পুষ্টি মূল্যঃ পুষ্টি মানের দিক থেকে বার্লি গমের চেয়ে উন্নত ।
ভেজজ গুনঃ
ব্যবহারঃ বার্লির অপর নাম যব। বার্লি কিছুটা লবনাক্ততা সহনশীল ফসল। বার্লি দিয়ে শিশুর খাদ্য, ওভালটিন, হরলিক্স প্রভৃতি সুস্বাদু খাদ্য তৈরি করা হয়।
উপযুক্ত জমি ও মাটিঃ
এদেশের বার্লির চাষ দীর্ঘদিন ধরে আসছে। সাধারণত চরাঞ্চলে অনুর্বর জমিতে স্বল্প ব্যয়ে এর চাষ করা হয়। পানি জমে না এমন বেলে দোআশ ও দোআশ মাটি বার্লি চাষের জন্য উপযুক্ত। জমিতে ‘জো’ আসার পর মাটির প্রকার ভেদে ৩-৪ টি আড়াআড়ি চাষ ও মই দিয়ে জমি তৈরি করতে হয়।
জাত পরিচিতিঃ
বার্লির জাত
বারি বার্লি-১: ১৯৮৮ সালে সিমিট থেকে এ জাতটি বাংলাদেশে আনা হয়। পরবর্তীতে বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে ১৯৯৪ সালে বারি বার্লি-১ নামে এ জাত অনুমোদন করা হয়। এ জাতের উচ্চতা মাঝারি, ৮৫-৯০ সেমি । পাতার রং গাঢ় সবুজ ও কান্ড শক্ত । গাছ সহজে নুয়ে পড়ে না । বীজ, শীর্ষ ৬ সারিতে অবস্থান করে । দানা খোসাযুক্ত । দানার রং সোনালী । হাজার দানার ওজন ৩৬-৩৮ গ্রাম । এ দেশের আবহাওয়ায় এর জীবনকাল ১০৮-১১২ দিন । এ জাতটিতে রোগ ও পোকার আক্রমন খুব কম। সেচ ছাড়া চাষ করলেও হেক্টর প্রতি ২.০-২.৫ টন ফলন পাওয়া যায়। তবে একটু সেচ প্রয়োগে ফলন বৃদ্ধি পায়।
বারি বার্লি-২: বারি বার্লি-২ জাতটি ১৯৯৪ সালে অনুমোদিত হয়। এ জাতের গাছ মাঝারি উচ্চতা সম্পন্ন । কান্ড শক্ত, ফলে সহজে হেলে পড়ে না । জাতটি গোঁড়া পচা ও ঝলসানো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন। দানা বড়। এ জাতটির হাজার বীজের ওজন ৩৫ -৩৮ গ্রাম এবং দানাতে ১২ -১৪% আমিষ থাকে। বারি বার্লি-২ সেচবিহীন চাষে হেক্টর প্রতি ২.০-২.৫ টন এবং একটি সেচ সহ চাষে ২.৫ -৩.০ টন ফলন দেয়।
বপনের সময়ঃ
মধ্য কার্তিক থেকে অগ্রহায়ণ মাস (নভেম্বর থেকে মধ্য ডিসেম্বর) পর্যন্ত বীজ বপন করা যায়।
বীজের হারঃ বার্লি ছিটিয়ে ও সারিতে বপন করা যায়। ছিটিয়ে হেক্টর প্রতি ১২০ কেজি এবং সারিতে বুনলে ১০০ কেজি বীজ প্রয়োজন হয়। সারিতে বুনলে ২ সারির মাঝে দূরত্ব ২০ -২৫ সেমি রাখতে হবে। লাঙ্গল দিয়ে ৩.৫ সেমি গভীর নালা টেনে তাতে বীজ বুনে মাটি দিয়ে ঢেকে দিতে হবে।
সার ব্যবস্থাপনাঃ
