Thursday, December 16, 2010

আদার পোকা দমন ব্যবস্থাপনা


আদা বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ মসলা জাতীয় ফসল। এটি পুষ্টিমানে সমৃদ্ধ এবং এর ঔষধি গুণাগুণ রয়েছে। এতে লিপিড, প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, মিনারেল, ভিটামিন, পটাশিয়াম এবং ফসফরাস রয়েছে। গ্যাস্ট্রিক, ঠাণ্ডা ও কাশিসহ বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে আদা ব্যবহার করা হয়।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যানুযায়ী ২০০৫-০৬ সালে বাংলাদেশে প্রায় ১৪ হাজার ২৯৪ হেক্টর জমিতে আদার চাষ হয়েছে। মোট উৎপাদন প্রায় ১.৭৩ লাখ মেট্রিক টন এবং হেক্টরপ্রতি গড় উৎপাদন ১২.০৮ মেট্রিক টন। রাইজোম ফ্লাই আদার একটি প্রধান ক্ষতিকারক পোকা। এর আক্রমণে আদার ফলন ব্যাপকভাবে কমে যায়।

পোকার বৈশিষ্ট্য : পূর্ণ বয়স্ক পোকা লম্বা পা-বিশিষ্ট। দেহ কালো, পাখা স্বচ্ছ এবং ধূসর দাগযুক্ত। পাখা বিস্তৃত অবস্থায় এর আকার ১৩-১৫ মি.মি.। পূর্ণতাপ্রাপ্ত লার্ভা ক্রিমের মতো সাদা, পা-বিহীন, প্রস্থে ৯.৫ মি.মি. এবং প্রস্থ ১.৯৫ মি.মি.।

ক্ষতির প্রকৃতি : ডিম থেকে বের হওয়ার পর সদ্যজাত লার্ভা রাইজোম ছিদ্র করে ভেতরে ঢুকে এবং রাইজোমের অভ্যন্তরীণ অংশ খায়। আক্রান্ত গাছ হলুদ হয়ে যায়। পরবর্তী সময়ে রাইজোমে পচন ধরে। আক্রমণের মাত্রা বেশি হলে গাছ থেকে কোনো ফলন পাওয়া যায় না। এ পোকা আদার রোগের সঙ্গে সম্পর্কিত। এ পোকা ডিম পাড়া এবং বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হওয়ার জন্য ছত্রাক আক্রান্ত আদা গাছ পছন্দ করে। রোগাক্রান্ত রাইজোমের মধ্যে পোকার লার্ভা এবং পিউপা দেখা যায়। এ ছাড়াও পূর্ণ বয়স্ক পোকাগুলো আদা গাছে ব্যাকটেরিয়াল উইল্টের বাহক হিসেবে কাজ করে।

জীবনচক্র : পূর্ণ বয়স্ক স্ত্রী পোকা গাছের গোড়ায় মাটির ছোট ঢেলার নিচে, মাটির ফাটলে অথবা মাটিতে একটি একটি করে অথবা গুচ্ছাকারে (প্রতি গুচ্ছে ৬ থেকে ১০টি) ডিম পাড়ে। ডিমগুলো ছোট এবং সাদা। ২ থেকে ৫ দিন পর ডিম ফুটে লার্ভা বের হয়। লার্ভাগুলো ১৩ থেকে ১৮ দিন খাওয়ার পর রাইজোমের মধ্যেই পিউপায় পরিণত হয়। পিউপা ১০ থেকে ১৫ দিন পর পূর্ণ বয়স্ক পোকায় পরিণত হয়। এর জীবনচক্র সম্পন্ন হতে প্রায় ৪ সপ্তাহ সময় লাগে।

দমন ব্যবস্থাপনা : স্বাস্থ্যবান এবং রোগমুক্ত রাইজোম বীজের জন্য নির্বাচন করতে হবে। ফসল সংগ্রহের সময় লার্ভা ও পিউপাসহ পচা রাইজোম সংগ্রহ এবং ধ্বংস করে ফেলতে হবে। গাছের গোড়ার মাটি নিয়মিত উলট-পালট করতে হবে কারণ পোকা মাটিতে ডিম পাড়ে। যেহেতু রোগাক্রান্ত রাইজোমে পোকার আক্রমণ হয় এ জন্য ফসলকে রোগমুক্ত রাখার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

অত্যধিক আক্রান্ত এলাকায় আক্রমণের শুরুতে নিম্নলিখিত কীটনাশক ব্যবহার করতে হবে- কার্বোসালফান (মার্শাল ২০ ইসি, সানসালফান ২০ ইসি, জেনারেল ২০ ইসি বা অন্য নামের) অথবা ফেনিট্রোথিয়ন (ফেনিটকস ৫০ ইসি, সুমিথিয়ন ৫০ ইসি, ইমিথিয়ন ৫০ ইসি, সোভাথিয়ন ৫০ ইসি বা অন্য নামের) প্রতি লিটার পানিতে ২ মিলি হিসেবে।