কবুতর পালন ও চিকিৎসা
প্রাচীনকালে কবুতর পালন করা হতো চিঠি আদান প্রদানেরকাজে।শোনা যায় প্রাচীনকালে রাজা বাদশাহ তাঁদের বিভিন্ন ধরনেরবার্তা প্রেবণের জন্য বেছে নিতেন কবুতরকে।এছাড়া, সারা পৃথিবী জুড়ে কবুতরকে ধরা হয় শান্তির দূতহিসেবে।এই কারণে,বিভিন্ন গঠনমূলককাজে ধর্মাধর্ম নির্বিশেষে কবুতরকে খাঁচামুক্ত করে উদ্বোধন করা হয়। আমাদের দেশে বিভিন্ন গৃহপালিত পাখির মধ্যে কবুতর সর্বাধিকজনপ্রিয়।কারণ, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কবুতর পালন করা হয়- এর বাহ্যিকসৌন্দর্য্যগত দিকগুলোর কারণে।
সবচেয়ে বড় কথা, কবুতর পালন করারজন্য অতিরিক্ত বা বাহুল্য কোন খরচ হয় না।কবুতরকে সহজেই পোষ মানানো যায়।বাড়ির যেকোন কোণবা আঙিনা অথবা বাড়ির ছাদ কিংবা কার্নিশের মত ছোট বা অল্প জায়গাতে ও কবুতর পালন করাযায়।এমনকি ছাদের সাথে ঝুড়ি ঝুলিয়ে ও কবুতর পালন করাযায়।এইকারণে, শহরে কী গ্রামে অনেক বাড়িতেই কবুতর পালন করাযায়।
কবুতরেরমাংস অত্যন্ত সুস্বাদু এবং বলকারক বিশেষজ্ঞরা বলেন, কবুতরের মাংসেসাধারণ অন্যান্য পাখির মাংসের চাইতে প্রোটিনের পরিমান বেশি।ফলে আমিষেরপাশাপাশি প্রটিনের বাড়তি চাহিদা পূবণের জন্য ও কবুতরের মাংস খাওয়া হয়েথাকে।বানিজ্যিকভাবে কবুতর পালন করে অনেকেই অল্প সময়ে এটাকে লাভজনক ব্যবসা হিসেবে দাঁড়া করাতে পেরেছেন।কবুতর সাধারণভাবে জোড়ায় বেঁধে বাসকরে।প্রতি জোড়ায় একটি পুরুষ এবং একটি স্ত্রী কবুতরথাকে।এরা ১২ থেকে ১৫ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকে।যতদিন বেঁচেথাকে_ ততদিন এরা ডিমের মাধ্যমে বাচ্চা প্রজনন করেথাকে।ডিম পাড়ার পর স্ত্রী ও পুরুষ উভয় কবুতরই পর্যায়ক্রমে উক্তডিমে তা দিয়ে থাকে।কবুতরের কোন জোড়া হঠাৎ ভেঙে গেলে সেই জোড়া তৈরি করতেকিছুটা বেগ পেতে হয়।নতুন জোড়া তৈরি করার জন্য স্ত্রী ও পুরুষ কবুতরকে একঘরেকিছুদিন রাখতে হয়।
কবুতর পালনের বিভিন্ন সুবিধাসমুহ
কবুতর পালন করলে অসুবিধার চেয়ে সুবিধার পরিমাণবেশি।পরবর্তীতে কবুতর পালনের বিভিন্ন সুবিধাসমূহ উল্লেখ করাহলো।
(১) সাধারনত একটি ভাল জতের কবুতরবছরে ১২ জোড়া ডিম প্রদানে সক্ষম হয়ে থাকে।এই ডিম গুলোর প্রায় প্রতিটি থেকেই বাচ্চাপাওয়া যায়।এই বাচ্চা পরবর্তী ৪ সপ্তাহের মধ্যেই খাওয়া বা বিক্রিরউপযোগী হয়।
