর ১০ কেজি
ইউরিয়া ২০০ গ্রাম
টিএসপি ২০০ গ্রাম
এমওপি ২০০ গ্রাম এবং
চুন ৫০০ গ্রাম চুন দিতে হবে।
উল্লেখ্য যে, চারা রোপণের ১৫ থেকে ২০ দিন আগে সার প্রয়োগ করতে হবে।
সেচ ব্যবস্থাপনা:
খরা মৌসুমে বয়স্ক গাছে ২ থেকে ৩টি সেচ দিতে হবে। গাছে ফল পরিপক্ব হওয়ার সময় সেচ দিলে ফল আকারে বড় ও রসযুক্ত হয়।
সতকর্তা:
গাছের গোড়ায় পানি জমলে মাটিবাহিত রোগ হতে পারে। তাই পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্হা করতে হবে।
পরিচর্যা:
আগাছা যে কোন ফসল উৎপাদনে একটি বিরাট অন্তরায় তাই আগাছা পরিস্কার রাখতে হবে। কমলার চারা রোপন করা হলে এর চার পাশের মাটিকে উচু করে দিতে হবে যেন গাছের গোড়ায় পানি না জমে। চারা লাগানো শেষ হলে গাছগাছের গোড়ার মাটি চেপে দিতে হবে। গাছ লাগানোর পর ফল ধরার আগ পর্যন্ত ধীরে ধীরে ডাল ছেঁটে গাছকে নির্দিষ্ট আকারে রাখতে হবে। ডাল ছাঁটাইয়ের পর কাটা অংশে বর্দোপেস্ট দিতে হবে। এজন্য দুটি পাত্রে ৭০ গ্রাম তুঁতে ও ১৪০ গ্রাম চুন আলাদাভাবে মিশ্রণ করে এক লিটার পানির সঙ্গে মিশিয়ে বর্দোপেস্ট তৈরি করতে হবে।
ফল সংগ্রহ:
কমলা একটি জনপ্রিয় এক প্রকারের লেবু জাতীয় রসালো ফল। এ ফল পরিপক্ব হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রঙ বদলাতে শুরু করে। গাছে কমলা ভালোভাবে পাকার পর ফল সংগ্রহ করলে মিষ্টি হয়।
ফলন:
এক একটি গাছে প্রচুর পরিমাণে কমলা ধরে। একটি পূর্ণ বয়স্ক কমলা গাছ থেকে বছরে গড়ে প্রায় ৩০০-৪০০টি কমলা পাওয়া যায়। উল্লেখ্য যে, বেশি বয়স্ক কমলা গাছ বছরে এক হাজার থেকে দেড় হাজার পর্যন্ত ফল দিয়ে থাকে। একটি কমলা গাছ সাধারণত ৫০ থেকে ৭০ বছর পর্যন্ত ফল দিয়ে থাকে।
তথ্য সুত্রঃ সফল খামারী
Labels:
ফল-মূল চাষ
Posted by
আমাদের রান্না
at
12:30 AM
অসাধারণ উপায়ে কচুরিপানার উপর সবজি চারার চাষ
Friday, March 16, 2018
দেশের পশ্চাৎপদ দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের দরিদ্র জনগোষ্ঠির একটি বড় অংশের বসবাস বরিশালের হিন্দু অধুষ্যিত আগৈলঝাড়া উপজেলায়। এ জনগোষ্ঠীর দারিদ্র্যের জন্য উপজেলার একটি বড় অংশ জুড়ে নিম্ন জলাভূমি। বছরের বেশিরভাগ সময় এখানকার প্রায় সকল জমি জলমগ্ন থাকে। তাই এ অঞ্চলের বাসিন্দারা নিত্যপ্রয়োজনীয় ফসল আবাদের জন্য অসাধারণ উপায়ে কচুরিপানার উপর সবজি চারার চাষ করে আসছে।
