অনেক সময় নার্সারিতে দেখে ভালো লাগার চারাটি কিনে ফেলা হয়, এর পরিচয় না জেনেই। বিদেশি গাছের বেলায় তো প্রায়ই এমন ঘটে। আশ্চর্য ব্যাপার হচ্ছে, প্রকৃত নামের পরিবর্তে গাছটিকে যে নামে ডাকা হয়, সেই নামের গাছের সঙ্গে প্রকৃত গাছটির কোনো ধরনের সাদৃশ্য বা সম্পর্ক থাকে না।
এমন একটি গাছের নাম দইগোটা।একে আবার লটকনও বলে অনেকে। এই রঞ্জক উদ্ভিদটি এখানে ভুল করে জাফরান ভাবা হয়। কিন্তু আকার-আকৃতিতে গাছ দুটি একেবারেই আলাদা। আদতে জাফরান বেশ দুষপ্রাপ্য এবং নামীদামি সুগন্ধি। জানামতে, দেশে এখন পর্যন্ত জাফরান চাষের কোনো রেকর্ড নেই। বর্ষজীবী এই কন্দজ গাছ সাধারণত শীতের দেশেই জন্মে। সেখানকার পরিকল্পিত বাগানগুলোতে প্রাকৃতিকভাবে জন্মাতে দেখেছি।
ঢাকার কোনো পার্কে বেড়াতে গেলে দইগোটার গাছ দৃষ্টি এড়িয়ে যেতে পারে। কারণ, চোখে পড়ার মতো তেমন আকর্ষণীয় কিছুই থাকে না প্রায় সারা বছর। শুধু চিরুনির ফলার মতো খোলসওয়ালা লালচে রঙের কতগুলো ফল চোখে পড়ে গাছে। তা-ও আবার উপাদেয় কোনো ফল নয় বলে মানুষের উৎসাহ খানিকটা কম। তবে বর্ষার শেষভাগ থেকে হেমন্ত পর্যন্ত ঈষৎ গোলাপি রঙের ফুলগুলো ফুটতে থাকে।
লটকন বা দইগোটা (Bixa orellana) সারা দেশে রঞ্জক হিসেবেই চাষ হয়। কিন্তু দেশি ফল লটকা বা লটকনের সঙ্গেও এর কোনো সম্পর্ক নেই। ধারণা করা হয়, বীজের রং দই রাঙানোর কাজে বেশি ব্যবহূত হতো বলেই এমন নামকরণ। প্রাচীনকালে মানুষ যে কয়েকটি গাছ থেকে প্রাকৃতিক রং সংগ্রহ করত, দইগোটা তার মধ্যে অন্যতম। রঞ্জক উদ্ভিদ সম্পর্কে খোঁজখবর নিতে গিয়েই প্রথমে এ গাছ সম্পর্কে জানতে পারি। ঢাকায় রমনা পার্ক, বলধা গার্ডেন, বোটানিক্যাল গার্ডেনসহ কারও কারও ব্যক্তিগত সংগ্রহেও দেখা যায়।
এটি ক্রান্তীয় আমেরিকার প্রজাতি। সতেরো শতাব্দীর দিকে স্প্যানিশদের মাধ্যমে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে। গাছ ছোট, ঝোপাল, চার থেকে পাঁচ মিটার উঁচু ও চিরসবুজ। পাতা বড়। ফুল ফোটে শরৎ থেকে শীতের প্রথমভাগ অবধি। ফুল একসঙ্গে অল্প কয়েকটি ফোটে। দেখতে গোলাপি, ঈষৎ বেগুনি বা সাদাটে। পাপড়ির মাঝখানে হলুদ-সোনালি রঙের একগুচ্ছ পুংকেশর থাকে। ফল লালচে বাদামি, নরম কাঁটায় ভরা। বীজ লাল শাঁসে জড়ানো। এই বীজ থেকেই পাওয়া যায় রং।
এবার জাফরান প্রসঙ্গ। এরা পেঁয়াজের মতো পাতা ও কাণ্ডবিশিষ্ট বহুবর্ষজীবী গুল্ম। মাটির নিচে মূলে কন্দ ও অনেক শিকড় থাকে। অন্য নাম কুমকুম বা কুঙ্কুম। ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের বিভিন্ন দেশে এই গণের ৬০টি প্রজাতি রয়েছে। জাফরান (Crocus sativus) স্বাদে তেতো, ঝাঁজালো, পিচ্ছিল ও সুগন্ধময়। দামি রান্নায় ও সুগন্ধের জন্য পরিমাণমতো ব্যবহার করা হয়। ভালো জাফরান রক্তাভ-পীত রঙের এবং পদ্মগন্ধযুক্ত। প্রাচীনকাল থেকেই কাশ্মীরে এ ধরনের উৎকৃষ্ট মানের জাফরান জন্মে। তা ছাড়া ইরান, ইতালি, ফ্রান্স ও স্পেনেও এর ব্যাপক চাষ হয়।
খাদ্যদ্রব্য ছাড়াও দামি প্রসাধন সামগ্রী হিসেবে জাফরান ব্যবহার্য। প্রাচীনকালে জাফরান গায়ে মাখা হতো শরীরের সৌষ্ঠব বাড়ানোর জন্য। ত্বক এর গুণে লাবণ্যময় হয়ে ওঠে। এ ছাড়া নানা রোগেও জাফরানের বহুমাত্রিক ব্যবহার লক্ষ করা যায়। চড়া মূল্যের কারণে ইদানীং জাফরানের ব্যবহার অনেক কমেছে।
