Friday, May 18, 2012

ধান-আলুর এলাকায় তরমুজ-বিপ্লব


জ্যৈষ্ঠের গরমে রসাল ফল তরমুজ যেন প্রাণে শীতল পরশ বুলিয়ে দেয়। গরমে তরমুজ পছন্দ করে না, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন। এই সময়টায় বাজারে তরমুজের কদরও তাই অন্য রকম।

এবার তরমুজ চাষের একরকম বিপ্লব ঘটে গেছে ধান-আলু চাষের প্রসিদ্ধ এলাকাখ্যাত জয়পুরহাটের কালাই উপজেলায়। এখানকার প্রত্যন্ত এলাকার মাঠজুড়ে এখন তরমুজখেতে সবুজের সমারোহ। বিঘার পর বিঘা চাষ করা খেত থেকে ইতিমধ্যেই তরমুজ উঠাতে শুরু করেছেন চাষিরা। আশাতীত ফলন পেয়ে তাঁদের মুখে হাসির ঝিলিক। বাম্পার ফলনের পাশাপাশি ভালো দামও পাচ্ছেন তাঁরা।

কালাইয়ে তরমুজ চাষ শুরু যেভাবে: কালাই এলাকার তিন ফসলি জমিতে বোরো, আমন ও আলু চাষ করছিলেন স্থানীয় চাষিরা। সম্প্রতি আলু ও ধানের ভালো দাম না পেয়ে তাঁরা বিকল্প ফসল আবাদের চিন্তাভাবনা করছিলেন। এরই মধ্যে কয়েক মৌসুম থেকে পাশের গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার ‘বাগদা ফার্মে’ তরমুজ চাষ শুরু করেছিলেন সেখানের চাষিরা। বাগদা ফার্মে তরমুজ চাষের সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়ে কালাই উপজেলার তেলীহার, আকলাপাড়া, কুঁকরাইল, ভুষাসহ বিভিন্ন এলাকার কৃষকেরা বছর চারেক আগে বোরোর বদলে তরমুজের চাষ শুরু করেন। আর সেই তরমুজের চাষ ক্রমে ছড়িয়ে পড়ে করমকা, বেউরগ্রাম, পুর, টাকাহুত, মালটিয়া, শেখপুরসহ বিভিন্ন গ্রামে।
সরেজমিন: সম্প্রতি সরেজমিনে কালাই উপজেলার মোসলেমগঞ্জ-মালটিয়া সড়ক ধরে বেশ কিছু মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে এবার তরমুজ চাষ হয়েছে। চাষিরা খেতের এক পাশে বা খেতের মাঝখানে তাঁবু টানিয়ে তরমুজ পাহারা দিচ্ছেন।

তীরখোলা মাঠে কথা হলো পুরগ্রামের তরমুজচাষি আবদুল বাতেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আশপাশের সব জায়গায়ই বিঘার পর বিঘা জমিতে বোরোর বদলে তরমুজের চাষ হয়েছে। অনেকেই খেত থেকে তরমুজ বিক্রি করছেন। আমি নিজেও দুই বিঘা জমিতে তরমুজের চাষ করেছি। ফলন ভালো হওয়ায় ৭০-৮০ হাজার টাকার তরমুজ বিক্রি করতে পারব বলে আশা করছি।’
আবদুল বাতেন বলেন, ‘তরমুজ চাষে কিছু সমস্যাও রয়েছে। প্রথম ফুল আসার পরপরই ছত্রাকজাতীয় রোগ এবং জাব পোকার আক্রমণ বেড়ে যায়। এ কারণে খেতে কী ধরনের কীটনাশক প্রয়োগ করব, তা বুঝতে পারছিলাম না। এ সময় কৃষি বিভাগের কাউকে পাশে পাওয়া যায়নি।’

টাকাহুত চকপাড়ার বাদশা সরকার বলেন, ‘এবার এলাকায় তরমুজ-বিপ্লব হয়েছে। আমি প্রায় দুই বিঘা জমিতে তরমুজ আবাদ করেছি। বোরো চাষে খরচ হতো ২০ হাজার টাকা, তরমুজ চাষে খরচ হয়েছে মাত্র ছয় হাজার টাকা। ২৫ হাজার টাকার তরমুজ বিক্রি করেছি, খেতের সব তরমুজ বিক্রি করে আরও ২৫ হাজার টাকা লাভ হবে বলে আশা করছি।’

তরমুজের উৎপাদন ও বাজার: চাষিদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, তরমুজ চাষে বিঘাপ্রতি খরচ গড়ে তিন থেকে চার হাজার টাকা। বিঘায় তরমুজ ধরেছে গড়ে সাড়ে ৪০০টি করে। একেকটি তরমুজের ওজন গড়ে সাত থেকে আট কেজি। প্রতিটি তরমুজ গড়ে বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায়। চাষিরা পরিপক্ব তরমুজ তুলে খেতের এক পাশে জড়ো করছেন। ব্যবসায়ীরা খেত থেকেই আকার অনুযায়ী তরমুজ কিনে নিচ্ছেন। খেত থেকে তরমুজ কিনতে আসা গোবিন্দগঞ্জের কাঁচামাল ব্যবসায়ী আখের আলী বলেন, ‘খেত থেকে তোলা একটি তরমুজ মাপা হয়। এরপর সেই আকারের তরমুজ আলাদা করে ভটভটি ভ্যানে তুলে মোকামে নেওয়া হয়। খেত থেকে বড় আকারের তরমুজ কেনা হচ্ছে ১৪-১৫ টাকা কেজি দরে।’

খোঁজ রাখেনি কৃষি বিভাগ: কালাই উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকায় তরমুজ-বিপ্লব ঘটে গেলেও খোঁজ রাখেনি কৃষি বিভাগ। জয়পুরহাট জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক দেলবর হোসেন স্বীকার করেন, কালাই উপজেলায় তরমুজের চাষ হচ্ছে, এমন তথ্য তাঁর জানা নেই। তিনি বলেন, ধান-আলুর এলাকায় নতুন ফসল হিসেবে কৃষকেরা তরমুজ চাষ শুরু করায় কৃষি বিভাগে সঠিক তথ্য না-ও থাকতে পারে। কালাই এলাকার তরমুজের আবাদ সম্পর্কে খোঁজখবর নেওয়া হবে।

তথ্য সূত্র: প্রথম আলো পত্রিকা, তারিখ: ১৮-০৫-২০১২