Friday, October 28, 2011

ইলিশের প্রজনন মৌসুম ২০ দিন করার পরামর্শ


প্রজনন মৌসুম শেষ হওয়ার পরও নদ-নদীতে ডিমওয়ালা প্রচুর মা-ইলিশ ধরা পড়ছে। এ অবস্থায় মা-ইলিশ ধরা বন্ধ করে নদ-নদীতে ইলিশের সরবরাহ বাড়াতে প্রজনন মৌসুম ১০ দিন থেকে বাড়িয়ে ২০ দিন করা উচিত। মৎস্য কর্মকর্তা, ইলিশ গবেষক ও জেলেরা এ মতামত দিয়েছেন।

জেলেরা ইলিশ প্রজনন মৌসুমের ওই ২০ দিন তাঁদের পরিবারের জন্য চাল সরবরাহের দাবি জানিয়েছেন। কারণ, এ কয়েক দিন বেকার থাকায় তাঁদের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে অর্ধাহারে-অনাহারে দিন কাটাতে হয়।
ভোলা জেলা মৎস্য কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত কয়েক বছর ১৫ থেকে ২৪ অক্টোবর—এই ১০ দিন ইলিশ প্রজনন মৌসুম ধরে মেঘনা-তেঁতুলিয়াসহ সাগরের মোহনার সাত হাজার বর্গকিলোমিটার জলসীমায় জাল ফেলা নিষিদ্ধ করেছে। এ বছর সময় পাল্টে ৬ থেকে ১৬ অক্টোবর—এই ১১ দিন জাল ফেলা বন্ধ রাখা হয়। কিন্তু ওই ১১ দিন পার হওয়ার পরও নদ-নদী ও সাগরের মোহনায় ডিমওয়ালা প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ছে। এতে ইলিশের প্রজনন ব্যাহত হচ্ছে।
চাঁদপুর ইলিশ গবেষণাকেন্দ্রের প্রধান আমিনুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ইলিশ সারা বছরই নদীতে এসে ডিম ছাড়ে। তবে আশ্বিন মাসের ভরা পূর্ণিমার আগের ১০ দিন এবং পরের ১০ দিন ইলিশের ডিম পাড়ার প্রকৃত সময়। তাই ইলিশ প্রজনন মৌসুম ১০ দিন থেকে বাড়িয়ে ২০ দিন করা উচিত। কিন্তু জেলেদের অভাব-অনটনের কথা চিন্তা করে সময় কমানো হয়েছে। তার পরও এ বছর এক দিন বাড়ানো হয়েছে।
সরেজমিনে মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীর পারের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, জেলেরা যেসব ইলিশ শিকার করছেন, এর পেটে ডিম পাওয়া যাচ্ছে।
সদর উপজেলার তুলাতুলি মাছঘাটের বশির মাঝি জানান, এ বছর যে প্রজনন মৌসুম ধরা হয়েছে, সে সময়ের মধ্যে সব ইলিশ ডিম ছাড়তে পারেনি। ডিম ছাড়ার সময় বাড়ানো উচিত।
তজুমদ্দিন উপজেলার স্লুইসঘাট মাছঘাটের ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম জানান, ইলিশ প্রজনন মৌসুম হিসেবে এবারের সময় সঠিক হয়েছে। তবে এ সময় বাড়ানো উচিত। কারণ, ইলিশ আশ্বিন মাসের পূর্ণিমা ও অমাবস্যার সময় পরিমাপ করে নদীতে ডিম ছাড়ার জন্য আসে।
দৌলতখান উপজেলার চৌকিঘাটার জেলে আবদুল কাদের মাঝি জানান, ইলিশ ডিম ছাড়ার আগেই জালে ধরা পড়ছে। এ জন্য সময়সীমা বাড়ানো উচিত। একসময় জেলেরা ডিম ছাড়া মৌসুমে নদীতে জাল পাততেন না। এখন তাঁদের পেটে খিদে। এ জন্য সরকার আইন করে প্রজনন মৌসুমে নিষেধাজ্ঞা দিয়েও মাছ ধরা বন্ধ করতে পারছে না।
কয়েকজন জেলে দাবি করেন, প্রজনন মৌসুমের সময় বাড়ালে তাঁদের কোনো সমস্যা নেই। তবে যে কদিন মাছ ধরা বন্ধ থাকবে, সে কয়দিন সরকারের পক্ষ থেকে তাঁদের জন্য চাল সরবরাহ করতে হবে। ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্যদের মাধ্যমে চাল বা টাকা বিতরণ বন্ধ করতে হবে।
দৌলতখান উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. কামাল বলেন, এ বছর প্রজনন মৌসুমে কোনো ঝড়-বৃষ্টি ছিল না, এ জন্য সব মা-ইলিশ ডিম ছাড়তে পারেনি। প্রজনন মৌসুমের সময় শেষ হওয়ার পরও ইলিশের পেটে ডিম পাওয়া যাচ্ছে।

তথ্য সুত্র: প্রথম আলো, তারিখ: ২৮-১০-২০১১