Friday, April 22, 2011

সাজনা শুধু সবজিই নয়


ইংরেজিতে সাজনার নাম 'ড্রামস্টিক' যার অর্থ ঢোলের লাঠি। সাজনার ইংরেজি নামটি অদ্ভুত হলেও এটি একটি অতি প্রয়োজনীয় জীবনরক্ষাকারী উদ্ভিদ। বাংলাদেশে এ নিয়ে তেমন গবেষণা না হলেও বিশ্বের বহু দেশে নানা রকমের গবেষণা হয়েছে; বিশেষ করে এ গাছ হরমোন বর্ধক ঔষধি গুণসম্পন্ন, কাগজ তৈরি ইত্যাদি বিষয় ছাড়াও প্রাচীনকাল থেকেই আমাদের দেশে এটি সবজির পাশাপাশি ওষুধ হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে। দেশের সর্বত্রই সাজনা পাওয়া যায়। বিশেষ করে গ্রামের রাস্তার ধারে এবং বসতবাড়ির আঙিনায় যত্ন ছাড়াই বেড়ে ওঠে এ বৃক্ষটি। সাজনার ফুল ও পাতা শুধু শাক হিসেবেই নয়, পশু খাদ্য হিসেবেও ব্যবহার হয়। এর পাতা শাক হিসেবে ব্যবহার করা যায়_ এতে শারীরিক শক্তি ও আহারের রুচিবর্ধক হয়। এর মধ্যে আছে ভিটামিন এ, বি, সি, নিকোটিনিক এসিড, প্রোটিন ও চর্বি জাতীয় পদার্থ, কার্বোহাইড্রেট ইত্যাদি। ভারতীয়রা এটির স্যুপ খেয়ে থাকে। এ সময় ঋতু পরিবর্তনের কারণে আমাদের অনেকেরই মুখে স্বাদ থাকে না। আর এ স্বাদকে ফিরিয়ে আনতে সাজনার জুড়ি নেই। সজিনা গাছটির প্রতি আমাদের তেমন আগ্রহ না থাকলেও এর ডাঁটা সব মানুষই পছন্দ করে। আমরা জানি, সবজি মাত্রই পুষ্টিকর খাদ্য। তবে সাজনা শুধু পুষ্টিকর সবজি নয় এটি ওষুধি বৃক্ষও বটে।

সাজনার ফুল বসন্তকালে খাওয়া ভালো কারণ এটি বসন্ত প্রতিষেধক। এটি সর্দি কাশিতে, যকৃতের কার্যকারিতায়, কৃমি প্রতিরোধে, শক্তি বৃদ্ধিতে ফলদায়ক। এর ডাঁটা বা ফলে প্রচুর এমাইনো এসিড আছে। এটি বাত রোগীদের জন্য ভালো। সাজনার বীজ থেকে তেলও পাওয়া যায়, যা বাতের ওষুধ তৈরির কাজে ব্যবহার হয়ে থাকে এবং ঘড়ি ঠিক করার জন্য যে বেল ওয়েল ব্যবহার হয় তা এর বীজ হতে পাওয়া যায়। সাজনা চরম পরিবেশগত অবস্থা সহ্য করতে সক্ষম। তবে ২০ হতে ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ভালো জন্মায় এবং যেসব এলাকায় ২৫০ থেকে ১৫০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয় সেখানে ভালো জন্মায়। মাটি বেলে দোঁআশ থেকে দোঁয়াশ এবং পিএইচ ৫.০ থেকে ৯.০ সম্পন্ন মাটি সহ্য করতে পারে। সজিনা চাষে সারের তেমন প্রয়োজন হয় না। কারণ সজনার বিস্তৃত ও গভীর শিকড় রয়েছে। তবে ইউরিয়া এবং জৈব সার প্রয়োগ করলে গাছ ভালো হয়। এ বৃক্ষটি বীজ ও ডালের মাধ্যমে বংশবিস্তার করা সম্ভব। তবে আমাদের দেশে বীজ থেকে চারা তৈরি করে চাষাবাদের রীতি এখনো অনুসরণ করা হয় না। কারণ বীজ থেকে চারা তৈরি ব্যয়বহুল। বীজের মাধ্যমে বংশবিস্তারের ক্ষেত্রে এপ্রিল-মে মাসে গাছ থেকে পাকা ফল সংগ্রহ করতে হবে, তারপর সেটিকে শুকিয়ে ফাটলে বীজ পাওয়া যাবে। এ বীজ শুকনো বায়ুরোধী পাত্রে ১-৬ মাস পর্যন্ত সংরক্ষণ করে রাখতে পারি। তার পর জুলাই-আগস্টে বীজতলায় অথবা পলি ব্যাগে বপন করতে পারি। বীজ বপনের আগে বীজগুলোকে ২৪ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখতে হবে। এতে বীজ থেকে চারা গজাতে সুবিধা হয়। বীজ থেকে চারা বের হতে সময় লাগে ১০ থেকে ২০ দিন। চারা বের হওয়ার পর নিয়মিত সেচ, সার প্রয়োগ ও অন্যান্য যত্ন পরিচর্যা করতে হবে। তবে এ ক্ষেত্রে বলে রাখা ভালো যে, বীজ থেকে সজিনা উৎপাদনের ক্ষেত্রে ডাল পুঁতে অঙ্গজ বংশবিস্তারের চেয়ে দেরিতে ফল আসে। আমাদের দেশে ডাল পুঁতে অঙ্গজ উপায়ে বংশ বিস্তার পদ্ধতিটি বেশি ব্যবহৃত হয়। তার কারণ হলো, এটি করতে তেমন দক্ষতার প্রয়োজন হয় না। আর খরচও কম, অঙ্গজ বংশবিস্তারের জন্য ৪-৫ ব্যাসের বা বেডের ৫-৬ হাত লম্বা নিরোগ ডাল এবং আঘাতমুক্ত ডাল ব্যবহার করা ভালো। নতুন লাগানো গাছে সেচের ব্যবস্থা করতে হবে, যাতে শীঘ্রই শিকড় গজাতে পারে। শুষ্ক ও গ্রীষ্ম মৌসুমে প্রায় দুই মাস সেচ দিতে হবে। তবে সাজনার গাছ একবার লেগে গেলে তেমন পানির প্রয়োজন হয় না। সজিনার গাছে তুলনামূলক কীট-পতঙ্গ ও রোগ সহনশীলভাবে মাঝে মাঝে প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। যেমন জলাবদ্ধ মাটিতে শিকড় পচা রোগ দেখা দিতে পারে এর কারণ ডিপ্লোডিয়া। কীট-পতঙ্গ শুষ্ক ও ঠাণ্ডায় বেশি আক্রমণ করে। কীট-পতঙ্গ দ্বারা গাছে হলুদ রোগ দেখা যায়। কীট-পতঙ্গের মধ্যে টারমাইটস, এফিড, সাদা মাছি প্রধান। সজিনার পাতা বেটে ফোঁড়া বা টিউমারে লাগালে বহু ক্ষেত্রে মিলিয়ে যায় এবং ফোলা ও ব্যথার উপশম হয়। স্বাদে ও গুণে ভরপুর সজিনা বাণিজ্যিক ভিত্তিতে উৎপাদন করা লাভজনক। কারণ অন্যান্য সবজির মতো এর উৎপাদনে তেমন ঝুঁকি নেই এবং লাভজনক।