Sunday, April 8, 2018

কিভাবে ভেজাল রাসায়নিক সার শনাক্ত করবেন ?


বর্তমানে আধুনিক কৃষি উৎপাদন প্রক্রিয়ায় রাসায়নিক সার একটি অত্যাবশ্যকীয় উপকরণ হিসাবে বিবেচিত। তবে ভালো ফনল পাওয়া জমির স্বাস্থ্য ও উৎপাদনশীলতা ধরে রাখার জন্য সুষম মাত্রায় সার ব্যবহার করা অত্যান্ত প্রয়োজন। তবে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী অধিক মুনাফা অর্জনের লক্ষে সারে ভেজাল দ্রব্য মিশিয়ে নকল সার বা ভেজাল সার তৈরি ও বিক্রি করছেন। কৃষকগণ জমিতে সার দেওয়ার আত্মতৃপ্তি লাভ করতে পারলেও ফসলের কাঙ্খিত ফলন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। আসুন জেনে নেয়া যাক ভেজাল রাসায়নিক সার বলতে কি বুঝায়।

ভেজাল রাসায়নিক সার কি:
ভেজাল সার বলতে বুঝায় যে সারের মধ্যে যে পরিমান পুষ্টি থাকার কথা সে পরিমান না থাকা, সারের মধ্যে অন্য কোন অপদ্রব্য মেশানো অথবা সারের মত অপদ্রব্যকে সার হিসাবে বিক্রয় করা বা বিক্রয়ের উদ্দেশে দোকানে রাখা। এখানে পুষ্টি উপাদান বুঝা যাবে না কিন্তু পুষ্টি উপাদান আদৌ আছে কিনা তা বুঝা যাবে। মাঠ পর্যায়ে যে সার পাওয়া যায় সেগুলোর ভেজাল শনাক্তকরণের সহজ উপায় নিচে বর্ননা করা হল:-

ইউরিয়া সার:
১. লবণ মিশ্রিত থাকলে জিহব্বায় লাগালে লবণের স্বাদ পাওয়া যাবে।

২. একটি চা চামচে সামান্য পরিমাণ (বড় দানা ৪-৫ টি) ইউরিয়া নিয়ে মোমবাতির শিখায় গরম করলে অথবা তার সাথে সামান্য পানি ছাড়া কালি চুন (পান খাওয়া চুন) মিশিয়ে মোমবাতির আগুনে গরম করলে ঝাঁঝালো গন্ধযুক্ত অ্যামোনিয়া গ্যাস (আগের রাতের মাংস, মাছ, ডিম খেয়ে সকালে প্রসাবে যে গন্ধ পাওয়া যায়) উৎপন্ন হবে অর্থাৎ সারে যে নাইট্রোজেন আছে তা নিশ্চিত হলো।

টিএসপি:
 ১. সঠিক টিএসপি সার জিহব্বায় দিলে বা দাঁত দিয়ে ভেঙ্গে দিলে অম্ল স্বাদযুক্ত ( পেটে গ্যাস্টিক বা গ্যাস হলে মুখ দিয়ে মাঝে মাঝে টক যে স্বাদ পাওয়া যায়)।

২. এক চা চামুচ টিএসপি সার ঠান্ডা পানিতে মেশালে সার সম্পন্ন দ্রবীভুত হয়ে ডাবের পানির মত পরিস্কার দ্রবণ তৈরী করবে। ভেজাল থাকলে ঘোলা দ্রবণ তৈরী করবে এবং অধিক ভেজাল থাকলে নিচে তলানি পড়বে।


ডিএপি সার:
 ১. হাতের তালুতে সামান্য ডিএপি সার নিয়ে তার মধ্যে সামান্য পান খাওয়া চুন মিশিয়ে বুড়ো আঙুল দিয়ে নাড়াচাড়া থাকলে অ্যামোনিয়া গ্যাসের গন্ধ পাওয়া যাবে।

২. আধা চা চামুচ ডিএপি সার একটি জলন্ত মোমবাতি শিখায় গরম করতে থাকলে প্রথমে চটচট করে শব্দ হবে, গরম করা অব্যাহত থাকলে সার আস্তে আস্তে গলে বুদবুদ করে ফুটতে থাকবে এবং বুদবুদ করতে করতে শুকিয়ে যাবে, চামচে সাদা আবরণ দেখা যাবে। বুদবুদ উঠার সময় ঘ্রাণ নিলে তীব্র অ্যামোনিয়া গ্যাসের গন্ধ পাওয়া যাবে।

এমওপি সার:
 ১. এমওপি সারের রঙ লাল হলেও এ হাতে লাগে না কিন্তু কোনো দ্রব্যে রঙ মেশালে ভিজা হাতে সে রঙ লাগবে।

২. হাতের তালুতে সামান্য এমওপি সার নিয়ে তার মধ্যে সামান্য পানি দিলে অনেক ঠান্ডা অনুভুত হবে এবং আঙুল দিয়ে নাড়াচাড়া করতে থাকলে আসল এমওপি সার গলে যেতে থাকবে।

৩. সার গলে যাওয়ার সময় খেয়াল রাখতে হবে যে আসল এমওপি সার আস্তে আস্তে গলে দানাগুলো ছোট হতে থাকলেও লাল রঙ দেখা যাবে। কিন্তু রঙ মিশ্রিত কোন জিনিস তার মধ্যে থাকলে প্রথমে লাল রঙ হয়ে উঠে যাবে, পরে ছোট কণায় আর লাল রঙ দেখা যাবে না। বালি কাঁচের গুড়া মিশ্রিত থাকলে তা মোটেও গলবে না।

জিপসাম সার:
 ১. জিপসাম সার সাদা পাউডারের মতো।

২. বাতাসের আদ্রতায় তুলা তুলা ভাব দেখা যায়। গায়ে তুলা তুলা ভাব না থাকলে বুঝতে হবে পানি মেশানো হয়েছে অথবা ভেজাল সার।

বোরন সার:
 ১. বোরন সার দেখতে হালকা মিহি পাউডারের মতো। আধা গ্লাস পানিতে এক চামচ বরিক এসিড বা সলুবর মিশালে সার সম্পন্নভাবে গলে যাবে এবং কোন তলানি পড়বে না।

২. সলুবর ওজনে হালকা বিধায় বরিক এসিড বা বোরাক্সের তুলনায় এর প্যাকেট দিগুন বড় হয়।


দস্তা সার:

 ১. মনোহাইড্রেট জিংক সালফেট দেখতে দানাদার কিন্তু হেপ্টাহাইড্রেট জিংক সালফেট স্ফটিকার বা আঁকাবাঁকা। হেপ্টাহাইড্রেট জিংক সার সম্পূর্নভাবে পানিতে গলে যায় এবং কোনো তলানি পড়ে না। কিন্তু মনোহাইড্রেট জিংক সার পানিতে সম্পূর্ন গলে না বরং দ্রবণ ঘোলাটে হয়।
২. যে কোনো ধরনের দস্তা সার হাতের তালুতে নিয়ে তাতে সামান্য পানি দিয়ে হাতের আঙুল দিয়ে নাড়াচাড়া করতে থাকলে সার গলতে থাকবে এবং হাতের পানি আস্তে আস্তে গরম হতে থাকবে। পানি যত গরম হবে বুঝতে হবে ওই সারের নমূনায় তত বেশি দস্তা আছে  অর্থাৎ সারটি ভালো দস্তা সার।
তথ্যসূত্রঃ সফল খামারী