Monday, April 2, 2018

আমন ধানে সার ব্যবস্থাপনা ও অধিক ফলনে করণীয়

আমন ধানে সুষম সার ব্যবস্থাপনা

আমন মৌসুমে ধানের ফলন বাড়ানোর জন্য সুষম সার ব্যবস্থাপনার পাশাপাশি নতুন নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করা জরুরি। আজকের নিবন্ধে আমন ধানের সুষম সার ব্যবস্থাপনা এবং পরিচর্যাগত কয়েকটি নতুন প্রযুক্তি নিয়ে আলোচনা করা হলো।

বীজতলায় সার ব্যবস্থাপনা পরিমিত ও মধ্যম মাত্রার উর্বর মাটিতে বীজতলার জন্য কোনো সার প্রয়োগ করতে হয় না। তবে নিম্ন, অতিনিম্ন অথবা অনুর্বর মাটির ক্ষেত্রে গোবর অথবা খামারজাত সার প্রতি শতকে ২ মণ হিসেবে প্রয়োগ করতে হবে। বীজতলায় চারা হলুদ হয়ে গেলে প্রতি শতকে ২৫০ গ্রাম ইউরিয়া সার চারা গজানোর ২ সপ্তাহ পর মাটিতে ছিটিয়ে প্রয়োগ করতে হবে। ইউরিয়া প্রয়োগের পরও বীজতলায় চারা হলুদ হয়ে গেলে প্রতি শতকে ৪০০ গ্রাম জিপসাম সার প্রয়োগ করতে হবে।

মূল জমিতে সার ব্যবহার মাত্রা ও প্রয়োগ পদ্ধতি আমন ধানের অধিক ফলন পেতে শুধু ইউরিয়া নয়, দরকার সঠিক সময়ে সুষমমাত্রায় বিভিন্ন জৈব ও রাসায়নিক সার ব্যবহার করা অপরিহার্য। রাসায়নিক সারের মধ্যে ডাই এমোনিয়াম ফসফেট, ট্রিপল সুপার ফসফেট, মিউরেট অব পটাশ, জিপসাম, ম্যাগনেশিয়াম সালফেট (ম্যাগসার, অ্যাগ্রোম্যাগভিট), জিংক সালফেট (মনো বা হেপ্টা) বা চিলেটেড জিংক (লিবরেল জিংক), বরিক এসিড, সলিউবর বোরন (লিবরেল বোরন) ইত্যাদি সার সঠিক সময়ে সুষমমাত্রায় ব্যবহার করতে হবে। তবে অধিকাংশ কৃষক অতিমাত্রায় ইউরিয়া সার ব্যবহার করতে আগ্রহী। কিন্তু জানা দরকার, অতিমাত্রায় ইউরিয়া প্রয়োগের ফলে ওই জমিতে ফসফরাস ও পটাশজাতীয় সারের পরিমাণ মারাত্মক হারে কমে যায়। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের তথ্য মতে, উফশী জাতের আমনের উচ্চ ফলন পেতে বিঘাপ্রতি (৩৩ শতক) ২১ কেজি ইউরিয়া, ৭-১০ কেজি টিএসপি/ ডিএপি, ৩.৫-১৩.৫ কেজি মিউরেট অব পটাশ, ৪-১১ কেজি জিপসাম, ১-২ কেজি জিংক সালফেট এবং ৩৫ মণ জৈবসার প্রয়োগ করতে হবে।

রাসায়নিক সার সাশ্রয়ী কয়েকটি নতুন প্রযুক্তি উদ্ভিদে নাইট্রোজেন পুষ্টি উপাদানের অভাব পূরণে জমিতে ইউরিয়া ব্যবহার করা হয়। ইউরিয়া সাশ্রয় করতে গুটি ইউরিয়া প্রযুক্তি, লিফ কালার চার্ট অনুযায়ী ইউরিয়া প্রয়োগ, বিভিন্ন ধরনের জৈবসার (সবুজ সার, আবর্জনা পচা সার, পচা গোবর), নাইট্রোজেন ফিক্সিং ব্যাকটেরিয়াল ইনোকুলাম, ধানের জমিতে অ্যাজোলার চাষ ব্যবহার বাড়ানো যেতে পারে। গুটি ইউরিয়া প্রয়োগের মাধ্যমে শতকরা ২৫-৩০ ভাগ কম ইউরিয়া প্রয়োগে ১৫-২০ ভাগ ফলন বৃদ্ধি পায়। সবুজ সার হিসেবে ধইঞ্চার চাষ, গ্রীষ্মকালীন মুগ/মাষকলাই চাষ করলে ইউরিয়ার ব্যবহার অনেকাংশে কমানো সম্ভব।