সাধারণত অনুর্বর জমিতে বার্লি চাষ করা হলেও সুপারিশমত সার প্রয়োগে এর ফলন বাড়ানো যায়। বার্লির জমিতে নিম্নরূপ হারে সার প্রয়োগ করা যায়। সারের নাম সারের পরিমান/শতকে সারের পরিমান / হেক্টর
ইউরিয়া ৬৮৮-৭৪৯ গ্রাম ১৭০ -১৮৫ কেজি
টিএসপি ৪৬৬-৫০৬ গ্রাম ১১৫ -১২৫ কেজি
এমওপি ৩০৪-৩৪৪ গ্রাম ৭৫ -৮৫ কেজি
সার প্রয়োগ পদ্ধতিঃ
সেচের ব্যবস্থা থাকলে শেষ চাষের সময় অর্ধেক ইউরিয়া এবং সবটুকু টিএসপি ও এমওপি সার প্রয়োগ করতে হবে। বাকি অর্ধেক ইউরিয়া ২ কিস্তিতে বীজ বপনের ৩০- ৩৫ দিন পর এবং দ্বিতীয় কিস্তি বীজ বপনের ৫৫ -৬০ দিন পর (সেচের পর) প্রয়োগ করতে হবে।
সেচ ও আগাছা ব্যবস্থাপনাঃ রবি মৌসুমে খরা দেখা দিলে ১-২টি হালকা সেচের ব্যবস্থা করলে ফলন বেশী পাওয়া যায়। চারা গজানোর পর ২-৩ সপ্তাহের মধ্যে ৮-১০সেমি দূরত্বে একটি চারা রেখে বাকি চারা তুলে পাতলা করে দিতে হবে। জমিতে আগাছা দেখা দিলে নিড়ানী দিয়ে দমন করতে হবে।
পোকামাকড় ব্যবস্থাপনাঃ
রোগ ব্যবস্থাপনাঃ
বার্লির পাতা ঝলসানো রোগ দমন:
প্রতিকার
১. গাছের পরিত্যক্ত অংশ সংগ্রহ করে পুড়িয়ে ফেলতে হবে।
২. টিল্ট ২৫০ ইসি (০.০৪%) ১ মিলি ঔষধ আড়াই লিটার পানিতে মিশিয়ে ১০-১২ দিন পর পর ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে।
৩. ভিটাভেক্স-২০০ প্রতি কেজি বীজে ২.৫-৩.০ গ্রাম মিশিয়ে বীজ শোধন করতে হবে।
বার্লির গোড়া পচা রোগ দমনঃ
স্কেলেরোসিয়াম রলফসি নামক ছত্রাক দ্বারা এ রোগ হয়ে থাকে। এ রোগ জীবাণু প্রায় সকল ক্ষেত্রে মাটির নিকটবর্তী কান্ড ও মূলের সংযোস'লে আক্রমণ করে। প্রথমে গাছের গোড়ায় হলদে দাগ দেখা যায়, পরে দাগ গাঢ় বাদামি হয়ে আক্রান্ত স্থানের চারিদিক ঘিরে ফেলে, ফলে গাছ শুকিয়ে মরে যায়। অনেক সময় গাছের গোড়ায় ও মাটিতে সরিষার দানার মত বাদামি থেকে কালো রংয়ের স্কেলেরোসিয়া গুটি দেখা যায়। রোগের জীবাণু মাটিতে বা ফসলের পরিত্যক্ত অংশে দীর্ঘদিন বেঁচে থাকে এবং বৃষ্টি ও সেচের পানির মাধ্যমে বিস্তার লাভ করে। আর্দ্রতাপূর্ণ মাটিও রোগ দ্রুত বিস্তারের জন্য সহায়ক।
প্রতিকার
১. সব সময় মাটিতে পরিমিত আর্দ্রতা বজায় রাখা প্রয়োজন।
২. ভিটাভেক্স-২০০ (প্রতি কেজি বীজে ২.৫-৩.০ গ্রাম) মিশিয়ে বীজ শোধন করে বপণ করতে হবে।
সূত্র: ইউরো বাংলা