Saturday, April 14, 2018

ছাদে বাউকুল চাষে অসাধারণ সাফল্য:গাছ প্রতি ফলন ১০ থেকে ১২ কেজি


ছাদে বাউকুল চাষ করে লাভবান হতে পারেন আপনিও। আমাদের দেশে অন্যান্য ফলের মধ্যে বাউকুল একটি জনপ্রিয় ফল। আপেলের মত দেখতে এ ফল খেতে সুমিষ্ট এবং রসালো। এ ফল চাষাবাদের সম্ভাবনা এবং অর্থনৈতিক গুরুত্ব বিবেচনা করে বর্তমানে দেশের প্রায় সর্বত্র বানিজ্যিকভাবে চাষাবাদ করা হচ্ছে। অনেকেই শখ করে কিংবা  নিজের পরিবারের চাহিদা মিটানোর জন্যে বাড়ীর ছাদে, বাড়ান্দায় কিংবা আঙ্গিনায় এই ফলের বাগান করে থাকেন। তবে ছাদে এ বাগান করতে গেলে এ গাছের একটু বিশেষ যত্ন নিতে হয়। বর্তমানে অনেকেই ছাদে অল্প জায়গা ব্যবহার করে বাউকুল চাষ করে অসাধারণ সাফল্যের দাবিদার। আসুন আমরা জেনে নেই ছাদে কিভাবে বাউকুল চাষ  করা যায়।

বাউকুল চাষে টব/মাটি তৈরীকরণ:
আমাদের দেশে জলা বদ্ধতাহীন যে কোন মাটিতে বাউকুল চাষ করা যায়। তবে আদর্শ মাটি দোআঁশ, বেলে দোআঁশ এবং এঁটেল মাটিতে বাউকুল চাষ ভাল হয়। এ দেশের আবহাওয়া বাউকুল চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী।

ছাদে বাউকুল চাষে টব/পাত্রের আকৃতি বাছাই:
ছাদে বাউকুল চাষ করার জন্য টব/পাত্রের আকৃতি গুরুত্বপূর্ন বিষয়। বাড়ির ছাদ অথবা আঙ্গিনায় বাউকুল চাষের  জন্য মাঝারি অথবা বড় সাইজের টব ব্যবহার করা যায়। এছাড়াও সিমেন্টের তৈরী রিং অথবা হাফ ড্রাম ও ব্যবহার করা যায়।

স্থান নির্বাচন:
ছাদে বাউকুল গাছ টব/পাত্রে রোপনের জন্য এমন একটি স্থান নির্বাচন করতে হবে যেন সেই স্থানের আশে পাশে ছায়াদানকারী বড় গাছ না থাকে। তবে সূর্যের আলো সব সময় পরে এমন জায়গা নির্বাচন করা ভাল।

রোপন সময়:
বাউকুলের চাষ আমাদের দেশে বছরের যে কোন সময় করা যায়। তবে মধ্য মাঘ থেকে মধ্য চৈত্র এবং মধ্য শ্রাবণ থেকে মধ্য ভাদ্র বাউকুলের চারা তৈরির উপযুক্ত সময়।

টব/পাত্র প্রস্তুত করণ:
টব/পাত্রে বাউকুল গাছ লাগানোর পূর্বে টবের তলায় ১ ইঞ্চি পরিমান ইটের খোয়া, খড় এবং পচা পাতা বিছিয়ে দিতে হবে এবং পুরো টব/পাত্রটি সমপরিমাণ পচা গোবর ও দো-আঁশ মাটির মিশ্রণ দিয়ে ভরে দিতে হবে। যখন গাছের কচি পাতা পরিপক্ক হবে তখন ২-৩ টি সিলভা মিক্স ট্যাবলেট বাউকুল গাছের গোড়ায় মাটির গভীরে পুতে দিতে হবে। এভাবে টপ/পাত্র প্রস্তুত করতে হবে।