অন্যদিকে ডাই এমোনিয়াম ফসফেট বা ডিএপি ব্যবহার করলে একই সঙ্গে ইউরিয়া ও ফসফরাসের অভাব পূরণ করা সম্ভব। জিংক সালফেট (মনো বা হেপ্টা) সার ফসফরাস জাতীয় সারের সঙ্গে একত্রে ব্যবহার করা যায় না। এ সমস্যা সমাধানে জিংক ও বোরনের সর্বশেষ প্রযুক্তি চিলেটেড জিংক যেমন-লিবরেল জিংক ও সলিউবর বোরন, যেমন-লিবরেল বোরন প্রয়োগ করা যেতে পারে। মূল জমিতে ধানের চারা রোপণের ২০-২২ দিন পর ১ম বার এবং ৪০-৪৫ দিন পর ২য় বার ১ লিটার পানিতে ১ গ্রাম লিবরেল জিংক ও ২ গ্রাম লিবরেল বোরন একত্রে মিশিয়ে স্প্রে করলে সুফল পাওয়া যাবে। রোপা আমন ধানের জমি তৈরির সময় বিঘাপ্রতি (৩৩ শতক) ৩০০ কেজি জৈবসার ব্যবহার করলে রাসায়নিক সারের ব্যবহার শতকরা ৩০ ভাগ কমানো সম্ভব। এছাড়া রাসায়নিক সারের কার্যকারিতা বৃদ্ধিতে জৈব সার সহায়ক ভূমিকা রাখে, মাটির স্বাস্থ্য উন্নতি হয় এবং নাইট্রোজেন, ফসফরাস, পটাশিয়াম সরবরাহ ছাড়াও অন্যান্য মাধ্যমিক ও গৌণ পুষ্টি উপাদান সরবরাহ করে।

রোপা আমনের সার প্রয়োগের ৩টি সাধারণ নিয়ম ১. চারা রোপণের আগে জমি তৈরির চূড়ান্ত পর্যায়ে সমুদয় টিএসপি/ডিএপি, মিউরেট অব পটাশ, জিপসাম ও জিংক সালফেট প্রয়োগ করে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিতে হবে। জমি তৈরির সময় জিংক সালফেট না দিলে স্প্রে আকারে চিলেটেড জিংক, যেমন-লিবরেল জিংক ব্যবহার করা যায়।

২. ইউরিয়া সার কিস্তিতে প্রয়োগ করতে হবে। অতি নিম্ন ও নিম্ন পুষ্টিমানসম্পন্ন মাটির ক্ষেত্রে ইউরিয়া সার সমান তিন কিস্তিতে প্রয়োগ করতে হবে। জমি তৈরির চূড়ান্ত পর্যায়ে অথবা চারা রোপণের ৭-১০ দিন পর প্রথম কিস্তি এবং ২৫-৩০ দিন পর দ্বিতীয় কিস্তির সার প্রয়োগ করতে হবে। উভয় কিস্তির সারই জমিতে ছিটিয়ে প্রয়োগ করতে হবে এবং জমি তৈরির চূড়ান্ত পর্যায়ে ও আগাছা দমনকালে ভালোভাবে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিতে হবে। তৃতীয় কিস্তির সার কাইচ থোড় আসার ৫-৭ দিন আগে ছিটিয়ে প্রয়োগ করতে হবে। মধ্যম ও পরিমিত পুষ্টিমানসম্পন্ন মাটির ক্ষেত্রে ইউরিয়া সার দুই কিস্তিতে উপরি প্রয়োগ করতে হবে। প্রথম কিস্তি দ্রুত কুশি গজানোর সময় আগাছা দমনকালে এবং দ্বিতীয় কিস্তি কাইচ থোড় আসার ৫-৭ দিন আগে ছিটিয়ে প্রয়োগ করতে হবে।

