বোরো ধান চাষে সার ও পরিচর্যা ব্যবস্খাপনা
বোরো ধানের বীজতলা থেকে শুরু করে রোপণ পর্যন্ত একটা বৈরী পরিবেশের মধ্য দিয়ে যায় বলে, বিশেষ কিছু পরিচর্যা ব্যবস্খা গ্রহণ করতে হয়। না হলে বোরোর ফলন মারাত্মকভাবে কমে যায়। বিভিন্ন রোগ ও পোকামাকড়ের উপদ্রব বেড়ে যায়। অন্য দিকে জমিতে ফলন ঠিক রাখার জন্য ধান চাষের আগে-পরে বা পাশাপাশি অন্য জাতের ফসলও চাষ করতে হয়। এতে ধান রোপণের আগে বা কাটার পর মধ্যবর্তী সময়ে স্বল্প সময়ের জন্য একটি ফসল চাষ করলে জমির উর্বরতা রক্ষা করা যায়। বোরো চাষের আগে যদি আলু, সরিষা বা শিমজাতীয় শস্য চাষ করে নেয়া যায় এবং বোরো চাষের পর ধৈঞ্চার চাষ করে মাটিতে মিশিয়ে দেয়া যায়, তাহলে জমির স্বাস্খ্য ঠিক রাখা যায়। কারণ এসব ফসলে সার প্রয়োগ যথাযথভাবে করা হয় ভালো ফলনের জন্য যা পরবর্তী বোরোর জন্যও কাজে লাগে।
জমিতে জৈব পদার্থ যোগ হয়ে জমির উর্বরতা রক্ষা পায়, জমিতে প্রয়োগ করা রাসায়নিক সারের গ্রহণ যথাযথ হয় এবং রাসায়নিক সার ব্যবহারের কারণে জমিতে তৈরি হওয়া বিষাক্ততা কমে যায়। এ জন্য বোরো-রোপা আমন শস্য বিন্যাসে যেসব ফসল ব্যবহারের বা চাষের সুপারিশ করা হয়েছে সেগুলো চাষের ব্যবস্খা নিলে বোরোর উচ্চ ফলন পাওয়া অনেকটাই নিশ্চিত হয়। এসব শস্যবিন্যাস অনুসরণ করলে প্রচলিত শস্যবিন্যাসের চেয়ে প্রতি এককে শতকরা ৩০ থেকে ৩৫ ভাগ বেশি ফলন পাওয়া যেতে পারে।
সেচ সুবিধাপ্রাপ্ত উঁচু ও মাঝারি উঁচু জমির জন্য বোরো চাষের বিভিন্ন শস্যবিন্যাসের সুপারিশ করা হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- ১. বোরো (বিআর ২৬)-রোপা আমন (ব্রিধান ৩২)-সরিষা (টরি ৭); ২. বোরো (বিআর-২৬)-রোপা আমন (ব্রিধান ৩২) -সবুজ সার (শনপাট); ৩. বোরো (ব্রিধান-২৮)-গিমাকলমি-রোপা আমন (ব্রিধান ৩২); ৪. বোরো (বিআর ৩)-পতিত-রোপা আমন (বিআর ১১); ৫. বোরো (বিআর ২৬)-রোপা আমন (ব্রিধান ৩২)-সবজি (মটরশুঁটি/ঝাড়শিম); ৬. অঙ্কুরিত বোনা বোরো (ব্রিধান ২৮)-সবুজ সার-রোপা আমন (বিআর ১১)
বোরোর জমিতে নিয়মিত জৈবসারের বা সবুজ সারের ব্যবস্খা করতে না পারলে যথেষ্ট জৈবসার নিয়মিত প্রয়োগ করতে হয়। আলু বা রবিশস্য চাষের সময় রাসায়নিক সারের সাথে যে জৈব সার ব্যবহার করা হয় অনেকে সেটাকেই যথেষ্ট মনে করেন বোরো চাষের সময়েও। অর্থাৎ বোরোতে জৈব সার কম ব্যবহার করেন। বোরোর জমিতে সঠিক মাত্রায় রাসায়নিক সারের সাথে জৈবসার ব্যবহার করলে আশানুরূপ ফলন পাওয়া সম্ভব।
রবি ফসলে ব্যবহৃত পটাশ, ফসফেট, জিপসাম ও দস্তা সারের প্রভাব পরবর্তী ফসল পর্যন্ত কার্যকর থাকে বলে বোরো চাষে এসব সার অর্ধেক মাত্রায় বা আগের ফসলে ব্যবহৃত পরিমাণের ওপর ভিত্তি করে প্রয়োগ করতে হয়। তবে ইউরিয়া সারের কার্যকারিতা যেহেতু মাটিতে স্বল্প সময় বিদ্যমান থাকে, তাই এই সার আগের ফসলে পরিমিত মাত্রায় ব্যবহার করলেও বোরো চাষের সময়েও মাত্রানুযায়ী ব্যবহার করতে হয়।
পটাশ সারের উপাদান পটাশিয়াম বিভিন্ন ফসল (আলু ও সবজি) মাটি থেকে গড়ে হেক্টর প্রতি প্রায় ১২০-১৪০ কেজি পর্যন্ত গ্রহণ করে। ফসফেট সারের উপাদান ফসফরাস গ্রহণ করে ১৫ থেকে ২০ কেজি এবং গৌণ সার গìধক (জিপসাম) ৭ থেকে ১৫ কেজি ও দস্তা খুবই সামান্য গ্রহণ করে। অবশিষ্ট অংশ জমিতেই থেকে যায়, যা পরবর্তী ফসল হিসেবে বোরো ধানগাছের কাজে লাগে। আর সে জন্যই আগের ফসলে প্রয়োগকৃত এসব সারের পরিমাণ জেনে বোরোতে সার প্রয়োগ করতে হয়।
বোরো চাষে তিন বারে মোট ইউরিয়া সার সমানভাবে ভাগ করে উপরি প্রয়োগ করতে হয়। প্রথমবার জমি তৈরির শেষ সময়ে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হয়। দ্বিতীয়বারে অধিকাংশ ধানগাছের গোছায় ৪ থেকে ৫টি কুশি দেখা গেলে এবং শেষবারে কাউচথোড় হওয়া অবস্খার ৫ থেকে ৭ দিন আগেই দিতে হয়। ইউরিয়া প্রয়োগের সময় মাটিতে অবশ্যই প্রচুর রস থাকতে হয়। ২ থেকে ৩ সেন্টিমিটার পানি থাকা ভালো। ইউরিয়া প্রয়োগের পরপরই হাত দিয়ে বা উইডার দিয়ে জমির আগাছা পরিষ্কারের ব্যবস্খা নিলে এক দিকে যেমন আগাছা নিড়ানোর কাজ করা হয়, অন্য দিকে তেমনি প্রয়োগকৃত সার মাটিতে মিশে যায়। আগাছা পরিষ্কারের ফলে প্রয়োগকৃত ইউরিয়ার যথাসম্ভব বেশি পরিমাণে গাছ গ্রহণ করতে পারে। তবে মনে রাখতে হয় কোনো অবস্খাতেই ইউরিয়ার অতিরিক্ত ব্যবহার ধানের ফলন বাড়ায় না। এ জন্য এলসিসি ব্যবহার বাড়িয়ে অর্থাৎ ধানগাছের পাতার সাথে রঙ মিলিয়ে সঠিক সময়ে ও সঠিক পরিমাণে ইউরিয়া প্রয়োগ করতে হয়। ইউরিয়ার সাশ্রয় বা ব্যবহারে কার্যকারিতা বাড়াতে গুটি ইউরিয়া বোরোর ক্ষেতে ব্যবহার করা যায়। গুটি ইউরিয়ার সুফল পেতে সারি করে রোপণ করা ক্ষেতের কাদামাটিতে প্রতি ৪টি গোছার মাঝে একটি করে গুটি ইউরিয়া প্রয়োগ করতে হয়।