ধাপগুলোতে প্রধানত লালশাক, পালংশাক, পুঁইশাক, ডাটা, মরিচ, করলা, ঢেঁড়শ, হলুদ, শশা, মিষ্টি কুমড়া, লাউ, আলুসহ বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ করে থাকেন। প্রায় বার মাসই বিলাঞ্চলে এ ধরনের সবজি চাষ হয়ে থাকে। এ ছাড়াও করলা, বটবটি, সিম, পেঁপে, লাউ, কুমড়া, মরিচ, বেগুনসহ নানা জাতের সবজির চারা করে তা বিক্রি করে। এ উপজেলার তিনটি গ্রামের প্রায় তিন শতাধিক পরিবার আজ নিজেদের ভাগ্য বদলিয়েছেন। আগৈলঝাড়া উপজেলার গোয়াইল গ্রামের মিরাজ বিশ্বাস দীর্ঘ ১৫ বছর, মোকসেদ বিশ্বাস ২৫, সিরাজ ২০, বেল্লাল হোসেন ১৫, তোফাজ্জেল হোসেন ২০ বছর, বাশাইল গ্রামের খালেক সরদার ২৬, ছোট বাশাইল গ্রামের সামচু সরদার ২৫ বছর ধরে ধাপের ওপর বিভিন্ন জাতের সবজির চারা করে তা বিক্রি করে সংসারের স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে এনেছেন। চাষী মিরাজ বিশ্বাস (৩৫) জানান, তার বাবাও সবজির চারা করে তা বিক্রি করেছেন। এখন তিনি (মিরাজ) এ ব্যবসার সাথে জড়িয়ে পরেছেন। জৈষ্ঠ মাসের শেষেরদিকে বিভিন্ন জাতের সবজির চারা চাষের কার্যক্রম শুরু করা হয়। চাষীরা এ সময় বিশেষ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কচুরিপানার বড় বড় দলকে সন্নিবেশিত করে রেখে দিলে কয়েকদিনের মধ্যেই তাতে পঁচন ধরে। পঁচন ধরা কচুরিপানাই হয়ে যায় ধাপ। প্রতিটি ধাপেই পর্যাপ্ত জৈবসারের কারনে সবজির চারাগুলো অত্যন্ত উর্বর হয়। চাষী মোকসেদ বিশ্বাস (৫০) জানান, স্থানীয় বিভিন্ন হাট-বাজার থেকে বিভিন্ন জাতের সবজির বীজ ক্রয় করে বাড়িতে মাচা বেঁধে সবজির বীজ দিয়ে চারা গজিয়ে তা ভাসমান ধাপের ওপর রাখা হয়। প্রত্যেকটি ভাসমান ধাপে চারবার চারা করা হয়। প্রথমবার একমাস পরিচর্যার পর চারাগুলো বিক্রি করে দেয়া হলেও পরবর্তীতে ১৫-২০ দিনের মধ্যেই চারা বিক্রি করা যায়। এভাবেই প্রতিটি ধাপে চারবার চারা করে তা বিক্রি করা হয়।
সবজির চারাগুলো এখান থেকে ফরিদপুর, চাঁদপুর, মাগুরা, ফেনিসহ স্থানীয় হাটবাজারের পাইকাররা এসে ক্রয় করে নিয়ে যায়। চাষী তোফাজ্জেল হোসেন (৬৫) জানান, তাদের উৎপাদিত চারা ‘শ’ হিসেবে বিক্রি করা হয়।পরিচর্যাসহ তাদের একশ চারা বিক্রির উপযোগী করতে খরচ হয় দেড়শ টাকা। আর তা বিক্রি করা হয় তিন থেকে সাড়ে তিনশ টাকায়। তিনি আরো জানান, তাদের এ চারার ব্যবসায় বাড়ির গৃহিনীদের ভূমিকা অপরিসীম। স্থানীয়দের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, বাশাইল, গোয়াইল ও ছোট বাশাইল গ্রামে প্রায় ২৫ থেকে ৩০ বছর আগে থেকেই ধাপের ওপর সবজির চারা করে তা বিক্রি করা হয়। ধাপের ওপর স্বল্পসময়ের মধ্যে এ পদ্ধতিতে চাষাবাদ করে চাষীরা অধিক মুনাফা অর্জন করায় ওই তিন গ্রামের দেখা দেখি বর্তমানে উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের প্রত্যন্ত গ্রামগুলোর উন্মুক্ত জলাশয়ে একই পদ্ধতিতে সবজি চাষসহ সবজির চারা করে তা বিক্রির ব্যবসা জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। তবে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা না থাকায় তুলনামূলক ভাবে অনেকাংশে চাষাবাদ কম হচ্ছে। আগৈলঝাড়া উপজেলায় ধাপের ওপর স্বল্পব্যয়ে অধিক মুনাফা অর্জনের এ পদ্ধতি দেখে পার্শ্ববর্তী উজিরপুরের সাতলা, বাগধা, কোটালীপাড়ার বিশারকান্দি, ধারাবাশাইল, পিঞ্জুরী, মাচারতাঁরা, ডুমুরিয়া, তারাকান্দর, ছত্রকান্দা, রামশীল, জল্লা, কলাবাড়ী, শুয়াগ্রাম, সাতুরিয়া, আলামদি, নারায়নখানা, তালপুকুরিয়া, সাদুল্লাপুর গ্রামের শতকরা ৮০ ভাগ লোক বর্তমানে ধাপের ওপর সবজি ও চারা চাষের ব্যবসাকে বেঁচে নিয়েছেন।
এ চাষে খরচ কম কিন্তু আয় বেশী হওয়ায় গরীব কৃষকদের মাঝে এটি অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। প্রান্তিক চাষীদের ভাষ্যমতে, স্থানীয় কৃষি অফিস চাষীদের উদ্বুদ্ধ সহ অর্থনৈতিক সহযোগিতা করলে ধাপের ওপর সবজি চাষের ব্যাপকতা যেমন বাড়বে তেমনি চাষীদের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পাশাপাশি বাজারে সবজির চাহিদাও পূরন করা সম্ভব হবে।
তথ্য সুত্রঃ সফল খামারী
Labels:
কৃষি সংবাদ,
জানা-অজানা
Posted by
আমাদের রান্না
at
1:30 AM
কিভাবে বেইজিং জাতের হাঁস পালন করবেন ?
Thursday, March 15, 2018
চায়না প্রজাতির হাঁস লালন পালন করে সফলতা অর্জন করা যায়। যার নাম বেইজিং জাতের হাঁস। অনেকের ধারণা এই বিদেশী জাতের হাঁস আমাদের দেশে লালন পালন করা যাবে কিনা অথবা আমাদের দেশের আবহাওয়ার সাথে খাপ খাওয়াতে পারবে কিনা। নি:সন্দেহে আমাদের দেশে এই বেইজিং জাতের হাঁস লালন পালন করা খুবই সহজ এবং কোনো প্রকারের প্রতিকূলতার সৃষ্টি হবে না এবং কোনো রকম সমস্যার সৃষ্টি হবে না।
হাঁসের রোগ বালাই বলতে ২টি রোগ হয়। ডাকপ্লেগ রোগ এবং ডাক কলেরা রোগ। যেহেতু ৩ মাস বয়সে এই হাঁসটি বিক্রি করা হবে সেজন্য ২৫ দিন বয়সে ডাকপ্লেগ এবং ৪০ দিন বয়সে পুনরায় ডাকপ্লেগ টিকা দেওয়া হয়। প্রাথমিকভাবে কিছু অ্যান্টিবায়েটিক এবং ভিটামিন জাতীয় ঔষধ খাওয়ালেই এই হাঁসের রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব এবং সেক্ষেত্রে হাঁসের মৃত্যুহার হবে খুবই কম। যা আমাদের দেশী হাঁস পালনে যে সমস্যার সৃষ্টি হয় এই বেইজিং জাতের হাঁস পালনের ক্ষেত্রে সেই সমস্যার সৃষ্টি হবে না। যা নি:সন্দেহে আমাদের দেশের জন্য লাভজনক এবং এটা পালন করা সম্ভব।
দেশীয় হাঁসের মত দেশীয় খাবার খাওয়ানো যায় বলে আমাদের দেশে এই হাঁস ভালোভাবে লালন পালন করা যাবে। এই বেইজিং জাতের হাঁস তিনভাবে পালন করা যায়। ১) আবদ্ধ পদ্ধতি, ২) আবদ্ধ ও আংশিক খোলা পদ্ধতি এবং ৩) উন্মুক্ত পদ্ধতি। হাঁস লালন পালন করতে গেলে মনে রাখতে হবে প্রাকৃতিক পদ্ধতিতেই পালতে হবে। আমাদের দেশী হাঁস যেভাবে প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে পালন করা হয়, এই হাঁসও সেই একই পদ্ধতিতে লালন পালন করলে লাভজনক হবে। কারণ হাঁস সম্পূর্ণ আবদ্ধ অবস্থায় পালন করলে ঐখান থেকে লাভ করা সম্ভব নয়।