৩. নাইট্রোজেন সারের উত্স হিসেবে গুটি ইউরিয়া ব্যবহার করলে ধানের চারা রোপণের ৮-১০ দিন পর একবার ১টি মেগা গুটি (২ গ্রাম) বা ৩টি ছোট গুটি (১ গ্রাম) ইউরিয়া ৪-৫ সে.মি. গভীরে প্রয়োগ করতে হবে। গুটি প্রথমে ধানক্ষেতের ১ম ও ২য় সারির মাঝে এবং তারপর ৩য় ও ৪র্থ সারির মাঝে এভাবে ক্রমান্বয়ে স্থাপন করতে হবে।

আরও করণীয় আমনের অধিক ফলন পেতে উপরোলিল্গখিত নিয়মে সুষম সার ব্যবস্থাপনার পাশাপাশি সম্পূরক সেচ এবং সময়মত বালাইনাশক প্রয়োগ করতে হবে। ধানের আগাছা নিয়ে সব সময় কৃষকরা চিন্তিত থাকেন। আমন ধানের আগাছা দমন করতে মূল জমিতে চারা রোপণের ৫-৭ দিনের মধ্যে কম্বাইন্ড আগাছা নাশক ‘সুপার ক্লিন’ বিঘাপ্রতি (৩৩ শতক) ১০০ গ্রাম হারে প্রয়োগ করতে হবে। অন্যদিকে ধানবীজ উত্পাদন করতে ইউরিয়া শতকরা ১৫ ভাগ কম প্রয়োগ করতে হবে। ধান পাকার ঠিক আগে প্রতি ১০ লিটার পানিতে ৪০-৪৫ গ্রাম এগ্রিসাল/ থিওভিট/মাইকোসাল (৮০% সালফার) স্প্রে করলে বীজের বর্ণ উজ্জ্বল হবে, ধানের গায়ে কালো বা বাদামি দাগ পড়বে না। ধান কাটার পর ঠিকমত মাড়াই-ঝাড়াই করে কড়া রোদে শুকাতে হবে।
এরপর বস্তাবন্দি করে গুদামে

রাখতে হবে। গুদামে ফসটক্সিন জাতীয় গ্যাস ট্যাবলেট প্রতিটনে ৪টি হারে প্রয়োগ করলে ধানের গুদামজাত পোকার আক্রমণ রোধ করা সম্ভব। একটা বিষয় মনে রাখতে হবে, হাইব্রিড ধানের বীজ পরবর্তী মৌসুমের জন্য বীজ হিসেবে রাখা যাবে না।
লেখক: কৃষিবিদ ড. মোঃ শহিদুল ইসলাম, কৃষিবিদ মোঃ কামরুল আহসান ভূঁইয়া
তথ্যসূত্র: দৈনিক আমার দেশ

আমন:বেশি ফলনের জন্য করণীয়

আমন মৌসুমে ধানের ফলন বাড়ানোর জন্য সুষম সার ব্যবস্থাপনার পাশাপাশি নতুন ও আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করার বিকল্প নেই। আর এতে ফলন বাড়বে।

বীজতলা তৈরি : পরিমিত ও মধ্যম মাত্রার উর্বর মাটিতে বীজতলার জন্য কোনো সার প্রয়োগ করতে হয় না। তবে নিম্ন, অতি নিম্ন অথবা অনুর্বর মাটির ক্ষেত্রে গোবর অথবা খামারজাত সার প্রতি শতকে ২ মণ হিসাবে প্রয়োগ করতে হবে। বীজতলায় চারা হলুদ হয়ে গেলে প্রতি শতকে ২৫০ গ্রাম ইউরিয়া সার চারা গজানোর ২ সপ্তাহ পর মাটিতে ছিটিয়ে প্রয়োগ করতে হবে। ইউরিয়া প্রয়োগের পরও বীজতলায় চারা হলুদ হয়ে গেলে প্রতি শতকে ৪০০ গ্রাম জিপসাম সার প্রয়োগ করতে হবে।