(২)গৃহপালিত অন্যান্য পাখির মধ্যে কবুতরকে পোষ মানানো বা লালন করা যায়।
(৩) খুবই অল্প জায়গায় কবুতর লালনপালন করা যায়।এমনকি ঝোলানো ঝুড়িতেও কবুতর পালন করা সম্ভব।লালন পালনে কমজায়গা লাগে বলে কবুতর পোষায় খরচের পরিমাণ একেবারেই কম।
(৪) বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কবুতর নিজেরখাবার নিজেই খুঁজে নিয়ে থাকে।এই কারণে কবুতরের খাবারের জন্য বাড়তি যত্ন বা খরচ খুব একটাহয় না বললেই চলে।
(৫)কবুতরের থাকার জায়গার জন্য বাড়তি যত্নের প্রয়োজন হয় না।বাড়িরআঙিনা, বা ছাদের ওপর কাঠের ঘর তৈরি করে অনায়াসেই কবুতর পালন করাযায়।প্রমাণ সাইজের ঝুড়িতে করে ও কবুতর পালন করাযায়।
(৬) একটি পূণাঙ্গ বয়সের কবুতর ডিমদেবার উপযোগী হতে ৫ থেকে ৬ মাস মসয় লাগে।এই অল্প সময় অতিক্রান্ত হবার পর থেকেই কবুতরবছরে প্রায় ১২ জোড়া ডিম প্রদানে সক্ষম।২৬ থেকে ২৮ দিন বয়সেই কবুতরের বাচ্চা খাবারউপযোগী হয়ে থাকে বা এই বাচ্চাকে বাজারজাত করা যায়।সাধারণত কবুতরেরবাচ্চা রুগীর পথ্য হিসেবেও অনেকে বেছে নেন।
(৭) কবুতরের ডিম থেকে মাত্র ১৮ দিনেইবাচ্চা সাধারণ নিয়মে ফুটে থাকে।এই বাচ্চা আবার পরবর্তী ৫ থেকে ৬ মাস পরে নিজেরাই ডিমপ্রদান শুরু করে।ফলে কবুতর বংশ পরম্পরায় প্রাকৃতিক নিয়মে নিজেরাই বাড়াতেথাকে নিজেদের সংখ্যা।
(৮)কবুতরের মাংস প্রচুর চাহিদা রয়েছে।কারণ, কবুতরের মাংস খুবইসুস্বাদু ও বলকারক।তাছাড়া, বাজারের অন্যান্য মাংসের যোগান থেকে কবুতরকিছুটা সস্তাতে ও পাওয়া যায়।
একটি খুবভালো প্রজাতির কবুতর লালন করলে পরবর্তী ১ বছরের মধ্যে সেই জোড়া থেকে কয়েক জোড়াকবুতর পাওয়া খুব বেশি আর্শ্চযজনক বিষয় নয়।এই কবুতরকে একটি লাভজনক ব্যবসা হিসেবে ধরাযেতে পারে।কারণ, কবুতর লালন-পালনের খরচ খুব একটা নেই।এমনকি কবুতরের রোগব্যাধি কম হয়।কবুতরের থাকার জায়গা নির্বাচনে ও অতিরিক্ত যত্নের প্রয়োজনহয় না।এই কারণে ব্যবসায়িক ভিত্তিতে কবুতর পালন অবশ্যইলাভজনক।
ধারাবাহিকভাবে কবুতর তার বংশবৃদ্ধি করে বলে অনেকেই আজকাল কবুতর পালনের দিকে ঝুঁকেপড়েছেন।মুরগির মাংসের বিকল্প হিসেবে কিংবা অতিথি পাখির বিকল্পহিসেবে অনেকেই কবুতরের মাংস বেছে নিয়ে থাকেন।
লেখক: আবদুল্লাহ আল মামুন, উপ-পরিচালক, বংলাদেশ কৃষি গবেষনা ইনস্টিটিউট।