ইউরিয়ার উপরি প্রয়োগের পরও যদি ধানগাছের নতুন পাতা হলুদাভ হতে থাকে এবং গাছের বাড়-বাড়তি ও কুশি সংখ্যা কমে যায়, তাহলে এটি গìধকের কারণে হয়েছে বলে ধরে নিতে হয় এবং দ্রুত পদক্ষেপ হিসেবে জমির পানি সরিয়ে নিয়ে হেক্টর প্রতি ৬০ কেজি হারে জিপসাম সার উপরি প্রয়োগ করতে হয়। জিপসাম সার উপরি প্রয়োগের সময় শুকনো মাটি বা ছাইয়ের সাথে অথবা ইউরিয়া উপরি প্রয়োগের সময় একসাথে মিশিয়ে প্রয়োগ করা যায়। অবস্খা বুঝে গìধক সার ব্যবহার না করলে ধানের শীষের সংখ্যা কম হয়, শীষে পুষ্ট ধানের সংখ্যা কম হয় এবং চিটার সংখ্যাও বেশি হয়। এতে ফলন মারাত্মকভাবে কমে যায়। গìধকের অভাবে আক্রান্ত ক্ষেতের ধান পাকতে যেমন সময় বেশি লাগে তেমনি একই জমির ধান বিভিন্ন সময়ে পাকতে থাকে। এতে ধান কাটতে খুবই অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়।
অনেক সময় বাড়ন্ত ধান গাছের কচি পাতার গোড়া সাদা হয়ে যায়। পরে অন্যান্য বয়সী পাতা হলুদাভ হয় এবং পাতার আগার দিকে বাদামি দাগ দেখা যায় এবং পরে শুকিয়ে যায়। ধানের কুশির সংখ্যাও কমে যায়। ধান ক্ষেতের কোথাও চারা বড় হয় আবার কোথাও চারা ছোট হয়। পাতার আকারও ছোট হয়। এই লক্ষণ দেখা গেলে ধরে নিতে হয় যে জমিতে দস্তার অভাব দেখা দিয়েছে। সেময়ে জমি থেকে পানি বের করে দিতে হয়। এরপর হেক্টর প্রতি ১০ কেজি হারে দস্তা সার উপরি প্রয়োগ করতে হয়। দস্তা সার অপচয়ের হাত থেকে রক্ষার একটি সহজ উপায় হচ্ছে, দু’বারে যথাক্রমে চারা রোপণের ১০ থেকে ১৫ দিন ও ৩০ থেকে ৩৫ দিন পর প্রতি লিটার পরিষ্কার পানিতে ৪.৫ থেকে ৫ গ্রাম দস্তা সার (জিঙ্ক সালফেট) মিশিয়ে স্প্রে করতে হয়।
বোরো ক্ষেতের অন্যান্য পরিচর্যার মধ্যে অন্যতম হলো পানি সেচ ও নিকাশ ব্যবস্খাপনা। চারা রোপণের পর জমিতে পানি এমনভাবে রাখতে হয় যেন চারা কোনো অবস্খাতেই ডুবে না যায়। আবার বোরো ধানের জমিতে সব সময়ই যে পানি ধরে রাখতে হয় তা কিন্তু নয়। একটি সেচের পর আরেকটি সেচ দেয়ার মধ্যবর্তী সময়ে ক্ষেত যদি ৩ থেকে ৪ দিন শুকনো রাখা যায় তাহলে ধানগাছের বৃদ্ধি কমে না, বরং পানির সাশ্রয় হয় মোট পানি খরচের ২৫ থেকে ৩০ ভাগ। যেসব এলাকায় গভীর নলকূপ দিয়ে সেচ দেয়া হয় সেসব এলাকার জমিতে এভাবে সেচ দিলে বর্তমানে যে পরিমাণ জমিতে পানি সেচ দেয়া যায়, তার চেয়েও প্রায় ৪০ ভাগ বেশি জমিতে সেচ দেয়া সম্ভব হতে পারে। এতে এক দিকে যেমন পানির খরচ কমে, অন্য দিকে তেমনি চাষের এলাকা বৃদ্ধি করাও সম্ভব। আবার বেশি পানি খরচ না করায় পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ারও আশঙ্কা কমে যায়। বোরো ক্ষেতে কাইচথোড় আসা পর্যন্ত এভাবে পানি সেচ দেয়া যায়। তবে কাইচথোড় অবস্খা শুরু হলে জমিতে ৫ থেকে ৭ সেন্টিমিটার গভীরতায় পানি রাখা ভালো।
সার প্রয়োগর আগে জমি থেকে পানি কমিয়ে উপরি প্রয়োগ করতে হয়। এর ২ থেকে ৩ দিন পর পুনরায় জমিতে পরিমিত পানি সেচ দিলে প্রয়োগকৃত সারের কার্যকারিতা বাড়ে। জমিতে পানি ধরে রেখে দানাদার বালাইনাশক ব্যবহার করলে এর কার্যকারিতাও বাড়ে। ধানের দানা গঠন থেকে শুরু করে ধান পাকার আগে দানা শক্ত হওয়ার সময় পর্যন্ত জমিতে পানি ধরে রাখলেই চলে। দানা শক্ত হতে শুরু করলেই জমি থেকে পানি সরিয়ে জমি ভেজা ভেজা অবস্খায় রাখতে হয়।
জমির আইল কেটে সাধারণত সেচ দেয়া হয়। এতে জমির মাটি ও পানির অপসারণ ও অপচয় হয়। এই অবস্খা রোধ করতে প্লাস্টিকের ফিতা বা পিভিসি পাইপ ব্যবহার করলে মাটির অপসারণ ও পানির অপচয় রোধ করার সাথে সাথে সেচের খরচও কমানো যায়। কারণ কাঁচা নালার তুলনায় এই ব্যবস্খায় শতকরা প্রায় ৪২ ভাগ বেশি জমিতে সেচ দেয়া সম্ভব হয়।
লেখক: খোন্দকার মেসবাহুল ইসলাম, কৃষিবিদ
এগ্রোবাংলা