সার ব্যবস্থাপনা : আমন ধানের অধিক ফলন পেতে শুধু ইউরিয়া নয়, দরকার সঠিক সময়ে সুষমমাত্রায় বিভিন্ন জৈব ও রাসায়নিক সার। এর মধ্যে ডাই এমোনিয়াম ফসফেট, ট্রিপল সুপার ফসফেট, মিউরেট অব পটাশ, জিপসাম, ম্যাগনেশিয়াম সালফেট (ম্যাগসার, এগ্রোম্যাগভিট), জিংক সালফেট (মনো বা হেপ্টা) বা চিলেটেড জিংক (লিবরেল জিংক), বরিক এসিড, সলিউবর বোরন (লিবরেল বোরন) ইত্যাদি সার সঠিক সময়ে সুষমমাত্রায় ব্যবহার করতে হবে। তবে অধিকাংশ কৃষক অতিমাত্রায় ইউরিয়া সার ব্যবহার করতে আগ্রহী। কিন্তু জানা দরকার যে, অতিমাত্রায় ইউরিয়া প্রয়োগের ফলে ওই জমিতে ফসফরাস ও পটাশ জাতীয় সারের পরিমাণ মারাত্মক হারে কমে যায়। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) তথ্য মতে, উফশী জাতের আমনের উচ্চ ফলন পেতে বিঘাপ্রতি (৩৩ শতক) ২১ কেজি ইউরিয়া, ৭-১০ কেজি টিএসপি-ডিএপি, ৩.৫-১৩.৫ কেজি মিউরেট অব পটাশ, ৪-১১ কেজি জিপসাম, ১-২ কেজি জিংক সালফেট এবং ৩৫ মণ জৈবসার প্রয়োগ করতে হবে।

সাশ্রয়ী সার ব্যবহারে কয়েকটি প্রযুক্তি : আমরা জানি, উদ্ভিদের নাইট্রোজেন পুষ্টি উপাদানের অভাব পুরনে জমিতে ইউরিয়া ব্যবহার করা হয়। ইউরিয়া সাশ্রয় করতে ধানের জমিতে গুটি ইউরিয়া প্রযুক্তি, লিফ কালার চার্ট অনুযায়ী ইউরিয়া প্রয়োগ, বিভিন্ন ধরনের জৈব সার (সবুজ সার, আবর্জনা পচা সার, পচা গোবর), নাইট্রোজেন ফিক্সিং ব্যাকটেরিয়াল ইনোকুলাম প্রয়োগ এবং অ্যাজোলার চাষ বাড়ানো যেতে পারে। ব্রির তথ্য মতে, গুটি ইউরিয়া প্রয়োগের মাধ্যমে শতকরা ২৫-৩০ ভাগ কম ইউরিয়া প্রয়োগে ১৫-২০ ভাগ ফলন বৃদ্ধি পায়। সবুজ সার হিসেবে ধঞ্চের চাষ, গ্রীষ্মকালীন মুগ-মাসকলাই চাষ করলে ইউরিয়ার ব্যবহার অনেকাংশে কমানো সম্ভব। অন্যদিকে ডাই এমোনিয়াম ফসফেট বা ডিএপি ব্যবহার করলে একই সঙ্গে ইউরিয়া ও ফসফরাসের অভাব পুরন করা সম্ভব। জিংক সালফেট (মনো বা হেপ্টা) সার ফসফরাস জাতীয় সারের সঙ্গে একত্রে ব্যবহার করা যায় না। এ সমস্যা সমাধানে জিংক সারের সর্বশেষ প্রযুক্তি চিলেটেড জিংক বা লিবরেল জিংক প্রয়োগ করা যেতে পারে। মূল জমিতে ধানের চারা রোপণের ২০-২২ দিন পর প্রথমবার এবং ৪০-৪৫ দিন পর দ্বিতীয়বার ১ লিটার পানিতে ১ গ্রাম লিবরেল জিংক স্প্রে করলে সুফল পাওয়া যাবে। রোপা আমন ধানের জমি তৈরির সময় বিঘাপ্রতি (৩৩ শতক) ৩০০ কেজি জৈব সার ব্যবহার করলে রাসায়নিক সারের ব্যবহার শতকরা ৩০ ভাগ কমানো সম্ভব। এ ছাড়া জৈব সার ব্যবহারে রাসায়নিক সারের কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায়, নাইট্রোজেন, ফসফরাস, পটাশিয়াম সরবরাহ ছাড়াও অন্যান্য মাধ্যমিক ও গৌণ পুষ্টি উপাদান সরবরাহ করে, মাটির বুনট ও গঠন প্রকৃতি উন্নত হয়।