এই হাঁসের বাচ্চা কেনার পরে প্রথম ১ মাস ব্রয়লার ফিড বা লেয়ার মুরগির ফিড খাওয়াতে হবে। ১ মাস পার হলেই ২৫ দিন বয়সে একটি ভ্যাকসিন দিতে হবে। তারপর উন্মুক্ত পদ্ধতিতে মাঠে, বিলে, নদীতে বিশেষ করে যেখানে প্রাকৃতিক খাদ্য আছে যেমন শামুক, ঝিনুক, আগাছা, লতাপাতা, কচুরিপানা, শেওলা, মাঠে পড়ে থাকা ধান এসব জায়গায় পালন করতে হবে। এই প্রাকৃতিক খাবার খাওয়ালে ৩ মাস বয়সে এই হাঁস ৪ কেজী ওজনে বিক্রি করা যায়। এতে প্রতিটি হাঁসে ১০০-১৫০ টাকা লাভ করা সম্ভব।
যেহেতু হাঁস সব সময় পানিতে থাকতে পছন্দ করে সেজন্য হাঁসের বাসস্থানের আশে পাশে পানি থাকার ব্যবস্থা করতে হবে। খাবার এবং পানি দিতে হয় নির্দিষ্ট সময়ে। বেইজিং জাতের হাঁসগুলো সাদা রংয়ের, ঠোটগুলো হলুদ রংয়ের এবং পাগুলো একটু লালচে রংয়ের হয়ে থাকে। এই হাঁস পালন করতে হলে খামারীদের খুব বেশি জায়গার প্রয়োজন হয় না। বাড়ির আঙ্গিনায় এই হাঁস পালন করা যায় পারিবারিকভাবে। মাত্র ৩০০ স্কয়ার ফুট জায়গার মধ্যে ১০০টি হাঁস পালন করা সম্ভব। যদিও এই হাঁস চীনে দেখা যায় কিন্তু বর্তমানে এই হাঁস আমেরিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই হাঁস পারিবারিক এবং বানিজ্যিকভাবে পালন করা হয়। খামারে এই হাঁসগুলো নিজেদের মত করে বিচরণ করে এবং বড় হয়। এই হাঁসের রোগ বালাই অন্যান্য জাতের হাঁসের মতই। এজন্য নিয়ম মত ১ বার বা ২বার ভ্যাকসিন দিলেই আর রোগ বালাই হয় না।
ডাকপ্লেগ রোগের মূল লক্ষণ হলো পা পড়ে যাওয়া, পা অবশ হয়ে যাওয়া যাকে বলে প্যারালাইজড। এরফলে হাঁস খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে দেয়। এরফলে এই হাঁসের খুব দ্রুত মৃত্যু হয়। ভালো ফল পেতে হলে রোগ হওয়ার আগেই ভ্যাকসিন দিতে হবে। ভ্যাকসিন দেওয়ার নিয়ম হচ্ছে ২৫ দিন বয়সে ১ম ডোজ এবং ৪০ দিন বয়সে ২য় ডোজ। এরপরে প্রতি ৪ মাস পর পর ডাকপ্লেগ রোগের টিকা দিতে হবে। আর একটি রোগের নাম হচ্ছে ডাক কলেরা। এটা হচ্ছে ব্যাকটেরিয়াল ডিজিজ। এই কলেরা রোগের মূল লক্ষণ হচ্ছে সবুজ পাতলা পায়খানা, দুগন্ধযুক্ত পাতলা পায়খানা, পাখনা/ডানা ঝুলে যাবে। খাবার খাওয়া কমে যাবে। এরফলে এই হাঁস ধীরে ধীরে মারা যেতে থাকবে। এর মৃত্যুর হার খুব বেশি হয় না। উন্নত ঔষধ ও উন্নত পরিচর্যায় রাখলে এই হাঁস সহজেই সুস্থ্য হয়ে যায়। দেশীয় জাতের হাঁসের চেয়ে বেইজিং জাতের হাঁস পালন করা লাভজনক। এই বেইজিং জাতের হাঁস নিজেরা বাচ্চা ফুটাতে চায় না। এজন্য কৃত্রিম উপায়ে বাচ্চা ফুটানো হয়। এই জাতের হাঁসগুলো দেশীয় জাতের হাঁসের চেয়ে ১-১.