খামারের হাঁসগুলোকে খাবার দিচ্ছেন শামসুল আলম
সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার উত্তর-পশ্চিম এলাকা পুরোটাই হাওরবেষ্টিত। গত বোরো মৌসুমে ওই এলাকার চারটি হাওরের ফসল রক্ষায় ছিল একটি বেড়িবাঁধ। প্রকৃতির কৃপায় বাঁধ টিকলে চার হাওরের বোরো রক্ষা পায়। কিন্তু এবার আর শেষরক্ষা হলো না। অন্যান্য হাওরের মতো বাঁধ ভেঙে ফসলডুবির ঘটনা ঘটে এখানেও। ভবিষ্যতের চিন্তায় অস্থির হয়ে ওঠে হাওরপারের কৃষক। এর মধ্যেও ব্যতিক্রম আছে। শামসুল আলম (৩৫) নামের এক কৃষক ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় ব্রতী হলেন। যে বৈরী প্রকৃতি তাঁর ধানের গোলা শূন্য করেছে, সেই প্রকৃতিকে উপজীব্য করে ধানশূন্য গোলায় হাঁসপালন শুরু করলেন তিনি।
ফসলডুবির পর টানা দুই মাসের চেষ্টায় শামসুল তাঁর হাঁসের ঝাঁকে সংখ্যা বাড়িয়ে এক হাজার পূর্ণ করলেন। শুধু দেখভাল করার মধ্য দিয়ে হাওরের জল-প্রকৃতিতে বেড়ে উঠছে হাঁস। কার্তিক মাস থেকে এক হাজার হাঁস তিন মাসে অন্তত ৭০০-৭৫০টি ডিম দেবে। পরে পুরো হাঁসের ঝাঁকে বিক্রি করে ফসলডুবির আর্থিক ক্ষতি পুষিয়ে, বোরো রোপণের পুঁজি সংগ্রহ হবে। এতে কোনো ধারদেনারও দরকার পড়বে না। যে পানি কেড়ে নিল ধান, সেই পানিই যেন শামসুলকে দিল স্বচ্ছলতার ‘নিদান’।
শামসুল আলমের বাবা আবদুল বশির মারা গেছেন প্রায় ১০ বছর আগে। ধান চাষ ছাড়া গৃহস্থ পরিবারের ছেলে হিসেবে বাড়তি কিছু শিক্ষা তিনি ছেলে শামসুলকে জীবদ্দশায় দিয়ে গিয়েছিলেন। প্রয়াত বাবার কথা স্মরণ করে ফসলহারা শামসুল ভাবলেন, যে প্রকৃতি ফসল কেড়ে নিয়েছে, সেই প্রকৃতিকে অবলম্বন করে হাঁস পালন করবেন। যৌথ পরিবারের তিন ভাইকে সঙ্গে নিয়ে নেমে পড়লেন ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায়। একটি ব্যাংক থেকে ছয় মাসের জন্য কিছু টাকা ঋণ নিয়ে গোয়ালঘরে পুষতে শুরু করলেন হাঁস। ৫০ থেকে ১০০ এভাবে শুরু। পর্যায়ক্রমে তিন দিন বয়সী হাঁসের ছানা কিনে এক হাজার পূর্ণ করেন শামসুল।
হাঁসের ঝাঁকে খাবার দেওয়ার সময় শামসুল জানান, প্রতিটি হাঁসের ছানা ৩৩ টাকা করে কেনা। আর তিন মাস পর প্রতিটির দাম পড়বে ২০০ টাকার বেশি। মাঝখানে লাভ হিসেবে তিন মাস পাওয়া যাবে ডিম। এ লাভ থেকে দেনা শোধ করে আগামী মৌসুমে বোরো ফলানোর পুঁজি হয়ে গেল।
হাঁস বেশি খায়—এ ভয়ে গৃহস্থরা হাঁস পালতে সাহস পান না বলে জানান শামসুল। গেল বার ফসলডুবির পর প্রকৃতি তাঁদের বেকার করে দেয়। তখন অনেকটা জেদের বশে হাঁসপালন শুরু করেন। জেদ কার সঙ্গে? প্রশ্ন শুনে সহাস্যে শামসুল বলেন, ‘যে পানিতে ধান নিল, হেই পানিই তো হাঁস পালার সুযোগ করি দিল...!
