নাটোরে লক্ষ্যমাত্রার তিনগুণ পাট চাষ হলেও পানির অভাবে জাগ দিতে না পারায় চাষীরা বিপাকে

Sunday, August 15, 2010


নাটোরে এবারে লক্ষ্যমাত্রার তিনগুণ পাট চাষ হলেও পানির অভাবে চাষীরা জাগ দিতে না পেরে বিপাকে পরেছেন। বেশী পাট চাষ করায় তারা রিবন রেটিং পদ্ধতিতেও তেমন সুবিধা করতে পারছেন না। জেলায় এবার ছয় হাজার নয়শ’ হেক্টর জমি পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হলেও চাষ হয়েছে লক্ষ্যমাত্রার প্রায় তিনগুণ ১৮ হাজার পাঁচশ’ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে তোষা পাট চাষ হয়েছে ১৪ হাজার আটশ’ হেক্টর এবং দেশী জাতের পাট তিন হাজার সাতশ’ হেক্টর জমিতে। জেলার মধ্যে এবারে সব চেয়ে বেশী বড়াইগ্রাম উপজেলায় লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে পাঁচ হাজার চারশ’ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছে যা এই জেলার মোট পাট চাষের প্রায় এক তৃতীয়াংশেরও বেশী। বাগাতিপাড়া উপজেলায় সবচেয়ে কম একশ’ পাঁচ হেক্টর জমিতে পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হলে সেখানেও চাষ হয়েছে মোট এক হাজার পাঁচ হেক্টর জমিতে যা নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার প্রায় দশগুণ বেশী। গত বছর নাটোর জেলায় পাট চাষ হয়েছিল চার হাজার আটশ’ হেক্টর জমিতে যা ছিল লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও অনেক কম। নাটোর কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক মোঃ দেলোয়ার হোসেন জানান, গত মৌসুমে উৎপাদিত পাটের দাম বেশী হওয়ায় এবং সরকার পাট চাষীদের উৎসাহিত করায় এবারে চাষীরা বেশী জমিতে পাট চাষ করেছেন। জেলায় অনেক চাষী আছেন যারা এবার তাদের সব জমিতেই পাট চাষ করেছেন। উৎপাদিত এসব পাট জাগ দেয়ার জন্য প্রয়োজনীয় পানি না থাকায় সরকারের পক্ষ থেকে বিনামূল্যে নাটোর জেলায় মোট চারশ’ ৪৫ জন কৃষককে রিবন রেটিং মেশিন দেয়া হয়েছে। এই সব মেশিন দিয়ে চাষীরা জাগ দেয়ার আগেই সবুজ পাট গাছ থেকে আঁশ ছাড়িয়ে অল্প পানিতেই পাট জাগ দিতে পারছেন। দুই ফুট গভীর, দশ ফুট দৈর্ঘ্য এবং ছয় ফুট চওড়া ছোট ছোট পুকুর কেটে পলিথিন ব্যবহার করে পানি আটকে রেখে পাট জাগ দেওয়ার জন্য জেলার ৪৫ হাজার পাট চাষীর প্রত্যেককে দুইশ’ টাকা হিসেবে মোট ৯০ লাখ টাকা আর্থিক সহায়তা দেয়া হচ্ছে। কৃষকরা ব্যাংকে তাদের নিজস্ব হিসাবে এই টাকা পেয়ে যাবেন। জেলার বাগাতিপাড়া, বড়াইগ্রাম এবং সদর উপজেলায় সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা গেছে চাষীরা পাট কেটে পানির অভাবে জাগ দিতে পারছেন না। কাটা পাট জাগ দেয়ার জন্য কৃষকরা গরু মহিষের গাড়ী ছাড়াও বিভিন্ন পরিবহনে করে পানির জন্য দূর-দূরান্তে নিয়ে যাচ্ছেন। বড়াইগ্রাম উপজেলার রয়না গ্রামের চাষী আবু বক্কর এবং কুজাইল গ্রামের কৃষাণী তসলিমা খন্দকার স্বপ্না জানান, এবার তারা তাদের প্রায় সব জমিতেই পাট চাষ করেছেন। পানির অভাবে পাট জাগ দিতে না পেরে এখন তারা হতাশ হয়ে পরেছেন। নাটোর সদরের নলডাঙ্গা থানার পীরগাছা, কাশিয়াবাড়ি, ইয়ারপুর, আব্দালপুর, সরকুতিয়া, চকসরকুতিয়া, বাড়িয়াহাটি, চেউখালি ও কোমরপুর গ্রামের কৃষকরাও পানির অভাবে পাট জাগ দিতে