Friday, April 22, 2011

আমের মুকুলে ভরে গেছে আঙিনা


দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোর গ্রামগঞ্জে আমগাছ মুকুলে মুকুলে ভরে উঠেছে। সেই সঙ্গে বাতাসে ছড়াচ্ছে মুকুলের মৌ-মৌ গন্ধ। বাড়ির আনাচে-কানাচে এমন কোনো আমগাছ নেই যেখানে গাছে মুকুল দেখা যায় না। ম্যাংগো হুপার মুকুলের ক্ষতি না করলে এ বছর এ অঞ্চলে দেশীয় আমের ফলন ভালো হবে বলে আশা করা যায়। কিন্তু সামান্যতম সচেতনতার অভাবে এ এলাকার আম চাষিরা আমের বাম্পার ফলন থেকে বঞ্চিত হোন প্রতি বছর। অথচ সামান্য সচেতন হলেই আমরা আম উৎপাদনের সেই সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে আমের উৎপাদন বাড়ার পাশাপাশি পরিবারের পুষ্টি চাহিদা পূরণ করতে পারি। আরও পারি উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে বাণিজ্যিকভাবে আমের বাজারজাতকরণ ও পরিবারের আর্থিক উন্নয়ন ঘটাতে।

পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ও ফল বিশেষজ্ঞ ড. মাহবুব রব্বানী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, আম গাছের জেনেটিক বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এক বছর অন্তর অন্তর ফুল ও ফল ধারণ করে। অর্থাৎ এক বছর ফল ভালো হয় পরের বছর ফল কম হয়। গত বছর দক্ষিণাঞ্চলে আমের ছিল অফ-ইয়ার। গত বছর এ অঞ্চলে আমের ফলন ছিল না বললেই চলে। এ বছর দক্ষিণাঞ্চলে আমের অন-ইয়ার। যে কারণে এ বছর প্রতিটি আম গাছে মুকুল ধরেছে। ড. রব্বানী আরো বলেন, বর্তমানে প্রতি বছর আম গাছে যাতে আম ধরে সে জন্য চান্স সিডলিং এর মাধ্যমে উন্নত জাতের যেমন_ ফজলি, ল্যাংরা ও মোহন ভোগ প্রভৃতি আমের বাগান তৈরি হচ্ছে। এতে প্রতি বছরই মুকুল ও আম ধরে। বাউফল উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, দক্ষিণাঞ্চলের জেলাসমূহ বরিশাল, পটুয়াখালী, ভোলা, বরগুনা, পিরোজপুর ও ঝালকাঠীতে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে কেউ উন্নত জাতের আম বাগান তৈরি করে না। তবে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোতে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে উন্নত জাতের আমের বাগান তৈরি হয়। ভবিষ্যতে আবহাওয়া বিরূপ না হলে আমের বাম্পার ফলনই আশা করছি। এলাকার যেসব আম গাছে এখন মুকুল বের হচ্ছে অথচ ফোটেনি এমন গাছে প্রতি ১০ লিটার পানিতে ২ ছিপি (কর্ক) হারে রিফকর্ড / একতারা / ওস্তাদ / শিমবুস-এর যে কোনো একটির সঙ্গে প্রতি ১০ লিটার পানিতে ৪০ থেকে ৪৫ গ্রাম যে কোনো ধরনের ছত্রাক নাশক যেমন থিয়োভিট / রনোভিট/ এগ্রোভিট / নয়িন ইত্যাদি স্প্রে করা যেতে পারে। এরপর যখন আমের মুকুল ফুটে তা মোটর দানার আকার ধারণ করবে; তখন আমের অ্যানথার্ক নোজ বা কালো দাগ ধরা রোধে প্রতি ১০ লিটার পানিতে ১০ মিলি লিটার হারে ফলিকুর বা স্টিল্ট প্রয়োগ করা যেতে পারে। অবশেষে আম পাকার ঠিক আগে এক ধরনের মাছির আক্রমণে আমের গায়ে ছিদ্র দেখা যায়। আর ওই ছিদ্রে ওই সব মাছি ডিম পেড়ে যায়। আর তা থেকে এক ধরনের পোকা জন্মে। ওই পোকার আক্রমণে আম ঝরে পড়ে। ওই ঝরে পড়া রোধে আবার প্রতি ১০ লিটার পানিতে ২ ছিপি (কর্ক) হারে রিফকর্ড / একতারা / ওস্তাদ / শিমবুস-এর যে কোনো একটি স্প্রে করতে হবে। আমচাষি ভাইয়েরা যদি উপরি বর্ণিত পদ্ধতি মেনে চলেন তাহলে আমের বাম্পার ফলন নিশ্চিত সম্ভব হবে।