জমিতে জৈব পদার্থ যোগ হয়ে জমির উর্বরতা রক্ষা পায়, জমিতে প্রয়োগ করা রাসায়নিক সারের গ্রহণ যথাযথ হয় এবং রাসায়নিক সার ব্যবহারের কারণে জমিতে তৈরি হওয়া বিষাক্ততা কমে যায়। এ জন্য বোরো-রোপা আমন শস্য বিন্যাসে যেসব ফসল ব্যবহারের বা চাষের সুপারিশ করা হয়েছে সেগুলো চাষের ব্যবস্খা নিলে বোরোর উচ্চ ফলন পাওয়া অনেকটাই নিশ্চিত হয়। এসব শস্যবিন্যাস অনুসরণ করলে প্রচলিত শস্যবিন্যাসের চেয়ে প্রতি এককে শতকরা ৩০ থেকে ৩৫ ভাগ বেশি ফলন পাওয়া যেতে পারে।
সেচ সুবিধাপ্রাপ্ত উঁচু ও মাঝারি উঁচু জমির জন্য বোরো চাষের বিভিন্ন শস্যবিন্যাসের সুপারিশ করা হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- ১. বোরো (বিআর ২৬)-রোপা আমন (ব্রিধান ৩২)-সরিষা (টরি ৭); ২. বোরো (বিআর-২৬)-রোপা আমন (ব্রিধান ৩২) -সবুজ সার (শনপাট); ৩. বোরো (ব্রিধান-২৮)-গিমাকলমি-রোপা আমন (ব্রিধান ৩২); ৪. বোরো (বিআর ৩)-পতিত-রোপা আমন (বিআর ১১); ৫. বোরো (বিআর ২৬)-রোপা আমন (ব্রিধান ৩২)-সবজি (মটরশুঁটি/ঝাড়শিম); ৬. অঙ্কুরিত বোনা বোরো (ব্রিধান ২৮)-সবুজ সার-রোপা আমন (বিআর ১১)
বোরোর জমিতে নিয়মিত জৈবসারের বা সবুজ সারের ব্যবস্খা করতে না পারলে যথেষ্ট জৈবসার নিয়মিত প্রয়োগ করতে হয়। আলু বা রবিশস্য চাষের সময় রাসায়নিক সারের সাথে যে জৈব সার ব্যবহার করা হয় অনেকে সেটাকেই যথেষ্ট মনে করেন বোরো চাষের সময়েও। অর্থাৎ বোরোতে জৈব সার কম ব্যবহার করেন। বোরোর জমিতে সঠিক মাত্রায় রাসায়নিক সারের সাথে জৈবসার ব্যবহার করলে আশানুরূপ ফলন পাওয়া সম্ভব।
রবি ফসলে ব্যবহৃত পটাশ, ফসফেট, জিপসাম ও দস্তা সারের প্রভাব পরবর্তী ফসল পর্যন্ত কার্যকর থাকে বলে বোরো চাষে এসব সার অর্ধেক মাত্রায় বা আগের ফসলে ব্যবহৃত পরিমাণের ওপর ভিত্তি করে প্রয়োগ করতে হয়। তবে ইউরিয়া সারের কার্যকারিতা যেহেতু মাটিতে স্বল্প সময় বিদ্যমান থাকে, তাই এই সার আগের ফসলে পরিমিত মাত্রায় ব্যবহার করলেও বোরো চাষের সময়েও মাত্রানুযায়ী ব্যবহার করতে হয়।
পটাশ সারের উপাদান পটাশিয়াম বিভিন্ন ফসল (আলু ও সবজি) মাটি থেকে গড়ে হেক্টর প্রতি প্রায় ১২০-১৪০ কেজি পর্যন্ত গ্রহণ করে। ফসফেট সারের উপাদান ফসফরাস গ্রহণ করে ১৫ থেকে ২০ কেজি এবং গৌণ সার গìধক (জিপসাম) ৭ থেকে ১৫ কেজি ও দস্তা খুবই সামান্য গ্রহণ করে। অবশিষ্ট অংশ জমিতেই থেকে যায়, যা পরবর্তী ফসল হিসেবে বোরো ধানগাছের কাজে লাগে। আর সে জন্যই আগের ফসলে প্রয়োগকৃত এসব সারের পরিমাণ জেনে বোরোতে সার প্রয়োগ করতে হয়।
বোরো চাষে তিন বারে মোট ইউরিয়া সার সমানভাবে ভাগ করে উপরি প্রয়োগ করতে হয়। প্রথমবার জমি তৈরির শেষ সময়ে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হয়। দ্বিতীয়বারে অধিকাংশ ধানগাছের গোছায় ৪ থেকে ৫টি কুশি দেখা গেলে এবং শেষবারে কাউচথোড় হওয়া অবস্খার ৫ থেকে ৭ দিন আগেই দিতে হয়। ইউরিয়া প্রয়োগের সময় মাটিতে অবশ্যই প্রচুর রস থাকতে হয়। ২ থেকে ৩ সেন্টিমিটার পানি থাকা ভালো। ইউরিয়া প্রয়োগের পরপরই হাত দিয়ে বা উইডার দিয়ে জমির আগাছা পরিষ্কারের ব্যবস্খা নিলে এক দিকে যেমন আগাছা নিড়ানোর কাজ করা হয়, অন্য দিকে তেমনি প্রয়োগকৃত সার মাটিতে মিশে যায়। আগাছা পরিষ্কারের ফলে প্রয়োগকৃত ইউরিয়ার যথাসম্ভব বেশি পরিমাণে গাছ গ্রহণ করতে পারে। তবে মনে রাখতে হয় কোনো অবস্খাতেই ইউরিয়ার অতিরিক্ত ব্যবহার ধানের ফলন বাড়ায় না। এ জন্য এলসিসি ব্যবহার বাড়িয়ে অর্থাৎ ধানগাছের পাতার সাথে রঙ মিলিয়ে সঠিক সময়ে ও সঠিক পরিমাণে ইউরিয়া প্রয়োগ করতে হয়। ইউরিয়ার সাশ্রয় বা ব্যবহারে কার্যকারিতা বাড়াতে গুটি ইউরিয়া বোরোর ক্ষেতে ব্যবহার করা যায়। গুটি ইউরিয়ার সুফল পেতে সারি করে রোপণ করা ক্ষেতের কাদামাটিতে প্রতি ৪টি গোছার মাঝে একটি করে গুটি ইউরিয়া প্রয়োগ করতে হয়।
ইউরিয়ার উপরি প্রয়োগের পরও যদি ধানগাছের নতুন পাতা হলুদাভ হতে থাকে এবং গাছের বাড়-বাড়তি ও কুশি সংখ্যা কমে যায়, তাহলে এটি গìধকের কারণে হয়েছে বলে ধরে নিতে হয় এবং দ্রুত পদক্ষেপ হিসেবে জমির পানি সরিয়ে নিয়ে হেক্টর প্রতি ৬০ কেজি হারে জিপসাম সার উপরি প্রয়োগ করতে হয়। জিপসাম সার উপরি প্রয়োগের সময় শুকনো মাটি বা ছাইয়ের সাথে অথবা ইউরিয়া উপরি প্রয়োগের সময় একসাথে মিশিয়ে প্রয়োগ করা যায়। অবস্খা বুঝে গìধক সার ব্যবহার না করলে ধানের শীষের সংখ্যা কম হয়, শীষে পুষ্ট ধানের সংখ্যা কম হয় এবং চিটার সংখ্যাও বেশি হয়। এতে ফলন মারাত্মকভাবে কমে যায়। গìধকের অভাবে আক্রান্ত ক্ষেতের ধান পাকতে যেমন সময় বেশি লাগে তেমনি একই জমির ধান বিভিন্ন সময়ে পাকতে থাকে। এতে ধান কাটতে খুবই অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়।