পারছেন না। এই এলাকার চাষী জসিম. রহিদুল ও স্বপন জানান, তাদের জমিতে পাট আছে, আবাদও খুব ভাল হয়েছে, পাট কাটার সময় চলে যাচ্ছে কিন্তু পানির অভাবে তারা পাট কেটে জাগ দিতে পারছেন না। পাট নেওয়ার পর জমিতে ধান লাগানোর জন্য তারা আমনের চারাও দিয়েছেন। বীজতলায় চারার বয়স হয়ে যাচ্ছে অথচ লাগানো সম্ভব হচ্ছেনা। তারা সমস্যা হিসেবে বলেছেন, পাট জাগ দেওয়া সহ সেচ সুবিধার জন্য ১৯৭৯-৮০ সালে পানি উন্নয়ন বোর্ড নলডাঙ্গা থেকে কোমরপুর পর্যন্ত বারনই নদীর উত্তর পাড়ে একটি বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধ নির্মান করে এবং ২০০৪ সালে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর সেই বাঁধটি পাকা করে। এসময় সংশিষ্ট ঠিকাদার তার কাজের সুবিধার জন্য ইয়ারপুর ও পীরগাছায় বারনই নদীর পানি বিলের প্রবেশ মুখে নির্মিত কালভার্ট দু’টির মুখ কাজ শেষে আবার চালু করার কথা বলে সাময়িক ভাবে বন্ধ করে দেয়। পরে তা চালু না করায় বর্ষা মৌসুমেও নদীর পানি বিলে আসছেনা। তারা রিবন রেটিং মেশিন পাওয়ার পরেও সময় মত পাট জাগ দিতে পারছেন না। ভুক্তভোগী এসব কৃষক বলেছেন, যারা অল্প জমিতে পাট চাষ করেছেন তাদের জন্য রিবন রেটিং পদ্ধতি সুবিধা জনক হলেও যারা বেশী জমিতে পাট চাষ করেছেন তাদের এই পদ্ধতিতে দ্রুত পাটের আঁশ ছাড়ানো সম্ভব হচ্ছেনা। তবে নাটোর কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক মোঃ দেলোয়ার হোসেন বলেছেন, এই পদ্ধতিতে ছাড়ানো আঁশ এবং পাটখড়ি অনেক ভালো থাকায় দুটোর দামই ভালো পাওয়া যাবে। বাগাতিপাড়ার পাট চাষী বাদশা জানান, তিনি এবার তিন বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছেন কিন্তু জাগ দেওয়ার পানির অভাবে জমি থেকে পাট না কাটায় পাট গাছে ডালপালা গজাচ্ছে। কোন কোন ক্ষেত্রে পাট গাছ শুকিয়ে মরেও যাচ্ছে। একই এলাকার চাষী সেলিম জানান, গত বছর পাটের আবাদ করিনি কিন্তু এবার সবটুকু জমিতেই পাট চাষ করেছি। নদীতে পাট জাগ ভাল হয়না জেনেও পানির অভাবে এবার বড়াল নদীতেই জাগ দিতে হচ্ছে। তিনি জানান এতে আঁশের ফলন ভাল হবে না। ভরা বর্ষায়ও এবার খাল-বিল, পুকুর পানিশূন্য থাকায় পাটগাছ ভাল হলেও আঁশের ফলন বিপর্যয়ের আশংকা করেছেন পাট চাষীরা। এদিকে পানির অভাবে সময় মতো পাট না কাটায় ঐ জমিতে আমন ধান রোপনেও বিলম্বিত হচ্ছে। নাটোর কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সূত্রে আরো জানা গেছে, পানির প্রচন্ড অভাবসহ নানা প্রতিকূলতা সত্বেও ইতোমধ্যেই জেলার ছয়টি উপজেলায় মোট ছয় হাজার একশ’ হেক্টর জমির পাট কাটা হয়ে গেছে। এবারে উন্নতমানের বীজ, সময় মত সার ও কীট নাশক পাওয়ায় এবং সর্বোপরি আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় হেক্টর প্রতি গড়ে ৬০ মণ করে পাট উৎপাদিত হয়েছে। গত বছর এসময়ে মণপ্রতি পাটের দাম ছিল আটশ’ থেকে এক হাজার টাকা করে আর চলতি বছর এখনই পাটের মণপ্রতি দাম এক হাজার দুইশ’ টাকা থেকে এক হাজারশ’ টাকা করে।

তথ্যসূত্র : ইউকে সংবাদ


মনের উঠোনে

সাম্প্রতিক সংযোজন

মোবাইল থেকে দেখুন

আমাদের দেশ এখন আপনার মুঠোফোনে, মোবাইল থেকে লগইন করুন আমাদের দেশ

দ র্শ না র্থী

দ র্শ না র্থী

free counters

কে কে অনলাইনে আছেন