Saturday, December 11, 2010

সিরাজগঞ্জে কৃষিজমিতে একের পর এক ইটভাটা


সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর, রায়গঞ্জসহ বিভিন্ন উপজেলায় কৃষিজমিতে ইটভাটা স্থাপনের হিড়িক পড়েছে। সরকারি নিয়মনীতি উপেক্ষা করে, পরিবেশ অধিদপ্তরের সনদ ছাড়াই প্রতিবছর নতুন নতুন ভাটা তৈরি অব্যাহত রয়েছে। এতে ভাটার আশপাশের ফসলি জমিগুলো দিন দিন উর্বরাশক্তি হারিয়ে ফেলছে। অপরদিকে ইটভাটায় জ্বালানি হিসেবে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। ভাটার চিমনি থেকে নির্গত ধোঁয়া ও ছাই করছে গাছপালা ও ফসলের ক্ষতি।
জানা গেছে, জেলায় মোট ৭৫টি ইটভাটা রয়েছে। এর মধ্যে চলতি বছর কৃষিজমিতে নতুন আটটি ইটভাটা হয়েছে। শাহজাদপুর, রায়গঞ্জ ও উল্লাপাড়া উপজেলায় ইটভাটা সবচেয়ে বেশি। ভাটাগুলো কৃষি এবং জনবসতিপূর্ণ এলাকায় তৈরি করা হয়েছে। নতুন ভাটার পাশাপাশি পুরোনো ভাটায় ব্যবহূত একমাত্র কাঁচামাল মাটির জন্য কৃষিজমিগুলো কেটে কেটে গর্ত করা হচ্ছে। ওপরের অংশের তিন ফুট কেটে ফেলায় মাটির উর্বর অংশ চলে যাচ্ছে।
শাহজাদপুর ও রায়গঞ্জের ইটভাটাগুলোর পাশ থেকে দীর্ঘদিন ধরে মাটি কাটার ফলে গভীর গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। গর্তগুলোতে বছরের ছয় মাসই পানি লেগে থাকে। পরিবেশ সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী, বনাঞ্চল ও জনবসতিপূর্ণ এলাকার তিন কিলোমিটারের বাইরে এবং অকৃষি জমিতে ইটভাটা স্থাপনের নিয়ম রয়েছে। চার মাস আগে সর্বশেষ জারি করা পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিপত্র অনুযায়ী, ১২০ ফুট চিমনির ভাটা তৈরি নিষেধ করে দেওয়া হয়েছে। শুধু হাওয়াই ঝিকঝাক ইটভাটা (পরিবেশবান্ধব) তৈরির জন্য সনদ দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তারপরও এই নিয়ম উপক্ষো করে, সনদ ছাড়াই নতুন নতুন ভাটা তৈরি অব্যাহত রয়েছে।
চলতি বছর রায়গঞ্জ উপজেলার ধানগড়া ইউনিয়নের আবুদিয়ায় একটি, সোনাখাড়া ইউনিয়নের নিমগাছি এলাকায় দুটি, শাহজাদপুরের গাড়াদহ ইউনিয়নের সরিষাকোল বাজারের দক্ষিণে গ্রামের পাশে ও কৃষিজমির ওপর দুটি, হরিরামপুর গ্রামের পাশে একটি, উল্লাপাড়ার রাজমানে একটি ও তাড়াশে একটি ইটভাটা তৈরি করা হয়েছে। সব কটি ভাটাই নির্মিত হয়েছে কৃষিজমির ওপর।
নিমগাছিতে গড়ে ওঠা ইটভাটার মালিক শাহ আলম বলেন, ‘এখন পর্যন্ত কোনো অনুমতি পাওয়া না গেলেও সব কাগজপত্র জমা দিয়েই আমরা ভাটার কাজ শুরু করেছি।’ আবুদিয়ায় নতুন গড়ে ওঠা এসএসবি ইটভাটায় তদারককারী সুলতান আহমেদ নামের একজন বললেন, ‘নিজেদের কিছু জমি আর ভাড়া করা জমি নিয়ে প্রায় ১২ বিঘা জমির ওপর ইটভাটাটি দেওয়া হয়েছে। চুল্লি বানানো শেষ হয়েছে। এখন অন্যান্য কাজ করা হচ্ছে।’
রায়গঞ্জ উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা অজিত কুমার সরকার বলেন, যেভাবে কৃষিজমিতে ইটভাটা তৈরি করা হচ্ছে, সেই ধারা অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে আবাদি জমি একেবারে কমে যাবে। ইটভাটা মালিক সমিতি সিরাজগঞ্জ জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. নূরুল ইসলাম বলেন, ‘ইট তৈরিতে এঁটেল মাটি অর্থাৎ কৃষিজমির মাটিই প্রয়োজন। কৃষিজমির মাটি ছাড়া ইট তৈরি সম্ভব নয়। ভাটায় ব্যবহূত কাঠের বিষয়ে তিনি বলেন, ভাটায় আগুন ধরানোর জন্য ৬০০ থেকে ৮০০ মণ লাকড়ি লাগে। ওই পরিমাণ ব্যবহারের অনুমতি আছে। এরপর কয়লা দিয়ে পোড়ানো হয়। নতুন ভাটার কথা স্বীকার করে নূরুল ইসলাম বলেন, ওই ভাটাগুলো আমাদের সমিতিভুক্ত নয়।’
পরিবেশ অধিদপ্তর বগুড়া কার্যালয়ের পরিদর্শক (সিরাজগঞ্জ জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত) মো. মকবুল হোসেন জানান, সর্বশেষ পরিপত্র অনুযায়ী ১২০ ফুটের চিমনির ভাটা তৈরিতে নিষেধাজ্ঞা আছে। ২০১২ সালের পর হাওয়াই ভাটা ছাড়া কোনো ভাটা তৈরির অনুমতি দেওয়া হবে না।
সিরাজগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. আমিনুল ইসলাম জানান, সরকারি নিয়ম উপেক্ষা করে ইটভাটা তৈরি করা হলে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তথ্য সূত্রঃ প্রথম আলো, তারিখ: ১১-১২-২০১০