অনেক সময় বাড়ন্ত ধান গাছের কচি পাতার গোড়া সাদা হয়ে যায়। পরে অন্যান্য বয়সী পাতা হলুদাভ হয় এবং পাতার আগার দিকে বাদামি দাগ দেখা যায় এবং পরে শুকিয়ে যায়। ধানের কুশির সংখ্যাও কমে যায়। ধান ক্ষেতের কোথাও চারা বড় হয় আবার কোথাও চারা ছোট হয়। পাতার আকারও ছোট হয়। এই লক্ষণ দেখা গেলে ধরে নিতে হয় যে জমিতে দস্তার অভাব দেখা দিয়েছে। সেময়ে জমি থেকে পানি বের করে দিতে হয়। এরপর হেক্টর প্রতি ১০ কেজি হারে দস্তা সার উপরি প্রয়োগ করতে হয়। দস্তা সার অপচয়ের হাত থেকে রক্ষার একটি সহজ উপায় হচ্ছে, দু’বারে যথাক্রমে চারা রোপণের ১০ থেকে ১৫ দিন ও ৩০ থেকে ৩৫ দিন পর প্রতি লিটার পরিষ্কার পানিতে ৪.৫ থেকে ৫ গ্রাম দস্তা সার (জিঙ্ক সালফেট) মিশিয়ে স্প্রে করতে হয়।
বোরো ক্ষেতের অন্যান্য পরিচর্যার মধ্যে অন্যতম হলো পানি সেচ ও নিকাশ ব্যবস্খাপনা। চারা রোপণের পর জমিতে পানি এমনভাবে রাখতে হয় যেন চারা কোনো অবস্খাতেই ডুবে না যায়। আবার বোরো ধানের জমিতে সব সময়ই যে পানি ধরে রাখতে হয় তা কিন্তু নয়। একটি সেচের পর আরেকটি সেচ দেয়ার মধ্যবর্তী সময়ে ক্ষেত যদি ৩ থেকে ৪ দিন শুকনো রাখা যায় তাহলে ধানগাছের বৃদ্ধি কমে না, বরং পানির সাশ্রয় হয় মোট পানি খরচের ২৫ থেকে ৩০ ভাগ। যেসব এলাকায় গভীর নলকূপ দিয়ে সেচ দেয়া হয় সেসব এলাকার জমিতে এভাবে সেচ দিলে বর্তমানে যে পরিমাণ জমিতে পানি সেচ দেয়া যায়, তার চেয়েও প্রায় ৪০ ভাগ বেশি জমিতে সেচ দেয়া সম্ভব হতে পারে। এতে এক দিকে যেমন পানির খরচ কমে, অন্য দিকে তেমনি চাষের এলাকা বৃদ্ধি করাও সম্ভব। আবার বেশি পানি খরচ না করায় পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ারও আশঙ্কা কমে যায়। বোরো ক্ষেতে কাইচথোড় আসা পর্যন্ত এভাবে পানি সেচ দেয়া যায়। তবে কাইচথোড় অবস্খা শুরু হলে জমিতে ৫ থেকে ৭ সেন্টিমিটার গভীরতায় পানি রাখা ভালো।
সার প্রয়োগর আগে জমি থেকে পানি কমিয়ে উপরি প্রয়োগ করতে হয়। এর ২ থেকে ৩ দিন পর পুনরায় জমিতে পরিমিত পানি সেচ দিলে প্রয়োগকৃত সারের কার্যকারিতা বাড়ে। জমিতে পানি ধরে রেখে দানাদার বালাইনাশক ব্যবহার করলে এর কার্যকারিতাও বাড়ে। ধানের দানা গঠন থেকে শুরু করে ধান পাকার আগে দানা শক্ত হওয়ার সময় পর্যন্ত জমিতে পানি ধরে রাখলেই চলে। দানা শক্ত হতে শুরু করলেই জমি থেকে পানি সরিয়ে জমি ভেজা ভেজা অবস্খায় রাখতে হয়।
জমির আইল কেটে সাধারণত সেচ দেয়া হয়। এতে জমির মাটি ও পানির অপসারণ ও অপচয় হয়। এই অবস্খা রোধ করতে প্লাস্টিকের ফিতা বা পিভিসি পাইপ ব্যবহার করলে মাটির অপসারণ ও পানির অপচয় রোধ করার সাথে সাথে সেচের খরচও কমানো যায়। কারণ কাঁচা নালার তুলনায় এই ব্যবস্খায় শতকরা প্রায় ৪২ ভাগ বেশি জমিতে সেচ দেয়া সম্ভব হয়।
লেখক: খোন্দকার মেসবাহুল ইসলাম, কৃষিবিদ
এগ্রোবাংলা
বোরোধানের রোগ নির্ণয়
ধান উৎপাদনে পোকার পাশাপাশি রোগও একটি সমস্যা। চাষি ভাইয়েরা ধানের পোকা নিয়ন্ত্রণে যতটা গুরুত্ব দেন, রোগ নিয়ন্ত্রণে ততটা দেন না। রোগের লক্ষণ শনাক্তকরণে তাদের যথেষ্ট অভিজ্ঞতা না থাকায় তারা মাঠে ধানের রোগ নির্ণয় করতে পারেন না এবং সঠিকভাবে রোগ চিনতে না পারায় সঠিক ব্যবস্খাপনাও গ্রহণ করতে পারেন না। ফলে তাদের অজান্তেই ফলনের ক্ষতি হয় ও আক্রান্ত গাছের মাধ্যমে রোগের জীবাণু বীজেও ছড়িয়ে পড়ে। এসব বীজ রেখে পরের মওসুমে তা দিয়ে ধান চাষ করলে সেসব ধানক্ষেতেও রোগের সংক্রমণ ঘটে। এ অবস্খা থেকে পরিত্রাণ পেতে চাষিরা যাতে সহজে মাঠে ধানের রোগ নির্ণয় করতে পারে সেই কৌশলগুলো জানা দরকার। পাশাপাশি রোগ চেনার পর যদি তা ক্ষেতে দেখা দেয় তাহলে তাদের করণীয় কী তাও জানা দরকার।
ধানের রোগ ধানগাছ বীজ গজানো থেকে শুরু করে পাকা পর্যন্ত নানা রোগে আক্রান্ত হয়। এর মধ্যে টুংরো, পাতাপোড়া, ব্লাস্ট, খোলপোড়া ও বাঁকানি প্রধান রোগ। এসব রোগের বেশির ভাগই বীজবাহিত। কাজেই বীজ সংগ্রহের জন্য নির্বাচিত ক্ষেত বা ফসলের অংশ যাতে এসব রোগে আক্রান্ত না হয় সে দিকে খেয়াল রাখা দরকার।
