লাউ সাধারণত শীতকালে বসত বাড়ির আশে-পাশে চাষ হয়। বাংলাদেশে বর্তমানে প্রায় সারে ৮ হাজার হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হয় এবং প্রায় ৬৮ হাজার টন লাউ উৎপাদিত হয়। লাউয়ের পাতা ও ডগা শাক হিসেবে ফল তরকারি ও ভাজি হিসেবে খাওয়া যায়।
লাউয়ের জাত
বারি লাউ-১
‘বারি লাউ-১’ জাতটি বাচাইয়ের মাধ্যমে উদ্ভাবন করে ১৯৯৬ সালে সর্বত্র চাষাবাদেন জন্য অনুমোদন করা হয়। পাতা সবুজ ও নরম। পুরুষ ও স্ত্রী ফুল যথাক্রমে চারা রোপণের ৪০-৪৫ দিন এবং ৬০-৬৫ দিনের মধ্যে ফুটে।
ফল হালকা সবুজ। লম্বা ৪০-৫০ সেমি. বেড় ৩০-৩৫ সেমি। প্রতি ফলের ওজন ১.৫-২.০ কেজি। প্রতি গাছে ১০-১২ টি ফল ধরে। চারা রোপণের ৬০-৭০ দিনের মধ্যে প্রথম ফল তোলা যায়। লাউ ২-৩ দিন পর সংগ্রহ করতে হয়।
মাটি
লাউ প্রায় সব ধরনের মাটিতে জন্মে। তবে প্রধানত দোআঁশ থেকে এটেঁল দোআঁশ মাটি লাউ চাষের জন্য উত্তম।
জলবায়ু
লাউ সাধারণত দিবস নিরপেৰ লতানো উদ্ভিদ, ফলে বছরের অধিকাংশ সময় চারা লাগিয়ে ফসল উৎপাদন করা যায়।
বীজ বপন ও চারা উৎপাদন
লাউ চায়ের জন্য পলিথিন ব্যাগে চারা তৈরী করাই উত্তম। এতে বীজের খরচ কম পড়ে। পলিথিন ব্যাগে চারা উৎপাদন করে রোপণ করলে হেক্টরপ্রতি ৮০০-১০০০ গ্রাম বীজের প্রয়োজন হয়।
বীজ বপনের সময়
শীতকালীন চাষের জন্য মধ্য-ভাদ্র থেকে মধ্য-কার্তিক (সেপ্টেম্বর-অক্টোবর) মাসে বীজ বপন করা যেতে পারে। তবে আগাম শীতকালীন ফসলের জন্য ভাদ্রের ১ম সপ্তাহে বীজ বুনতে হবে।
আমাদের দেশে প্রধানত বসতবাড়ির আশে পাশে যেমন-গোয়াল ঘরের কিনারায় বা পুকুর পাড়ে ২-৩টি লাউ গাছ লাগানো হয়ে থাকে। বেশী পরিমাণ জমিতে লাউয়ের চাষ করতে হলে প্রথমে জমি ভালোভাবে চাষ ও মই দিয়ে প্রস্তুত করতে হবে।
চারা রোপণ
লাউ চাষের জন্য ২x২ মি. দূরত্বে প্রতি মাদায় ৪-৫টি বীজ বোনা উচিত। রবি মৌসুমে লাউ মাচা বিহনী অবস্থায় ও চাষ করা যায়। তবে মাচায় ফলন বেশী হয়। এছাড়া পানিতে ভাসমান কচুরীপানার স্থুপে মাটি দিয়ে বীজ বুনেও সেখানে লাউ জন্মানো যেতে পারে।
অন্তর্বর্তীকালীন পরিচর্যা
নিয়মিত গাছের গোড়ায় পানি সেচ দেওয়া, মাটির চটা ভাঙ্গা, বাউনী দেওয়া ও অন্যান্য পরিচর্চা করা বাঞ্চনীয়। মাচা শক্ত করে বাধঁতে হবে।
অন্যান্য পরিচর্যাঃ
মাছি পোকা দমনের বিষটোপ
করলা,শসা, মিষ্টি কুমড়া, চাল কুমড়া, লাউ, ঝিঙ্গা, চিচিংগা, পটল, উচ্ছে, ধুন্দল, খিরা, কাকরল, বাংগী, তরমুজ ফসলে বিষটোপ ফাঁদ ব্যবহার করে মাছি পোকার আক্রমণ কমানো সম্ভব।
বিষটোপের জন্য ১০০ গ্রাম পাকা মিষ্টি কুমড়া কুচি কুটি করে কেটে থেতলিয়ে ০.৫ মিলি লিটার (১২ ফোটা) নগস অথবা ডিডিভিপি ১০০ তরল এবং ১০০ মিলি লিটার পানি মিশিয়ে ছোট একটি মাটির পাত্রে রেখে ৩টি খুঁটির সাহায্যে মাটি থেকে ০.৫ মিটার উঁচুতে রাখতে হবে। খুঁটি তিনটির মাথায় অন্য একটি বড় আকারের মাটির পাত্র রাখতে হবে।
বিষটোপ গরমের দিনে ২ দিন এবং শীতের দিনে ৪ দিন পর্যন্ত রাখার পর তা ফেলে দিয়ে নতুন করে আবার তৈরী করতে হবে। মাছি পোকার সংখ্যা বিবেচনা করে প্রতি হেক্টরে ২০-৪০টি বিষটোপ ব্যবহার করা যেথে পারে।
তথ্যসূত্র : দি-এডিটর