শামসুলের প্রতিবেশী শিবপুরের ধীরেন্দ্র বিশ্বাস জানান, গৃহস্থ পরিবারের কোনো সদস্যের সঙ্গে সাক্ষাৎ হলে সাধারণত ফসলাদি নিয়েই কথা হয়। কিন্তু শামসুলের সঙ্গে কারও সাক্ষাৎ হলে কুশলাদি বিনিময়ের পর পরই ‘হাঁসের খবর কিতা...?’ বলে জানতে চান অনেকে।
ফসল হারিয়ে একজন শামসুলের হাঁসপালনের এ উদ্যোগ ঘুরে দাঁড়ানোর অনন্য একটি চেষ্টা বলে অভিহিত করেন সিলেট কৃষক কল্যাণ সংস্থার আহ্বায়ক আবদুল হান্নান আনসারী। তাঁর মতে, হাওরাঞ্চলে বর্ষার এ সময়টা হচ্ছে অলস সময়। কিন্তু এবারকার চিত্র ভিন্ন। ফসলডুবির পর কৃষক পরিবারে সেই আরাম-আয়েশ আর নেই। হাওরে হাঁসপালন প্রতি গৃহস্থ পরিবারেই বিচ্ছিন্নভাবে দেখা যায়। হাওরপারের মানুষের এ উদ্যোগ, এই শিক্ষা কোনো দপ্তর দেয়নি, প্রকৃতি থেকে অর্জিত।
তথ্য সূত্রঃ প্রথম আলো, তারিখ: ২২-১০-২০১০
শামসুল আলমের বাবা আবদুল বশির মারা গেছেন প্রায় ১০ বছর আগে। ধান চাষ ছাড়া গৃহস্থ পরিবারের ছেলে হিসেবে বাড়তি কিছু শিক্ষা তিনি ছেলে শামসুলকে জীবদ্দশায় দিয়ে গিয়েছিলেন। প্রয়াত বাবার কথা স্মরণ করে ফসলহারা শামসুল ভাবলেন, যে প্রকৃতি ফসল কেড়ে নিয়েছে, সেই প্রকৃতিকে অবলম্বন করে হাঁস পালন করবেন। যৌথ পরিবারের তিন ভাইকে সঙ্গে নিয়ে নেমে পড়লেন ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায়। একটি ব্যাংক থেকে ছয় মাসের জন্য কিছু টাকা ঋণ নিয়ে গোয়ালঘরে পুষতে শুরু করলেন হাঁস। ৫০ থেকে ১০০ এভাবে শুরু। পর্যায়ক্রমে তিন দিন বয়সী হাঁসের ছানা কিনে এক হাজার পূর্ণ করেন শামসুল।
হাঁসের ঝাঁকে খাবার দেওয়ার সময় শামসুল জানান, প্রতিটি হাঁসের ছানা ৩৩ টাকা করে কেনা। আর তিন মাস পর প্রতিটির দাম পড়বে ২০০ টাকার বেশি। মাঝখানে লাভ হিসেবে তিন মাস পাওয়া যাবে ডিম। এ লাভ থেকে দেনা শোধ করে আগামী মৌসুমে বোরো ফলানোর পুঁজি হয়ে গেল।
হাঁস বেশি খায়—এ ভয়ে গৃহস্থরা হাঁস পালতে সাহস পান না বলে জানান শামসুল। গেল বার ফসলডুবির পর প্রকৃতি তাঁদের বেকার করে দেয়। তখন অনেকটা জেদের বশে হাঁসপালন শুরু করেন। জেদ কার সঙ্গে? প্রশ্ন শুনে সহাস্যে শামসুল বলেন, ‘যে পানিতে ধান নিল, হেই পানিই তো হাঁস পালার সুযোগ করি দিল...!
শামসুলের প্রতিবেশী শিবপুরের ধীরেন্দ্র বিশ্বাস জানান, গৃহস্থ পরিবারের কোনো সদস্যের সঙ্গে সাক্ষাৎ হলে সাধারণত ফসলাদি নিয়েই কথা হয়। কিন্তু শামসুলের সঙ্গে কারও সাক্ষাৎ হলে কুশলাদি বিনিময়ের পর পরই ‘হাঁসের খবর কিতা...?’ বলে জানতে চান অনেকে।
ফসল হারিয়ে একজন শামসুলের হাঁসপালনের এ উদ্যোগ ঘুরে দাঁড়ানোর অনন্য একটি চেষ্টা বলে অভিহিত করেন সিলেট কৃষক কল্যাণ সংস্থার আহ্বায়ক আবদুল হান্নান আনসারী। তাঁর মতে, হাওরাঞ্চলে বর্ষার এ সময়টা হচ্ছে অলস সময়। কিন্তু এবারকার চিত্র ভিন্ন। ফসলডুবির পর কৃষক পরিবারে সেই আরাম-আয়েশ আর নেই। হাওরে হাঁসপালন প্রতি গৃহস্থ পরিবারেই বিচ্ছিন্নভাবে দেখা যায়। হাওরপারের মানুষের এ উদ্যোগ, এই শিক্ষা কোনো দপ্তর দেয়নি, প্রকৃতি থেকে অর্জিত।
তথ্য সূত্রঃ প্রথম আলো, তারিখ: ২২-১০-২০১০