বাদামি দাগ রোগ নির্ণয় কৌশল : বীজ থেকে খুব বেশি হলুদ রঙের ভ্রূণকাণ্ড এবং ভ্রূণমূলে বাদামি বিবর্ণতা দেখা যায় তাহলে বুঝতে হবে বীজটি এক ধরনের ছত্রাক জীবাণুতে আক্রান্ত। এ রোগে পাতার ওপর প্রথমে বিন্দু বিন্দু গোলাকার ছোট গাঢ় বাদামি বা বেগুনি রঙের দাগ পড়ে। ধীরে ধীরে দাগগুলো বাড়তে থাকে ও ডিম্বাকার বাদামি রঙ ধারণ করে। দাগের কেন্দ্রস্খল থাকে ধূসর বা সাদা। বেশির ভাগ দাগেরই চারপাশে হালকা হলুদ রঙের বলয় থাকে। অনুকূল পরিবেশে ধীরে ধীরে দাগ সমগ্র শীষের দানায় ছড়িয়ে পড়ে এবং দানা চিটা হয়ে যায় ও ফলন কমে যায়।
সমন্বিত ব্যবস্খাপনা - বোনার আগে বীজ বাছাই করে বাদামি দাগযুক্ত রোগা বীজ বাদ দেয়া। সম্ভব হলে বীজ শোধন করা।
- রোগমুক্ত চারা রোপণ করা।
- জমিতে পটাশ, দস্তা ইত্যাদির অভাব থাকলে তা পূরণ করা ও সুষম মাত্রায় সার ব্যবহার করা।
- সুস্খ গাছ থেকে বীজ সংগ্রহ করা।
- বীজতলা বা জমি সব সময় ভেজা বা স্যাঁতসেঁতে বা ভেজা রাখা।
বাঁকানি রোগ নির্ণয় কৌশল চারার পাতায় যদি ধূসর থেকে সাদাটে দাগ দেখা যায় ও চারাকে যদি হলদে-সবুজ মনে হয় এবং অস্বাভাবিক লম্বা হয়ে যায় তাহলে বুঝতে হবে চারা ছত্রাক জীবাণুতে আক্রান্ত হয়েছে, যা বাঁকানি রোগ সৃষ্টি করে। আর যদি দাগের চার পাশে হলুদ বলয় দেখা যায় ও অস্বাভাবিকভাবে গাছ লম্বা হয়ে যায়, সুস্খ গাছের চেয়ে আগে ফুল চলে আসে, নিচের গিঁট থেকে শাখায়িত শিকড় বৃদ্ধি লাভ করে ও শীষের দানা চিটা হয়ে যায় তাহলে বুঝতে হবে গাছটি বাঁকানি রোগে আক্রান্ত হয়েছে।
সমন্বিত ব্যবস্খাপনা - একই জমি বীজতলার জন্য ব্যবহার না করা।
- আক্রান্ত গাছ তুলে পুড়িয়ে ফেলা।
- কিছুটা প্রতিরোধসম্পন্ন ধানের জাত চাষ করা।
- বীজতলা আর্দ্র বা ভিজে রাখা।
- বীজ শোধন করা।
পাতাপোড়া রোগ নির্ণয় কৌশল যদি চারার পাতায় পানিভেজা দাগ দেখা যায়, ভ্রূণকাণ্ড বাদামি হয়ে আসে ও পাতা হলুদ হতে শুরু করে তাহলে বুঝতে হবে চারাগুলো ব্যাকটেরিয়া জীবাণুতে আক্রান্ত হয়েছে যা ধানের পাতাপোড়া রোগ সৃষ্টি করে। দাগগুলো পাতার এক প্রান্ত, উভয় প্রান্ত বা ক্ষত পাতার যেকোনো জায়গা থেকে শুরু হয়ে আস্তে আস্তে পুরো পাতা ঝলসে বা পুড়ে খড়ের মতো হয়ে শুকিয়ে যায়। আক্রমণপ্রবণ জাতের ধানে দাগগুলো পাতার খোলের নিচ পর্যন্ত যেতে পারে। এক সময় সম্পূর্ণ পাতাটি ঝলসে যায় বা পুড়ে খড়ের মতো হয়ে শুকিয়ে যায়।
সমন্বিত ব্যবস্খাপনা - রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন জাতের ধান চাষ করা।
- সুষম মাত্রায় সার প্রয়োগ করা।
- আক্রান্ত গাছ তুলে ফেলে পাশের গাছ থেকে কুশি এনে লাগিয়ে দেয়া।
- আক্রান্ত ক্ষেতের পানি বের করে দিয়ে জমি ভেদে ৭-১০ দিন শুকানো।
- জমি শুকিয়ে নাড়া ক্ষেতে পুড়িয়ে ফেলা।
- আক্রান্ত ক্ষেতে নাইট্রোজেন সার প্রয়োগ না করা।
- আক্রান্ত ক্ষেতে বিঘা প্রতি ৫ কেজি পটাশ সার প্রয়োগ করে মাটিতে ভালোভাবে মিশিয়ে দিলে এ রোগের তীব্রতা কমে।
ব্লাস্ট রোগ নির্ণয় কৌশল যদি পাতায় সাদাটে থেকে ধূসর দাগগুলো ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে ও অনেক পাতায় দেখা যায় এবং অনেক দাগ মিলে অ্যাসিড পোড়ার মতো হয়ে যায় তাহলে বুঝতে হবে গাছটি ছত্রাক জীবাণু বা ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত হয়েছে। এ রোগের ফলে গিঁট ও শীষ ব্লাস্টও সৃষ্টি হতে পারে। সে ক্ষেত্রে গিঁট ও শীষের গোড়ায় কালচে পচন দাগ দেখা যায়।
সমন্বিত ব্যবস্খাপনা - বোনার আগে বীজ বাছাই করে দাগযুক্ত রোগা বীজ বাদ দেয়া।
- রোগমুক্ত জমি থেকে বীজ সংগ্রহ করা।
- সুষম মাত্রায় ইউরিয়া সার প্রয়োগ করা।
- জমিতে সব সময় পানি রাখা।
- ব্লাস্ট রোগ প্রতিরোধক জাতের ধান চাষ করা।
খোলপোড়া রোগ নির্ণয় কৌশল গাছের গোড়ার খোলে যদি গোখরো সাপের চামড়ার মতো পোড়া লক্ষণ দেখা যায় তাহলে বুঝতে হবে গাছটি ছত্রাক জীবাণু বা খোলপোড়া রোগে আক্রান্ত হয়েছে। এ রোগের ফলে নিচের বয়স্ক পাতা এমনকি শীষও একইভাবে আক্রান্ত হয়।
সমন্বিত ব্যবস্খাপনা - পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন চাষ করা।
- লাঙ্গল দিয়ে জমি চাষ করে শুকিয়ে নিয়ে নাড়া জমিতেই পুড়িয়ে ফেলা।
- সুষমভাবে ইউরিয়া, টিএসপি ও পটাশ সার ব্যবহার করা।
