ফুল চাষ: আয়বর্ধক কৃষিপণ্য
ফুল বিশ্বের মানুষের কাছে অতি প্রিয় এক বস্তু। ফুলকে সবাই ভালবাসে। আগে আমাদের দেশে ফুলের তেমন কদর ছিল না। বর্তমানে ফুলের চাহিদা অনেক বেশি। মানুষ এখন বিয়ের গাড়ি সাজাতে, গুণীজনদের বরণ করে নিতে, বিয়ে বাড়ি সাজাতে, জন্মদিনের অনুষ্ঠানে, পূজা-পার্বণে, গায়ে হলুদে, একুশে ফেব্রুয়ারিতে, সভা-সমিতি ও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ফুলের ব্যবহার আগের চেয়ে অনেক বেড়ে গেছে। বর্তমানে চাহিদার আলোকে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে ফুল চাষ করে লাভবান হওয়া খুবই সহজসাধ্য ব্যাপার। আমাদের দেশে বিভিন্ন ফুলের জন্মে যেমন- গোলাপ, গাঁদা, চামেলী, বেলি, জুঁই, শেফালি, রজনীগন্ধা, গন্ধরাজ, গ্লাডিওলাস, শেফালি, দোপাট্টি, হাসনা-হেনা, চন্দ্রমলি্লকা, ডালিয়া, রঙ্গন, দোলনচাঁপা, কনকচাঁপা, অপরাজিতা, মৌ-চণ্ডাল, টগর, মর্নিংরোজ, জবা, কসমস, মালতি, কামিনী ইত্যাদি। এর ভেতরে কিছু আছে বর্ষজীবী এবং কিছু মৌসুমী।
কোন কোন ফুল এমনিতেই জন্মে আবার কোন কোন ফুলের চাষ করতে হয়। আমাদের দেশে বিভিন্ন জাতের গোলাপ, রজনীগন্ধা, গাঁদা, রঙ্গন, গ্লাডিওলাস ইত্যাদি খুলনা ও যশোরসহ কয়েকটি অঞ্চলে বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে। অর্থনৈতিকভাবে রাখছে গুরুত্বপূর্ণ অবদান। বেকাররা পাচ্ছে কাজ।
মাত্র ২৫ বছর আগের কথা। এখানকার অধিকাংশ মানুষই ভারত থেকে চোরাচালানী করে বিভিন্ন ধরনের ফুল আনতো আমাদের দেশে। এই ফুল ঢাকার বিক্রেতাদের কাছে বিক্রি করে তারা মোটা অংকের টাকা লাভ করতো। এথন বাংলাদেশে ই হচ্ছে বাণিজ্যিকভাবে ফুলের চাষ।
রোপণের সময়: অধিকাংশ ফুলের বীজ, চারা, কলম বা কন্দ অশ্বিন থেকে অগ্রহায়ণ পর্যন্ত রোপণের উপযুক্ত সময়।
জমি নির্বাচন: এমন জমি নির্বাচন করতে হবে যেখানে পর্যাপ্ত আলো-বাতাস পায়। উঁচু দো-আঁশ মাটি ফুল চাষের জন্য উপযোগী। মনে রাখতে হবে, ফুল চাষের জন্য জমি নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বাগানের আকার-আকৃতি মানানসই হলে ভাল দেখায়।
বেড়া দেয়া: গবাদি পশুর বা অবাঞ্ছিত আক্রমণ থেকে ফুল গাছকে বাঁচাতে হলে শক্ত বাঁশের/কাঁটাতার/লোহার বেড়া দিতে হবে। লক্ষ্য রাখতে হবে গরু-ছাগল যেন সে বেড়া ভেঙ্গে না ফেলে।
