ওলকপির উৎপাদন প্রযুক্তি

Sunday, August 8, 2010


ওলকপি
কপিগোত্রের এক অন্যতম সবজি হল ওলকপি। যদিও ফুলকপি ও বাঁধাকপির মত ওলকপি অত জনপ্রিয় না, তবুও শীত মৌসুমে এ দেশে কোন কোন এলাকায় বেশ চাষ হয়। দু’রকমের ওলকপি দেখা যায়। এক ধরনের ওলকপির রঙ হালকা বা সাদাটে সবুজ, অন্যটার রঙ বেগুনি সবুজ। তবে হালকা সবুজ রঙের ওলকপিই আমাদের দেশে বেশি দেখা যায়।

পুষ্টিমূল্য
ওলকপির প্রতি ১০০ গ্রাম ভক্ষনীয় অংশে যে পরিমাণে বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান আছে তা হল- জলীয় অংশ ৯২.৭ গ্রাম, আমিষ ১.১ গ্রাম, চর্বি ০.২ গ্রাম, বিভিন্ন খনিজ লবণ ০.৭ গ্রাম, শর্করা/শ্বেতসার ৩.৮ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ২০ মিগ্রা, ম্যাগনেসিয়াম ১৮ মিগ্রা, ভিটামিন এ ৩৬ আ.এ, থায়ামিন ০.০৫ মিগ্রা, ভিটামিন সি ৮৫ মিগ্রা, সালফার ১৪৩ মিগ্রা, সোডিয়াম ১১২ মিগ্রা ইত্যাদি।

উপযুক্ত জমি ও মাটি
ওলকপি চাষের জন্য সুনিকাশযুক্ত উঁচু বা মাঝারি উঁচু জমির উর্বর দোয়াশ ও এটেল মাটি সবচেয়ে ভাল।

জাত পরিচিতি
হালকা সবুজ রঙের জাত আর্লি হোয়াইট ভিয়েনা এবং বেগুনী রঙের জাত আর্লি পার্পল ভিয়েনা প্রসিদ্ধ। এছাড়া নিম্নলিখিত জাতসমূহ এখন এদেশে পাওয়া যাচ্ছে-
অনুপম- মাঝারি আকৃতির গাঢ় সবুজ রঙের ওলকপি, মধ্য আশ্বিন থেকে মধ্য অগ্রহায়ণের মধ্যে বীজ বপন করলে বপনের ৮৫-৯০ দিন পর থেকে কপি তোলা শুরু করা যায়। হেক্টর প্রতি ফলন ৩৫-৪০ টন।
আর্লি মল্লিকা এফ১- বড় আকৃতির হালকা সবুজ রঙের ওলকপি, প্রতিটি কপির ওজন প্রায় ৩০০ গ্রাম, আঁশবিহীন। চারা রোপণের পর মাত্র ৩৫ দিন পর থেকেই কপি খাওয়ার মত হয়ে যায়। ভাদ্র থেকে মাঘ মাসের মধ্যে বীজ বপন করতে হয়। হেক্টর প্রতি ফলন ৫০-৬০ টন।
এক্সপ্রেস মল্লিকা এফ১- চ্যাপ্টা গোলাকার, আঁশবিহীন, ফলন প্রতি হেক্টরে ৫০-৬০ টন। ভাদ্র- পৌষ মাসে বীজ বপন করতে হয়।
বাম্পার হারভেষ্ট এফ১- ভাদ্র থেকে মাঘ মাসের মধ্যে যে কোন সময় বীজ বপন করা যায়। বীজ বপনের ৩৫ দিন পর থেকেই কপি উঠতে শুরু করে। কপি বেশ বড় আকারের। হেক্টর প্রতি ফলন ৫০-৬০ টন।
আর্লি বল এফ১- ভাদ্র থেকে পৌষের মধ্যে যে কোন সময় বীজ বপন করা যায়। বীজ বপনের ৪০ দিন পর থেকেই কপি উঠতে শুরু করে। কপি বেশ বড় আকারের, প্রতিটির ওজন ৩০০ গ্রাম। হেক্টর প্রতি ফলন ৫০-৬০ টন।
ইউনিক বল এফ১- ভাদ্র থেকে পৌষের মধ্যে যে কোন সময় বীজ বপন করা যায়। বীজ বপনের ৪০-৪৫ দিন পর থেকেই কপি উঠতে শুরু করে। কপি বেশ বড় আকারের, চ্যাপ্টা, জমিতে কিছুদিন রেখে ধীরে ধীরে বিক্রি করা যায়। হেক্টর প্রতি ফলন ৫০-৬০ টন।
ক্রানি- এফ১- আশ্বিন থেকে কার্তিক মাসের মধ্যে বীজ বপন করা যায়। বীজ বপনের ৬০ দিন পর থেকেই কপি উঠতে শুরু করে। কপি হেক্টর প্রতি ফলন ৬০ টন। কপির ওজন ৩০০-৪০০ গ্রাম, আকারে চ্যাপ্টা।
নিমাজিন এফ১- আশ্বিন থেকে কার্তিক মাসের মধ্যে বীজ বপন করা যায়। বীজ বপনের ৬০ দিন পর থেকেই কপি উঠতে শুরু করে। কপি হেক্টর প্রতি ফলন ৭০ টন। কপির ওজন ৩০০-৪০০ গ্রাম, আকারে চ্যাপ্টা।

