হাঁস-মুরগির খামারে জৈব নিরাপত্তা

Monday, August 2, 2010


বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকা ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, মেঘালয় ও ত্রিপুরায় হাঁস-মুরগির খামারে বার্ড ফ্লু সংক্রমণের খবর পাওয়া গেছে। এসব এলাকায় হাজার হাজার মুরগি নিধন করা হচ্ছে। বার্ড ফ্লু’র খবর পাওয়া গেছে বাংলাদেশেও। পত্রিকার খবরে প্রকাশ, বার্ড ফ্লু সংক্রমণের কারণে কুড়িগ্রাম জেলায় ইতোমধ্যেই শতাধিক মুরগি নিধন করা হয়েছে। গত বছর শীতের পর পরই আমাদের দেশে বার্ড ফ্লু সংক্রমণে পোলট্রি শিল্প প্রায় ধ্বংস হতে বসেছিল।


বার্ড ফ্লুর ভাইরাস এভিয়েন ইনফ্লুয়েঞ্জা শীতের আবহাওয়া দ্রুত বংশবিস্তার ও সংক্রমণ করে। এ জন্য যেকোনো সময় বার্ড ফ্লু দ্বারা দেশের পোলট্রি সংক্রমিত হতে পারে। বার্ড ফ্লু ছাড়াও এ সময় রানীক্ষেত, গামবোরো, বসন্ত ইত্যাদি রোগে হাঁস-মুরগি আক্রান্ত হতে পারে। কোনোভাবেই যাতে খামারে জীবাণু না ঢুকতে না পারে সে জন্য প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। যেহেতু এসব রোগের চিকিৎসা নেই সেহেতু জৈব নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে। বার্ড ফ্ল’ুর জীবাণু সবচেয়ে মারাত্মক ও ছোঁয়াচে। এই ভাইরাস মানুষকেও সংক্রমিত করে। কোনোভাবেই যাতে দেশে এবং খামারে জীবাণু প্রবেশ করতে না পারে সে জন্য নিুলিখিত নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিতঃ
১. খামারের প্রধান গেট ব রাখতে হবে
২. খামারের চার পাশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে ৩. খামারের শেডের পাশে খাদ্যদ্রব্য ফেলা যাবে না, এতে বন্য পাখি আসবে ৪. দর্শনার্থীদের এবং অন্য খামারের কর্মীদের প্রবেশ করতে দেয়া যাবে না ৫. খামারের ভেতর নিয়োজিত কর্মীদের খামার কর্তৃক প্রদত্ত জীবাণুমুক্ত পোশাক, জুতা, টুপি ইত্যাদি পরিধান করতে হবে ৬. খামারের ভেতর প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি, জাল, গাড়িসহ সব কিছু জীবাণুমুক্ত করে ঢুকাতে হবে ৭. খামারের ভেতরে যারা থাকবে বা প্রবেশ করবে তাদের পরিধেয় সব কিছু জীবাণুমুক্ত হতে হবে ৮. মুরগির ঘরের দরজা ব রাখতে হবে। যাতে বিড়াল, কুকুর, ইঁদুর, সাপ, বেজি ইত্যাদি প্রবেশ করতে না পারে ৯. এক খামারের লোক অন্য খামারে গোসল করে জীবাণুমুক্ত হয়ে প্রবেশ করতে হবে ১০. কর্মীদের অতিথি ও বন্য পাখির দোকানে যাওয়া যাবে না ১১. খামার পরিত্যাগের সময় খামারের বস্ত্রাদি পরিবর্তন করে হাত-পা ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে ১২. প্রতিটি শেডের সামনে পা ডোবানোর