আমড়া একটি সুপরিচিত দেশীয় ফল। আমড়াতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-সি রয়েছে। ভিটামিন-সি দেহের জন্য অতি প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান। এর অভাবে স্কার্ভি রোগ হয়। এ রোগে দাঁতের মাড়ি ফুলে যায়, দাঁতের গোড়া থেকে পুঁজ ও রক্ত পড়ে, মাড়িতে প্রচণ্ড ব্যথা হয়, খাবার খেতে অসুবিধা হয়, অকালে দাঁত ঝরে যায়। বিভিন্ন প্রকার ভাইরাস ইনফেকশন, সর্দি, কাশি ও ইনফ্লুয়েঞ্জায় ভিটামন-সি অত্যন্ত উপকারী। ক্যালসিয়ামের অভাবে মাংসপেশিতে খিঁচুনি হয়, শিশুদের দৈহিক গঠন দুর্বল হয়। আমড়ায় প্রচুর আয়রন থাকায় রক্ত স্বল্পতার অভাব পূরণ হয়। আমড়ার পুষ্টিগুণ ছাড়াও কিছু ভেষজগুণ রয়েছে। আমড়ায় রয়েছে অনেক পুষ্টিগুণ, যা প্রায় তিনটি আপেলের পুষ্টির সমান। আপেলের চেয়ে আমড়ায় প্রোটিন, ক্যালসিয়াম ও আয়রনের পরিমাণ বেশি রয়েছে। পুষ্টি বিজ্ঞানীদের মতে, প্রতি ১০০ গ্রাম খাদ্যোপযোগী আমড়ায় যেসব পুষ্টি উপাদান রয়েছে তা হলো_ শর্করা ১৫ গ্রাম, আমিষ ১.১ গ্রাম, চর্বি ০.১ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ৫৫ মিলিগ্রাম, আয়রন ৩.৯ মিলিগ্রাম, ক্যারোটিন ৮০০ মাইক্রোগ্রাম, ভিটামিন-বি ১০.২৮ মিলিগ্রাম, ভিটামিন-বি ২০.০৪ মিলিগ্রাম, ভিটামিন-সি ৯২ মিলিগ্রাম, অন্য খনিজ পদার্থ ০.৬ গ্রাম ও খাদ্যশক্তি ৬৬ কিলোক্যালরি।
এছাড়াও আমড়া পিত্তনাশক ও কফনাশক। আমড়া খেলে অরুচিভাব দূর হয়। মুখে রুচি ফিরে আসে, ক্ষুধা বৃদ্ধি করে। পাশাপাশি আমড়া বদহজম ও কোষ্ঠকাঠিন্য রোধে উপকারী। কাঁচা আমড়া গুঁড়ো মরিচ, লবণ ও মসলা দিয়ে খাওয়া হয়, যা অত্যন্ত মুখরোচক এবং এতে ভিটামিন-সি পুরোপুরি পাওয়া যায়। আমড়া খেলে পাকস্থলি থাকবে সুস্থ। আমড়ায় থাকা ভিটামিন-সি রক্ত জমাট বাঁধার ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং খাদ্যে উপস্থিত ভিটামিন 'এ' এবং 'ই'-এর সঙ্গে যুক্ত হয়ে অ্যান্টি অঙ্েিডন্ট হিসেবে কাজ করে, যা ক্যান্সারসহ নানা ঘাত-প্রতিঘাত থেকে দেহকে রক্ষা করে।
আসুন জেনে নেই আমড়া চাষের নিয়মঃ
বারমাসী আমড়া (Hog Pulm) : টবে অতি সহজেই বারমাসী আমড়ার চাষ করা যায়। একটি কলমের চারা থেকে মাত্র এক বৎসরের মধ্যেই ফল পাওয়া সম্ভব । আমড়ার চাষ পদ্ধতিও খুব সহজ । বীজ থেকেও চারা করে টবে লাগানো যায় । এক্ষেত্রে ২-৩ বছরের মধ্যে ফল পাওয়া যায় । টবে লাগানোর জন্য কলমের চারাই বেশী ভাল।
কিভাবে গাছ লাগাবেনঃ ২ ভাগ বেলে-দোঁআশ মাটি, ১ভাগ গোবর,৫০ গ্রাম টি,এস,পি, ৫০ গ্রাম পটাশ, ২৫০ গ্রাম হাড়ের গুড়া এবং ১ কেজি কাঠের ছাই মিশ্রিত করে একটি ২০ ইঞ্চি পরিমান বড় টবে ভরে পানি দিয়ে রেখে দিতে হবে কমপক্ষে ১০ দিন । তারপর মাটি খুঁচিয়ে রেখে দিতে হবে আরও ৪-৫ দিন । মাটি ঝুর ঝুরে হলে উক্ত টবে একটি ভাল বারমাসী কলমের চারা লাগাতে হবে । তবে আমড়া গাছের চারা বৃষ্টির দিনে না লাগানো ভাল । বিশেষ করে বর্ষাকালে আমড়ার চারা না লাগিয়ে বর্ষার শেষে লাগানো উত্তম ।
রোগজীবাণু ও পোকামাকড়ঃ আমড়াগাছে প্রায়ই একধরনের ছোট মাকড়সা আক্রমণ করে যা খালি চোখে দেখা যায় না ।। এর জন্য মাঝে মাঝে কীটনাশক ব্যবহারের প্রয়োজন হতে পারে । তা ছাড়াও ফল যখন ছোট থাকে তখন মাছি পোকার আক্রমন হতে পারে । এজন্য বিষ টোপ ব্যবহার করা ভাল। বর্ষাকালে ছত্রাক আক্রান্ত যাতে না করতে পারে সেজন্য বর্ষার পূর্বেই কয়েকবার ভাল ছত্রাকনাশক ব্যবহার করা উচিৎ ।