জমির উৎপাদন ক্ষমতার সর্বোচ্চ ব্যাবহার করার জন্য হাইব্রিড গাছের আবির্ভাব। এ ধরণের গাছগুলো উচ্চ ফলনশীল সেই সাথে আছে অধিক রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা। কৃষিবিদরা এ নিয়ে গবেষণা করে যাচ্ছেন নিরন্তর। আর প্রতি বছর আমরা নতুন নতুন হাইব্রিড গাছের সাথে পরিচিত হচ্ছি। কিন্তু একই গাছের উপরে একধরনের ফল আর মাটির নিচে অন্য ধরণের ফল উৎপাদিত হবে এ ধরণের দ্বিমাত্রিক গাছের কথা অনেকে চিন্তাই করেননি। সম্প্রতি এ ধরনের টু ইন ওয়ান গাছ উদ্ভাবন ঘটানোর মত কাজটা সম্ভব করেছেন বিজ্ঞানীরা । আলু গাছে টমেটো ফলানোর মত অদ্ভুদ কান্ড ঘটিয়েছেন তারা । টমেটো আর আলুর সমন্বয়ে উৎপাদন করেছেন হাইব্রিড উদ্ভিদ ।বিজ্ঞানীরা এর নাম দিয়েছেন “টমটেটো” বা “পমেটো”।
আলু এবং টমেটো একই গাছে উৎপাদন করার ধারনা প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৭৭ সালে ম্যাক্স প্লাঙ্ক ইন্সটিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট এ । যুক্তরাজ্যের গবেষকরা সম্প্রতি এই ধারণার সফল বাস্তবায়ন ঘটিয়েছেন। তারা একই গাছে উপরে টমেটো আর নিচে আলু ফলাতে সক্ষম হয়েছেন যাতে আলু ও টমেটোর স্বাদ অক্ষুন্ন থাকে। এই কাজের জন্য তারা জিন প্রকৌশল নয় গ্রাফটিং বা জোড় কলমের আশ্রয় নিয়েছেন। চেরি টমেটোর সঙ্গে সাদা গোল আলুর জোড় কলম পদ্ধতিতে আলু ও টমেটো একই গাছে উৎপাদন করা সম্ভব । । আলু ও টমেটো একই গাছে ফলানোর পদ্ধতি বিশ্বের অনেক দেশে অনুসরণ করা হয়। নিউজিল্যান্ডেও টমটেটোর মত পটেটো টম নামের একটি উদ্ভিদের উদ্ভাবন করা হয়েছে। বাংলাদেশে এর প্রচলন শুরু হয়নি। যদি এ পধতি আমাদের দেশে অনুসরণ করা হতো তাহলে কৃষি ক্ষেত্রে বিশাল অর্জন হত কৃষকরা জমির সর্বোত্তম ব্যাবহার নিশ্চিত করে অর্থনৈতিক ভাবে লাভবান হতে পারত।
কিভাবে একই গাছে টমেটো এবং আলু ফলানো হয়ঃ
আলু এবং টমেটো একই গাছে ফলানোর উপায় হচ্ছে আলু গাছে টমেটোর গ্রাফটিং পদ্ধতি ।
সাধারণত টমেটো এবং আলু একই ঋতুর ফসল । মৌসুমে এক একটি টমেটো গাছে প্রচুর পরিমান টমেটো ধরে কোনটা লাল কোনটা সবুজ , ফল পুরোপুরি পাকার আগেই গাছ মারা যায় এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পাবার জন্য এবং অনেক টমেটো উৎপাদনের জন্য বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে একই গাছে টমেটো ও আলু উৎপাদন করতে উদ্যোগী হয়েছেন। যাতে পরের বছর এর থেকে বেশি টমেটো পাওয়া যায়। একই গাছে দুই ফসল উৎপাদনের ফলে সময় যেমন বাঁচানো যায় তেমনি নিশ্চিত করা যায় জমির সর্বত্তম ব্যাবহার। এ জন্য মাটির উর্বরতা শক্তি সর্বাধিক হওয়া প্রয়োজন। ।
জমিকে সর্বোত্তম ব্যাবহার করার জন্য এটা একটা দারুণ উপায়। আপনি প্রথমে আলু গাছ লাগাবেন এবং সেটাকে পরিণত হতে দেবেন । তারপর ফসল উঠানোর সময় সব আলু গাছ মুলসহ না উঠিয়ে কয়েকটি রেখে দেবেন । সেগুলোতে গ্রাফটিং এর মাধ্যমে হাইব্রিড গাছ টটোমেটো বা পমেটো তৈরি করা হবে।
প্রয়োজনীয় উপকরণঃ
১. প্রাপ্ত বয়স্ক আলু গাছ।
২. আলু গাছের কাণ্ডের সমান ব্যাস বিশিষ্ট টমেটো গাছ।
৩. একটি ধারাল ছুরি অথবা কাঁটার।
৪. রেপিং টেপ
পদ্ধতিঃ
একটি প্রাপ্তবয়স্ক আলু গাছকে ( যাকে স্টক বলা হয়) মাটি থেকে প্রায় ১ ইঞ্চি উপরে ভি শেপ করে কেটে নিয়ে উপরের অংশটি ফেলে দিতে হবে।
অন্যদিকে একটি টমেটো গাছকে ( যাকে সায়ান বলা হয় ) মাটি থেকে ৬ থেকে ৭ ইঞ্চি কেটে আগাসহ উপরের অংশটি কেটে নিতে হবে । এ কাজের জন্য আলু গাছের সমান ব্যাস বিশিষ্ট টমেটো গাছ নিলে গ্রাফটিং করার জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত হয় । তারপর টমেটো গাছের কাটা অংশটি আলু গাছের কাটা অংশটির উপর প্রতিস্থাপন কড়তে হবে। একে বলা হয় গ্রাফটিং ।
গ্রাফটিং করা অংশটি গ্রাফটিং রেপিং টেপ দিয়ে ভালোভাবে পেঁচিয়ে দিতে হবে। প্রতিস্থাপিত অংশ থেকে নতুন পাতা গজানোর আগপর্যন্ত রেপিং টেপ খোলা যাবেনা ।
কেন গ্রাফটিং পদ্ধতি কার্যকরঃ
টমেটো এবং আলু উভয়ই একই গোত্রের মানে (nightshades) দীর্ঘ রাত্রির উদ্ভিদ এ কারনে এদের মধ্যে গ্রাফটিং পদ্ধতি বেশ কার্যকর। উভয় গাছেই থাকে আল্কালয়েড নামক একপ্রকার উপাদান যা তাদের পোকামাকড় থেকে রক্ষা করে। ফলে আলুর স্বাদ টমেটোতে প্রভাব বিস্তার করতে পারে কিন্তু বিজ্ঞানীরা চেরি টমেটোর সাথে সাদা আলুর গ্রাফটিং করে এ প্রভাবমুক্ত করতে সক্ষম হয়েছেন। ।
সুবিধাঃ গ্রাফটিং সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে এটা সময় এবং স্থান সাশ্রয়ী । একই গাছে আলু এবং টমেটো উৎপাদনের ফলে অর্থনৈতিক ভাবে অধিক লাভবান হওয়া সম্ভব ।
ছবি এবং তথ্যঃ ওয়েবসাইট