Sunday, March 18, 2018

গাড়ল পালন: বেকারের বেকারত্ব দূরীকরণের উত্তম পন্থা


গাড়ল (ভারতীয় জাতের ভেড়া) পালন খুবই লাভজনক। এতে খরচ কম অথচ লাভ অনেক বেশি। দেশে গাড়ল পালনের অপার সম্ভাবনা রয়েছে। স্বাদ ও পুষ্টিগুণ বেশি হওয়ায় এর মাংসের চাহিদা ব্যাপক। ভালো দাম হওয়ায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে, বিশেষ করে (মেহেরপুর-চুয়াডাঙ্গা) জেলায় গাড়ল পালন দিনে দিনে বৃদ্ধি পাচ্ছে। মুজিবনগর উপজেলার বাগোয়ান ইউনিয়নের তারানগর গ্রামের মিস্ত্রিপাড়ার দবিরউদ্দিন গাড়ল পালনে সফলতা পাওয়ার পর একই গ্রামের অনেকে এদিকে ঝুঁকে পড়েন। বর্তমানে ওই গ্রামের প্রায় ২০ ঘর মানুষ গাড়ল পালন করছেন। মুজিবনগর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ও মেহেরপুর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা দেশে গাড়ল পালনে আশার আলো দেখতে পাচ্ছেন বলে জানান। গাড়ল পালন একদিকে বেকার মানুষের কর্মসংস্থানের পাশাপাশি জাতীয় অর্থনীতীতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

গাড়ল পালনে অধীক লাভ করা এবং ক্ষতির হাত থেকে বাঁচতে চাইলে যে তথ্য গুলো আপনাকে অবশ্যই মনে রাখতে হবে……

গাড়ল নির্বাচন পদ্ধতি:

পালনের জন্য প্রথমে গাড়ল নির্বাচন একটি গুরুত্বপূর্ন ধাপ। খামারের লাভ অনেকাংশে নির্ভর করে, উচ্চ উৎপাদনশীল জাতের সুস্থ সবল গাড়ল নির্বাচনের উপর। পালনের জন্য ৭ থেকে ১২ মাস বয়সের সুস্থ গাড়ল নির্বাচন করা উচিত।

গাড়ল পালন ও সুস্থ গাড়ল চেনার উপায়:

১. চোখ, নাক, মুখ উজ্জল ও পরিস্কার হবে।
২.লোম ও চামড়া মসৃন ও পরিস্কার থাকবে।
৩.মুখের উপরে মাজেলে ( কালো জায়গায় ) বিন্দু বিন্দু ঘাম দেখা যাবে।
৪. ঠিকমত জাবর কাটবে।
৫.চলাফেরা স্বাভাবিক থাকবে।
৬. কান ও লেজ নাড়াচাড়া করবে।
৭. খাবারের প্রতি আগ্রহ থাকবে।
৮. শ্বাস প্রশ্বাস স্বাভাবিক থাকবে।
৯. প্রস্রাব পায়খানা স্বাভাবিক হবে।
১০.কোনো অচেনা লোক কাছে আসলে সতর্ক হয়ে উঠবে।
১১. মশা মাছি তাড়াবে।
১২. দলবদ্ধ ভাবে মাঠে চড়বে ।

খাদ্য ও বাসস্থান:

গাড়লের খাবারের ক্ষেত্রে লক্ষণীয়……
১. গাড়ল চরে খেতে পছন্দ করে। তবে আবদ্ধ অবস্থায়ও বাহির থেকে (ঘাস/দানাদার) খাদ্য সরবরাহ করে পালন করা যায়।
২. ছাগলের মতোই লতা ও গুল্ম জাতীয় গাছের পাতা এরা খুব পছন্দ করে।
৩. শুকনো ও সংরক্ষিত ঘাস এবং দানাদার খাদ্য এরা খেয়ে থাকে।
৪. এমনকি খাদ্যের অভাব দেখা দিলে গাড়ল খড় ও নাড়া খেয়ে থাকতে পারে।

