নিজের ঘরে সবুজের ছোঁয়া সবাই চায়। তাই অনেকে ঘরের এককোণে সাঁজায় নানা রকম ইনডোর প্ল্যান্ট দিয়ে। এসব ইনডোর প্ল্যান্ট দেয়ালে কিংবা জানালা বা বারান্দার গ্রিলে লাগানোর জন্য আছে নানা রকম পট। যেগুলো অনায়াসে ঝুলিয়ে রাখা সম্ভব।
কিন্তু সৌখিন বাগানীরাশুধু জানালা বা বারান্দায় গাছকে দেখতে চাননা তাই তারা বাগানকে সরাসরি সিলিংএ স্থান দিয়েছেন। এই বৈচিত্রময় এই শিল্পের নাম কোকেডামা,যার জন্মস্থান হচ্ছে জাপান।
ছোটবেলায় পাঠ্য বইতে ব্যাবিলনের শূন্যউদ্যান বা ঝুলন্ত বাগানের কথা অনেকেই পড়েছেন। প্রাচীন পৃথিবীর সপ্তাশ্চর্যের একটি হিসেবেই যাকে ধরা হয়। তখন কৌতুহল বশত মনে প্রশ্ন জাগত কেমন ছিল এই শূন্য উদ্যান, বাগান আবার শূন্যের উপর কিভাবে থাকে ?? নাকি দড়ি দিয়ে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল এ বাগান!!
যা হোক, ইতিহাস ঘেঁটে জানা যায় খ্রিস্টপূর্ব ৬০০ শতকের দিকে রাজা নেবুচাদনেজার তার সম্রাজ্ঞীর প্রেরনায় ইরাকের ইউফ্রেটিস নদীর তীরে এটি নির্মাণ করেন।৮০০ স্কয়ার ফিটের এই বাগানটি ছিল তৎকালীন সম্রাটের খাস উপাসনালয়ের ছাদে। মাটি থেকে বাগানের উচ্চতা ছিল ৮০ফিট । এই ভিত্তির উপরই ছিল পৃথিবীর সর্ববৃহৎ আর বিস্ময়কর বাগান। সেই থেকেই মূলত ঝুলন্ত বাগান ধারণার উৎপত্তি।
কোকেডামা কি?
কোকেডামা আসলে এক ধরনের বনসাই। জাপানিজ শব্দ কোকেডামা, বাংলায় এর মানে দাঁড়ায় সবুজ মসে ঢাকা গাছ। অন্যান্য বনসাই এর মত এর ইতিহাসও তেমন পুরনো নয়। নেরাই এবং কুসামোনো নামক বনসাই থেকে কোকেডামার সৃষ্টি। নেরাই বনসাই প্রথমে শক্ত পাত্রে লাগানো হত, ফলে দীর্ঘদিন ধরে পাত্রে থাকার ফলে এর শিকড় পাত্রের আকার ধারণ করত। ফলে তা পাত্র থেকে বের করে আনলে আগের সেই পাত্রের আকৃতি বজায় থাকত। পরে তা সেখান থেকে বের করে সমান স্থানের উপর দাড় করিয়ে রাখা হত বা দড়ি দিয়ে ঝুলিয়ে রাখা হত। পাত্রহীন বনসাইটি মস দিয়ে ঢাকা থাকত তাই এর আরেক নাম মস বল। মস লাগানোর ধারণা আসে মূলত কুসামোনো বনসাই থেকে। কুসামোনো বনসাই তৈরি করা হত বুনো ঘাস বা মস আর ফুলগাছ একই পাত্রে লাগানোর মাধ্যমে। পটের আকৃতি ছিল অন্যসব বনসাই থেকে সম্পূর্ণ আলাদা, যা সাধারণত পাঁথর কাঠ বা সিরামিক দিয়ে তৈরী হত।
উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ
কোকেডামার সৃষ্টির ইতিহাস বনসাইয়ের সাথে অনেকটা সংশ্লিষ্ট। তাই কোকেডামা সম্পর্কে জানতে হলে বনসাইয়ের শুরুটা সম্পর্কে জানতে হবে, কোকেডামাও এক ধরণের বনসাই। আনুমানিক ৭৯৪ খ্রিষ্টাব্দের দিকে বনসাইয়ের চর্চা শুরু হয়। পাত্রবিহীন বনসাই নেরাই চর্চার সূচনা হয় ১৬০৩ খ্রিষ্টাব্দে। আর নেরাইয়ের আধুনিকতম রূপ হচ্ছে কোকেডামা বা মসবল।
কি কি গাছ দিয়ে তৈরি হয়
কোকেডামা একধরণের বনসাই তাই, বনসাই তৈরিতে যেসব গাছ ব্যাবহার করা হয় কোকেডামা তৈরিতেও ঠিক একই রকম গাছ ব্যাবহার করা হয়। বরং কোকেডামার পরিধি আরেকটু বড়। ইনডোর প্ল্যান্ট, পাম কিংবা ঘাস জাতীয় গাছও কোকেডামা তৈরিতে ব্যাবহার করা হয়।
পরিচর্যা
পরিচর্যা অনেকটা বনসাইয়ের মতই। আর মাঝে মাঝে বলের উপর শুধু স্প্রে দিয়ে পানি দিতে হয়।
তথ্যসূত্রঃ সৌখিন