৫ মাস আগে ডিম দিতে শুরু করে এবং সারা বছর জুড়েই ডিম দিতে পারে তবে বেইজিং জাতের হাঁস মাংস উৎপাদনের জন্য সবচেয়ে ভালো। মাত্র ৩-৪ মাসেই এই হাঁসের ওজন হয় ৩.৫-৪.৫ কেজি পর্যন্ত। যদি এই হাঁস পারিবারিকভাবে অথবা বানিজ্যিকভাবে চাষ করা যায় তাহলে দেশের জন্য যেমন অর্থনৈতিকভাবে উপকারী এবং মাংসের চাহিদাও যথাযথভাবে পূরণ করা সম্ভব হবে।
প্রাপ্তিস্থান: নওগাঁ আঞ্চলিক হাঁস প্রজনন কেন্দ্র অথবা কেন্দ্রীয় হাঁস প্রজনন খামার, হাজীগঞ্জ, নারায়নগঞ্জ।
তথ্য সুত্রঃ সফল খামারী
টু ইন ওয়ান গাছ
Wednesday, March 14, 2018
জমির উৎপাদন ক্ষমতার সর্বোচ্চ ব্যাবহার করার জন্য হাইব্রিড গাছের আবির্ভাব। এ ধরণের গাছগুলো উচ্চ ফলনশীল সেই সাথে আছে অধিক রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা। কৃষিবিদরা এ নিয়ে গবেষণা করে যাচ্ছেন নিরন্তর। আর প্রতি বছর আমরা নতুন নতুন হাইব্রিড গাছের সাথে পরিচিত হচ্ছি। কিন্তু একই গাছের উপরে একধরনের ফল আর মাটির নিচে অন্য ধরণের ফল উৎপাদিত হবে এ ধরণের দ্বিমাত্রিক গাছের কথা অনেকে চিন্তাই করেননি। সম্প্রতি এ ধরনের টু ইন ওয়ান গাছ উদ্ভাবন ঘটানোর মত কাজটা সম্ভব করেছেন বিজ্ঞানীরা । আলু গাছে টমেটো ফলানোর মত অদ্ভুদ কান্ড ঘটিয়েছেন তারা । টমেটো আর আলুর সমন্বয়ে উৎপাদন করেছেন হাইব্রিড উদ্ভিদ ।বিজ্ঞানীরা এর নাম দিয়েছেন “টমটেটো” বা “পমেটো”।
আলু এবং টমেটো একই গাছে উৎপাদন করার ধারনা প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৭৭ সালে ম্যাক্স প্লাঙ্ক ইন্সটিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট এ । যুক্তরাজ্যের গবেষকরা সম্প্রতি এই ধারণার সফল বাস্তবায়ন ঘটিয়েছেন। তারা একই গাছে উপরে টমেটো আর নিচে আলু ফলাতে সক্ষম হয়েছেন যাতে আলু ও টমেটোর স্বাদ অক্ষুন্ন থাকে। এই কাজের জন্য তারা জিন প্রকৌশল নয় গ্রাফটিং বা জোড় কলমের আশ্রয় নিয়েছেন। চেরি টমেটোর সঙ্গে সাদা গোল আলুর জোড় কলম পদ্ধতিতে আলু ও টমেটো একই গাছে উৎপাদন করা সম্ভব । । আলু ও টমেটো একই গাছে ফলানোর পদ্ধতি বিশ্বের অনেক দেশে অনুসরণ করা হয়। নিউজিল্যান্ডেও টমটেটোর মত পটেটো টম নামের একটি উদ্ভিদের উদ্ভাবন করা হয়েছে। বাংলাদেশে এর প্রচলন শুরু হয়নি। যদি এ পধতি আমাদের দেশে অনুসরণ করা হতো তাহলে কৃষি ক্ষেত্রে বিশাল অর্জন হত কৃষকরা জমির সর্বোত্তম ব্যাবহার নিশ্চিত করে অর্থনৈতিক ভাবে লাভবান হতে পারত।
কিভাবে একই গাছে টমেটো এবং আলু ফলানো হয়ঃ
আলু এবং টমেটো একই গাছে ফলানোর উপায় হচ্ছে আলু গাছে টমেটোর গ্রাফটিং পদ্ধতি ।
