আমাদের দেশে একটি বিপুল সম্ভাবনাময় খাত হলো নার্সারি সেক্টর, যেখানে রয়েছে আয়ের ব্যাপক সুযোগ। একটি নার্সারি করে আপনি যেমন আয়ের সুযোগ সৃষ্টি করতে পারেন, তেমনি এখান থেকে রয়েছে আপনার বনায়ন সৃষ্টির পেছনে অবদান। একদিকে আয়ের সুযোগ, অন্যদিকে সামাজিক কার্যক্রম। হতে পারেন একজন সফল চারা উৎপাদনকারী ও সমাজের জন্য নিদর্শন। বিপুল সম্ভবনাময় এ খাত থেকে অনেকেই সৃষ্টি করেছেন আয়ের পথ। আপনিও শুরু করতে পারেন আয়ের একটি পথ হিসেবে। এটি হতে পারে নির্দিষ্ট সময়ে বা অবসরে বাড়তি আয়ের একটি সুযোগ হিসেবে। নার্সারি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত এমন দুই ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলেছিলাম যারা এ সেক্টরে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। এবং সফলভাবে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। তাদের ব্যবসায়িক সফলতার পেছনে রয়েছে একনিষ্ঠতা, আত্মসচেতনতা। দীর্ঘদিন থেকে আমাদের দেশে ব্যাপক হারে বৃক্ষ নিধন হচ্ছিল। পরবর্তী সময়ে সরকারি ও বেসরকারি সংগঠনের সচেতনতার ফলে আবারো বনায়ন কার্যক্রম শুরম্ন হয়েছে। যাতে করে চাহিদা সৃষ্টি হয়েছে চারা গাছের। এ সুযোগ কাজে লাগাতে পারে যে কেউ। শহরের চেয়ে গ্রামের সুযোগটা এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি। গ্রামে অনেক পতিত জায়গা পড়ে থাকে, যেখানে অনায়াসেই প্রতিষ্ঠা করা যায় একটি সফল নার্সারি। ব্যাপক চাহিদার ওপর ভিত্তি করে ইতিমধ্যে অনেক নার্সারি গড়ে উঠেছে, যেগুলো সফলতার সঙ্গে ব্যবসা করছে। আপনিও ইচ্ছা করলে করতে পারেন একটি নার্সারি, যেখানে আপনার ইচ্ছা, সামাজিক কার্যক্রম, আয়-ব্যয় ও শখ জড়িত থাকবে। আর এটি হবে সমাজের জন্য একটি নিদর্শনস্বরূপ, যা সফলতারই একটি দিক হিসেবে বিবেচিত হবে। তাই আপনিও অতি সহজে এটি করতে পারেন।
প্রথমেই কথা বলেছিলাম নার্সারির মালিক প্রবীণ কৃষিবিদ এম এ সামাদের সঙ্গে, যিনি ১৯৭৮ সালে কৃষির ডিরেক্টর (প্রডাকশন) পদ থেকে অবসর নেন। এবং বাংলাদেশ বনসাই সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতিসহ অনেক জায়গায় দায়িত্ব পালন করেন।
এ বিষয়ে আরো কথা হয় কৃষি খামারবাড়ির ভেতরে অবস্থিত ভোসড নার্সারির আজিজুল হকের সঙ্গে। তিনি তার নার্সারি প্রতিষ্ঠার বিষয়গুলো তুলে ধরেন।
আজিজুল হক বলেন, রিটায়ার করার পর এ নার্সারি শুরু করি কৃষি ইন্সটিটিউট চত্বরের ভেতর। এখানে পাচটি উদ্যান রয়েছে যার ভেতরে আমার একটি। আমি দাবি করতে পারি আমার নার্সারি সবচেয়ে সফল কারণ বিক্রি এবং প্রাপ্যতার দিক থেকে আমার নার্সারি সবচেয়ে এগিয়ে। গত বছরের অক্টোবরে আমি এটি শুরম্ন করি প্রায় দুই লাখ টাকা বিনিয়োগ করে। মূলত ফলের চারাই আমরা বেশি বিক্রি করি। এছাড়া আমাদের কাছে রয়েছে ফুলের চারা, সবজি বীজ, ফুলের বীজ, সার, কীটনাশক। ফলের চারা আছে প্রায় ৪০ প্রকারের, ফুল রয়েছে প্রায় ৩৬ প্রকারের। এছাড়া আমরা মাটির টব, সার, পাইকারি ও খুচরা বিক্রি করে থাকি। আমরা দিনে পাচ-ছয় হাজার টাকা বিক্রি করি এবং লাভ হয় প্রায় দেড় থেকে দুই হাজার টাকা। নির্দিষ্ট কিছু সময়ে বিক্রি বেশি হয়। এছাড়া ঢাকা সিটির বিভিন্ন ফুটপাথে রয়েছে রকমারি ফুলের চারা বিক্রেতা, যারা খুব কম টাকা বিনিয়োগ করে এ ব্যবসা করছেন। তারা উৎপাদন না করলেও বিভিন্ন নার্সারি থেকে সংগ্রহ করে বিক্রি করেন। এতেও রয়েছে ভালো লাভবান হওয়ার সুযোগ। যাতে জড়িত রয়েছে অনেক বিক্রেতা। এমনই একজন ফুটপাথের বিক্রেতা আল-আমিন জানালেন তার ব্যবসার কথা। আমি ঢাকা কলেজের সামনের ফুটপাথে চারা বিক্রি করি। এতে আমার বিনিয়োগ রয়েছে ১০ হাজার টাকা যা দিয়ে আমি প্রথম শুরু করি। বর্তমান জীবনযাপনের জন্য আমার অনেকটা চাহিদা পূরণ হচ্ছে এবং ভালো লাভবান হচ্ছি। নিজের একটা নার্সারি খোলার পরিকল্পনা রয়েছে।
এভাবেই নার্সারির ওপরই ব্যবসা পরিচালনা করছে সারা দেশের প্রায় হাজার খানেক মানুষ। যারা এ পেশাতেই তৈরি করেছে তাদের ক্যারিয়ার। স্বল্প বিনিয়োগে অধিক লাভবান হওয়ার সুযোগ রয়েছে এ পেশায়। সুযোগ-সুবিধা থাকলে আপনিও শুরু করতে পারেন।
তথ্যসূত্র : দি-এডিটর