পরিচিতিঃ মাঝারী জাতীয় মৌসুমী গাছ, একবার ফুল ও ফল হয়ে মরে যায়।
বৈশিষ্ট্যঃ উচ্চতায় ৩০-৬০ সেমি (১২-২৪ ইঞ্চি), পাতা হালকা সবুজ। কিছুটা মোটা ধরণের পাতা সোজা হয়ে ৩ টি একসাথে জন্মায়। শাক হিসাবে খাওয়া যায়।
ফুলঃ স্ত্রী, পুরুষ দুই ধরণের ফুলই হয়, সাদা-হলুদ রং। ৩ টি পাঁপড়ি।
ফলঃ শুঁটি জাতীয় ফল, প্রায় ২০-৩০ মি. মি. লম্বা ।
বীজঃ বাদামি-হলুদ রং এর চৌ-কোনা বীজ, প্রায় ৩ মিমি লম্বা । প্রতিটি ফলে ১০-২০ টি বীজ থাকতে পারে।
ব্যবহারঃ মশলা হিসাবে ব্যাপক ব্যবহার। পাঁচ ফোড়নের একটি উপাদান। ইউনানী, কবিরাজী ও লোকজ চিকিৎসায় বহু রকমের ব্যবহার আছে। প্রসাধনীতেও ব্যবহার হয়। মেথি থেকে ষ্টেরয়েডের উপাদান তৈরী হয়।
যে অংশটি ব্যবহার হয়ঃ শুকনো বীজ।
পরিবেশঃ প্রচুর রোদ লাগে এমন যে কোন সমতল জমি।
মাটিঃ যে কোন মাটিতেই জন্মায়।
বপন সময়ঃ কার্তিকের শেষ থেকেই লাগানো ভাল।
জমি তৈরীঃ কার্তিকের মাঝামাঝি সময়ে মাটিতে ‘জো’ আসলে জমি তৈরী আরম্ভ করা যেতে পারে। ভাল করে কুপিয়ে বা লাঙ্গল দিয়ে মাটি মিহি করতে হবে। নিড়ানি দিয়ে ঘাস ও আগাছা পরিষ্কার করতে হবে। ১০ শতাংশ জমিতে ১০ কেজি পচা গোবর ও ২ কেজি পচা খৈল, অথবা ১০ কেজি পরিমাণ যে কোন কম্পোস্ট মাটির সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে বেড তৈরী করা যেতে পারে। সার মেশানোর ১ সপ্তাহ পরে প্রয়োজন হলে একবার নিড়ানি দিয়ে বেড তৈরী শেষ করতে হবে।
বপনঃ ১ ফুট বা ৩০ সেমি, দূরে দূরে ১-৪ ইঞ্চি গর্ত করে প্রতি গর্তে ২-৩টি করে বীজ পুঁততে হবে, খেয়াল রাখতে হবে বীজ বেশী গভীরে যেন না যায়।
বীজের পরিমাণঃ ১০ শতাংশ জমিতে ৪৫০-৫০০ গ্রাম বীজ।
বীজ শোধনঃ বোনার আগে ভাল করে ধুলাবালি ও চিটা বীজ সরিয়ে নিয়ে হালকা গরম পানিতে ১০-১২ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখতে হবে। বীজ ছায়ায় রেখে শুকিয়ে বপন করা উচিৎ।
পরিচর্যাঃ বীজ লাগানোর পরই হালকা করে মাটি দিয়ে গর্ত ঢেকে দিতে হবে। পাখিতে বীজ খেতে না পারে, সতর্ক থাকতে হবে। প্রয়োজন হলে আগাছা পরিস্কার করতে হবে।
সেচঃ সেচের প্রয়োজন নেই। তবে নতুন চারা লাগানোর পর রোদ বেশি হলে ছিটিয়ে পানি দেওয়া যেতে পারে; সন্ধ্যায় পানি ছিটিয়ে দেওয়া ভাল।
সার প্রয়োগঃ জমি তৈরীর সময় ছাড়া পরে সার দেওয়া প্রয়োজন নেই।
পোকা মাকড় ও রোগবালাইঃ চারা অবস্থায় এ্যাফিড জাতীয় পোকার জন্য ০.০৩% ডাইমিথোয়েট অথবা ০.০২৫% মিথাইল-ডেমিটোন মিশ্রণ ব্যবহার করা যেতে পারে। পরিণত অবস্থায় ছত্রাক সমস্যা হলে ২৫ গ্রাম ছত্রাকবিনাশী যেকোন ওষুধ (ডিনোক্যাপ বা ডাইফলটান ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে।
সময় কালঃ
অংকুরোদগম/ চারা গজানোঃ ৬-৮ দিন/ ০-১ সপ্তাহের মধ্যে
ফুল আসবেঃ ৪০-৫৫ দিন/৬-৮ সপ্তাহের মধ্যে
ফল আসবেঃ ৫৫- ৭০ দিন/৮-১০ সপ্তাহের মধ্যে
ফল পাকবেঃ ৭৫-১১০ দিন/ ১১-১৬ সপ্তাহের মধ্যে
বীজ বপনের পর সর্বমোট ১৬ সপ্তাহের মধ্যে ফসল পাকবে ও তোলার সময় হবে অর্থাৎ কার্তিকের শেষে চাষ করলে ফাল্গ্হনে ফসল তোলা যাবে।
ফলনঃ ১০ শতাংশ জমিতে উপরোক্ত বর্ণনা অনুযায়ী চাষ করলে গড়ে ৭০-৮০ কেজি মেথি পাওয়া যাবে।
ফসল সংগ্রহঃ ফাল্গ্হনে গাছ শুকিয়ে আসলে জমি থেকে তুলে বাতাসে ঝুলিয়ে রেখে ২/৩ দিন রোদে শুকিয়ে নিয়ে হাতে মাড়াই করে বীজ সংগ্রহ করা যায়। গাছে সামান্য রস থাকতেই ফল সংগ্রহ করা উচিত, নয়ত বীজ জমিতে ঝরে পড়তে পারে। অনেক দিন ধরে ফল পাকে বলে একবারে ফসল তোলা যায়না।
সংরক্ষণঃ চটের বস্তায় বা মাটির পাত্রে বীজ সংরক্ষণ করা যেতে পারে। অন্তত: ৬ মাস পর্যন্ত বীজ সংরক্ষণ করা যায়। শুকনো, অন্ধকার জায়গায় রাখতে হবে।
আয়-ব্যয় হিসাবঃ
বীজের খুচরা মূল্যঃ ১০০ টাকা কেজি
পাইকারী মূল্যঃ ৮০ টাকা কেজি
বীজের আড়ত মূল্যঃ ৬০ টাকা কেজি
১০ শতাংশ জমিতে চাষের খরচঃ
বীজ ৫০০ গ্রাম = ৫০ টাকা
গোবর ২০ কেজি = ৮০ টাকা
খল ২ কেজি = ১৬ টাকা
মজুরী যদি প্রয়োজন হয় = ৩০০ টাকা (আনুমানিক)
সর্ব মোট খরচ = ৪৪৬ টাকা
৮০ কেজি মেথির বিক্রয় মূল্য = (৮০ x ৬০) = ৪,৮০০/= টাকা
অর্থাৎ ১০ শতাংশ জমি থেকে ১৬ সপ্তাহে রোজগার = প্রায় ৪.৩০০/= টাকা
সূত্রঃ চলতি বাজারদর, সেপ্টেম্বর ২০০৭