জমি তৈরি ও চারা রোপণ: জমির পরিমাণ বেশি হলে বিভিন্ন জাতের ফুলের জন্য আলাদা আলাদা জায়গা ভাগ করে পরিকল্পনা মাফিক (নিয়ম মাফিক) চারা রোপণ করতে হবে। কন্দ, চারা বা কলম রোপণের ২০/২৫ দিন আগে জমি ভালভাবে কুপিয়ে উপযুক্ত ও পরিমিত সার যেমন- পচা গোবর, টিএসপি, হাড়ের গুঁড়া, এম,পি, ইউরিয়া, খৈল, চা-পাতির উচ্ছিষ্টাংশ, ছাই ইত্যাদি মিশিয়ে মাটি ঝরঝরে করতে হবে। সার প্রয়োগে জৈব সারের প্রাধান্য দেওয়া উচিত। সব সময় স্বাস্থ্যবান ও নিরোগ চারা বা কন্দ লাগাতে হবে। চারা লাগিয়ে উপরে চাপ না দিয়ে পাশের মাটি চাপ দিয়ে শক্তভাবে চেপে দিতে হবে এবং প্রয়োজনমত পানি দিতে হবে। চারাভেদে খুঁটি পুঁতে চারার গায়ে বেঁধে দিতে হবে।
প্রাপ্তিস্থান: শহরে বা গ্রামে বর্তমানে ভাল নার্সারিতে উন্নতজাতের বীজ, কলম ও চারা পাওয়া যায়। কৃষি সমপ্রসারণ অফিসে যোগাযোগ করলে চারার সন্ধান পাওয়া যাবে।
পরিচর্যা: আগাছা নিড়ানী দিয়ে তুলে ফেলতে হবে এবং গোড়ার মাটি মাঝে-মধ্যে আলগা করে দিতে হবে। প্রয়োজনে পানি সেচের ব্যবস্থা করতে হবে। পিঁপড়া ও মাকড়সার আক্রমণ থেকে গাছকে রক্ষার জন্য হিপ্টেক্লোন-৪০ পরিমাণমত দেওয়া যায়। সাধারণ পোকার জন্য মেলতিয়ন বা ডাইমেক্রন ওষুধ প্রয়োগ করা যেতে পারে। রোগ অনুযায়ী প্রতিকারের ব্যবস্থা নিতে হবে। সার প্রয়োগের কলাকৌশল জেনে চাহিদামত কয়েক দফা সুষম সার ও সেচ দিতে হবে। ফুল ধরার বেশ আগে হতে বিশেষ যত্ন নিতে হবে। ফুলের পরিমাণ ও মান উভয় দিকেই খেয়াল রাখা দরকার। গাছভেদে পুরানো ও রোগা ডাল-পালা ছাঁটাই করে দিতে হবে।
ফুল সংগ্রহ: ফুল সম্পূর্ণ ফোটার আগে ডাঁটাসহ কেটে ফুল সংগ্রহ করা যায়। ডাঁটার নিচের অংশ পানিতে ডুবিয়ে রাখলে ফুল সজীব থাকে। মান ভাল রাখার জন্য ডাঁটাসহ ফুল আঁটি বেঁধে পরিপাটি করে কালো পলিথিনে মুড়ে বাজারে পাঠাতে হবে।
টবে ফুল চাষ: জমির অভাবে দালানের ছাদে, বারান্দার টবে সৌখিন বা বাণিজ্যিকভাবে বিভিন্ন ধরনের ফুলের চাষ করা যায়। বিভিন্নজাতের বা বর্ণের গোলাপ ও গাঁদা। এছাড়া ডালিয়া, রঙ্গন, চন্দ্রমলি্লকা, মৌ-চণ্ডাল, রজনীগন্ধা, বিভিন্ন আর্কিড, নানাজাতের আকর্ষণীয় ক্যাকটাস ও বনসাই। বর্তমানে বাজারে এসবের ভাল চাহিদা রয়েছে। সময় বাঁচানো এবং নির্মল আনন্দের জন্য বর্ষজীবি বা স্থায়ী ফুলের চাষ করা যায়। যেমন- গোলাপ, জবা, চেরি, দোলনচাঁপা, মালতি, কামিনী রঙ্গন, পাতাবাহার, বিভিন্ন আর্কিড ও নানাজাতের ক্যাকটাস। ক্যাকটাস জাতীয় গাছের জন্য সার খুবই কম লাগে। ফলে ব্যয়ও হয় খুব কম।
উপসংহার: আমাদের দেশে ফুল চাষ করে আত্মকর্ম সংস্থানের মাধ্যমে বেকারত্ব ঘুচানো সম্ভব। দেশে ফুলের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রফতানি করা যায়। আসে বৈদেশিক মুদ্রা। সবচেয়ে বড় কথা ফুল মানুষের খারাপ মনকে ভাল করে দেয়।
সূত্রঃ আপডেট ডট কম