- ধানের জাত অনুসারে সঠিক দূরত্বে চারা রোপণ করা।
- রোগ দেখার পর ১৫ দিন অন্তর বিঘাপ্রতি ৫ কেজি এমওপি সার দুই কিস্তিতে দিলে ভালো ফল পাওয়া যায়।
লেখক: মকবুল হোসেন তালুকদার কৃষিবিদ
এগ্রোবাংলা
ধানের রোগ ধানগাছ বীজ গজানো থেকে শুরু করে পাকা পর্যন্ত নানা রোগে আক্রান্ত হয়। এর মধ্যে টুংরো, পাতাপোড়া, ব্লাস্ট, খোলপোড়া ও বাঁকানি প্রধান রোগ। এসব রোগের বেশির ভাগই বীজবাহিত। কাজেই বীজ সংগ্রহের জন্য নির্বাচিত ক্ষেত বা ফসলের অংশ যাতে এসব রোগে আক্রান্ত না হয় সে দিকে খেয়াল রাখা দরকার।
বাদামি দাগ রোগ নির্ণয় কৌশল : বীজ থেকে খুব বেশি হলুদ রঙের ভ্রূণকাণ্ড এবং ভ্রূণমূলে বাদামি বিবর্ণতা দেখা যায় তাহলে বুঝতে হবে বীজটি এক ধরনের ছত্রাক জীবাণুতে আক্রান্ত। এ রোগে পাতার ওপর প্রথমে বিন্দু বিন্দু গোলাকার ছোট গাঢ় বাদামি বা বেগুনি রঙের দাগ পড়ে। ধীরে ধীরে দাগগুলো বাড়তে থাকে ও ডিম্বাকার বাদামি রঙ ধারণ করে। দাগের কেন্দ্রস্খল থাকে ধূসর বা সাদা। বেশির ভাগ দাগেরই চারপাশে হালকা হলুদ রঙের বলয় থাকে। অনুকূল পরিবেশে ধীরে ধীরে দাগ সমগ্র শীষের দানায় ছড়িয়ে পড়ে এবং দানা চিটা হয়ে যায় ও ফলন কমে যায়।
সমন্বিত ব্যবস্খাপনা - বোনার আগে বীজ বাছাই করে বাদামি দাগযুক্ত রোগা বীজ বাদ দেয়া। সম্ভব হলে বীজ শোধন করা।
- রোগমুক্ত চারা রোপণ করা।
- জমিতে পটাশ, দস্তা ইত্যাদির অভাব থাকলে তা পূরণ করা ও সুষম মাত্রায় সার ব্যবহার করা।
- সুস্খ গাছ থেকে বীজ সংগ্রহ করা।
- বীজতলা বা জমি সব সময় ভেজা বা স্যাঁতসেঁতে বা ভেজা রাখা।
বাঁকানি রোগ নির্ণয় কৌশল চারার পাতায় যদি ধূসর থেকে সাদাটে দাগ দেখা যায় ও চারাকে যদি হলদে-সবুজ মনে হয় এবং অস্বাভাবিক লম্বা হয়ে যায় তাহলে বুঝতে হবে চারা ছত্রাক জীবাণুতে আক্রান্ত হয়েছে, যা বাঁকানি রোগ সৃষ্টি করে। আর যদি দাগের চার পাশে হলুদ বলয় দেখা যায় ও অস্বাভাবিকভাবে গাছ লম্বা হয়ে যায়, সুস্খ গাছের চেয়ে আগে ফুল চলে আসে, নিচের গিঁট থেকে শাখায়িত শিকড় বৃদ্ধি লাভ করে ও শীষের দানা চিটা হয়ে যায় তাহলে বুঝতে হবে গাছটি বাঁকানি রোগে আক্রান্ত হয়েছে।
সমন্বিত ব্যবস্খাপনা - একই জমি বীজতলার জন্য ব্যবহার না করা।
- আক্রান্ত গাছ তুলে পুড়িয়ে ফেলা।
- কিছুটা প্রতিরোধসম্পন্ন ধানের জাত চাষ করা।
- বীজতলা আর্দ্র বা ভিজে রাখা।
- বীজ শোধন করা।
পাতাপোড়া রোগ নির্ণয় কৌশল যদি চারার পাতায় পানিভেজা দাগ দেখা যায়, ভ্রূণকাণ্ড বাদামি হয়ে আসে ও পাতা হলুদ হতে শুরু করে তাহলে বুঝতে হবে চারাগুলো ব্যাকটেরিয়া জীবাণুতে আক্রান্ত হয়েছে যা ধানের পাতাপোড়া রোগ সৃষ্টি করে। দাগগুলো পাতার এক প্রান্ত, উভয় প্রান্ত বা ক্ষত পাতার যেকোনো জায়গা থেকে শুরু হয়ে আস্তে আস্তে পুরো পাতা ঝলসে বা পুড়ে খড়ের মতো হয়ে শুকিয়ে যায়। আক্রমণপ্রবণ জাতের ধানে দাগগুলো পাতার খোলের নিচ পর্যন্ত যেতে পারে। এক সময় সম্পূর্ণ পাতাটি ঝলসে যায় বা পুড়ে খড়ের মতো হয়ে শুকিয়ে যায়।
সমন্বিত ব্যবস্খাপনা - রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন জাতের ধান চাষ করা।
- সুষম মাত্রায় সার প্রয়োগ করা।
- আক্রান্ত গাছ তুলে ফেলে পাশের গাছ থেকে কুশি এনে লাগিয়ে দেয়া।
- আক্রান্ত ক্ষেতের পানি বের করে দিয়ে জমি ভেদে ৭-১০ দিন শুকানো।
- জমি শুকিয়ে নাড়া ক্ষেতে পুড়িয়ে ফেলা।
- আক্রান্ত ক্ষেতে নাইট্রোজেন সার প্রয়োগ না করা।
- আক্রান্ত ক্ষেতে বিঘা প্রতি ৫ কেজি পটাশ সার প্রয়োগ করে মাটিতে ভালোভাবে মিশিয়ে দিলে এ রোগের তীব্রতা কমে।
ব্লাস্ট রোগ নির্ণয় কৌশল যদি পাতায় সাদাটে থেকে ধূসর দাগগুলো ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে ও অনেক পাতায় দেখা যায় এবং অনেক দাগ মিলে অ্যাসিড পোড়ার মতো হয়ে যায় তাহলে বুঝতে হবে গাছটি ছত্রাক জীবাণু বা ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত হয়েছে। এ রোগের ফলে গিঁট ও শীষ ব্লাস্টও সৃষ্টি হতে পারে। সে ক্ষেত্রে গিঁট ও শীষের গোড়ায় কালচে পচন দাগ দেখা যায়।
সমন্বিত ব্যবস্খাপনা - বোনার আগে বীজ বাছাই করে দাগযুক্ত রোগা বীজ বাদ দেয়া।
- রোগমুক্ত জমি থেকে বীজ সংগ্রহ করা।
- সুষম মাত্রায় ইউরিয়া সার প্রয়োগ করা।
- জমিতে সব সময় পানি রাখা।
- ব্লাস্ট রোগ প্রতিরোধক জাতের ধান চাষ করা।