জীবাণুমুক্তকরণ তরল পদার্থ রাখতে হবে ১৩. পশুসম্পদ অধিদফতরের অনুমতি ছাড়া বিদেশ থেকে বাচ্চা সংগ্রহের আগে নিশ্চিত হতে হবে যে, ওই খামারে গত এক বছরে কোনো রোগ দেখা দেয়নি ১৫. অতিথি পাখি খামারের আশপাশে বা ভেতরে প্রবেশ করতে দেয়া যাবে না ১৬. কোনো হাঁস-মুরগি অসুস্থ হলে বা মারা গেলে সাথে সাথে জেলা বা উপজেলা পশু চিকিৎসা কেন্দ্রে জানাতে হবে ১৭. মরা মুরগি মাটিতে পুঁতে ফেলতে হবে ১৮. খামারে প্রবেশ ও বাইরে যাওয়ার জন্য একটিমাত্র পথ চালু থাকবে ১৯. মুরগি ও ডিম বিক্রি করে খাঁচা, সরঞ্জামাদি ও যানবাহন পরিষ্কার করে জীবাণুমুক্ত করে খামারে ঢুকাতে হবে ২০. অবিক্রীত মুরগি ও ডিম খামারের ভেতর নেয়া যাবে না ২১. হাঁস-মুরগিকে সময়মতো সব রোগের টিকা দিতে হবে ২২. মুরগি, হাঁস, কবুতর ও অন্যান্য পাখি একত্রে পালন করা যাবে না ২৩. অতিথি পাখি শিকার ও বিক্রি ব করতে হবে ২৪. বাড়িতে পালার জন্য বাজার থেকে কোনো মুরগি অন্তত ১৫ দিন আলাদা রেখে তারপর বাড়ির মুরগির সাথে রাখতে হবে ২৫. খামারের ভেতরে প্রবেশের সময় জীবাণুমুক্ত গ্লাভস, গামবুট, মাস্ক, টুপি, অ্যাপ্রোন ব্যবহার করতে হবে ২৬. এক শেডের যন্ত্রপাতি বা ব্যবহার্য জিনিসপত্র অন্য শেডে ব্যবহার করা যাবে না ২৭. রোগাক্রান্ত হাঁস-মুরগির বিষ্ঠা, ময়লা, বর্জø, লিটার মাটি খুঁড়ে পুঁতে ফেলতে হবে ২৮. শেডের লিটার ঘন ঘন পরিবর্তন করতে হবে এবং শুকনো রাখতে হবে ২৯. মুরগির ঘরে কাজ করার সময় ভেতর থেকে দরজা ব রাখতে হবে ৩০. মুরগির মধ্যে অস্বাভাবিক আচরণ দেখা দিলে পশু হাসপাতালে জানাতে হবে। অস্বাভাবিক আচরণের মধ্যে রয়েছে মুরগি পরপর দুই দিন ২০ শতাংশ হারে পানি ও খাদ্য কম খেলে এবং ডিম উৎপাদন পরপর দুই দিন ২০ শতাংশ হারে কমলে পশু হাসপাতালে জানাতে হবে ৩১. মুরগির ঘরে তাপমাত্রা ও আলো প্রয়োজনীয় পরিমাণ রাখতে হবে ৩২. লেয়ার মুরগির বিষ্ঠা প্রতিদিন পরিষ্কার করতে হবে ৩৩. প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে খাদ্য ও পানি সরবরাহ করতে হবে।
খামারের জৈব নিরাপত্তাব্যবস্থা করার জন্য সরকার, খামারের মালিক, কর্মকর্তা-কর্মচারী, পোলট্রিসামগ্রী আমদানি ও রফতানিকারক, ক্রেতা, বিক্রেতাসহ পোলট্রির সাথে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সচেতন হতে হবে।


ফরহাদ আহাম্মেদ কৃষিবিদ

তথ্যসূত্র: শাইখ সিরাজ রচিত ‘মাটি ও মানুষের চাষবাস’ গ্রন্থ থেকে সংগ্রহীত

মনের উঠোনে

সাম্প্রতিক সংযোজন

মোবাইল থেকে দেখুন

আমাদের দেশ এখন আপনার মুঠোফোনে, মোবাইল থেকে লগইন করুন আমাদের দেশ

দ র্শ না র্থী

দ র্শ না র্থী

free counters

কে কে অনলাইনে আছেন