বিশেষ করে………
৫. পাঠা গাড়ল কে পর্যাপ্ত পরিমান কাচা ঘাস দিতে হবে।
৬. প্রজননের জন্য ব্যবহৃত পাঠাকে দৈনিক ১০ গ্রাম অঙ্কুরিত ছোলা দিলে ভালো ফল পাওয়া যায়।
৭. কাচা ঘাসের পরিমান কম হলে বছরে অন্তত ২ বার ভিটামিন এ.ডি.ই. ইনজেকশন ২ থেকে ৩ মি.লি. করে দিতে হবে।
৮. পাঠাকে অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত খাদ্য দেয়া যাবে না।

বাড়ন্ত গাড়লের জন্য একটি আদর্শ খাদ্য তালিকা নিচে দেয়া হলো:
গাড়লের ওজন (কেজি)দানাদার খাদ্য(গ্রাম)ঘাস সরবরাহ(কেজি)
১০০০.৫
২০০০.৮
২৫০১.০
১০৩০০১.৫- ২.০
১২৩৫০২.০- ২.৫
১৪৪০০২.৫-৩.০
১৬৪৫০৩.০-৩.৫
১৮৫০০৩.৫-৪.০
বাসস্থান তৈরীতে করনীয়:
এটার উপর লাভক্ষতি, উৎপাদন, গাড়লের পরিচর্যা, রোগাক্রান্ত হওয়ার হার ইত্যাদি নির্ভর করে। আমাদের দেশের আবহাওয়ায় গাড়লের বাসস্থানের জন্য খোলামেলা ও উচু স্থান নির্বাচন করা উচিত ।
রোদ-বৃষ্টি-ঝড় ইত্যাদির হাত থেকে রক্ষা করা, বিশ্রাম, খাদ্য প্রদান, সঠিক প্রজনন নিশ্চিতকরণ, মলমূত্রের সুষ্ঠ নিষ্কাসনের ব্যবস্থা, ইত্যাদি বন্দোবস্ত করে গাড়লের জন্য ঘর তৈরী করতে হবে।
ঘরে মাচার উপর গাড়ল থাকার ব্যবস্থা করতে হবে। মাচা তৈরী সম্ভব না হলে, মেঝেতে শুকনো খড়ের বিছানা দিতে হবে। শীতকালে মাচাতেও খড়ের বিছানা দিতে হবে। বিশেষ করে বাচ্চা কে শীতের প্রকোপ থেকে রক্ষা করতে হবে,ভেজা খর শুকিয়ে পুনরায় ব্যবহার করা যায়।

বাসস্থানের বৈশিষ্ট আদর্শ:
১.গাড়লের ঘর উচু ও খোলামেলা জায়গায় হতে হবে।
২.পানি নিস্কাসনের উপযুক্ত ব্যবস্থা থাকতে হবে।
৩.আরামদায়ক হতে হবে।
৪.ঘরের দক্ষিণ ও পূর্ব দিক হতে বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা থাকতে হবে।
৫.বর্জ্য নিস্কাসনের উপযুক্ত ব্যবস্থা থাকবে।
৬.সহজলভ্য ও সস্তা নির্মান সামগ্রী ব্যবহার করতে হবে।
৭.ঘরের মাঝে বেড়া বা পার্টিশন দিয়ে গর্ভবতী গাড়ল বা ছোট বাচ্চা কে আলাদা রাখার ব্যবস্থা থাকবে। যাতে করে প্রসব পূর্ব ও প্রসব পরবর্তী যত্ন ও সেবা দেয়া যায়।

অন্যান্য করনীয় বিষয়:
১. প্রতিদিন নির্ধারিত সময়ে খাবার দিতে হবে।
২. বাসস্থান নিয়মিত পরিস্কার করতে হবে ও শুস্ক রাখতে হবে।
৩.মলমূত্র এবং ঘর সংলগ্ন ড্রেন বা নালা নিয়মিত পরিস্কার করতে হবে।
৪. নিয়মিত গোসল করানো ভালো।
৫. তিন মাস অন্তর অন্তর কৃমিনাশক খাওয়াতে হবে।
৬. নিয়মিত টিকা প্রদান করতে হবে ( পি.পি.আর, এফ. এম. ডি ইত্যাদি )

লেখক: মাহবুব বিল্যাহ
সহঃ সম্পাদক
তথ্য সুত্রঃ সফল খামারী