খোলপোড়া রোগ নির্ণয় কৌশল গাছের গোড়ার খোলে যদি গোখরো সাপের চামড়ার মতো পোড়া লক্ষণ দেখা যায় তাহলে বুঝতে হবে গাছটি ছত্রাক জীবাণু বা খোলপোড়া রোগে আক্রান্ত হয়েছে। এ রোগের ফলে নিচের বয়স্ক পাতা এমনকি শীষও একইভাবে আক্রান্ত হয়।
সমন্বিত ব্যবস্খাপনা - পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন চাষ করা।
- লাঙ্গল দিয়ে জমি চাষ করে শুকিয়ে নিয়ে নাড়া জমিতেই পুড়িয়ে ফেলা।
- সুষমভাবে ইউরিয়া, টিএসপি ও পটাশ সার ব্যবহার করা।
- ধানের জাত অনুসারে সঠিক দূরত্বে চারা রোপণ করা।
- রোগ দেখার পর ১৫ দিন অন্তর বিঘাপ্রতি ৫ কেজি এমওপি সার দুই কিস্তিতে দিলে ভালো ফল পাওয়া যায়।
লেখক: মকবুল হোসেন তালুকদার কৃষিবিদ
এগ্রোবাংলা
বোরো ধানের ফলন বাড়ানোর উপায়
বোরো ধানের ফল বৃদ্ধির কিছু কৌশল এখানে উল্লেখ করা হলো।
এক. উচ্চ ফলনশীল জাতের ধান চাষ করা।যেমন: বিআর১, বিআর৩, বিআর৬, বিআর৭, বিআর৮, বিআর৯, বিআর১১, বিআর১২, বিআর১৪, বিআর১৫, বিআর১৬, বিআর১৭, বিআর১৮, বিআর১৯, ব্রিধান২৮, ব্রিধান২৯, ব্রিধান৩৫, ব্রিধান৩৬, ব্রিহাইব্রিড ধান-১, ব্রিহাইব্রিড ধান-২, বিনাধান-৫, বিনাধান-৬, ইরাটম-২৪ ইত্যাদি।
দুই. সুষম মাত্রায় সঠিক সময়ে সার দেয়া। শেষ চাষের সাথে প্রতি বিঘায় টিএসপি ১৩ কেজি, এমওপি ১২ কেজি, জিপসাম ৮ কেজি, গìধক ৬ কেজি ও দস্তা এক কেজি মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে। চারা রোপণের ১০-১৫ দিন পর ০.৯ গ্রাম আকারের তিনটি বা ২.৭-৩.০ গ্রাম আকারের একটি গুটি ইউরিয়া চারগুছির মাঝখানে ৪-৫ সেমি গভীরে প্রয়োগ করতে হয়। এতে প্রতি বিঘায় ২১-২২ কেজি গুটি ইউরিয়া লাগে। ধান কাটা পর্যন্ত একবার প্রয়োগ করলেই হয়। ২০-২৫ শতাংশ ফলন বেশি হয়। এতে প্রতি বিঘায় চার-পাঁচ মণ ধান বেশি হয়। ৩৫-৪০ শতাংশ ইউরিয়া কম লাগে।
তিন. পৌষ-মাঘ মাসের মধ্যে বোরো ধান রোপণ করলে ফলন বেশি হয়।সারি থেকে সারির দূরত্ব ২০-২৫ সেমি এবং গুছি থেকে গুছির দূরত্ব ১৫-২০ সেমি। চারার বয়স ৪০-৫০ দিন। চারা একটু গভীরে রোপণ করলে বেশি পুষ্টি গ্রহণ করতে পারে। জমি সমতল করতে হবে। চারা সুস্খ, সবল, সবুজ ও সতেজ হতে হবে। প্রতি গোছায় এক-দু’টি চারা রোপণ করতে হবে। চারা মরে গেলে পুনরায় নতুন চারা রোপণ করতে হবে। চারা বিলম্বে রোপণ করলে পরাগায়ণ হয় না, ফলে ধান চিটা হয়।
চার. সার দেয়ার আগে আগাছা পরিষ্কার করতে হবে। গবেষণায় দেখা গেছে, আগাছা ২০-২৫ শতাংশ ফলন কমিয়ে দেয়। কারণ আগাছা পুষ্টি শোষণ করে। সঠিক সময়ে আগাছা দমন করলে ২০-২৫ শতাংশ ফলন বাড়ে।
পাঁচ. সঠিক সময়ে সেচ দিলে ১৫-২৫ ভাগ ফলন বাড়ে। চারা রোপণের পর থেকে কুশি গজানো পর্যন্ত ছিপছিপে পানি রাখলেই হবে। কাইচ থোড় আসার আগেই পানির পরিমাণ দ্বিগুণ করতে হবে। সার প্রয়োগের দুই-তিন দিন পর সেচ দিলে সারের কার্যকারিতা বাড়ে। কুশিস্তরে জমিতে পানি না রাখলে কুশি বাড়ে। ধান পাকার সময় ধান শক্ত হলেই জমি থেকে পানি সরিয়ে দিতে হবে।
ছয়. সঠিক সময়ে রোগ ও পোকামাকড় দমন করলে ১৫ থেকে ২০ শতাংশ ফলন বেশি হয়। দেশে ধানের ৩১টি রোগ এবং ১৭৫ প্রজাতির পোকা আক্রমণ করে। এর মধ্যে ১০টি রোগ এবং ২০ থেকে ৩০টি পোকার মারাত্মক ক্ষতি করে। মারাত্মক ক্ষতিকর পোকা হচ্ছে হলুদ মাজরা পোকা, পামরিপোকা, চুঙ্গিপোকা, ঘাসফড়িং, পাতার লেদাপোকা, সবুজ পাতাফড়িং, বাদামিগাছ ফড়িং ইত্যাদি। এসব পোকা হাতজাল, আলোর ফাঁদ, ক্ষেতে ডাল পুঁতা, জমির পানি বের করা, সেক্স ফেরোমেন ফাঁদ ও কীটনাশক দিয়ে দমন করা যায়। মারাত্মক রোগের মধ্যেন্ধ টুংরো, পাতাপোড়া, ব্লাস্ট, খোলপড়া, খোলপচা ইত্যাদি। এসব রোগ প্রতিরোধের জন্য রোগমুক্ত বীজ, বালাই সহনশীল জাতের চাষ, সুষম সার প্রয়োগ, সঠিক দূরত্বে চারা রোপণ, সমকালীন চাষাবাদ ইত্যাদি পদ্ধতি অবলম্বন করা যেতে পারে। এ ছাড়াও জৈবিক দমন পদ্ধতিতে রোগ ও পোকা দমন করা যায়।
সাত. ধানের চিটার জন্য ফলন কম হয়। ধানে চিটা প্রতিরোধ করে ফলন বাড়ানো যায়। ধানগাছের জন্য অসহনীয় ঠাণ্ডা বা গরম, খরা, ঝড়, তুফান ইত্যাদির জন্য চিটা হয়। এ ছাড়া সেচের অভাব, সুষম সারের অভাব, পরাগায়ণে বিঘí, পরিচর্যার অভাব ইত্যাদির জন্য চিটা হয়। চিটা প্রতিরোধের জন্য ৪০-৫০ দিন বয়সের চারা পৌষ ও মাঘ মাসের মধ্যে রোপণ করা। কাইচথোড়, শীষ বের হওয়া ও ফুল ফোটার সময় সেচ দিতে হবে। জিঙ্ক ও বোরনের সর্বশেষ প্রযুক্তি চিলেটেড জিঙ্ক ও দ্রবণীয় বোরন প্রয়োগ করলে ধানে চিটা হয় না। ধানের চারা রোপণের ২০-২২ দিন পর প্রথমবার এবং ৪০-৪৫ দিন পর দ্বিতীয়বার এক লিটার পানিতে এক গ্রাম লিবরেল জিঙ্ক ও দুই গ্রাম লিবরেল বোরন একসাথে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।