রোপা আমনে সার প্রয়োগের নিয়ম : ১. চারা রোপণের আগে জমি তৈরির চূড়ান্ত পর্যায়ে সমুদয় টিএসপি-ডিএপি, মিউরেট অব পটাশ, জিপসাম ও জিংক সালফেট প্রয়োগ করে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিতে হবে। জমি তৈরির সময় জিংক সালফেট না দিলে স্প্রে আকারে চিলেটেড জিংক বা লিবরেল জিংক ব্যবহার করা যায়।
২. ইউরিয়া সার কিস্তিতে প্রয়োগ করতে হবে। অতি নিম্ন ও নিম্ন পুষ্টিমানসম্পন্ন মাটির ক্ষেত্রে ইউরিয়া সার সমান ৩ কিস্তিতে প্রয়োগ করতে হবে। জমি তৈরির চূড়ান্ত পর্যায়ে অথবা চারা রোপণের ৭-১০ দিন পর প্রথম কিস্তি এবং ২৫-৩০ দিন পর দ্বিতীয় কিস্তির সার প্রয়োগ করতে হবে। উভয় কিস্তির সারই জমিতে ছিটিয়ে প্রয়োগ করতে হবে এবং জমি তৈরির চূড়ান্ত পর্যায়ে ও আগাছা দমনকালে ভালভাবে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিতে হবে। তৃতীয় কিস্তির সার কাইচ থোড় আসার ৫-৭ দিন আগে ছিটিয়ে প্রয়োগ করতে হবে। মধ্যম ও পরিমিত পুষ্টিমানসম্পন্ন মাটির ক্ষেত্রে ইউরিয়া সার দুই কিস্তিতে উপরি প্রয়োগ করতে হবে। প্রথম কিস্তি দ্রুত কুশি গজানোর সময় আগাছা দমনকালে এবং দ্বিতীয় কিস্তি কাইচ থোড় আসার ৫-৭ দিন আগে ছিটিয়ে প্রয়োগ করতে হবে।
৩. নাইট্রোজেন সারের উৎস হিসেবে গুটি ইউরিয়া ব্যবহার করলে ধানের চারা রোপণের ৮-১০ দিন পর একবার ১টি মেগা গুটি (২ গ্রাম) বা ৩টি ছোট গুটি (১ গ্রাম) ইউরিয়া ৪-৫ সেন্টিমিটার গভীরে প্রয়োগ করতে হবে। গুটি প্রথমে ধান ক্ষেতের প্রথম ও দ্বিতীয় সারির মাঝে এবং তারপর তৃতীয় ও চতুর্থ সারির মাঝে এভাবে ক্রমান্বয়ে স্থাপন করতে হবে।

আরো কিছু করণীয় : আমনের অধিক ফলন পেতে উপরোল্লিখিত নিয়মে সুষম সার ব্যবস্থাপনার পাশাপাশি সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে সম্পূরক সেচ এবং সময়মত বালাইনাশক প্রয়োগ করতে হবে। ধানের আগাছা নিয়ে সব সময় কৃষকেরা চিন্তিত থাকেন। আমন ধানের আগাছা দমন করতে মূল জমিতে চারা রোপণের ৫-৭ দিনের মধ্যে সম্পূর্ণ নতুন ধরনের কম্বাইন্ড আগাছানাশক বিঘাপ্রতি (৩৩ শতক) ১০০ গ্রাম হারে প্রয়োগ করতে হবে। অন্যদিকে ধান বীজ উৎপাদন করতে ইউরিয়া শতকরা ১৫ ভাগ কম প্রয়োগ করতে হবে। ধান পাকার ঠিক আগে প্রতি ১০ লিটার পানিতে ৪০-৪৫ গ্রাম এগ্রিসাল/থিওভিট/মাইকোসাল (৮০ শতাংশ সালফার) স্প্রে করলে বীজের বর্ণ উজ্জ্বল হবে, ধানের গায়ে কালো বা বাদামী দাগ পড়বে না। ধান কাটার পর ঠিকমত মাড়াই-ঝাড়াই করে কড়া রোদে শুকাতে হবে। এরপর বস্তাবন্দি করে গুদামে রাখতে হবে। গুদামে ফসটক্সিন জাতীয় গ্যাস ট্যাবলেট প্রতি টনে ৪টি হারে প্রয়োগ করলে ধানের গুদামজাত পোকার আক্রমণ রোধ করা সম্ভব। একটা বিষয় মনে রাখতে হবে, হাইব্রিড ধানের বীজ পরবর্তী মৌসুমের জন্য বীজ হিসেবে রাখা যাবে না।
লেখক: কৃষিবিদ বকুল হাসান খান 

তথ্যসূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক