সবজি চাষ করে কমলগঞ্জসহ গোটা মৌলভীবাজার জেলার কৃষকদের মধ্যে একজন আর্দশ কৃষকে পরিণত হয়েছেন কমলগঞ্জ উপজেলার গোবিন্দ্রপুর গ্রামের মোবাশ্বির আলী। সবজি চাষ করে তিনি এখন লাখপতি।
কমলগঞ্জ উপজেলার গোবিন্দ্রপুর গ্রামের মোঃ মোবাশ্বির আলী পেশায় ইসলামী ফাউন্ডেশনের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত একজন ইমাম। বছর পাঁচেক আগে কৃষি বিভাগ থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে চাষাবাদ শুরু করেন। দিন দিন বাড়াতে থাকেন ধান থেকে শুরু করে বাঁধাকপি, ওলকপি, গম, করলা, লাউ, কলা, পেঁপে, টমেটো, তরমুজসহ বিভিন্ন শাক-সবজি চাষ করে গত পাঁচ বছরে প্রায় ২৫ লাখ টাকা আয় করেছেন। বিভিন্ন ধরনের ফল-মূল, শাক-সবজি চাষাবাদ করে তিনি এখন সফল কৃষক। তার খামার দেখতে ইসলামী ফাউন্ডেশনের প্রশিক্ষণ একাডেমীর উপ-পরিচালক ফরিদউদ্দিন আহমদ, সিলেটসহ বিভিন্ন উচ্চ পর্যায়ের কৃষি ও প্রশাসনিক কর্মকর্তারা কমলগঞ্জে ছুটে এসেছেন।
মৌলভীবাজার জেলার সফলও আদর্শ কৃষক হিসাবে মোবাশ্বির আলী ৬ বার জাতীয় ও স্থানীয়ভাবে কৃষি বিভাগ তাকে পুরস্কৃত করেছে। কমলগঞ্জে তাকে অনুসরণ করে এলাকার অন্যান্যরা সবজি চাষে ঝুঁকে পড়েছেন এবং অনেকেই মোটামুটি স্বচ্ছল হয়ে উঠছেন। মোবাশ্বির আলী ইমামতির পাশাপাশি জাতীয় ইমাম সমিতির কমলগঞ্জ শাখার সাধারণ সম্পাদক। বছর পাঁচেক আগে মাত্র এক একর জায়গায় তরমুজ চাষ করার মাধ্যমে কৃষি কাজ শুরু করেন। প্রথমে লাভের মুখ না দেখলেও পরের বছর আবারো তরমুজ ও টমোটোর চাষ করে সাফল্য পান। ৭০ হাজার টাকা ব্যাংকঋণ নিয়ে তিনি গম, রসুন, পেঁয়াজ, ঢেঁড়শ, লালশাকসহ প্রায় ১২জাতের সবজি উৎপাদন করার মধ্যে দিয়ে মোহামদ্দীয়া বহুমুখী কৃষি খামার গড়ে তোলেন।
এখন তিনি প্রতি বছর সবজি থেকে শুরু করে হাইব্রিড ধান চাষ করেন। শীতকালীন শাক-সবজি শেষে বর্তমানে কৃষক মোবশ্বির আলীর খামারে ১০ শতক গ্রাফটিং টমোটো, ৪ বিঘা জমিতে ইপক টমেটো, হাইব্রিড মরিচ ১৫ শতক, বেগুন ১৫ শতক, ক্ষিরা ৩০ শতক, এক বিঘা জমিতে ঢেঁড়শ, ৩ বিঘা জমিতে বাঁধা কপি, শালগম ১৫ শতক, তরমুজ ৪ বিঘা ও ১৫শতক জমিতে শিম আবাদসহ সর্বমোট ১৫ বিঘা জমিতে চাষাবাদ করেছেন। সার্বক্ষণিক ৩ জন শ্রমিক দিয়ে শাক-সবজি চাষাবাদের পাশাপাশি তিনি বোরো চাষ করছেন। পোকামাকড় দমন ও জমির উর্বরা শক্তি বাড়াতে সার হিসেবে জৈব সার ও কীটনাশক ব্যবহার করে থাকেন তিনি।
কৃষক মোবাশ্বির আলী জানান, গত সেপ্টেম্বর মাসে খামারে গ্রাফটিং পদ্ধতিতে প্রায় ৫’শ টমেটোর চারা রোপণে খরচ হয় প্রায় ১১ হাজার টাকা। যেগুলো থেকে প্রতিটি গাছে ১’শ থেকে ১’শ ৩০টি টমেটো ফলন হয়েছে। প্রতি গাছে প্রায় ৫/৬ কেজির পরিমাণ টমেটো উৎপাদন হয়েছে যার বাজারমূল্য প্রথম ছিল প্রতি কেজি ৮০ টাকা। বর্তমান সময় পর্যন- তিনি প্রায় ৫০ হাজার টাকার টমোটো বিক্রি করেছেন। এই টমেটো আরো কিছুদিন বিক্রি করতে পারবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করছেন।
কৃষক মোবাশ্বির বিগত বছর ১৩ একর জমিতে খামার করে ৩ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেন এবং এতে আয় করেন প্রায় ৭ লাখ টাকা। তিনি জানান, চলতি বছর খামারে ১৩ জাতের সবজি আবাদ করেছেন। এতে এখন পর্যন- প্রায় দেড় লাখ টাকা ব্যয় করে ১১ লাখ টাকা আয়ের আশা করছেন। স্থানীয় কৃষি অফিসের কৃষি কর্মকর্তা নরেশ চন্দ্র বাড়ই, কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রকাশ কানি- চৌধুরীসহ কৃষি বিভাগ থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা পাচ্ছেন বলে কৃষক মোবাশ্বির আলী জানান।