এবার নিশ্চয়ই আর জাফরান ভেবে অন্য কোনো গাছ নিয়ে বাড়ি ফিরবেন না।
তথ্য সুত্র: প্রথম আলো , তারিখ: ১৫-১১-২০১১
এমন একটি গাছের নাম দইগোটা।একে আবার লটকনও বলে অনেকে। এই রঞ্জক উদ্ভিদটি এখানে ভুল করে জাফরান ভাবা হয়। কিন্তু আকার-আকৃতিতে গাছ দুটি একেবারেই আলাদা। আদতে জাফরান বেশ দুষপ্রাপ্য এবং নামীদামি সুগন্ধি। জানামতে, দেশে এখন পর্যন্ত জাফরান চাষের কোনো রেকর্ড নেই। বর্ষজীবী এই কন্দজ গাছ সাধারণত শীতের দেশেই জন্মে। সেখানকার পরিকল্পিত বাগানগুলোতে প্রাকৃতিকভাবে জন্মাতে দেখেছি।
ঢাকার কোনো পার্কে বেড়াতে গেলে দইগোটার গাছ দৃষ্টি এড়িয়ে যেতে পারে। কারণ, চোখে পড়ার মতো তেমন আকর্ষণীয় কিছুই থাকে না প্রায় সারা বছর। শুধু চিরুনির ফলার মতো খোলসওয়ালা লালচে রঙের কতগুলো ফল চোখে পড়ে গাছে। তা-ও আবার উপাদেয় কোনো ফল নয় বলে মানুষের উৎসাহ খানিকটা কম। তবে বর্ষার শেষভাগ থেকে হেমন্ত পর্যন্ত ঈষৎ গোলাপি রঙের ফুলগুলো ফুটতে থাকে।
লটকন বা দইগোটা (Bixa orellana) সারা দেশে রঞ্জক হিসেবেই চাষ হয়। কিন্তু দেশি ফল লটকা বা লটকনের সঙ্গেও এর কোনো সম্পর্ক নেই। ধারণা করা হয়, বীজের রং দই রাঙানোর কাজে বেশি ব্যবহূত হতো বলেই এমন নামকরণ। প্রাচীনকালে মানুষ যে কয়েকটি গাছ থেকে প্রাকৃতিক রং সংগ্রহ করত, দইগোটা তার মধ্যে অন্যতম। রঞ্জক উদ্ভিদ সম্পর্কে খোঁজখবর নিতে গিয়েই প্রথমে এ গাছ সম্পর্কে জানতে পারি। ঢাকায় রমনা পার্ক, বলধা গার্ডেন, বোটানিক্যাল গার্ডেনসহ কারও কারও ব্যক্তিগত সংগ্রহেও দেখা যায়।
এটি ক্রান্তীয় আমেরিকার প্রজাতি। সতেরো শতাব্দীর দিকে স্প্যানিশদের মাধ্যমে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে। গাছ ছোট, ঝোপাল, চার থেকে পাঁচ মিটার উঁচু ও চিরসবুজ। পাতা বড়। ফুল ফোটে শরৎ থেকে শীতের প্রথমভাগ অবধি। ফুল একসঙ্গে অল্প কয়েকটি ফোটে। দেখতে গোলাপি, ঈষৎ বেগুনি বা সাদাটে। পাপড়ির মাঝখানে হলুদ-সোনালি রঙের একগুচ্ছ পুংকেশর থাকে। ফল লালচে বাদামি, নরম কাঁটায় ভরা। বীজ লাল শাঁসে জড়ানো। এই বীজ থেকেই পাওয়া যায় রং।
এবার জাফরান প্রসঙ্গ। এরা পেঁয়াজের মতো পাতা ও কাণ্ডবিশিষ্ট বহুবর্ষজীবী গুল্ম। মাটির নিচে মূলে কন্দ ও অনেক শিকড় থাকে। অন্য নাম কুমকুম বা কুঙ্কুম। ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের বিভিন্ন দেশে এই গণের ৬০টি প্রজাতি রয়েছে। জাফরান (Crocus sativus) স্বাদে তেতো, ঝাঁজালো, পিচ্ছিল ও সুগন্ধময়। দামি রান্নায় ও সুগন্ধের জন্য পরিমাণমতো ব্যবহার করা হয়। ভালো জাফরান রক্তাভ-পীত রঙের এবং পদ্মগন্ধযুক্ত। প্রাচীনকাল থেকেই কাশ্মীরে এ ধরনের উৎকৃষ্ট মানের জাফরান জন্মে। তা ছাড়া ইরান, ইতালি, ফ্রান্স ও স্পেনেও এর ব্যাপক চাষ হয়।
খাদ্যদ্রব্য ছাড়াও দামি প্রসাধন সামগ্রী হিসেবে জাফরান ব্যবহার্য। প্রাচীনকালে জাফরান গায়ে মাখা হতো শরীরের সৌষ্ঠব বাড়ানোর জন্য। ত্বক এর গুণে লাবণ্যময় হয়ে ওঠে। এ ছাড়া নানা রোগেও জাফরানের বহুমাত্রিক ব্যবহার লক্ষ করা যায়। চড়া মূল্যের কারণে ইদানীং জাফরানের ব্যবহার অনেক কমেছে।
এবার নিশ্চয়ই আর জাফরান ভেবে অন্য কোনো গাছ নিয়ে বাড়ি ফিরবেন না।
তথ্য সুত্র: প্রথম আলো , তারিখ: ১৫-১১-২০১১