টবে শীতের ফুল

Wednesday, November 30, 2011


গ্রামে শীত আসে খেজুর রসের হাঁড়িতে চড়ে, আর নগরের শীত নামে রংবেরঙের ফুলের টবে চড়ে। ছোট পরিসরেই রকমারি সেসব ফুলকে জায়গা দিতে হয় টবের ভেতরে।
নগরের বিভিন্ন নার্সারিতে এখন নানা রকমের গাঁদা ফুলের চারা পাওয়া যাচ্ছে। গাঁদার সবচেয়ে আকর্ষণীয় হাইব্রিড ইনকা জাতের গাছ এখন ফুলসহ পাওয়া যাচ্ছে। ইনকা গাঁদা টবে লাগানোর জন্য খুবই ভালো। তবে এ ফুলের প্রস্ফুটনকাল অন্য জাতের গাঁদার চেয়ে কম। একটা গাছে দেশি বল গাঁদার যত ফুল ফোটে, ইনকার তত ফুল ফোটে না এবং ফুলও দেশি গাঁদার মতো অত দিন থাকে না।

জাম্বো গাঁদার গাছ খুব খাটো ও প্রচুর ডালপালা নিয়ে ছড়িয়ে বড় হয়, অনেক দিন ধরে প্রচুর ফুল ফোটে। টবে খুব ভালো হয়। জাম্বো গাঁদার ফুলের রং ইনকার মতো শুধু সরষে হলুদ, হলুদ বা কমলা নয়, খয়েরি বা মেরুন রঙে চিত্রিত। এই বৈচিত্র্যের জন্য জাম্বো গাঁদাকে অনেকেই পছন্দ করেন।
পুরোপুরি মেরুন রঙের ছোট ফুলের গাঁদা এ দেশে রক্তগাঁদা নামে পরিচিত, আসলে ওটা চায়নিজ গাঁদা। এটাও টবের জন্য ভালো, অনেক দিন ধরে প্রচুর ফুল পাওয়া যায়।

অন্য যত ফুল
শীতের ফুলের মধ্যে ডালিয়া ও চন্দ্রমল্লিকা অন্যতম। ডালিয়ার খাটো থেকে লম্বা—অনেক জাতের গাছ আছে। ছোট টবের জন্য খাটো গাছ ও বড় টবের জন্য লম্বা গাছ বেছে নিতে পারেন। ডালিয়ার কাটিং পলিব্যাগে বিভিন্ন নার্সারিতে পাওয়া যাচ্ছে। এগুলো কিনে টবের মাটিতে বসিয়ে যত্ন নিলে মাস খানেক পর থেকেই ফুল ফুটতে শুরু করবে এবং জাতভেদে মার্চ পর্যন্ত ফুল দেবে। চন্দ্রমল্লিকার অসংখ্য জাত রয়েছে। বড় ফুলের কোঁকড়ানো পাপড়ির স্নোবল জাতটি অত্যন্ত আকর্ষণীয়। চন্দ্রমল্লিকা ফুল অনেক দিন টবে ফোটা থাকে, ফুলও ফোটে অনেক। শীতের অন্যান্য ফুলের মধ্যে লাগাতে পারেন ইউরোপ থেকে আসা অ্যান্টিরিনাম, দক্ষিণ আফ্রিকার ডেইজি, মেক্সিকোর ন্যাস্টারশিয়াম, চীনের অ্যাস্টার, যুক্তরাষ্ট্রের ক্লার্কিয়া, পপি, লুপিন, ফ্রান্স থেকে আসা কারনেশন ও প্যানজি, ইতালির সিসিলির সুইটপি প্রভৃতি ফুলের গাছ। এসবই এখন আমাদের দেশে সুলভ। এমনকি বাহারি রূপের গাজানিয়া, পিটুনিয়া, ভারবেনা, ফ্লক্স, হলুদ পপি, স্যালভিয়া, ডায়ান্থাস, ক্যালেন্ডুলা, হেলিক্রিসাম, কসমস, জারবেরা ইত্যাদিও লাগাতে পারেন। এর সব ফুলই টবে লাগানো যায়। এমনকি কলকের মতো নীলরঙা মর্নিং গ্লোরি বা পার্বতী লতানো ফুল হলেও শীতে টবে লাগাতে পারেন। চারা লাগিয়ে টবের ভেতর কাঠি পুঁতে জিআই তারের রিং দিয়ে ছোট্ট মাচার মতো করে তাতে লতিয়ে দিলে সে গাছও দেখতে বেশ লাগে। পুরো শীতেই এর ফুল ফুটবে।