সাধারণত টমেটো এবং আলু একই ঋতুর ফসল । মৌসুমে এক একটি টমেটো গাছে প্রচুর পরিমান টমেটো ধরে কোনটা লাল কোনটা সবুজ , ফল পুরোপুরি পাকার আগেই গাছ মারা যায় এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পাবার জন্য এবং অনেক টমেটো উৎপাদনের জন্য বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে একই গাছে টমেটো ও আলু উৎপাদন করতে উদ্যোগী হয়েছেন। যাতে পরের বছর এর থেকে বেশি টমেটো পাওয়া যায়। একই গাছে দুই ফসল উৎপাদনের ফলে সময় যেমন বাঁচানো যায় তেমনি নিশ্চিত করা যায় জমির সর্বত্তম ব্যাবহার। এ জন্য মাটির উর্বরতা শক্তি সর্বাধিক হওয়া প্রয়োজন। ।
জমিকে সর্বোত্তম ব্যাবহার করার জন্য এটা একটা দারুণ উপায়। আপনি প্রথমে আলু গাছ লাগাবেন এবং সেটাকে পরিণত হতে দেবেন । তারপর ফসল উঠানোর সময় সব আলু গাছ মুলসহ না উঠিয়ে কয়েকটি রেখে দেবেন । সেগুলোতে গ্রাফটিং এর মাধ্যমে হাইব্রিড গাছ টটোমেটো বা পমেটো তৈরি করা হবে।
প্রয়োজনীয় উপকরণঃ
১. প্রাপ্ত বয়স্ক আলু গাছ।
২. আলু গাছের কাণ্ডের সমান ব্যাস বিশিষ্ট টমেটো গাছ।
৩. একটি ধারাল ছুরি অথবা কাঁটার।
৪. রেপিং টেপ
পদ্ধতিঃ
একটি প্রাপ্তবয়স্ক আলু গাছকে ( যাকে স্টক বলা হয়) মাটি থেকে প্রায় ১ ইঞ্চি উপরে ভি শেপ করে কেটে নিয়ে উপরের অংশটি ফেলে দিতে হবে।
অন্যদিকে একটি টমেটো গাছকে ( যাকে সায়ান বলা হয় ) মাটি থেকে ৬ থেকে ৭ ইঞ্চি কেটে আগাসহ উপরের অংশটি কেটে নিতে হবে । এ কাজের জন্য আলু গাছের সমান ব্যাস বিশিষ্ট টমেটো গাছ নিলে গ্রাফটিং করার জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত হয় । তারপর টমেটো গাছের কাটা অংশটি আলু গাছের কাটা অংশটির উপর প্রতিস্থাপন কড়তে হবে। একে বলা হয় গ্রাফটিং ।
গ্রাফটিং করা অংশটি গ্রাফটিং রেপিং টেপ দিয়ে ভালোভাবে পেঁচিয়ে দিতে হবে। প্রতিস্থাপিত অংশ থেকে নতুন পাতা গজানোর আগপর্যন্ত রেপিং টেপ খোলা যাবেনা ।
কেন গ্রাফটিং পদ্ধতি কার্যকরঃ
টমেটো এবং আলু উভয়ই একই গোত্রের মানে (nightshades) দীর্ঘ রাত্রির উদ্ভিদ এ কারনে এদের মধ্যে গ্রাফটিং পদ্ধতি বেশ কার্যকর। উভয় গাছেই থাকে আল্কালয়েড নামক একপ্রকার উপাদান যা তাদের পোকামাকড় থেকে রক্ষা করে। ফলে আলুর স্বাদ টমেটোতে প্রভাব বিস্তার করতে পারে কিন্তু বিজ্ঞানীরা চেরি টমেটোর সাথে সাদা আলুর গ্রাফটিং করে এ প্রভাবমুক্ত করতে সক্ষম হয়েছেন। ।
সুবিধাঃ গ্রাফটিং সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে এটা সময় এবং স্থান সাশ্রয়ী । একই গাছে আলু এবং টমেটো উৎপাদনের ফলে অর্থনৈতিক ভাবে অধিক লাভবান হওয়া সম্ভব ।
ছবি এবং তথ্যঃ ওয়েবসাইট
Labels:
কৃষি সংবাদ,
জানা-অজানা,
শাক-সব্জীর চাষ
Posted by
আমাদের রান্না
at
5:23 AM
Subscribe to:
Posts (Atom)