লেখক: ফরহাদ আহাম্মেদ, কৃষিবিদ
এক. উচ্চ ফলনশীল জাতের ধান চাষ করা।যেমন: বিআর১, বিআর৩, বিআর৬, বিআর৭, বিআর৮, বিআর৯, বিআর১১, বিআর১২, বিআর১৪, বিআর১৫, বিআর১৬, বিআর১৭, বিআর১৮, বিআর১৯, ব্রিধান২৮, ব্রিধান২৯, ব্রিধান৩৫, ব্রিধান৩৬, ব্রিহাইব্রিড ধান-১, ব্রিহাইব্রিড ধান-২, বিনাধান-৫, বিনাধান-৬, ইরাটম-২৪ ইত্যাদি।
দুই. সুষম মাত্রায় সঠিক সময়ে সার দেয়া। শেষ চাষের সাথে প্রতি বিঘায় টিএসপি ১৩ কেজি, এমওপি ১২ কেজি, জিপসাম ৮ কেজি, গìধক ৬ কেজি ও দস্তা এক কেজি মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে। চারা রোপণের ১০-১৫ দিন পর ০.৯ গ্রাম আকারের তিনটি বা ২.৭-৩.০ গ্রাম আকারের একটি গুটি ইউরিয়া চারগুছির মাঝখানে ৪-৫ সেমি গভীরে প্রয়োগ করতে হয়। এতে প্রতি বিঘায় ২১-২২ কেজি গুটি ইউরিয়া লাগে। ধান কাটা পর্যন্ত একবার প্রয়োগ করলেই হয়। ২০-২৫ শতাংশ ফলন বেশি হয়। এতে প্রতি বিঘায় চার-পাঁচ মণ ধান বেশি হয়। ৩৫-৪০ শতাংশ ইউরিয়া কম লাগে।
তিন. পৌষ-মাঘ মাসের মধ্যে বোরো ধান রোপণ করলে ফলন বেশি হয়।সারি থেকে সারির দূরত্ব ২০-২৫ সেমি এবং গুছি থেকে গুছির দূরত্ব ১৫-২০ সেমি। চারার বয়স ৪০-৫০ দিন। চারা একটু গভীরে রোপণ করলে বেশি পুষ্টি গ্রহণ করতে পারে। জমি সমতল করতে হবে। চারা সুস্খ, সবল, সবুজ ও সতেজ হতে হবে। প্রতি গোছায় এক-দু’টি চারা রোপণ করতে হবে। চারা মরে গেলে পুনরায় নতুন চারা রোপণ করতে হবে। চারা বিলম্বে রোপণ করলে পরাগায়ণ হয় না, ফলে ধান চিটা হয়।
চার. সার দেয়ার আগে আগাছা পরিষ্কার করতে হবে। গবেষণায় দেখা গেছে, আগাছা ২০-২৫ শতাংশ ফলন কমিয়ে দেয়। কারণ আগাছা পুষ্টি শোষণ করে। সঠিক সময়ে আগাছা দমন করলে ২০-২৫ শতাংশ ফলন বাড়ে।
পাঁচ. সঠিক সময়ে সেচ দিলে ১৫-২৫ ভাগ ফলন বাড়ে। চারা রোপণের পর থেকে কুশি গজানো পর্যন্ত ছিপছিপে পানি রাখলেই হবে। কাইচ থোড় আসার আগেই পানির পরিমাণ দ্বিগুণ করতে হবে। সার প্রয়োগের দুই-তিন দিন পর সেচ দিলে সারের কার্যকারিতা বাড়ে। কুশিস্তরে জমিতে পানি না রাখলে কুশি বাড়ে। ধান পাকার সময় ধান শক্ত হলেই জমি থেকে পানি সরিয়ে দিতে হবে।
ছয়. সঠিক সময়ে রোগ ও পোকামাকড় দমন করলে ১৫ থেকে ২০ শতাংশ ফলন বেশি হয়। দেশে ধানের ৩১টি রোগ এবং ১৭৫ প্রজাতির পোকা আক্রমণ করে। এর মধ্যে ১০টি রোগ এবং ২০ থেকে ৩০টি পোকার মারাত্মক ক্ষতি করে। মারাত্মক ক্ষতিকর পোকা হচ্ছে হলুদ মাজরা পোকা, পামরিপোকা, চুঙ্গিপোকা, ঘাসফড়িং, পাতার লেদাপোকা, সবুজ পাতাফড়িং, বাদামিগাছ ফড়িং ইত্যাদি। এসব পোকা হাতজাল, আলোর ফাঁদ, ক্ষেতে ডাল পুঁতা, জমির পানি বের করা, সেক্স ফেরোমেন ফাঁদ ও কীটনাশক দিয়ে দমন করা যায়। মারাত্মক রোগের মধ্যেন্ধ টুংরো, পাতাপোড়া, ব্লাস্ট, খোলপড়া, খোলপচা ইত্যাদি। এসব রোগ প্রতিরোধের জন্য রোগমুক্ত বীজ, বালাই সহনশীল জাতের চাষ, সুষম সার প্রয়োগ, সঠিক দূরত্বে চারা রোপণ, সমকালীন চাষাবাদ ইত্যাদি পদ্ধতি অবলম্বন করা যেতে পারে। এ ছাড়াও জৈবিক দমন পদ্ধতিতে রোগ ও পোকা দমন করা যায়।
সাত. ধানের চিটার জন্য ফলন কম হয়। ধানে চিটা প্রতিরোধ করে ফলন বাড়ানো যায়। ধানগাছের জন্য অসহনীয় ঠাণ্ডা বা গরম, খরা, ঝড়, তুফান ইত্যাদির জন্য চিটা হয়। এ ছাড়া সেচের অভাব, সুষম সারের অভাব, পরাগায়ণে বিঘí, পরিচর্যার অভাব ইত্যাদির জন্য চিটা হয়। চিটা প্রতিরোধের জন্য ৪০-৫০ দিন বয়সের চারা পৌষ ও মাঘ মাসের মধ্যে রোপণ করা। কাইচথোড়, শীষ বের হওয়া ও ফুল ফোটার সময় সেচ দিতে হবে। জিঙ্ক ও বোরনের সর্বশেষ প্রযুক্তি চিলেটেড জিঙ্ক ও দ্রবণীয় বোরন প্রয়োগ করলে ধানে চিটা হয় না। ধানের চারা রোপণের ২০-২২ দিন পর প্রথমবার এবং ৪০-৪৫ দিন পর দ্বিতীয়বার এক লিটার পানিতে এক গ্রাম লিবরেল জিঙ্ক ও দুই গ্রাম লিবরেল বোরন একসাথে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।
লেখক: ফরহাদ আহাম্মেদ, কৃষিবিদ
সূত্রঃ এগ্রোবাংলা