বীজ বপন ও পানি সেচ:
বাউকুল সাধারনত কলম পদ্ধতিতে রোপন করা হয়ে থাকে। এ জন্য টবের মাটি প্রস্তুত হয়ে গেলে সুস্থ সবল চারা  অথবা কলম চারা টবের মাটিতে লাগিয়ে দিতে হবে এবং চারায় নিয়মিত পানি দিতে হবে।

সার প্রয়োগ:
বাউকুল চাষে জৈব সারের প্রয়োগের গুরত্ব অপরীসিম। যেমন আবর্জনা, তরকারির খোসা, ময়লা এবং কাঠের ভূসি গাছের গোড়ায় দেওয়া যায়। বাউকুল গাছে অজৈব সার ব্যবহার করা যায়।

পোকামাকড় দমন:
বাউকুল চাষে পোকামাকড় দমনে কার্যকারী ব্যবস্থা না নিলে কাঙ্খিত ফল পাওয়া যায় না। বাউকুল গাছ সাধারণত এক ধরণের ছত্রাক দ্বারা আক্রান্ত হয়। এছাড়া বিছাপোকা, লাল ক্ষুদ্র মাকড়সা, কাণ্ড ও ফল ছিদ্রকারী পোকা দ্বারা গাছ আক্রান্ত হয়। এক্ষেত্রে ছত্রাক নিধনকারী ওষুধ স্প্রে অথবা সেক্স ফেরোমন ফাঁদ ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে খেয়াল রাখতে হবে কুল সংগ্রহের সাত থেকে ১০ দিন আগে কোন কীটনাশক স্প্রে করা যাবে না।


যত্ন ও পরিচর্যা:
বাউকুল গাছ অনেকদিন বাঁচে। তাই এ গাছের প্র্রথম থেকেই সঠিকভাবে যত্ন নিতে হয়। গাছের নীচ থেকে গজানো ডাল বা কুশি সবসময় কেটে দিতে হবে। গাছ সবসময় আগাছামুক্ত রাখতে হবে। বর্ষার সময় গাছের চারপাশে  বিভিন্ন ধরনের আগাছা জন্মায়। এ সব পরিষ্কার করতে হবে।

এ ফলের খাদ্য গুণাগুণ:
বাউকুলে বিভিন্ন ধরনের খনিজ এবং ভিটামিন এ ও ভিটামিন সি বিদ্যমান রয়েছে। এ ফল সাধারণত পাকা ও টাটকা অবস্থায় খাওয়া হয়।

ঔষধি গুনাগুন:
বাউকুলের বেশ কিছু ভেষজ  গুণাগুণ রয়েছে।  এ ভেষজ গুণ থাকার কারণে আয়ুর্বেদ চিকিৎসায় বাউকুলের বহুবিদ ব্যবহার হচ্ছে।

 বাউকুল  সংগ্রহ ও সংরক্ষণ:
 বাউকুল পূর্ণরুপে পরিপক্ক হলে তখন এ ফল সংগ্রহ করা উচিৎ। বাউকুল হালকা কাচা হতে হলুদ হলে সংগ্রহ করতে হবে। এ ফল পরবর্তীতে ব্যবহারের জন্য শুকিয়ে ঘরে রেখে দেওয়া যায়।

একটি গাছ থেকে প্রাপ্ত বাউকুল:
একটি গাছ থেকে  প্রায় ১০ থেকে ১২ কেজি ফল পাওয়া যায়। পরিকল্লিতভাবে কয়েকটি চারা লাগালে পারিবারিক চাহিদা মিটিয়ে বিক্রি করে অর্থ উপার্জন করা যায়। উল্লেখ্য যে এক একটি বাউকুল গাছ বছরে প্রায় ২-৩ বার ফল দিয়ে থাকে।

বাউকুলের বিবিধ ব্যবহার:
বাউকুল কাচা খাওয়া ছাড়াও বাউকুলের বিবিধ ব্যবহার রয়েছে। বাউকুল দিয়ে মোরব্বা,আচার, চাটনী, শরবত ও জেলি তৈরি করা যায়। আবার বাউকুল আপেলের পরিবর্তে টেবিল ফ্রুট হিসেবেও খাওয়া যায়।

তথ্যসূত্রঃ সফল খামারী