টবে ফুল ফোটানোর সহজ পাঠ
শীতের ফুল লাগানোর জন্য ৮ থেকে ১২ ইঞ্চি মাপের টবই যথেষ্ট। ছোট আকৃতির গাছ, যেমন—ডায়ান্থাস, জাম্বো গাঁদা, পিটুনিয়া, গাজানিয়া ইত্যাদি ছোট টবে লাগাতে পারেন। ডালিয়া, চন্দ্রমল্লিকা, ইনকা গাঁদা ইত্যাদি লাগাতে পারেন ১০-১২ ইঞ্চি টবে। টবের আকৃতি অনুযায়ী, মাটির সঙ্গে টবপ্রতি ১৫০ থেকে ২৫০ গ্রাম প্যাকেটের জৈব সার, কম্পোস্ট বা ভার্মিকম্পোস্ট মিশিয়ে টব ভরবেন। পলিব্যাগের চারা টবের মাঝখানে সোজা করে লাগিয়ে চারার গোড়ার মাটি দুই হাতের আঙুল দিয়ে চেপে শক্ত করে দেবেন। এরপর পানি দেবেন। টবে আর কোনো সার দেওয়ার দরকার হবে না। তবে গাছের বাড়-বাড়তি কম মনে হলে কুঁড়ি আসার আগেই আরও কিছু কম্পোস্ট বা জৈব সার টবের মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেবেন। জৈব সার কয়েক দিন পরপর অল্প করে গাছের গোড়ার চারদিকে দিয়ে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেবেন, অন্তত কুঁড়ি না আসা পর্যন্ত। টব রাখবেন রোদে, ছাদে বা ব্যালকনিতে। গাছে পানি দেওয়ার সময় শুধু গাছের গোড়ায় পানি না দিয়ে ঝাঁঝরি দিয়ে গাছের ওপর থেকে বৃষ্টির মতো গাছ-পাতা ভিজিয়ে নিয়মিত হালকা পানি দিন। এতে গাছ বেশি সতেজ হবে। ডালিয়া ও চন্দ্রমল্লিকা গাছে কাঠি পুঁতে ঠেস দেবেন। গাঁদা ফুলের আকার বড় করতে চাইলে প্রথম কুঁড়িগুলো নখ দিয়ে খুঁটে ভেঙে দিন। এতে ফুল বড় হবে এবং বেশি ফুল ফুটবে। ফুল শুকাতে শুরু করলে দ্রুত তা গাছ থেকে কেটে ফেলুন।

টব, সার ও চারার খোঁজ
ঢাকায় আগারগাঁওয়ে রোকেয়া সরণিতে ২০-২৫টি নার্সারি গড়ে উঠেছে, যেগুলোতে এখন শীতের মৌসুমি ফুলের পর্যাপ্ত চারা পাওয়া যাচ্ছে। ইনকা গাঁদার জন্য দেখতে পারেন আরণ্যক, খামারবাড়ী, আদর্শবন, তানজিলা, মাগুরা, গার্ডেনিয়া ইত্যাদি নার্সারি। সাদা গাঁদা ও ভার্মি কম্পোস্ট বা কেঁচো সার পাবেন কৃষিবিদ উপকরণ নার্সারিতে, চন্দ্রমল্লিকা ও স্নোবল পাবেন গ্রিন ওয়ার্ল্ড নার্সারিতে, গাজানিয়া ও স্যালভিয়া পাবেন মাগুরা নার্সারিতে, ডালিয়া পাবেন মমতাজ ও বৃষ্টি নার্সারিতে। শীতের প্রায় সব ফুলের প্রতিটি চারার দামই পলিব্যাগে ৬-১০ টাকার মধ্যে, তবে গাজানিয়া ও পিটুনিয়ার দাম ৩০ টাকা। টবে ইনকা গাঁদার ফুলসহ গাছ পাবেন ৪০-৮০ টাকার মধ্যে। প্যাকেটের কম্পোস্ট বা জৈব সার প্রতি কেজি ৪০ টাকা। মাটির টব ২০-৬০ টাকা, সিমেন্টের টব ৬০-৩০০ টাকা, পারটেক্স ব্র্যান্ডের প্লাস্টিকের পুনরায় ব্যবহারযোগ্য টব আট ইঞ্চি ৮০ টাকা, ১২ ইঞ্চি ১৭০ টাকা। পাবেন গ্রিনওয়ার্ল্ড নার্সারিতে। এ ছাড়া ফার্মগেটের কাছে খামারবাড়ীর পাশে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট চত্বরে ভোসড নার্সারিতেও শীতের ফুলের চারা ও সার পাবেন। সাভার ও ঢাকার বাইরের নার্সারিগুলোতে চারার দাম কিছুটা কম।

জাফরান ভেবে দইগোটা!

Wednesday, November 16, 2011


অনেক সময় নার্সারিতে দেখে ভালো লাগার চারাটি কিনে ফেলা হয়, এর পরিচয় না জেনেই। বিদেশি গাছের বেলায় তো প্রায়ই এমন ঘটে। আশ্চর্য ব্যাপার হচ্ছে, প্রকৃত নামের পরিবর্তে গাছটিকে যে নামে ডাকা হয়, সেই নামের গাছের সঙ্গে প্রকৃত গাছটির কোনো ধরনের সাদৃশ্য বা সম্পর্ক থাকে না।

এমন একটি গাছের নাম দইগোটা।একে আবার লটকনও বলে অনেকে। এই রঞ্জক উদ্ভিদটি এখানে ভুল করে জাফরান ভাবা হয়। কিন্তু আকার-আকৃতিতে গাছ দুটি একেবারেই আলাদা। আদতে জাফরান বেশ দুষপ্রাপ্য এবং নামীদামি সুগন্ধি। জানামতে, দেশে এখন পর্যন্ত জাফরান চাষের কোনো রেকর্ড নেই। বর্ষজীবী এই কন্দজ গাছ সাধারণত শীতের দেশেই জন্মে। সেখানকার পরিকল্পিত বাগানগুলোতে প্রাকৃতিকভাবে জন্মাতে দেখেছি।
ঢাকার কোনো পার্কে বেড়াতে গেলে দইগোটার গাছ দৃষ্টি এড়িয়ে যেতে পারে। কারণ, চোখে পড়ার মতো তেমন আকর্ষণীয় কিছুই থাকে না প্রায় সারা বছর। শুধু চিরুনির ফলার মতো খোলসওয়ালা লালচে রঙের কতগুলো ফল চোখে পড়ে গাছে। তা-ও আবার উপাদেয় কোনো ফল নয় বলে মানুষের উৎসাহ খানিকটা কম। তবে বর্ষার শেষভাগ থেকে হেমন্ত পর্যন্ত ঈষৎ গোলাপি রঙের ফুলগুলো ফুটতে থাকে।
লটকন বা দইগোটা (Bixa orellana) সারা দেশে রঞ্জক হিসেবেই চাষ হয়। কিন্তু দেশি ফল লটকা বা লটকনের সঙ্গেও এর কোনো সম্পর্ক নেই। ধারণা করা হয়, বীজের রং দই রাঙানোর কাজে বেশি ব্যবহূত হতো বলেই এমন নামকরণ। প্রাচীনকালে মানুষ যে কয়েকটি গাছ থেকে প্রাকৃতিক রং সংগ্রহ করত, দইগোটা তার মধ্যে অন্যতম। রঞ্জক উদ্ভিদ সম্পর্কে খোঁজখবর নিতে গিয়েই প্রথমে এ গাছ সম্পর্কে জানতে পারি। ঢাকায় রমনা পার্ক, বলধা গার্ডেন, বোটানিক্যাল গার্ডেনসহ কারও কারও ব্যক্তিগত সংগ্রহেও দেখা যায়।
এটি ক্রান্তীয় আমেরিকার প্রজাতি। সতেরো শতাব্দীর দিকে স্প্যানিশদের মাধ্যমে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে। গাছ ছোট, ঝোপাল, চার থেকে পাঁচ মিটার উঁচু ও চিরসবুজ। পাতা বড়। ফুল ফোটে শরৎ থেকে শীতের প্রথমভাগ অবধি। ফুল একসঙ্গে অল্প কয়েকটি ফোটে। দেখতে গোলাপি, ঈষৎ বেগুনি বা সাদাটে। পাপড়ির মাঝখানে হলুদ-সোনালি রঙের একগুচ্ছ পুংকেশর থাকে। ফল লালচে বাদামি, নরম কাঁটায় ভরা। বীজ লাল শাঁসে জড়ানো। এই বীজ থেকেই পাওয়া যায় রং।
এবার জাফরান প্রসঙ্গ। এরা পেঁয়াজের মতো পাতা ও কাণ্ডবিশিষ্ট বহুবর্ষজীবী গুল্ম। মাটির নিচে মূলে কন্দ ও অনেক শিকড় থাকে। অন্য নাম কুমকুম বা কুঙ্কুম। ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের বিভিন্ন দেশে এই গণের ৬০টি প্রজাতি রয়েছে। জাফরান (Crocus sativus) স্বাদে তেতো, ঝাঁজালো, পিচ্ছিল ও সুগন্ধময়। দামি রান্নায় ও সুগন্ধের জন্য পরিমাণমতো ব্যবহার করা হয়। ভালো জাফরান রক্তাভ-পীত রঙের এবং পদ্মগন্ধযুক্ত। প্রাচীনকাল থেকেই কাশ্মীরে এ ধরনের উৎকৃষ্ট মানের জাফরান জন্মে। তা ছাড়া ইরান, ইতালি, ফ্রান্স ও স্পেনেও এর ব্যাপক চাষ হয়।
খাদ্যদ্রব্য ছাড়াও দামি প্রসাধন সামগ্রী হিসেবে জাফরান ব্যবহার্য। প্রাচীনকালে জাফরান গায়ে মাখা হতো শরীরের সৌষ্ঠব বাড়ানোর জন্য। ত্বক এর গুণে লাবণ্যময় হয়ে ওঠে। এ ছাড়া নানা রোগেও জাফরানের বহুমাত্রিক ব্যবহার লক্ষ করা যায়। চড়া মূল্যের কারণে ইদানীং জাফরানের ব্যবহার অনেক কমেছে।
এবার নিশ্চয়ই আর জাফরান ভেবে অন্য কোনো গাছ নিয়ে বাড়ি ফিরবেন না।

তথ্য সুত্র: প্রথম আলো , তারিখ: ১৫-১১-২০১১

মনের উঠোনে

সাম্প্রতিক সংযোজন

মোবাইল থেকে দেখুন

আমাদের দেশ এখন আপনার মুঠোফোনে, মোবাইল থেকে লগইন করুন আমাদের দেশ

দ র্শ না র্থী

দ র্শ না র্থী

free counters

কে কে অনলাইনে আছেন