বীজ বোনার সময়
ভাদ্র থেকে কার্তিক।

বীজের পরিমাণ

প্রতি শতকে ৩.২ গ্রাম, একর প্রতি ৩২৫ গ্রাম, হেক্টর প্রতি ৮০০ গ্রাম বীজ লাগে।

চারা তৈরি

ওলকপির চারা বীজতলায় উৎপাদন করে জমিতে লাগানো হয়। বীজতলার আকার ১ মিটার পাশে ও লম্বায় ৩ মিটার হওয়া উচিত। সম পরিমাণ বালি, মাটি ও জৈবসার মিশিয়ে ঝুরাঝুরা করে বীজতলা তৈরি করতে হয়। বীজতলায় ছিটিয়ে বা সারি করে বীজ বুনতে হয়। পরে চারা ঠিকমত না বাড়লে প্রতি বীজতলায় (৩ বর্গমিটার) প্রায় ১০০ গ্রাম পরিমাণ ইউরিয়া সার ছিটিয়ে দেয়া ভাল।

চারা রোপণ
চারায় ৫-৬টি পাতা হলেই তা রোপণের উপযুক্ত হয়। সাধারণত ৩০-৩৫ দিন বয়সের চারা রোপণ করা হয়। সারি থেকে সারির দূরত্ব দেয়া লাগে ৩০ সেন্টিমিটার বা ১ ফুট এবং প্রতি সারিতে চারা থেকে চারার দূরত্ব দিতে হবে ২২ সেন্টিমিটার বা ৯ ইঞ্চি। চারা রোপণের সময় সতর্ক থাকতে হবে যেন শিকড় মুচড়ে বা বেঁকে না যায়। এতে চারার মাটিতে প্রতিষ্ঠা পেতে দেরী হয় ও বৃদ্ধি কমে যায়।

সারের মাত্রা
সারের নাম সারের পরিমাণ
প্রতি শতকে প্রতি হেক্টরে
ইউরিয়া ০.৮-১.০ কেজি ২০০-২৫০ কেজি
টি এস পি ০.৪-০.৬ কেজি ১০০-১৫০ কেজি
এমওপি ০.৪ কেজি ১০০ কেজি
জিপসাম ০.৭৫ কেজি ১৮৫ কেজি
জিংক সালফেট ২০ গ্রাম ৫ কেজি
গোবর ৬০-৮০ কেজি ১৫-২০ টন

সার প্রয়োগ পদ্ধতি
জমি তৈরির সময় ইউরিয়া বাদে অর্ধেক গোবর সার, অর্ধেক টিএসপি, অর্ধেক এমওপি এবং অন্যান্য সার প্রয়োগ করতে হবে। বাকি অর্ধেক গোবর সার চারা রোপণের ১ সপ্তাহ আগে মাদায় দিয়ে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে। এরপর চারা রোপণ করে সেচ দিতে হবে। ইউরিয়া এবং বাকি অর্ধেক টিএসপি এবং এমওপি সার সমান ২ কিসি-তে উপরি প্রয়োগ করতে হবে। প্রথম কিসি-র সার দিতে হবে চারা রোপণের ৮-১০ দিন পর, দ্বিতীয় কিসি-র সার দিতে হবে চারা রোপণের ২০-২৫ দিন পর।

সেচ ও আগাছা ব্যবস্থাপনা
ওলকপি চাষে প্রচুর পানি লাগে। সারির মাঝের মাটিতে উপরি সার দিয়ে সেই মাটি আলগা করে গাছের গোড়ায় টেনে দিলে নালা তৈরি হবে। সেই নালায় সেচ দিতে হবে। গাছ বড় না হওয়া পর্যন- জমির আগাছা পরিষ্কার করে রাখতে হবে।

পোকামাকড় ব্যবস্থাপনা
ওলকপির তেমন কোন পোকা মাকড় নেই। মাঝে মাঝে লেদা পোকা ও ঘোড়া পোকা পাতা খেয়ে নষ্ট করে। কাটুই পোকা লাগানো চারা কেটে দেয়। নাবিতে লাগানো হলে জাব পোকা ধরে। কোন কোন সময় মাস্টার্ড স’ ফ্লাই বা করাত মাছি এবং পাতার বিট্‌ল পাতার ক্ষতি করে। এত ফলন কমে যায়।

রোগ ব্যবস্থাপনা
ওলকপির পাতায় দাগ প্রধান সমস্যা। এছাড়া চারা ধ্বসা বা ড্যাম্পিং অফ, ক্লাব রুট বা গদাই মূল, মোজেইক, পাতার আগা পোড়া ইত্যাদি রোগও হয়ে থাকে।

ফসল তোলা ও ফলন
চারা রোপণের ৪০-৬০ দিন পর থেকেই জাত ভেদে ওলকপি তোলার উপযুক্ত হয়ে যায়। কচি থাকতেই তোলা উচিত। না হলে আঁশ হয়ে শক্ত হয়ে যায় ও স্বদ নষ্ট হয়ে যায়। জাত ভেদে প্রতি শতকে ১০০-১২০ কেজি এবং হেক্টরে ২৫-৩০ টন ফলন পাওয়া যায়। তবে ইদানীং হাইব্রিড জাতসমূহ আসাতে ফলন ৫০-৬০ টন পাওয়া সম্ভব।


তথ্যসূত্র : দি-এডিটর

মনের উঠোনে

সাম্প্রতিক সংযোজন

মোবাইল থেকে দেখুন

আমাদের দেশ এখন আপনার মুঠোফোনে, মোবাইল থেকে লগইন করুন আমাদের দেশ

দ র্শ না র্থী

দ র্শ না র্থী

free counters

কে কে অনলাইনে আছেন